Wednesday 4 January 2012

আল্লাহ হাফেজ আর খোদা হাফেজের ইতিকথা

আল্লাহ হাফেজ আর খোদা হাফেজ নিয়ে ইদানীং ধার্মিক মহলে একটা সুশীল বিতর্ক চলছে। আমরা ছোটবেলায় বিদায় মানে খোদা হাফেজই জানতাম। হঠাৎ ইসলামি জঙ্গীবাদ উত্থানের সাথে নতুন নতুন কিছু শব্দ আর পোষাকেরও আমদানি হলো আমাদের নগর জীবনে। মাথায় নানা ডিজাইনের - বর্নের হিজাব, শাড়ির ওপরে আলাদা ওড়নাতো স্টাইল আইকন ম্যাডামের মাইল ফলক। ছোটবেলায় ছিল শুধু বোরকা আর না বোরকা। মডারেটেড মুসলিম হওয়ায় বাকি পোষাকগুলো তালিকায় যোগ হয়েছে। আর হয়েছে কিছু নতুন শব্দ, রামজানুল কারীম, আল্লাহ হাফেজ ইত্যাদি।

আনিসুল হক তার “ভালবাসা – মন্দবাসা” উপন্যাসে এই নিয়ে একজন পরহেজগার ব্যাক্তির রেফারেন্সসহ চমৎকার ব্যাখা তুলে ধরেছেন। ব্যাখাটি সবার সাথে ভাগ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। ব্যাখাটি হলো এরকমঃ

আল্লাহ যিনি, খোদাও তিনি তাই খোদা হাফেজ বললে কোন অসুবিধা নাই। খোদা হাফেজ আসলে ইরানি কালচার। ইরানি সুফি সাধকরা এই দেশে এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন। আমরা তদের কাছ থেকে এইটা শিখেছি। খোদা ইরানি শব্দ, পারসি। আর আল্লাহ আরবী। কিন্তু আরব দেশে আল্লাহ হাফেজ বা খোদা হাফেজ কোনটারই প্রচলন নাই। ইসলামে দেখা হলে কিংবা বিদায় নেয়ার সময় বলতে হয়, আসসালামু আলাইকুম। এর মানে আপনার ওপরে শান্তি আসুক। এই কথাটাও খুব সুন্দর। এখন কেউ যদি আরবী কালচার ফলো করতে চায় সে বলবে আসসালামু আলাইকুম। আর যদি কেউ পারসি কালচার ফলো করতে চায়, সে বলবে খোদা হাফেজ। কিন্তু আল্লাহ হাফেজটা হলো জগা খিচুড়ি। যেমন আমরা কি বলি গুড সকাল বা শুভ মর্নিং? বললে বলতে হবে শুভ সকাল বা গুড মর্নিং। আর আসসালামু আলাইকুম কথাটার মধ্যে কোথাও আল্লাহ বা খোদা নেই। এর মানে শুধুই, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। খোদা হাফেজ মানে আল্লাহ হেফাজতকারী। উনি হেফাজতে রাখবেন। আমরা যখন নামাজের নিয়ত করি, তখন বাংলায় করারও বিধান আছে। আল্লাহ যদি বাংলা বোঝেন তাহলে খোদা কেন বুঝবেন না?

আনিসুল হকের ব্যাখা পড়ে আবারো অনুভব করলাম সূর্যের চেয়ে বালির তাপ সবসময়ই বেশি থাকে।

তানবীরা

০৪/০১/২০১২

1 comment: