tag:blogger.com,1999:blog-88092989029396361772024-03-12T17:00:11.778-07:00আমার কথাআমার ব্যক্তিগত খেরোখাতাতানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.comBlogger512125tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-81012257563002337902024-02-08T15:09:00.000-08:002024-02-08T15:09:40.187-08:00“জলে ধোয়া জবান” — আফসানা কিশোয়ার লোচনবছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি মাস। প্রাণের মাস, গানের মাস, একই সাথে শোকের মাস, অশ্রুর মাস। ফেব্রুয়ারি মানেই বাঙালি প্রাণে সাজ সাজ রব। লেখকরা ব্যস্ত থাকেন প্রচ্ছদ, বাঁধাই নিরীক্ষা করতে, প্রেসে থাকে নাই নাই ঠাই অবস্থা আর পাঠকরা পছন্দের লেখকের বইটি তুলে নেয়ার অপেক্ষায়।
আফসানা কিশোয়ার (লোচন) নামটি অনলাইনে খুব কম লোকের কাছেই অজানা। প্রতিবাদী, প্রতিরোধী, নারীবাদী, প্রথাবিরোধী এই বিশেষণগুলোর সাথে আর একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষণ ‘কবি আফসানা’। এই এতো ছোট বয়সে তার চৌদ্দতম কবিতার বই ‘জলে ধোয়া জবান’ এসেছে এবাবের বইমেলায়। আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়। একটু ব্যক্তিগত কাসুন্দি। বন্ধুরা অনেকেই বলে, আমি অনেক ডিসিপ্লিনড, পরিশ্রমী, কারণ তারা লোচনকে দেখেনি, জানে না। বাচ্চার যত্ন, সংসার, অফিস, মেহমানদারি, পরিবার, বন্ধুদের সমস্যা (প্রায় প্রতিদিন) সামলে সে প্রতিদিন লেখে, প্রতিদিনই লেখে। নিয়ম করে লেখে। অল্প আঘাতেই কাতর, ভেঙে পড়া আমি উদ্দীপ্ত হই লোচনকে দেখে। সমস্ত ঘটন অঘটনের মাঝে সে অবিচল, শান্ত আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারায় দক্ষ। বইয়ের ‘মুখবন্ধ’ পড়লেই কবির অকপটতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকবে না।
কবিকে নিয়ে অনেক হলো এবার তার কিছু কবিতা। প্রথমেই সেই অনুকাব্যটি উল্লেখ করছি যেটি থেকে চৌদ্দতম কাব্য গ্রন্থের নামকরণটি এসেছে,
‘জলে ধোয়া জবান আমার
বুকে মউতের লোবান গন্ধ
দুইন্যাজোড়া এত মানুষ
আমার ক্যান তোমারেই চাই
আমি কি সখী প্রেমে অন্ধ?’
টুপটুপ করে ঝরে পড়া ঝোলা গুড়ের মতো মিষ্টি কাব্য।
পড়ছিলাম, ‘ইনসমনিয়ার গোলযোগ’, কবিতার শেষাংশটা লিখছি আপনাদের জন্য
ঝাঁ ক্লান্ত শরীরে যখন বিছানায়
তখন ডেকে উঠলো চোখ,
মাথার ভেতর ইনসমনিয়ার গোলযোগ;
হাহাকারে বলে-তার সঙ্গে কথা হোক
তার সংগে কথা হোক। বছরে একবারও
দেখা না হওয়ার বিপরীতে রাখব না ‘অনুযোগ’।
‘বোধের অবিভক্ত আয়না’ পড়ি খানিকটা?
“ভেঙে কি সব বলা যায়?
কত কথা, তবু মনে হয় বাকি রয়ে গেলো অনেকটাই-
আমি এমন বলতেই তুমি বললে ‘আকাশ দেখো’;
দেখলাম।
-আকাশ দেখা মানে যেন নিজের নিয়মে ‘স্বাধীনতা’
চোখ দিয়ে ছুঁয়ে গেলাম।”
নিজেকেই যেন ফিরে পাই এসব কবিতার মাঝে। মনে হয়, যা ভাবি তাতো লিখতে পারি না। এতো অকপটে লেখে কি করে এই মেয়েটা!
এবার একটু রূঢ় বাস্তবে ফিরি ‘অপেক্ষা করি সাতজনম ধরে’ কবিতার মাধ্যমে-
‘আমাকে ওরা ডেকেছে হাইপেশিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করার কালে,
আমাকে ওরা আড়ালে নিয়েছে টেনে ডাইনি হত্যার ধারাবাহিক মঞ্চের দেয়ালে
কি করলে নারী পতিত হয়, নষ্ট হয় সে বয়ান ওরা আমাকে বলেছে সুরার সুরে, বীজমন্ত্রের জপে,
নারী জন্মের সার্থকতা শুধু পুরুষ নামক প্রাণীর সেবায়
ওরা আমাকে খুব করে বুঝিয়েছে সভ্যতার ক্ষমতা হস্তান্তরের নিভৃত ডেরায়।’
এবারে আরো একটি অনুকাব্য,
‘তুমি আর আমি
এই দুই শব্দের বিচ্ছেদে
লেখা আছে দুনিয়ার যত
হৃদয় ভাঙার কাহিনি’
শাশ্বত এই সত্যটি মাত্র চার লাইনে লেখা।
ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের দুইশো’র বেশি কবিতা নিয়ে এই বইটি পাওয়া যাবে ‘বাংলানামা’র ২১৮ নং স্টলে । মূল্য মাত্র দুইশো পঞ্চাশ টাকা। মনোরম এই প্রচ্ছদটি এঁকেছেন আবু হাসান।
আশা করি বইটি আপনারা নিজেরা কিনবেন, প্রিয়জনকে উপহার দেবেন।
‘লোচন’ আমার কোন লেভেলের বন্ধু সেই লেভেল আমি নিজে জানি না। শুধু এটুকু জানি, ও দু’হাত বাড়িয়ে না দিলে সুস্থ থাকতাম না। কথা হলেই বলে, ‘জীবনে প্রেম জরুরি’। “জলে ধোয়া জবান” বইটির বেশির ভাগ কবিতাও প্রেমের। আজ জিজ্ঞেস করছি, ‘মানুষ পাওয়া যায় কিন্তু প্রেম পাওয়া যায়? মানুষ মেলে কিন্তু প্রেম?’
তানবীরা হোসেন
০২/০৭/২০২৪
<div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiMiyTiiGf4NG47eDZTOA_iNwgwcVWry35SrlQVR6_glhoWQjw4qTZUhR2iuSpOhs_7SuecTvWuAFGsTOtngu8eqPvRRumBfccNGzxxwEq0zJ2CBkxEztI7p9comDiQqaLyuvuiHn-GyJTE76klPgAxMOyyiz9OfDS5qJMVzPU0QIlhRf0nKRAMRPYvsIA/s1920/426294488_10161291712594269_6182021989025738343_n.jpg" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="1080" data-original-width="1920" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiMiyTiiGf4NG47eDZTOA_iNwgwcVWry35SrlQVR6_glhoWQjw4qTZUhR2iuSpOhs_7SuecTvWuAFGsTOtngu8eqPvRRumBfccNGzxxwEq0zJ2CBkxEztI7p9comDiQqaLyuvuiHn-GyJTE76klPgAxMOyyiz9OfDS5qJMVzPU0QIlhRf0nKRAMRPYvsIA/s320/426294488_10161291712594269_6182021989025738343_n.jpg"/></a></div>তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-40963765418373595702024-01-25T03:56:00.000-08:002024-01-25T03:56:07.881-08:00এ কেমন অশ্রু তোমারhttps://www.deshrupantor.com/481381/%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0
এ কেমন অশ্রু তোমার
১
আজ বাইশ দিন কেটে গেলেও কলি এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না আমান নেই। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা তরতাজা মানুষটা প্রতিদিন সকালে যেমন অফিস যায় ঠিক তেমনই গেলো----কোভিডে যখন টুপটাপ চারদিকে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন কিছু হলো না আর এখন, ভাবতেই আবার ফুঁপিয়ে ওঠে সে। আমানের মত আমুদে মানুষ কলি খুব কমই দেখেছে। যেখানে থাকবে সেখানেই সবাইকে জমিয়ে রাখবে। হৈচৈ, ক্রিকেট, বাইরের খাওয়া দাওয়া এসব ছাড়া সে থাকতেই পারতো না সে।
চৌদ্দ বছরের মেয়ে নোরাকে নিয়ে হোম মেকার কলিকে এখন পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। যখন আমান ছিলো, নোরার স্কুল ছুটি হলেই প্রায় প্রত্যেক ছুটিতে বেড়াতে গেছে নেপাল, ভূটান, ভারত, সাজেক, এমনকি এই মধ্যবিত্ত সংসারের খরচ বাঁচিয়ে একবার সিঙ্গাপুর আর একবার দুবাই। ভবিষ্যতের জন্যে জমানোর মানুষতো আমান ছিলো না, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সে নানাভাবে উপভোগ করতে চাইতো। নোরার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, সংসার, এই বিশাল খরচ কিভাবে কোথা থেকে আসবে ভেবেই আরো দিশেহারা কলি।
সংসারের চাপে নত হয়ে সমঝোতার প্রথম কোপটি পড়লো নোরা আর আমানের প্রিয় টয়োটা কার্মির ওপর। মেয়ের খুব পছন্দের ডার্ক রেড গাড়ি, বাবা চালিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতো। আমান নেই, গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সেই আনন্দও নেই। মাত্র দু বছরের পুরনো গাড়িটি বিক্রি করে কুড়ি লাখ টাকা পাওয়া যাবে, এই মুহূর্তে সেই ক্যাশটি অনেক দরকার। প্রখর রোদে হৃদয় পুড়ে যাওয়া দুপুরে নির্জনেতে বসে মা আর মেয়েতে অঝোরে কাঁদলো। নতুন মালিক গাড়িটি নিতে আসার আগে, শেষ বারের মত গাড়িটিকে দেখে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্যে কলি নোরাকে ডাকলো,
চল নোরা, নীচে চল, শেষবারের মত গাড়িটিতে হাত বুলিয়ে আসবি আর তোর পুতুল টুতুল যা আছে নিয়ে আসবি। কত স্মৃতি তোর।
কান্নাভেজা গলায় নোরা বললো, কিছু লাগবে না আম্মু, কোন স্মৃতি চাই না। তুমি একাই যাও, ফেলে দিও আমার যা আছে সব। আব্বুই যখন নেই, কি হবে আর স্মৃতিতে।
আরো দু, একবার নোরাকে ডেকে অগত্যা একাই নামলো কলি নীচে। দুপুরের নির্জনতা ভেঙে কোথায় যেনো বেসুরো সুরে ডেকে উঠলো একটি কাক, কা কা। মনটা অস্থির লাগলেও চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি খুললো কলি, এই কঠিন সময়ে আবেগী হওয়া তাকে মানায় না। গাড়ির ব্যাকডালা খুলে নোরা আর আমানের কেডস, পানির বোতল, কোকের ক্যান, টিস্যুর বক্স এসব বের করে সামনে এলো। গাড়ির কাগজপত্র ইত্যাদি সাজিয়ে রাখছিলো ড্যাশবোর্ডের নীচের লকারে। বের করলো আমানের স্পেয়ার সানগ্লাস, মোবাইলের চার্জার, চকলেট, বাদাম, পেন আর কিছু টুকিটাকি। সামনে থেকে সেসব বের করে যেই না টিস্যু দিয়ে জায়গাটা মুছতে গেলো আচমকা হাতে এসে পড়লো আর একটি মোবাইল। উল্টেপাল্টে দেখলো, না, এ মোবাইল আমানের হাতে সে কখনো দেখেনি। বাড়িতে কোনদিন চোখে পড়েনি। অন করতে পারছে না কারণ চার্জও নেই। আচমকা গা কাঁপুনি দিয়ে একটু শীত শীত লাগতে লাগলো কলির। আমানতো সবসময় আইফোন ব্যবহার করতো, এই সিমেন্স ফোন কোথা থেকে এলো? আমানের গাড়িতে কেউ কি উঠেছিলো যে ভুলে ফেলে গেছে? যত্ন করে তুলে রেখেছিলো আমান ফেরৎ দেবে বলে?
একটু পরেই ওরা গাড়ি নিতে আসবে। সব মুছেটুছে পরিস্কার করে কলি ওপরে এলো। কার মোবাইল তাকে ফেরৎ দিতে হলেতো জানতে হবে মালিক কে।
নোরাকে ডেকে দেখালো, কার মোবাইল? জানিস কিছু? গাড়িতে পেলাম।
মাথা নাড়িয়ে নোরা বললো, না আম্মু, জানি না কিন্তু একদম সেইম মডেল, যেটা আমাকে আব্বু লাস্ট কিনে দিয়েছিলো।
কলিও সেটা লক্ষ্য করেছে। নোরার চার্জার দিয়ে ফোনটি চার্জে দিলো। কিন্তু ফোন লকড কিছুতেই খুলতে পারলো না।
২
পরদিন নোরাকে সিএনজিতে করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মোবাইল নিয়ে বসুন্ধরায় চলে গেলো সে। নীচেই মোবাইল ঠিক করে দেয়ার বেশ কয়েকটা দোকান। দুশো টাকাতে মোবাইলকে ফ্যাক্টরি রিসেটে দিয়ে খুলে দিলো দোকানের ছেলেটা। মোবাইল হাতে নিয়ে কলির মাথাটা শূন্য শূন্য লাগছিলো। খুব ধীর পায়ে লিফটের দিকে গেলো, তারপর আটতলার বোতাম চেপে রেস্টুরেন্টে বড় এক কাপ কফি নিয়ে বসলো। মোবাইলের কনট্যাক্ট লিস্টে কিছু মেয়ের নাম সেভ করা আর আছে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটসএপ। “স্বপনের রাজকুমার” নামে একটি ফেসবুক আইডি, প্রোফাইলে টম ক্রুজের ছবি দেয়া। পচাত্তর জন বন্ধু আর শুধুই মেয়ে বন্ধু। প্রোফাইলে তেমন কোন পোস্ট বা এক্টিভিটি নেই। ম্যাসেঞ্জার খুলে দেখবে কিনা ইতস্তত করছিলো কলি। কার না কার ফোন, কারো ব্যক্তিগত আলাপে যেতে তার রুচিতে বাঁধে। বুঝতেই পারছিলো না কলি এটি কার মোবাইল, আমানের কাছে কি করে এলো?
হোয়াটসএপ খুললো। শুধুই মেয়েদের প্রোফাইল ছবি দেয়া চ্যাটবক্স। খুলবে কি খুলবে না ভাবতে ভাবতেই প্রথম বক্সটাতে আঙুল পড়ে গেলো। স্ক্রল করতে করতে কলির নেশা ধরে গেলো। এরা কারা? কেন এভাবে কথা বলতো? সারা শরীরে রক্ত তার মুখে এসে জমে, মুখ লাল হয়ে গেলো। অন্যদের চ্যাটিং পড়তে তার গা গুলিয়ে আসতে লাগলো, ছিহ মাজ্ঞো ছিঃ। স্ক্রল করতে করতে উঠে এলো ছবি। কার ছবি? এটা আমান!!! আমান??? খালি গায়ে? আমানের গোপনাঙ্গ? রোমশ বুক? আমান ঐ ভদ্রমহিলাকে এই ছবি পাঠিয়েছে? আর একটু স্ক্রল করতে, ঐ ভদ্রমহিলা আমানকেও এরকম ছবি পাঠিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ, তীব্র পিপাসা পেয়েছে, কফি নয় তার দরকার বরফকুঁচি দেয়া পানি। বসুন্ধরার এই এসির মধ্যেও সে দরদর ঘামছে। কামিজ ভিজে তার গায়ে বসে গেছে। এই বেডরুম কোথায়? এটা কি কোন হোটেল? বিছানায় দুজন এভাবে, মানে কি? একসাথে এরকম ছবির মানে কি? বমি বমি লাগতে লাগলো কলির। ঝিম ধরে অনেকক্ষণ বসে থেকে নোরাকে স্কুল থেকে আনতে নামলো সে।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। ঝরছে কলি, ঝরছে সকাল, ঝরছে দুপুর, ঝরছে পাতা বাহার, ঝরছে ল্যাম্পপোস্ট, ঝরছে কাকাতুয়া। মনে হচ্ছে আকাশ দায়িত্ব নিয়েছে, পানি ঢেলে এই পৃথিবীর পঙ্কিলতা দূর করে দেবার। বৃষ্টির বড় বড় স্বচ্ছ ফোটায় চারপাশ আবার শুভ্র, পবিত্র হয়ে উঠবে।
স্কুলের গেটে কলির মুখ দেখে নোরা আৎকে উঠলো, কেঁদে ফেললো, কি হয়েছে আম্মু? শরীর খারাপ? ও আম্মু?
