Thursday 8 February 2024

“জলে ধোয়া জবান” — আফসানা কিশোয়ার লোচন

বছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি মাস। প্রাণের মাস, গানের মাস, একই সাথে শোকের মাস, অশ্রুর মাস। ফেব্রুয়ারি মানেই বাঙালি প্রাণে সাজ সাজ রব। লেখকরা ব্যস্ত থাকেন প্রচ্ছদ, বাঁধাই নিরীক্ষা করতে, প্রেসে থাকে নাই নাই ঠাই অবস্থা আর পাঠকরা পছন্দের লেখকের বইটি তুলে নেয়ার অপেক্ষায়। আফসানা কিশোয়ার (লোচন) নামটি অনলাইনে খুব কম লোকের কাছেই অজানা। প্রতিবাদী, প্রতিরোধী, নারীবাদী, প্রথাবিরোধী এই বিশেষণগুলোর সাথে আর একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষণ ‘কবি আফসানা’। এই এতো ছোট বয়সে তার চৌদ্দতম কবিতার বই ‘জলে ধোয়া জবান’ এসেছে এবাবের বইমেলায়। আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়। একটু ব্যক্তিগত কাসুন্দি। বন্ধুরা অনেকেই বলে, আমি অনেক ডিসিপ্লিনড, পরিশ্রমী, কারণ তারা লোচনকে দেখেনি, জানে না। বাচ্চার যত্ন, সংসার, অফিস, মেহমানদারি, পরিবার, বন্ধুদের সমস্যা (প্রায় প্রতিদিন) সামলে সে প্রতিদিন লেখে, প্রতিদিনই লেখে। নিয়ম করে লেখে। অল্প আঘাতেই কাতর, ভেঙে পড়া আমি উদ্দীপ্ত হই লোচনকে দেখে। সমস্ত ঘটন অঘটনের মাঝে সে অবিচল, শান্ত আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারায় দক্ষ। বইয়ের ‘মুখবন্ধ’ পড়লেই কবির অকপটতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকবে না। কবিকে নিয়ে অনেক হলো এবার তার কিছু কবিতা। প্রথমেই সেই অনুকাব্যটি উল্লেখ করছি যেটি থেকে চৌদ্দতম কাব্য গ্রন্থের নামকরণটি এসেছে, ‘জলে ধোয়া জবান আমার বুকে মউতের লোবান গন্ধ দুইন্যাজোড়া এত মানুষ আমার ক্যান তোমারেই চাই আমি কি সখী প্রেমে অন্ধ?’ টুপটুপ করে ঝরে পড়া ঝোলা গুড়ের মতো মিষ্টি কাব্য। পড়ছিলাম, ‘ইনসমনিয়ার গোলযোগ’, কবিতার শেষাংশটা লিখছি আপনাদের জন্য ঝাঁ ক্লান্ত শরীরে যখন বিছানায় তখন ডেকে উঠলো চোখ, মাথার ভেতর ইনসমনিয়ার গোলযোগ; হাহাকারে বলে-তার সঙ্গে কথা হোক তার সংগে কথা হোক। বছরে একবারও দেখা না হওয়ার বিপরীতে রাখব না ‘অনুযোগ’। ‘বোধের অবিভক্ত আয়না’ পড়ি খানিকটা? “ভেঙে কি সব বলা যায়? কত কথা, তবু মনে হয় বাকি রয়ে গেলো অনেকটাই- আমি এমন বলতেই তুমি বললে ‘আকাশ দেখো’; দেখলাম। -আকাশ দেখা মানে যেন নিজের নিয়মে ‘স্বাধীনতা’ চোখ দিয়ে ছুঁয়ে গেলাম।” নিজেকেই যেন ফিরে পাই এসব কবিতার মাঝে। মনে হয়, যা ভাবি তাতো লিখতে পারি না। এতো অকপটে লেখে কি করে এই মেয়েটা! এবার একটু রূঢ় বাস্তবে ফিরি ‘অপেক্ষা করি সাতজনম ধরে’ কবিতার মাধ্যমে- ‘আমাকে ওরা ডেকেছে হাইপেশিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করার কালে, আমাকে ওরা আড়ালে নিয়েছে টেনে ডাইনি হত্যার ধারাবাহিক মঞ্চের দেয়ালে কি করলে নারী পতিত হয়, নষ্ট হয় সে বয়ান ওরা আমাকে বলেছে সুরার সুরে, বীজমন্ত্রের জপে, নারী জন্মের সার্থকতা শুধু পুরুষ নামক প্রাণীর সেবায় ওরা আমাকে খুব করে বুঝিয়েছে সভ্যতার ক্ষমতা হস্তান্তরের নিভৃত ডেরায়।’ এবারে আরো একটি অনুকাব্য, ‘তুমি আর আমি এই দুই শব্দের বিচ্ছেদে লেখা আছে দুনিয়ার যত হৃদয় ভাঙার কাহিনি’ শাশ্বত এই সত্যটি মাত্র চার লাইনে লেখা। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের দুইশো’র বেশি কবিতা নিয়ে এই বইটি পাওয়া যাবে ‘বাংলানামা’র ২১৮ নং স্টলে । মূল্য মাত্র দুইশো পঞ্চাশ টাকা। মনোরম এই প্রচ্ছদটি এঁকেছেন আবু হাসান। আশা করি বইটি আপনারা নিজেরা কিনবেন, প্রিয়জনকে উপহার দেবেন। ‘লোচন’ আমার কোন লেভেলের বন্ধু সেই লেভেল আমি নিজে জানি না। শুধু এটুকু জানি, ও দু’হাত বাড়িয়ে না দিলে সুস্থ থাকতাম না। কথা হলেই বলে, ‘জীবনে প্রেম জরুরি’। “জলে ধোয়া জবান” বইটির বেশির ভাগ কবিতাও প্রেমের। আজ জিজ্ঞেস করছি, ‘মানুষ পাওয়া যায় কিন্তু প্রেম পাওয়া যায়? মানুষ মেলে কিন্তু প্রেম?’ তানবীরা হোসেন ০২/০৭/২০২৪

