Saturday 5 February 2011

মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো

মাঝে মাঝে তিতলি আর সায়ানের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়ে যায়। পরে ঝগড়ার কারণ দুজনের একজনও খুঁজে পায় না। কখনো খুঁজে পেলেও অবাক লাগে এটা কী এতো তীব্র অভিমানের কোন ব্যাপার ছিল? তিতলি আর সায়ানের মাঝে ঝগড়া হয় কথাটাও বোধ হয় পুরো সত্যি না। ঝগড়া এক তরফা তিতলিই করে। সায়ান শুধু ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে যায়। কিন্তু সে মুহূর্তে সায়ান যা বলে তিতলি তাতেই আরো রেগে যায়। সেটাকেই উলটো করে ধরে, উলটো বকে যায়। বোঝাতে বোঝাতে একটা সময়ের পর ক্লান্ত হয়ে সায়ান থেমে যায়, তিতলিও বকে বকে ক্লান্ত হয়, কাঁদে। দু চারদিন চুপ করে থাকে, মাঝে মাঝে কথা, ম্যাসেঞ্জার, ফোন সব দরজা বন্ধ করে রাখে সায়ানের সাথে। সময়ের সাথে রাগের তীব্রতা কমে গেলে আবার মিস করতে থাকে তার সাথী তার বন্ধুকে, তারপর আস্তে আস্তে আবার নরম হয়। সায়ানের মনে হয় দূরত্ব এ ঝগড়ায় বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সায়ান ব্যস্ত চাকরী নিয়ে, তিতলি পড়াশোনা নিয়ে। সময়ের পার্থক্য আর আছে ব্যস্ত ঢাকার অসহ্য যানজট। শহরের মধ্যে সামান্য একটু পথ অতিক্রম করতে প্রাণান্ত হতে হয়। তাই চাইলেও দুজনের নিয়মিত দেখা হয় না, ম্যাসেঞ্জারই ভরসা। দুজন দুজনের মুখ দেখতে পায় না, অর্নগল কথা বলে যায়। তিতলির রাগের মুহূর্তে সায়ান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তিতলি কখনোই এতো কঠিন কঠিন কথাগুলো বলতে পারতো না, যা সে অনায়াসে ম্যাসেঞ্জারের উইন্ডোতে লিখে ফেলে।

বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর আকাশ পরিস্কার হলে, মিষ্টি হাওয়া যখন মনকে ছুঁয়ে এপাশ থেকে ওপাশে যায় তখন সায়ান তিতলির মাথার চুল সরাতে সরাতে গাল ছুঁয়ে মাঝে মাঝে বলে, রাগ করলে তুই আমার কোন কথাই শুনিস না, জান। এতো ভয়ানক আক্রমন করে এতো কঠিন কঠিন কথা কিভাবে বলিস তুই? তুই কি তোর নিজের মধ্যে থাকিস না? আমার মুখ তোর মনে পড়ে না একবারও? তিতলি লজ্জা পেয়ে বলে, তুই আমাকে থামিয়ে দিতে পারিস না? মাথা ঝাঁকায় সায়ান। তারপর বলে, তুই এতো দূরের হয়ে যাস তখন যে আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলি, কথা খুঁজে পাই না তোকে মানিয়ে নেয়ার মতো। তুইতো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে থাকিস না। কাছে থাকলে জড়িয়ে ধরে তোকে বলতে পারতাম, তুই সব নিজের মতো ভুল ভেবে নিচ্ছিস জান, আমি এমন কিছুই করিনি আসলে। তুই কষ্ট পাস এমন কিছু আমি কেমন করে করতে পারি? তুই ভাবতেও পারবি না, তোর কঠিন কঠিন কথাগুলো আমায় কাঁদিয়ে দেয়, আমার চোখ ভিজে যায়। তিতলিও আস্তে আস্তে ভিজে নরম গলায় বলে তখন, তোর কান্নাই ইম্পর্ট্যান্ট, আর আমি যে কাঁদি তোর কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে, সেটাতো কিছু নয়। তুই কেনো বুঝতে পারিস না, পৃথিবী উলটে গেলেও আমার তেমন কষ্ট লাগে না। কিন্তু তুইতো পৃথিবীর মধ্যে পড়িস না, তোর সামান্য থেকে সামান্যতর জিনিস আমায় এলোমেলো করে ফেলে। সায়ান উত্তর দিতে পারে না, কারণ ইমপালসিভ হয়ে কিছু না কিছু সে করে ফেলে সত্যি কিন্তু তিতলিকে হার্ট করাতো সে মীন করে না।

গাল ফোলা কমে গেলে আবার কুট কুট এস।এম।এস আদান প্রদান চলে দিন ভর। রাতে তিতলি অনেক সময়ই পড়া নষ্ট করে সায়ানের পাশে বসে পড়ে। ম্যাসেঞ্জারে বসাটাকেই পাশে বসা বলে দুজনে। খুঁটখুঁট টাইপ চলে দুপাশের দুজানালায়। সারাদিন কে কি করলো, সমস্ত তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ ব্যাপার দুজনেরটাই দুজনের জানা চাই। কখন দুজনে দুজনের জন্য কি ভেবেছিলো, কি খেতে গিয়ে মিস করছিলো বলতে বলতে ঘন্টা পার হয়ে যায়। কোন গানটা ভালো লাগলো দুজনের সেটা শেয়ার করে শোনা চাই। একটাই সমস্যা তিতলি রাত জাগতে পারে না। ভীষন ঘুম কাতুরে সে। কিছুক্ষণ গল্প হলেই বলবে, আমি যাচ্ছি ঘুমাতে। কি করবে ঘুম না হলে ঠিক করে পরদিনের লেকচার তার মাথায় ঢুকে না। একেতো এত অল্প সময় তিতলিকে কাছে পায় সায়ান। তারমধ্যে কথা না বলতেই বলবে, ঘুমাতে যাই। অভিমান হয়ে যায় সায়ানের। মাঝে মাঝেই বলে ফেলে আমার কি হবে রে? একা একা ঘুমুতে যাচ্ছিস যে বড়, আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তবে যা। তিতলি ফিক করে হেসে ফেলে, বুড়ো ধাড়ি ছেলে তোকে আবার ঘুম পাড়াবো কীরে। অভিমান নিয়ে সায়ান লিখে তখন, সারাটা দিন আমার সময় কাটতে চায় না, তোকে কখন কাছে পাবো সেই আশায় থাকি। তখন ঘড়িটা এতো স্লো চলে। আর তুই কাছে এসে বসা মাত্র লাফিয়ে লাফিয়ে ঘন্টাগুলো মিনিটে আর মিনিটগুলো মুহূর্ত হয়ে চলতে থাকে, নট ফেয়ার, জাষ্ট নট ফেয়ার। সায়ান যখন এমন আদর আদর কথা বলে, তিতলির তখন সায়ানকে রাগিয়ে দিতে ভালো লাগে। বেছে বেছে এমন সব কথাগুলো বলবে যাতে সায়ানের পিত্তি জ্বলে যায়। সায়ানের রাগী মুখটা কল্পনা করে হাসতে হাসতে লিখবে, পৃথিবীতে কিছুই ফেয়ার নারে, কী আর করবি, এসেই যখন পড়েছিস তখন বেঁচে যা। মনে মনে মুখ ভেংচি কেটে বলবে, আমায় যে কষ্ট দিস তারবেলা, যা এখন ভালো করে মিস কর আমায়, বাঁদর ছেলে কোথাকারের।

তানবীরা
০৫.০২.১১

আজ মন চেয়েছে

No comments:

Post a Comment