Sunday 24 July 2022

"বিয়ের প্রলোভন”

আপাদেরকে বলছি, “প্রেম” যেমন মানব জীবনের একটি শ্বাশত ব্যাপার, “ব্রেকাপ”ও তাই। প্রেম হয়, প্রেম ভাঙে। মানুষের মন বদলায়, পরিস্থিতি বদলায়, পেশা বদলায় কত কি। “পাশে থাকার শুধু একটি কারণ থাকে ভালবাসা আর ছেড়ে যাওয়ার হাজার কারণ থাকে কিন্তু কারণ আসলে একটাই অ-ভালবাসা। এই ব্যাপারটি শুধু বাঙালি সমাজে ঘটে না। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে নর-নারী এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যায় না। প্রেম আসলে যেমন উত্তাল জোয়ারে ভাসে, ব্রেকাপে তেমন ডিপ্রেশানে ভোগে, নিদ্রাহীন রাত, অশ্রু জলে ভাসা, অদম্য রাগ আর ঘৃণা। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র বা আদালত প্রেমে প্রতারণার দায়ে একজন মানুষকে একজন মানুষের সাথে থাকতে বাধ্য করতে পারেনি, শাস্তিও দিতে পারেনি। লিভ টুগেদার কিংবা বিয়েও ভেঙে যায়, কাউকে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকার পারমিশান আদালত দেয় না। আদালত শুধু অর্থনৈতিক দিকটার সুরাহা করে দেয়। বাচ্চা থাকলে সাধারণতঃ দায় এড়ানো পুরুষদের, বাচ্চার দায়িত্ব নিতে আদালত নির্দেশ দেয়, কেউ যেনো কারো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় ব্যস এটুকুই। “বিয়ের প্রলোভন” দেখিয়ে কথাটা চরম আপত্তিকর। “প্রলোভন” দেখানো যদি অপরাধ হয় তাহলে “প্রলোভিত” হওয়াও অপরাধ নয় কেন। আর চরম ডিসরেসপেক্টফুল শব্দতো বটেই। একজন কেউ আপনার থেকে বেশি বুদ্ধিমান, আপনার বেক্কলামির সুযোগ নিয়ে আপনাকে ধোঁকা দিছে, এটা জনে জনে বলে বেড়ানো কতটা মানের? প্রেম থাকলে ব্রেকাপ থাকবেই, এটা মাথায় রেখেই সম্পর্কে জড়ান। শুধু ফেসবুকে সেলিব্রেটি হলেই তো আধুনিক হওয়া যায় না, চিন্তা-চৈতন্যতেও যুক্তি আনেন, সামনের দিকে তাকান, পেছনে না।

কাপিল শার্মা শো

“কাপিল শর্মা কমেডি শো” এই মুহূর্তে আমার প্রিয় একটা অনুষ্ঠান। সময় পেলেই দেখি। অনেক সময় ব্যাক গ্রাউন্ডে লাগিয়ে কাজ করি। একটা মানুষের উইথ স্ক্রিপ্ট কিংবা উইদাউট স্ক্রিপ্ট এত উইটিনেস আর প্রত্যুৎপন্নমতিতা “কাপিল”কে না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। “আপ কি আদালত” অনুষ্ঠানে রাজাত শার্মা যখন প্রশ্ন করছে, কাপিল কাঠগড়ায় তখনও ঠিক সেরকম মুডেই কথা বলছে। অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার কৌশল তার অস্থি মজ্জায়। এসব হাসি কৌতুকের একটা বিশাল ভাগ থাকে বডি শেমিং। অডিয়েন্স থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা বড় অংশ থাকে প্রশ্নকর্তাকে বডি শেমিং দিয়ে নাস্তানাবুদ করা। এই শরীর নিয়ে এই কাজ কিভাবে করেন। বাড়ি যেয়ে ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করেন। এত মোটা আপনি তারপরও আপনার পার্টনার আপনার সাথে থাকে সেটার শুকরিয়ে করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ন্যাশনাল টিভি থেকে বিশ্বজুড়ে এই জিনিস সম্প্রচার হচ্ছে, ভাবা যায়!!!! কিকু সারদা বলছে, ভারতী সিং বিছানায় বসেছে তাতে গদীর তুলো বেরিয়ে গেছে। ভিদ্যা বালানকে দেখে একজন পাকা চুলের ভদ্রলোক কবিতা পড়াতে, কাপিল অনেকক্ষণ তাকে বুড়ো বলে পঁচালো। বয়স বাড়ার অপরাধে অন্যদের সাথে ঐ ভদ্রলোকের নিজে্কেও ঐ পঁচানোতে হাসতে হলো। ঠিক কতটা বয়স হলে একজন নর একজন নারীকে দেখে কিংবা একজন নারী একজন নরকে দেখে মুগ্ধ হতে পারবে না? কবিতা পড়তে বা লিখতে কিংবা গান গাইতে পারবে না? অজয় দেবঘন, সালমান খান, শাহরুখ খান, ইমরান হাশমী, ভিদ্যা বালান সবাই এসব জোকে হেসে গড়িয়ে পড়ে। সিদ্ধু সিং আর অর্চনা ম্যাডামের কথাতো বাদই দিলাম। আর আমরা সেন্সেবিলিটি, কমন সেন্স, কনসাশনেস, রেসপেক্ট এগুলো আশাকরি ম্যাঙ্গো পিপল থেকে!!!!!! পারস্পারিক শ্রদ্ধা, অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানো, মানুষের আকার আকৃতি, গায়ের রঙ এগুলো মজার উপকরণ নয় বেসিক এই সভ্যতাগুলো এই উপমহাদেশের মানুষগুলো কবে শিখবে।

