Friday 9 October 2020

জন্ম_হোক_যথা_তথা – পর্ব দুই (স্পটলাইট – বেগমগঞ্জ)

“রোজী” স্বামী পরিত্যাক্তা ভদ্রমহিলা, বাবার আশ্রিত, দুটো ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন। প্রায় ভাঙা একটি ঘরে থাকতো যেখানে সহজেই দুস্কৃতিকারী প্রবেশ করতে পারে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে, স্বামীর কথা শোনে নাই, গুনাহগার বান্দা, আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিতে, মিডিয়ার আগ্রহ আর জনগনের প্রতিবাদ শেষ হওয়ার পথে, এখন শুরু হবে সামাজিক বয়কট। কোথাও এদের কেউ ডাকবে না, সবাই এড়িয়ে যাবে। খারাপ বাড়ি, খারাপ পরিবার। মেয়ের বিয়ে হওয়াও কঠিন হবে, হয়ত তিন জেনারেশান এই ঘটনা টানবে। আশপাশ দিয়ে যে যাবে, দেখাবে ঐ যে ঐ বাড়ি, ঐ মেয়ের মা ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলে হয়ত খানিকটা রেহাই পেতে পারে । একটা মানুষ কত ভীত ছিলো, বছর ধরে অত্যাচারিত হওয়ার পরও, নাগরিক টিভির সাথে কথা বলার সময় বার বার প্রধান আসামী দেলোয়ারের নাম এড়িয়ে গেছে। নাগরিক টিভির অসুস্থ সাংবাদিক, সস্তা রিকি লেক শো’য়ের মত বারবার জিজ্ঞেস করছে, শুধু এইই করেছে, আর কিছু করে নাই আপনার সাথে? খারাপ কিছু? এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে কে জানে? সাংবাদিকের ত্বরিত মানসিক চিকিৎসার দাবী জানিয়ে রাখছি। ফেড্রিকস্টাড আচ্ছা ফেড্রিক্সটাডে যদি এই বয়সী “রোজী” থাকতো দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাহলে কেমন হতো? সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের মানিতে চলতো, একটা সরকারী ফ্ল্যাটে থাকতো, বসার ঘর, খাবার ঘর, তিনটে শোবার ঘর, ব্যালকনি আর সামনে একটু সবুজ মাঠ, মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট টু লিভ। লিডল কিংবা আলডিতে বাজার করতো, ফ্ল্যাট স্ক্রীণ টিভিতে নেটফ্লিক্স, বছরে দু’বার ভ্যাকেশান যেতো, টাকা কম তাই হয়ত ইউরোপের মধ্যেই ভ্যাকেশান করতো। চিকিৎসা প্রায় ফ্রী আর বাকি সব কিছুতে সাবসিডি। মাসের শেষে কিছু হাতে জমেও যেতো বৈকি। কান্দাহার যদি কান্দাহারে থাকতো “রোজী” তাহলে এতক্ষণে দোররা মেরে কিংবা পাথর মেরে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়া হতো। দোষ-গুন, বিচার-আচার মানে সময় নষ্ট। সাথে রোজী’র মেয়েকেও হয়ত পুতে ফেলতো, কে জানে। "দ্যা স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম" সিনেমাটা যারা দেখেছেন কিংবা বইটা যারা পড়েছেন, সবাই এই বাস্তবটা জানেন। কলেজ জীবনে শংকরের বই খুব পড়তাম। একটা বই ছিলো, “মুক্তির স্বাদ”। এমেরিকা প্রবাসীদের নিয়ে, বড় একটা অংশ ছিলো বাংলাদেশি প্রবাসীরা। শংকর লিখেছিলেন, অনেক পরিবারই এমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলো, বাংলাদেশের ভাল পজিশান ছেড়ে, এমেরিকা যেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারী, দোকানে কাজ ইত্যাদি প্রভৃতি কারণে আবার দেশে ফেরত চলে আসতে চাইতো। স্বামীরা আসতে চাইলেও কোন স্ত্রীই আসতে চাইতো না। হাজার কষ্ট করেও এমেরিকাই পরে থাকতে চাইতো, সামাজিক মুক্তির কারণে। (স্মৃতি থেকে লিখছি) তখন সেই বয়সে না ছিলো প্রবাসের অভিজ্ঞতা আর না ছিলো কিছু নিয়ে ভাবার ক্ষমতা। আজ জানি, “মুক্তির স্বাদ” কি জিনিস। তাই আবারো বললাম, জন্ম যথা তথা হলেই ভাগ্য কাজ করবে নারে পাগলা, জীবন নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট ভূখন্ড, নাগরিকত্ব কিংবা পাসপোর্ট। এই যে বসনিয়া হয়ে লোকে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে, তাদের দোষ দেই না বরং বলি, আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয় ------- দেশে থেকে ইতরামি করার চেয়ে প্রবাসে এসে কাজ করা অনেক সম্মানের

No comments:

Post a Comment