রাত এগারোটায় সারাদিনের কাজ গুছিয়ে ক্লান্ত আমি বসেছি ফেসবুক নিয়ে।ক্রিং
ক্রিং ফোন বেজে উঠলো।
হ্যালো স্লামালিকুম
ওয়ালাইকুম, তুই আমাকে একটা বই লিখে দিবি।
আমি আমতা আমতা কিছুই বুঝতে পারছি না, কোন কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ
হুকুম বই লিখে দে।
কী হয়েছে আপা?
কিছু হয় নাই। নীলা বললো, তুই একটা বই লিখেছিস, বই পড়ে সে চোখের পানি
আটকাতে পারে নাই। আমারেও লিখে দিবি একটা।
আমি আবারো আমতা আমতা, কী হয়েছে? দুলাভাইয়ের সাথে ঝগড়া করেছো?
একটু ঝেঁঝেঁ উঠে এবার, ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা এই প্রবাসে এসে
ঝাঁঝরা। তুই আমার সব কথা গুছিয়ে লিখে দে, কতো কষ্ট করেছি, কতো যন্ত্রণা গেছে
জীবনের ওপর দিয়ে। এ শহর থেকে ঐ শহর, এই চাকরী থেকে ঐ চাকরী। ছেলেমেয়েরা তার কী
জানে? টাকা বাঁচানোর জন্যে ভাত না খেয়ে রুটি খেয়ে থেকেছি। মেট্রো না চড়ে হেঁটে
গেছি বরফের মধ্যে দিয়ে। একা একা স্টেশনে বসে কেঁদে কেঁদে বেলা পার করেছি।
আমি মিনমিন, আচ্ছা দিবো।
******************
এক অনুষ্ঠানে ফর্ম্যাল দেখা একজন স্বল্প পরিচিতার
সাথে। কথা হচ্ছে, বাচ্চাদের স্কুল, সংসার, প্রবাস সাধারণ সমস্ত বিষয় নিয়ে। সংসার
সামলানোর ঝক্কির আলোচনার এক ফাঁকে তিনি বলে উঠলেন, আপনার বইয়ের কথা শুনেছি আপা।
সংসারের ঝামেলায় এখনো পড়ে উঠতে পারিনি।
আমি মৃদ্যু হেসে, ওহ
আমি হু মাথা নাড়লাম চুপচাপ।
আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে, অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পার
করেছি আপা। কেউ সাহায্য করে নাই।
চুপচাপ শুনে যাচ্ছি
চোখ ছলছল, ধরা গলায়, ছোট বয়সেই বাচ্চা হয়ে গেলো,
কাউকে চিনি না, ভাষা জানি না। স্বামী সারাদিন কাজের জন্যে বাইরে বাইরে থাকে। আমি
একা একা কী করে দিন পার করেছি আমি জানি আপা।
কিছু বলার নেই, তাই চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। বুকের
ভিতর কোথাও কিছু দ্রিম দ্রিম আওয়াজ করছে।
সারাদিন কারো সাথে একটা কথা বলতে পারি নাই আপা।
শুধু টিভির সামনে বাচ্চা নিয়ে বসে সময় কাটিয়েছি কয়েক বছর। দেশে শ্বশুর বাড়িতে ছোট
ছোট দেবর ননদ, সবার দায়িত্ব তার ওপর, টাকা পয়সার টানাটানি চাইলেও বাইরে যেতে পারি
না।
আর আর ..................... আমার সব কথা শুনলে
আপা আপনি চোখের পানি আটকাতে পারবেন না, একটা বই হয়ে যাবে আপা, দুঃখের বই যেমন আপনি
লিখেছেন, শুনছি
No comments:
Post a Comment