বিলাই - শেয়াল কথন

নন ম্যাট্রিক সকল ননদ আর জা’দের সংসারে এক বউ এম এ পাশ। একান্নবর্তী সংসারের যত রকম মনোমালিন্য আছে তাতে তার বাড়তি পাওনা হলো, “বিএ-এমএ পাশতো”। সংসারের যত রকম কুৎসিত রুপ আছে তার মধ্যে দিয়ে চান কিংবা না চান আপনাকে অনেক সময় যেতেই হয়। অসহ্য হয়ে যদি “উফ” উচ্চারণ করেন, আপনার বাড়তি পাওনা হলো, “দু’খানা বই নিকেচেতো”। "মেয়ে মানুষ" বাজার আনা থেকে শুরু করে রান্না করা, পরিবেশন করা, কাপড় কাঁচা থেকে বিল দেয়া সবই করবেন। সবার সুখ-দুঃখ,ভাল-মন্দ বিবেচনা করে পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সাংসারিক ব্যাপারে নিজের মতামত দিতে যাবেন, তখন শুনবেন, “দুই পয়সার একটা চাকরি করে তো”। আপনার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা না হলো, সেটা ব্যাপার না, দিনের শেষে, সকল শেয়ালের মাঝে কোন বিলাই থাকতে পারবে না, বিলাই হওয়াই দোষের।

