Monday 29 March 2021

দৌড়ে কচ্ছপ জিতেছে আমরা সবাই জানি – খরগোশের গল্পটি?

কার্যত পৃথিবীশুদ্ধ সবাই, কচ্ছপের উদাহরণ দিয়েই যায়, অবিচল থাকা আর নিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে বলেই যায়, স্থির কিন্তু ধীরে চলতে থাকলে প্রতিযোগিতা জেতা যায়। আচ্ছা, কেউ কি কখনো খরশোসের কাছে তার নিজের গল্পটি জিজ্ঞেস করেছে? আমি আপনাকে গল্পটি বরং ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বলি… আমি খরগোশের মনের কথা শোনার জন্যে একদিন তার সাথে বসেছিলাম পরিচিত হওয়ার জন্যে গ্রীস্মের একটি বিকেল বেছে নেই আমরা, বলতে দ্বিধা নেই দুজন দুজনের সাথে চমৎকার সময় কাটিয়েছি। বিশ্বাস করুন .. দুর্দান্ত একটি অভিজ্ঞতা ছিল, “হ্যাঁ, আমিই সেই খরগোশ যে হেরে গেছি। না, আমি অলস বা আত্মতুষ্ট হইনি। আচ্ছা, বরং গল্পটি বলি, আমি পাহাড়ের কাছাকাছি তৃণভূমিতে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছিলাম, পেছনে ফিরে দেখছিলাম কচ্ছপটিকে কোথাও দেখা যায় কিনা। নিজের ওপর আস্থা রেখে ভাবলাম,পুকুরের কাছের বিরাট বটগাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেই। প্রতিযোগিতার ভাবনায় সারারাত ঘুমোতে পারিনি। দিনের পর দিন, বুড়ো নির্বোধ খরগোশটি বিরতিহীন কয়েশ মাইল চলার ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করেই যাচ্ছিলো। জীবন হলো ম্যারাথনের মত সুস্থির হেঁটে চলা, প্রতিযোগিতার মত উর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে চলা নয়। গাছের ছায়াটা ছিল ছাতার মতো। আমি প্রায় ডিমের মত একটি পাথর খুঁজে পেয়ে তাকে ঘাস দিয়ে ঢেকে বালিশ বানিয়ে নিলাম। শুয়ে শুয়ে আমি পাতার শন শন কাপুঁনির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন শুনছিলাম – মনে হচ্ছিলো তারা আমাকে ঘুম পারাতে শুধু সাহায্যই করছে না, ষড়যন্ত্রও করছে। তাদের কৃতকার্য হতে বেশি সময়ও লাগেনি। নিজেকে আমি সুন্দর জলের স্রোতের ধারার মধ্যে বয়ে যেতে দেখলাম। যখন তীরে এসে পৌঁছলাম, তখন আমি একজন বৃদ্ধ মানুষকে দেখতে পেলাম যার বিস্তীৰ্ণ দাড়ি ভর্তি মুখ, ধ্যানের ভঙ্গিতে পাথরের ওপর বসে ছিলো। তিনি চোখ খুললেন, বিজ্ঞের হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন: "তুমি কে?" “আমি একটা খরগোশ। আমি একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় আছি " "কেন?" "জঙ্গলের সমস্ত প্রাণীকে প্রমাণ করতে যে আমিই দ্রুততম।" "কেন নিজেকে দ্রুততম প্রমাণ করতে চাও?" “যেনো এমন একটি পদক পাই যা আমাকে সম্মান দেবে, টাকা দেবে, খাবার দেবে ..." "চারপাশে ইতিমধ্যে অনেক খাবার আছে” তিনি দূর থেকে বনের দিকে ইশারা করলেন। "ফল এবং বাদামে ভরা সমস্ত গাছের দিকে তাকাও, দেখো গাছ ভর্তি করা শাক পাতা” “কিন্তু আমি সম্মানও চাই। আমি এই মুহূর্তে বেঁচে থাকা দ্রুততম খরগোশ হিসাবে স্মরণীয় হতে চাই। " "তুমি কি দ্রুততম হরিণ বা বৃহত্তম হাতি বা সবচেয়ে শক্তিশালী সিংহের নাম জানো যা তোমার আগে হাজার বছর বাস করেছিল?" "না" “আজ তোমাকে কচ্ছপ দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। কাল, দেবে সাপ দিয়ে। পরশু হবে জেব্রা। তুমি কি নিজেকে দ্রুততম প্রমাণের জন্যে সারা জীবন দৌড় চালিয়ে যাবে? " “হু। আমি এটি ভাবিনি। আমি সারা জীবন প্রতিযোগিতা করতে চাই না। " "তুমি তবে কি চাও?" পাতার কাঁপন আর মৌমাছির গুঞ্জনের মধ্যে একটি বটগাছের নীচে বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে পরতে চাই। আমি পাহাড়ের কাছাকাছি তৃণভূমির পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতে চাই ” “তুমি কিন্তু এই মুহূর্তে এই সমস্ত জিনিস করতে পা্রো। প্রতিযোগিতা ভুলে যাও। তুমি আজ আছো কিন্তু কাল থাকবে না।“ ঘুম ভেঙে গেলো। পুকুরে ভেসে থাকা হাঁসগুলিকে খুব সুখী লাগছিল। আমি এক মুহুর্তের জন্য তাদের চমকে দিয়ে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারা প্রশ্নবোধক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল। "তোমার না আজ কচ্ছপের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতার কথা না?" ‘এটা অর্থহীন” । একটি নিরথর্ক চর্চা। আমি এখানেই থাকতে চাই। আশাকরি কোনদিন কেউ এই পৃথিবীকে আমার গল্প বলবে। আমি প্রতিযোগিতা হেরেছি কিন্তু জীবন ফিরে পেয়েছি। জীবন কে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে হবে, আজ, কাল, প্রতিটি দিন। এই ছুটে চলা, প্রতিযোগিতা, সব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার মনে হয় আমার জীবনকে আমার মানদণ্ডে যাপন করা উচিত, বিশ্বের মতো নয়। মূলঃ অন্তর্জাল ভাষান্তরঃ তানবীরা হোসেন

