Thursday 14 January 2010

ধর্ম ধর্ম আদতে ভাই ভাই

আমরা গরমের দেশের মানুষেরা সহজেই উত্তেজিত। রাজনীতি, মেয়েঘটিত, আর ধর্ম হলো চরম তরম উত্তেজিত হওয়ার মতো প্রিয় বিষয় আমাদের। আগাপাশ তলা না ভেবে হুঙ্কার ছেড়ে ঝাপিয়ে পরি যুদ্ধে। কোথায় কে একখান কার্টুন আঁকলো তাই নিয়ে মার মার কাট কাট, সালমান রুশদী কিংবা তাসলিমা কিছু লিখেছে, কল্লা কাটো। এরমধ্যে অন্ততকাল থেকে পাশাপাশি থাকার জন্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যতার কারনে এ উপমহাদেশে হিন্দু - মুসলিম বৈরীতা চার্টের টপ লিষ্টেড আইটেম যাকে বলে। কিন্তু আদতে ধর্মগুলোর মধ্যে অমিলের থেকে মিলই বেশি। হিন্দু মুসলমান গুতাগুতি কেনো করে সেই নিয়ে আজ একটু ধর্ম রংগ।

দুই দলের ধর্মান্ধরাই একে অন্যের বাড়িতে অন্ন গ্রহন করেন না। দুদলের একই সমস্যা, জাত যাবে। একদল হালাল ছাড়া খাবেন না আবার অন্যদল মুসলমানের ছোঁয়া বলে খাবেন না।

শুদ্ধ হওয়ার জন্য দুদলের লোকেরাই উপবাস করে থাকেন।

দুদলেরই পাপ মোচন করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ও সময় আছে।

বিশুদ্ধ পানিও আছে। একদলের আছে জমজমের পানিতো অন্যদলের আছে গঙ্গাজল।

দু দলই তাদের পবিত্র কাজের সময় সেলাই করা বস্ত্র পরিধান করেন না। মুসলমানরা হজ্বের সময় আর হিন্দুরা পূজার সময়।

গরুর ভূমিকা এ উপমহাদেশের দুদলের কাছেই অপরিসীম। স্বরগে যাওয়ার জন্য দুদলই গরু উৎসর্গ করে থাকেন কিন্তু ভিন্ন পদ্ধতিতে। পদ্ধতি ভিন্ন হলেও বস্তু একই।

যদিও মুহম্মদ, রাম, কৃষ্ণ সবাই শান্তির বানী প্রচার করার দাবী করেছেন কিন্তু তারা শান্তির চেয়ে অশান্তি থুক্কু যুদ্ধই করেছেন বেশি।

এই তিনজনের জীবনেই নারীদের অপরিসীম ভূমিকা ছিল, বৈধ এবং অবৈধ পন্থায়।

দুই ধর্মেই পুরুষের নীচে মেয়েদের স্থান, স্বামী পরম গুরু।

দুদলই পাপমোচনের আশায় হুজুর কিংবা পূজারীকে অজস্ত্র দান ধ্যান করে থাকেন। তার বাইরে কেউ মসজিদ বানানতো কেউ মন্দির।

মৃত্যুর পর অন্তত সুখ, সাথে উর্বশী, হুর, আঙ্গুর বেদনার প্রতিশ্রুতি উভয়েই দেন আমাদেরকে।

দুদলেরই ধর্মানুভূতি অত্যন্ত প্রখর। ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা আর শ্লীলতাহানি করা একই পর্যায়ের অপরাধের স্তরে পরে। কথার আগে তাদের ছুরি চলে। ভন্ড নাস্তিক আর আঁতেলে দল ভর্তি। সবারই রক্ত লাল আর মরে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক কম জানা সত্বেওও তাদের ধর্মের নামে এই অপরিসীম যুদ্ধ চলছে এবং চলতেই থাকবে।

তানবীরা
১৪.০১.১০

4 comments:

  1. দুই ধর্মের অনেক মিল আছে। তবে আমাদের বাঙ্গালিদের জীবনের সাথে ধর্ম জড়িয়ে আছে সেই আদিকাল থেকে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। ধর্ম না থাকলে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভারতবর্ষে মানুষের জীবনে আনন্দের ঘটনা খুব কম ঘটত। মানছি ধর্মের নামে অনেক অধর্ম হয়েছে, তার বেশির ভাগই আমাদের উপমহাদেশীয় অসহিষ্ণু আচরণের কারণে, এবং ধর্মগুরুদের ভুলভাবে ধর্মকে প্রদর্শন করার কারণে। হিন্দু ধর্মের কথা বলতে গেলে বেদ,উপনিষদ তাদের আদি ধর্মগ্রন্থ, সেগুলোর বদলে এখন রামায়ন,মহাভারত প্রধান ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অনেক হিন্দু বলেছেন পুরোহিতেরা নাকি তাঁদেরকে বেদ, উপনিষদ পড়তে দিতে চায়না। তেমনি হুজুরেরা কুরআনের অনুবাদ পড়বার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ ভাগমুসলিম কুরআনের অর্থ জানেনা, যেটুকু শেখে তা মসজিদের ঈমাম এবং অন্যান্য হুজুরদের কাছ থেকে, যারা উচ্চশিক্ষিত নয়। শিক্ষার হার (প্রকৃত শিক্ষা, সেই সাথে মানবতার শিক্ষা) বাড়লে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সমস্যা কমে যাবে বলে আমি মনে করি। সচলায়তন এবং মুক্তমনায় আপনারা যেভাবে ধর্মকে সকল দোষ দেন, আমার ধারনা সামাজিক সমস্যা আরও বেশী দায়ী। সন্দেহ নেই মুসলিমরা শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে।