Thursday 7 July 2022

কিসমাত আপনা আপনা

পকেটে টাকা নাই? গড়ের মাঠ? ফি মাসেই ম্যালা এদিক ওদিকের খরচা থাকে? ঐদিকে আবার বউ বাইরে খেতে যেতে বায়না করে? ঘুরতে যেতে চায়? জাস্ট বলবেন, ভাল মেয়েরা এত ঘুরতে বেড়াতে যায় না। বাইরের খাবার খায় না। এরকম মেয়েদের মানুষ মন্দ বলে। ভাল বংশের মেয়েরা, নিজেরা রেঁধে বেড়ে স্বামী- সন্তানকে খাওয়ায়। ব্যস, জোঁকের মাথায় নুন পরে যাবে। বউ নিজেকে ভাল মেয়ে প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে যাবে। কড়কড়া গরমে যতই তার ঠান্ডা ব্যানানা স্প্লিট কিংবা ডামে ব্ল্যাঙ্কের ওপরের আঠালো চকলেট সসের জন্যে জিহবা তড়ে যাক, সে নিজের চোখে দেবে ধূলো আর জিভে দেবে তুলো। বুক ফেটে গেলেও মুখ খুলবে না। ঘর সাজানোর জন্য মুরানো শোপিস, কিংবা শৌখিন বারবেরি কানের দুল, ক্রিস্টালের গ্লাস এসবের বায়না করে? ভদ্র বাড়ির বউরা কি মার্কেটে মার্কেটে ঘোরে? বাউন্ডুলে মেয়েরা এসব নাটক সিনেমা দেখে বেড়ায়, মার্কেটে ঘোরে, বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেয়। সংসারি মেয়েরা না। আজন্মের শখ ছিলো একটা মিষ্টি, আদুরে, সংসারি মেয়ে আমার বউ হবে। বাড়িতে টুকটুক ঘুরবে, কারণে অকারণে চা-নাস্তা বানিয়ে আনবে। দেখবেন, বউ নিজেকে সংসারি প্রমাণ করার জন্যে, স্বামীর পরীক্ষার খাতায় মেধা তালিকায় থাকার জন্যে, মার্কেট, বান্ধবী, নাটক, গল্পের বই পড়া সব বাদ দিয়ে দেবে। শুধু জানবে না, সীতারা পরীক্ষা দিয়েই যায় আজীবন কিন্তু পাশ আর হয় না, কিছু না কিছু খুঁত থেকেই যায়। গৃহকর্মে সাহায্য করার জন্যে পাখি আপা ছিলো আমাদের বাসায় অনেক অনেক বছর। একদিন পাখি আপা বড় হলে সবাই ঠিক করে পাখি আপাকে বিয়ে দেয়া দরকার। পাখি আপার পুরো পরিবার আমাদের কারো না কারো বাড়িতে সাহায্য করে, এদের পুরো পরিবারের দাবী আছে আমাদের পুরো পরিবারের প্রতি। বেশ আয়োজন করেই পাখি আপার বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো। পাখি আপার বরকে জাহাজে চাকুরি দিয়ে দেয়া হলো। এটা বেশ সুবিধাজনক সমাধান ছিলো। পাখি আপার বর জাহাজে চলে গেলে পাখি আপা বাসার কাজ করে, জাহাজ থেকে মাসে-দেড় মাসে বর পাঁচ-সাত দিনের জন্যে এসে ঘুরে যায়। তখন পাখি আপা বরের সাথে একটু সিনেমা টিনেমা দেখতে যায়। নতুন বিয়ের আনন্দে পাখি আপা তার বর চলে গেলেই বরের গল্প করতে চায়। বাসার সবাই এটা নিয়ে বেশ বিরক্ত, কেউ তার বরের গল্প শুনতে আগ্রহী নয়। একদিন আম্মি আমার সামনে বললো, স্বামীর নাম নিয়ে কথা বলতে হয় না তাহলে স্বামীর হায়াত কমে যায়। পাখি আপা নিদারুণ দুঃখের মুখ করে ফেললো, এই কয় মাসে কয়েক লক্ষ বার স্বামীর নাম তিনি মুখে উচ্চারণ করে ফেলেছে। বারবার জিজ্ঞেস করে, কে কইছে খালাম্মা, কে কইছে? আম্মি বললো, হুজুরের কাছে শুনেছে। আর আমার খটকা লাগলো, এই যে কাজিনদের বিয়ে হয়েছে, তারাও স্বামীর নাম হাজার বার মুখে আনে, আম্মি তাদেরকে সর্তক না করে, পাখি আপাকে কেন করতে গেলো!!! আমি আম্মির ঘরে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোন হুজুর কোনদিন এটা বললো? আম্মি বিরক্তির গলায় বললো, কে জানে, কিসের! সারাদিন দেখোস না, পটর পটর জামাইর গল্প, বিরক্ত লাগে, এখন মুখটা একটু বন্ধ থাকবে। তারপর আবার আমাকে শাসানি দিলো, তুই কাউকে এটা নিয়ে কিছু বলতে যাবি না, চুপ থাকবি। আম্মির পছন্দের তালিকায় আসার নিদারুণ চেষ্টা থেকে আমি চুপই ছিলাম। শুধু জীবনের এই প্রান্তে এসে অনুভব করেছি, ধর্ম আর প্রথা তৈরিই হয়েছে শাসন আর শোষণ করার জন্যে। কাউকে "চুপ রাখার" জন্যে এর চেয়ে ভাল হাতিয়ার আর হয়ই না। যেখানে পাখি আপাকে পাকড়াও করা যায় সেখানে পাখি আপা আর যেখানে স্বাতী আপাকে পাকড়াও করা যাবে সেখানে স্বাতী আপা। কিসমাত আপনা আপনা।