ক্লান্ত গলায় কলি বললো, সিএনজি দাঁড় করিয়ে রেখেছি নোরা, চলো, বাড়ি ফিরি।
বাড়ি ফিরে মেয়েকে খাইয়ে দাইয়ে, রুমের দরজা লক করে দিয়ে আবারও মোবাইল নিয়ে পড়লো কলি।
৩
আমানের অন্য এক জগৎ, যার সন্ধান সম্ভবত আমানের মা-বাবা, কাছের বন্ধু, পরিবার কেউই জানতো না। নিয়মিত বান্ধবীদের নিয়ে হোটেল, রেস্টহাউজে যাওয়া, সময় কাটানো, সেক্সটিং। তবে বোঝাই যাচ্ছে, যখন বাড়ি ফিরতো সেসব বাইরে রেখেই ফিরতো। আইফোনটা যেখানে সেখানে পরে থাকতো, আনলকড। চ্যাট পড়ে জানছে কলি, করোনার মধ্যেও সে তার বান্ধবীদের কাছে গিয়েছে, একান্তে সময় কাটিয়েছে। কতরকম আসনে দুজন দুজনের সঙ্গ উপভোগ করেছে তারও আছে রগরগে সব বর্ননা।
চা নিয়ে বারান্দায় বসেছে কলি। সাত তলা ফ্ল্যাটের বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি দেখছে সে। ভিজছে উঠোন, ভিজছে শাড়ি, ভিজছে কলির মন, ভিজছে বারান্দার গ্রীল, ভিজছে রজনীগন্ধা, ভিজছে খাঁচায় বন্দী টিয়া। কিন্তু কলি কি আসলে এই বারান্দায় আছে? তার শরীর হয়ত আছে কিন্তু মন? মাথার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঘুরছেন,
দূরে কোথায় দূরে দূরে
আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে
ছিপছিপে মেদহীন শ্যামলা লম্বাটে মুখের কলি, সুন্দরী হয়তো নয় কিন্তু মিষ্টি মুখশ্রী। টানা টানা কাজল চোখে এক পৃথিবী মায়া। সংসার চালাতে আমান এতো খেটে মরছে ভেবে কলি, কত ভাবে কত যত্নই না করতো। যতক্ষণ আমান বাসায় থাকতো, সবচেয়ে বেস্ট সার্ভিস দেয়ার চেষ্টায় তটস্থ হয়ে থাকতো কলি। শ্বশুর-শাশুড়ির ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে বহু দায়িত্ব নিজের কাঁধে রেখেছিলো যাতে আমান একটু ব্রেক পায়।
আব্বাকে বোধহয় আবার চোখের ডাক্তার দেখানো দরকার কলি। কাল বলছিলো, ঝাপসা দেখে।
সেসব নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি নাম লিখিয়ে রাখবো, নিয়ে যাবো, দেখি ডাক্তার কি বলে।
দুটো নতুন পাঞ্জাবী দরকার আব্বার?
ডাক্তার দেখিয়ে আসার সময়, পাঞ্জাবী আর ফতুয়াও কিনে নিয়ে আসবো। এই শরীরে তাহলে আব্বাকে বারবার বের হতে হবে না, একবারেই হয়ে গেলো।
এই গরমে রিক্সায় কষ্ট হবে, তোমরা রেডি থেকো আমি এসে নিয়ে যাবো।
এই জ্যাম ঠেলে দু’বার এদিকে আসার তোমার কোন দরকার নেই, আমি উবার ডেকে নেবো সোনা, ভেবো না তুমি।
সূক্ষ্ণ কিন্তু তীক্ষ্ণ অপমানবোধ তাকে তাড়া করছে। অজানা বিষে কলি নীল হয়ে গেলো। বারবার ফেসবুকে যেয়ে মোবাইলের নাম আর বান্ধবীদের মুখ মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। খানিকটা নেশায় পেয়ে গেলো তাকে। বিভিন্ন উইন্ডো খুলে চ্যাটিং পড়ছে, মেয়েদের প্রোফাইলে যেয়ে তাদের হাসিখুশি ছবি দেখছে, স্বামী আছে, সন্তান আছে, সুখে ভরপুর সেসব ছবি। যেদিন যেদিন আমান রুম ডেটে যেতো বাসায় কি বলে যেতো, সেগুলো মনে করার চেষ্টা করছে কলি। তার নিজের একটা ডায়রি বা ক্যালেন্ডার থাকলে খুব ভাল হতো ভাবছিলো কলি। থেকে থেকেই বুকের মধ্যে দাউদাউ করে, ইচ্ছে করে তাদের প্রোফাইলে কিছু একটা লিখে ফেলতে, জানাতে, তোমাদের ভণ্ডামি সব আমি জানি। আবার থেমে যায়, ভাবে, তারপর? কি লাভ? ওরাতো তার আসামী নয়। তার আসামীতো ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। নিস্ফল আক্রোশে ছটফট করতে করতে কাটছে দিন, কাটছে রাত।
নোরা অবাক হয়ে মায়ের এই পরিবর্তন দেখছে। আব্বু নেই ক’দিন মাত্র হলো আর আম্মু সারাদিন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত! সারাদিন চুপচাপ কি যেন ভাবছে আর ভাবছে। হাজার জিজ্ঞেস করেও কোন জবাব পায়নি সে।
চারপাশ নির্জন হয়ে গেলে, নির্ঘুম রাতে কলি বিছানায় একা এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবে, আমান মারা যাওয়ার পর জানতে পারাটা ভাল হলো নাকি বেঁচে থাকতে জানতে পারলে ভাল হতো?
এই যে প্রাণ প্রিয় স্বামীর জন্যে দীর্ঘ বাইশ দিন আর বাইশ রাত আছাড়ি পিছাড়ি কাঁদলো, কার জন্যে কাঁদলো? আমানের কে ছিলো সে? সাজিয়ে রাখা শোপিস যে রান্না-খাওয়া, ইস্ত্রি করা জামাকাপড়, আমানের বাবামা, বন্ধু-বান্ধবের সেবা সামাজিকতা নিশ্চিত করতো? এই পাশাপাশি শোয়া, একসাথে সংসার সাজানো, এর কতটা সত্যি ছিলো আর কতোটা অভিনয়?
জানা হবে না, কখনো জানা হবে না।
উঠে বারান্দায় এলো, দিনমান ঝরে যাচ্ছে আকাশ, ঝরছে বাইরে, ঝরছে অন্তরে, ঝরছে তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে
তানবীরা হোসেন
০৬/১২/২০২৩
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-40039109886737539442024-01-25T03:49:00.000-08:002024-01-25T03:49:43.458-08:00আদিবাআফগানিস্তানের মেয়ে আদিবা, মাত্র ডাক্তারি পাশ করে বেরিয়েছে। যুদ্ধের ডামাডোলে পরিবারশুদ্ধ পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ইরানের রিফিউজি ক্যাম্পে। সেখানে পাঁচ/ছয় মাস থাকার পর তার খালার সাহায্যে বিয়ে হয় এক ইরানি যুবকের সাথে। বিয়ের দশ বারোদিন পরেই এই নব দম্পত্তি নেদারল্যান্ডসে এসে পৌঁছায়। রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিভিন্ন ধাপ পার করে এবারের ধাপ, “ভাষা শেখা”। আমার সাথে আদিবার আলাপ “ভাষা শেখার” ক্লাশে। দুজনেই এশিয়ান হওয়াতে গল্প জমতে বেশি সময় লাগেনি। পাশাপাশি বসতাম, কফি ব্রেকে গল্প, ক্লাশ ছুটির পর গল্প। যে “আফগান যুদ্ধ” আমি টিভিতে দেখেছি, পেপারে পড়েছি, সে সাক্ষাত আমার চোখের সামনে। আমার অনুভূতি যাকে বলে “বিপন্ন বিস্ময়”। আমার প্রশ্নের শেষ নেই, কৌতুহলের শেষ নেই. বাবামায়ের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই, কবে আবার তাদের দেখতে পাবে জানে না। কিন্তু অদম্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর আদিবা। আজকে হাতে মেহেদি লাগায়তো কালকে চুলে নানারকম বিনুনি করে। আর এদিকে সপ্তাহে চারদিন বাবামায়ের সাথে কথা বলা আমি বৃষ্টি দেখলে কাঁদি, রোদ দেখলেও কাঁদতে থাকি।
খালার বাসায় কোন রকম করে হওয়া বিয়ের ছবি আমাকে দেখায় আদিবা, তার চোখে স্বপ্ন, তার বাবা বলেছে, যুদ্ধ শেষ হলে, সবাই আফগানিস্তানে ফেরৎ যাবে আর তখন অনেক বড় করে আদিবার বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। আফগানিস্তানে বিয়ে হলে কি কি রিচুয়াল হয় সেসব নিয়ে গল্প করে। ক্লাশ শেষ হয়ে গেলে আমরা যে যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে যাই। হাজার প্রমিজ সত্ত্বেও নিয়মিত যোগাযোগ আর হয়ে ওঠে না। এন্ডহোভেন তখন অনেক নিরিবিলি ছিলো, মাঝে মাঝেই ডাউনটাউনে আদিবার সাথে দেখা হয়ে যেতো। সময় মিললে দুজনেই ম্যাকে বসতাম, সেই অফুরান গল্প নিয়ে। মিসক্যারেজ হয়েছে আদিবার, বাচ্চা হচ্ছে না সেই নিয়ে স্বামী আদিবাকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছে, আদিবার সমস্যা নেই, বরের সিমেন কাউন্ট করতে হবে, কিন্তু বর তাতে রাজি হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই আদিবার গায়ে হাত তুলে এসব নিয়ে। খুব মিষ্টি একটা চলন্ত পুতুলের মতো দেখতে আদিবা, মুক্তো ঝরা হাসি যাকে বলে। শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করতো আমার। খুব স্বাভাবিক গলায় এসব গল্প করতো, যেনো কিছুই না। এতো কিছু পেরিয়ে এসেও আদিবা কি হাসিখুশি ফুর্তিবাজ আর আমি সারাবেলা মনমরা।
এর অনেকদিন পর, পাঁচ/ছয় বছর তো হবেই, আদিবাকে যখন প্রায় ভুলেই গেছি। ব্যস্ত আমি, দিনের বেলায় আর ডাউনটাউনে ঘোরার সময় নেই। এক বাঙালি বন্ধু নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে, বারবার দেখতে যাওয়ার জন্যে দাওয়াত করে তো এক সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হলো, যেয়ে ঘুরেই আসি। দেখছি একটি মেয়ে দ্রুতগতিতে এই টেবল থেকে সেই টেবলে ছোটাছুটি করছে। ক্ষিপ্রহাতে সার্ভ করছে, ক্লিন করছে। চেনা চেনা লাগতেই সেই হাসি, “আদিবা”। ছোট একটা বাচ্চা আছে (ছেলে না মেয়ে ভুলে গেছি), সন্ধ্যেবেলায় নেইবারের কাছে রেখে সে রেস্টুরেন্টে জব করছে, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে। বাবা-মায়ের সাথে এখন নিয়মিত যোগাযোগ হয়, পয়সা জমাচ্ছে যাবে দেখা করতে। সেই হাসিখুশি, সহজ আদিবা। মিথ্যে লজ্জায় লুকাচ্ছে না, প্রাণখুলে কথা বলছে। অনেকের মতো, আমিও আগে ভাবতাম, কি সাহসী মেয়ে আদিবা! কিন্তু আজ জানি, সাহসের কিছু ছিলো না এখানে, জীবন যখন যে অবস্থায় রেখেছে, আদিবা সেটাকেই মেনে নিয়েছে। পেছনে ফেরেনি, সামনে তাকিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের যুগে বন্ধুত্ব হয়নি তাই আবারো আদিবা হারিয়ে গিয়েছে।
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-57902952550038992512024-01-25T03:46:00.000-08:002024-01-25T03:46:18.496-08:00অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া
রোজকার এই আলো -আঁধারিতে অসংখ্য ভুল-ত্রুটির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আমাদের, তা সে স্বেচ্ছায়ই হোক বা অনিচ্ছায়। মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখতে হয়, প্রশ্ন রাখতে হয় এই নিজেরই কাছে। “একা ঘরে নিজেকে প্রশ্ন করা” ব্যাপারটা শুনতে যত সহজ মনে হয়, আসলে ততো সহজও নয়। শোরগোলের এই পৃথিবীকে মোকাবেলা করার মধ্যে অনেক ছলকপট থাকে আর নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে সত্যিই অনেক সাহসী হতে হয়।
“অপরাধবোধ এবং লজ্জা” এমন এক আবেগ যা নিজে তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন "জীবন ধারনের জন্যে কিংবা সমাজে বসবাসের জন্যে বেঁধে দেয়া সাধারণ নিয়মগুলি" পালন করা হয়নি। কিংবা যদি আপনার নিজের বিবেকবোধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন কিছু করে থাকেন যা প্রচলিত নিয়ম এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে খাপ খায় না। অথবা আপনি এমন কিছু করেছেন যা অন্যকে আশাহত করে বা আঘাত করে। অপরাধবোধ এবং লজ্জার অনুভূতি প্রায়শই একসাথে ঘটে, তবে মূলত জিনিসটি আলাদা।
তাহলে পার্থক্য কি?
“অপরাধবোধ” হল "আপনি কি করেছেন" সম্পর্কে একটি অসন্তোষজনক অনুভূতি। ধরুন, আপনি দোষী বোধ করছেন কারণ আপনি আপনার সন্তানের ফুটবল খেলা মিস করেছেন, অথবা আপনি একজন পরিচিতের কাছ থেকে একটি দামী ফুলদানি এনে ভেঙে ফেলেছেন। অপরাধবোধ প্রায়ই আপনাকে অন্যের দ্বারস্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুঃখিত বলার জন্যে বা ক্ষতি পূরণ করার জন্যে আপনি তার কাছে ফিরে যান।
“লজ্জা” হল "নিজের" সম্পর্কে একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি। এমন হতে পারে, আপনি লজ্জিত কারণ আপনি মনে করেন যে আপনি একজন খারাপ মা, অথবা আপনি অনেক কাজে খুব আনাড়ি। কোন প্রিয়জনের অপ্রিয় কাজেও সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে লজ্জিত বোধ করতে পারেন। লজ্জা আপনাকে পেছাতে বাধ্য করে। আপনি অন্য কারো কাছে সেটি আর প্রকাশ করতে চান না কিংবা অন্য কারো সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে চান না। এজন্য আপনি নিজেকে যতটা সম্ভব ছোট বা অদৃশ্য করে ফেলেন।
আর সমস্ত আবেগের মতো, অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধও কখনও কখনও দরকারী। অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া দিয়ে কি লাভ হয়?
• অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে "সমাজের সাধারণ নিয়মগুলো" মেনে চলতে সাহায্য করে।
o আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না।
o আপনি সুইমিং কস্টিউমে অফিসে যাবেন না।
অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে আপনার "ভুলত্রুটি" শুধরে নিতে সাহায্য করে।
• আপনি যদি ভুলবশত কারো কোনো গোপন কথা অন্যকে বলে থাকেন তাহলে আপনি দুঃখিত হবেন।
• আপনার অতিমাত্রার কেতাদুরস্ততা কিংবা আঁতেলপনা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনি নিজেকে সংযত করবেন।
সেটা কিভাবে করবেন? অন্যের চোখে চোখ রেখে, তার ব্যথা তার অপারগতার প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রকাশ করে। অন্যের প্রতি যত সহনশীল হবেন ততোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন। একা ঘরে আয়নায় চোখ রাখতে আর ঘাবড়ে যাবেন না, প্রাণ খুলে হাসতে ভয় পাবেন না।
মূলঃ মনোরোগ বিভাগ, নেদারল্যান্ডস
ভাবান্তর ও ভাষান্তর
তানবীরা হোসেন
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-8486227760539433362023-09-21T03:21:00.004-07:002023-09-21T03:21:14.336-07:00“জলের বানী”“জলের বানী”
আপনার চিন্তা আপনাকে নয় বরং আপনি আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন – ডঃ মাসারু ইমোটো
কোন এক শীতের সকালে জানালায় বসে তুষারপাত দেখছিলেন ডঃ ইমোটো। প্রতিটি তুষার কনা মাটিতে পড়েই একটি আকার ধারন করে। একটির আকারের সাথে অন্যটির আকারের কোন মিল নেই। প্রতিটি তুষারকনা’র আকারই অনন্য। তারা কিভাবে “অনন্য” আকার নেয়, এটি বিবেচনা করে তিনি কৌতুহলী হয়ে ওঠেন, পানি’কে বরফ করলে তাদের মৌলিকুলের আকার কিরকম হবে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
তিনি নিজে একটি কাঠামো/তত্ত্ব নির্দিষ্ট করে পরীক্ষা শুরু করেন যা কয়েকমাস পরে সঠিক প্রমানিত হয়েছিলো।
দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জানি, পানির নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে। ডঃ ইমোটো এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন, “পানির জীবনীশক্তি প্রাণবন্ত” ।
ঐতিহ্যগতভাবে চীনা চিকিৎসকরা “চিন্তাভাবনা”কে কম্পন হিসেবে দেখে। যাই ঘটুক না কেন, বিমূর্ত চিন্তাও অবশ্যই শরীরের মধ্যে অনুরণিত হবে। পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম তত্ত্বেও আছে “এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই কম্পমান”। এবং ডঃ ইমোটোর পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে এই কম্পনগুলি জলেও অনুরণিত হয়।
পরীক্ষার জন্যে ডঃ ইমোটো তার নিজস্ব জাপানী ভাষায় দুটো চিরকূট লেখেন, একটিতে লেখেন “প্রেম” অন্যটিতে “ঘৃণা। চিরকূট দুটোকে বোতলে আটকে দেন, লেখাটা ছিলো পানির দিকে মুখ করে। সারারাত তাদেরকে সেভাবে রাখা হলো। পরের দিন বোতলগুলোকে ডিপ ফ্রিজে রাখেন এবং তাদের ছবি তোলেন।
“ভালোবাসা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানির মৌলিকূলগুলো চকচকে পরিস্কার একটি আকৃতি তৈরি করে আর “ঘৃণা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানি থেকে বিশৃঙ্খল একটি আকৃতি তৈরি হয়ে প্রমাণ করে যে, “পানি প্রকৃত পক্ষেই কম্পনের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে”।
অবশ্যই ডঃ ইমোটো সেখানে থামেননি: তিনি তার পরীক্ষা চালিয়ে যান,
বিভিন্ন শব্দ, সঙ্গীত এবং অন্যান্য পরীক্ষা বোতল শত শত বিষয় ভাইব্রেশনাল প্রভাব, এবং ফলাফল সব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত.
'ইতিবাচক কম্পন' = সুন্দর স্বচ্ছ আকৃতি
'নেতিবাচক কম্পন' = বিকৃত অস্বচ্ছ আকৃতি
আশার কথা হলো, নিজের চিন্তাভাবনাকে ইতিবাচক রাখার জন্যে নিজের ওপরেও আপনি এই পরীক্ষাটা করে দেখতে পারেনঃ
ধরুন, আপনি নিজে আশি ভাগ আর পানি হলো বাকি বিশ ভাগ, আপনার নিজের ওপর কি প্রভাব পড়ছে? নিজের মস্তিকের কোষে?
যদি নিজেকে ভালো বাসেন, নিজের প্রতি যত্নশীল থাকেন, সারাবেলা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখেন, এর প্রভাব আপনার মস্তিকের কোষে পড়ে ঠিক তেমনি এর বিপরীত প্রভাবটাও স্পষ্টই হবে।
সারাদিনের বেশিটা সময় মানুষ নিজের সাথে কাটায়। নিজের প্রতি সদয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাতে অন্যের প্রতি আপনার কমনীয়তা আরো বাড়বে সাথে নিজের স্বাস্থ্য, শক্তি ও জীবনীশক্তি আরো উন্নত হবে।
তথ্যসূত্রঃ http://www.masaru-emoto.net/english/water-crystal.html
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-325664673494052952023-07-30T10:41:00.007-07:002023-08-02T15:29:12.918-07:00রায়হান রাফিপাইরেসি’র কারণে দেখে ফেললাম রায়হান রাফি’র সদ্য রিলিজ পাওয়া সিনেমা “সুড়ঙ্গ”। ধন্যবাদ, আমার “পাইরেট” বন্ধুদের মানে যারা আমাকে লিঙ্ক দাও আর কি তাদেরকে মীন করছি। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা অবশেষে কোলকাতার বাংলা সিনেমাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে (নিঃসন্দেহে)। কোলকাতা আটকে গেছে ফেলুদা আর ব্যোমকেশে। কিন্তু “পাইরেসি” কোয়ালিটিতে কোলকাতা আর বাংলাদেশ সমান বাজে। “অর্ধাঙ্গিনী” আর “সুড়ঙ্গ” একই রকম বাজে কোয়ালিটির। এদিক থেকে হিন্দী পাইরেটসরা ভালো, এরা উন্নতমানের ডিভাইস ইউজ করে। দুই বাংলার পাইরেটসদেরই এই দিকে একটু বেশি পয়সা খরচা করা উচিৎ।
ফ্রাইডে, পরান তারপর সুড়ঙ্গ, রায়হান রাফির ফ্যান হয়ে গেছি। অমিতাভ রেজা’র কনফিউশান মুভি থেকে অনেক বেশি ক্লিয়ার (বোধগম্য) ছবি বানায় এই ছেলে। সুড়ঙ্গ মুক্তি পাওয়ার পর অনেকগুলো সমালোচনার একটা বারবার রিপিট করেছে যেটা হলো, “রাফি, মেয়েদেরকে নেতিবাচক ভাবে দেখায় তার মুভিতে।“। আমার মতে কথাটা ঠিক না। রাফি বরং যা হয় তাই দেখানোর সাহস করেছে। অকারণে রঙচঙ দিয়ে “মেয়ে” মানেই দুর্বল তারে সিমপ্যাথি কার্ড খেলতে দাও, সেই ফাইজলামি করে নাই।
তিনটি সিনেমাতেই এক জিনিস এসেছে, “কর্মহীন কিংবা রোজগারবিহীন মেয়ে”। প্রতিটি ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছে তারপর সিনেমা হয়েছে, সে নিজের থেকে কাহিনী বানানোর কষ্টও করে নাই, রোজ এগুলো পত্রিকার পাতায় থাকে।
“ফ্রাইডে”তে স্বামী মারা যাওয়ার পর, ভদ্রমহিলা যদি নিজে একটা কাজ খুঁজতো, স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করতো তাহলে বাড়িওয়ালার এবিউজ এড়াতে পারতো। তার মেয়ে মুনা’ও সেই গৃহবধূ, ফলাফল স্বামীর দ্বারা এবিউজড। পরিনতিতে বাড়িসুদ্ধ খুন।
আমাদের দেশে স্টুডেন্ট লাইফে মেয়েদের তেমন কাজকর্ম করার রীতি নেই। ছেলেরা টুকটাক টিউশনি করে। কিন্তু সাজগোজ আর বায়না করার বয়সও সেটা। অনেক মধ্যবিত্ত বাবাই সেটা এফোর্ড করতে পারে না। অনেক মেয়েই তখন অন্য রাস্তা ধরে। “অনন্যা” চরিত্রটিও ঠিক তাই। একজন পায়ে সেধে জিনিসপত্র দিতে আসছে, সে নেবে না? ঐটুকু বয়সে কেউ পরে কি হবে সেটা ভাবে? অনন্যার মা স্বাবলম্বী হলে কিংবা অনন্যা নিজের পকেট মানি নিজে আর্ন করলে এই ঘটনাটা না’ও ঘটতে পারতো। ছোট বয়সের চঞ্চলতার মাশুল দিতে এখন কারাগারে বসে ফাঁসির দিন গুনছে।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ময়না’র বিয়ে হয়েছে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মাসুদের সাথে। নতুন বউয়ের হাজার শখ, তার বায়নায় হাবুডুবু মাসুদ যায় মালোশিয়া। অথচ মাসুদের আর ময়নার ঠিক করা দরকার ছিলো, ময়না’ও কাজ করবে এবং নিজের শখ নিজের টাকায় পূরণ করবে। ছুটির দিনে দুজন একসাথে বেড়াতে যাবে আনন্দ করবে। সব বোঝা একজনের কাঁধে না, ভাগাভাগি হবে।
মেয়েরা স্বাবলম্বী হলে কি তবে সমস্যা কমে যায় বা শেষ হয়ে যায়? একদমই না। তবে সমস্যার ধরন পালটে যায়। খুন-খারাপি অন্তত এড়ানো যায়। ২৩শে জুন প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, প্রতি চল্লিশ মিনিটে ঢাকায় একটি করে ডিভোর্স হচ্ছে। ডিভোর্সের আবেদন সত্তর ভাগই আছে নারীর কাছ থেকে। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। এই নেতিবাচক খবরের ইতিবাচক দিক হলো, এখানের অর্ধেক স্বামী কিংবা স্ত্রী খুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আগের মতো এভরি অল্টারনেট ডে’তে এখন পেপারে খবর আসে না, রাজধানীতে আবারো গৃহবধূ খুন।
মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ আছে আর এক সমস্যায়। স্বাবলম্বী মেয়েদের জন্যে এই সমাজ কাঠামো এখনও তৈরি না। আশা’র কথা শুরু যখন হয়েছে তখন কাঠামোও বদলাবে, অনেক সময় নেবে তবে বদলাবে।
তানবীরা
৩০/০৭/২০২৩
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-23817381407801088952023-07-30T05:33:00.005-07:002023-07-30T05:33:53.204-07:00এক মন্দ বউয়ের উপাখ্যানএক মন্দ বউয়ের উপাখ্যান
https://epaper.protidinerbangladesh.com/second-edition/2023-07-28/8/6130?fbclid=IwAR3GUPGteLqC4wxiN3NSpOJRcj0WgLL5q0OJTk7rMODVdRa-I-_WPco0fbo
নিশি খুব রেগে আছে, সজীবও। একজনের মুখ লাল আর অন্যজনের কালো। ঘরে এসির খানিকটা ধাতব শব্দ আর ল্যাপটপে ইতস্তত টাইপের মৃদ্যু শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দুজনেই ঘরের দুই কোনায় দুজনের ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করছে, যদিও দুজনের কারোই এখন অফিসের কাজের কোন পরোয়া নেই। না এখন কাজ নিয়ে ভাবার এতটুকু আগ্রহ আছে তাদের। সজীব নিশির দিকে আবার তাকালো। ভাবছে, এত স্বার্থপর, নিষ্ঠুর কেমন করে হতে পারে নিশি। তার জানা মতে তার আশেপাশে নিশিই ছিলো সবচেয়ে নরম, কোমল, মায়াবতী মেয়ে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার জানায় ভুল ছিলো। সকালের আলোচনায় নিশির এক কথার জবাবই যথেষ্ঠ ছিলো নিশির নির্মম আসল চেহারাটা দেখার জন্যে। যদিও সজীবের তরফ থেকে এটি এমন কোন আলোচনাই ছিলো না যেখানে নিশি এক কথায় একটা জবাব দিতে পারে। সজীব এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না যে নিশি সত্যিই এটা বলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য কয়েকদিন আগে। অপরিচিত একজন নিশিকে ফোন করে জানালো, নিশি’র বাবামা রিকশা থেকে পরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। আঘাত সেরকম মারাত্বক না হলেও গভীর। ডাক্তার তাদেরকে মাসখানেকের জন্যে নিয়মিত চিকিৎসা ও বিশ্রামের উপদেশ দিলেন। বয়সের কথা ভেবে ডাক্তার তাদের সেবা যত্নের দিকে প্রখর দৃষ্টি রাখার কথা জানালেন। নিশি তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। যে মুহূর্তে নিশি বাবামায়ের দুর্ঘটনার কথা জেনেছে সেই মুহূর্তে সে অফিস থেকে অর্নিদিষ্টকালের ছুটি নিয়ে নিয়েছে। সজীবকে বলেছে, টুকটুকির খেয়াল রাখতে, বাড়ি সামলাতে, যেটা সজীব খুশী মন নিয়েই করেছে। নিশি দিনরাত এক করে বাবামায়ের সেবা করেছে, ডাক্তার, নার্স, বাজার, ঔষধ, ফিজিওথেরাপি সব। বাবামা কি খাবে সেই রান্না, বাড়ি এখন কিভাবে চলবে সেসব বন্দোবস্ত, সাহায্যের লোক ঠিক করা, জামাকাপড় কাঁচা কি নয়। স্বাভাবিকভাবেই, ঢাকার এই জ্যাম ঠ্যাঙ্গিয়ে সে এই কয়দিন এ বাড়ি আসেনি। তাই নিয়ে সজীবের কোন আপত্তিও ছিলো না। বরং সজীব খুশী হয়েছিলো এই দেখে, কিভাবে একা তার বউ এত কিছু সামলাতে পারে। কি সুন্দর করে নিশি তার বাবামায়ের সেবাযত্ন করছে। সবচেয়ে বেশি যেটা ভাল লেগেছে, ছোট বাচ্চাদের মত করে বাবামায়ের যত্ন করছে যেনো ওরাই নিশির সন্তান।
এরই মধ্যে নিশি তার বাবামাকে আস্তে আস্তে রাজি করালো, তাদের বাসার কাছাকাছি বাসা নিয়ে চলে আসতে। প্রথমে তারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আপত্তি করেছিলো, নিজের বাড়ি ছেড়ে এই বয়সে তারা কোথাও যাবে না, ভাড়া বাড়িতো নয়ই। একদিনতো রেগে বলে দিলো তোকে এসে আর আমাদের দেখাশোনাও করতে হবে না। বাসা বদলানোর পরও, এই অসুবিধা, সেই অসুবিধা দেখিয়ে নিশিকে প্রায়ই বকাঝকা করতো। তারপর একদিন পৃথিবীর নিয়মেই আস্তে আস্তে সবাই মানিয়ে নিতে লাগলো, জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো। আজ সজীব আর নিশি সকালে নাস্তা করছিলো।
সজীব জিজ্ঞেস করলো, কিছু মনে না করো যদি, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।
তুমি যেভাবে বলছো তাতে তো মনে হচ্ছে এতে মনে করার কিছু আছে, যাহোক, বলে ফেলো তো।
যেভাবে নিজের বাবামায়ের সেবা করেছো তুমি, দেখাশোনা করছো তাদের, আমার বাবামায়ের জন্যেও কি তুমি তাই করবে? তাদের সাথে থেকে তাদেরকে নিজ সন্তানের আদর দেবে? পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবে তাদের? পাশে থাকবে তাদের তুমি? আমি জানি আমরা এখন তাদের থেকে আলাদা থাকছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যখন ওদের কোন বিপদ হবে, তুমি তাদেরকে কিছুতেই ফেলে দেবে না। পাশে থাকবেতো তাদের, নিশি?