Thursday 25 March 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেইশে মার্চ

কুইন জুলিয়ানা তারপর কুইন বিয়াট্রিক্স, লং হিস্ট্রি অফ উইম্যান এম্পাওরমেন্ট। সিগ্রিড কাখকে নিয়ে আবারও উইম্যান এম্পাওরমেন্টের দিকে ঝুঁকে ছিলো নেদারল্যান্ডস। কিন্তু ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো সতেরই মার্চের এই নির্বাচন। পরপর চার বারের মত ভিভিডি লীডিং এবং মার্ক রুতে প্রাইম মিনিস্টার, মিডিয়ার মতে, এই বিজয়ের পুরো কৃতিত্ব মার্ক রুতের। ইউরোপে সবচেয়ে বেশী দিন জনপ্রিয়তার সাথে সার্ভ করে যাওয়া লীডারের খাতায় এখন রুতে। ডাচেরা এই নির্বাচনে পরিবর্তনের চেয়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিরতা-অগ্রগতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ঐতিহ্য ধরে রেখে কোয়ালিয়শন সরকার, তবে আশার কথা সমভাবাপন্ন চিন্তার দলগুলোর মধ্যে কোয়ালিয়শন, এক্সট্রিম লেফট আর এক্সট্রিম রাইটের মধ্যে নয়। পুরো ইউরোপ ভ্যাক্সিন নিয়ে অরাজকতায় তার মধ্যে নেদারল্যান্ডসের অরাজকতা সীমাহীন। “ল্যান্ড অফ লজিস্টিক” বলা হয় যাদের তারা ঠিক করে কোম্পানী প্রোডাকশান অনুপাত দেখে ভ্যাক্সিন অর্ডার করতে পারে নাই, যাও মজুদ আছে তাও সবাইকে ঠিক করে দেয়া হয় নাই, এক তৃতীয়াংশ ভ্যাক্সিন বাক্সের মধ্যে এক্সপায়ার্ড হয়ে যাচ্ছে। রুতে সাহিত্যিক ভাষা প্রয়োগ করে জনতাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। লাইডেন ইউনিভার্সিটি জনসন এন্ড জনসনের সাথে “ইয়ানসেন” ভ্যাক্সিন আনছে, সব ঠিক থাকলে ডাচ এই ভ্যাক্সিনটি হবে পৃথিবীর চতুর্থ করোনা ভ্যাক্সিন, আঠারো বছরের ওপরে সবাইকে একটি ডোজ দিতে হবে, আমরা সাধারণ জনগন হয়ত খাঁটি ওলন্দাজ ভ্যাক্সিন পাবো। প্রিমিয়ে মার্ক রুতেঃ লোকে বলে সুন্দর সময় “এখন”, আমি বলছি না, সুন্দর সময় সামনে আসছে, গরমের সময়, আশাকরি এরমধ্যে ষাটোর্ধ্ব আর দুর্বল স্বাস্থ্যের সবাইকে ভ্যাক্সিন দেয়া শেষ হয়ে যাবে। দু’সপ্তাহ আগে বলেছিলাম, ইস্টারের আগে কিছু নিয়ম শিথিল করা যায় কিনা সেটা নিয়ে কথা বলবো। দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, সংক্রমণের হার কমেনি, আইসিইউ এবং হাসপাতালে ভীড় আরো বেড়েছে তাই লকডাউন আর কার্ফিউ বিশে এপ্রিল অব্ধি বাড়াতে হচ্ছে তবে আমরা ডে-লাইট সেভিং এ যাচ্ছি বলে একত্রিশে মার্চ বুধবার থেকে কার্ফিউর সময় রাত নয়টার পরিবর্তে রাত দশটা থেকে ভোর সাড়ে চারটা করা হলো। সমস্ত পৃথিবীর করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ট্র্যাভেল ব্যান পনেরই মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো। সামনের ছুটির দিনগুলোতে সবাইকে নেদারল্যান্ডসেই ছুটি কাটাতে অনুরোধ করা হচ্ছে, আপাতত দেশের বাইরে নয়। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ নেদারল্যান্ডসে আসলে কিংবা নেদারল্যান্ডসের বাইরে গেলে ছয় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ছোট ব্যবসায়ীরা যারা আজকের সন্ধ্যায় আবারও আশাহত হয়েছেন তাদের বলতে চাই, সরকার থেকে আপনাদের সাহায্য দেয়া অব্যাহত থাকবে, বন্ধ করে দেয়া হবে না, শুধু ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই সমর্থণ দেয়া হবে না, নতুন করে আবার শুরু করতেও সমর্থণ দেয়া হবে। তেরোই এপ্রিলের প্রেস কনফারেন্সে পরবর্তী পরিস্থিতি জানানো হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ জুনের শেষের দিক আশা করা হচ্ছে চল্লিশ থেকে শুরু করে ত্রিশ বছরের মধ্যে যারা আছেন তাদেরও ভ্যাক্সিন দেয়া হয়ে যাবে। আশাকরছি জুলাইয়ের মধ্যে বিশ বছর বয়সীসহ সবার প্রথম ডোজ নেয়া হয়ে যাবে আর দুই তৃতীয়াংশ মানুষের ভ্যাক্সিন কোর্স পুরোই শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। বারোই এপ্রিল সেলফ টেস্টের প্রথম কিটের লট পাওয়া যাবে আশা করা হচ্ছে সেটা প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে তারপর ছাব্বিশে এপ্রিল থেকে সবাই নিজে নিজেই টেস্ট করতে পারবে, উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্র পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে। দুই হাজার বাইশের প্রথম কোয়ার্টারের জন্যে ভ্যাক্সিনের অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে। আমাদের ধারনা দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষদের রক্ষা করতে ভ্যাক্সিন দিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিকঃ ইলেকশানের আগের স্পীচে বলেছিলেন, ইস্টারের আগে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এসব খুলে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, এটা কি তবে নির্বাচন জেতার একটি কৌশল ছিলো? প্রিমিয়ে রুতেঃ প্রত্যেকে ইতিবাচক আশা করে আমিও তাই করেছিলাম এবং এখনো করি। নির্বাচনের জন্যে ছিলো না। সাংবাদিকঃ প্রিমিয়ে রুতে আপনি বলেছেন বাসায় একজনের বেশি অতিথি এলাউড না, কিন্তু ভিভিডি জেতার আনন্দে আপনারা সবাই বড় পার্টি করলেন? আপনার উদাহরণ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না? প্রিমিয়ে রুতেঃ ওটা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ছিলো না আর আমরা যতটা সম্ভব অল্প মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছি। মীটিং ছিলো, পার্টি না। সাংবাদিকঃ এই লকডাউন আর কার্ফিউ কিশোর আর তরুণদের মানসিক সমস্যা প্রকট করে তুলছে, সেটা আপনারা জানেন বারবার বলছেন কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করার কোন পরিকল্পনার কথাতো বলছেন না। আতঙ্কের ব্যাপার হলো করোনার কারণে তাদের ডাক্তারের নাগাল পেতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ আমরা এটা নিয়ে মিউনিসিপ্যালটিতে কথা বলছি, চেষ্টা করছি আর দেখছি কি করে দ্রুত, কার্যকরী কিছু পরিকল্পনা নেয়া যায়। টাকা পয়সার দিকটাও দেখতে হবে। অনেক বেশি টাকা যেহেতু জীবন বাঁচানোর কারণে খরচ করতে হচ্ছে, তাই অন্য পরিকল্পনাগুলো কিছুটা ধীরে এগোচ্ছে। সাংবাদিকঃ জুনের ইউরোপীয়ান কাপ ফুটবলের প্রস্তূতি নিয়ে আপনারা ব্যস্ত? হুগো দ্যা ইয়ংঃ আমরা সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে দেখছি, করোনা এপ, তাৎক্ষণিক করোনা কীটের দ্বারা পরীক্ষার মাধ্যমে কি করে সবার জন্যে ফুটবলকে সামনে নিয়ে যাওয়া যায়। গতকাল একুশে মার্চ হল্যান্ডে একশো পনের হাজার করোনা টেস্টের এপয়ন্টমেন্ট হয়েছে, সর্বোচ্চ রেকর্ড। বাচ্চা আর কিশোরদের সংক্রমণের হার অত্যাধিক। সাংবাদিকঃ ইইউ টপ আর ব্রাসেলসে ডিসিক্সটি সিক্স্যের জয় নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে আর তারা আপনার সমন্ধে মন্তব্য করেছে, আপনি আর একটু সামাজিক আর আন্তরিক হবেন। প্রিমিয়ে রুতেঃ আমি নিজেকে যথেষ্ঠ সামাজিক, আন্তরিক মনে করি, অভিনন্দন ছাড়া কোন সমালোচনা আমার কানে আসেনি, এ ব্যাপার নিয়ে এখন আর আলোচনা চাই না। “বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি” হলো এই প্রেস কনফারেন্স। প্রিমিয়ে আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সব মিলিয়ে বক্তৃতা দিয়েছে বারো-চৌদ্দ মিনিট আর সাংবাদিকরা তার ওপরে প্রশ্ন করেছে এক ঘন্টার ওপরে। “বাল কি খাল নিকাল না” তো কোই ইনসে পুঁছে, এদের এই প্রশ্নোত্তরে কোথাও একটি কমা, সেমিকোলন পরিবর্তন হবে না জেনেও, ওয়ার্ড চেঞ্জ আর টুইস্ট করে একই কথা বলেই যেতে থাকে। ক্যাবিনেট যা ডিসাইড করবে তাই, কারো কথায় হিলার পাত্র তারা না কিন্তু তারা দমবে না।

