Wednesday 3 April 2019

“দেবী” ও “ডুব” বৃত্তান্তঃ

অনিমেষ আইচঃ “রানু”র স্বামী চরিত্রে তিনি যথার্থ। সারাক্ষণ প্যান্ট-শার্ট পরে তৈরী কখন বউকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। রাতেও বেচারা কাপড় বদলায় না। পকেটে সবসময় টাকা পয়সাও রেডী আছে। আজকালের যুগে যেখানে প্রায় কারণ ছাড়াই, যেমন, বউয়ের নাক পছন্দ হয় না, কিংবা বউ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে, কিংবা বউয়ের শাড়ির রঙ পছন্দ হয় না অজুহাতে ছেলেরা বউ ছেড়ে দেয়, সেখানে সে বিরল প্রজাতির স্বামী তো বটেই। “আজকাল” কথাটা বললাম, সিনেমায় মোবাইল এবং ফেসবুক এনে অরিজিন্যাল গল্পটাকে মর্ডানাইজ করা হয়েছে।

জয়া আহসানঃ আমার খুব পছন্দের মানুষ, স্টাইল আইকন। “রানু” চরিত্রটি আধা গ্রাম্য একটি মেয়ের ছিলো (অনেক আগের পড়া বইটি, স্মৃতি থেকে বলছি)। প্রিন্টের শাড়ি – ব্লাউজ পরে, লেপ্টে কাজল দিলেই পুরোদস্তুর “আরবান” লুক বদলে ফেলা যায় না! আমার ব্যক্তিগত ধারনা, জয়া এই চরিত্রটি নিজে না করে অন্য কাউকে দিয়ে করালে আরও ভাল করতেন। সুচিত্রা সেনকে যেমন পুরো গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রে ঠিক ভেবে ফেলা যায় না, জয়াকে নিয়েও তেমনটিই। তবে এটা পুরোই হয়ত আমার সমস্যা।

চঞ্চল চৌধুরীঃ “আয়নাবাজি” সিনেমাটা ততখানি ভাল না লাগলেও চঞ্চল চৌধুরীকে অসাধারণ লেগেছিলো। মনপুরাতেও লেগেছিলো। এখানেও লেগেছে। তবে অনেক কয়টি মিসির আলী বই পড়াতে মিসির আলী ভাবলেই আরও একটু বুড়ো অধ্যাপক চেহারা কল্পনায় আসে। তারপরও তাকে খারাপ লাগে নি।

শবনম ফারিয়াঃ “নীলু” চরিত্রে এই মেয়েটিকে সবদিকে অসাধারণ লেগেছে। পার্ফেক্ট কাস্টিং।

ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে ইউটিউবে “ডুব” পেয়ে হতবাক আমি ইউরেকা ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। ঝকঝকে প্রিন্ট। বেশ কিছুক্ষণ দেখে ফেললাম কিন্তু কোন আওয়াজ নেই। আমরা যারা চুরির ওয়েবসাইটে সিনেমা দেখে অভ্যস্ত, তারা জানি, জীবন প্যারাময়। বেশ কিছুক্ষণ সামনে টেনে দেখলাম শেষের দিকে কিছু কথা শোনা যায়। সন্দেহ হলো, ঠিক ঠিক “ডুব” কিনা, আমার ফেসবুকের এক মুভি ফ্রীক বন্ধু আপাকে লিঙ্কটা দিয়ে চেক করতে বললাম, তিনি “ডুব” নিয়ে বিশাল এক রিভিউ লিখেছিলেন। তিনি চেক করে আমাকে সন্দেহমুক্ত করে জানালেন, ইহাই উহা। আমি বললাম, সমস্যা কি? সাউন্ড প্রব্লেম? ঠিক করে আপ্লোড করে নি, চোরাই? তিনি আবারও আশ্বস্ত করে জানালেন, না, ইহাই মূল সিনেমা।

আমার একটাই শব্দ মনে হলো, ক্র্যাপ।

যাই হোক, আরও আধ ঘন্টা আগে- পিছে ধস্তাধস্তি করিয়া সেদিনের মত ক্ষান্ত দিয়া পরে একদিন দেখিয়া লইব ভেবে বিলাসীর খুঁড়ো মুডে অন্য সিনেমা নিয়া বসিলাম। তারপর আবারও একদিন পিঠ শক্ত করিয়া, আজকে হ্যাঁ আজকেই ভেবে ডুবাইতে বসলাম, এবং যথারীতি আধ ঘন্টা পর বন্ধ করিয়া ডান হাতখানি বাম গালে রাখিয়া ভাবিতে বসিলাম, জাতি কি আমার এই অপারদর্শিতা মানিয়া লইবে?

না, ডুবের নির্মাতা, কলাকৌশলীদের প্রতিভা নিয়ে আমার কেন গোটা জাতিরই কোন সন্দেহ নেই। তবে, এই জাতি এই “চার্লি চ্যাপলিন” মার্কা আধা মূকাভিনয় সিনেমা দেখার জন্যে কতটুকু উপযুক্ত হয়েছে সে নিয়ে সন্দেহটা জাতিভুক্ত হিসেবে আমার নিজের প্রতি নিজের রয়েই গেলো।


No comments:

Post a Comment