অবিশ্বাসের চোখে নিশি সজীবের দিকে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই কি সজীব তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করছে? মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে নিশি জ্বলে উঠলো, শান্ত গলায় বললো, না, কখনোই না, আমার বাবামাকে আমি যেভাবে দেখাশোনা করেছি, সেভাবে আমি কখনোই তোমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবো না সজীব।
বলেই নিশি সজীবকে আর একটি কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়ে অফিসে চলে গেলো। আর এখন, সারাদিন পর অফিস থেকে এসে নিজের ল্যাপটপ খুলে বসে পরেছে। সজীব, ভাবছিলো, সকালের রুক্ষন ব্যবহারের জন্যে সে অনুতপ্ত হবে, সেটা নিয়ে কথা বলবে কিন্তু তার তো কোন লক্ষনই নেই। এভাবে তো ছাড়া যায় না সিদ্ধান্ত নিয়ে সজীব নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
নিশি, সকালে ওভাবে কথা বললে কেন ? তুমি কি সত্যি সত্যিই বলছো যে তুমি আমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবে না?
আমার বাবামায়ের জন্যে আমি যেভাবে করেছি, তোমার বাবামায়ের জন্যে আমি সেভাবে করবো না।
দ্বিগুন রাগে অংগার হয়ে গেলো সজীব। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললো, দয়া করে একটু খুলে বলবে, তোমার সমস্যাটা কি? তুমি এখন পক্ষপাত করছো না? এই যে সারাক্ষণ সাম্যতার কথা বলো, তোমার নিজের বাবামায়ের সাথে ব্যবহার আর আমার বাবামায়ের সাথে ব্যবহারের সাম্যতা এখন কোথায়, শুনি?
সজীবের দিকে নিশি কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, তারপর বললো, “পক্ষপাত? পক্ষপাত নিয়ে তুমি কথা বলছো? তোমার প্রশ্নটাই কি পক্ষপাতিত্বমূলক ছিলো না? তোমার বাবামায়ের যত্ন নেয়া বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো, রান্না করা, ইত্যাদি ইত্যাদি আর সব? এরমধ্যে তুমি সমতা চাও? ঠিকাছে চলো, সমান সমান করি। যখন আমার বাবামায়ের দুর্ঘটনা ঘটলো, ওদের সাথে হাসপাতালে আমি ছিলাম, তুমি কোথায় ছিলে? তোমার মেয়ে নিয়ে বাসায়। ঠিকাছে আমিও তাই করবো, মেয়ে নিয়ে বাসায় থাকবো আর তুমি তাদের সাথে হাসপাতালে থাকবে। বাবামায়ের বাসায় যখন ছিলাম তাদের জন্যে রান্নাবান্না করেছি আর তুমি নিজের মেয়ের যত্নআত্তি করেছো। তুমিও যাও, তাদের জন্যে রান্নাবান্না করো, আমিও বাসায় থেকে আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখবো। ছোট বাচ্চাদের মত তাদের দেখাশোনা করে, বাড়ির সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে আমি বাবামায়ের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করেছি আর সেসময় তুমি নিজের মেয়ের খেয়াল রেখে আমাকে সাহায্য করেছো। তুমিও তাদের সব কাজকর্ম সারো, গোছাও আমি আমাদের ঘর সংসার আর মেয়ের খেয়াল রেখে তোমাকে সাহায্য করে যাবো।
বাবামায়ের দুর্ঘটনার পর থেকে সবাই আশা করে বসে আছে আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির জন্যেও একই দায়িত্ব করবো। না, আমি করবো না। আমি আমার বাবামায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছি, তোমার বাবামায়ের সন্তান তো তুমি, তাদের প্রতি দায়িত্ব তোমার, পালনও করবে তুমি। আর এটাই তো সমতা, নাকি? তোমার বাবামায়ের জন্যে রান্না তুমি করবে, ঘরদোর তুমি পরিস্কার করবে, জামাকাপড় তুমি ইস্ত্রি করবে, আমি না। আর তুমি যদি ভাবো, তুমি “পুরুষ মানুষ” এগুলো করলে লোকে কি ভাববে, সেটার জন্যে তুমি আমাকে অন্তত অসমতায় আসতে বাধ্য করো না।
আর শেষবারের মত শুনে রাখো সজীব, দরকারে নিজের বাবামায়ের যত্ন নিজে না নিয়ে, বউ তোমার বাবামায়ের যত্ন করবে এই ভাবনাটা ছাড়ো। তুমি নিজে তোমার বাবামায়ের জন্যে কিছু না করে আশা করে আছো পরের বাড়ির মেয়ে সেটা করে দেবে। ওরা তোমার বাবামা, তুমি ওদের যত্ন করবে, আমি তোমাকে সাহায্য করবো যেমন তুমি আমায় করেছিলে। আশাকরছি, যথেষ্ঠ খুলে বলেছি, এর থেকে বেশি খুলে বলার কিছু আর নেই।
সজীব চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো আর ভাবছিলো। নিজের ভুলটা সে নিজেই বুঝতে পারলো। অবাক হলো ভেবে, কতোটা স্বার্থপর সে, নিশির ওপর সে দুইজনের বাবামায়ের সেবাযত্নের ভার চাপিয়ে দিচ্ছিলো আর তার নিজের যে দায়িত্ব আছে সে কথা সে ভাবেইনি। ছোটবেলা থেকে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় এই দেখে দেখে বড় হয়েছে সে বলে অনুভবই করেনি পুরুষেরা কতটা অলস আসলে। এখন সময় হয়েছে তার, নিশির কাছে ক্ষমা চাওয়ার।
ভারতীয় লেখক আল্লাম ভাবানার লেখা থেকে ইষৎ পরিমার্জিত ভাষান্তর।
তানবীরা হোসেন
০২/০৮/২০২৩
https://www.momspresso.com/parenting/ginger-thoughts/article/should-a-daughter-in-law-take-care-of-her-parents-in-law-an-honest-answer?fbclid=IwAR3mfyROMsZ2z8VS3EV9IF-DBqQ5b7FgrvIwoL2fBpBLnJwhiUZ2MCD8hzQ
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-76383757982213811322023-07-30T05:32:00.003-07:002023-07-30T05:32:25.058-07:00ঐ রঙধনু থেকে কিছু কিছু রঙ এনে দাও নাজীবন মানেই জি-বাংলা, সমস্যা, ঝামেলা, দু:খ, আক্ষেপ, হতাশা, আনন্দ, হাসি নিয়েই আমাদের এইসব দিনরাত্রি।
আসলে সুখী, পরিতৃপ্ত, শান্তির জীবন মানে কি? হতাশা, অনিশ্চয়তা,ব্যথা,দুঃখ-কষ্ট ছাড়া জীবনযাপন? আমরা অনেকেই ভাবি, এই ঝামেলাটুকু কাটিয়ে উঠলেই, “লিভিং হ্যাপিলি এভার আফটার”। আসলেই তাই হয়? একটি পূর্ণ জীবন যাপন করলে তবেই এই অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি আসে, “লাইফ ইজ নট আ বেড অফ রোজেজ”। হতাশা, গ্লানি, অবসাদ সব পরিপূর্ণ জীবনেরই অংগ। শারীরিক কিংবা মানসিক ব্যথা এড়িয়ে জীবন যাপন করার চেষ্টা খানিকটা অর্ধেক জীবনযাপন করারই শামিল। আমিও আর সবার মত জীবনের বিভিন্ন রঙ/স্তর দিয়ে যাবো এই চিন্তাটা না থাকলে বরং এটি মানসিক যন্ত্রণাকে বাড়িয়েই তোলে।
তাহলে পরিপূর্ণ,সুখী জীবনের মূলমন্ত্র বা সূত্র কি? “এক্সেপটেন্স” খুব সাধারণস্য সাধারণ বাংলায় যাকে বলি আমরা “মানিয়ে নেয়া বা মেনে নেয়া”। জীবনে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা, বেদনা আসবে, “পার্ট অফ লিভিং” ভেবে এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করাই পরিপূর্ণ জীবনের যাদুমন্ত্র। সেদিন আলিয়া ভাটের একটা রিল দেখছিলাম, আলিয়া বলছে, “জীবন হচ্ছে, বেশিটা কষ্টের, হতাশার, হাহাকারের, দুঃখের আর অল্প কিছু সুখের মুহূর্তের সমষ্টি। আমরা সবাই আমাদের গভীর গোপনে, গহনে সেসব লুকিয়ে রেখে সারাদিন হাসিমুখে ঘুরি।“ ছোট বয়সেই মেয়েটার কি গভীর জীবনবোধ।
নিজস্ব মূল্যবোধ, মেনে ও মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, নমনীয়তা, শান্তিতে থাকার পথ প্রশস্ত করে। এটি আসলে প্রতিদিন অনুশীলণ করার মতো। অনুশীলণ করে করে নিজের মধ্যে অভ্যাস করে নিতে হবে, তবেই বেঁচে থাকার আনন্দ, স্বাধীনতা, “কোয়ালিটি অফ লাইফ” অনেক বেশি উপভোগ করতে পারা যাবে।
(কিছুটা নিজের আর কিছুটা বইয়ের)তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-63905986316752994642023-05-25T08:42:00.005-07:002023-05-25T08:42:33.867-07:00বেহুলার ভাসান - ৩ ইন্দুবালা-মৃনালিনীকল্লোল লাহিড়ী'র লেখা "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" এর ইন্দুবালা কোন ঐতিহাসিক বাস্তব চরিত্র নয় বটে কিন্তু হাজার হাজার বাস্তব চরিত্রের প্রতিনিধি "ইন্দুবালা"। ইউরোপের লন্ডন শহরেই অনেক "সিলেটি কন্যা" পাওয়া যাবে যারা বিয়ে করে লন্ডনে এসেছে আর কখনো সিলেট ফেরত যায়নি বা যেতে পারেনি। লন্ডনে এরকম অনেক ভারতীয় মেয়েও আছে বলে শুনেছি। স্বপ্ননগরী নিউইয়র্কেও সেই হাল। "ইন্দুবালা" মানে শুধু দেশভাগ নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু হিন্দু-মুসলিম নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু বাঙাল আর ঘটি নয়, "ইন্দুবালা" মানে শৈশব-কৈশোর হারানো, ভাষা হারানো, স্মৃতি হারানো, নিঃস্ব হওয়া, রিক্ত হওয়া পৃথিবী জোড়া হাজার হাজার মানুষ।
বাড়িঘর সরেজমিনে না দেখে, ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়ে, এমনকি পরিবারের মেজাজ মর্জি জানাও গুরুত্বপূর্ন ভাবেনি ইন্দুবালার বাবা। তাঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছে, কোলকাতার শহর, ছেলের দালান বাড়ি কোঠা, মাস গেলে ক'টা টাকার মাইনের নিরাপত্তা। অচেনাপুরী দৈত্যপুরীতে মেয়েকে রেখে এসেছেন আর কখনো কোনদিন চোখের দেখাও দেখতে পাননি। তবে ইন্দুবালা সৌভাগ্যবতী আর সাহসী, তিনি সব প্রতিকূলতার মাঝেও বেঁচে ছিলেন, আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন এবং প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও খুন হয়ে যান নি।
বহু ইন্দুবালাই আছেন দেশ জুড়ে, বিদেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে, বাবার বাড়ি বা তার নিজের কৈশোরের বাড়ি আর কখনো চোখে দেখেনি, এমনকি বাবা শ্বশুরবাড়ি এলে বাবাকেও দেখতে পায়নি। কোলকাতার বিখ্যাত "ঠাকুরবাড়ি"র কথা ধরা যাক। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ভবতারিণী কিংবা মৃণালিনী দেবী আর কখনো ফিরে বাপের বাড়ি যায়নি এমনকি তার বাবা তাকে দু'একবার দেখতে এলেও সেটিকে ঠাকুরবাড়িতে বিশেষ প্রীতির চোখে দেখা হতো না (ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ চিত্রা দেব)। তো ভবতারিণী'র কি কখনো যশোরের সেই গ্রামের জন্যে মন কেমন করেনি? মা'কে দেখতে, ঠাকুমা দেখতে প্রাণ উথালপাথাল হয়নি? ভবতাতিনী কি ইন্দুবালা নন? নিজের নামটি পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটক "অয়োময়"তে দেখিয়েছেন, জমিদার বাড়ির বউদের বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার নিয়ম নেই, সে যতোই জমিদার কন্যা হোক না কেন। বড় ঘর, বড় বংশ, টাকা পয়সা, মার্সিডিজ, ক্যাডিলাকের চটকে মেয়ের বাবা'রা মেয়ের মুখটা হারিয়ে ফেলেন। মেয়ের সুখ নিশ্চিত করতে গিয়ে মেয়ের জীবন বিপন্ন করে ফেলেন। সামাজিক প্রতিপত্তির কাছে হারিয়ে যায় মেয়ের নিরাপত্তা, মেয়ের আনন্দ।
ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা বিসর্জনের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা ত্যাগের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা খুনের ইতিহাস। যুগে যুগেই বিভিন্ন রীতিতে, বিভিন্ন কায়দায়।
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-23792610859628332942023-05-18T04:26:00.001-07:002023-05-18T04:26:31.040-07:00বেহুলার ভাসান - ২ মনির আর রীমা
১৯৮৯ সাল, আমাদের পড়ন্ত কৈশোরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো, “শারমিন রীমা” হত্যাকান্ড। ৯ই এপ্রিল খুন হয় রীমা। সেসময়ের ঢাকা শহরে বিখ্যাত যেকজন গাইনী ডাক্তার ছিলেন তার মধ্যে ডাঃ মেহেরুন্নিসা ছিলেন অন্যতম আর ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবুল কাশেমের একমাত্র ছেলে মনির হোসেন। সর্বদিক থেকে হাই প্রোফাইল কেইস ছিলো, কি নেই এতে? পারিবারিক পরিচয়, বেশুমার টাকা, গ্ল্যামারাস নারী, প্রায় বলিউড মুভির ঘটনার মতোই। রোজ সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় তিন কলাম জুড়ে নানা ছবি সহ সংবাদ। সাধারণ পরিবারের মেয়ে বা বউ হলে হয়তো বড় জোর ভেতরের পাতায় ছবি ছাড়া একদিনের এক কলামের সংবাদ হতো “রাজধানীতে গৃহবধূ খুন”। তবে অনেক টাকা আর ক্ষমতা সত্বেও ছেলের মা পাবলিক অপিনিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলে যদি দোষী হয়, তবে তার ফাঁসি হোক”। বিচারে অবশ্য মনিরের ফাঁসিই হয়েছিলো। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সমাজ, সংসার, আদালতে শুধু একপক্ষকে টানা হ্যাঁচড়া করা হয় অন্যপক্ষকে ছেড়ে দেয়া হয় সিনেমার শেষ দৃশ্যর মত “কান্নাকাটি” করার জন্যে। বাস্তবতা হলো, সব ঘটনায় দুইটা পক্ষ থাকে, শুধু যে ছুরি মারে সেই দায়ী? ছুরি মারার ক্ষেত্র যারা প্রস্তুত করে তাদের কেন কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে না?