Sunday 14 March 2021

আমি নারী, আমি মহিয়সী

সবসময় আমরা ভারতবর্ষে মেয়েদের অত্যাচার-অবিচার, সম্পত্তিতে অধিকারহীনতা, রাস্তাঘাটে নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। আজ দুটো অন্যরকম ঘটনা লিখবো, খানিকটা আশা জাগানিয়া আর অনেকবেশী ভালবাসার একঃ উত্তর-পশ্চিম রাজস্থানের পিপলান্ট্রি গ্রামের মানচিত্র পরিবর্তন হয়েছে মেয়েদের কারণে, হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন, মেয়েদের কারণে। দুই হাজার সাত সালে গ্রামের সারপাঞ্চ শ্যাম সুন্দর পালিওয়ালের কন্যা কিরণ পানিশূন্যতায় মারা যায়। হৃদয়বিদারক এই মৃত্যুতে তার পরিবার মেয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে গ্রামের প্রবেশপথের কাছে তার নামে একটি গাছ লাগিয়েছিল। পিপলান্ট্রির নেতা হিসাবে পালিওয়াল ভেবেছিলেন, এই ওয়ান-অফ ইভেন্টটিকে আরও বিস্তৃত প্রোগ্রামে পরিণত করবেন। আর শীঘ্রই, অন্যান্য গ্রামবাসী তাঁর নেতৃত্ব অনুসরণ করতে শুরু করেছিলেন। পিপলান্ট্রিতে প্রতিবারই যখন কোনও মেয়ে জন্মেছে, গ্রামবাসীরা একশো এগারোটি গাছ রোপণ করেছে, স্থানীয় হিন্দুদের জন্য এটি একটি শুভ সংখ্যা। এই অঞ্চলে এখন আমের ও গুড়ের গাছ থেকে শুরু করে চন্দন কাঠ, নিম, পেপাল এবং বাঁশ পর্যন্ত প্রায় একাধিক গাছ রয়েছে যা এককালের অনুর্বর জমিতে চাষ হচ্ছে এবং তা হচ্ছে প্রায় আনুমানিক এক হাজার হেক্টর জুড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, পালিওয়ালের সাধারণ ধারণাটি একটি বিস্তৃত ইকো-নারীবাদী আন্দোলনে প্রসারিত হয়েছে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি কন্যার নতুন বাবা-মা একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করেন যে তারা আঠারো বছর বয়সের আগে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেবে না এবং তাদের স্কুল শেষ করতে দিবে। গ্রামবাসীরা একত্রিশ হাজার রুপি (£ ৩০৫ ডলার) দিয়ে প্রতিটি মেয়ের জন্য একটি স্থায়ী আমানত অ্যাকাউন্ট খুলেন যা তার পড়াশুনার জন্য বা তার বিয়ের জন্য আঠারো বছর বয়সে ব্যবহার করতে পারবেন। আরও বড় কথা, পিপলান্ট্রির ক্রমবর্ধমান অরণ্য এখন জলীয় ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে গিয়ে ভারতীয় গ্রামগুলি কীভাবে আক্ষরিক অর্থে সবুজ হতে পারে তার একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করছে। দুইঃ সম্প্রতি নিকোলাস ক্রিস্টোফ নিউইয়র্ক টাইমসে আর্টিকেল লিখেছেন, “What can Biden’s plan do for poverty? Look to Bangladesh”— উনিশো একানব্বই সালে, বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তাতির রিপোর্ট করতে যেয়ে, ফিরে এসে আমি লিখেছিলাম, “দেশটি দুর্ভাগ্যক্রমে উদ্বিগ্নজনক” শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশাল পরীক্ষার মুখোমুখি। তবে, আমার হতাশাবাদ ভুল