আজ রবিবার
রোববার দিনটা নীপা’র খুব পছন্দ। তেমন
কোন কাজ রাখে না সে, বেলা করে ঘুমিয়ে, আলসেমী করে, গড়িয়ে কাটায়। চারপাশ নিস্তব্ধ থাকে, বাতাসের প্রেম স্পর্শে কাতর হওয়া পাতার কাঁপুনি
শুনে, কিংবা বিরহ কাতর নাম না জানা কোন পাখির অভিমানী কন্ঠের গান শুনে দিন কাটিয়ে দেয়া
যায়। আকাশ কুসুম সব ভাবতে ভাবতে বিছানায় এপাশ ওপাশ গড়াতে গড়াতে প্রায় প্রতি রোববারের
সকাল তার দুপুরে মিলায়। ক’দিন একটানা বৃষ্টির পর আজ সূর্য উঠেছে, পর্দা সরাতেই, ছ’তলার
ওপরের এই ফ্ল্যাটটা, একরাশ আলোয় উজ্জল হয়ে উঠলো। সাথে সাথে নীপাও চনমন করে উঠলো, রনি
বাথরুমে ঢুকেছে, একটা কিছু ভাল নাস্তা বানিয়ে, দিনটা দুজনের ভাল করে শুরু করা যাক।
ছেলেটা এমনিতে খেতে এত ভালবাসে কিন্তু সারা সপ্তাহ দু’জনকেই অফিসে দৌড়াতে হয় বলে, সকালে
ঠিক করে একসাথে বসে আয়েশ করে নাস্তা খাওয়া হয় না। সেই পাউরুটি, মাখন, জ্যাম কিংবা দুধ
সিরিয়াল, ঝটপট কিছু। ফ্রিজ খুলে নীপা, মাশরুম, ডিম, ধনেপাতা আর কাচামরিচ বের করলো,
হাত বাড়িয়ে ঐদিক থেকে পেয়াজ তুলে নিলো, স্প্যানিশ ওমলেটের মত খানিকটা পুরু করে মাশরুম
ওমলেট বানাবে, ফ্রোজেন পরোটা আছে তা ভাজবে আর কড়া করে চা। রনি’র কড়া চা, খুব পছন্দ।
কাজ করতে করতে জানালা খুলে দিলো, খুলে দিতেই পাগলা হাওয়া সুযোগ পেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে নীপাকে
জড়িয়ে ধরলো। ভাল লাগায় বুঁদ হয়ে নীপা মোবাইলটা হাতে নিলো, খুব আস্তে করে গান প্লে করলো,
লতা গাইছে, আমার মালতীলতা কি আবেশে দোলেএএএ
রোববার অনেক সময় নিয়ে রনি গোসল সারে।
ডিয়ার মিস্টার হ্যান্ডসামের সমস্ত রূপচর্চা সারার আজকেই সময় কি না। তিনি তাই এখনও বের
হন নি। কড়া করার জন্যে, চা’টাকে জ্বালে বসিয়ে রাখলো নীপা, গানের সাথে সে নিজেও গুন
গুন করছে, হঠাৎ ফেসবুকের নোটিফিকেশান এলো, রাসেল, রনির ছবিতে কমেন্ট করেছে। কাজ নেই,
বসে আছে, ঢুকলো ফেসবুকে, ওহ, কাল রাতের পার্টির ছবি নিশো আপ্লোড করে রনিকে ট্যাগ করেছে,
তাতে অন্যেরা মন্তব্য করছে। ছবিগুলো দেখতে দেখতে নীপার মাথায় আগুন জ্বলতে লাগলো, দুটো
ছবিতে হাঁদা রনিটা একেবারে আদনানের গা ঘেঁষে বসে ছবি তুলেছে, কোন আক্কেল যদি থাকে গাঁধাটার।
এইটা কিছু হলো? বিরক্তি যখন চরমে তখন মাথা মুছতে মুছতে টাওয়াল নিয়ে রনি হাজির।
গরম গরম নাস্তা দেখে আনন্দের গলায় বললো,
ওয়াও সুইটহার্ট, সকালে উঠেই এত কিছু?