রীমার পরিবারের কাছে সমাজের প্রশ্নঃ
১। মেয়েপক্ষ ছেলের পড়াশোনা যাচাই বাছাই করার কোন চেষ্টা করেনি। “এমেরিকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এসেছে” ছেলে পক্ষের এই কথায় ঈমান রেখেছে। সার্টিফিকেট কিংবা ইউনিভার্সিটি কোনটাই নেড়েচেড়ে দেখতে যায় নি। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে দিয়েছে নন ম্যাট্রিক ছেলের সাথে।
২। মনিরের বন্ধু সার্কেল, লাইফ স্টাইল সম্পর্কে কোন খোঁজ নেয়নি। সেটা করলেও পড়াশোনা কিংবা স্বভাবচরিত্রের ব্যাপারটা উঠে আসতো।
৩। ছেলের নিজের ক্যারিয়ার চাকুরী-ব্যবসা নিয়েও তারা মাথা ঘামায় নি। সম্ভবতঃ ছেলের মা-বাবার ক্যারিয়ারই মেয়েপক্ষের জন্যে যথেষ্ট ছিলো।
৪। ছেলের অন্য সম্পর্ক, প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদি নিয়েও খোঁজ নেয়া বাহুল্য মনে করেছে।
৫। বিয়ের তিন মাসের মাথায় ছেলেমেয়ের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে, তাও যে সে ঝগড়া না, ছেলে, মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে তারপরও, ছেলে আর “করবে না” বলাতে তারা ছেলেকে বিশ্বাস করে মেয়েকে ছেলের সাথে দিয়ে দিয়েছে।
৬। মেয়েকে ছেলের গার্জেনের সাথে ছেলের বাড়িতে দেয় নি, এই ঝগড়াঝাটির উত্তাল মুহূর্তে একা বেড়াতে নিয়ে যেতে দিয়ে দিয়েছে। মনির বুদ্ধিমান হলে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েই “রীমা”কে শেষ করতে পারতো। আলাদা খুনের প্রয়োজন ছিলো না।
৭। যে ছেলে এতো ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন নারীতে আসক্ত, বিয়ের তিন মাসের মধ্যে নতুন বউ রেখে পুরান বান্ধবী/বান্ধবীদের কাছে ছোটে, সে “আর যাবে না” বলাতে রীমার পরিবার সেটাও বিশ্বাস করেছে। কি করে এটা সম্ভব? তিন মাস যে এক বউতে কাটাতে পারে নাই, সে সারা জীবন কাটাবে কি করে?
এই ঘটনার সবচেয়ে ট্র্যাজিক পয়েন্ট আমার কাছে যেটা লাগে, “রীমাকে তার মায়ের বাড়ি থেকে, মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে দুই দিনের মধ্যে মেরে ফেলেছে”।
শারমিন রীমার বাবা ছিলেন সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ যিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। যে ভদ্রলোক একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন জাতি সত্ত্বার স্বপ্ন দেখার মত দূরদৃষ্টি রাখতেন তাঁর পরিবার এতোটা অদূরদর্শী হয় কি করে! মেয়েকে মরার জন্যে ঠেলে দিয়ে, মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার নিয়ে সবাই কাঁদতে বসে আর আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করে যেনো আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কেমনে? সব মায়েরা একই কাজ করে ভিন্ন ফলাফল আশা করে কোন মিরাকলের ভরসায়?
মনিরের থেকে প্রায় দেড় গুন বয়সী বড় তিন সন্তানের জননী খুকুকে বিয়ে করে মনির যদি ডাঃ মেহেরুন্নিসার সম্মানের হানি করে ফেলে তাই তিনি তার “সোশ্যাল অনার” বাঁচাতে “মধ্যবিত্তের মেয়ে রীমা”কে বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। “সোশ্যাল অনারে”র স্বীকার এখানে মনির আর রীমা’র দুটো জীবন।
***প্রায় পুরো লেখাটা স্মৃতি থেকে লিখছি, কিছু তথ্যের ভুল ভ্রান্তি হয়তো থাকতে পারে।***
<div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhh9zPoEW2h3Ce9r481DZBUsrrAnzj8-HziWBNfTGNQpq9SyvD0kR9adup3d_Fe8hZ8XlXYa6NZeaKJP9TecTRLQaRtjrnbdTK0TDErjkKk3MlbLTW-CU1teCdtJI22Xx4ZTqHJhFXcau_UGSKAG2pMSzhh6Jkaa9-ohKAUXRGmH1rKlLhfkOvdgZRh/s534/271536261_2524817384321506_859146952946126466_n.jpg" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="436" data-original-width="534" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhh9zPoEW2h3Ce9r481DZBUsrrAnzj8-HziWBNfTGNQpq9SyvD0kR9adup3d_Fe8hZ8XlXYa6NZeaKJP9TecTRLQaRtjrnbdTK0TDErjkKk3MlbLTW-CU1teCdtJI22Xx4ZTqHJhFXcau_UGSKAG2pMSzhh6Jkaa9-ohKAUXRGmH1rKlLhfkOvdgZRh/s320/271536261_2524817384321506_859146952946126466_n.jpg"/></a></div><div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg_3uzcXt-0pwO8qgg87d0tyWTadMQmE4URaunlvnpZkNlubHhWv-VqmUgiAzcSfsP25Cj7qgJDM50DNv0ANFzP3cpLXYpIQkB_XWPydP-3c1oiLCuCjS2THBFHmoiyRMrdheY1SxxPghvBq0hNyRtkiI0kyv3PNhvSoSsshEi50t_KyBZtm61v2qeB/s750/resize.jpg" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="500" data-original-width="750" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg_3uzcXt-0pwO8qgg87d0tyWTadMQmE4URaunlvnpZkNlubHhWv-VqmUgiAzcSfsP25Cj7qgJDM50DNv0ANFzP3cpLXYpIQkB_XWPydP-3c1oiLCuCjS2THBFHmoiyRMrdheY1SxxPghvBq0hNyRtkiI0kyv3PNhvSoSsshEi50t_KyBZtm61v2qeB/s320/resize.jpg"/></a></div>তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-82969596265723543372023-05-07T07:33:00.004-07:002023-05-07T07:33:43.854-07:00জন লেনন ভাবান্তরঃ তানবীরাপাঁচ বছর বয়স থেকে মায়ের কাছে শুনে আসছি, “সুখী” হওয়াটাই জীবনের মূল কথা।
যখন স্কুলে গেলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করলো, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও?
আমি বললাম, “সুখী”
স্কুল আমাকে বললো, তুমি আমাদের প্রশ্নটা বোঝনি।
আর আমি বললাম, তোমরা জীবন বোঝনি।
“When I was 5 years old, my mother always told me that happiness was the key to life. When I went to school, they asked me what I wanted to be when I grew up.
I wrote down ‘happy’. They told me I didn’t understand the assignment, and I told them they didn’t understand life.”তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-52208108616692394542023-05-07T07:33:00.000-07:002023-05-07T07:33:01.272-07:00(দ্যা ওয়ার উইল এন্ড) --- মূলঃ মাহমুদ দারবিশ ভাষান্তরঃ তানবীরা হোসেনতারপর একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে।
নেতারা নিজেদের মধ্যে হাত মেলাবেন।
বৃদ্ধা মা তার মৃত ছেলের পথ চেয়ে অপেক্ষায় বসে রইবেন।
প্রেমময় স্বামীর প্রতীক্ষায় রাত জাগবে মায়াবতী স্ত্রী।
বীর বাবার পদধ্বনির জন্যে প্রহর গুনবে তাঁর সন্তানরা।
কে বিক্রি করেছে আমার মাতৃভূমি, জানি না আমি
কিন্তু কারা এর মূল্য দিয়েছে, সেটা দেখেছি।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-5712345677935161542023-05-07T07:27:00.003-07:002023-05-07T07:29:52.244-07:00বেহুলার ভাসান - ১<div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgobG9KbOTlEvLFJpXpg1aey4txbDQXC1clnBoQ5oHcyxrsarCqRVNIrbfp-VIsJmEGdAfkwlrk70mLU7w_INnrQ6Ler1W0gH0UJt84zQ8A4N3xjvE9bCyod5YqgEUZLnjYFnxndQI18anFOEkZHMdySSN97B2ufk8ZnKVc9LxAHhySTjmRB3363-Gz/s621/unnamed.png" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="414" data-original-width="621" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgobG9KbOTlEvLFJpXpg1aey4txbDQXC1clnBoQ5oHcyxrsarCqRVNIrbfp-VIsJmEGdAfkwlrk70mLU7w_INnrQ6Ler1W0gH0UJt84zQ8A4N3xjvE9bCyod5YqgEUZLnjYFnxndQI18anFOEkZHMdySSN97B2ufk8ZnKVc9LxAHhySTjmRB3363-Gz/s320/unnamed.png"/></a></div>
আমের রাজ্যের রাজকুমারী হীরাকুমারী, যিনি “হীরাবাই” নামেও পরিচিত, রাজস্থানের রাজপুত ঘরানার রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা। এটি পড়লে কেউ তাকে চিনতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। যদি বলি মোগল সম্রাট আকবরের স্ত্রী “যোধাবাই” তাহলে অনেকেই চিনবেন কিন্তু সত্যিই তিনি “যোধাবাই” নামে পরিচিত ছিলেন কিনা তা নিয়ে খোদ ঐতিহাসিকদেরই সন্দেহ আছে। ষোলশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক সমঝোতার অঙ্গ হিসেবে হিন্দু রাজপুত রাজকন্যা যোধার সাথে মুসলমান মোঘল সম্রাট আকবরের বিয়ে হয়। বলা বাহুল্য, যোধার চরম আপত্তি ও অমতেই এই বিয়ে হয়।
মহান সম্রাট আকবর সম্পর্কে ভিনসেন্ট স্মিথের মত আকবেরর উচ্চ প্রংশসাকারী যিনি “ Akbar- the great Mughal” রচনা করেছেন, তিনি কি লিখেছেন পড়ি, “ আকবর উচ্চতায় ছিলেন গড়পড়তা এবং বাম পায়ের কারনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তার মাথা ডান কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকত। তার নাক ছিল ছোট ও সামনের হাড় ছিল মোটা। তার নাসিকা গহ্বর দেখলে মনে হত তিনি রেগে আছেন। অর্ধেক মটর দানার সাইজের সমান একটি আঁচিল ছিল যা ঠোঁট ও নাসিকা গহ্বরের সাথে যুক্ত। সে দেখতে কালো ছিল।”
জাহাঙ্গীর লিখেছেন, “আকবর নেশাগ্রস্ত অথবা সর্তকাবস্থায় তাকে শেখ বলে ডাকতেন।“ এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে আঁকবর একজন নেশাগ্রস্থ ছিলেন।
আকবরের সহচর ইয়াকুবা লিখেছেন, আকবর এতই মদ পান করতেন যে মাঝে মাঝে অভ্যাগত অতিথিদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি মাঝে মাঝে তাড়ি (তালের রস দিয়ে তৈরী নেশা জাতীয় পানিয়) পান করতেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পান করতেন তখন তিনি উম্মাদের মত আচরণ করতেন।
“মহান আকবরের শিক্ষাগত যোগ্যতা” জাহাঙ্গীর লিখেছেন আকবর মাঝে মাঝে বিদ্বানদের মত আচরণ করতেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন।
আবুল ফজল আইন-ই- আকবরে লিখেছেনঃ ” শাহেন শাহ্ আকবরের ঘরের সামনেই একটা শুঁড়িখানা স্থাপন করা হয়। সেখানে অসংখ্য বণিতা জড়ো হত যা গণনা করা কঠিন হয়ে পড়ত। সভাসদগন মাঝে মাঝে নর্তকীদের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু যদি কেউ কোন কুমারীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইতেন তাহলে তাকে অবশ্যই আকবরে কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত। কখনো কখনো যুবকদের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত। একবার আকবর নিজেই কয়েকজন বনিতাকে ডাকলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কে কুমারিত্ব ছেদন করতে চাও।”
এখন কথা হচ্ছে, কীভাবে এতগুলো বণিতা একই সময়ে জড়ো হবে? অবশ্যই সেসকল ভাগ্যহীন নারীরা ছিল হিন্দু পরিবারের যারা যুদ্ধাবন্দী অথবা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করে সহায় সম্পত্তি লুট করা হয়েছে এবং আশ্র্য়হীন তাদের বন্দী করা হয়েছে। কারন ধারণা করা হয় মুসলিম রমণীদের পর্দার আড়ালে রাখা হতো এবং আকবর তার গৌরবজ্বল শাসনামলে সারাজীবন অসংখ্য হত্যা ও নারী অপহরণ করে ছিলেন।
আকবরের শাসনামলে মিনা বাজার খুবই জনপ্রিয় ছিল যেখানে প্রতি নববর্ষ রাতে বিভিন্ন পরিবারের নারীদের হয় ফুসলিয়ে, প্রতারনা করে অথবা জোরপূর্বক জাঁহাপনার সম্মুখে হাজির করা হতো বেছে বেছে নেওয়ার জন্য।
এ সমস্ত রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে, আকবরের পয়সা খাওয়া তার পছন্দের পরগাছা ইতিহাসবিদের লেখা থেকে, কোন নিন্দুকের লেখা মিথ্যা অপবাদ নয় এগুলো।
আবুল ফজল আকবরের হেরেম সম্পর্কে বর্ননা করেছেন, “সেখানে ৫০০০ নারী ছিল এবং প্রতিটি নারীর আলাদা থাকার ঘর ছিল” এছাড়াও আকবরের ৩৬ জনেরও বেশী স্ত্রী ছিল। তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন যোধাবাঈ। সম্রাট আকবরকে নিয়ে অনেক লেখাজোকা থাকলেও রাজকন্যা এবং মুঘল সম্রাজ্ঞী হীরাবাঈ মতান্তরে যোধাবাঈকে নিয়ে তথ্য পাবেন খুব সামান্য। তবে জানা যায়, নয়নকাড়া সুশ্রী হীরাবাঈ নিরামিষভোজী ছিলেন, রাজবাড়ির রাজ রঁসুই ঘরের খাবার তিনি খেতেন না, তাঁর রসুইঘর ছিলো আলাদা। রাজপ্রাসাদেই তাঁর আলাদা পূজা ঘর ছিলো। তিনি পড়াশোনা জানতেন, গানের তালিম ছিলো, নিখুঁতভাবে তলোয়ার চালানো, ঘোড়া চালানো জানতেন। মানসিকভাবে দু’জন প্রায় ভিনগ্রহের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও মদ্যপ, লুটেরা, চরিত্রহীন আকবর বাদশাহের কাছে রাজা ভাগলব তার মেয়ের বিয়ে দিতে কুন্ঠা করেননি।
এটাকে কি বলা যায়? সতীদাহ না অনার কিলিং? লর্ড কর্নওয়ালিস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় লর্ড বেন্টিকের সাথে মিলে সরাসরি আগুনে “পুড়িয়ে মারা” বন্ধ করতে পেরেছেন কিন্তু “বাঁচিয়ে রেখে মেরে ফেলা”র প্রতিকার কে করতে পেরেছে? খুব নির্মোহ চোখে দেখলে “যোধা”র কি জীবনের ঝুঁকি ছিলো না এই বিয়েতে? বাবা কি মেয়েকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দেননি? ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন জীবনাচার, ভিন্ন খাদ্যভাসে মানিয়ে নেয়া এতোই সহজ? রাজনীতির কূটকৌশল না থাকলে প্রাণে বাঁচতেন যোধাবাঈ?
যুগ যুগ ধরে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে ঘটে চলা এই “অনার কিলিং” এর কাহিনী লিখতে শুরু করলে, কত সহস্র আরব্য রজনী লেখা যাবে?
