দেশ থেকে ফিরে এসে অবধি কোথাও যাই নাই। চাকরী বাকরী নাই কই যাবো। পয়সা নাই মানে স্বপ্ন পরিকল্পনা কিছুই নাই। রোজ রাঁধি, খাই, ব্লগাই, ফেসবুকাই। আমার মতো পাড়াবেড়ানি মানুষের জন্যে চরম কষ্টের দিনরাত পার করা। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধু শ্যামার সাথে দেখা হলো। প্রবাসী থাকতে সপ্তাহে সপ্তাহে দেখা হতো, প্রবাসী ভেঙ্গে এখন হয়েছে সীমানা পেরিয়ে সাথে বন্ধু বান্ধবের মুখও বদলে গেছে। সপ্তাহে সপ্তাহে এখন অন্য মুখ। গান –বাজনা, খাওয়া – দাওয়া, আড্ডা সব প্রায় একই আছে শুধু মুখগুলো বদলে গেছে। শ্যামা এখন বার্সেলোনা আছে, রয়টার্সে চাকরী নিয়ে, খুব ধরলো একবার যেতে।
অনেকদিন ধরে বার্সেলোনা যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি। নাচুনী বুড়িকে শ্যামা ঢোলের বাড়ি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আমিও রাত জাগা পাখি, শ্যামাও তাই। প্রায় অনেক রাতে ফেসবুকে কথা হলেই শ্যামা তাগাদা দিতো, বার্সেলোনা আসার পরিকল্পনার কি হলো। তারপর ইষ্টার ভ্যাকেশনের জন্য কপাল ঠুকে টিকেট কিনেই ফেললাম এবার। সস্তা মাগনার চার্ট এয়ারের কল্যানে এদিক ওদিক বেড়াতে যাই আমরা গরীবরা। মুড়ির টিন বাসের সিষ্টেম এগুলোর। আগে ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় ভার্সিটি বাসে বাড়ি ফিরতাম, রিকশা ভাড়াটা বাঁচাতাম তেহারী আর কোক খাওয়ার জন্য। প্রায় সেই বাসের কথা মনে পড়ে এই প্লেনে উঠলে। সবচেয়ে ভালো লাগে আমার মেয়ের অবস্থা দেখতে। এসব প্লেনে টিভি নেই, খেলনা নেই এমনকি খাবারও নেই কিছু। মাঝে সাঝেই আমি আর আমার মেয়ে সস্তার টিকেটে ইউরোপের ভিতরে এদিক ওদিক যাই। খুব মন খারাপ করেন তিনি এই মুড়ির টিন প্লেনের চেহারা দেখলে।
প্লেন থেকে বার্সেলোনা
তবে এবার মেয়ের কপাল ভালো। মেয়ের বাবাও সাথে ছিলেন। মেয়েকে স্যান্ডউইচ কিনে দিলেন প্লেনে। দুইটাকার স্যান্ডউইচ পাঁচ টাকা দিয়ে আমি জীবনেও কিনবো না। মেয়ে বাংলাদেশে তার খালাদের নালিশও দিয়ে এসেছে, মা কিছুই দেয় না, সব ফালতু খরচা বলে। তবে মেয়ের বাবা সজ্জন ব্যাক্তি মেয়ের সাথে আমাকেও স্যান্ডউইচ কিনে দিয়ে কোকও কিনে দিলেন। এসব প্লেনে কেউ কিছু কিনে না প্রায়ই। এয়ারহোষ্টেস কালা কতগুলো বেক্কল পেয়ে বিগলিত হয়ে গেলেন। একটু পর পর এসে মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আর কিছু চাই, চা – কফি? মেয়ের বার নিরুপায় গলায় আমাকে বার দুই জিজ্ঞেস করতেই আমি কঠিন লুক দিলাম, বুঝালাম আবার যদি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছো।
এমনিতেই তিনি আমার কানের কাছে মাছির ভন ভন দিয়ে রেখেছেন। অনেকেই আমাকে “তিনার” গান শুনে বিগলিত হাসি দিয়ে বলেন, আপনি কতো লাকি, সবসময় বাড়িতে ওনার গান শুনেন। আমি এর উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। গান প্র্যাক্টিস শুনতে কার কেমন লাগে সেটা “কি যাতনা বিঁষে, বুঝিবে সে কিসে” এর স্কেলের ব্যাপার। যাক, মেয়ের বাবা তার প্রিয় নজরুল গীতির ট্র্যাকের সাথে গান প্র্যাক্টিস করতে করতে, মেয়ে নিন্টেন্ডোতে গেম খেলতে খেলতে আর আমি সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “রুপকথা নয়” এর চিকুরের মধ্যে ডুবে দু ঘন্টায় এন্ডহোভেন থেকে বার্সেলোনা পৌঁছে গেলাম। ঠিক দশ বছর আগে স্পেনের “বেনিড্রোমে” বেড়াতে গিয়েছিলাম দশ দিনের জন্যে, সেটা সমুদ্র পাড়ে। সে ছুটিটাও জীবনের একটা স্মরনীয় আনন্দময় ছুটি ছিল এটাও ঠিক তাই হলো। আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে গ্রানাডা’র পাশে। হয়তো আবার দশ বছর বাদে হবে, কে জানে কিংবা হবে না। তবে স্পেনের সাথে আমার কিছু আছে, সবসময়ের ভালোবাসা আমাদের।
