ফরিদ ভাই সব
সময় বিনয় করে বলেন – তিনি গদ্য লিখতে পারেন
না, তার বিচরণ শুধুই কবিতা’য়। “আমার গল্প” লেখা’র পর আর এই কথা বাজারে কাটবে না। সুন্দর সাবলীল গল্পটি
শুধু লেখেনই নি, বাবার কথা দিয়ে গল্পটি শুরু করে আবার
বাবার কথা দিয়েই গল্পটি শেষ করেছেন। বাংলাদেশের হাজার হাজার আরও
পরিবারের মত বির্বণ বিষন্নতায় মাখা তার গল্পটিও। কোমলমতি, ধর্মপ্রাণ মানুষরা অর্থের লোভে নিজের ভাইকে খুন করে ভাইয়ের এতিম
বাচ্চাদের বাড়ি ছাড়া করিয়ে দিয়েছে। জমিজমার লোভে আপন রক্তকে আহত করার কত ইতিহাস যে
লুকিয়ে আছে এই বাংলার পাতায় পাতায়। ইতিহাস সাক্ষী মুঘল সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে অজ
পাড়া গা, লুকিয়ে আছে অসংখ্য রক্তাক্ত প্রান্তর। না, সিনেমার নায়কদের মত গান গেয়ে,
কিংবা হাতের আংটি দেখে সাদুল্লাহ তার পরিবারকে খুঁজে পাননি, কিংবা কোন বড়লোকের
কন্যার সাথে বিয়ে করে রাতারাতি ধনীও হয়ে যান নি। অসম্ভব বাস্তবতায় কায় ক্লেশে,
দুঃখে সন্তানদের নিয়ে কেটেছে তার গোটা জীবন।
আমার গল্প ছবি বাদ দিয়ে
চারশো চৌদ্দ পাতার বই হলেও আমার মনে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এর কি দ্বিতীয় পর্ব আসবে?
খানিকটা অসম্পূর্ণ নয় এই বইটি? ছোট চাচার খোঁজ কি পরে কখনও
পেয়েছিলেন কি না সেটা অজানা রয়ে গেলো। ছোট ভাইয়ের কথা
কয়েকবার বইটিতে এলেও, বোন একদম অনুপস্থিত। শৈশব, কৈশোর, যৌবন কোথাও বোনের কোন
উপস্থিতি নেই। নিজের প্রেম, লেখালেখি, অসচ্ছলতা, পরিবার নিয়ে
এভাবে খাপছাড়া খোলাখুলি লিখতে হয়ত খুব কম জনই পারে। পরিবারের কেউ বইটি পড়ে থাকলে
হয়ত মনোমালিন্যের কারণ হতে পারে। আত্মজীবনী লেখার এই একদিক, নিজের কথা বলতে গেলে
সাথে আরও অনেকের কথা বলতে হয়।
প্রেম প্রণয়
অংশে কবিতার সংজ্ঞাটা আমার অসাধারণ লেগেছে। কবিতা আসলে কী?
বিশাখার
ভাষায়ঃ “যা কখনো কবিতায় বলা হয় না। কিন্তু যেখানে তার সকল আয়োজন থাকে।“
ফরিদ কবিরের
দৃষ্টিতেঃ “আমরা যা বলি? নাকি যা কখনো বলি না? কিংবা যা কখনো বলা হয় না। অথচ
যেখানে না বলা কথার সব আয়োজন থাকে।
কবিতাও আসলে
প্রেমেরই মতো। কিংবা প্রেমও অনেকটা কবিতারই মতো।“
কবিতা যেমন
ভর করতে হয়, প্রেমও তাই, হতে হয়। চেষ্টা করে যেমন কবিতা লেখা যায় না, জোর করে কারো
সাথে প্রেম করা যায় না। দুটোই হৃদয় থেকে আসতে হয়।
পুরো
বইটিতেই বাস্তবতা আর সংগ্রামের নিদারুন বর্ণনা। দুঃসময়ে এই পৃথিবীতে কেউ পাশে থাকে
না সেটা কে আর না জানে। দুঃসময় কেটে গেলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে হয়, ভুলে গেছি,
ভুলে গেছি অভিনয় করতে হয়।
বারবার
বইটিতে লেখা আছে, অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে আর কখন ও ফেরত দিতে পারেন নি কিন্তু
আবার এও লিখেছেন সে সময়ে ঢাকায় খুব কম রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে খেতে যান নি। (বটে,
খাওয়া গলা দিয়ে নামলো কিভাবে :D) চাকুরী ও টাকা পয়সার অসচ্ছলতা থাকা সত্বেও বেশ
ডেয়ারিং জীবন যাপন করেছেন বলা চলে। শ্রীলঙ্কা ভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে অনেকটা
বিভূতিভূষনের “চাঁদের পাহাড়” এর সাথেই তুলনা করা চলে।
বইয়ের কিছু
কিছু শব্দ, যেমন বুক ধড়পড়, এগুলো উচ্চারণ গত ত্রুটি না মুদ্রণ প্রমাদ ধরতে পারি
নি।
গরমের ছুটিতে
বইটি পড়ে শেষ করলাম, অসাধারণ অনুভূতি হয়েছিলো। ইতিহাস, আত্মজীবনী, সত্য ঘটনার ওপর
আধারকৃত লেখা আমাকে সব সময় অনেক বেশি আর্কষণ করে।
১২/০৮/২০১৮
No comments:
Post a Comment