তানবীরা হোসেন
০৪/০৩/২০২৩
<div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgIRBsrJRYTl-AFN0nMlEsIDU0ZkMH0Duebl__6flOJEIOq1Y74CXK1KNMGWjYcMNZa5sFuBdfEgkJ0Hb1OxWv4rHsHYjnHYR26hMqYqsoXlyH2EoU0jLOaLu5sN5Jca02GHubXHybA2LIFhjtZ9Fv-GAew2rv-oQ5AgPtdbWHbRrJ2_Vl3NIuGIAnW/s289/images.jpg" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="175" data-original-width="289" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgIRBsrJRYTl-AFN0nMlEsIDU0ZkMH0Duebl__6flOJEIOq1Y74CXK1KNMGWjYcMNZa5sFuBdfEgkJ0Hb1OxWv4rHsHYjnHYR26hMqYqsoXlyH2EoU0jLOaLu5sN5Jca02GHubXHybA2LIFhjtZ9Fv-GAew2rv-oQ5AgPtdbWHbRrJ2_Vl3NIuGIAnW/s320/images.jpg"/></a></div><div class="separator" style="clear: both;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgW6FOxp24c6Nn2qqFecELiMOXVBLvcA38NqNHu4AFdylr6bDuqlI9qB9n5WDgL3sBsbd5soauchxb6KI5aeLVJWIBsjZu-TU8dy2UPAVEckQqL-nhdXrmXftJ-P3F6gmJ5JRXhi1dPs5Xa2p8ou9UCniQuCoP62W4xz3F3fjrT6_TCNL82bzpo93pj/s621/unnamed.png" style="display: block; padding: 1em 0; text-align: center; "><img alt="" border="0" width="320" data-original-height="414" data-original-width="621" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgW6FOxp24c6Nn2qqFecELiMOXVBLvcA38NqNHu4AFdylr6bDuqlI9qB9n5WDgL3sBsbd5soauchxb6KI5aeLVJWIBsjZu-TU8dy2UPAVEckQqL-nhdXrmXftJ-P3F6gmJ5JRXhi1dPs5Xa2p8ou9UCniQuCoP62W4xz3F3fjrT6_TCNL82bzpo93pj/s320/unnamed.png"/></a></div>তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-21090499277232988802023-02-26T03:16:00.004-08:002023-02-26T03:16:43.255-08:00“পদ্ম পদ্য” – আফসানা কিশোয়ারের সাথে একটি অক্ষিপথ ভ্রমণ
আজকাল কবি হওয়া যত সোজা, মানুষ হওয়া ততো কঠিন। ধৈর্য্য, সহ্য, অধ্যবসায় দিয়ে এই কঠিন পরীক্ষা পার হওয়া প্রানীর সংখ্যা নিতান্ত কম। অবশ্য সেটা সবকালেই কম ছিলো। এই কমের একজন আফসানা কিশোয়ার লোচন, এত সেলফলেস মানুষ অন্তর্জালে অন্তত বিচরণ করে না। নিঃস্বার্থ, পরোপকারী এবং পরিশ্রমী “মানুষ লোচনের” কাছে “কবি লোচন” পরিচয় নিন্তাতই গৌন।
গরম গরম ভাজা জিলাপীর গা বেয়ে টসকে পরা রসের মত উপাদেয় সব লেখা, ভিডিও, মীম ইত্যাদির সাথে ভুবনমোহিনী হাসি মাখানো ছবি দিয়ে টাইমলাইন তার মাখামাখি। কোনদিন কোন লেখা টাইমলাইনে আসবে সেটা নির্ভর করে নিতান্তই কবির খেয়ালের ওপর। মন মেজাজ ঢাসু থাকলে আসবে কাঁচামিঠা আমড়া লেখা, যেদিন কবি প্রেমে বুঁদ সেদিন পাঠক পাবে অপু-বুবলি লেখা আর মাঝে মাঝে হৃদয় নিংড়ানো সেরকম পদ্মা নদীর মাঝি জীবনধর্মী লেখা। কবিতা পড়ি, দুষ্টুমি করি, খোঁচাই সব কিন্তু আদতে অপেক্ষা করি সেই জীবনধর্মী লেখাগুলোর। যেগুলো পড়ার পর আমার বুকের মধ্যিখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানেতে শিরশির করে। বারবার পড়ি আর ভাবি এরকম অনুভূতি বা ভাবনার মধ্যে দিয়ে তো আমি অহরহ যাই কিন্তু আমি কেনো আমার ভাবনাটা ঠিক এরকম গুছিয়ে লিখতে পারি না? সেই সাত সকালে মোম গলার মত মাঝে মাঝে চোখও গলে আমার।
কথা অনেক হলো এখন কিছু কবিতার শুরুর অংশ পড়ে ফেলা যাক, আমার পছন্দের। শুরু করা যাক, কবির পছন্দের প্রেমের কবিতা দিয়ে,
যে কথার মানে নেই
সই, আমার জন্য যে শাড়িটা ড্রাইওয়াশ করে তুলে রেখেছো তা পাট ভেঙে তুমি এবার পরে ফেলো দ্বিধা ছাড়া। যে রিসোর্টে আমার জন্য গ্লাস সাজানো সেগুলোও অন্য কারও জন্যে ব্যবহার করতে পারো অনায়াসে। তুমি যে পথে হাঁটো সে পথে আমার হাঁটা নিয়তি তা আমি জানি। এ হাঁটাটা হবে একার। তুমি আমাকে প্রার্থনায় রাখো-সে শব্দ আমার কানে মৃতের শোকগাঁথা হয়ে ধরা দেয়। তোমার গ্রহে আমি থাকব, আমার সবটা জুড়ে তুমি-তবু স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা কখনো মুখোমুখি হবে না, তারা পালাবে ভিন্নপথে। তোমার আমার জন্যে কোন অপেক্ষা নেই, আমার আছে অভিমানের বিরহ। সব অনুভব একদিন সকাতরে কেঁদে ডুবে যাবে সাতশ পাঁচ নদীর জলে। আমার ফেরা হবে না তুমি ডাকলে না বলে।
অর্থহীন এই অভিমান করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার কিন্তু সবাই শুধু এত গুছিয়ে লিখতে পারে না।
কবিকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাদের কাছে নীচের কবিতা নিতান্তই পরিচিত লাগবে। কবি এমনই, ভাণ-ভনিতা ছাড়া
তুমি একটা যাতা
আমি তোমারে হ্যাংলা হইয়া কলম কইরা বুক পকেটে রাখি নাই।
পোলাপাইন্যা ঢঙে মোবাইলের স্ক্রিনসেভারেও থুই নাই।
মানুষ ভালবাসলে শিমুলের তুলা উড়ার ছবিতে তার ফুল এদিক ওদিক ঘ্রাণ ছড়ায়
এই আলামত পাইলেই কেউ ভীরু হরিণ হইয়া আমাজনের জঙ্গলে পা বাড়ায়?
আমার নাম কি কলঙ্ক যে পাশে বইলেই কালি লাইগা যাইব?
আমারে যারা নিন্দা করে তারা তোমারে এমন কইরা মায়া দিব?
তারপর সাধারণ মানুষের একটি অসাধারণ দীর্ঘশ্বাস। এক নাম না জানা অচেনা কারো জন্যে ভর সন্ধ্যায় কার না বুক এমন হুহু করে
অপেক্ষা
কত কত মানুষ আত্মজীবনী লেখে, আমার তেমন কোনো ইচ্ছা জাগে না। ভালোবেসে ভালো না থাকার এক অফুরান আখ্যান আমার লেখার জন্য মন উথাল-পাথাল করে।
তারপর ভাবি, আমার কথা লিখে কি হবে? আমি কে যে আমার গল্প সাতকান্ড করে বয়ান করতে হবে?
তার চেয়ে তোমার শৈশবের পা যে পথে পড়েছে গুটিগুটি সে ধুলা, তোমার ভেঙে যাওয়া পেন্সিলের গুঁড়া, কাজলদানিতে সর্ষের তেল মেখে প্রদীপের উপর ধরে কাজল বানিয়ে টানা চোখে বসানো সন্ধ্যার অন্ধকার এ যদি অক্ষরে নামাতে পারতাম।
আমাদের সবার প্রতিদিন কত শত গল্প জমা হয় কিন্তু লেখা হয়ে ওঠে না।
হারিয়ে যাওয়ার গল্প
এ গল্প বহুবার বলেছি-যে ড্রেসটা খুব পছন্দের তার কোণা অবশ্যই রিকশা থেকে নামার সময় রিফুর অযোগ্য হয়ে ছিঁড়ে যাবে।
যে কানের দুল খুব মানায় তার পুশ খুলে দুলটা হারিয়ে যাবে জনারণ্যে। যে মানুষকে একদিন না দেখলে, কথা না বললে মন প্রাণ দেহ সব সাহারা মরুভূমি মনে হবে-সে দৈনন্দিন থেকে তো বটেই, এমন কি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করে দেবে।
এবার পড়বো কয়েকটা হৃদয় নিংড়ানো নির্যাসঃ
অগুনিত দিন তোমাকে দেখি না। স্ক্রিনে ক্বচিৎ এই দেখায় হয়তো কখনো দূরত্ব সামান্য কম মনে হয়। প্রতিদিন নানা শব্দে তোমার সাথে ভাব বিনিময় করি নিজের মাথার ভেতর। আমি যা ভাবি তার তিন ভাগের এক ভাগও প্রকাশ করতে পারি না। নিজেকে নিয়ে এক লবণ সমুদ্রে ডুবে থাকার ইচ্ছা হয়, যেন আমার ক্ষতেরা কোনোদিন বেঁচে থাকার এই জ্বলুনি না ভোলে।
তুমি জানো প্রিয় মানুষের গন্ধ স্পর্শ কেমন হয়? নিশ্চয়ই জানো। কিন্তু এর অভাববোধ তীব্র হলে কেমন লাগে টের পেয়েছো কখনো? আমি যখন মাতৃহারা হলাম, তখন মায়ের পুরনো শাড়ির তৈরি একটা কাঁথায় তাকে স্বপ্নের ভেতর স্পর্শ করতাম, আমার মস্তিস্ক বুঝাতো এর ভেতর আমি মায়ের গন্ধও পাচ্ছি।
প্রিয়,
আপনে যখন “শুভ সকাল” বলেন তখন আমার এই বৈদেশে রাত ঢলানি দিলেও দিব্য চোখে রোদ দেখতে পাই। ওয়েদার এপে গিয়া আমি ঢাকার হালচাল দেখি-আজ দেখলাম আপনার ঐখানে বৃষ্টি, আকাশ অন্ধকার। আপনে তো বর্ষা প্রিয় মানুষ-এমন দিনে একটু দেরিতে না হয় ব্যবসার চকে যান। বারান্দা দিয়ে হাত বাড়াইয়া জল ছুঁইয়া গরম চায়ের মগে টোস্ট ডুবায়ে আয়েশ করেন একদিন।
আপনার তো খালি রাগ আর রাগ-যা অবস্থা তাতে আপনের মিনিমাম এক সপ্তাহ আমার চোখের সামনে শুইয়া বইসা থাকা উচিত। আমি রান্ধুম বাড়ুম আপনে উদাস চোখে আমার দিকে তাকায়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাওন মুখে তুলবেন। প্রতি অক্তে স্নানের আগে আমি আপনের গায়ে প্রাচীন কায়দায় ওলিভ অয়েল মাসাজ কইরা দিব, আপনার ব্যথা বেদনা কিঞ্চিত হইলেও হ্রাস পাইবো।
কি চাই? বেঁচে থেকে সুস্থভাবে মরে যেতে চাই। কি অদ্ভূত মানুষের চাওয়া তাই না! এককালে চাইতাম অংক পরীক্ষায় অংকটা ঠিক হোক, তারপর চেয়েছি পাশে থাকা মানুষটা শব্দ করা ছাড়াই মনের কথা বুঝুক। মা হতে হতে মনে হয়েছে কন্যা আমাকে আকন্ঠ ভালবাসুক। এখন নিজের মাথার ভেতর নিজের সাথে বাস করতে করতে মনে হয় রঙবাজির দুনিয়া ধীরে সাদা কালো হয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাই। গাছের মগডালে বসে নিচের যে দুনিয়া দেখি তার মিনিয়েচার চোখের মণিতে ভার্স্কয হয়ে বসে যাওয়া চাই না। চাই না মানুষ নামক বিচিত্র প্রাণীর মনের ভেতরটা পড়তে। মানুষকে বুঝতে পারার মতো কষ্ট মনে হয় আর কিছুতে নেই। আমি কি হাত তুলে প্রার্থনা করব কোনো নিদানের আশায়। না কি কবিতার হাত ধরে নিশিগন্ধা রাত পার হব বিড়াল পায়ে!
