Tuesday 13 August 2013

আমার যতো সিনেমা - ৩



“নহন্যতে” সিনেমার নামটা শুনছিলাম কদিন ধরেই। ছোটবেলায় পড়া মৈত্রীয় দেবী আর মির্চা এলিয়াদকে মাথায় রেখে সিনেমাটা দেখতে বসে প্রথমে একটু আশাহত হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনেমায় ডুবে গেলাম। কাহিনীটাই এমন টানের। পুরো সিনেমাটাই টান টানের। জীবন মানুষকে কখনো কখনো এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়ে দেয় মাকে বেছে নিতে হয়, এক সন্তানকে বাঁচাতে পারবো, কাকে চাও, ছেলেকে না মেয়েকে? সিনেমার শুধু শেষটা ভাল লাগেনি বড্ড সিনেমাটিক লেগেছে। বাচ্চা এডাপ্ট করা আর পরে বাচ্চার তার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টসদের সাথে যোগাযোগ করা একটা সাধারণ ঘটনা। পরিচালক এটাকে এতো নাটকীয়রুপ না দিলেও পারতেন। হয়তো বাচ্চা মেয়েটার অভিমানের পাল্লাটা অনুধাবন করানোর জন্যে এই নাটকটার অবতারনা কিন্তু কোন বাচ্চাটা অভিমান করে না যখন জানতে পারে তার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টস তাকে দিয়ে দিয়েছে? নো ম্যাটার কারণ যাই থাকুক? আমি হলে হয়তো শেষটুকু অন্যভাবে লিখতাম। ব্যাক্তিগত অনুভব, ক্ষমা এই জিনিসগুলোকে প্রাধাণ্য দিতাম। তবুও বলবো অসাধারণ একটা মুভি, সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে।

“নহন্যতে” ধরে ধরে ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে যেয়ে পেয়ে গেলাম সেই বিখ্যাত “লা নুইট বেংগলী” সিনেমাটি। এটা মির্চা এলিয়াদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে বানানো। মৈত্রীয় দেবী আর মির্চা এলিয়াদ দুজন দুজনের মতো করে তাদের প্রেম কাহিনী লিখেছেন। একজন লিখেছেন স্বাভাবিকভাবে কূল বাঁচিয়ে আর একজন কি কিছুটা প্রতিশোধমূলকভাবে? বরাবরের মতো বই আমার যতোটা ভাল লেগেছিলো সিনেমা ততোটা ভাল লাগেনি। বইয়ে জমজমাট প্রেম ছিলো, সামহাউ আমার মনে হলো সিনেমায় প্রেম সেভাবে দানা বাঁধেনি কিংবা ফুটেনি। মাথায় বই কিংবা কিশোরীবেলা বেশি কাজ করছিলো কিনা জানি না। কিংবা ওয়েস্টার্ণ মেকিং এর কারণেও হতে পারে। ইষ্টার্ন মেকিং হলে হয়তো বানিয়ে দিতো, হাম দিল দে চুকে সানাম। তারপরো কোন এক সময় যারা বই দুটো পড়েছেন বলবো, দেখতে পারেন, খারাপ লাগবে না।

“শব্দ” খুব ব্যাতিক্রমধর্মী গল্প নিয়ে করা এই সিনেমাটি। একজন মানুষ যিনি সিনেমায় শব্দ নিয়ে কাজ করেন তাকে ঘিরে এই কাহিনী যদিও কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে নানা শব্দের উৎপত্তি ব্যাঞ্জনা সিনেমায় যে শব্দগুলো আমরা শুনি সেগুলো কিভাবে তৈরী হয়, তার বেশ মজাদার উপস্থাপনা। যারা সিনেমায় এই কাজটি করেন তাদেরকেই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়ে থাকে? অনেকে বললেন বেশ স্লো সিনেমা কিন্তু আমার গতিনুযায়ী ঠিকাছে।

কিছুটা এধরনেরই কাহিনী নিয়ে একটা মুভি দেখেছিলাম বছর কয়েক আগে ২০০৬ এর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শাহবাগ জাদুঘর মিলনাতয়নে। যতোদূর মনে পড়ে সিনেমাটার নাম ছিলো “নিঃশব্দ”। নেটে কোন ইনফরমেশান খুঁজে পেলাম না এই মুভিটার ওপর। সেই মুভিটার অবশ্য থীম ছিলো সারাদিন আমরা অকারণে কতো শব্দ করি তা নিয়ে। কিছুটা সাউন্ড পলিউশনের ব্যাপারে মানুষকে কনশাস করা টাইপ। ডিটেইলসে দেখিয়েছিলেন সারাদিন আমাদের চারপাশে অকারণে কতো শব্দ হয়। যার অনেককিছু হয়তো আমরা চাইলে ওভারকাম করতে পারি।

“গয়নার বাক্স” অপর্না কঙ্কনার সর্বশেষ কাজ। এই একটা সিনেমা প্রথম বারের মতো আমার বইপড়া ভালো লাগাকে কিছুটা ছাপিয়ে ওপরে উঠেছে। পিসিমাকে কিংবা রাসমনিকে আমার বইতে ঠিক এতোটা মজাদার লাগেনি যতোটা সিনেমাতে লেগেছে। আমার কল্পনা রাসমনিকে অপর্নার মতো এতোটা মজাদার ভাবেনি। মৌসুমী আমার অলটাইম ফেভরিট তার উচ্ছল স্বভাবের জন্যে, ভাল লাগার সেটাও একটা কারণ হতে পারে। সিনেমাটা দারুন মজাদার, বইটা পড়া না থাকলেও দারুন এঞ্জয় করা যাবে। শুধু কঙ্কনার প্রেমটাকে সিনেমায় গলা টিপে না মেরে দিলেই পারতেন। এখানে পরিচালকের সময়ের দাবীনুযায়ী কল্পনার অবকাশ ছিলো। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পটি অপর্নার হাতে পড়ে একটি অন্যরকম ব্যাঞ্জনা পেয়েছে।

হঠাৎ করে কোলকাতার সিনেমায় পড়াশোনা জানা ছেলেমেয়ে ঢুকে সিনেমার বৈশিষ্ট্য পালটে ফেলেছে। আবার “হোয়াট বেংগল থিংক্স টুডে ইন্ডিয়া উইল থিঙ্ক টুমরো” তে নিয়ে যাচ্ছে মুভির কাহিনী। আই উইশ তার ছিটেফোঁটা যদি আমাদের সিনেমার দিকেও আসতো। আমাদের সিনেমায় ঢুকে যায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তবুও আশা রাখি ফারুকী গ্যাং যদি সিরিয়াসলি সিনেমা নিয়ে ভাবেন তাহলে হয়তো হেমলক সোসাইটির মতো আমাদেরও অনেক কিছু দেয়ার আর পাবার থাকবে।

১২/০৮/২০১৩

No comments:

Post a Comment