ছিল, কারণ তিন দশক ধরে অর্থনীতিতে অসাধারণ অগ্রগতি বাংলাদেশ করে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহামারীর আগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এর চার্ট অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছর সাত% থেকে আট% পর্যন্ত বেড়েছে যা চীনের চেয়েও বেশী ছিল। এই উন্নতির রহস্যা? শিক্ষা আর নারীদের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশের হাই স্কুলগুলোতে এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশী। নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা নারীদের উদ্যোক্তা হিসাবে পরিণত করেছিল - চার বছরে প্রায় একশোহাজার নারী "টেলিফোন লেডি" হয়ে ওঠে যারা মোবাইল ফোন সার্ভিসে কাজ করতো, এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। শিক্ষিত মহিলারা গ্রামীণ এবং ব্র্যাকের মতো মর্যাদাপূর্ণ সংস্থায় কাজ করে, বাচ্চাদের টিকা দেয়া, স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা প্রচার করা, গ্রামবাসীদের পড়তে শেখানো সহ জন্মনিরোধক ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করা, বাল্য বিবাহকে নিরুৎসাহিত করার মত কাজগুলো করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দারিদ্র্যতা হ্রাসের একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী বলে অভিহিত করেছে, পঁচিশ মিলিয়ন বাংলাদেশি পনেরো বছরে দারিদ্র্যতা কার্ভ থেকে উপরে এসেছে, উনিশো একানব্বই সালের তুলনায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অংশ বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক কমেছে এবং এখন ভারতের চেয়ে কম। আর এই পুরো চিত্রটি পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে নারী শিক্ষা থেকে নারীদের কর্মসংস্থান। এক কথায় বলা যায়, দারিদ্রতাতে বিনিয়োগ করেই বাংলাদেশ দারিদ্রতা মোচন করছে। যদিও পোশাক শিল্পের নারীদের কথা এখানে নিকোলাস আলাদাভেব উল্লেখ করেননি কিন্তু আমরা জানি, অর্থনীতি পরিবর্তনের প্রথম ধাপের সূচনা অনেকটা তাদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো। সংগ্রামী নারীরা যারা দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্র বদলে দিচ্ছে তাদেরকে আমার লাল স্যালুট। আমি নারী, আমি মহিয়সী আমার সুরে সুর বেধেছে জোৎসাবীণায় শশি। আমি নইলে মিথ্যা হতো সন্ধা তারা উঠা মিথ্যা হতো কাননের ফুল ফোটা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) http://www.bbc.com/travel/story/20210302-piplantri-the-indian-village-where-girls-rule https://www.nytimes.com/2021/03/10/opinion/biden-child-poverty-bangladesh.html?smid=url-share https://www.mercurynews.com/2021/03/12/kristof-what-can-bidens-plan-do-for-poverty-look-to-bangladesh/amp/