Thursday 25 January 2024

এ কেমন অশ্রু তোমার

https://www.deshrupantor.com/481381/%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0 এ কেমন অশ্রু তোমার ১ আজ বাইশ দিন কেটে গেলেও কলি এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না আমান নেই। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা তরতাজা মানুষটা প্রতিদিন সকালে যেমন অফিস যায় ঠিক তেমনই গেলো----কোভিডে যখন টুপটাপ চারদিকে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন কিছু হলো না আর এখন, ভাবতেই আবার ফুঁপিয়ে ওঠে সে। আমানের মত আমুদে মানুষ কলি খুব কমই দেখেছে। যেখানে থাকবে সেখানেই সবাইকে জমিয়ে রাখবে। হৈচৈ, ক্রিকেট, বাইরের খাওয়া দাওয়া এসব ছাড়া সে থাকতেই পারতো না সে। চৌদ্দ বছরের মেয়ে নোরাকে নিয়ে হোম মেকার কলিকে এখন পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। যখন আমান ছিলো, নোরার স্কুল ছুটি হলেই প্রায় প্রত্যেক ছুটিতে বেড়াতে গেছে নেপাল, ভূটান, ভারত, সাজেক, এমনকি এই মধ্যবিত্ত সংসারের খরচ বাঁচিয়ে একবার সিঙ্গাপুর আর একবার দুবাই। ভবিষ্যতের জন্যে জমানোর মানুষতো আমান ছিলো না, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সে নানাভাবে উপভোগ করতে চাইতো। নোরার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, সংসার, এই বিশাল খরচ কিভাবে কোথা থেকে আসবে ভেবেই আরো দিশেহারা কলি। সংসারের চাপে নত হয়ে সমঝোতার প্রথম কোপটি পড়লো নোরা আর আমানের প্রিয় টয়োটা কার্মির ওপর। মেয়ের খুব পছন্দের ডার্ক রেড গাড়ি, বাবা চালিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতো। আমান নেই, গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সেই আনন্দও নেই। মাত্র দু বছরের পুরনো গাড়িটি বিক্রি করে কুড়ি লাখ টাকা পাওয়া যাবে, এই মুহূর্তে সেই ক্যাশটি অনেক দরকার। প্রখর রোদে হৃদয় পুড়ে যাওয়া দুপুরে নির্জনেতে বসে মা আর মেয়েতে অঝোরে কাঁদলো। নতুন মালিক গাড়িটি নিতে আসার আগে, শেষ বারের মত গাড়িটিকে দেখে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্যে কলি নোরাকে ডাকলো, চল নোরা, নীচে চল, শেষবারের মত গাড়িটিতে হাত বুলিয়ে আসবি আর তোর পুতুল টুতুল যা আছে নিয়ে আসবি। কত স্মৃতি তোর। কান্নাভেজা গলায় নোরা বললো, কিছু লাগবে না আম্মু, কোন স্মৃতি চাই না। তুমি একাই যাও, ফেলে দিও আমার যা আছে সব। আব্বুই যখন নেই, কি হবে আর স্মৃতিতে। আরো দু, একবার নোরাকে ডেকে অগত্যা একাই নামলো কলি নীচে। দুপুরের নির্জনতা ভেঙে কোথায় যেনো বেসুরো সুরে ডেকে উঠলো একটি কাক, কা কা। মনটা অস্থির লাগলেও চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি খুললো কলি, এই কঠিন সময়ে আবেগী হওয়া তাকে মানায় না। গাড়ির ব্যাকডালা খুলে নোরা আর আমানের কেডস, পানির বোতল, কোকের ক্যান, টিস্যুর বক্স এসব বের করে সামনে এলো। গাড়ির কাগজপত্র ইত্যাদি সাজিয়ে রাখছিলো ড্যাশবোর্ডের নীচের লকারে। বের করলো আমানের স্পেয়ার সানগ্লাস, মোবাইলের চার্জার, চকলেট, বাদাম, পেন আর কিছু টুকিটাকি। সামনে থেকে সেসব বের করে যেই না টিস্যু দিয়ে জায়গাটা মুছতে গেলো আচমকা হাতে এসে পড়লো আর একটি মোবাইল। উল্টেপাল্টে দেখলো, না, এ মোবাইল আমানের হাতে সে কখনো দেখেনি। বাড়িতে কোনদিন চোখে পড়েনি। অন করতে পারছে না কারণ চার্জও নেই। আচমকা গা কাঁপুনি দিয়ে একটু শীত শীত লাগতে লাগলো কলির। আমানতো সবসময় আইফোন ব্যবহার করতো, এই সিমেন্স ফোন কোথা থেকে এলো? আমানের গাড়িতে কেউ কি উঠেছিলো যে ভুলে ফেলে গেছে? যত্ন করে তুলে রেখেছিলো আমান ফেরৎ দেবে বলে? একটু পরেই ওরা গাড়ি নিতে আসবে। সব মুছেটুছে পরিস্কার করে কলি ওপরে এলো। কার মোবাইল তাকে ফেরৎ দিতে হলেতো জানতে হবে মালিক কে। নোরাকে ডেকে দেখালো, কার মোবাইল? জানিস কিছু? গাড়িতে পেলাম। মাথা নাড়িয়ে নোরা বললো, না আম্মু, জানি না কিন্তু একদম সেইম মডেল, যেটা আমাকে আব্বু লাস্ট কিনে দিয়েছিলো। কলিও সেটা লক্ষ্য করেছে। নোরার চার্জার দিয়ে ফোনটি চার্জে দিলো। কিন্তু ফোন লকড কিছুতেই খুলতে পারলো না। ২ পরদিন নোরাকে সিএনজিতে করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মোবাইল নিয়ে বসুন্ধরায় চলে গেলো সে। নীচেই মোবাইল ঠিক করে দেয়ার বেশ কয়েকটা দোকান। দুশো টাকাতে মোবাইলকে ফ্যাক্টরি রিসেটে দিয়ে খুলে দিলো দোকানের ছেলেটা। মোবাইল হাতে নিয়ে কলির মাথাটা শূন্য শূন্য লাগছিলো। খুব ধীর পায়ে লিফটের দিকে গেলো, তারপর আটতলার বোতাম চেপে রেস্টুরেন্টে বড় এক কাপ কফি নিয়ে বসলো। মোবাইলের কনট্যাক্ট লিস্টে কিছু মেয়ের নাম সেভ করা আর আছে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটসএপ। “স্বপনের রাজকুমার” নামে একটি ফেসবুক আইডি, প্রোফাইলে টম ক্রুজের ছবি দেয়া। পচাত্তর জন বন্ধু আর শুধুই মেয়ে বন্ধু। প্রোফাইলে তেমন কোন পোস্ট বা এক্টিভিটি নেই। ম্যাসেঞ্জার খুলে দেখবে কিনা ইতস্তত করছিলো কলি। কার না কার ফোন, কারো ব্যক্তিগত আলাপে যেতে তার রুচিতে বাঁধে। বুঝতেই পারছিলো না কলি এটি কার মোবাইল, আমানের কাছে কি করে এলো? হোয়াটসএপ খুললো। শুধুই মেয়েদের প্রোফাইল ছবি দেয়া চ্যাটবক্স। খুলবে কি খুলবে না ভাবতে ভাবতেই প্রথম বক্সটাতে আঙুল পড়ে গেলো। স্ক্রল করতে করতে কলির নেশা ধরে গেলো। এরা কারা? কেন এভাবে কথা বলতো? সারা শরীরে রক্ত তার মুখে এসে জমে, মুখ লাল হয়ে গেলো। অন্যদের চ্যাটিং পড়তে তার গা গুলিয়ে আসতে লাগলো, ছিহ মাজ্ঞো ছিঃ। স্ক্রল করতে করতে উঠে এলো ছবি। কার