Saturday 27 June 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৮ {জুন}

করোনা নিয়ে প্রিমিয়ে রুতে’র আপাতত শেষ ভাষণ

বুধবারে প্রিমিয়ে রুতে ভাষণ দেবেন শুনে অফিস শুদ্ধ আমাদের সবার টেনশান শুরু হয়ে গেলো। টিমে ঘুরে ফিরে এক কথাই হচ্ছে, এবার না বলে বসে, সবাই অফিসে যেতে পারো। ঘুম থেকে জেগে, বিছানার পাশ থেকে ল্যাপটপ টেনে নিয়ে কাজ শুরু করার যে অভ্যাস তৈরী হয়েছে আমাদের, করোনার পরে সবচেয়ে বিগেস্ট চ্যালেঞ্জ হবে, ঘুম থেকে উঠে, তৈরী হয়ে অফিস যাওয়া। কানের পাশ দিয়ে এবার গুলি গেছে, এবারও বাড়ি থেকেই কাজ বলেছে যদিও ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাব ছাড়া পহেলা জুলাই থেকে মোটামুটি সবকিছুই দেড় মিটার ডিসটেন্স আর ডিসইনফেকশনের শর্তের নীচে এনে খুলে দিয়েছে। যা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিলো তা শুরু হলো দু’মাস আগে থেকে। হোয়াট আ র‍্যাপিড চেঞ্জ। ধারনা করা যায়, সামার ভ্যাকেশানের পর থেকে করোনা ভ্যাকেশান ওভার হয়ে যাবে, জীবনযাত্রা ভ্যাক্সিন ছাড়াই আপন গতিতে ফিরে আসবে।

জিম থেকে আগেই মেইল এসেছে, পহেলা জুলাই থেকে প্রতিবার ম্যাক্সিমাম এক ঘন্টার জন্যে যেতে পারবো এবং সময়টা আগে রিজার্ভ করে নিতে হবে। তাই এইটুকু জানতাম এবারের স্পীচে অনেক স্বাধীনতার আভাস আসবে। প্রাথমিক স্কুল আর ডে কেয়ার আগেই খুলে দিয়েছিলো, এবার দিল মাধ্যমিক স্কুল, স্পোর্টস সব খুলে, দেড় মিটারের বাধ্যবাধকতা আর তাদেরও নেই, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স এখনও বাধ্যতামূলক। মেঘ মহাখুশী, আবার স্কুলে যেতে পারবে।

করোনা ইনফেকশান, মৃত্যু, ইনটেনসিভ কেয়ার স্ট্যাবিল ছিলো কিন্তু এখন কার্ভ নীচের দিকে নেমেছে। এখন এমন দিনও আছে যেখানে কোন “করোনা মৃত্যু” নেই। সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, সবার সহযোগিতা ছাড়া এটা কখনো সম্ভব ছিলো না। তিন মাসে এতটা উন্নতি কেউ আশা করে নি। ধারনা করা হয়েছিলো এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হবে আর তার মধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজার জনকে ইনটেনসিভ কেয়ারে আনতে হবে কিন্তু সবাই নিয়ম মেনে চলাতে তার আর দরকার হয় নি। কিন্তু এখন সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে যেনো, দ্বিতীয় ঢেউ না চলে আসে, আর তার জন্যে সবাইকে প্রস্তূত থাকতে হবে। জীবনযাত্রার প্রাথমিক সব নিয়মগুলো ঠিক থাকবে, সেগুলো বদলাবে না।

ইনডোরে একশো লোকের পার্টি এলাউড। আগে থেকে যদি রিজার্ভেশান আর কন্ট্রোল মীটিং করা হয় তাহলে যতজন ইচ্ছে ডাকা যাবে, কোন ম্যাক্সিমাম সংখ্যা নেই। কনসার্ট, ফাংশান ইত্যাদি সবই চলবে তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতায়। চার্চ, সাংস্কৃতিক স্কুল, সাওনা, স্পোর্টস স্কুল সব চলতে পারে।

রিজার্ভেশান, চেক ইন্টারভিউ ছাড়া আড়াইশো জন মানুষ আউটডোরে জমায়েত হতে পারবে কিন্তু সেটা দাঁড়ানো জমায়েত হতে হবে, বসা নয়। এর আওতায় ওপেন এয়ার রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এগুলো পরবে না। তবে বার্বিকিউ, খেলাধূলা, উৎসব, ওপেন এয়ার কনসার্ট এগুলো চলতে পারবে সেখানে ম্যাক্সিমাম সংখ্যার বাধ্যবাধকতা থাকবে না তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকবে। দোকানপাট, যাদুঘর, লাইব্রেরী এসবই দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় নিয়ে রিএরেঞ্জ করা হয়েছে তাই এখানেও আর ম্যক্সিমাম মানুষের ব্যাপারটা থাকবে না, যতজন ইচ্ছে আসা যাওয়া করতে পারবে। চিড়িয়াখানা, ওপেন মার্কেট, সামার মেলা এসবও পহেলা জুলাই থেকে চালু করা যাবে। কিন্তু এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তূত হতে কমপক্ষে অন্তত ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে তাই ধরে নেয়া হচ্ছে, আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে কিছু চালু হচ্ছে না।

পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক থাকছে তবে পহেলা জুলাই থেকে বসেও ট্রাভেল করা যাবে। যদিও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ এখনও থাকবে। রিজার্ভেশান আর চেক ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ট্যাক্সি, ট্যুরিং কার, ট্যাক্সি বাস সব কিছুই চালু হবে তবে সেখানেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকবে। নিজের গাড়িতেও অন্যকে লিফট দেয়া যাবে কিন্তু মাস্ক পরতে হবে। দুটো টেবলের মাঝে যদি আবরণ দেয়া হয় তাহলে রেস্টুরেন্টেরও আর দেড় মিটার ডিসটেন্স মানার প্রয়োজন নেই। যৌনকর্মী’রা পহেলা জুলাই থেকে তাদের পেশায় ফিরতে পারবেন।

দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় সব ধরনের ইনডোর-আউটডোর খেলাধূলার স্কুল, ছোটদের-বড়দের সবার জন্যে সব চালু হবে পহেলা জুলাই থেকে। গানের রিহার্সেল ইত্যাদিও চলতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, ইটালী, ফ্রান্স আর জার্মানীর সাথে নেদারল্যান্ডস ভ্যাক্সিন আবিস্কার আর সুলভ মূল্যে বাজারজাত করনের জন্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পানির সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে বেঁচে থাকার ইতিহাস আছে নেদারল্যান্ডসের, সেই ইতিহাস বিফল হতে পারে না। আপাতত করোনা যুদ্ধে দু’মাস আগেই নেদারল্যান্ডস জয়ী হয়েছে, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে যে কন্ট্রোল ফেজ আসার কথা ছিলো তা পহেলা জুলাই থেকেই এসে গেলো। চিয়ার্স।

No comments:

Post a Comment