Tuesday 4 June 2013

যতোটা দূরে গেলে ভুলে থাকা যায়

http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=ab370b1b126f971f334346994af22f6e&nttl=20130604070931201331


ফোন বেজে যাচ্ছে ক্রিং ক্রিং, ল্যান্ডফোন। সারা বাড়িতে এক মৃত্যু শীতল নীরবতা। অপালা ঠায় মূর্তির মতো বসে ফোনের রিং শুনছে। এক একবার বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম মাদল বেজে উঠছে, এক একবার বিশাল শূন্যতা গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে, তবুও কান ভরে প্রাণ ভরে সে ফোনের শব্দ শুনে যায় প্রায় রোজই। সে যেমন জানে ফোনের অপর প্রান্তে কে আছে, বাড়ির অন্যরাও জানে, এই ফোন কার জন্যে বেজে যাচ্ছে। চোখে বাধ না মানা অশ্রুর বন্যা, গাল বেয়ে আরো নীচে নামতে থাকে। যখন নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারে না তখন বাথরুমে যেয়ে কল ছেড়ে দেয় তারপর তোয়ালেতে মুখ ডুবিয়ে হাউ হাউ করে কাঁদে। তাতেও যদি বুকের ব্যথা একটু কমে, সারাবেলা বুকে চাপ চাপ ব্যথা। কি এক নীল কষ্ট জমে আছে সেখানে, যা তাকে দিনভর তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। দুদণ্ড আরামে খেতে দেয় না, ঘুমাতে দেয় না। সবকিছু এতো ফাঁকা লাগে এতো অর্থহীন মনে হয়। একজনের পাশে থাকা না থাকায় বৃষ্টির মানে বদলে যায়, জ্যোৎস্নার মানে বদলে যায়, কবিতার মানে বদলে যায় যেমন যায় জীবনের মানে বদলে।

অপালার বাবা মায়ের ইচ্ছের সম্মান দিতে গিয়ে দুজনেই ঠিক করেছে আর এতো কাছে আসবে না দুজন কখনো। ঠিক যতোটা কাছে এলে আগুনের তাপে মোম গলে যায়, হৃদয়ের উত্তাপ ভালোবাসাকে নিংড়ায়। কিন্তু বন্ধু থাকবে আজীবন দুজন দুজনের। ভাবা আর প্রতিজ্ঞা করা যতো সোজা তাকে অন্তরে ধারণ করে নেয়া কি ততোটাই সোজা? যে কথাগুলো দুজন দুজনকে বলেছে, আর যে কথাগুলো বলবে ভেবেছিলো, বলা হয়নি কিন্তু দুজনের অন্তর জেনে গেছে, সে সব স্বপ্ন থেকে কি এক ঝটকায় মুক্তি পাওয়া যায়? না যায় না, তাই আপাতত বিরহ পালা চলছে শুধু তারা দুজনেই জানে এ বিরহ চিরদিনের বিচ্ছেদ, মধুমিলনে বদলে যাওয়ার নয়। নিজেদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুছিয়ে নেয়ার মানিয়ে নেয়ার সময় দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরেও ক্ষণে ক্ষণে ফোন বেজে উঠে। যে মানুষটির কথা চব্বিশটি ঘণ্টা ভাবতো, যাকে ভেবে এতো গল্প কবিতা, কপালে নীল টিপ আঁকা, শাড়ি পড়া, গায়ে সুগন্ধী মাখা তাকে চাইলেই কি এক মুহূর্তে ফুলস্টপ দিয়ে আজ থেকে আর তার কথা ভাববো না, বললেই হয়ে যায়!!!

যাবে না যাবে না করেও কতো বেলা কোচিং-এ চলে গেছে অপালা, তার কোন ক্লাস নেই, কাজ নেই তবুও গেছে, বুকের মধ্যে রিনিক ঝিনিক সুরের কাঁপন অনুভব করতো, যদি সে থাকে। একি কথা কি তার বেলায়ও নয়? হয়তো অন্য অনেক জরুরি কাজ ফেলে রেখে, বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে কোচিং-এ যদি অপালা এসে থাকে। হয়তো কোন কথা বিনিময়ও হবে না তাদের মধ্যে, শুধু একটু চোখের দেখা কিংবা সামান্য দৃষ্টি বিনিময় অথবা দূর থেকে এক চিলতে হাসি। শেষের দিকে এটা অবশ্য রুটিনে পৌঁছে গেছিলো যতো কাজই থাকুক, কোচিং-এ নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে ঢু মারতেই হবে।

