Sunday 12 February 2012

বইমেলা কড়চা – (দুই) ঘোলের স্বাদ মাঠায়

দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর পর বন্ধুরা এতো বেশি উৎসাহ দিয়েছেন যে আর থামতে ইচ্ছে করছে না। এখন ভাবছি ঘোলের স্বাদ মাঠায় উত্তরণ করার চেষ্টা করলে কেমন হয়। ভুল ত্রুটি বা পাঠকের বিরক্তির জন্যে দায়ী অতি উৎসাহপ্রদানকারী বন্ধুরা। আর স্বাদ ভালো হলে বুঝতেই পারছেন সব কৃতিত্ব আমার। আজকে ভাবছি বাংলাদেশের আর একজন লেজেন্ডারী উপন্যাসিক “ইমদাদুল হক মিলনের” ছকটা নিয়ে লিখলে কেমন হয়। একসময় তার উপন্যাসগুলোওতো বেহুঁশের মতো গিলেছি। তবে বহুদিন তার উপন্যাস সেভাবে সিরিয়ালি গিলি নাই। অত্যাধুনিক স্টাইলটা হয়তো জানি না। কিছুদিন আগে একটা অবশ্য অনলাইনে পড়েছি, মনে হলো মূল ছকটা এখনো আগের মতোই রেখেছেন। মনেকরি তার এ উপন্যাসের নাম “সে রাধা আমি হাঁদা”

মেয়েটিকে দেখার জন্যে ছেলেটি রোজ হোন্ডায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। শুধু এক পলক দেখতে। বুঝতে পারে না ছেলেটি এটি সে ঠিক করছে কি না কিন্তু সে শুধু এটুকু জানে মেয়েটিকে না দেখে সে একদিন ও থাকতে পারে না। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে, আর রোববারে একটি ক্লাশ থাকে বলে মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে না। এই দুটোদিন যে কি কষ্টে থাকতো আগে সে। সারাক্ষণ মনে হতো আজ দিনটির কোন অর্থ হয় না। বন্ধুদের আড্ডায়, সদ্য জয়েন করা অফিসে কিছুতেই সে মন লাগাতে পারতো না। অনেক কষ্টে রেজিষ্টার বিল্ডিং থেকে মেয়েটির বাসার ঠিকানা যোগাড় করেছে। এখন সে এদুটো দিনে মেয়েটির বাসার থেকে একটু দূরে হোন্ডা পার্ক করে বসে থাকে। মেয়েটিও বোধহয় তাকে পছন্দ করে, তার বসে থাকার সময়টুকুতে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওপর থেকে ঝোলানো ময়নার সাথে খুনঁসুটি করে কিংবা মোবাইলে গান শুনে বা গেম খেলে। যতোক্ষণ সে থাকে, ততোক্ষণ মেয়েটিও থাকে। মাঝে মাঝেই চোখাচোখি হয়, একটু বোধহয় হাসেও কিন্তু এতো দূর থেকে চোখের ভাষা পড়া যায় না।