    ReplyDelete
  2. ভাই, যে জিনিস মানুষ বুঝতে পারে না, মানুষে মানুষে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে সে জিনিস থেকে দূরে থাকাই ভালো কি বলেন? এমন জিনিসের দরকার কি যা বোঝার বাইরে?

    কঠিন কঠিন অঙ্ক, গেমস, মহাকাশ রহস্য, পানির নীচ মাটির নীচ ফুড়ে কি আছে বের করে বুঝে ফেলা যায়, শুধু বোঝা যায় না দুর্বোধ্য ধর্মগ্রন্থ।

    আমরা আরবী বুঝি না তাই না হয় ধর্ম নিয়ে মারামারি করি, আরব দেশের লোকেরাতো তাদের মাতৃভাষা বুঝে তারা মারামারি করে কেনো?

    একে তাকে দোষ দিয়া কিছু হবে না, সমস্যা যেখানে আঘাতও সেখানেই করতে হবে।

    ধন্যবাদ ভাই, আপনাকে।

    ReplyDelete
  3. আসলে আপু এখন কিছু বলতে গেলেই বিরাট তর্ক লেগে যাবে। তর্ক করে, যুক্তি দেখিয়ে অথবা জোর করে কারো বিশ্বাস বদলে দেয়া যায় না, যে ধর্ম মানে আর যে মানে না দুজনের জন্যই এটা প্রযোজ্য। আপনার উত্তরের পর ভেবেছিলাম এর বিপক্ষে কিছু বলব, কিন্তু আমি নিশ্চিত আমি যা বলব সেগুলো অন্যকারো কাছ থেকে আগেই শুনেছেন আর আপনার কাছ থেকে আবার যে উত্তর আসত তাও আমি আগেই শুনেছি। ভেবে দেখলাম নিজ থেকে উপলব্ধি না করতে পারলে কারো বিশ্বাস বদলায় না। যেমন আমার কথাই বলতে পারি। বাংলা ব্লগ গুলো পড়বার আগে আমার ধারনা ছিলনা এই দেশে এত মানুষ ধর্মকে অপছন্দ করে। প্রথমে বিরাট ধাক্কা খেলাম, কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না কারন দেখলাম যারা লিখছে তারা আমার চেয়ে আমার ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি জানে, কিন্তু আমার নিজের জ্ঞান খুবই কম। তখন আমি নিজের ভেতর ধর্মকে আরো ভাল ভাবে জানার তাগিদ অনুভব করি, যাচাই করার চেষ্টা করি যে তারা সঠিক বলছেন কিনা। বাংলাদেশের বেশিভাগ মানুষের অবস্থাও আমার মত, যারা ধর্মে বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্মগ্রন্থ পড়ে দেখে না। কিছু সংখ্যক ধর্ম ব্যবসায়ীর হাতে ধর্মকে ছেড়ে দিয়ে আমরা বেহেস্ত পেতে চাই। কিন্তু ধর্মতো শুধু হুজুরদের জন্য নয় ধর্ম সবার জন্য। আর যাই হোক ধর্ম বিরোধীদের কারণে আমার একটা বিরাট লাভ হয়েছে, তা হল এই উপলব্ধিটা। আমি অন্তত্য ভিন্নমত পোষনকারীদের প্রতি হিংস্র হবার শিক্ষা আমার ধর্ম থেকে পাইনি। এটা বুঝতে পারি জোর করে কারো বিশ্বাস বদলে দেয়া যায় না। বিশ্বাস নিজের ভেতর থেকে আসতে হয়। আশা করি আমার কথার মাধ্যমে আপনাকে কোন আঘাত দেইনি। ভাল থাকুন।

    ReplyDelete
  4. না, আপনার কথায় আমি এখন আর আঘাত পাই নি। প্রথম মন্তব্যটি থেকে দ্বিয়ীত মন্তব্যটির সুর একদমই ভিন্ন।

    ভিন্ন মতালম্বীদের যে আপনি অশ্রদ্ধা করেন না সেটা জেনে ভালো লাগলো। বেশির ভাগ সময়ই দেখেছি, যারা ধর্মে আস্থাশীল নন তাদেরক ধর্মে আস্থাশীল ব্যক্তিরা ভীষন অশ্রদ্ধা করে কথা বলেন।

    চিন্তা ভাবনা বিবেক যুক্তি যারা যার একান্ত। তাই কেউ সক্রেটিস, কেউ নিউটন, কেউ মুহাম্মদ আর কেউ তানবীরা।

    আপনিও ভালো থাকবেন আর মাঝে মাঝে আমার পাতায় পায়ের ধূলো দিবেন।

    ReplyDelete