হেসে বলতো সে, চার্জ হতে আসি। এইটুকু তোকে না দেখলে সারাদিনে কোন কাজের উৎসাহ পাই না, চলার হাসার কোন মানে থাকে না আমার। তুই হলি আমার সকল শক্তির উৎস, সকল কাজের প্রেরণা।

সে উৎসকে হারিয়ে থাকতে হবে সারা জীবনের জন্যে, সে প্রেরণাকে মুছে দিতে হবে সব কর্মযজ্ঞ থেকে। কাঁদছে দুজন দুপুর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে যার যার বিছানায় মুখ ঢেকে, দুজনেই জানে দুজনের চাওয়াতে কোন পাপ ছিলো না, মিথ্যে ছিলো না তাদের এই চাওয়া, ফাঁকি নেই কোথাও। প্রকৃতি তাদের দুজনকে কাছে নিয়ে এসেছিলো প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই। কিন্তু নিয়তি নিয়ে এলো বিচ্ছেদ।

কতো দুপুর কেটেছে তাদের একসাথে গান শুনে বা শুনিয়ে, কবিতা শুনে বা শুনিয়ে, বই নিয়ে, সিনেমা নিয়ে গল্প করে। ভাববো না আজ থেকে তোকে আর বলতেই পারে কিন্তু যেই মুহূর্তগুলো একসাথে কেটেছে স্বপ্ন বুনে সেগুলো কি করে মুছে যাবে? কোথায় হারাবে সেগুলো? যখন সেই গান আবার বাজবে কোথাও, পা থেমে আসবে না, মনে পড়বে না কখনই কিছু? মনে পড়বে না, এই গান আমার ছিলো কিংবা আমাদের ছিলো, ঐ মুহূর্ত আমাদের ছিলো, ঐ চাঁদ আমাদের ছিলো, ঐ ফুল আমাদের ছিলো শুধু আমাদের। দুমড়ে মুচড়ে বিদ্রোহ করে ওঠে অপালার মন, কেন সে অপালার বাবা মায়ের কথা মেনে নিলো? কেন সে অপালার হাত ধরতে ব্যাকুল হলো না। তীব্র অভিমানের বিষে অপালার সারা শরীর নীল হয়ে থাকে সারাবেলা। ধরবো না ফোন তোর, কখ্‌খনো না, কিছুতেই না। আমি কষ্ট পাচ্ছি, তুইও পা। প্রতিশোধের নেশা ব্যাকুল করে তোলে অপালাকে সারাবেলা। কিন্তু কোন একটা শাস্তিও অপালা খুঁজে পায় না যেটাতে ও কষ্ট পেলে অপালাও কষ্ট পাবে না। সব শাস্তিই প্রথমে তাকে ভোগ করতে হবে তারপরতো তার কাছে যাবে। কোথাও গেলে যদি তার সাথে দেখা হয়ে যায় এজন্যে বাড়ি থেকে বেরোনোই বন্ধ করে দিলো অপালা, জানে তাকে একবার চোখে দেখার জন্যে বাড়ির আশেপাশেই কোথাও থাকবে সে। কিন্তু অপালার চোখও যে সারাবেলা তাকে খুঁজে ফেরে। আঠারো বছরের সদ্য যুবতী, নিজেকে সারাবেলা সামলে রাখে, ধরে রাখে কি অবর্ণনীয় কষ্ট। যখন ইচ্ছে করছে প্রেমিক পুরুষের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে নখের আঁচড়ে দাঁতের কামড়ে রক্তাক্ত করতে, তখন সারাবেলা সে তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সামলাচ্ছে নিজের আবেগকে।

যেটুকু না পাওয়া তা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন? তাই কি? না পেলেই জীবন আর কতোটুকু সার্থক? সবই মিছে সান্ত্বনা। তাই যদি হবে তবে এই পালিয়ে বেড়ানো খেলায় অপালা আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে কেনো? মানসিক এই চাপ শুধু তার পড়াশোনাকেই বিধস্ত করছে না, সাথে তার রূপ লাবণ্যও নষ্ট করে দিচ্ছে।

পুরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে সে আস্তে আস্তে, খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। কি এক নাম না জানা অস্থিরতা সারাবেলা তাকে তাড়া করে ফিরে। এক সময়ের সব প্রিয় জিনিস আজ সাপে কাটার ভয় নিয়ে আসে তার কাছে। কি করে সব এভাবে বদলে যায়? সব যদি বদলায় সে বদলাচ্ছে না কেনো?

1 comment:

  1. Sumit Chakraborty Ha, bodle jay......karon age chilo sudhu ekkendrik....pore charidikao nojor jay........amar mote relation onekta radio r moto....shamanno ek dag ghuralai onno station..change..tai onek kosto kore tune kore thik jaygay rakhte hoy...pichle galai baba shesh...!!!

    ReplyDelete