“পদ্ম পদ্য” নামটা আমার কাছে পরীমনির ছেলের গালের মত তুলতুলে নরম নরম লাগে। গাল টেপার মত করে বার বার অকারণেই বলি, বলতে ভাল লাগে তাই বলি।
বইটি জুড়ে আছে অসংখ্য “লিমেরিক”। প্রেমিক-প্রেমিকা বইটি অবশ্যই সংগ্রহ করবেন। যেকোন আবহাওয়ায় বা পরিস্থিতে পার্টনারকে মুগ্ধ করতে আপনাকে নিজেকে বেশি ভাবতে বা খাঁটতে হবে না। আপনাদের জন্যে খানিকটা “মুশকিল আসান” হচ্ছে এই “পদ্ম পদ্য”।
তানবীরা হোসেন ০২/১৯/২০২৩
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-13077811603672762872023-02-07T10:33:00.002-08:002023-02-07T10:33:43.364-08:00প্রথমে পুরুষবাদ শেষে নারীবাদপ্রথমে ব্লগে তারপর ফেসবুক আমলে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে প্রধান অস্ত্র থুক্কু বিষয় ছিলো "মুক্তিযুদ্ধ"। সেটা কচলাইয়া কচলাইয়া ঘি বের হওয়ার পর আসলো 'নাস্তিকতা, সেক্যুলারিজম' আর হালে জনপ্রিয় হলো 'নারীবাদ'
সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে যত্রতত্র মানে ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, রাস্তাঘাটে চুলকানি, ঘা, দাদের মলম মিলে তারপরও এ রোগের উপশম দেখি না
এক কালে খুব জনপ্রিয় বক্তব্য ছিলো, তসলিমা নাসরিন ধর্ম নিয়ে কিছুই জানেন না। কোরানের ঐ সূরার ততো নম্বর আয়াতের ব্যখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি মুখস্থ বলতে পারেন নাই, তিনি ডাহা ফেইল। মজার ব্যাপার হলো, ধার্মিক হতে হলে কিছু জানতে হয় না, আয়াতে, সূরায় কি আছে না জেনে হুজুর বা দাদি কি কইছে সেইটা জানলেই চলে। কিন্তু নাস্তিক হতে হলে আপনাকে পল কার্জ, রিচার্ড ডকিন্স, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আর্থার মিলার থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং সব মুখস্ত রাখতে হবে। আর সেইম গো'জ ফো হিয়ার। পুরুষবাদ হইলো, যেকোন নারী, বয়সে, টাকায়, পজিশন, পারিবারিক অবস্থায়, শিক্ষায় আপনার থেকে জ্ঞানী বা ভাল হোক না কেন তাকে দুইটা কষাইয়া গালি দিতে পারলেই হইলো। রাত দুপুরে গলায় দু পেগ ঢেলেও সেটা করা যায়, বিষয় না। কিন্তু নারীবাদী হইতে হইলে আপনাকে সিমোন দ্যা বিভোয়ার, বেল হুক্স, এঞ্জেলা ডেভিস, মালালা ইউসুফজাই, মিশেল ওবামা সব মুখস্থ রাখতে হবে।
নইলে, ইসলামের অসংগতি ধরালেই যেমন সুবিধাবাধীরা বলে, ঐটা "সাহি" ইসলাম না তেমনি পড়া না পারলেই বলবে আপনি সাহি নারীবাদী না।
"নেদারল্যান্ডস" পৃথিবীর মানচিত্রে যাকে খুঁজে পাওয়া ভার, অথচ পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে যার প্রায় সবসময়ই অবস্থান। গত নির্বাচনে
নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক দল ডি সিক্সটি সিক্স এর নেত্রী সিগ্রিড কাখ প্রাইম মিনিস্টার রুতেকে প্রায়ই হারিয়ে দিচ্ছিলো, নেদারল্যান্ডসের সমাজে নারীরা কিরকম বৈষম্যের স্বীকার হয় তার পরিসংখ্যান দিয়ে। এই নেদারল্যান্ডসেই একই কোম্পানীতে, এই কোয়ালিফিকেশান নিয়ে একই পজিশনে কাজ করে মেয়েরা পুরুষদের থেকে কম বেতন পায় শুধুই মেয়ে হওয়ার কারণে। করোনা কাল থেকে "ডমেস্টিক ভায়োলেন্স" এর দিক থেকে ইউরোপের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস আছে।
বৈষম্যের স্বীকার হও ঠিকাছে, এক বালতি সমবেদনা কিন্তু মুখ খুললেই "নারীবাদী" গালি খাও।
পুরো পৃথিবী জুড়েই মেয়েরা রাঁধে, ঘর সামলায়, বাচ্চা সামলায়। প্রায় সমস্ত জাতির পুরুষদেরই মেয়েদের কাছে এই প্রত্যাশা। বাচ্চারা এটা দেখেই বড় হয়। তারওপর চোখের সামনে মায়ের নিগ্রহ, বোনের নিগ্রহ, ফুপু-খালার নিগ্রহ, নিজের জীবনের বিভীষিকা দেখে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের নারীবাদী হয়ে বেড়ে ওঠা কি আস্বাভাবিক? তার জন্যে তাকে আলাদা বই মুখস্থ করতে লাগবে? আর ভাববেন না, কাশেম বিন আবু বকরই পদ্দা করা গৃহকর্মা নিপুণা নারী পছন্দ করে। সেকুলার, নাস্তিক, মুক্তমনা সব লেখকরই পছন্দ এক।
অ-নারীবাদী মেয়েরা হবে এই ইট্টু লাজুক লাজুক, কথায় কথায় অভিমান করবে, গাল ফোলাবে, রাতে চড় মারলে সকালে সেই ফোলা গাল আর লাল চোখে এক হাতে আটা মাখবে, রুটি বানাবে, আরেক হাতে আলু কেটে ভাজি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, গাল ফোলা কেন,কি হয়েছে? লজ্জায় দ্বিধায় মাটির সাথে মিশে যেয়ে বলবে, মাথা ব্যথা করছিলো, রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তো তাই আমার চোখ আর সাথে গালও ফোলা। স্বামী চড় মেরেছে এই লজ্জা তার, বেদনার তো স্থানই নেই।
নারীবাদীদের আবার কোন ইমোশন থাকা জায়েজ না। তারা সব সময় আর্মির পোশাক গায়ে দিয়ে ঘুরবে, লোহার ব্রেকফাস্ট খাবে, স্টিলের লাঞ্চ। ফাল্গুনে খোঁপায় ফুল, কিংবা বৈশাখে হরেক রকম ভর্তায় টেবল সাজানো, নবৈচ নবৈচ। তাই কি তাদের মানায়? তাহলে তারা পুতুপুতু নারীবাদী, কোন কম্মের নয়।
বলাবাহুল্য, এসব ফরম্যাটই আবার ঠিক করে দিয়েছে, মোটামুটি জিরো লাইফস্কিল থাকা "পুরুষবাদী ঠাকুরেরা"। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ার পুরুষেরা সব থেকে অকর্মণ্য পুরুষ, কোনো কাজই পারে না। নিজের আন্ডার গার্মেন্টস ধুতেও এদের হয় মা নয় বউ লাগে। এরা বাচ্চাকাল থেকে কোনো স্কিল শেখা ছাড়াই বড় হয় এই প্রাইড নিয়ে, যেহেতু তার একটা দন্ড আছে, তাই তার সাথে সম্পর্কিত নারীজাতীর সব সদস্য তার অধীন, তার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। নিজের স্ত্রী তো সেইমতে সবচেয়ে বড় ক্রীতদাসী। সুতরাং বউ কতোটা পড়বে, কতোক্ষণ- কোথায় জব করবে, কী পোষাক কতোটা টাইট-লুজ-খোলা পরবে, ফেসবুকে কি ছবি দিবে, ব্লগে কি বিষয়ে লিখবে, কার সাথে কতোটা হেসে কথা বলবে সেইটা সে ঠিক করে দিবে। সে কই জুয়া খেলে সেইটা ব্যাপার না। ইস্যু হইলো “নারী” কারণ তার এবং তার পরিবারের মান-সম্মান সব বউয়ের চাল-চলন আর পদ্দা পুশিদার ওপর নির্ভরশীল।
কথা হইলো, এই ভূখন্ডের পুরুষেরা ভৌগলিক অবস্থান বদলাতে পারে কিন্তু চিন্তা, চেতনা আর স্বভাব? তো, নারীবাদীদের গালি খাওয়া ঠেকায় কে!
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-43021825485978351672022-12-21T15:38:00.004-08:002022-12-21T15:38:45.080-08:00স্মৃতি তুমি বেদনা নিজের হাতে লাগানো কুমড়ো লতা কিংবা বেগুন ফুলে মায়া পড়ে
কবে কোথায় বেড়াতে যেয়ে কিনে আনা লবনের চামচ, কফির মগের জন্য মন পুড়ে
দশ বছরে একবার ভাঁজ খুলে দেখা হয়নি, সেই কলেজের প্রথম বছরে কেনা জামদানিটার জন্য মন হু হু করে
মেয়ের জুডোর ড্রেস, সেই ছোট্ট গোলাপী বাথরোব সব ঝুলে আছে আলমিরায়, একরাশ মায়া মেখে
বৃষ্টি ভিজে কাদা মাড়িয়ে গড়িয়াহাট থেকে কেনা শাড়িতে মায়া
অসহ্য ভীড়-গরম উপেক্ষা করে গাউছিয়া থেকে কেনা ব্লাউজে মায়া
নিজের শখে দুবাই এয়ারপোর্টে কিনে দেয়া মেয়ের ছোট হয়ে যাওয়া চুড়িতে মায়া
পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেনা এত্ত সব সিডি,
আর কোনদিন কোন কাজে লাগবে না জেনেও ফেলে দিতে কি নিদারুণ বুক ব্যথা
প্রয়োজন ফুরায়, মায়া নয়।
কত সহজে প্রতিদিন কত মানুষ চলে যায়,
বেঁচে থাকাটাই কি একটা মায়া তবে?
সাই-ফাই সিনেমায় দেখানো এলিয়নদের মত আমরাও কি কোন একটা ইল্যুশনের চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছি?
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-91831904033206393382022-12-21T15:37:00.003-08:002022-12-21T15:37:30.931-08:00স্বাধীনতা বনাম উচ্ছৃঙ্খলতা এই বছরের মে মাসে জিন্স-টপস পরার কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে এক তরুণীকে মারধোর করে এক বোরকা পরা বেহেস্তী ভদ্রমহিলা। ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। তরুণী জানিয়েছিলো, সে রেল স্টেশনের মারধোর আর গালি-গালাজের ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলড হয়ে ট্রমাটাইজড হওয়ার শক্তি তারমধ্যে নেই।
যত শাদা চোখেই দেখি, এখানে কে স্বাধীন আর কে উচ্ছৃঙ্খল? পুরো পৃথিবীর সমাজবিজ্ঞান বলবে, বেহেস্তী ভদ্রমহিলা উচ্ছৃঙ্খল আর মেয়েটি নিরীহ। একজন মানুষের নিজের পোশাক নির্বাচন তার মৌলিক অধিকার। যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান সব ফেইল করে তার নাম বাংলাদেশ। একটি মেয়ে যে কারো ব্যাপারে নাক গলায় নাই, কারো ক্ষতি করে নাই, কাউকে নির্যাতন করে নাই,
নিজের পোশাক পরে নিজের বন্ধুদের সাথে নিজের দিন শুরু করেছিলো সে উচ্ছৃঙ্খল আর বোরকার মত একটা অস্ত্র গায়ে চাপিয়ে আর একজনকে নির্যাতন করার মত এমপাওয়ারড ফিল করা কেউ হলো নিরীহ - স্বাধীন।
একটা দেশের প্রশাসনে যারা কাজ করে তারা সে দেশের জনগনেরই অংশ, ভিন গ্রহ থেকে আসা কোন এলিয়েন নয়। এই মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থার অংশ হয়েও অন্তত এই ক্ষেত্রে প্রশাসন সিনেমার পুলিশের মত ক্যারিশমাটিক কাজ করছে। বোরকাওয়ালীকে ধরে জায়গা মত "স্বাধীনতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা" ফিট করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এরকম সুবিচারের দৃষ্টান্ত রাখবে এই আশা রাখছি। বাঙালিকে "হাইকোর্ট দেখানো" এদেশের বিচার ব্যবস্থার রীতি, এ নিয়ে আক্ষেপ রইলো। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশকে ভালবাসা।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-76273317948988108332022-12-21T15:35:00.003-08:002022-12-21T15:35:34.770-08:00তিন সেটের সোফাঅবশেষে বাসায় দুইটা তিন সিটের সোফা কিনলাম। একমাত্র মেয়ে আমার, সারাদিন ভর আদারে,বাদারে যেখানেই ঘুরে বেড়াক, রাত হলেই খেয়েদেয়ে আমার কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখা তার ছোটকালের অভ্যাস। ছোট যখন ছিলো তখন ছিলো কিন্তু এখন বড় হইছে, এই গরমের কালে এত ঘষটাঘষটি করলে কষ্ট
মেয়েরে বল্লাম, আলহামদুল্লিল্লাহ, এখন দুইটা তিন সিটের সোফা, একটায় তুমি শুবা আর একটায় আমি। বন্ধুদের সাথে গুলটি মেরে বাইরে থেকে এসে এই কথা শুনে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোমন্দ কিছুই বললো না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি খুবই বিরক্ত হলাম, কিন্তু কিছু কেয়ার করছিলাম না। এরপর ও রুমে চলে গেলো আমিও আমার কাজে গেলাম।
একটু পর ক্ষিদে লাগলে জোরে জোরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? জবাব দেয় না। বললাম, এই মূহূর্তে নীচে এসে টেবিল লাগা, নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মেয়ে নীচে নামলে খেয়াল করলাম চোখ লাল হয়ে গেছে মুহূর্তেই গলার রগ বেয়ে গেছে। “জরে জরে"
নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
সাধারণত মাইর খাওয়ার সময় হইলে ও এরকম করে। পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে, ভাল থাকতে ভাল লাগে না? কিন্তু সে একদম টাচ ও করতে দিতে ইচ্ছুক না। বললাম, পিঠ সুড়সুড় করলে এমনেই বলো, এত ভ্যানতাড়ার দরকার নাই।
তারপর হঠাৎ বলে, একমাত্র মেয়ে আমি তোমার, কেন আমি তোমার সাথে এক সোফায় শুইলে তোমার সমস্যা? একা একাই খাও তাহলে, আমি তোমার টেবল সাজিয়ে দেবো না। এই কথা শুনার পর আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না।
এত বড় বড় দুই সোফায়, দুইজন আলাদা শুয়ে টিভি দেখবো বলাতেই এই অবস্থা! তাও মায়ের সাথে এমন রিয়াক্ট। বললাম, এইটা নরম গলায়ও আইসা বলতে পারতা। এত তেজ দেখানোর কিছু নাই। আমার খাইয়া আমার পইড়া আমারেই কইবা ম্যাও! তেজ সামলায় রাইখো নাইলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না। সাথে চোখ রাঙাইয়া বল্লাম, আগের সোফাটা লাফাইয়া ভাঙছো, এখন বড় হইছো, সোফার সাথে ভদ্রতা বজায় রাখবা, ব্যবহার বংশের পরিচয়।
আমার এই কথা শুনে মেয়ে থ। ওয়াদা করছে এমন বেয়াদপি আর করবে না কখনো। মনে পড়ে গেছে পাঁচ বছর আগে সে এমন বেয়াদপি করছিলো, তিন দিন তার খাওয়া দাওয়া খুবই বেসিক পর্যায়ে ছিলো। মনে মনে সে ভাবলো, মা হইছে উনিশ বছর, যা ছিলো তাই আছে, বদলায় নাই।
বাপরে বাপ, বাঙালি মা এমন জল্লাদও হয়!!!!
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-38774555960224710412022-12-21T15:26:00.003-08:002022-12-21T15:26:50.350-08:00ঈশ্বর ও শুড়িখানা গলির মুখে যে পুরনো চার্চটা ঠিক তার উল্টো দিকেই হঠাৎ করে একদিন একটা বার খোলা হলো।
চার্চে প্রতিদিন প্রার্থণার সময়, হে লর্ড, বার ধ্বংস করে দাও, বার ধ্বংস হোক বলা হতে লাগলো।
সত্যি সত্যি কয়েকদিন পর আচমকা ঝড় হলো, প্রচন্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টি যাকে বলে। বজ্রপাত থেকে আগুন লেগে পুরো বার পুড়ে ছারখার।
বারের মালিক যেয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিলো। তার দৃঢ় বিশ্বাস, চার্চে প্রার্থণার কারণেই আগুন লেগেছে।
আদালতে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত দায় অস্বীকার করলো।
বিচারক পড়লেন মহা ফাঁপড়ে, এই জীবনে প্রথম তিনি এমন সমস্যায় পড়লেন, একজন “বার” মালিক, ঈশ্বর, প্রার্থণার ওপর বিশ্বাস রাখছে অথচ পুরো “চার্চের" ইশ্বর আর তার শক্তির ওপর বিশ্বাস নাই!!!!
(হোয়াটসএপ জোকের ভাষান্তর)
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-81292171435939205212022-12-21T15:19:00.003-08:002022-12-21T15:19:31.316-08:00নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতি এগারো মিনিটে লিগ্যাল পার্টনার কিংবা পরিবার দ্বারা একটি মেয়ে খুন হয়, হ্যাঁ, এই পৃথিবীতেই হয়। বানিয়ে বলছি? আমি না পরিসংখ্যান বলছে
অফিস থেকে মেইল করা হয়েছে, খালি চাকরি আর ক্যারিয়ার হলেই হবে না, কমিউনিটির জন্যেও কাজ করতে হবে। কি করা দরকার আর কি করা যায় এসব নিয়ে টিম করা হলো, বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশানে যোগাযোগ করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, “শেল্টার হোম” এর ভিক্টিম মহিলাদের “স্কিল ডেভেলাপমেন্ট” প্রজেক্ট করা হবে। কম্পিউটার ট্রেনিং, ইংরেজি শেখানো, হাতে কলমে সিম্পল ট্র্যানজেকশান বুকিং ইত্যাদি। ভবিষ্যতের সহকর্মী উঠিয়ে আনতে হবে ওদের মধ্যে থেকে। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়া আনা দরকার ভিক্টিমদের। প্রজেক্ট ফাইন্যাল করে প্রেজেন্টেশান বানাতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম।
নর্ডিক কান্ট্রি’স যাদেরকে পৃথিবীর বেহেস্ত বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতায় তারা ইউরোপেও সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে!!!!!! গরীব, ভুখা বলে অবহেলিত ইস্ট ইউরোপীয়ানরা আছে সবচেয়ে নীচে!!!! অবশ্য লেডি ডায়না আর মেগান মার্কেল জানিয়েছে, নির্যাতন রাজবাড়িতেও চলে। আলোচনার মাঝেই রুমেনিয়ান ম্যানেজার গর্বের সাথে জানালো, ইন রুমেনিয়া নো বডি ক্যান টাচ আস, নো বডি। উই কন্ট্রোল এভ্রিথিং, হাউজ, শপিং, ওয়ার্ক। জীবনের প্রায় সবটা এই দেশে খরচ হয়ে গেলো, আগে জানা থাকলে রুমেনিয়াই চলে যেতাম।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-53517024300922381222022-12-21T15:12:00.003-08:002022-12-21T15:12:20.287-08:00বাঙালি চরিতবাঙালি মানসিকতা ডিফাইন করতে পুরনো দিনের বাংলা সিনেমাগুলো আপনাকে যারপর নাই সাহায্য করবে। সিনেমা (প্রোডাক্ট) বানানোর আগে ব্যবসায়ীরা (প্রোডিউসার)রা ভাল মত মার্কেট রিসার্চ করেই মার্কেটে নামে। আর এই মার্কেট হলো “আমরা বা আমাদের মানসিকতা”।
সেসময়ের দুই বাঙলার খুব কম মানুষই আছে যারা উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখে নাই। কোন অজানা কারণে পুরো বাংলা জুড়ে ঐ দুজনকে ভাল ছেলে-মেয়ের রোল মডেল মানা হতো। অথচ বাঙালি বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের প্রেম মানতে পারে না। কিন্তু এই দুজন বাবামায়ের অমতে প্রেম করে ব্যাড়াছ্যাড়া লাগানোর সিনেমাই করে গেছে। অদ্ভূদ।
যাহোক, উল্লেখযোগ্য কিছু জিনিস, যা আপনার সিনেমা দেখাকে সহজ করবে, গরীব ভাল ছেলে মানে, ধূতি, চটি, পাঞ্জাবী বা শার্ট। বড়লোক মানেই মুখে পাইপ, সিল্কের হাউজকোট, থ্রি পিস স্যুট আর এর মাঝামাঝি যা আছে, প্যান্ট, পোলো, শার্ট সবই কম ভাল বা নন ভাল ছেলের পোশাক যার হাজার যোগ্যতা থাকলেও সুচিত্রার সাথে বিয়ে হবে না কারণ এরা আধুনিক। এরা ইংলিশ বলে, ফরেনে যায় বা আসে, টেনিস খেলে, ক্লাবে যায় এবং কাটা চামচে খায়। বিদেশ লোভী বাঙালি এভাবেই “খারাপ মানুষ” চিহ্নিত করে। ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চা পড়ানোর জন্যে জীবন দিয়ে দেয়া বাঙালির সিনেমায় তাদের আদর্শ রোলেরা ইংলিশ বলে না বলে নেতিবাচক চরিত্ররা!!!!!
