Monday 1 October 2012

কাশফুলের ফটোওয়াকে একদিন




আমাদের এবিবাসীদের হুজুগের অভাব নাই। যাকে বলে উঠল বাইতো কটক যাই। কয়দিন পিকনিকতো কয়দিন টাঙ্গুয়া, এরপর ব্লুমুন ট্যুর। বার মাসে চব্বিশ পার্বন। বর্ষা যেতেই শরৎ এর আগমন। আর শরৎ মানেই স্নিগ্ধ মেঘমুক্ত আকাশ, দুর্গাপূজার কাঁসা আর ঢাকের বাজনার সাথে বোনাস হলো শ্বেত শুভ্র কাশফুল। এবি ভর্তি ফটুরে সেটা আজ আর কে না জানে। দিনরাত তারা স্কেল কম্পাস দিয়ে ফোকাস মেপে মেপে ফিজিক্স পড়ে যাচ্ছে। বর্ষার ছবির উৎসব শেষ এখন শরতের পালা। তাই আঠাশে সেপ্টেম্বর, রোজ শুক্রবার বেলা তিনটায় এই ফটোওয়াকের আয়োজন, স্থান আফতাবনগর। যা হয়, ফটোগ্রাফার প্রচুর কিন্তু মডেলের অভাব। আর যে সে মডেল হলে হবে না, বেঁকা হয়ে, কাঁত হয়ে পোজ দিতে পারে এমনসব মডেল হতে হবে। কয়েকজন একাব্যাকা স্পেশালিষ্টকে অনেক তেল মেখে রাজী করানো হলো মডেলিং এর জন্যে। এর মাঝে আবার রিদওয়ান ঘোষনা দিয়ে দিল, ওর আন্ডার টুয়েন্টি মডেল লাগবে। টুয়েন্টি প্লাস মডেল আর কাশফুল নাকি ব্যাড কম্বিনেশন। মোটেই কেউ রাজি হয় না তার আবার টুয়েন্টি, হুহ।

কিন্তু এরপরে বাঁধলো আর এক গোল। সবুজ গাছ, সাদা ফুল, নীল আকাশের কম্বিনেশনের সাথে তাদের চাই লালশাড়ি পরা মডেল। মডেল হতে রাজী হলেও শাড়ি পড়তে অনেকেই রাজী না। আর লাল শাড়িতো কাভি নেহি টাইপ অবস্থা। এদিকে মেয়ে ফটুরেরাও ছেলে মডেলদের ড্রেসকোড দিয়ে দিলো। নীল পরী আসবে না এই শোকে মনজুর ভাই কালো শার্ট পরে আসবেন বলে ব্রত নিলেন। জেবীন বললো ঠিকাছে কালো শার্টের ওপর নীল ফুল পরে সবাইকে নীল পরীর প্রক্সি দিবেন বলে আপনি আমাদের কথা দিলেন। এসব গোল সামলানোর মধ্যে সাঈদ ভাই, ইভু, আমাকে ধরল, আপা আপনাকে আসতেই হবে, নইলে কিছুতেই চলবে না। আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি এসে করবোটা কি? না জানি ফটোগ্রাফী না জানি মডেলিং। সাঈদ ভাই বললো, এই যে আমরা পাঁচ মিনিট পর পর সবাই তর্ক লেগে যাই, এটা সামলাতে আপনার দরকার। আপা প্লীজ না করবেন না, আপনাকে নাহয় আমরা সবাই একটা শাড়ি স্পন্সর করবো। আমি বললাম, শাড়ি না বরং কনকর্ডের একটা টিকিট স্পন্সর করেন। বৃহস্প্রতিবার অফিস করে রওয়ানা দিবো আবার শনিবার বিকেলের মধ্যে এসে পৌঁছতে হবে, কনকর্ড ছাড়াতো গতি নেই। সাঈদ ভাইকে আমরা সবাই চিনি, রুমাল কেটে টুপি বানানোর লোক উনি, এমনিতেই মাথায় তার চুল কম, তারপরেও যা অবশিষ্ট ছিল, তা ধরেই এমন হ্যাঁচকা দিল যে, সামনে ওনার দোকা হওয়ার যে কিঞ্চিত সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল তাহাতে আরো একমুঠো ধূলা পড়ে গেলো।

