Wednesday 19 August 2020

“ব্লাইন্ড স্পট”

 

পশ্চিমাদের একটা সুন্দর জিনিস আছে, ভেতরে ভেতরে তারা যতই পাজি হোক, কাজগ-পত্রে “পলিটিক্যালি কারেক্ট” থাকবে। ভয়ংকর সব জিনিস তারা প্র্যাক্টিস করবে কিন্তু এর কারণ-বারণ সব উদাহরণ সহ সুন্দর করে নথিপত্রে দলিল করে রাখবে।

 

প্রিন্সেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সামাজিক মনোবিদ এমিলি প্রোনিন তার আর দুই সহকর্মী ড্যানিয়েল লীন আর লী রোস “ব্লাইন্ড স্পট” শব্দটি তৈরী করেন। মস্তিস্কের ভেতরে তথ্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার অনেক আগেই চাক্ষুষ তথ্য অপটিক নার্ভ দিয়ে চোখের দিকে ছুটতে শুরু করো। সোজা বাংলায় দাঁড়ায়, মাথা কাজ করার অনেক আগেই চোখ কাজ করতে শুরু করে। অপটিক স্নায়ুর একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে যার কোনও গ্রহণ করার মত শক্তিসম্পন্ন কোষ নেই (যেখানে চোখের কাছে যেয়ে অপটিক স্নায়ুটি শেষ হয়ে যায়) এবং এর ফলস্বরূপ, সে আর তথ্য গ্রহণ করতে পারে না। যার ফলাফল হলো, “ব্লাইন্ড স্পট”।

 

“ব্লাইন্ড স্পট” অথবা “আনকশাস বায়াসেস” = “অবচেতন পক্ষপাত” হলো এক ধরনের মানসিক বৈকল্য যা প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ তথ্য আমরা জানতে পাই তা দিয়ে আমাদের জ্ঞান বা অনুভূতি তৈরীতে সাহায্য করে। যেকোন ঘটনায় আমরা যখন কোন সিদ্ধান্ত নেই, সেখানে এর প্রভাব পরে।

 

একটিকে বলা হয়, “The halo effect”- প্রথম দর্শনের মুগ্ধতাকে আমলে নিয়ে যখন কারো সম্পর্কে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অন্যটি “The horns effect” – প্রথম দর্শনের বিরূপতাকে ভিত্তি করে যখন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অনেক সময় “কনর্ফামেশান বায়াসেস”, “হালো আর হর্ন” ইফেক্টকে আরো শক্তিশালী আর চাঙ্গা করে তোলে।    

”কনর্ফামেশান বায়াস” হলো যখন আমরা আমাদের বিশ্বাসকে সমর্থন করে এমন প্রমাণের সন্ধান করি এবং এর বিপক্ষের প্রমাণগুলোকে উপেক্ষা করি।

অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এমন তথ্য অনুসন্ধান করতে ভালবাসে যা তাদের বিশ্বাসকে নিশ্চিত করে এবং এমন তথ্য উপেক্ষা করে যেটা তার পছন্দের বিপক্ষে যায়।

যাকে আমরা সহজ ভাষায় “ভুল” বলি, বিজ্ঞান এটিকে “ব্লাইন্ড স্পট” বলে। আমাদের অচেতন মন, না জেনেই নব্বই ভাগ  সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি সেকেন্ডে এগারো মিলিয়ন তথ্য দিয়ে আমাদের মাথা বোঝাই হয়, তাদের মধ্যে থেকে কেবল চল্লিশটি আমরা ব্যবহার করতে পারি। অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আমরা অদ্ভূতভাবে সংক্ষিপ্ত রাস্তায় জ্ঞানগর্ভীয় অনুমানে পৌঁছাই। আমরা না জেনেই অবচেতন পক্ষপাত ঘটাই। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ সিদ্ধান্তই আমাদের অবচেতন মনের দ্বারা নেওয়া হয়।  

Assume = ass – u – me

“ব্লাইন্ড স্পট” নিয়ে জীবন-যাপন আমাদেরকে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে ফেলতে পারে, একই দৃষ্টিকোণ, একই সিদ্ধান্ত, মানে হলো একই ফলাফল।

 

ফুটনোটঃ ওপরের তথ্যগুলো অফিসের পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডের ভাষান্তর আর কিছু অন্তর্জাল থেকে নেয়া। এমন একটি দেশ আমি চিনি যার প্রায় পচাঁশি ভাগ মানুষ সিভিয়ার “ব্লাইন্ড স্পট” সিনড্রোমের পেশেন্ট। দেশটির নাম জানতে চাইবেন না, নাম বললে আর কল্লা থাকবে না।

 

১৯/০৮/২০২০

No comments:

Post a Comment