Wednesday 10 March 2021

ডাচ সাধারণ নির্বাচন ২০২১

সামনের সতেরই মার্চ নেদারল্যান্ডসে সাধারণ নির্বাচন। আমাদের বাঙালিদের জন্যে খানিকটা অদ্ভূদ ব্যাপার। এ কেমন দেশ যেখানে নাহি মিছিলের ছটা জনসভার ঘনঘটা নাহি শ্লোগান নাহি পোস্টারিং এর রেশ হ্যাঁ, দৈনন্দিন কাজ ফেলে এখানে বক্তৃতা শুনতে যাওয়ার ফুরসত মানুষের কম, আর তাই ডিবেট চলে টিভিতে আর আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ। বাসায় বাসায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক যেভাবে বুথে থাকবে সেইভাবে। প্রতি চার বছরে নেদারল্যান্ডসে সাধারণ নির্বাচন হয় আর এখানে কোন এলাকাভিত্তিক ব্যাপার নেই, যেকোন এলাকার লোক, যে কাউকেই ভোট দিতে পারে। আমস্টার্ডামে বসবাসকারীর যদি হেগের প্রার্থী পছন্দ তাকেই ভোট করতে পারে কিংবা উল্টোটা। ভিভিডি আছে এক নম্বর কলামে আর তার এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী মার্ক রুতে। ডাচ ডিপ্ল্যোম্যাট সিগ্রিট কাখ তার টেলিভিশিন ডিবেট থেকে আলোচনায় উঠে এসেছেন। যদিও তিনি মার্কে রুতের মন্ত্রীসভায় বৈদেশিক বানিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু তিনি এখন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ডিসিক্সটি সিক্স থেকে। পৃথিবীতে মেয়েরা কোথায় সবচেয়ে নিরাপদে এবং ভাল আছে তারওপর ইউএস নিউজ এন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২০তে ডেনমার্ক আর সুইডেনের পরেই নেদারল্যান্ডসের মেয়েদের অবস্থান তারপরও জেন্ডার ইনইক্যুইলিটি, জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশান তার ক্যাম্পিং এর প্রধান বিষয় যেটা মেয়েদের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। নেদারল্যান্ডসের হিলারী ক্লিনটন বলা চলে। ধারনা করা হচ্ছে, রুতের সাথে কাখের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। তিনি আছেন লিস্টের চার নম্বর কলামের এক নম্বরে। কে কয়টা রাস্তা বানিয়েছে, কার্পেটিং করেছে কিনা, গাড়ি গ্রামের বাড়ি অব্ধি যায় কিনা এটা নিয়ে এখানে ভোটাভুটি হয় না। এই পৃথিবীর সমস্যা অন্য। এখানে বাচ্চাদের ডেকেয়ারে সরকার কতটুকু সাবসিডি দিবে, মিনিমাম বেতনের পরিমান এখন বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ, পড়াশোনায় সরকার কতটুকু সাবসিডি বাড়াবে ইত্যাদি ইত্যাদি পয়েন্টে হবে ভোটাভুটি। আমার নজর কেড়েছে এই পয়েন্টগুলো অতীতের দাসপ্রথার জন্যে নেদারল্যান্ডস সরকারের প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থণা করা কি উচিৎ? এই বছরের থার্টি ফাস্টে ফায়ার ওয়ার্ক্স করার সুযোগ দিতে হবে যারা মাংস কিনবে/খাবে তাদের বেশি/এক্সট্রা ট্যাক্স দিতে হবে এই ডাচ নির্বাচনে বাংলাদেশেরও একজন প্রার্থী আছে, আমাদের ছোটবোন সুকন্ঠী গায়িকা শম্পার বর নীলস (Niels van den Berge) আমাদের বাংলাদেশের জামাই। খ্রুনেলিঙ্কস আছে লিস্টের পাঁচ নম্বরে আর নীলসের নম্বর হলো বারো। আর অন্যসবার মত শম্পাও নির্বাচন নিয়ে অনেক টেনশানে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এবং তরুণ জেনারেশানের কাছে খ্রুনেলিঙ্কস বেশ জনপ্রিয়। জলবায়ু-পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন ছাড়াও তারা কথা দিয়েছে, তারা ক্যাবিনেটে গেলে, ছাত্রছাত্রীদের “বেসিক স্কলারশিপ সিস্টেম” আবার ফিরিয়ে আনবে। স্টুডেন্টদের আর জিরো পার্সেন্ট রেন্টে লোন নিয়ে পড়াশোনার পুরো খরচ টানতে হবে না। যাদের ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে তাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর। কে ক্ষমতায় যাবে সেটাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বেশি সিট পেলে ক্যাবিনেটে অন্তত তর্ক করতে পারবে, ভেটো দিতে পারবে, লড়তে পারবে অধিকারের জন্যে। আলু ভর্তা আর ডাল নীলসের প্রিয় খাবার, নিজেই রাঁধতে পারে। আমাদের বাংলাদেশের জামাই বলে সব বাঙালিদের ভোট নীলস পেতেই পারে। ভেরি বেস্ট উইশেস নীলস আর শম্পা। বাঙালি ভোটারদের জন্যে করা নীলসের বিশেষ ভিডিওটি মন্তব্যে জুড়ে দিলাম। কে কি গুরুত্বপূর্ন ভাবো, তার ওপরে ভিত্তি করে দল নির্বাচন করতে চাও, সেজন্যে প্রতিবারের মত এবারও নির্বাচনী মেনিফেস্টোর ওয়েবসাইট লিঙ্ক বানানো হয়েছে। মন্তব্যের ঘরে আমি লিঙ্ক দিয়ে দিলাম, দেখে নিও। সবাই নিজের পছন্দমত ভোট দেয়াটাই ভাল, কারণ এখানে সাধারণতঃ একক কোন পার্টি ক্যাবিনেট বানানোর মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, বেশীরভাগই কোয়ালিশন হয়। লেখাটা মূলত তাদের জন্যে যারা বলো, আপু আপনি একটু ফেসবুকে লিখে দিয়েন <3 https://tweedekamer2021.stemwijzer.nl/#/

Monday 8 March 2021

“‘মাইয়াফোয়া’র কহন”

