Friday 24 June 2016

বনস্পতির ছায়ায় এক জীবন

বাবা দিবসের লেখাটি শুরু করতে চাই সঞ্জয় সরকারের কবিতাটি দিয়ে
"যেদিন আমি ছোট ছিলাম,
যুবক ছিলেন বাবা।
সেদিনটি আসবে ফিরে
যায় কি তা আজ ভাবা?
বাবার কাছেই হাঁটতে শিখি,
শিখি চলা-বলা।
সারাটি দিন কাটতো,
আমার জড়িয়ে তার গলা।
বাবার হাতেই হাতেখড়ি,
প্রথম পড়া-লেখা।
বিশ্বটাকে প্রথম আমার,
বাবার চোখেই দেখা।"
আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বাবা নিয়ে ভাবলে বোধহয় ওপরের কবিতাটার মতো এ ধরনের কিছু স্মৃতিই মনে আসবে। বাবা-মা'কে আমরা রোজই ভালোবাসি, তাহলে কেনো আলাদা 'বাবা দিবস', 'মা দিবস' এলো?
হ্যাঁ, প্রতিদিনের আটপৌরে ভালবাসার ফাঁকে তাদেরকে কখনওই কী সেভাবে জানানো হয়, তারা যে আমাদের জীবনের বিশেষ মানুষ? সেই “বিশেষ” অনুভূতিটি মা-বাবাকে উপহার দেওয়ার জন্যে মাঝে মাঝে আলাদা করে জানানোর প্রয়োজন আছে বৈকি।
উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের যোগাযোগ আজ প্রতি দিনের। তাদের জীবন যাপন, সিনেমা, গান, উৎসব অনেক কিছুই আমাদের সমাজে, আচার-আচরণে, জীবনযাপনে মিশে গেছে। বাবা দিবস তেমনই একটা উপলক্ষ। ছবি এঁকে, উপহার কিনে আমাদের বাচ্চারাও আজকাল বাবাকে নিয়ে একটু বিশেষভাবে বাবা দিবসটি উদযাপন করে থাকে, কিন্তু উৎসব মানে তো শুধু উদযাপন নয়, তার পেছনের ঘটনাটা বা ইতিহাসটা জেনে নেয়াও জরুরি।
মা দিবস উদযাপন শুরু হওয়ার পরেই ঝপ করে বাবা দিবস পালন করাও শুরু হলো। এ নিয়ে বেশ কয়েকটা গল্প প্রচলিত আছে যার মধ্যে দুটো বেশ প্রসিদ্ধ।
১৯শে জুন ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপন হয়। এর পুরো কৃতিত্ব সোনারা স্মার্ট ডোড এর। ওয়াশিংটনের স্পোকানে তিনিই প্রথম এই দিবসটির জন্যে প্রচার, প্রচারণা এবং আয়োজন শুরু করেন। তার কয়েক সপ্তাহ পরে আবার ৫ জুলাই ফেয়ারমন্ট পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে দিবসটি উদযাপিত হয়।
গ্রেস গোল্ডেন কেটনের দক্ষিন উইলিয়াম মেমোরিয়াল মেথোডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ-এ উইলিয়াম স্মৃতিসৌধের যাজক বার বার জনসমক্ষে জানাচ্ছিলেন, ৩৬১ জন মানুষ যাঁরা ইটালি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করছিলেন, মনোনগা শহরের কাছে তাঁদেরকে একটি বিস্ফোরণে মেরে ফেলা হয়। যাঁদের মধ্যে অনেক ফাদারও ছিলেন। সেই থেকে পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে সরকার বাবা দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
শতাব্দীর পালা বদলে গোটা আমেরিকাতে মা দিবস উদযাপন নিয়ে আলোচনা আর ধুম চলছিলো। আমেরিকান সরকার তখনও মা দিবসকে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু অনেক রাজ্যই প্রতি বছর মে মাসের ৩য় রবিবারে মা দিবস উদযাপন করে মা-দেরকে সম্মান জানাচ্ছে। ১৯০৮ সালে যখন চার্চে মা দিবস উদযাপিত হচ্ছিল, সোনারা স্মার্ট ডোড তখন বাবাদের জন্যেও একটা দিন নির্দিষ্ট করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
যখন সোনারা মাত্র ষোল বছরে তখন তার মা ৬ষ্ঠ পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। বাকি পাঁচ ছেলেকে একা হাতে মানুষ করা, সোনারা বা তার বাবার জন্যে মোটেই কোন সহজ কাজ ছিলো না সেই তখনকার দিনেও। যদিও জনাব স্মার্ট খুব ভাল ভাবেই সে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছিলেন। বাবার প্রতি সেই ভালবাসা আর শ্রদ্ধা থেকে সোনারা ভাবতো বাবাদের জন্যেও খুব বিশেষ কিছু করা দরকার ঠিক যেমন মায়েদের জন্যে মা দিবসে করা হয়।
১৯০৯ সালে সোনারা স্পোকানের ওয়াইএমসিএ আর স্পোকানের মিনিস্টার এলাইয়েন্সকে বাবা দিবসের প্রস্তাবটি পাঠায়। ওয়াইএমসিএ ৫ই জুন বাবা দিবস উদযাপন করলেও স্পোকানের মিনিস্টার এলাইয়েন্স উদযাপন করে ১৯শে জুন, কারণ প্রস্তুতির জন্য তাদের বেশি সময়ের দরকার ছিলো।
ওয়াশিংটনে ১৯১০ সালের ১৯শে জুন প্রথম বাবা দিবসটি উদযাপন করা হয়। সরকারিভাবে বাবা দিবস উদযাপনের অভিপ্রায়টি খুব দ্রুতই সারা আমেরিকাতে জনপ্রিয়তা পেলো আর একের পর এক অনেক রাজ্যই বাবা দিবস উৎসবটির সাথে যোগ দিল। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট কেভিন কোলেজ সরকারিভাবে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন আর সব অঙ্গরাজ্যগুলোকে উৎসবটি পালন করার জন্যে উৎসাহ দেন। ১৯৫৬ সালে একটি যৌথ অনুবন্ধনের মাধ্যমে কংগ্রেসও এই দিবসকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৬৬ সালে, দশ বছর পরে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন, জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে “বাবা দিবস” ঘোষণা দিয়ে একটি ঘোষণাপত্র জারি করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন স্থায়ী ভাবে গোটা আমেরিকাতে বাবা দিবসের রীতি প্রচলন করেন।
সোনারা স্মার্ট ডোড তার প্রচেষ্টার সফল বাস্তবায়ন দেখে যেতে পেরেছিলেন। ৯৬ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে তিনি পরলোকগত হয়েছিলেন।
বাবা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা সবাইকে। পৃথিবীর সব বাবা-মা, ছেলে মেয়েরা মিলে আনন্দের সাথে এই দিনটি উদযাপন করুক। মঙ্গলবারতা ঘিরে থাকুক সবাইকে। বাচ্চারা তাদের হাতে বানানো ছোট ছোট উপহার দিয়ে, ছবি এঁকে বাবাকে বুঝিয়ে দিক,'বাবা, আমিও তোমাকে ততোটাই ভালবাসি যতোটা ভালোবাসো তুমি আমাকে।'
http://m.banglatribune.com/lifestyle/news/115183/%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8

No comments:

Post a Comment