নীপা সেসবের ধার ধারলো না, পুরোদস্তুর
খ্যাঁক করে উঠলো, কি ছবি তুলেছিস তুই? আক্কেল কি বালতিতে রেখে গেছিলি?
নীপার মেজাজের কোন হেতু রনি ধরতে পারলো
না। এই সাত সকালে, কিসের ছবি, কেন ছবি, কোথায় ছবি। শান্ত গলায় বললো, ছবি মানে?
ঝাঁঝিয়ে উঠে নীপা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো,
এই দ্যাখ মানে
টেবলের এই পাশ থেকে রনি উঁকি দিয়ে ছবি
দেখে অবাক গলায় বললো, কি হয়েছে এই ছবিতে? এর মধ্যে আবার কি পেলি তুই!
কি পেলাম মানে? উত্তেজিত গলায় নীতু, তুই
সরে বসতে পারিস না, যার তার সাথে ওতো ঘেঁষাঘেষি কি তোর?
নীপার উত্তেজনা দেখে হেসে ফেললো রনি।
এই নীপা রেগে কাই, পর মুহূর্তেই ঠান্ডা পানি। পুরো উত্তর থেকে দক্ষিণ হতে সময় নেবে
না। কি থেকে যে রাগবে, কি নিয়ে হাসবে, বলা মুশকিল। তবে একটা ট্রিক সে জেনে নিয়েছে,
রাগ যতই হোক, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে আলতো চুমু খেয়ে, ভালবাসি বললেই, বউ ঠান্ডা।
হাসতে হাসতে বললো, ছেলের পাশে বসাতেই
তুই এত পজেসিভ আর মেয়ের পাশে বসলে তো তুই আমাকে আস্ত রাখতি না রে।
মুখ ভেংচে নীপা বললো, আহা, সেই আনন্দে
তুই আর কূল পাচ্ছিস না, না? ছেলে তো কি হয়েছে, মানুষ না?
আচ্ছা আচ্ছা, ঠিকাছে, চল, এবার নাস্তা
খাই, তোকে বাদ দিয়ে আর কারো এত কাছে বসবো না, ঠিকাছে, পাগল একটা তুই।
নীপা যতই রাগছে, রনি ততই হাসছে, কিছুতেই
ওর রাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটা আর নীপার সহ্য হলো না। দাঁড়া, খাওয়াচ্ছি নাস্তা বলে,
হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে, ওমলেট ভাজার পর যে চারটা ডিম ছিলো তার দুটো প্রথমে ছুঁড়ে
মারলো
এই দাঁড়া, এই দাঁড়া, বলতে না বলতেই ডিম
মাথায় লেগে, ভেঙে, কুসুমে চুলে মাখামাখি হয়ে, কান বেয়ে বেয়ে নিচে পরে রনি একদম একশা।
এবার নীপা বেশ মজা পেয়ে, খিলখিল হাসতে হাসতে বাকি দুটো ডিমও ছুড়ে মারলো। নীপার পাগলামিতে
রনি কাহিল কিন্তু ছেড়ে দিলে চলবে না, এই কুসুম মাখা মাথা, শরীর সে নীপার গালে, মুখে,
বুকে সব জায়গায় ডলে দিলো। ডিমে মাখামাখি হয়ে, জড়াজড়ি করে দুজনেই হাসতে লাগলো।
গাঢ় গলায় রনি বললো, মাথা ঠান্ডা হয়েছে
এবার সোনাবৌ?
আদর গলায় বললো নীপা, হু।
সূর্য কখন আবার ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে,
কেউ টের পায় নি। আকাশ আদরের চাদরে এদের ঢেকে রাখবে বলে, কালো পর্দা দিয়ে চারপাশ ঢেকে
ফেলেছে। ঠান্ডা বৃষ্টির ছাঁট জানালার গ্রীল ভেদ করে যখন ওদের স্পর্শ করলো, ওদের মনে
হলো, রোববার হলেও আজ আরও কিছু কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিতে ঘর, বিছানা সব ভিজে যাওয়ার আগেই
জানালা বন্ধ করতে হবে, বারান্দা থেকে কাপড় তুলতে হবে, আরও কত কি।
তানবীরা
১৬/০৯/২০১৯