Thursday 9 November 2017

ডাচ এজুকেশান সিস্টেম: গাইডিং টু ফিউচার

ক্লাশ এইটে ওঠার পর সব বাচ্চাদেরকে কে কোন দিকে পড়তে চায় সেটা নিয়ে ভাবতে বলে। ছয় মাস সময় পায় তারা সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার। কার কোন দিকে আগ্রহ, কার কি পড়তে ভাল লাগে এগুলো নিয়ে স্কুলে আলোচনা হয়। স্কুল আর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আলোচনা হয় এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ বাবা মায়েদের ডাকেন আলোচনা’র জন্যে। শুধু ভাল লাগলেই হবে না, সেটা পড়তে পারার মত যোগ্যতা সে রাখে কী না সেটাও বিবেচনায় থাকে। যোগ্যতা শুধু নম্বর আর পরীক্ষার ফলাফলের ওপরই নির্ভর করে না, বাচ্চার মানসিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সেটাকে সমর্থন করে কি না সেটাও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ন বিবেচনার বিষয়।

হয়তো দেখা গেলো কোন বাচ্চা খুব বায়োলজি পড়তে আগ্রহী, আগ্রহ নিয়ে সে পড়াশোনা করছে, ফলাফলও ভালো। ল্যাবে তাকে বলা হলো, কোনো একটা মাছ বা প্রাণী’র ব্যবচ্ছেদ করে দেখাতে, রক্ত দেখে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো। কিংবা মানব শরীরের কঙ্কাল দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলো। বায়োলজি পড়ার স্বপ্ন দেখার রোমান্টিসিজম এর সময় কোনো বাচ্চারই পারিপার্শ্বিক এই ব্যাপার গুলো মাথায় থাকে না।
শুধু আলোচনার মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দিয়ে এখানেই স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা রাষ্ট্র তার দায়িত্ব শেষ করে না। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ ও অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা ও পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের সম্বনয়ে আয়োজিত হয় “শিক্ষা মেলা”। শিক্ষা মেলায় বিনা মূল্যে প্রবেশ করা যায়। তবে আগে থেকে ই মেইলের মাধ্যমে তার প্রবেশ কার্ডটি সংগ্রহ করতে হয়। ইমেইলে জানাতে হয়, সে কি ছাত্র হিসেবে আসছে না কি ছাত্রের বাবা মা হিসেবে আসছে কিংবা সপরিবারে আসছে।

পুরো মেলাটি যেহেতু অনেক বড় আর সব ব্যাপারে সবার আগ্রহ না’ও থাকতে পারে তাই শিক্ষামেলায় কম্পিউটার দেয়া আছে, প্রত্যেকে নিজের পছন্দ মতো তার নিজের “ওয়াকিং রুট” বানিয়ে, ম্যাপ প্রিন্ট আউট নিয়ে সেদিকে হাঁটতে পারে। কেউ পছন্দের বিষয় ভিত্তিক রুট বানাতে পারে, কেউ পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক রুট বানাতে পারে, কেউবা দেশ, ভাষা ইত্যাদি’র ওপর পছন্দ করে নিজের নিজের কাস্টমাইজ রুট নিয়ে মেলা হেঁটে ঘুরে দেখতে পারে।
মেলায় কাজ করে প্রধানত সব ছাত্র ছাত্রী’রা। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ছাত্র ছাত্রী যে বিষয়ের ওপর পড়ছে বা হাতে কলমে কাজ করছে তারা সে বিষয়েই ছোটদের কৌতুহলের উত্তর দেয়। যারা এখনও মনস্থির করে উঠতে পারে নি, কি পড়বে, কোনটা পড়বে তাদের আগ্রহী করার চেষ্টা করে। ইমেল এড্রেস রাখে, বাসার এড্রেস রাখে, মেলায় রাখা ফোল্ডারের বাইরেও অতিরিক্ত আরো তথ্য পাঠায়।