বন্ধুরা শুনলে হাসবে ওকে নিয়ে। মেয়েটির মোবাইল নাম্বার থাকা সত্বেও সে তাকে ফোন বা এসএমএস না করে এমনি পিছু নিয়ে যাচ্ছে। সেদিন সোহেলের বউভাতে মেয়েটিকে দেখার পর থেকে কিযে হয়ে গেল তার। অসাধারণ সুন্দর মেয়েটি অসাধারণ। সুন্দর ডাগর চোখ, দারুন শার্প ফিগার, লম্বাতো অনেকটাই। গায়ের রঙে যেনো আলতা মেশানো। একদম ক্যটারিনা কাইফ যেনো হাটছে তার সামনে। জিন্স আর ফতুয়া সাথে পেন্সিল হিল পড়ে যখন ইউনিভার্সিটিতে যায়, কতো তৃষিত যুবকের বুক পুড়ে তাতো সে নিজেই দেখেছে। মেয়েটি বোধহয় টিশার্ট জিন্স কিংবা জিন্স আর ফতুয়া পড়তেই বেশি ভালবাসে। প্রথম যেদিন বৌভাতে দেখেছিল, সেদিন ছিল সে শাড়ি পড়া। নীল সিফন শাড়ি আর হাত ভর্তি অক্সিডাইজের চুড়ি। কানে অক্সিডাইজের লম্বা ঝোলা দুল। অপ্সরী সে অপ্সরী। সিফনের আঁচল ভেদ করে মাঝে মাঝেই তার বুকে ছটফটানো কবুতরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছিল। সারা অনুষ্ঠানে তার চোখ মেয়েটিতেই আটকে ছিল। শরীরে যেন অগ্নুৎপাত হচ্ছিল সেই কবুতরীকে ভালবাসার আশায়। সাকুরার আড্ডায় আজকাল বন্ধুরা তার এই আনমনা ভাব বেশ লক্ষ্য করছে, আলোচনাও করছে তাকে নিয়ে। কিন্তু ম্যান, হি ইজ নাও ইন লাভ। হি কান্ট হেল্প ইট এনিমোর।

সে চাইলেই মেয়েটিকে তার পরিচয় দিতে পারে। শাহানশাহ ইমতিয়াজ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সে। বিলেত থেকে এমবিএ করে এসে এখন বাবার অফিসেই বসছে, মতিঝিলে। কিন্তু সে চায় এ অপ্সরী নিজ থেকে তার কাছে আসুক। তাকে ভালবাসুক। সে অপেক্ষায় আছে। তার অস্তিত্ব যে ঐন্দ্রিলা জানে, এটা সে নিজেও জানে। জিন্স টিশার্টের বদলে আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় মাঝে সাঝেই ঐন্দ্রিলা শাড়ি পড়ে, হাত ভর্তি চুড়ি, কপালে বড় টিপ আর চুলে ফুল। এ সাজ যে তার জন্যেই তা ভালো করে বুঝতে পারে সাফিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে রিকশা থেকে নেমে বান্ধবীদের খোঁজার উছিলায় সে সাফিনের সামনেই কিছুক্ষণ মিছে ঘোরাঘুরি করে সময় ব্যয় করে। আঁড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় তাকে। শরীর দুলিয়ে যেভাবে সারা দেহে হিল্লোল তুলে তারপর রাজরানীর মতো হেটে যায় তাতে সাফিনের শরীরের রক্তকনাদের দ্রুত গতি আরো দ্রুততর হয়।

সানগ্লাসে চোখ ঢেকে বসে থাকা এই ছেলেটা দারুন হ্যান্ডসাম। নায়কের মতো হোন্ডা পার্ক করে যখন সিগ্রেট রাখে সেই কালো পুরুষ্ট দুই ঠোঁটের ফাঁকে, ঐন্দ্রিলার সারা শরীরে তখন দ্রিম দ্রিম কিসের যেন মাদল বাজে। শুধু তার জন্যে শুধু তার জন্যে কেউ ভার্সিটি আর ধানমন্ডি করছে সেই গুলশান থেকে ভাবতেই চোখে পানি আসে। এতো ভালবাসে আমাকে। সোহেল ভাইয়ের বৌভাতে শুধু একটু চোখাচোখি হয়ছিল তারপর থেকেই। এই বুঝি তাহলে প্রেম? ঐন্দ্রিলা’র আজকাল নিজেকে ভীষন সাজাতে ইচ্ছে করে ভীষন। কপালে টিপ পরে আয়নার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা তার কথা বলতে ইচ্ছে করে। ভালোলাগে ভাবতে, কল্পনা করতে সাফিনের সাথে তার প্রথম কি কথা হবে? কে আগে এগিয়ে আসবে? কিভাবে আদর করবে? শুধু অসস্ত্বি লাগে তার মনের রিনিক ঝিনিক না আবার মামি পাপা টের পেয়ে যায়। যদিও মামি পাপার সাথে সে ভীষন ফ্রী, খুব বন্ধুত্ব তার কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে একটু লজ্জা পাবে।

