ভাল লাগা না লাগা খুবই ব্যক্তিগত অনুভূতি।
এর কোন প্যাটার্ন নেই, স্টাইল নেই, যুক্তি নেই। কার কী ভাল লাগে আর না লাগে তাই
দিয়ে অনেকসময় অনেকে কারো ব্যক্তিস্বত্তা নির্ধারন করতে চান, আমার নিজের ধারনা একটা
পর্যায় পর্যন্ত হয়তো সেটা ঠিক হতে পারে কিন্তু পুরোপুরি সঠিক বোধহয় সেটা হয় না।
ছোট
চাচার একটা বইয়ের আলমারী ছিল, সেটা তালা দেয়া থাকতো কারণ ওখানে বড়দের বই থাকতো।
ক্লাশ নাইনে ওঠার পর যখন নিজেকে আসলে লায়েক ভাবতে শিখেছি তখন একদিন সেই আলমারী
খোলা পেয়ে চটপট কিছু বই বের করে ফেলেছিলাম। এখনো মনে
আছে তারমধ্যে ছিল, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের “চিতা বহ্নিমান” নিমাই ভট্টাচার্যের
“মেমসাহেব” আর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের “রুপের হাটে বিকিকিনি”।
আশুতোষের প্রথম বইটি পড়ার পর থেকেই আমি মুগ্ধ পাঠিকা আর ভক্ত বনে গেলাম তার। এরপর থেকে যার বাড়ি যাই, যেখানে যাই একটা সময় আঁতিপাঁতি শুধু তারই লেখা প্রেমের উপন্যাস খুঁজতাম, পড়তাম। বুদ্ধদেব গুহ এসে ভর করার আগে পর্যন্ত আশুতোষ সেই পুরো বেলা ভর করে রইলেন আমাতে। বলতে দ্বিধা নেই, আমি বোধহয় ওনার প্রেমে পড়ে গেছিলাম। ছোট চাচাকে সাহসে ভর করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি কোলকাতায় কোথায় থাকেন, চিঠি লেখার ঠিকানা কি? অকরুণ গলায় চাচা বললেন, তিনি মারা গেছেন কিছুদিন আগে।
আশুতোষের প্রথম ছাপা গল্প ছিল “নার্স মিত্র” যার থেকে
সুচিত্রা সেন অভিনীত অসাধারণ বাংলা সিনেমা “দীপ জ্বেলে যাই” তৈরী হয়েছিল, হেমন্ত
মুখোপাধ্যায়ের “এই রাত তোমার আমার” গানটি এখনো সবার মুখে মুখে ফিরে। এই গল্পটি
থেকে হিন্দীতেও সিনেমা তৈরী হয়েছিল “খামোশী” ওয়াহিদা রেহমান আর রাজেশ খান্না অভিনয়
করেন তাতে। “ও সাম আজিব থী” কিশোর কুমারের গলায় এই গানটিও অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়।
আমি সে ও সখা উপন্যাসটি থেকেও বাংলা এবং হিন্দীতে (বেমিশাল) সিনেমা হয়। সাত পাঁকে
বাঁধা উপন্যাসটি থেকেও বাংলা আর হিন্দীতে (কোরা কাগজ) একই সময় সিনেমা তৈরী হয়।
এছাড়াও তার বহু উপন্যাস ভারতবর্ষের অন্য অনেক ভাষায় অনুবাদ ও চিত্রিত হয়েছে।
তার উপন্যাসের নায়িকারা বেশীর ভাগই
শ্যামবর্ন কিংবা কৃষ্ণবর্নের যাদের খুব সুন্দর কাজল কালো চোখ। নায়করা বেশীর ভাগই
নায়িকার চোখের প্রেমে পড়তেন। পড়াশোনায় দূর্দান্ত ভাল হতেন এবং মানবিক গুনাবলীতে
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেতো নায়ককে হারিয়ে দিতেন। বেশীর ভাগ নায়িকা প্রধান
উপন্যাস হতো। মেয়েদের অনুভূতি নিয়ে বেশী কাজ করতেন। একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুর পর
তিনি লেখালেখি থেকে ধরতে গেলে নিজেকে সরিয়ে নেন। এক অবধূতের সাক্ষাত পেয়ে সংসারকে
প্রায় বিসর্জন দেন সে সময়। অবধূতকে নিয়েও একটি উপন্যাস লিখেছিলেন “অবধূত” নামেই।
টীন এজ প্রেমের উপন্যাস লিখতে আজো তার জুড়ি মেলা ভার।
দুটি প্রতীক্ষার কারণে, নগর পারে রুপনগর, পুরুষোত্তম, শত রুপে দেখা, সোনার হরিণ নেই এই বইয়ের নামগুলো এখনো মনে আছে ......... বাকীগুলো হারানো স্ম্বৃতি।
No comments:
Post a Comment