Friday 1 July 2022

সোনার হরিণ

সাধারণতঃ বছরে দু’বার গ্রামে বেড়াতে যেতাম। সকালে গিয়ে বিকেলে আসা হলো নানুর বাড়ি। আর দাদুর বাড়ি মানে দু/তিন দিন থাকা। দাদুর বাড়ি বেড়ানোর মধ্যে একটা পার্ট থাকতো, দাদুর হাত ধরে আশে পাশের দাদুদের সাথে দেখা করতে যাওয়া। তখন সব গ্রাম জুড়ে এত পাকা বাড়ি ছিলো না। বেশির ভাগই টিনের বড় বড় ঘর। ঘরের সামনের অংশে থাকতো মেহমানদের বসার জায়গা। ঘরের ওয়াল জুড়ে নানারকম সূচিকর্ম। অনেক বাড়িতেই সোনালি জড়ির সূতা দিয়ে দুটো হরিণ আঁকা থাকতো, সাথে লেখা, “সোনার হরিণ, কোন বনেতে থাকো”? গ্রাম্য জিনিস ভেবে হয়ত অনেকে তাচ্ছিল্য করি। সূচি কর্মের নিপুনতার বাইরে এই বাক্যটির আর কোন উদ্দেশ্য বা গভীরতা আছে কিনা খোঁজার চেষ্টাও হয়ত করিনি বা করি না। আজকাল খুব মনে হয়, সেই লাজুক, নিরুপায় মেয়েগুলো হয়ত তাদের গোপন বেদনা, অশ্রু এই সুঁই -সূতার মাধ্যমে নিবেদন করে গেছে। কে কবে কার সোনার হরিণের খোঁজ পেয়েছে? তখনতো ব্লগ, ফেসবুক ছিলো না, যার যার মাধ্যমে সে তার নিজের বেদনা আকুলতা রেখে গেছে। হয়ত, এই দু’লাইনের মাঝেই লেখা আছে, খুব চেয়ে না পাওয়া সেই পাথর বসানো ঝুমকার দুঃখ, ঈদে বা পূজায় বাপের বাড়ি নাইওর যেতে না পারার কষ্ট কিংবা অকাল প্রয়াত সন্তানের প্রতি মমতা। ঘুরেফিরে তো একই উপসংহার, যা পাই তা চাই না, আর যা আজীবন চেয়ে বেড়াই তা কোথাও নেই। যারা পেয়েছি বলে ভড়ং দেখায়, তারা হয় নিজের কাছেই মিথ্যেবাদী নয় প্রবঞ্চক।

প্রিয়তমেষু

https://arts.bdnews24.com/archives/37553?fbclid=IwAR0UNZKrir-Xupit6sxRarBeLaRh7c1J9YaiFBoLZuwXyJM49X58BxDcPr8 প্রিয়তমেষু, তোমাকে চুমু খেতে বলিনি। ভুল করলে ক্ষমা চাইতেও বলি না। খুব মন খারাপ করলেও, ডাকবো না, বলবো না, এসো, জড়িয়ে ধরো আমায়, মিথ্যে করেও বলতে বলিনি, বলো, আমায় কত ভাল দেখাচ্ছে। আমায় একটা সুন্দর চিঠি লিখবে? বলিনি কখনো। ফোন করে আমায় বলো, সারাদিন কি করলে, কেমন কাটলো সব, না, তাও বলি না। সারাদিনে কি একবারও আমার কথা ভেবেছিলে, তাও জিজ্ঞেস করিনি এই যে দিনভর তোমার জন্য আমি এত কিছু করি তার জন্যে ধন্যবাদও চাইনি। মন খারাপ করেছে, পাশে থাকো আমার এ আব্দারও করিনি। যখন কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেই তুমি সমর্থন দেবে, সে প্রত্যাশাও রাখি না। জেগে থাকা রাতে, অর্থহীন হাজার গল্প করতে ইচ্ছে করে তোমাকে সেসব শুনতে হবে, সে দিব্যি দেইনি। কিছুই চাইনি আমি তোমার কাছে প্রিয় এমনকি সারাজীবন আমার পাশে থাকো এটিও না। চেয়ে নেয়ার মধ্যে কি আর আনন্দ থাকে সোনা। স্বামী ডিয়েগো’র সাথে ফ্রিদা কাহলো’র আলাপচারিতা অবলম্বনে