খাবার টেবিলে ক’দিন আগে মেঘ হঠাৎ করে বলে উঠল, মাদার্স ডে
কবে মা?
মেঘের মা বললো, সে তো তোমার জানার কথা মেঘ।
বললো, দাঁড়াও গুগুল করি।
মেঘের মা আশ্বানিত গলায় বললো, কি কি করবে এবার।
মেঘ আরও উৎসাহিত গলায় বললো, আমি প্রণ ককটেল আর সুশি খাবো
মা, মাদার্স ডে তে।
এতক্ষণে বোঝা গেলো পেটের কথা – ভাত মাছে পোষাচ্ছে না, বাইরে
খাওয়ার উপলক্ষ্য চাই
মেঘের মা বললো, আমি তো সুশি ভালবাসি না।
মেঘ বেশ দৃঢ় গলায় জবাব দিলো, ইট’স মাই মাদার্স ডে – আমি
খাবো।
বরাবরের মতই এ বছরও মাদার্স ডে উপলক্ষ্যে আমাদের বাড়িতে
বিশাল পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পড়াশোনার চাপে মেয়ে’কে শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা অনেক
ছোট করে আনতে হয়েছে। মেয়ে অনেক বার এপোলজি দিলো, মা আরো
অনেক কিছু ভেবেছিলাম, হোম ওয়ার্ক এর জন্যে বাইরে যেতে পারলাম না, কেনাকাটা করতে
পারলাম না। যদিও মেয়ে যা করে তাই আমার কাছে “অনেক কিছু – অনেক বেশি কিছু মনে হয়”,
এটা বলার পরও মেঘের একটু মুখ ভার, মা’য়ের জন্যে অনেক বেশি করতে চায় সে। তার পরিকল্পনা
খুবই গোপনীয় – মা কিছুই যেনো জানতে না পারে, মা’কে চমকে দিতে হবে, হ্যাপি করতে হবে।
এ পরিকল্পনার মাস্টার হলো মেঘ, আইডিয়া’র আধার হলো ইউটিউব আর এসিস্ট করবে পাপা। কাল
দুপুর থেকে বাড়িতে “আমার চলাফেরা’র” ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। উপহার, খাবার
কিছুই যেনো মা আগে থেকে জেনে যেতে না পারে।
রান্নাঘরে হাঁড়ি খন্তা’র টুং টাং ছাপিয়ে সারাক্ষণ যে শব্দ গুলো আসছে, পাপা তুমি এভাবে করবে না, দেখো দেখো, ভিডিওতে দেখো ওরা কিভাবে করেছে।
মেঘ তুমি বেশ জানো, এভাবে করলে বেশি ভাল হবে - এটার সায়েন্টিফিক কজ ----- আমার থেকে শেখো
উফফ পাপা, তুমি ধরবে না বলছি, ধরবে না … নষ্ট করছো সব, এভবে সুন্দর হচ্ছে না
আমার অখন্ড অবসর, আমি সোফায় পা মুড়ে বসে চা খাচ্ছি আর ভাবছি, বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে মেয়েদের কে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়েছে বলে, বিভিন্ন টার্ম পয়দা হয়েছে, বউ-শাশুড়ি, শাস ভি কাভি বহু থি ইত্যাদি প্রভৃতি। ছেলেদের কে শ্বশুর বাড়ি যেতে হলে কি কি যুদ্ধ ঘটতো রান্নাঘরে আর বাড়িতে সেটা’র কল্পনা করার সময় এখন এসেছে। তাদের উদারমনা, সহ্য ক্ষমতা, মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতার পরীক্ষা দেয়া এখন যুগের দাবী ……।
ক্ষণে ক্ষণে আবার বলা’ও হচ্ছে, মায়ের মত কথা’টা শোনার
ধৈর্য্যও নেই। রাবা খানের ভিডিও’র মত “অল দ্যা আব্বু’স” এখন সময়ের দাবী।
বাই দ্যা ওয়ে, হ্যাপি মাদার্স ডে টু অল মাদার্স
১৪/০৫/২০১৭