কাসা বাটলো @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস
কাসা ফুস্টার @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস
মেডেটেরিয়ান সী ফুড
বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে
ফুটবল ফ্যানদের জন্যে “এফসি বার্সেলোনা ক্লাব”
বার্সেলোনা সিটি @ এ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখা
এখন বার্সেলোনা আরেনা @ আগে এখানে বুল ফাইট হতো
বার্সেলোনা সিটি @ এ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখা। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এ জায়গাটা
বার্সেলোনা স্টেডিয়াম @ সবার পরিচিত
বাড়ি গোটিক @ পুরনো বার্সেলোনা সিটি সেন্টার
প্লাসা লা কাটালুনিয়া @ ইন দি ইভিনিং
বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে
বিখ্যাত স্প্যানিশ সীফুড পায়েলা
পার্ক গুয়েল @ ঘাওডির ডিজাইন
নানা স্বাদের কফির জন্যে স্পেন বিখ্যাত
হাটি হাটি পা পা করে একদিন এই মেয়েটা বড় হয়ে যাবে। চলে যাবে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। শুধু সে জানে না, আমি ঠিক এভাবে ছায়া হয়ে তাকে অনুসরন করবো। বেঁচে থাকি আর মরে যাই, তার ছায়া হয়ে রইবো।
কার ছায়া পড়েছে ...............জলেরও আয়নাতে
লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ
বার্সেলোনা সিটি
লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ এর পাশের রাস্তাটি
স্প্যানিশ ড্রিঙ্ক সাংগরিয়া – কে না জানে তার নাম
কাঁচাবাজারে এধরনের শৈল্পিক ভাবনা আবারো প্রমান করে শিল্প ধনীদের সম্পত্তি নয়
নারকেলের দুধের সাথে যেকোন ধরনের ফলের রস পাবেন এখানে। ককটেল
মেডেটেরিয়ান সী ফিশ
মের্কাট ডে লা বুকেরিয়া @ এ কাঁচাবাজার বার্সেলোনাতে রোজ বসে
সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে দামি, লা সাগরাডা ফামিলিয়া। আন্টনিও ঘাওডির সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। যার জন্যে তিনি পৃথিবী জুড়ে আদৃত – সমাদৃত। সত্তর বছর বয়সে ট্রাম চাপা পড়ে তিনি মারা গেলে, দুদিন পর তাকে এর মধ্যেই সমাহিত করা হয়।
সু সন্তান একটা হলেই যথেষ্ঠ। এক আন্টনিও ঘাওডি যা দিয়ে গেছেন স্পেনকে তাই দিয়েই তারা শত বছর ধরে করে খাচ্ছে আরো অনেক দিন করে খাবে। স্পেনের প্রধান আয় হয় পর্যটন তারপর কৃষিকাজ। পর্যটনকে কেন্দ্র করে স্প্যানিশরাতো বটেই সুদূর বাংলাদেশিরাও করে খাচ্ছে। বিখ্যাত ফ্লেমিংগো নাচের ড্রেস, জুতো সব নাকি আজকাল বাংলাদেশ থেকে তৈরী হয়ে স্পেনে যায় শুনতে পেলাম। অনেক ভারতীয় রেষ্টুরেন্ট হয়েছে যার মালিক বাংলাদেশী। ট্যাক্সি চালক, ওয়েটার, স্যুভেনীয়র শপের অনেক অনেক মালিক পাকিস্তানী, ভারতীয় ও বাংলাদেশী। আন্টনিও ঘাওডি শুধু স্পেনকে নয় আমাদেরকেও অনেক দিয়ে গেছেন বটে। নমস্য এমন মানুষরা যেনো কালে কালে জন্মান। যারা স্থপতি আন্টনিও ঘাওডি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যে
http://www.google.com/search?q=antonio+gaudi&hl=en&prmd=ivnso&tbm=isch&tbo=u&source=univ&sa=X&ei=RCC7TaT6MIKeOvex8PkF&ved=0CDQQsAQ&biw=1366&bih=599
আসেন এবার গান শুনি
http://www.youtube.com/watch?v=ujTCZgPr5MA
http://www.youtube.com/watch?v=MXXRHpVed3M
ফটোগ্রাফীঃ পারিবারিক
তানবীরা
২৯.০৪.২০১১