ছবি? এটা আমান!!! আমান??? খালি গায়ে? আমানের গোপনাঙ্গ? রোমশ বুক? আমান ঐ ভদ্রমহিলাকে এই ছবি পাঠিয়েছে? আর একটু স্ক্রল করতে, ঐ ভদ্রমহিলা আমানকেও এরকম ছবি পাঠিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ, তীব্র পিপাসা পেয়েছে, কফি নয় তার দরকার বরফকুঁচি দেয়া পানি। বসুন্ধরার এই এসির মধ্যেও সে দরদর ঘামছে। কামিজ ভিজে তার গায়ে বসে গেছে। এই বেডরুম কোথায়? এটা কি কোন হোটেল? বিছানায় দুজন এভাবে, মানে কি? একসাথে এরকম ছবির মানে কি? বমি বমি লাগতে লাগলো কলির। ঝিম ধরে অনেকক্ষণ বসে থেকে নোরাকে স্কুল থেকে আনতে নামলো সে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। ঝরছে কলি, ঝরছে সকাল, ঝরছে দুপুর, ঝরছে পাতা বাহার, ঝরছে ল্যাম্পপোস্ট, ঝরছে কাকাতুয়া। মনে হচ্ছে আকাশ দায়িত্ব নিয়েছে, পানি ঢেলে এই পৃথিবীর পঙ্কিলতা দূর করে দেবার। বৃষ্টির বড় বড় স্বচ্ছ ফোটায় চারপাশ আবার শুভ্র, পবিত্র হয়ে উঠবে। স্কুলের গেটে কলির মুখ দেখে নোরা আৎকে উঠলো, কেঁদে ফেললো, কি হয়েছে আম্মু? শরীর খারাপ? ও আম্মু? ক্লান্ত গলায় কলি বললো, সিএনজি দাঁড় করিয়ে রেখেছি নোরা, চলো, বাড়ি ফিরি। বাড়ি ফিরে মেয়েকে খাইয়ে দাইয়ে, রুমের দরজা লক করে দিয়ে আবারও মোবাইল নিয়ে পড়লো কলি। ৩ আমানের অন্য এক জগৎ, যার সন্ধান সম্ভবত আমানের মা-বাবা, কাছের বন্ধু, পরিবার কেউই জানতো না। নিয়মিত বান্ধবীদের নিয়ে হোটেল, রেস্টহাউজে যাওয়া, সময় কাটানো, সেক্সটিং। তবে বোঝাই যাচ্ছে, যখন বাড়ি ফিরতো সেসব বাইরে রেখেই ফিরতো। আইফোনটা যেখানে সেখানে পরে থাকতো, আনলকড। চ্যাট পড়ে জানছে কলি, করোনার মধ্যেও সে তার বান্ধবীদের কাছে গিয়েছে, একান্তে সময় কাটিয়েছে। কতরকম আসনে দুজন দুজনের সঙ্গ উপভোগ করেছে তারও আছে রগরগে সব বর্ননা। চা নিয়ে বারান্দায় বসেছে কলি। সাত তলা ফ্ল্যাটের বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি দেখছে সে। ভিজছে উঠোন, ভিজছে শাড়ি, ভিজছে কলির মন, ভিজছে বারান্দার গ্রীল, ভিজছে রজনীগন্ধা, ভিজছে খাঁচায় বন্দী টিয়া। কিন্তু কলি কি আসলে এই বারান্দায় আছে? তার শরীর হয়ত আছে কিন্তু মন? মাথার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঘুরছেন, দূরে কোথায় দূরে দূরে আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে ছিপছিপে মেদহীন শ্যামলা লম্বাটে মুখের কলি, সুন্দরী হয়তো নয় কিন্তু মিষ্টি মুখশ্রী। টানা টানা কাজল চোখে এক পৃথিবী মায়া। সংসার চালাতে আমান এতো খেটে মরছে ভেবে কলি, কত ভাবে কত যত্নই না করতো। যতক্ষণ আমান বাসায় থাকতো, সবচেয়ে বেস্ট সার্ভিস দেয়ার চেষ্টায় তটস্থ হয়ে থাকতো কলি। শ্বশুর-শাশুড়ির ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে বহু দায়িত্ব নিজের কাঁধে রেখেছিলো যাতে আমান একটু ব্রেক পায়। আব্বাকে বোধহয় আবার চোখের ডাক্তার দেখানো দরকার কলি। কাল বলছিলো, ঝাপসা দেখে। সেসব নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি নাম লিখিয়ে রাখবো, নিয়ে যাবো, দেখি ডাক্তার কি বলে। দুটো নতুন পাঞ্জাবী দরকার আব্বার? ডাক্তার দেখিয়ে আসার সময়, পাঞ্জাবী আর ফতুয়াও কিনে নিয়ে আসবো। এই শরীরে তাহলে আব্বাকে বারবার বের হতে হবে না, একবারেই হয়ে গেলো। এই গরমে রিক্সায় কষ্ট হবে, তোমরা রেডি থেকো আমি এসে নিয়ে যাবো। এই জ্যাম ঠেলে দু’বার এদিকে আসার তোমার কোন দরকার নেই, আমি উবার ডেকে নেবো সোনা, ভেবো না তুমি। সূক্ষ্ণ কিন্তু তীক্ষ্ণ অপমানবোধ তাকে তাড়া করছে। অজানা বিষে কলি নীল হয়ে গেলো। বারবার ফেসবুকে যেয়ে মোবাইলের নাম আর বান্ধবীদের মুখ মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। খানিকটা নেশায় পেয়ে গেলো তাকে। বিভিন্ন উইন্ডো খুলে চ্যাটিং পড়ছে, মেয়েদের প্রোফাইলে যেয়ে তাদের হাসিখুশি ছবি দেখছে, স্বামী আছে, সন্তান আছে, সুখে ভরপুর সেসব ছবি। যেদিন যেদিন আমান রুম ডেটে যেতো বাসায় কি বলে যেতো, সেগুলো মনে করার চেষ্টা করছে কলি। তার নিজের একটা ডায়রি বা ক্যালেন্ডার থাকলে খুব ভাল হতো ভাবছিলো কলি। থেকে থেকেই বুকের মধ্যে দাউদাউ করে, ইচ্ছে করে তাদের প্রোফাইলে কিছু একটা লিখে ফেলতে, জানাতে, তোমাদের ভণ্ডামি সব আমি জানি। আবার থেমে যায়, ভাবে, তারপর? কি লাভ? ওরাতো তার আসামী নয়। তার আসামীতো ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। নিস্ফল আক্রোশে ছটফট করতে করতে কাটছে দিন, কাটছে রাত। নোরা অবাক হয়ে মায়ের এই পরিবর্তন দেখছে। আব্বু নেই ক’দিন মাত্র হলো আর আম্মু সারাদিন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত! সারাদিন চুপচাপ কি যেন ভাবছে আর ভাবছে। হাজার জিজ্ঞেস করেও কোন জবাব পায়নি সে। চারপাশ নির্জন হয়ে গেলে, নির্ঘুম রাতে কলি বিছানায় একা এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবে, আমান মারা যাওয়ার পর জানতে পারাটা ভাল হলো নাকি বেঁচে থাকতে জানতে পারলে ভাল হতো? এই যে প্রাণ প্রিয় স্বামীর জন্যে দীর্ঘ বাইশ দিন আর বাইশ রাত আছাড়ি পিছাড়ি কাঁদলো, কার জন্যে কাঁদলো? আমানের কে ছিলো সে? সাজিয়ে রাখা শোপিস যে রান্না-খাওয়া, ইস্ত্রি করা জামাকাপড়, আমানের বাবামা, বন্ধু-বান্ধবের সেবা সামাজিকতা নিশ্চিত করতো? এই পাশাপাশি শোয়া, একসাথে সংসার সাজানো, এর কতটা সত্যি ছিলো আর কতোটা অভিনয়? জানা হবে না, কখনো জানা হবে না। উঠে বারান্দায় এলো, দিনমান ঝরে যাচ্ছে আকাশ, ঝরছে বাইরে, ঝরছে অন্তরে, ঝরছে তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে তানবীরা হোসেন ০৬/১২/২০২৩