আমি মন খারাপ করে যখন আসার পরিকল্পনা প্রায় বাদই দিয়ে দিচ্ছিলাম, যখন মেসবাব দাদাভাই বললেন, তিনি নতুন চাকরী উপলক্ষ্যে ফটুরে দলের সবাইকে ট্রিট দিবেন তখন আর কনকর্ডের টিকিট না কিনে থাকা গেলো না। দাদাভাইয়ের আত্মার কথা কে না জানে। এই ট্রীট মিস করা যায়। যাহোক ওনাদের অবস্থা দেখে শেষে আমাকে শাড়িতেই রফা করতে হলো। বললো, আপা আপনার জন্যেও লাল শাড়িই কিনবো। আমি আৎকে উঠে বললাম, না না, আমার হুজুরের নিষেধ আছে, লাল পরতে পারবো না। এবার সাঈদ ভাই অন্যনোপায় হয়ে বললেন, ঠিকাছে আপনার যে রঙ ইচ্ছা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি কিছু দূ সামনে এগোলেই একটা বেইলী ব্রিজ, সেখানেই আমরা সকলে উপস্থিত থাকবো, অবশ্যই যথা সময়ে এই কথা ঠিক হলো। শুক্রবার দুপুরে একদল পাখির কিচির মিচিরে বেইলী বিজ্র যখন প্রকম্পিত, তখন দাদাভাই তার চিরাচরিত ধমক দিয়ে বললেন, সবার রিকশা ঠিক করা আছে, যাও উঠে পড়ো। কিন্তু জেবীন, জয়িতা আর ফারজানা তখনো এসে পৌঁছেনি। এক ঘন্টা ধরে যতোই জিজ্ঞেস করছি কই তোরা, তারা বলে যাচ্ছে, এসে গেছি আর পাঁচ মিনিট। তখন ওদেরকে রেখেই সামনে এগোনো ঠিক হলো।

যখন সবাই শুধু রিক্সাতে উঠতে যাবো তখন মায়াবতী বলে উঠল, যাচ্ছি যে সবাই কিন্তু ওখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? আমার কয়েকজন বন্ধু বান্ধব কদিন আগেই ওখান থেকে ছিনতাইকারীর কবলে পরে সর্বস্ব হারিয়ে শুধু ইজ্জত নিয়ে ফিরে এসেছে। সবাই ভাবনায় পড়ে গেলো। মায়াবতী মানুষটা ছোট হলেও কথাটা বড় বলেছে। দলের একজন টিমটিম কন্ঠে বললো, সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। অন্যেরা সমস্বরে জিজ্ঞেস করে উঠল কিভাবে? বললো, মখা আলমগীর তার দুসম্পর্কের দাদার ফুপার নানার জ্যাঠার শালার মামার অনেক কাছের আত্মীয়। সবাই নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলাম এই ভেবে, “বাগাল ম্যায় ছোড়া শাহার ম্যায় ঢেন্ডোরা”। তাড়াতাড়ি মখাকে ফোন দেয়া হলে ওনি বললেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে টপ অবস্থায় আছে, আপনারা নিশ্চিন্তে যেয়ে ঝুলে পড়েন, আমিতো আছি। ফোনটা স্পীকারে দেয়া আছে, সবাই শুনতে পাচ্ছে। পাশ থেকে একজন চিঁচিঁ করে মৃদু কন্ঠে বলে উঠল না মানে যদি ঠ্যাক পার্টি ধরে। মখা অম্লান বদনে বললেন, ধরলে জিজ্ঞেস করবেন, কোন দল করে? ছাত্রলীগ হলে অবশ্যই সাথে যা আছে তা নজরানা দিয়ে দিবেন, বিনাবাক্যে। তারা আমাদের ত্রানকর্তা, তাদের দিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের একটা কর্তব্য না? চিঁচিঁ আরো শুকনো গলায় বলে উঠল, জ্বী তাতো বটেই, তাতো বটেই। মখা তখন গলাকে আরো হেড়ে করে বললেন, আর অন্যদল হলে চোর সন্দেহে পিটাইয়া ঐখানেই খেইল খতম করে দিবেন। আপনারা অনেকেইতো আছেন এখন একসাথে , দেশকে শত্রুমুক্ত রাখতে হবে।