সাফিন ভীষন চঞ্চল। কিছুতেই মন লাগাতে পারছে না কিছুতে। আজ তিনদিন ঐন্দ্রিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে না। বারান্দায়ও আসছে না। মনকে বোঝাতে না পেরে প্রথমে সে এস।এম।এস করেছে তারপর ফোন কিন্তু নো আনসার। হঠাৎ কি হলো? হাওয়ার উড়ে গেলো না বাতাসে ভেসে গেলো তার সুন্দরীতমা? মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, চোখ দিয়ে অকারণেই জল গড়াচ্ছে। এ কদিন সে দাঁড়ি কাটেনি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে ঐন্দ্রিলার খবর না জেনে, তাকে “আমি তোমাকে ভালবাসি” এই চিরসুন্দর আর চিরসত্য কথাটি না বলে সে দাঁড়ি কাটবে না। আজ সন্ধ্যা থেকেই সাকুরায় বসে ভদকা খাচ্ছে সে নীট। বন্ধু রনি এসে পাশে বসলো, এ কথা সে কথা বলছে কিন্তু কথা জমছে না। রনি বলেই ফেললো, হোয়াটস রংগ উইথ ইউ সাফিন? ইউ লুক ডিষ্টার্বড। তখন সাফিন সব খুলে বললো। রনি খুঁটিয়ে খু্টিয়ে সব জেনে নিয়ে অবাক গলায় বললো, তুই আমাকে আগে জানাবিতো। ঐন্দ্রিলাকেতো আমি আগে থেকেই চিনি। আগে আমরা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতাম। এখন ওরা ধানমন্ডি আর আমরা ইস্কাটন চলে এসেছি। দ্বারা এক্ষুণি ফোন করছি ওদের বাসায় জেনে নেই, কি হলো। সাফিন উৎকন্ঠা নিয়ে রনির মোবাইলে দিকে তাকিয়ে রইল।

হ্যালো খালাম্মা আমি রনি বলছি, আপনাদের পাশের বাসায় যে আগে থাকতাম

হ্যা বাবা কেমন আছো তুমি? তোমার মায়ের শরীর ভাল? বাসায় আসো নাতো একেবারেই আমাদের

হ্যা, খালাম্মা আসবো বাসায়, আম্মু আপনাকে সালাম দিয়েছেন, একবার বাসায় যেতে বলেছেন, অনেকদিন দেখা নাই আপনার সাথে।

হ্যা বাবা, যাবো। আর বলো না সংসারের এতো ঝামেলায় থাকি, এইযে ঐন্দ্রিলাটা কদিন ধরে জ্বর বাধিয়ে বসে আছে। উঠছে না, নাওয়া খাওয়া কিছুই না।

বলেন কি খাল্লামা, তাই নাকি? ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন? খারাপ কিছু নয়তো আবার?

হ্যা, আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এসে দেখে গিয়েছেন। খারাপ কিছু নয়, ভাইরাল হয়েছে, কদিন বাদেই ঠিক হয়ে যাবে।

ঠিক আছে খালাম্মা, আমি এসে একদিন ওকে দেখে যাব।

নিশ্চয় বাবা, একদিন চলে এসো।

সাফিন আর সহ্য করতে পারছিল না। ফোন কেটে দিতেই বললো, একদিন কেন চল আজই ঐন্দ্রিলাকে দেখে আসি রনি। না জানি কতো কষ্টে আছে তার প্রিয়তমা।

রনি হাসল, ধীরে বন্ধু ধীরে। এক্ষুণি গেলে খালাম্মা সন্দেহ করে ফেলতে পারেন। মেয়েদের মায়েদের চোখ সিআইডি থেকেও কড়া। আজ বাড়ি যেয়ে ফ্রেশ হ, রেষ্ট নে, ঘুমা, কাল সকালে তোর বাসা থেকে তুলে, তোকে নিয়ে যাবো।

