এন্ডহোভেন শহরটা ফিলিপসীয় কারনে বেশ ভারতীয় অধ্যুষিত। "ভারত" বললেই হয়তো বাংলাদেশীরা ভাবেন "কোলকাতা"। কিন্তু ভারত আসলে তার বাইরেও অনেক বিস্তৃত। এখানে বাঙ্গালীরা নন বেংগলীদের তুলনায় সংখ্যায় নিতান্ত নগন্য। বাংগালীদের উৎসব মানে "স্বরস্বতী পূজা" আর "দুর্গা পূজা"। আর পৃথিবী জোড়া হিন্দুৎসব মানে "হোলি" - "দিওয়ালী"। একসাথে থাকার কারনে আমার ঈদ উৎসবের তুলনায় অনেক বেশি হোলি - দিওয়ালী পালন করা হয়। এর আর একটা উল্লেখযোগ্য কারণও আছে, আমি আর আমার স্বামী দুজনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিপুল উৎসাহ অনুভব করি। আমি নাচ করি, নাটক করি, আমার স্বামী গান করেন, নাটক লিখেন ও অভিনয় করেন। আর এই উৎসবগুলো শিল্পচর্চার একটি অনবদ্য সুযোগ।
আগে শুধু পার্ফম করার দাওয়াত হতো তাই অনুষ্ঠান করতে যেতাম। কিন্তু আজকাল অনুষ্ঠান করাতে হয়। বাচ্চাদের নাচ শেখাও তারপর বাচ্চার মায়েদের। বাংলার মিষ্টি বানানো শেখাও সাথে নাটকতো আছেই। এইমাত্র গত সপ্তাহে "দিওয়ালী" উদযাপন হলো আমাদের শহরে। এবার আমার আগ্রহে সবাই মিলে বাংলা নাচ হলো "সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনি, নাচোতো দেখি", বাংলা নাচের জন্য সবাইকে "বাংলা" স্টাইলে শাড়ি পড়া শিখাতে হলো। তার সাথে বাংলার সন্দেশ বানানো শেখালাম সবাইকে। এতোকিছু একসাথে করি কিন্তু কখনো ওদের পূজার ঘরে পা দিতে পারি না কিংবা তাদের মূল "খাবার" রান্না হয় যে জায়গাটুকুতে সেখানে ঢোকা আমাদের নিষেধ।
তবে মজার ব্যাপার হলো এই, এযে শুধু আমার জন্য নিষেধ তা কিন্তু নয়। একজন "কোলকাতা"র হিন্দুও ঠিক আমার মতোই সমান অচ্ছুৎ। আমার ধারনা বাংলাদেশের হিন্দুদেরকেতো গুনবেই না সমগোত্রীয় হিসেবে। মাছ খাওয়া, মাংস খাওয়া যেকোন লোকই অচ্ছুৎ তাদের কাছে। আমার যেসব দেশি ভাই - বোনেরা আমাকে "বর্ণবাদিনী" হিসেবে প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, আমার মাথার দাম ঘোষনা করার অবস্থায় আছেন, তাদের জন্য বিনম্র চ্যালেঞ্জ। একবার কোন একজন "দক্ষিনী" কিংবা "গুজরাটী" কিংবা "কাশ্মিরী" ব্রাক্ষনের বাড়িতে আপনি পূজার ঘরে পা রেখে আসুন, কিংবা তাদের নিজেদের খাবারের জায়গায় বসে খেয়ে আসুন। আমি মাথা এমনিতেই পেতে দিবো। তাদের বাড়ির বাইরের ঘরে বসে খাবারের কথা বলছি না কিন্তু তাদের মূল খাবারের জায়গায় যেয়ে বসুনতো।
বর্ণবাদের সংজ্ঞা হয়তো তখন পালটে দিবেন .................
তানবীরা
২৮.১০.০৯
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Khoma korben didi. Onnera bornobadi, ei karone ki amar sat khun maf hoye jabe?
ReplyDeleteKhomar kotha keno bolchen Murshed bhai? Borong apnake Dhonnyobad je proshnoti korechen. Onner karone keno ekjoner satkhun maf hobe? Ek khun ee ba keno maf hobe? Protteke tar nijer kajer jonnyo responsible, Onnera noi. Kintu "kaj" ti bornobad na "kajer kotha" ta ullekh kora bornobad bhai?
ReplyDeleteতানবীরা আপনার লেখা সহজ, সাবলীল, প্রাণবন্ত। আমার ভালো লাগছে এই ভেবে যে প্রবাসে এত কাজের মধ্যেও আপনি সময় পান অন্য কিছু করার...অন্য কিছু ভাবার। আমার কাছে ধর্ম মানে আমি যাকে ধারণ করি। যে ধারণ স্বচ্ছ...তাতে কোনো বিভেদ নেই...নেই ছোঁওয়া ছুঁয়ির বাদ বিচার। আমার কাছে ঈশ্বর মানে প্রাণের আরাম...মনের আনন্দ...আত্মার শান্তি...। আপনার খুব স্বচ্ছ ধারণা। তাই আপনি সবার সাথে মিশে যেতে পারেন। খুব ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা নেবেন। গত এক বছর আমরা ছোটদের একটা ই-পত্রিকা ইচ্ছামতী প্রকাশ করছি কলকাতা থেকে। সময় পেলে পড়বেন। www.ichchhamoti.org
ReplyDeleteকল্লোল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কি করে আমার ব্লগটি খুঁজ়ে পেলেন কে জানে? আমি আবার কম্পুকানা মানুষ কি না তাই ভাবছি।
ReplyDeleteআপনার ধর্মের ধারনাটাই আমি পোষন করি। যা আমি তাই আমার ধর্ম। ধর্ম কোন আচার - বিচার কিংবা খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকে না বলেই আমার বিশ্বাস। আরো কেউ আমার মতো ভাবে, এটা জানা আমার জন্য খুবি দরকার তাতে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ে, মনে হয় আমি ভুল নই, আরো অনেকে সাথে আছেন।
ভালো থাকবেন। পত্রিকা পড়ে নিশ্চয়ই জানাবো।