ধরা যাক, কেউ একজন বায়োলজি পড়তে আগ্রহী, সে বায়োলজি’র কোন শাখায় কাজ করতে চায়? বায়ো টেকনোলজি, বায়ো মেডিসিন নাকি বোটানী। একজন মানুষের স্বভাব খুব ঘর কুনো, সে বাইরে বের হতে চায় না, তার জন্যে কৃষি উন্নয়ন পড়ার কোনো মানে নেই। মাঠে, ঘাটে, জঙ্গলে বেরিয়ে তাকে পড়তেও হবে কাজও করতে হবে। ফুল, গাছ, পাখি, লতা, পাতা, প্রজাপতি, ফড়িং, গরু, ঘোড়া এ সমস্ত নিয়েই তাকে কাজ করতে হবে। যে এগুলো ভালোবাসবে না, সে এই নিয়ে কাজ করার কোনো আগ্রহ পাবে না। আবার কেউ যদি খুব বর্হিমুখী স্বভাবের হয় কিন্তু বায়োটেকনোলজি পড়তে চায় সেটাও সমস্যা। তাকে অনেক বেশি সময় ল্যাবে থাকতে হবে, একাকী কাজ করতে হবে, নির্জনতা প্রিয় না হলে এই কাজে সে আগ্রহ পাবে না। এ সমস্তই শিক্ষা মেলায় বিস্তারিত ভাবে প্রায় একজন একজন করে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের কে বলা হয়। আসলে তৈরি হতে বলা হয়, নিজেকে চেনো-জানো, কি চাও, কেনো চাও, আসলেই চাও তো? ভুল করছোনা তো? যা সব সিনেমায় বা টিভিতে দেখে ভাবছো বাস্তব ও তাই তো?
যারা একদমই জানে না, কি পড়তে চায়, কী সে তার আগ্রহ, ভবিষ্যতে কি করবে কিংবা কিসে আছে সুনিশ্চিত সেই ভবিষ্যত তাদের জন্যে আলাদা করে প্রতি আধ ঘন্টা অন্তর অন্তর তথ্যমূলক ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। ভিডিও দেখার পরও যারা দ্বিধায় ভোগে তারা আবার আলাদা একটা হলে তথ্যপ্রদান মূলক সেমিনারে যোগ দিতে পারে। এর পরও কেউ কারো সাথে কথা বলতে চাইলে, উপদেশ নিতে চাইলে, শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা সেখানে আছে, তারা বিনামূল্যে তাদের সাথে কথা বলে, আলোচনা করে। এই সার্বজনীন শিক্ষা মেলা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে এই “তথ্য মেলা”র আয়োজন করে থাকে। তবে সাধারণতঃ দেখা যায়, বিষয় নির্বাচন করার পর, সেই বিষয়টি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, সেটি’র ওপর নির্ভর করে ছাত্র ছাত্রী’রা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মেলায় যোগ দেয়।

এই পুরো কার্যক্রমটিই হয় রাষ্ট্রের স্বার্থে যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যত ছাত্র ছাত্রী যোগাড় করতে পারবে ততই রাষ্ট্রীয় অনুদান পাবে। যুগোপোযোগী অত্যাধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম, ভালো ফলাফল ও যথেষ্ঠ ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর রাষ্ট্রীয় অনুদান পাওয়ার অন্যতম শর্ত এখানে। নইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এই কার্যক্রমটিকে নাগরিক স্বার্থেও বিবেচনা করা যেতে পারে। বাচ্চারা সঠিক জায়গায় নিজেদের মেধা, আগ্রহ, সামর্থ্য দিতে না পারলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতির সাথে রাষ্ট্রেরও ক্ষতি। অসুখী, অদক্ষ, অনাগ্রহী নাগরিকদের নিয়ে তো আর কোনো সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না।
যদিও এত কিছুর পরও বেশীর ভাগ সময়ই শেষ রক্ষা হয় না। এখানের বাচ্চা’রা মানসিক চাপ নিতে পারে না। পড়াশোনার চাপে উচ্চ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। জরিপে দেখা যায়, পঞ্চাশ শতাংশ ক্ষেত্র বিশেষে আরো কম ছাত্র ছাত্রী তাদের স্নাতক বা স্নাতোকত্তর পড়াশোনা পুরোপুরি শেষ করে। কুড়ি ভাগের মতো ছাত্র ছাত্রী, কর্ম জীবনে প্রবেশ করার পর আবার পড়াশোনায় ফিরে এসে, কাজের পাশাপাশি স্নাতক শেষ করে। যার কারণে “গবেষনা ও উন্নয়ন” বিভাগে বিরাট শূণ্যতা বিরাজ করে যেটা পূরণ করে বিদেশীরা। এই জায়গা টুকুতে দেখা যায় প্রচুর বিদেশী কাজ করে যাচ্ছে। আজকাল প্রচুর বাংলাদেশী মেধাবী’রাও নেদারল্যান্ডসের “গবেষনা ও উন্নয়ন” বিভাগে কাজ করছে।
 http://nari.news/post/dutch-education

http://www.shomoynews.com/2017/11/09/%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%9A-%E0%A6%8F%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%83-%E0%A6%97%E0%A6%BE/#sthash.KuVVV6Vx.GeBBdrkV.gbpl


No comments:

Post a Comment