সকালে সাফিন তৈরী হয়েই বসে ছিল রনির জন্যে। লাল পলো শার্ট আইজড ফ্যাশনের, ফেডেড ডেনিম জীন্স, নাইকির কেডস আর রেবানের সানগ্লাসে ঢাকা চোখ। চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে নিয়েছে আর হাতে যেমন থাকে তার তামার ব্রেসলেটটা শুধু। সারা গায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে এরামিসের গন্ধ। কিন্তু ঘড়ি যেনো আর চলছে না। দশটা বাজতে কতোক্ষণ লাগে। সারাটা রাত কেটেছে তার আধো ঘুম আর আধো জাগরণে। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি যেন। রনিকে ফোন দেয়াটা কি বেশি ছ্যাবলামি হয়ে যাবে? ঠিকাছে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই ফোন দিবে সে। দশটা কুড়িতে রনি পৌছেই বলতে লাগল, জ্যামে আটকে গেছিলাম দোস্ত, চল চল, খুব সর‍্যি। তারা ঠিক এগারোটায় ঐন্দ্রিলাদের ফ্ল্যাটে পৌঁছলো। ঐন্দ্রিলার মা সাফিনকে দেখে খুবই অবাক হলেন। রনি বললো, সাফিন ঐন্দ্রিলার ক্লাশমেট আর তার বন্ধু। ঐন্দ্রিলার অসুখ খুনে জাষ্ট একটু দেখতে এসেছে। সাফিনকে ঐন্দ্রিলার ঘর দেখিয়ে দেয়া হলো। ঘরে ঢুকে আস্তে করে সাফিন দরজাটা ভেজিয়ে দিল। রজনীগন্ধার সুবাস পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, ঐন্দ্রিলা ঘুমাচ্ছে, বিছানার পাশের টেবিলেই রাখা শুভ্র রজনীগন্ধার অনেকগুলো স্টিক। ও রজনীগন্ধা ভালবাসে তাহলে মেয়েটা।

ঐন্দ্রিলার ঘুমন্ত মুখটি দেখে সাফিনের ভীষন কষ্ট হতে লাগল। জ্বরে পুড়ে মুখটি এতোটুকু হয়ে গেছে। আহারে কতো কষ্টই না পাচ্ছে তার জানটুসটা। বিছানার পাশে বসে ঐন্দ্রিলার কপালে হাত রাখতেই ঘুম ভেঙ্গে আচমকা ঐন্দ্রিলা তাকে তার ঘরে দেখতে পেয়ে ভীষন অবাক হয়ে গেল। চোখ কচলে বুঝতে চাইল স্বপ্ন দৃশ্য নয়তো এটা? সাফিন বুঝতে পেরে হেসে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে জান? ঐন্দ্রিলা কি বলবে, বুঝতে না পেরে, বললো, দাড়ি কাটোনি কেন তুমি? সাফিন হাসতে হাসতে গাঢ় গলায় বললো, তোমার জন্যে জান, শুধু তোমার জন্যে। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেদিন তোমায় পাবো সেদিন দাড়ি কাটবো, তার আগে না। ঐন্দ্রিলা ঠিক বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো তার মুখের ওপর নেমে আসছে আর একটি মুখ। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে ঐন্দ্রিলা আর নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। ছটফট করতে লাগল সে বিছানার ওপর।

***** যারা বইমেলাতে ইমদাদুল হক মিলনের কোন উপন্যাস কিনবেন, আমার লেখার সাথে মিলিয়ে দেখবেন******

শুভরাত্রি

তানবীরা
১৩/০২/২০১২

2 comments:

  1. আমি জানিনা আপনার লেখা বই আছে কি না। থাকলে পড়বার জন্য আগ্রহী হলাম। আর যদি না থাকে আপনি উপন্যাস লিখুন প্লীজ। আপনার লেখায় পাঠক মুগ্ধ হবে। অবশ্যই বিক্রি তালিকার শীর্ষে থাকবে আপনার লেখা বইয়ের নাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা উপন্যাসের কাজে হাত দিয়েছিলাম, প্রকাশক পেলে হয়তো শেষ করবো। আমার জন্য শুভকামনা রাখবেন। ভাল থাকবেন

      Delete