Monday 16 October 2017

সরকারী উপঢৌকন /// এবিউসিভ সম্পর্ক

ইন্টার্ণি শেষে “ফিলিপ্স” এ চাকুরী হলো। ছুটিতে দেশে গেলাম। সব সহকর্মীদের জন্যে দেশীয় রেওয়াজ মেনে “উপহার” আনলাম। সবাই বেশ খুশী খুশী মনে গ্রহণ করলো। আদতে কি করেছে জানি না, কিন্তু সামনে সবাই বিগলিত মুখ করলো। যেমন করে ইউরোপীয়ানরা, মার্জিত ব্যবহার, সবার সাথে, কম বেশী সব পরিস্থিতিতে। যখন “ম্যানেজার”কে উপহারটা দিতে গেলাম, তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখান করলেন। অথচ তার জন্যেই সবচেয়ে দামী উপহারটা আনা। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরা অবস্থা প্রায়। আমার “নিরাশ” মুখ দেখে তিনি ড্রয়ার থেকে “CAO (Collective Labour Agreement)” বইটি বের করলেন। তারপর নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা খুলে দেখালেন, সহকর্মী’রা চাইলে হয়ত “উপহার” আদান প্রদান করতে পারে কিন্তু ম্যানেজার – ডিরেক্টরা চাইলে উপহার গ্রহন করতে পারে না, আইন করে নিষেধ করে দেয়া আছে। আগে তো Collective Labour Agreement বইয়ে থাকতো, এখন ডিজিটালি থাকে, বিশ্বাস হয় না, কোম্পানী’র ওয়েবসাইট গুলো চেক করে দেখুন। আজকাল তথ্য আর গোপন ব্যাপার নয়। বোতাম চাপলেই আপনার দোড় গোড়ায় হাজির।


এসব নিয়ম শুধু ফিলিপ্সের একান্ত ভাবনা নয়। বড় বড় সব কোম্পানীই মোটামুটি এই নিয়মগুলো পালন করে চলে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র তো আরো সতর্ক। আর এসব “নীতি” ইউরোপকে স্বচ্ছ ইউরোপ বানিয়েছে আর “নীতিহীন” এশিয়া – আফ্রিকাকে বানিয়েছে দুর্নীতি তে চ্যাম্পিয়ন। ছোট থেকে বড়, দেশে কিংবা বিদেশে সবর্ত্রই একই হাল।


উপহার গ্রহন আইন করে কেন নিষেধ করা হয়েছে তা বোধহয় আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি, নয় কি? প্রধান বিচারপতি কে নিয়ে নাটক শেষ হতে না হতেই চার জন উপাচার্যের নাটকীয় বলিদান। ক্ষমতার অপব্যবহার, লোভ, দুর্নীতি আর পদ লেহন রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আজ বিশ্ববাসী’র কাছে এক নির্লজ্জ উদাহরন হয়ে রইল। তাও এই ডিজিটাল যুগে। আমলাতন্ত্র দাঁড়িয়েই আছে দেয়া আর নেয়া’র ওপরে। ব্রিটিশ’রা ভারতবর্ষ ত্যাগ করেছে প্রায় আশি বছর হতে চললো কিন্তু ভারতবর্ষের আমলারা এখনো ব্রিটিশ সিস্টেম ত্যাগ করতে পারে নি। তারা পা চাটাচাটি আর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আজও তুমুল ব্যস্ত।

12-10-17



কোন মানুষ যখন কোন “এবিউসিভ” সম্পর্কে দিনের পর দিন জড়িয়ে থাকে, একটা সময়ের পর তার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মস্তিক যদি তাকে সংকেত পাঠায়ও কিন্তু তার মন থাকে স্থবির। কষ্ট পায়, মানতে পারে না আবার শেকল ভেঙে বের হতেও পারে না। কি করবে আর কি করবে না, ভেবেই সারা। যারা শেকল ভাঙতে পারে তারা নিসন্দেহে সাহসী। যারা আপোষ করে তারা সুখী। যারা দুয়ের মাঝে আটকে থাকে, তারা দীন। জাগতিক যত প্রাচুর্য্যই থাকুক, তাদের জীবন আটকেই থাকে – আটকেই থাকে – আটকেই থাকে, করুণা তাদের জন্যে। এক বুক, এক গলা, এক আকাশ, এক ভরা পূর্নিমা, এক সমুদ্র করুণা।

সাহসীরা আটকে থাকে না, তারা পেছনে তাকায় না, সামনে আগায়। যে আটকায়, সে সারা জীবনের জন্যেই আটকে থাকে।  “সিক্রেট সুপারস্টার” সিনেমায় মা’টি যেমন, জানছে – বুঝছে কিন্তু আটকে আছে।  কোথায় – কিসে আটকে আছে – কে জানে তার উত্তর? এই মহাবিশ্ব, ঐ অন্ততকাল নাকি সৌরজগত। জবাব দাও – কেউ কি জানো?

প্রকৃতি করুণাময়প্রকৃতি অনেক সময় নিজে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কিছু সমস্যার নিজের মত সমাধান করে দেয়সে সমাধান রুঢ় হতে পারে, মায়াময়ও হতে পারে কিন্তু তখন আর মানুষের হাতে কিছু থাকে না।

১৫/১১/২০১৭


No comments:

Post a Comment