আর ভাল মেয়ের চরিত্র? সবসময় শাড়ি পরবে, গরীব হলে সূতি, বড়লোক হলে নন সূতি। গৃহকর্ম সব জানবে আর খুবই ললিত সুরের বাঙলা গান গাইবে, রবীন্দ্র সংগীত হলেই পুরো জমে। প্রচুর দুঃখ জমিয়ে নীরব থাকবে আর কাঁদবে, মুখ খোলা নিষেধ। সালোয়ার কামিজ বা জিন্স মানেই হলো আধুনিক মেয়ে যারা কেক পেষ্ট্রি খায়, ববছাট চুল এবং এরাও একটু ইংলিশ ভিংলিশ বলে। টকাস টকাস কথা বলা মানেই নন কোয়ালিফাইড। এরা আর যাই হতে পারে “ভাল” মেয়ে হতেই পারে না, একজন মানবিক মানুষ হওয়ার সব গুনাবলীর সাথে জামা কাপড়ের সম্পর্ক অত্যন্ত সুগভীর।
খানিকটা দুষ্টুমিষ্টি আধুনিক স্বভাবের কারণে সুর্দশন প্রতিভাবান নায়ক সৌমিত্র যিনি আবার একটু আধটু টুইষ্টও নাচতে জানতো, উত্তমকুমার বেঁচে থাকাকালীন বাঙালির সেকেন্ড চয়েজ হয়ে রইলো। উত্তমকুমারের পরে বিশ্বজিৎ তারপর প্রসেনজিৎ এখন শুধু জিৎ ও সিনেমা করছে। তিন জেনারেশন পরে ভাল – খারাপ চরিত্রের জামাকাপড়, সংলাপ ইত্যাদির ধরন এখন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সমাজ আর আমাদের মানসিকতা? পশ্চিম বাঙলায় অন্তত ভাল ছেলেমেয়ে আর খারাপ ছেলেমেয়ের পোশাকের ধারনা বদলছে কিন্তু বাংলাদেশ???? কিছুদিন আগেই সিনহা হত্যা মামলায়, মামলার আসামী ওসি প্রদীপকে বাদ দিয়ে সবাই যেভাবে মামলার ভিক্টিম শিপ্রাকে নিয়ে পড়েছিলো, তাতে বলা যায়, বাংলাদেশ এখনও নিরাপদে ভিক্টোরিয়ান যুগেই পরে আছে, উত্তমকুমারের সাথে।
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-49638082187928670562022-12-21T14:50:00.002-08:002022-12-21T14:50:37.652-08:00দ্যা রয়্যাল লাইফ - রানী জীবন - নারী জীবনবিদ্রোহী রাজবধূ হিসেবে প্রয়াত লেডি ডায়না ইতিমধ্যে কয়েক জেনারেশানের চর্চার বিষয়। স্বামী, শাশুড়ি কেউ খুশি ছিলেন না তার ওপরে। সম্প্রতি তাতে যোগ হয়েছে মেগান মার্কেলের নাম। মেগানতো সংসার ভেঙে দেয়ার অপরাধে অপরাধী। রাজকীয় ঐতিহ্য ভেঙে স্বামী নিয়ে আলাদা সংসার পাতা ভাবা যায়! সম্প্রতি নেটফ্লিক্স এই বিতর্ক আরো উস্কে দিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ থেকে রানী'র সিংহাসনে বসা মাক্সিমা কিন্তু সবসময় আলোচনার আড়ালেই থেকে যান তার কারণ
১। প্রিন্স আলেকজান্ডার আর মাক্সিমার প্রেম হওয়ার পর যখন তাদের বিয়ের কথা উঠলো, জানা গেলো, উনিশো সত্তর সালে আর্জেন্টিনার সামরিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলো মাক্সিমার বাবা। সামরিক জান্তার কর্মকর্তার মেয়েকে রাজবধূ করা প্রায় অসম্ভব। অনেক আলোচনার পর ডাচ পার্লামেন্ট জানালো, ঠিকাছে, প্রেম যখন হয়েই গেছে, বিয়ে তাহলে হোক কিন্তু মাক্সিমার বাবা, মেয়ের বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে আসতে পারবে না। কারণ সেটি শুধু রাজার একান্ত ব্যাপার নয়, ডাচ জাতিরও ব্যাপার। তবে, মূল অনুষ্ঠানের পরের রাজকীয় নৈশভোজ ও অন্যান্য ক্লোজ ডোর অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন। এই শর্ত মেনে নিয়েই মাক্সিমা বিয়ে করেছেন। ইগিলি পিগিলি দেশের হেন কোন রাষ্ট্রদূত নেই যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাননি, সারা পৃথিবী থেকে নানা দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, গায়ক, নায়ক সব উড়ে এসেছে বিয়ের দাওয়াতে কিন্তু মেয়ের বাবা ছিলেন, বাড়ির বাইরে।
২। আজ অব্ধি ডাচ দেশের কোন রাজকীয় অনুষ্ঠানে মাক্সিমার বাবা অংশগ্রহণ করেন নি। মেয়ে জামাইয়ের জন্মদিনে পুরো নেদারল্যান্ডস ছুটি থাকে কিন্তু জামাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শ্বশুর নেই। এমনকি নিজের কন্যা যেদিন নেদারল্যান্ডসের রানী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সেই অনুষ্ঠানেও তাঁর বাবা ছিলেন না।
৩। নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ হওয়ার জন্যে মাক্সিমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে লাগাতার যেতে হয়েছে। এক একটি পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতেন আর রেডিও টিভি সেটি ফলাও করে প্রচার করতো, তিনি রাজবধূ হওয়ার জন্যে আর এক ধাপ আগালেন। প্রিন্স আলেকজান্ডারকে আর্জেন্টিনার জামাই হওয়ার জন্যে কোন পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো কিনা জানা নেই। কিন্তু মাক্সিমাকে, পোশাক, খাওয়া, ভাষা সব কিছুতেই নতুন করে অভ্যস্ত হতে হয়েছে।
৪। বিয়ের আগে তাকে মেডিক্যাল চেকাপের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে। রাজবাড়ির মেডিক্যাল টিম তাকে পরীক্ষা করে দেখেছে, সন্তান ধারনে তিনি সক্ষম কিনা, সেটি পজিটিভ হবার পরই রাজবাড়িতে তাঁর বিয়ের কথা পাকা হয়। রেডিও টিভিতে সেই নিউজও প্রচার হয়েছিলো।
৫। বিয়ের প্রায় সাথে সাথে তাকে গর্ভধারণ করতে হয় এবং আমাদের ক্রাউন প্রিন্সেস এমেলিয়ার জন্ম হয়।
ঠাকুরবাড়ির ভবতারিনী থেকে মৃনালীনি হয়ে ওঠার গল্পের সাথে এই গল্পটার কিংবা বাস্তবতার পার্থক্য কোথায়?
পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই,
তবেই মেয়ের গুণ গাই।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-68585581465601888052022-07-24T15:53:00.003-07:002022-07-24T15:53:27.514-07:00"বিয়ের প্রলোভন”আপাদেরকে বলছি,
“প্রেম” যেমন মানব জীবনের একটি শ্বাশত ব্যাপার, “ব্রেকাপ”ও তাই। প্রেম হয়, প্রেম ভাঙে। মানুষের মন বদলায়, পরিস্থিতি বদলায়, পেশা বদলায় কত কি। “পাশে থাকার শুধু একটি কারণ থাকে ভালবাসা আর ছেড়ে যাওয়ার হাজার কারণ থাকে কিন্তু কারণ আসলে একটাই অ-ভালবাসা।
এই ব্যাপারটি শুধু বাঙালি সমাজে ঘটে না। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে নর-নারী এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যায় না। প্রেম আসলে যেমন উত্তাল জোয়ারে ভাসে, ব্রেকাপে তেমন ডিপ্রেশানে ভোগে, নিদ্রাহীন রাত, অশ্রু জলে ভাসা, অদম্য রাগ আর ঘৃণা। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র বা আদালত প্রেমে প্রতারণার দায়ে একজন মানুষকে একজন মানুষের সাথে থাকতে বাধ্য করতে পারেনি, শাস্তিও দিতে পারেনি। লিভ টুগেদার কিংবা বিয়েও ভেঙে যায়, কাউকে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকার পারমিশান আদালত দেয় না। আদালত শুধু অর্থনৈতিক দিকটার সুরাহা করে দেয়। বাচ্চা থাকলে সাধারণতঃ দায় এড়ানো পুরুষদের, বাচ্চার দায়িত্ব নিতে আদালত নির্দেশ দেয়, কেউ যেনো কারো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় ব্যস এটুকুই।
“বিয়ের প্রলোভন” দেখিয়ে কথাটা চরম আপত্তিকর। “প্রলোভন” দেখানো যদি অপরাধ হয় তাহলে “প্রলোভিত” হওয়াও অপরাধ নয় কেন। আর চরম ডিসরেসপেক্টফুল শব্দতো বটেই। একজন কেউ আপনার থেকে বেশি বুদ্ধিমান, আপনার বেক্কলামির সুযোগ নিয়ে আপনাকে ধোঁকা দিছে, এটা জনে জনে বলে বেড়ানো কতটা মানের? প্রেম থাকলে ব্রেকাপ থাকবেই, এটা মাথায় রেখেই সম্পর্কে জড়ান।
শুধু ফেসবুকে সেলিব্রেটি হলেই তো আধুনিক হওয়া যায় না, চিন্তা-চৈতন্যতেও যুক্তি আনেন, সামনের দিকে তাকান, পেছনে না।
তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-30344003110903873902022-07-24T15:51:00.007-07:002022-07-24T15:51:41.333-07:00কাপিল শার্মা শো “কাপিল শর্মা কমেডি শো” এই মুহূর্তে আমার প্রিয় একটা অনুষ্ঠান। সময় পেলেই দেখি। অনেক সময় ব্যাক গ্রাউন্ডে লাগিয়ে কাজ করি। একটা মানুষের উইথ স্ক্রিপ্ট কিংবা উইদাউট স্ক্রিপ্ট এত উইটিনেস আর প্রত্যুৎপন্নমতিতা “কাপিল”কে না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। “আপ কি আদালত” অনুষ্ঠানে রাজাত শার্মা যখন প্রশ্ন করছে, কাপিল কাঠগড়ায় তখনও ঠিক সেরকম মুডেই কথা বলছে। অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার কৌশল তার অস্থি মজ্জায়।
এসব হাসি কৌতুকের একটা বিশাল ভাগ থাকে বডি শেমিং। অডিয়েন্স থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা বড় অংশ থাকে প্রশ্নকর্তাকে বডি শেমিং দিয়ে নাস্তানাবুদ করা। এই শরীর নিয়ে এই কাজ কিভাবে করেন। বাড়ি যেয়ে ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করেন। এত মোটা আপনি তারপরও আপনার পার্টনার আপনার সাথে থাকে সেটার শুকরিয়ে করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ন্যাশনাল টিভি থেকে বিশ্বজুড়ে এই জিনিস সম্প্রচার হচ্ছে, ভাবা যায়!!!!
কিকু সারদা বলছে, ভারতী সিং বিছানায় বসেছে তাতে গদীর তুলো বেরিয়ে গেছে।
ভিদ্যা বালানকে দেখে একজন পাকা চুলের ভদ্রলোক কবিতা পড়াতে, কাপিল অনেকক্ষণ তাকে বুড়ো বলে পঁচালো। বয়স বাড়ার অপরাধে অন্যদের সাথে ঐ ভদ্রলোকের নিজে্কেও ঐ পঁচানোতে হাসতে হলো। ঠিক কতটা বয়স হলে একজন নর একজন নারীকে দেখে কিংবা একজন নারী একজন নরকে দেখে মুগ্ধ হতে পারবে না? কবিতা পড়তে বা লিখতে কিংবা গান গাইতে পারবে না?
অজয় দেবঘন, সালমান খান, শাহরুখ খান, ইমরান হাশমী, ভিদ্যা বালান সবাই এসব জোকে হেসে গড়িয়ে পড়ে। সিদ্ধু সিং আর অর্চনা ম্যাডামের কথাতো বাদই দিলাম। আর আমরা সেন্সেবিলিটি, কমন সেন্স, কনসাশনেস, রেসপেক্ট এগুলো আশাকরি ম্যাঙ্গো পিপল থেকে!!!!!!
পারস্পারিক শ্রদ্ধা, অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানো, মানুষের আকার আকৃতি, গায়ের রঙ এগুলো মজার উপকরণ নয় বেসিক এই সভ্যতাগুলো এই উপমহাদেশের মানুষগুলো কবে শিখবে।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8809298902939636177.post-88015129833191174782022-07-24T15:50:00.001-07:002022-07-24T15:50:10.304-07:00বিলাই - শেয়াল কথন নন ম্যাট্রিক সকল ননদ আর জা’দের সংসারে এক বউ এম এ পাশ। একান্নবর্তী সংসারের যত রকম মনোমালিন্য আছে তাতে তার বাড়তি পাওনা হলো, “বিএ-এমএ পাশতো”।
সংসারের যত রকম কুৎসিত রুপ আছে তার মধ্যে দিয়ে চান কিংবা না চান আপনাকে অনেক সময় যেতেই হয়। অসহ্য হয়ে যদি “উফ” উচ্চারণ করেন, আপনার বাড়তি পাওনা হলো, “দু’খানা বই নিকেচেতো”।
"মেয়ে মানুষ" বাজার আনা থেকে শুরু করে রান্না করা, পরিবেশন করা, কাপড় কাঁচা থেকে বিল দেয়া সবই করবেন। সবার সুখ-দুঃখ,ভাল-মন্দ বিবেচনা করে পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সাংসারিক ব্যাপারে নিজের মতামত দিতে যাবেন, তখন শুনবেন, “দুই পয়সার একটা চাকরি করে তো”।
আপনার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা না হলো, সেটা ব্যাপার না, দিনের শেষে, সকল শেয়ালের মাঝে কোন বিলাই থাকতে পারবে না, বিলাই হওয়াই দোষের।তানবীরাhttp://www.blogger.com/profile/04828574354737314501noreply@blogger.com0