রোঙ্গিগাদের সম্বন্ধে আমরা সাধারণত জানি, এরা মাদক ও চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত, অনেক সন্তানের জন্ম দিয়ে বাংলাদেশকে আরো ঘনবসতি করে তুলছে, পড়াশোনা করছে না, বেনামীতে রেশন কার্ড বানিয়ে, সিম কার্ড তুলে হেন কোন অপরাধ নেই যা বাংলাদেশে বা দেশের বাইরে করে যাচ্ছে না। কিংবা “রোহিঙ্গা” মানে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আর নোবেলজয়ী সুকির ঘৃণ্য রাজনীতি। এবারের বইমেলায় এসেছে ছোটবোন বন্ধু ফাহমি ইলার লেখা প্রথম গল্পের বই “‘মাইয়াফোয়া’র কহন”। ইউএনসহ আরো তিনটি সংগঠনের কর্মী হয়ে ইলা রোহিঙ্গাদের সাথে আঠারো মাস হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে, দিনের পর দিন ক্যাম্পে ক্যাম্পে তাদের সাথে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে এই গল্পগুলো লিখেছে। মেয়েদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাই প্রতিটি গল্পের উপজীব্য। শরনার্থী এসেছে, আমাদের ওপর বোঝা হয়েছে, আমরা এটুকুই জানি। ক্যাম্পে এই শরনার্থী জীবন সম্পর্কে কি কিছু জানি? কেমন কাটে সেই দিন? এই বইটি পড়তে যেয়ে লেখক নীলিমা ইব্রাহিমের “আমি বীরাঙ্গণা বলছি” বইটির কথা বারবার মনে পড়ছিলো। একটিতে আছে পাকিস্তানি সৈন্য আর তাদের বাংলাদেশি দোসরদের অত্যাচারের ইতিহাস আর তার পরবর্তী ইতিহাস হলো “মাইয়াফোয়া’র কহন”, রোহিঙ্গা সৈন্য, বাংলাদেশ আর্মি ও তাদের দোসরদের অত্যাচারের ইতিহাস। স্বজন-স্বজাতি দ্বারা মেয়েরা যতোটা নির্যাতিত হয়, বাইরের মানুষ তা থোড়াই করতে পারে। প্রতিটি গল্প আলাদা করে আলোচনা করে আমি স্পয়লার দিতে চাই না। যারা বইটি কিনে পড়বেন তাদের জন্যে কিছুটা সারপ্রাইজ থাকুক। শুধু বলবো, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশান। পুরো বইয়ের সারাংশ লেখকের সংলাপ থেকেই উদ্ধৃত করা যায়, শায়লার কেনিয়ান বস মাকেনা বলেছে, ‘নারীর গায়ের রঙ, ধর্ম, পোশাক, দেশ, সংস্কৃতি আলাদা হলেও গল্পগুলো কিন্তু ঘুরে ফিরে এক।’ কিংবা কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীর দ্বারা উত্যক্ত বিরক্ত মিতা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ভাবে- ‘আজও বাংলাদেশে যৌন হয়রানি বলতে মানুষ বোঝে ধর্ষণ। শরীরে বাজে স্পর্শ করলে সচেতন কেউ কেউ একে যৌন হয়রানি বলে, তাও বহু মানুষ এটা জানে না। আর সেক্সিস্ট কমেন্ট করা কিংবা শরীরের বিশেষ অঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকাতো এদের কাছে স্বাভাবিক। এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বা প্রতিবাদ করলে প্রথম দোষ দেয়া হয় মেয়েটিকেই। মেয়েটির পোশাক থেকে তার হাঁটা চলা, কথা বলা, বাইরে বের হওয়া, পর্দা না করা সকল কিছুকে দায়ী করা হয়।’ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে যেয়ে পদে পদে বিদেশী এনজিওগুলো আমাদের দেশের সরকারি অফিসারদের অসহযোগিতা, রক্ষণশীলতা, অসদাচারণ, ক্ষমতার অপব্যবহারের কাছে জিম্মি হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে। নীলার পর্তুগীজ বস ম্যাথিলডা বলেছে, “একটা দেশের সরকারি প্রতিনিধি যদি ইন্সেন্সিটিভ হয় তাহলে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে অসম্ভব না।“ তারপরেও একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্যে যতটুকু সম্ভব আন্তরিকতার জন্যে বাংলাদেশ সরকার নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পেতে পারে। খুব পরিচ্ছন্ন ভাষায় গোছানো লেখা। ব্লগিং এর কারণে বর্ননার বাহুল্যহীন মেদহীন লেখা পাঠককে আরাম দেয়। ইলা গল্পের সংলাপগুলো প্রথমে রোহিঙ্গা ভাষায় লিখে তারপরের লাইনে প্রমিত বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা ভাষার সাথে চট্রগ্রামের ভাষার অনেক মিল আছে (তথ্য সূত্রঃ লেখক)। এই জিনিসটা আমার কাছে একটু অন্যরকম লেগেছে, আঞ্চলিক গল্পের সংলাপের এরকম অনুবাদ সাধারণত দেখা যায় না। সংবাদপত্রে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেসব খবর আমরা নিয়মিত পড়ি তার পেছনের গল্পগুলো যদি জানতে চান কিংবা নির্মোহ বিশ্লেষণ আর সত্যের প্রতি যাদের আকর্ষণ আছে তাদের জন্যে এই বই অবশ্য পাঠ্য। আমি ইলাকে বলবো, এই পটভূমিতে একটা উপন্যাসে হাত দিতে। বিশাল ক্যানভাস, লেখার মত ইনাফ ম্যাটেরিয়াল তার বাস্তব অভিজ্ঞতাতে মুজুদ, শুধু রঙ-তুলির আঁচর লাগানো বাকি, আরো কত কি তুলে আনা এখনো বাকি, আর সেই উপন্যাসে ভর করে উঠে আসবে দারুণ চিত্রনাট্যের অসাধারণ এক ছবি। অপেক্ষায় রইলাম। বইটি গ্রন্থিক প্রকাশন প্রকাশ করেছে। আমি ফাহমি ইলার লেখক জীবনের আর তার বইয়ের উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করছি।

