Monday 30 May 2016

মাছরাঙা টিভি আর জিপিএ কান্ড




ফেসবুকে আজকে সারাদিন গেলো জিপিএ ফাইভের ভিডিও’র তোলপাদেখে। অনেকেই দেশের পড়াশোনার মান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে স্ট্যাটাস লিখেছেন। আবার অনেকেই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা, এথিক্স, সাংবাদিকতার নীতিমালা নিয়ে লিখেছেন। আমি ভাবছি সমস্যাটা কী আজকের? নাকি ফেসবুক হওয়াতে সমস্যা ডিটেক্ট করা সহজ হয়েছে আমাদের জন্যে? নাকি সাংবাদিক করাতে কাজটি অন্যায় হয়েছে, নিজেরা করলে ঠিকাছে?

নিজের এস।এস।সি, এইচ।এস।সির এর রেজাল্টের কথা ভাবছি। যেদিন রেজাল্ট বের হতো, কখনো কথা না বলা প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের বাবা মা, বাবা মায়ের বন্ধুরা কে না রেজাল্ট জানতে চাইতো। বেশীর ভাগই যাই রেজাল্ট হোক না কেন, শুভেচ্ছা জানাতেন, অনেকে আবার তার নিজের কে কে আমার থেকে কতো বেশি ভাল করেছে তার লম্বা ফিরিস্তি দিতেন। এ ছাড়া দু চার জন অতিরিক্ত শিক্ষিত, দায়িত্বশীল, পাকনা মুরুব্বী অবশ্যই থাকতেন, যারা এস।এস।সির রেজাল্ট শোনার সাথে পাস কোর্সে পড়ানো হবে, এমন সব ঐতিহাসিক ঘটনার প্রশ্ন, এনসাইক্লোপেডিয়া, এন্টার্কটিকা জাতীয় বানান, ট্রান্সলেশান, বাগধারা, সাধারণ জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে দিতেন। মুখের ওপর প্রমান করে দিতে চাইতেন, কত কম জেনে আমরা সত্তর পচাত্তর ভাগ নম্বর নিয়ে পাশ করেছি, আমাদের বয়সে তারা কত বেশী জানতেন। আমি অবশ্য ফাইটার ছিলাম, চিঁ চিঁ গলায় বলার চেষ্টা করতাম, এগুলো তো সিলেবাসে ছিলো না, তখন আর এক দফা অপমান, সিলেবাসের বাইরে বোকা গল্পের বই পড়ে এতো সময় নষ্ট করছি, কাজের বই পড়লে কতো কাজ হতো। আত্মীয়দের অপমান শেষ হলে শুরু হতো বাবা মায়ের রোষ। কেন গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে পরে থাকি, জ্ঞানের বই পড়ি না। আমি জানি, আমার মত এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমাদের সময়ে আরো অনেকেই হয়েছে।

এটাতো আজকের অসুখ না। মুখের ওপর অপমান করা বাংলাদেশীদের চিরন্তন রোগ বরং ওটা না করতে পারলেই তাদের কষ্ট লাগে। সেটা ছেলে মেয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট হতে পারে, মেয়ের বিয়ে নিয়ে হতে পারে, ছেলের চাকরী কিংবা কোরবানীর গরু নইলে ঈদের জামা। বাড়িতে ঢুকেই প্রথম প্রশ্ন হতো, তোমার রোল নম্বর কত? ক্লাশে কয়জন ছাত্র? আজকে এতো নীতির কপচাকপচি, এতো তাড়াতাড়ি আমরা বদলে যাবো! আমি হলফ করে বলতে পারি, আমাদের জেনারশানের আমরা এ অপমান খেয়েই বড় হয়েছি।


প্রতিবার বইমেলাতেও টিভি ক্যামেরা সাথে নিয়ে এই ফাজলামোটা করা হয়। বেশ অনেক আগেই লিখেছিলাম এই নিয়ে। লেখার লিঙ্ক http://www.amrabondhu.com/tanbira/6355

No comments:

Post a Comment