আদিবা

আফগানিস্তানের মেয়ে আদিবা, মাত্র ডাক্তারি পাশ করে বেরিয়েছে। যুদ্ধের ডামাডোলে পরিবারশুদ্ধ পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ইরানের রিফিউজি ক্যাম্পে। সেখানে পাঁচ/ছয় মাস থাকার পর তার খালার সাহায্যে বিয়ে হয় এক ইরানি যুবকের সাথে। বিয়ের দশ বারোদিন পরেই এই নব দম্পত্তি নেদারল্যান্ডসে এসে পৌঁছায়। রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিভিন্ন ধাপ পার করে এবারের ধাপ, “ভাষা শেখা”। আমার সাথে আদিবার আলাপ “ভাষা শেখার” ক্লাশে। দুজনেই এশিয়ান হওয়াতে গল্প জমতে বেশি সময় লাগেনি। পাশাপাশি বসতাম, কফি ব্রেকে গল্প, ক্লাশ ছুটির পর গল্প। যে “আফগান যুদ্ধ” আমি টিভিতে দেখেছি, পেপারে পড়েছি, সে সাক্ষাত আমার চোখের সামনে। আমার অনুভূতি যাকে বলে “বিপন্ন বিস্ময়”। আমার প্রশ্নের শেষ নেই, কৌতুহলের শেষ নেই. বাবামায়ের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই, কবে আবার তাদের দেখতে পাবে জানে না। কিন্তু অদম্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর আদিবা। আজকে হাতে মেহেদি লাগায়তো কালকে চুলে নানারকম বিনুনি করে। আর এদিকে সপ্তাহে চারদিন বাবামায়ের সাথে কথা বলা আমি বৃষ্টি দেখলে কাঁদি, রোদ দেখলেও কাঁদতে থাকি। খালার বাসায় কোন রকম করে হওয়া বিয়ের ছবি আমাকে দেখায় আদিবা, তার চোখে স্বপ্ন, তার বাবা বলেছে, যুদ্ধ শেষ হলে, সবাই আফগানিস্তানে ফেরৎ যাবে আর তখন অনেক বড় করে আদিবার বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। আফগানিস্তানে বিয়ে হলে কি কি রিচুয়াল হয় সেসব নিয়ে গল্প করে। ক্লাশ শেষ হয়ে গেলে আমরা যে যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে যাই। হাজার প্রমিজ সত্ত্বেও নিয়মিত যোগাযোগ আর হয়ে ওঠে না। এন্ডহোভেন তখন অনেক নিরিবিলি ছিলো, মাঝে মাঝেই ডাউনটাউনে আদিবার সাথে দেখা হয়ে যেতো। সময় মিললে দুজনেই ম্যাকে বসতাম, সেই অফুরান গল্প নিয়ে। মিসক্যারেজ হয়েছে আদিবার, বাচ্চা হচ্ছে না সেই নিয়ে স্বামী আদিবাকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছে, আদিবার সমস্যা নেই, বরের সিমেন কাউন্ট করতে হবে, কিন্তু বর তাতে রাজি হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই আদিবার গায়ে হাত তুলে এসব নিয়ে। খুব মিষ্টি একটা চলন্ত পুতুলের মতো দেখতে আদিবা, মুক্তো ঝরা হাসি যাকে বলে। শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করতো আমার। খুব স্বাভাবিক গলায় এসব গল্প করতো, যেনো কিছুই না। এতো কিছু পেরিয়ে এসেও আদিবা কি হাসিখুশি ফুর্তিবাজ আর আমি সারাবেলা মনমরা। এর অনেকদিন পর, পাঁচ/ছয় বছর তো হবেই, আদিবাকে যখন প্রায় ভুলেই গেছি। ব্যস্ত আমি, দিনের বেলায় আর ডাউনটাউনে ঘোরার সময় নেই। এক বাঙালি বন্ধু নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে, বারবার দেখতে যাওয়ার জন্যে দাওয়াত করে তো এক সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হলো, যেয়ে ঘুরেই আসি। দেখছি একটি মেয়ে দ্রুতগতিতে এই টেবল থেকে সেই টেবলে ছোটাছুটি করছে। ক্ষিপ্রহাতে সার্ভ করছে, ক্লিন করছে। চেনা চেনা লাগতেই সেই হাসি, “আদিবা”। ছোট একটা বাচ্চা আছে (ছেলে না মেয়ে ভুলে গেছি), সন্ধ্যেবেলায় নেইবারের কাছে রেখে সে রেস্টুরেন্টে জব করছে, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে। বাবা-মায়ের সাথে এখন নিয়মিত যোগাযোগ হয়, পয়সা জমাচ্ছে যাবে দেখা করতে। সেই হাসিখুশি, সহজ আদিবা। মিথ্যে লজ্জায় লুকাচ্ছে না, প্রাণখুলে কথা বলছে। অনেকের মতো, আমিও আগে ভাবতাম, কি সাহসী মেয়ে আদিবা! কিন্তু আজ জানি, সাহসের কিছু ছিলো না এখানে, জীবন যখন যে অবস্থায় রেখেছে, আদিবা সেটাকেই মেনে নিয়েছে। পেছনে ফেরেনি, সামনে তাকিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের যুগে বন্ধুত্ব হয়নি তাই আবারো আদিবা হারিয়ে গিয়েছে।

অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া

অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া রোজকার এই আলো -আঁধারিতে অসংখ্য ভুল-ত্রুটির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আমাদের, তা সে স্বেচ্ছায়ই হোক বা অনিচ্ছায়। মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখতে হয়, প্রশ্ন রাখতে হয় এই নিজেরই কাছে। “একা ঘরে নিজেকে প্রশ্ন করা” ব্যাপারটা শুনতে যত সহজ মনে হয়, আসলে ততো সহজও নয়। শোরগোলের এই পৃথিবীকে মোকাবেলা করার মধ্যে অনেক ছলকপট থাকে আর নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে সত্যিই অনেক সাহসী হতে হয়। “অপরাধবোধ এবং লজ্জা” এমন এক আবেগ যা নিজে তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন "জীবন ধারনের জন্যে কিংবা সমাজে বসবাসের জন্যে বেঁধে দেয়া সাধারণ নিয়মগুলি" পালন করা হয়নি। কিংবা যদি আপনার নিজের বিবেকবোধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন কিছু করে থাকেন যা প্রচলিত নিয়ম এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে খাপ খায় না। অথবা আপনি এমন কিছু করেছেন যা অন্যকে আশাহত করে বা আঘাত করে। অপরাধবোধ এবং লজ্জার অনুভূতি প্রায়শই একসাথে ঘটে, তবে মূলত জিনিসটি আলাদা। তাহলে পার্থক্য কি? “অপরাধবোধ” হল "আপনি কি করেছেন" সম্পর্কে একটি অসন্তোষজনক অনুভূতি। ধরুন, আপনি দোষী বোধ করছেন কারণ আপনি আপনার সন্তানের ফুটবল খেলা মিস করেছেন, অথবা আপনি একজন পরিচিতের কাছ থেকে একটি দামী ফুলদানি এনে ভেঙে ফেলেছেন। অপরাধবোধ প্রায়ই আপনাকে অন্যের দ্বারস্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুঃখিত বলার জন্যে বা ক্ষতি পূরণ করার জন্যে আপনি তার কাছে ফিরে যান। “লজ্জা” হল "নিজের" সম্পর্কে একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি। এমন হতে পারে, আপনি লজ্জিত কারণ আপনি মনে করেন যে আপনি একজন খারাপ মা, অথবা আপনি অনেক কাজে খুব আনাড়ি। কোন প্রিয়জনের অপ্রিয় কাজেও সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে লজ্জিত বোধ করতে পারেন। লজ্জা আপনাকে পেছাতে বাধ্য করে। আপনি অন্য কারো কাছে সেটি আর প্রকাশ করতে চান না কিংবা অন্য কারো সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে চান না। এজন্য আপনি নিজেকে যতটা সম্ভব ছোট বা অদৃশ্য করে ফেলেন। আর সমস্ত আবেগের মতো, অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধও কখনও কখনও দরকারী। অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া দিয়ে কি লাভ হয়? • অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে "সমাজের সাধারণ নিয়মগুলো" মেনে চলতে সাহায্য করে। o আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না। o আপনি সুইমিং কস্টিউমে অফিসে যাবেন না। অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে আপনার "ভুলত্রুটি" শুধরে নিতে সাহায্য করে। • আপনি যদি ভুলবশত কারো কোনো গোপন কথা অন্যকে বলে থাকেন তাহলে আপনি দুঃখিত হবেন। • আপনার অতিমাত্রার কেতাদুরস্ততা কিংবা আঁতেলপনা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনি নিজেকে সংযত করবেন। সেটা কিভাবে করবেন? অন্যের চোখে চোখ রেখে, তার ব্যথা তার অপারগতার প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রকাশ করে। অন্যের প্রতি যত সহনশীল হবেন ততোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন। একা ঘরে আয়নায় চোখ রাখতে আর ঘাবড়ে যাবেন না, প্রাণ খুলে হাসতে ভয় পাবেন না। মূলঃ মনোরোগ বিভাগ, নেদারল্যান্ডস ভাবান্তর ও ভাষান্তর তানবীরা হোসেন

Thursday 21 September 2023

“জলের বানী”

“জলের বানী” আপনার চিন্তা আপনাকে নয় বরং আপনি আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন – ডঃ মাসারু ইমোটো কোন এক শীতের সকালে জানালায় বসে তুষারপাত দেখছিলেন ডঃ ইমোটো। প্রতিটি তুষার কনা মাটিতে পড়েই একটি আকার ধারন করে। একটির আকারের সাথে অন্যটির আকারের কোন মিল নেই। প্রতিটি তুষারকনা’র আকারই অনন্য। তারা কিভাবে “অনন্য” আকার নেয়, এটি বিবেচনা করে তিনি কৌতুহলী হয়ে ওঠেন, পানি’কে বরফ করলে তাদের মৌলিকুলের আকার কিরকম হবে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তিনি নিজে একটি কাঠামো/তত্ত্ব নির্দিষ্ট করে পরীক্ষা শুরু করেন যা কয়েকমাস পরে সঠিক প্রমানিত হয়েছিলো। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জানি, পানির নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে। ডঃ ইমোটো এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন, “পানির জীবনীশক্তি প্রাণবন্ত” । ঐতিহ্যগতভাবে চীনা চিকিৎসকরা “চিন্তাভাবনা”কে কম্পন হিসেবে দেখে। যাই ঘটুক না কেন, বিমূর্ত চিন্তাও অবশ্যই শরীরের মধ্যে অনুরণিত হবে। পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম তত্ত্বেও আছে “এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই কম্পমান”। এবং ডঃ ইমোটোর পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে এই কম্পনগুলি জলেও অনুরণিত হয়। পরীক্ষার জন্যে ডঃ ইমোটো তার নিজস্ব জাপানী ভাষায় দুটো চিরকূট লেখেন, একটিতে লেখেন “প্রেম” অন্যটিতে “ঘৃণা। চিরকূট দুটোকে বোতলে আটকে দেন, লেখাটা ছিলো পানির দিকে মুখ করে। সারারাত তাদেরকে সেভাবে রাখা হলো। পরের দিন বোতলগুলোকে ডিপ ফ্রিজে রাখেন এবং তাদের ছবি তোলেন। “ভালোবাসা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানির মৌলিকূলগুলো চকচকে পরিস্কার একটি আকৃতি তৈরি করে আর “ঘৃণা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানি থেকে বিশৃঙ্খল একটি আকৃতি তৈরি হয়ে প্রমাণ করে যে, “পানি প্রকৃত পক্ষেই কম্পনের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে”। অবশ্যই ডঃ ইমোটো সেখানে থামেননি: তিনি তার পরীক্ষা চালিয়ে যান, বিভিন্ন শব্দ, সঙ্গীত এবং অন্যান্য পরীক্ষা বোতল শত শত বিষয় ভাইব্রেশনাল প্রভাব, এবং ফলাফল সব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত. 'ইতিবাচক কম্পন' = সুন্দর স্বচ্ছ আকৃতি 'নেতিবাচক কম্পন' = বিকৃত অস্বচ্ছ আকৃতি আশার কথা হলো, নিজের চিন্তাভাবনাকে ইতিবাচক রাখার জন্যে নিজের ওপরেও আপনি এই পরীক্ষাটা করে দেখতে পারেনঃ ধরুন, আপনি নিজে আশি ভাগ আর পানি হলো বাকি বিশ ভাগ, আপনার নিজের ওপর কি প্রভাব পড়ছে? নিজের মস্তিকের কোষে? যদি নিজেকে ভালো বাসেন, নিজের প্রতি যত্নশীল থাকেন, সারাবেলা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখেন, এর প্রভাব আপনার মস্তিকের কোষে পড়ে ঠিক তেমনি এর বিপরীত প্রভাবটাও স্পষ্টই হবে। সারাদিনের বেশিটা সময় মানুষ নিজের সাথে কাটায়। নিজের প্রতি সদয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাতে অন্যের প্রতি আপনার কমনীয়তা আরো বাড়বে সাথে নিজের স্বাস্থ্য, শক্তি ও জীবনীশক্তি আরো উন্নত হবে। তথ্যসূত্রঃ http://www.masaru-emoto.net/english/water-crystal.html

Sunday 30 July 2023

রায়হান রাফি

পাইরেসি’র কারণে দেখে ফেললাম রায়হান রাফি’র সদ্য রিলিজ পাওয়া সিনেমা “সুড়ঙ্গ”। ধন্যবাদ, আমার “পাইরেট” বন্ধুদের মানে যারা আমাকে লিঙ্ক দাও আর কি তাদেরকে মীন করছি। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা অবশেষে কোলকাতার বাংলা সিনেমাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে (নিঃসন্দেহে)। কোলকাতা আটকে গেছে ফেলুদা আর ব্যোমকেশে। কিন্তু “পাইরেসি” কোয়ালিটিতে কোলকাতা আর বাংলাদেশ সমান বাজে। “অর্ধাঙ্গিনী” আর “সুড়ঙ্গ” একই রকম বাজে কোয়ালিটির। এদিক থেকে হিন্দী পাইরেটসরা ভালো, এরা উন্নতমানের ডিভাইস ইউজ করে। দুই বাংলার পাইরেটসদেরই এই দিকে একটু বেশি পয়সা খরচা করা উচিৎ। ফ্রাইডে, পরান তারপর সুড়ঙ্গ, রায়হান রাফির ফ্যান হয়ে গেছি। অমিতাভ রেজা’র কনফিউশান মুভি থেকে অনেক বেশি ক্লিয়ার (বোধগম্য) ছবি বানায় এই ছেলে। সুড়ঙ্গ মুক্তি পাওয়ার পর অনেকগুলো সমালোচনার একটা বারবার রিপিট করেছে যেটা হলো, “রাফি, মেয়েদেরকে নেতিবাচক ভাবে দেখায় তার মুভিতে।“। আমার মতে কথাটা ঠিক না। রাফি বরং যা হয় তাই দেখানোর সাহস করেছে। অকারণে রঙচঙ দিয়ে “মেয়ে” মানেই দুর্বল তারে সিমপ্যাথি কার্ড খেলতে দাও, সেই ফাইজলামি করে নাই। তিনটি সিনেমাতেই এক জিনিস এসেছে, “কর্মহীন কিংবা রোজগারবিহীন মেয়ে”। প্রতিটি ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছে তারপর সিনেমা হয়েছে, সে নিজের থেকে কাহিনী বানানোর কষ্টও করে নাই, রোজ এগুলো পত্রিকার পাতায় থাকে। “ফ্রাইডে”তে স্বামী মারা যাওয়ার পর, ভদ্রমহিলা যদি নিজে একটা কাজ খুঁজতো, স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করতো তাহলে বাড়িওয়ালার এবিউজ এড়াতে পারতো। তার মেয়ে মুনা’ও সেই গৃহবধূ, ফলাফল স্বামীর দ্বারা এবিউজড। পরিনতিতে বাড়িসুদ্ধ খুন। আমাদের দেশে স্টুডেন্ট লাইফে মেয়েদের তেমন কাজকর্ম করার রীতি নেই। ছেলেরা টুকটাক টিউশনি করে। কিন্তু সাজগোজ আর বায়না করার বয়সও সেটা। অনেক মধ্যবিত্ত বাবাই সেটা এফোর্ড করতে পারে না। অনেক মেয়েই তখন অন্য রাস্তা ধরে। “অনন্যা” চরিত্রটিও ঠিক তাই। একজন পায়ে সেধে জিনিসপত্র দিতে আসছে, সে নেবে না? ঐটুকু বয়সে কেউ পরে কি হবে সেটা ভাবে? অনন্যার মা স্বাবলম্বী হলে কিংবা অনন্যা নিজের পকেট মানি নিজে আর্ন করলে এই ঘটনাটা না’ও ঘটতে পারতো। ছোট বয়সের চঞ্চলতার মাশুল দিতে এখন কারাগারে বসে ফাঁসির দিন গুনছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ময়না’র বিয়ে হয়েছে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মাসুদের সাথে। নতুন বউয়ের হাজার শখ, তার বায়নায় হাবুডুবু মাসুদ যায় মালোশিয়া। অথচ মাসুদের আর ময়নার ঠিক করা দরকার ছিলো, ময়না’ও কাজ করবে এবং নিজের শখ নিজের টাকায় পূরণ করবে। ছুটির দিনে দুজন একসাথে বেড়াতে যাবে আনন্দ করবে। সব বোঝা একজনের কাঁধে না, ভাগাভাগি হবে। মেয়েরা স্বাবলম্বী হলে কি তবে সমস্যা কমে যায় বা শেষ হয়ে যায়? একদমই না। তবে সমস্যার ধরন পালটে যায়। খুন-খারাপি অন্তত এড়ানো যায়। ২৩শে জুন প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, প্রতি চল্লিশ মিনিটে ঢাকায় একটি করে ডিভোর্স হচ্ছে। ডিভোর্সের আবেদন সত্তর ভাগই আছে নারীর কাছ থেকে। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। এই নেতিবাচক খবরের ইতিবাচক দিক হলো, এখানের অর্ধেক স্বামী কিংবা স্ত্রী খুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আগের মতো এভরি অল্টারনেট ডে’তে এখন পেপারে খবর আসে না, রাজধানীতে আবারো গৃহবধূ খুন। মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ আছে আর এক সমস্যায়। স্বাবলম্বী মেয়েদের জন্যে এই সমাজ কাঠামো এখনও তৈরি না। আশা’র কথা শুরু যখন হয়েছে তখন কাঠামোও বদলাবে, অনেক সময় নেবে তবে বদলাবে। তানবীরা ৩০/০৭/২০২৩

এক মন্দ বউয়ের উপাখ্যান

এক মন্দ বউয়ের উপাখ্যান https://epaper.protidinerbangladesh.com/second-edition/2023-07-28/8/6130?fbclid=IwAR3GUPGteLqC4wxiN3NSpOJRcj0WgLL5q0OJTk7rMODVdRa-I-_WPco0fbo নিশি খুব রেগে আছে, সজীবও। একজনের মুখ লাল আর অন্যজনের কালো। ঘরে এসির খানিকটা ধাতব শব্দ আর ল্যাপটপে ইতস্তত টাইপের মৃদ্যু শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দুজনেই ঘরের দুই কোনায় দুজনের ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করছে, যদিও দুজনের কারোই এখন অফিসের কাজের কোন পরোয়া নেই। না এখন কাজ নিয়ে ভাবার এতটুকু আগ্রহ আছে তাদের। সজীব নিশির দিকে আবার তাকালো। ভাবছে, এত স্বার্থপর, নিষ্ঠুর কেমন করে হতে পারে নিশি। তার জানা মতে তার আশেপাশে নিশিই ছিলো সবচেয়ে নরম, কোমল, মায়াবতী মেয়ে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার জানায় ভুল ছিলো। সকালের আলোচনায় নিশির এক কথার জবাবই যথেষ্ঠ ছিলো নিশির নির্মম আসল চেহারাটা দেখার জন্যে। যদিও সজীবের তরফ থেকে এটি এমন কোন আলোচনাই ছিলো না যেখানে নিশি এক কথায় একটা জবাব দিতে পারে। সজীব এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না যে নিশি সত্যিই এটা বলেছে। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য কয়েকদিন আগে। অপরিচিত একজন নিশিকে ফোন করে জানালো, নিশি’র বাবামা রিকশা থেকে পরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। আঘাত সেরকম মারাত্বক না হলেও গভীর। ডাক্তার তাদেরকে মাসখানেকের জন্যে নিয়মিত চিকিৎসা ও বিশ্রামের উপদেশ দিলেন। বয়সের কথা ভেবে ডাক্তার তাদের সেবা যত্নের দিকে প্রখর দৃষ্টি রাখার কথা জানালেন। নিশি তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। যে মুহূর্তে নিশি বাবামায়ের দুর্ঘটনার কথা জেনেছে সেই মুহূর্তে সে অফিস থেকে অর্নিদিষ্টকালের ছুটি নিয়ে নিয়েছে। সজীবকে বলেছে, টুকটুকির খেয়াল রাখতে, বাড়ি সামলাতে, যেটা সজীব খুশী মন নিয়েই করেছে। নিশি দিনরাত এক করে বাবামায়ের সেবা করেছে, ডাক্তার, নার্স, বাজার, ঔষধ, ফিজিওথেরাপি সব। বাবামা কি খাবে সেই রান্না, বাড়ি এখন কিভাবে চলবে সেসব বন্দোবস্ত, সাহায্যের লোক ঠিক করা, জামাকাপড় কাঁচা কি নয়। স্বাভাবিকভাবেই, ঢাকার এই জ্যাম ঠ্যাঙ্গিয়ে সে এই কয়দিন এ বাড়ি আসেনি। তাই নিয়ে সজীবের কোন আপত্তিও ছিলো না। বরং সজীব খুশী হয়েছিলো এই দেখে, কিভাবে একা তার বউ এত কিছু সামলাতে পারে। কি সুন্দর করে নিশি তার বাবামায়ের সেবাযত্ন করছে। সবচেয়ে বেশি যেটা ভাল লেগেছে, ছোট বাচ্চাদের মত করে বাবামায়ের যত্ন করছে যেনো ওরাই নিশির সন্তান। এরই মধ্যে নিশি তার বাবামাকে আস্তে আস্তে রাজি করালো, তাদের বাসার কাছাকাছি বাসা নিয়ে চলে আসতে। প্রথমে তারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আপত্তি করেছিলো, নিজের বাড়ি ছেড়ে এই বয়সে তারা কোথাও যাবে না, ভাড়া বাড়িতো নয়ই। একদিনতো রেগে বলে দিলো তোকে এসে আর আমাদের দেখাশোনাও করতে হবে না। বাসা বদলানোর পরও, এই অসুবিধা, সেই অসুবিধা দেখিয়ে নিশিকে প্রায়ই বকাঝকা করতো। তারপর একদিন পৃথিবীর নিয়মেই আস্তে আস্তে সবাই মানিয়ে নিতে লাগলো, জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো। আজ সজীব আর নিশি সকালে নাস্তা করছিলো। সজীব জিজ্ঞেস করলো, কিছু মনে না করো যদি, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। তুমি যেভাবে বলছো তাতে তো মনে হচ্ছে এতে মনে করার কিছু আছে, যাহোক, বলে ফেলো তো। যেভাবে নিজের বাবামায়ের সেবা করেছো তুমি, দেখাশোনা করছো তাদের, আমার বাবামায়ের জন্যেও কি তুমি তাই করবে? তাদের সাথে থেকে তাদেরকে নিজ সন্তানের আদর দেবে? পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবে তাদের? পাশে থাকবে তাদের তুমি? আমি জানি আমরা এখন তাদের থেকে আলাদা থাকছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যখন ওদের কোন বিপদ হবে, তুমি তাদেরকে কিছুতেই ফেলে দেবে না। পাশে থাকবেতো তাদের, নিশি? অবিশ্বাসের চোখে নিশি সজীবের দিকে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই কি সজীব তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করছে? মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে নিশি জ্বলে উঠলো, শান্ত গলায় বললো, না, কখনোই না, আমার বাবামাকে আমি যেভাবে দেখাশোনা করেছি, সেভাবে আমি