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আটই মার্চ

প্রিমিয়ে রুতেঃ সামারের মধ্যে যদি সবার ভ্যাক্সিনের অন্তত প্রথম ডোজ নেয়া হয় তাহলে আমরা হয়ত আবার আমাদের স্বাভাবিক জীবনের দিকে এগুতে পারবো, হয়ত সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে না কিন্তু অনেককিছুই তার আপন গতিতে আবার ফিরবে। আমাদের আশেপাশে বাচ্চা, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তাকালে, অর্থনীতির দুরবস্থতা দেখলে বোঝাই যাচ্ছে, সামার পর্যন্ত সামনের চার মাস লকডাউনে থাকা সম্ভব না। আমাদের দায়িত্বশীলতার মধ্যে দিয়ে সামনের পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। হাসপাতালে রোগীর ভীড় আর সংক্রমণের উর্ধ্বগতি স্থিতিশীল থাকায়, দুর্যোগ পরিচালনা কমিটি বলেছে, ষোলই মার্চ থেকে নিয়মনীতি কিছুই শিথিল করা সম্ভব হচ্ছে না। ইস্টারের আগে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এসব নিয়ে আলোচনা হবে। সাবসিডি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, আর লম্বা সময় ধরে কাকে কারে কোথায় সাপোর্ট করা যায় দেখা হচ্ছে। লকডাউন আর কার্ফিউ ত্রিশে মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পনের, ষোল ও সতেরই মার্চ নির্বাচনে যারা সাহায্য করবে, তাদেরকে তাদের নিজের মিউনিসিপ্যাল্টি থেকে রাত নয়টার পর বাইরে থাকার লিখিত অনুমতিপত্র দেয়া হবে। বাকি যারা ঘোরাঘুরি করবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ারও সময় এটা না। তবে ষোলই মার্চ থেকে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলো হলোঃ বারো বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের সুইমিং লেসন আর সুইমিং এক্সাম খুলে দেয়া হচ্ছে। তবে, অসুস্থ বাচ্চারা বাসায় থাকবে, বাবা মায়েরা বাইরে অপেক্ষা করবে, চেঞ্জিং রুম খোলা থাকবে কিন্তু শাওয়ার বন্ধ থাকবে। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যে সাতাশ বছর পর্যন্ত তরুণদের চারজনকে একসাথে বাইরে খেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেসব দোকানের আয়তন পঞ্চাশ স্কয়ার মিটার, প্রতি তলায় দুজন কাস্টমার এটেন্ড করতে পারবে আর বড় দোকানের জন্যে প্রতি পঁচিশ মিটারে একজন ক্লায়েন্ট, একই সময় এক দোকানে ম্যাক্সিমাম পঞ্চাশ জন। ট্রাভেল ব্যান পনেরই এপ্রিল পর্যন্ত এক্সটেন্ড করা হলো। তেইশে মার্চের সাংবাদিক সম্মেলনে আশাকরছি ট্রাভেল, ভ্যাকেশান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ংঃ গত ছয় মাসের মধ্যে যাদের করোনা হয়ে গেছে, তাদের জন্যে ভ্যাক্সিনের একটি ডোজই যথেষ্ঠ বলা হচ্ছে কারণ তাদের ন্যাচারাল এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। কেয়ার হোমে থাকা সব বয়োজোষ্ঠদের ভ্যাক্সিন দেয়া হয়ে গেছে। গতবছর যেখানে সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বেশি ছিলো, এখন সংক্রমণ প্রায় নেই বললেই চলে। আর তাই প্রতিদিন দুইজন ভিজিটর এলাউ করা হয়েছে এমনকি চাইলে একদিনে দুইজন দুইজন করে বেশি মানুষও ভিজিটে আসতে পারে। সব পরিকল্পনামত ঠিক করে এগুলে একত্রিশে মার্চ থেকে টেরাস খুলে দেয়ার চেষ্টা করা হবে, প্রতি টেবিলে ম্যাক্সিমাম পাঁচজন। ইস্টারের সময় থেকে সপ্তাহে একদিন করে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। মেডিসিন শপ, সুপারমার্কেট সব জায়গায় টেস্ট করার কিট কিনতে পাওয়া যাবে, ঠান্ডা সর্দি জ্বরে সবাই এখন নিজেই বাসায় টেস্ট করতে পারবে। বড় বড় অনুষ্ঠানে ঢোকার আগের মুহূর্তে এরকম টেস্ট কিট দিয়ে টেস্ট করানোর ব্যবস্থা রাখা হবে, এছাড়াও করোনা এপ সচল থাকবে, সংক্রমণ আছে কিনা কিংবা ভ্যাক্সিন নেয়া আছে কিনা এপ সবই ডিকেক্ট করবে।
০৮/০৩/২০২১