Wednesday 13 January 2016

টুকরো টাকরা যান্ত্রিক প্রেম

১ :
জীবন গতানুগতিকতার যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়, প্রতিদিনের অনেক পাওয়া না পাওয়ার ব্যর্থতা আস্তে আস্তে গ্রাস করে নেয় মনটাকে। আশপাশের সবাই – সব কিছু শ্বাসরুদ্ধ করে দেয়, অর্থহীন অসাড় মনে হতে থাকে প্রতিটি মুহূর্ত।
হৃদয় ফেটে যাওয়া আকন্ঠ তৃষ্ণায় কোথাও এক বিন্দু স্বস্তির জল নেই, নেই কোন আশ্বাস। যতো দূর দৃষ্টি পৌঁছায়, শুধুই নির্মম বাস্তবতা। লাভ-লোকসানের রাজ্য, এখানে নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গান নেই, জয় গোস্বামীর কবিতা নেই, নেই ঝুম বৃষ্টিতে কারো হাত ধরে ছাদে ভেজার কোন আহবান।
মনে পড়ে যায় সেই কিশোরীকে, যার লাজুক চঞ্চল চোখে কখনো অনেক বলতে না পারা কথামালা ছিল।
প্রতিদিনের সেই অতৃপ্তিকে পিছু ফেলে আবার নতুন করে বেঁচে ওঠার লক্ষ্যে, তাজা নিঃশ্বাস নিতে মুঠো ফোনটি তুলে নেয় হাতে। আলতো করে ছোঁয় সেই প্রিয় নম্বরটিকে। ঠিক যেমন করে এক সময় তার আঙ্গুল সেই কিশোরীর ঠোঁট ছুঁয়ে দিতো।
উচ্ছল সেই গলার রিনিক ঝিনিক ধ্বনি তার কানে আসতেই আকুল কন্ঠে আত্মসমর্পন করে বলে, “জান, তোর কপালে একটু ঠোঁট ছুঁয়ে দিই”

২৬/১২/২০১৩

২ঃ

একশ চার ডিগ্রী তাপের কাঁপুনি সারা শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে। বিছানায় এপাশ ওপাশ, সারা শরীর জুড়ে অশান্তি। অসহ্য সময় যেনো থেমে থাকে, কালো রাত ভোর হতে চায় না। অনেক অনেক জল পান করেও গলার তেষ্টা কাটে না।
দুটো চোখ যেনো কাকে খুঁজে ফেরে, মন তখন তাকেই ডাকে। অনুচ্চারিত শব্দে সে নিঃশর্ত কন্ঠে বলেছিল, ........................টিল ডেথ টেক আস আপার্ট”। প্রিয়জনের স্পর্শের জন্যে জ্বরতপ্ত গলায় আকুল হয়ে কাউকে ডাকা, “জান, তোর গালটা আমার কপালে ছুঁইয়ে রাখবি, নইলে আমার ভিতরটা কেমন যেনো অশান্ত লাগে রে। ভয় হয়, আমি মরে যাব, তুই থাক আমার পাশে, আমার হাত ধরে রাখ সোনা”
বিকেলে বারান্দায় বসে আনমনে আকাশে পাখির ওড়াওড়ি খেলা দেখা। দেখতে দেখতে আকাশকে লাল করে দিয়ে সূর্য মামা অন্য বাড়ি চলে যাচ্ছে। কোলাহলবিহীন এই অপার সৌর্ন্দয আর স্নিগ্ধতা বুকের মাঝে এক নাম না জানা কষ্টের জন্ম দেয়।
ব্যাকুল হয়ে তখন কাউকে ডেকে ওঠে, “জান, তোকে বড্ড পাশে পেতে ইচ্ছে করছে। দুজনে একসাথে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবা দেখতে ইচ্ছে করছে, তোর মাথা আমার কাঁধে আর আমার হাত তোর কোমড় জড়িয়ে আছে।“
মুঠো ফোনের এ প্রান্ত থেকে এক অভিমানী আদ্র গলায় বলবে, “আমিতো চেয়েছিলাম সারা জীবন তোকে জড়িয়ে থাকতে, তুইতো চাইলি না”।
তারপর কখনো অতিক্রম করা যাবে না সেই দূরত্ব থেকে দুজন অনেক অনেকক্ষণ নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন করবে।
একসময় একজন বলবে, “আমি আসি?” অন্য প্রান্ত থেকে একটি কষ্টের শব্দ ভেসে আসবে, “হু”

৩.


টুকরো টাকরা যান্ত্রিক প্রেম ৩ঃ

রৌদ্রতপ্ত দুপুরে রিমঝিম বৃষ্টি প্রথমে পথিকের দেহ স্পর্শ করে, তারপর লজ্জাবতী লতার মত তার মন আর হৃদয়। বৃষ্টির ছাঁটে হৃদয় সঘন ভিজে গেলে ছাঁদের কার্নিশে একটু আড়াল খুঁজে নিয়ে মুঠো ফোন খুঁজে নেয় সেই চির চেনা নম্বরটি। তারপর উৎফুল্ল গলায় ভেসে আসে চিৎকার, “জান, বৃষ্টিতে ভিজছি, এতো ভাল লাগছে জানিস কারণ সাথে আছিস তুই। এই যে তুই আমার পাশে, আমার হাতে লাল নীল রেশমি চুড়ি পড়া তোর হাত, আঙ্গুল নিয়ে খেলছি আমি। তোর প্রিয় সাদা রঙের জামা ভিজে সারা গায়ে লেপ্টে আছে, বৃথা ওড়না টানাটানি করে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিস তুই। তোর কাজল ধোঁয়া চোখ আর চুল চুইয়ে চুইয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে তোকে অপ্সরী দেখাচ্ছে জান”। মুঠো ফোনের ও প্রান্তে অন্যজন কিসের এক আকুলতায় এমনিই ভিজে সারা হচ্ছে, সে জানে, কে জানে?

উত্তাল সমুদ্র, মুর্হু মুর্হু ঢেউ এসে তীরে আছড়ে পড়ে তার কষ্ট বেদনার প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের অগনিত সেই প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে ব্যস্ত সে স্নানে। সমুদ্রের লোনা জলে তার সারা শরীর মাখামাখি, লোনা জলের সেই স্পর্শ শরীরের সাথে মনকেও আদিম করে তুলছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে পাশে পাবার তীব্র আকাঙ্খায় সারা শরীরে হাজার তারের বীনা বাজছে। উন্মত্ত আকুলতা মুঠো ফোনের ওপর আছড়ে পড়ছে, “জান, তুই কোথায়? তুই আমার বুকে এসে আছড়ে পড়, আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যা। আমার ইচ্ছে করছে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে তোকে বুকের মাঝে পিষে ফেলি, কোথায় তুই”?


No comments:

Post a Comment