Monday 4 March 2019

#এনআনসেন্টলেটারটুমাইডিয়ারেস্টডটার

পার্ট টু
মেঘবালিকা, ও মেঘবালিকা
কত স্বপ্ন কথা ছিল তোমার সাথে
অথচ ক্লান্তিহীন পথচলা থামেনা থামেনা
বেড়ে চলে জীবনের নীরবতা
বছর ঘুরে আবার এসেছে তোমার জন্মদিন, তুমি এবারও স্কুল ট্রিপে আর আমি বসে তোমার কথা ভাবছি -----তোমাকে চিঠি লিখছি। এখনও আশা করছি, একদিন তোমার বাংলা পড়াটা ভাল হবে, তুমি এই চিঠি গুলো পড়তে পারবে।
জন্মদিন তোমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় অফিশিয়াল এজেন্ডা মেইনটেইন করো তুমি, কে কে তোমাকে উইশ করলো কিংবা করলো না, কে কে তোমাকে উপহার দিলো নাকি দিলো না। কতক্ষণে কে তোমাকে উইশ করবে তা নিয়ে মহা ব্যস্ততায় তোমার দিন যায় আর আমাকে একটু পর পর শুনতে হয়, আমি অনেক স্পেশাল, হ্যাঁ না মা? আমাকে সবাই অনেক ভালবাসে, হ্যাঁ না মা? মেয়ের উজ্জল মুখের দিকে চেয়ে সেই মুহুর্তে বলা যায় না, এই পৃথিবীর প্রতিটি বাচ্চাই তার পরিবার, নানা-নানী, দাদা-দাদী, ফুপু, মামা, খালাদের কাছে ভেরি ভেরি স্পেশাল।
ফিরে এসে মায়ের ফেসবুক চেক করবে, কে কে উইশ করে পোস্ট দিলো, কে দিলো না, কেন দিলো না, সব জানতে চাওয়া চাই। গতবারের স্ক্যানিয়ে বাবা ধরা পরলো, বাবার টাইম লাইন চেক করে অভিমানী গলায় বললো, তুমি আমার জন্মদিন নিয়ে কিছু বললে না!
রাত বারোটা বাজার দশ মিনিট আগে থেকে ফোন হাতে নিয়ে উত্তেজনায় রীতিমত কাপতে থাকে, একবার নিউইয়র্ক থেকে ফোন আসতে তিন-চার মিনিট দেরী হলো, বার বার মোবাইল দেখছে আর বলছে, হয়ত ভুলে গেছে, মা, আমি করি?

আমি আশ্বাস দিলাম, কিছুতেই ভুলতে পারে না, মনে হয় ঘড়ি স্লো, কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। উইন্টার টাইমিং এর কারণে এই ফোনটাই সব চেয়ে আগে আসে। নিরুপায় হয়ে আমি বললাম, আচ্ছা আচ্ছা কর। ফোন পেয়ে বম্মা, বার বার সর‍্যি বললো। আর আমাকে বললো, বিশ্বাস করো, আমি ফোন হাতে নিয়েই ঘুরছি, বারোটা হলেই ফোন করবো, জাস্ট ভাবলাম, কথা বলতে বসার আগে একটু গুছিয়ে বসি।
লাস্ট ইয়ার স্কুল ট্রিপে হোস্ট ফ্যামিলির সাথে ছিলে, তারাও তোমার জন্মদিন সেলিব্রেট করেছে, স্কুল থেকেও তোমার জন্মদিন সেলিব্রেট হলো তারপরও কত আয়োজন তোমার। বম্মা’র হোয়টসএপ নেই আর মেঘের নেই ম্যাসেঞ্জার। হোস্ট ফ্যামিলির ওখানে বসে স্কাইপ ডাউনলোড করে বম্মাকে কল করেছো, একা ফ্ল্যাটে বম্মাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছো তুমি।

তুমি বড় হয়ে ডাক্তার হবে না অর্থনীতিবিদ, কিংবা কেমিস্ট না সেলসে যাবে তা নিয়ে আমি ভাবি না। একটা কিছু তো হবেই, জীবন চলে যাবে। সেসব আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি চাই পরিপূর্ণ একজন মানুষ হও। যতটা আনন্দ নিয়ে ঘুমাতে যাবে ঠিক ততোটা আনন্দ নিয়েই যেনো ঘুম থেকে জাগো। ঘুম থেকে জেগে ভোর দেখে যেনো তোমার মনে হয়, জীবনটা কত সুন্দর, বেঁচে থাকা কত মধুময়।
শুভ জন্মদিন মা। ঠিক এই উত্তেজনা, আনন্দ, পরিতৃপ্তি আর উচ্ছাস নিয়ে যেনো অনন্তকাল ঘুরে ফিরে প্রতিটি জন্মদিন তোমার জীবনে আসে বাচ্চা। হাজার বছর আয়ু হোক তোমার।

No comments:

Post a Comment