আমর আর কি বলবো, জ্বী আচ্ছা সালাম বলে ফোন রাখতে গেলে তিনি একটু আমতা আমতা গলায় বললেন, ইয়ে মানে সব যে বের হইছেন, বাসা ঠিক করে তালা বন্ধ করছেনতো? আমরা সমস্বরে বললাম, জ্বী স্যার, একেবারে খাঁটি সাহারা তালা লাগিয়ে বন্ধ করে এসেছি। তিনি এই শুনে উৎফুল্ল গলায় বললেন, তাহলে সবাই ইয়া মুকাদ্দেমু ইয়া মুকাদ্দেমু করে পা বাড়ান, ওপরে আল্লাহ নীচে মখা। বেডরুমে কিছু হলে আমার দায় না, কিন্তু কাশবনে কিছু হলে সেটা আমি দেখবো। দরকার হলে এটিনের মাহফুজরে আবার বিবৃতি দিতে ডেকে আনবোযান ভাই সকলেরা আমার ওপর ভরসা রেখে আনন্দ ফুর্তি করতে যান।

এরপর আমরা বেইলী ব্রিজ প্রকম্পিত করে ইয়া মুকাদ্দেমু ইয়া মুকাদ্দেমু করে আফতাব নগরে যাওয়ার জন্যে রিকশায় চড়লাম। মেঘ বুঝতে না পেরে আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছে, কাকে ডাকছো আম্মি, কেনো চিৎকার করছো? আমি একটা বোকা হাসি দিলাম, কারণ উত্তর আমিও জানি না। ওখানে যেয়ে কাশবনের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো সবার হুটোপুটি। শুভ ক্যামেরা নিয়ে ভাবের বিষয় খুঁজতে লাগলো। কোন ভাবই তার মনেরমতো ভাব হয় না। ম্যাক ভাই আবার সবকিছুতেই ভাব দেখতে পান। তিনি রিলাক্স শাটার টিপছেন। তারেকুল ভাই চাইছেন তার আইফোনগ্রাফী দিয়ে পাপ্পারাজি স্টাইলে সুন্দরী ললনাদের দুর্লভ মুহুর্তের কিছু হাস্যময় ছবি বন্দী করে রাখতেগ্রুপে যেহেতু আগেই “কাশফুলের নরম ছোয়া” বিখ্যাত লাইনটি আলোচনা হয়ে গেছে, তাই কোন মেয়েই কাশফুলের খুব কাছে যেতে চাইছিলো না, কি মুশকিল। তারপরও ভাইজান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারেক ভাইয়ের সর্তক চোখ আর হাতের ফোন ক্যামেরা ছাড়াই ফটোগ্রাফারদের ভাত মেরে দেয়ার জন্যে যথেষ্ঠ।

টুটুল ভাই কোন দিকে শাটার তাক করছে তার দিকে শ্যান দৃষ্টি রাখছে নাজ। মনজুর ভাই, মুখ কালো করে বার বার তার কালো নীল শার্ট এর হাত বুলাচ্ছেন আর নীল পরীকে এসএমএস করে প্রতি মূহুর্তের আপডেট দিচ্ছেন। জেবীন, জয়িতা, ফারজানা মানে সুন্দরী কুমারী এবি টিম এসে তখন সেখানে পৌঁছলেন। বেলা তখন সাড়ে পাঁচটা। তাদের দেখে অবশ্য বোঝা গেলো দেরীর রহস্য। যে পরিমান ডলা পোচা করেছেন এক একজন, জলিল ভাইয়ের ভাষায় বলতে গেলে, ইট টেকস টাইম ম্যান। জেবীন এসেই ক্যামেরা নিয়ে শাটার টিপায় ঝাপিয়ে পড়লো। মেসবাহ ভাইয়ের হলুদ ফতুয়ার কম্বিনেশন যে সবুজের সাথে এতো ভাল আসবে তা জেবীন বুঝতেই পারে নাই প্রথমে। মৌসুমের মুড অফ, ক্যামেরা বন্ধ করে বসে আছে। শওকত মাসুম ভাই আসবে বলেও শেষ মূহুর্তে আসতে পারেলন না, ওনাকে দেশ টিভিতে যেতে হবে, হলমার্ক কেলেঙ্কারীর পোষ্টমর্টেম করতে। তাই তিনি ফেসবুকে আপডেট দিলেন, “কাশফুল দেখতে যায় মাইনষে”, ঘরে বসে দেশ টিভি দেখেন, একথাটা অবশ্য উহ্য ছিল, লিখেন নাই।