কখনোই তোমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবো না সজীব। বলেই নিশি সজীবকে আর একটি কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়ে অফিসে চলে গেলো। আর এখন, সারাদিন পর অফিস থেকে এসে নিজের ল্যাপটপ খুলে বসে পরেছে। সজীব, ভাবছিলো, সকালের রুক্ষন ব্যবহারের জন্যে সে অনুতপ্ত হবে, সেটা নিয়ে কথা বলবে কিন্তু তার তো কোন লক্ষনই নেই। এভাবে তো ছাড়া যায় না সিদ্ধান্ত নিয়ে সজীব নিজেই জিজ্ঞেস করলো, নিশি, সকালে ওভাবে কথা বললে কেন ? তুমি কি সত্যি সত্যিই বলছো যে তুমি আমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবে না? আমার বাবামায়ের জন্যে আমি যেভাবে করেছি, তোমার বাবামায়ের জন্যে আমি সেভাবে করবো না। দ্বিগুন রাগে অংগার হয়ে গেলো সজীব। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললো, দয়া করে একটু খুলে বলবে, তোমার সমস্যাটা কি? তুমি এখন পক্ষপাত করছো না? এই যে সারাক্ষণ সাম্যতার কথা বলো, তোমার নিজের বাবামায়ের সাথে ব্যবহার আর আমার বাবামায়ের সাথে ব্যবহারের সাম্যতা এখন কোথায়, শুনি? সজীবের দিকে নিশি কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, তারপর বললো, “পক্ষপাত? পক্ষপাত নিয়ে তুমি কথা বলছো? তোমার প্রশ্নটাই কি পক্ষপাতিত্বমূলক ছিলো না? তোমার বাবামায়ের যত্ন নেয়া বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো, রান্না করা, ইত্যাদি ইত্যাদি আর সব? এরমধ্যে তুমি সমতা চাও? ঠিকাছে চলো, সমান সমান করি। যখন আমার বাবামায়ের দুর্ঘটনা ঘটলো, ওদের সাথে হাসপাতালে আমি ছিলাম, তুমি কোথায় ছিলে? তোমার মেয়ে নিয়ে বাসায়। ঠিকাছে আমিও তাই করবো, মেয়ে নিয়ে বাসায় থাকবো আর তুমি তাদের সাথে হাসপাতালে থাকবে। বাবামায়ের বাসায় যখন ছিলাম তাদের জন্যে রান্নাবান্না করেছি আর তুমি নিজের মেয়ের যত্নআত্তি করেছো। তুমিও যাও, তাদের জন্যে রান্নাবান্না করো, আমিও বাসায় থেকে আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখবো। ছোট বাচ্চাদের মত তাদের দেখাশোনা করে, বাড়ির সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে আমি বাবামায়ের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করেছি আর সেসময় তুমি নিজের মেয়ের খেয়াল রেখে আমাকে সাহায্য করেছো। তুমিও তাদের সব কাজকর্ম সারো, গোছাও আমি আমাদের ঘর সংসার আর মেয়ের খেয়াল রেখে তোমাকে সাহায্য করে যাবো। বাবামায়ের দুর্ঘটনার পর থেকে সবাই আশা করে বসে আছে আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির জন্যেও একই দায়িত্ব করবো। না, আমি করবো না। আমি আমার বাবামায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছি, তোমার বাবামায়ের সন্তান তো তুমি, তাদের প্রতি দায়িত্ব তোমার, পালনও করবে তুমি। আর এটাই তো সমতা, নাকি? তোমার বাবামায়ের জন্যে রান্না তুমি করবে, ঘরদোর তুমি পরিস্কার করবে, জামাকাপড় তুমি ইস্ত্রি করবে, আমি না। আর তুমি যদি ভাবো, তুমি “পুরুষ মানুষ” এগুলো করলে লোকে কি ভাববে, সেটার জন্যে তুমি আমাকে অন্তত অসমতায় আসতে বাধ্য করো না। আর শেষবারের মত শুনে রাখো সজীব, দরকারে নিজের বাবামায়ের যত্ন নিজে না নিয়ে, বউ তোমার বাবামায়ের যত্ন করবে এই ভাবনাটা ছাড়ো। তুমি নিজে তোমার বাবামায়ের জন্যে কিছু না করে আশা করে আছো পরের বাড়ির মেয়ে সেটা করে দেবে। ওরা তোমার বাবামা, তুমি ওদের যত্ন করবে, আমি তোমাকে সাহায্য করবো যেমন তুমি আমায় করেছিলে। আশাকরছি, যথেষ্ঠ খুলে বলেছি, এর থেকে বেশি খুলে বলার কিছু আর নেই। সজীব চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো আর ভাবছিলো। নিজের ভুলটা সে নিজেই বুঝতে পারলো। অবাক হলো ভেবে, কতোটা স্বার্থপর সে, নিশির ওপর সে দুইজনের বাবামায়ের সেবাযত্নের ভার চাপিয়ে দিচ্ছিলো আর তার নিজের যে দায়িত্ব আছে সে কথা সে ভাবেইনি। ছোটবেলা থেকে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় এই দেখে দেখে বড় হয়েছে সে বলে অনুভবই করেনি পুরুষেরা কতটা অলস আসলে। এখন সময় হয়েছে তার, নিশির কাছে ক্ষমা চাওয়ার। ভারতীয় লেখক আল্লাম ভাবানার লেখা থেকে ইষৎ পরিমার্জিত ভাষান্তর। তানবীরা হোসেন ০২/০৮/২০২৩ https://www.momspresso.com/parenting/ginger-thoughts/article/should-a-daughter-in-law-take-care-of-her-parents-in-law-an-honest-answer?fbclid=IwAR3mfyROMsZ2z8VS3EV9IF-DBqQ5b7FgrvIwoL2fBpBLnJwhiUZ2MCD8hzQ