পশ্চিমা
বিশ্বে “মা দিবস” খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। সারা বছর মা সংসারে অনেক খাটাখাটুনি দেন, সন্তানদের যত্ন করেন। মা দিবসে সন্তানেরা
মাকে বিছানায় ব্রেকফাস্ট এনে দেবে, চমক দিয়ে শুরু করবে খুশি আনন্দভরা দিন, নিজ
হাতে কিছু উপহার বানিয়ে দিয়ে তাকে চমকে দেবে, চোখের কোনায় হয়তো জল
আর হাসি নিয়ে আসবে একসাথে, হয়তো কোথাও রাতে তাকে বিশেষ ট্রিট দেবে, সবাই মিলে কিঞ্চিৎ
হইহুল্লোড়-এটুকুই
প্রচলিত এখানে। স্কুলগুলো এ ব্যাপারটা নিয়ে খুব পরিকল্পনা করে। স্কুলের কারিকুলামের
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এই ব্যাপারটাও। মাস কিংবা দেড় মাস আগে থেকে শুরু হয় পরিকল্পনা।
প্রথমে কী বানানো হবে সেই পরিকল্পনা তারপর সেটার বাস্তবায়ন করা। ফিসফাস বাড়িতে, স্কুলে, বন্ধুদের
মাঝে, মাকে চমকে দিতে হবে তাই মা যেনো কিছুতেই জানতে না পারে। বাবা হবে কাণ্ডারি। আমার মেয়েও খুব উৎসাহিত, মাকে চমকে দিতে হবে
তার।
মাঝে মাঝে সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে বের হই মায়েতে মেয়েতে। শুরু হলো, মা তোমার কোন
ফুল সবচেয়ে বেশি পছন্দ, কী রঙ, ব্রেকফাস্টে কী খেতে বেশি পছন্দ করবে। ঠিক
যে কায়দায় স্কুল থেকে তাকে শিখিতপড়িত করে দেয়া হয়েছে। প্রথমে বুঝতেই পারি নি হঠাৎ আমার পছন্দ অপছন্দ নিয়ে এতো টেনশান
কেন। হঠাৎ মনে পড়তেই, আমিও বাগে পেয়েছি, সারা বছরের শোধ প্রতিশোধ নেয়ার এইতো
মোক্ষম সুযোগখানি বাবা কন্যার ওপর।
বলেছি,
বাংলাদেশের শুভ্র সাদা রজনীগন্ধা সবচেয়ে বেশি পছন্দের।
নেদারল্যান্ডসের
কিছু ফুল পছন্দ না মা? প্লিজ, নেদারল্যান্ডসের একটা ফুল বলো।
বাহ,
আমার পছন্দ জানতে চাইছো!
হু,
কিন্তু নেদারল্যান্ডসেওতো তোমার কিছু পছন্দ আছে, সেটা বলো মা প্লিইইইজ...
কমলা
বা হলুদ গ্ল্যাডিওয়ালা।
আমি
ভেবেছিলাম তুমি হলুদ কমলা রঙটাই পছন্দ করবে, আমি তোমার পছন্দের রঙ জানি, দেখেছো
মা? এবার বলো, নাস্তা কোনটা চাও?
ফুলে
গ্রেস দিয়েছি তাই নাস্তায় গ্রেস দিতে রাজি না।
লুচি
বেশী পছন্দ সাথে ছোলার ডালের হালুয়া।
মা,
ঐটারতো রেসিপি জানি না। মনে হয় বাবাও জানে না।
গুগুল
করো, ইউটিউব দেখো।
না
মা, স্যান্ডউইচ খাও প্লিজ মা, চিকেন, চিজ, টুনা যেকোন একটা।
কিন্তু
সেগুলোতো তোমার প্রিয়, তুমিতো আমার প্রিয় জানতে চাইছো।
না
মা প্লিজ। এইখান থেকে চুজ করো!
আর
কী চুজ করবো, তুমিই তাহলে বানাও!
না,
তুমিই বলো, কোনটা।
ওকে,
চিকেন করো।
বিজয়িনীর
হাসি মুখে, আমি জানতাম মা, আমি জানতাম। ইয়াহুউউউউ, চিকেন স্যান্ডউইচ?
মনে
মনে বলি, কার যে চিকেন স্যান্ডউইচ বেশি পছন্দ তাতো আমি জানি।
ডিনারে
ইরো ওক যাই মা?
যাও,
কে মানা করেছে?
না
মানে তোমাকে নিয়ে...
আমি
ইটালিয়ান খেতে চাই।
না মা না, ইটালিয়ান না, ইরো ওক অন্নএএএএএক বেটার, সেটায় অনেক চয়েস। প্লিইইইজ মা, প্লিইইইইজ মা..
আমি
বিরস গলায়, ওকে!
লাভ
ইউ মা, লাভ ইউ।
সারা
বাড়িতে ডঙ্কা বাজছে। আমার চলাফেরায় বিধি নিষেধ আছে। সব রুমে আমি যেতে পারবো না।
সকালে না ডাকা অব্ধি আমি নীচে নামতে পারবো না। বিশেষ কিছু দরকার হলে আমাকে ওপরে
দিয়ে আসা হবে। বিছানা থেকেও ওঠা নিষেধ। এই হলো আমার মা দিবস। দেখি কাল সকালে আমার
জন্যে কী অপেক্ষা করছে। “মা দিবস”কে ঘিরে মেয়ের এই চনমনি আমি খুব উপভোগ করি।
ভুলে থাকি, মনেই করতে চাই না, কে একলা
ঘরে, একলা বিছানায় শুয়ে ভাবে, মা-কে আমার পড়ে না মনে...মা বুঝি গান গাইতো আমায়
দোলনা ঠেলে ঠেলে, মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে...
মনে পড়াতে চাই না মাতৃহীন একাকী শিশুর
বেদনা, মনে পড়াতে চাই না সহস্র মাইলের পথ পেরিয়ে আমার জন্যে স্নেহের ঝুড়ি নিয়ে
অপেক্ষা করে-থাকা মায়ের কথা, মনে করতে চাই না মায়ের মতো মাতৃভূমির কথা...
মেয়েদের ভেতর এতো মা, এতো মায়া কিভাবে
থাকে, কেন থাকে আমি নিজেই যে জানি না।
যদিও
আমার রাজকণ্যা প্রতিবছরই মুখ কালো করে বলে, মা দিবস আছে – বাবা দিবস আছে তাহলে
কেনো কণ্যা দিবস নেই? আমারোতো কিছু পেতে ইচ্ছে করে। আমি আর তার বাবা সানন্দে বলি,
প্রতিদিনই কন্যাদিবস, তোমাকেতো সারা বছরই খাইয়ে দেই, স্কুলে নামিয়ে দেই, উপহার
দেই, তবে কেনো আলাদা দিবস চাই। সে আরো সিরিয়াস হয়ে বলে, সেতো তোমরাও করো তাহলে কেন
কন্যা দিবস থাকবে না। আমিও ভাবছি, তাইতো ............
Nice ... like it...
ReplyDeleteI'm so honored that you liked it
ReplyDelete