কোরিয়া রাসেল ফটোওয়াক শুনে যারপর নাই আনন্দিত হয়েছিল। ভেবেছিল এ সুযোগে তার মিষ্টি বউয়ের মডেল মার্কা কয়েকটা ফটো তুলে ফেসবুকে আপলোড করবে। এ আশায় রোজ টিস্যু দিয়ে ঘষে ঘষে ক্যামেরার লেন্স পরিস্কার করছিল। রোমান্টিকতায় আপ্লুত হয়ে বউকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিল আগের দিন। আর যায় কোথায়? রাত থেকেই শুরু হলো ধুম জ্বর। মাথা তুলতে পারছে না আর ফটোওয়াকে যাবে কি? তাই রাগে দুঃখে ক্যাম ধরে জোরে জোরে আছার দিল ভাঙ্গার জন্যে। জ্বরের ঘোর আর রাগের তোড় কমলে দেখা গেলো, চৌকি ভেবে যেখানে সে জোরে জোরে ক্যাম আছাড় দিয়েছিলো, আসলে সেটা ছিল তার মিষ্টি বউয়ের মাথা। ক্যাম ভেঙ্গেছে কম কিন্তু মাথা ভেঙ্গেছে অনেক বেশি। এ দেখে মাথা ঘুরে আবার বিছানায় ধপাস। শেষ মুহুর্তে পায়ে জুতা গলানোর সময় সাঈদ ভাইয়ের ডান পাটা ঝিমঝিম করে উঠল তাই সাঈদ ভাই একটু দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন। হাতে একটা কয়েন নিয়ে টস করলেন, হেড না টেল। টস এর রেজাল্ট বিপক্ষে যাওয়াতে, যাবেন না বলেই ঠিক করে ইস্ত্রি করা শার্ট খুলে রেখে দিয়ে ইভুকে ফোন দিলেন। মিরপুরবাসীর নেতা সাঈদ ভাই যাবেন না, তাই ইভু আর আনন্দবাবুও না যাওয়াই স্থির করলো। আর আমার শাড়ির আশায়ও জলাঞ্জলি হলো।

জয়িতা লাল জামা পরে ঘুরে ঘুরে মনের আনন্দে পোজ দিচ্ছে আর এফবিতে স্ট্যাটাস আপডেট করে যাচ্ছে। ঋহান ফুপ্পীর কান্ড দেখে হাসছে আর জামা টানাটানি করে খেলে যাচ্ছে। শর্মি এতোক্ষণ মৌসুমের মুড ঠিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই এদিক সেদিক ক্লিক করতে লাগল। কাশফুলের ওপর কতোক্ষণ নিজের চটি, নিজের পলিশ করা বুড়ো আঙ্গুল ইত্যাদি রেখে ইন্টেলেকচুয়াল ফটোগ্রাফী ট্রাই করে যাচ্ছে। রেজওয়ান আর রনি এজ ইউজুয়াল একা একা ভাবুক ভাব ধরে দিনের শ্রেষ্ঠতম ফটোখানা তোলার চেষ্টায় মনপ্রাণ চোখ ক্যাম সব নিয়োজিত করে দিলো। যদিও তারা ভাব ধরে রাখে ক্যাম বাদে পৃথিবীর সর্ব ব্যাপারে তার অনাগ্রহী, কিন্তু আসল খবরতো অন্য। হিনা বিলওয়ালের প্রেম থেকে সানি লিওনের বাড়ি ভাড়ার সমস্যাসহ সর্ব দুঃখ তারা সমানভাবে ফেসবুকে শেয়ার করে। নূপুর এর মুখ ব্যাকা, চোখ ব্যাকা করে পোজ দেয়ার কান্ড দেখে নিধিপরীটা হা হয়ে গেছে। সুন্দরী মায়ের একি ভীমরতি। নিধিপরীটা জানে মা ছবি তুলতে খুবই ভালবাসে, সেজেগুজে ছবি তোলা মায়ের প্রধান হবি কিন্তু তাই বলে কি এইই!!

