Monday 27 August 2018

চন্দ্রমুখী

খুব সম্ভব প্রথম আলোতে রবি’র লেখা একটি ছোট গল্প প্রথমে পড়ি, যতদূর মনে পড়ে তখনও হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন। চমকে উঠেছিলাম, একদম হুমায়ূন আহমেদের ধারা পুরোই অনুকরণ। সেই গল্পের রিভিউ তে আমি লিখেছিলাম, এই ভদ্রলোক তো হুমায়ূনে আহমেদে’র নায়িকার নামও নিয়ে নিয়েছে। একজন তখন মন্তব্যে জানালো, না, সত্যিই ওর বউয়ের নাম নীতু। তারপর কিছু দিন পরেই রবি’র সাথে আলাপ হলে, আমার স্বভাব মত প্রথম আলাপেই, রবিকে আমি বলেও ছিলাম সে কথা। রবি ব্যাপারটা সহজ ভাবে নেয় নি। না, নামের ব্যাপার নয়, রবি’র অগোচোরে রবি’র সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। আমি বললাম, পত্রিকায় গল্প ছাপা হলে আলোচনা ত হবেই, সব জায়গায় কি আপনি থাকবেন নাকি? তখন থেকেই আমাদের আলোচনা অম্ল-ক্ষারে যায়, কখনই আর মধুর দিকে বাঁক নেয় নি। হুমায়ূন আহমেদ নেই কিন্তু তার যোগ্যউত্তরসূরী রেখে গেছেন – আসিফ এন্তাজ রবি।
এবারের বইমেলায় এসেছে রবি’র লেখা উপন্যাস “চন্দ্রমুখী”। রবি’র ক্লাশমেট গৌতমের পড়া হয়ে গেলে আমাকে উপহার দিয়ে গেছে বইটি। যথারীতি, কড়া জ্বরের সহজ পাচ্য পথ্য হিসেবে এক বসাতেই মেরে দিলাম। গল্পের নায়িকার নাম মুনা, নায়কের নাম ফরিদ আর নায়কের মায়ের নাম ফরিদা। আশাকরি এখানে আর বিশেষ না বললেও চলে। হূমা আহমেদ রবি।
ভালবাসা বিশারদ রবি নিজের অভিজ্ঞতা বেশ জুত করে লিখেছেও,
“ চাকরি হচ্ছে স্ত্রীর মতো আর ব্যবসা নতুন প্রেমিকা। একটায় দায়িত্ব লাগে, আরেকটাতে নিবিষ্ট মনোযোগ।“
মুনা এবং ফরিদের প্রেমেও যথারীতি পাঞ্জাবী ছিলো যার রঙ ফরিদের পছন্দ হয় নি তাই এখানেও মুনাকে পাঞ্জাবী পুড়িয়ে ফেলতে হলো। ফরিদের বাবা আর পুলিশ থানা’র বর্ণনা বলাই বাহুল্য। এরকম হুবহু মিলিয়ে লেখা সহজ কর্ম কিছুতেই নয়।
উপন্যাসের শেষটি আমার ভাল লেগেছে, সত্যি বললে বেশ ভাল লেগেছে। ফরিদকে এমন জায়গায় রাখা হলো যেখান থেকে জীবন মুনার কাছেও যেতে পারে কিংবা অন্য কোথাও। পাঠক যেভাবে চান সেভাবেই উপন্যাসের শেষটি ভেবে নিতে পারে। বাস্তবতার নিরিখেই আমি ভেবে নিয়েছি, ফরিদ সিএনজি খুঁজে পেয়েছে এবং কমিউনিটি সেন্টার পার হয়ে বাড়ি চলে গেছে। পরিশিষ্টটি পড়ে মনে হলো, এসব ভাবাবেগ কেন শুধু বইয়ে থাকে। পুলিশ-ডিবি দিনরাত মানুষ তুলে গুম করে দিচ্ছে, গুম কি শুধু পেশাজীবি অপরাধীরা করে? তারপরও পরিশিষ্টটি আরও একটু বড় হতে পারত। চন্দ্রমুখী বইটিও আরও একটু বড় হতে পারত। এক ঘন্টা বিশ বা ত্রিশ মিনিটে একটা বই পড়া হয়ে গেলে, বই পড়ছি, বই পড়ছি আমেজটা কোথায় যেনো কেটে যায়।
আমাদের বাংলার ম্যাডাম মকবুলা মঞ্জুর, হুমায়ূন আহমদে সম্বন্ধে বলেছিলেন, সহজ কথা গুলো সহজ ভাষায় লেখা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। রবি’কেও তাই বলবো, হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা তার পায়েও লুটাক, সহজ ভাষায় আরও সহজ গল্প-উপন্যাস লেখা হোক। পাঠকরা সারাদিনের যন্ত্রণা-বঞ্চনা থেকে রবি’র লেখায় দু দন্ড মুক্তি খুঁজে পাক, কেনো যাবে সবাই সব এত মাথা খাঁটিয়ে কঠিন কঠিন বই পড়তে। যারা নিবিষ্ট পাঠক তারা হাতের কাছে বই পেলেই উলটে পালটে কখনও মাঝ থেকে, কখনও শেষ থেকে পড়তে থাকবে কিন্তু যারা অ-পাঠক, মোবাইল নিয়ে টেপাটেপি জেনারেশান তাদের পাঠক করে তুলতে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন কিংবা আসিফ এন্তাজ রবি’র জুড়ি নেই। বাংলা সাহিত্যে আমি রবি’র উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখক পরিচিতি যে এত আর্কষনীয় হতে পারে বইটি হাতে না নিলে আমি জানতেই পেতাম না। পরে অবশ্য জুড়ে দেয়া আছে, লেখক নিজেই নিজের ঢোল পিটিয়েছেন। বইটি না পড়লেও লেখক পরিচিতিটি পড়া অবশ্যই পাঠকদের কর্তব্য। নির্ভুল ছাপায় বইটি পড়তে বেশ আরামদায়ক।

No comments:

Post a Comment