ফারজানা বহুদিন পর ওটির বাইরে তাজা বাতাসে শ্বাস নিতে পেরে মহাখুশী। কাশফুলে তার হুটোপুটি দেখে মেঘ, ঋহান আর নিধিপরী হাসতে লাগলো আর লাজুক চোখে এর ওর পানে চাইছিলো। মাঞ্জা যা মেরেছে সেদিকে আর না যাই। কে যে বলেছিল এই মেয়েকে মেডিক্যাল পড়তে, প্রতিভার অপচয়, এরতো নায়িকা হওয়ার কথা ছিল। লাজুক লাজুক মুখ করে জেবীনের পিছনে পিছনে ঘুরে ঘুরে নানা ভঙ্গীমায় ঢঙ্গী ঢঙ্গী সব ফটো তুলে যাচ্ছিল। যার বার বলে যাচ্ছিল, ওহ কি গরম, মেকাপতো পুরোই নষ্ট হয়ে গেলো। নওরোজ সারাক্ষণ গেয়ে যাচ্ছিল, “এই কাশের বনে লাগলো দোল, তোরা সবাই টিভি খোল টিভি খোল”। স্বর্না মোবাইলের ভিডিও অন করে কাশফুলের মাঝে নওরোজের সচিত্র গান রের্কড করে চললো। বেচারী মেয়েটা এতো সুন্দর করে সেজে এলো, ভাবলো নওরোজ তার কিছু এক্সক্লুসিভ ফটো তুলবে, উলটো তাকেই নওরোজের গান রের্কড করতে হচ্ছে। তবুও ভাবছে থাক, প্রাণ ভরে আজ গান গাক। ছেলেটা এতো গান গাইতে পাগল কিন্তু কোন সুযোগই পায় না, আজকে খোলা আকাশের নীচে সুযোগ পেয়েছে, মন ভরে গেয়ে নিক। হাসান মুর্শেদ ভাই ছেলে লাজুক হলেও মানুষ ভালো। নিরিবিলি তার ক্যাম নিয়ে ক্লিক ক্লিক করছেন আর বার বার ভিউতে চেক করছেন শ্যুট মনের মতো হচ্ছেতো। একাত্তরের রাজাকার বাহিনী বেড়ে এই চল্লিশ বছরে পাঁচগুন বেশি হয়েছে। যার মধ্যে ছদ্মবেশী রাজাকারদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে এরা। এদের কারণে হাসান ভাইয়ের মন অনেক বিক্ষিপ্ত থাকে। মন দিয়ে লেখালেখি ফটোশ্যুট অনেক সময়ই করতে পারেন না। ভাবেন পাখির ছবি তুলবেন, শেষে দেখা যায় মাছের ছবি তুলে বসে আছেন। তাই আজকাল ভিউই ভরসা।

কাছেই কোথায় যেন ঘুড়ি উৎসব হওয়ার কথা। আমরা সেদিকটা খুঁজছি, উৎসব দেখতে যাবো এরমধ্যেই হঠাৎ টিপটিপ বৃষ্টি। অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না। দৌড়ে যেয়ে যার যার রিক্সায় উঠে পড়লেন অনেকে। মেসবাহ ভাই সবাইকে জানালেন, আজকের মতো এবছরের মতো ফটোওয়াক এখানেই শেষ। বিকেলও শেষ হয়ে আসছিলো সাথে আবার যোগ হলো বৃষ্টি। ফটুরে যারা বৃষ্টিভেজা কাশফুলের ফটো তুলতে চায় তুলুক, অন্যেরা সবাই যেন পূর্ব নির্ধারিত রেষ্টুরেন্টে চলে যায়, সেখানে এখন শুরু হবে স্পেশাল চাকরী ট্রীট। আমরা সবাই হই হই করে ছুটলাম রেষ্টুরেন্টে। টুটুল ভাই গম্ভীর মুখ করে সবকিছুর তদারকী করে যাচ্ছেন, তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টি। ইচ্ছেমতো সবাই কাবাব লুচি কোক আইসক্রীম খেতে খেতে প্রজেক্টারে সবার তোলা ছবিগুলো সবাই দেখলাম। খাবার খেয়ে সবাই দাদাভাইয়ের উজ্জল ভবিষ্যত আর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এমন সময় এলো স্পেশাল মধু দেয়া চা। আমরা মধু হই হই চা খাওয়াইলা গান গাইতে গাইতে যার যার গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হলাম। 

ইহা যারপর নাই একটি নিদারুন সত্য ঘটনা, এখানে কল্পনার আশ্রয় খুঁজে বের করা দুষ্ট মনের একটি কুটিল ও বৃথা চেষ্টা মাত্র


27.09.2012

No comments:

Post a Comment