Friday 11 December 2009

ব্লগার বৃত্তান্ত

ইহা একজন অতিশয় ফালতু ব্লগারের আরো অতিশয় ফালতু চিন্তা ভাবনা। স্বার্থান্বেষী মহলকে ইহা হইতে ত্যানা প্যাঁচাইয়া সূতার ফ্যাক্টরী খোলার চিন্তা ভাবনা হইতে দূরে থাকার অনুরোধ করা হইতেছে।


আমার সংক্ষিপ্ততম ব্লগার জীবনের ক্ষুদ্রতর পরিসরে ব্লগ নাটকের যা দেখছি তাতে আমার মতে এই নাটকের চরিত্রগুলোকে প্রায় চার ভাগে ভাগ করা যায়।


প্রথম ভাগঃ ইহারা অতিশয় নিরীহ, গোবেচারা ব্লগার। বোকা - সোকা বললেও সেটা ভুল না। সারাদিন বাইরে কাজ টাজ করিয়া, তারপর সংসারের যাবতীয় নিরান্দময় কাজ সারিয়া নেটে বসেন। সারাদিনে একটু ঝটাঝট খবরের কাগজে চোখ বুলানো ছাড়া এরা বাইরের পৃথিবীর সাথে বিচ্ছিন্নই থাকেন বলা চলে। এদের ব্লগিং এর একমাত্র কারন নিজস্ব বিনোদন ও সামাজিকতা, বন্ধু বান্ধবের সাথে একটু হাসি ঠাট্রা কিংবা একটু রসময় খোঁচাখুচি। এদেরকে চরম ক্ষেতু ক্যাটাগরীর ব্লগার বলা চলে। ছোটবেলায় একটা সাদাকালো সিনেমা দেখেছিলাম, আজ আর নাম মনে নেই। যার নায়ক ছিল ফারুক, গ্রাম থেকে মাত্র শহরে এসেছে, নিয়ম কানুন কিছুই জানে না, রাস্তার মাঝ দিয়ে আস্ত কলার ছরি নিয়ে হাটছিলো, রাস্তায় প্রায় যানজট হয় হয় অবস্থা। এর মধ্যে যতো গাড়ি যাচ্ছিলো ফারুককে একটা করে বকা দিয়ে যাচ্ছিলো। এই ক্ষেতু ব্লগারদের সেরকমই অবস্থা প্রায়। ব্লগের রীতি নীতি, পলিটিক্স কিছুই জানে না নেহাৎই কোন একদিন বইপত্র ঘেটেছিলো সেই অভ্যাসের কারনে অক্ষর দেখলেই লিখতে পড়তে বসে যায়। এদের কোন মিশন - ভিশন নাই। অকাজের বলা চলে। কিন্তু ব্লগায় প্রচুর যদিও আজাইরা। যা দেখে তাই নিয়েই লিখতে বসে যায়।


দ্বিতীয় ভাগঃ উনারা অতিশয় বিদ্বান ও জ্ঞানী। পৃথিবীর কোথায় কি কোন মূহুর্তে ঘটেছিল সব সাল তারিখ মিনিট সেকেন্ড মাইক্রোসেকেন্ড শুদ্ধ যেকোন জায়গায় বসে যেকোন সময় বলতে পারবে। সবজান্তা শমসের টাইপ উনারা। জ্ঞানের মহাসমুদ্র উনাদের কাছে নিছকই কুঁয়া। যেকোন বিষয়েই উনারা এতো প্রচুর জ্ঞান ধারন করেন যে আপনি টাশকি খেয়ে যাবেন আসলে কোন বিষয় উনার “স্পেশাল পেপার” ছিল গ্র্যাজুয়েশনের সময়। উনারা অতিশয় স্মার্ট ক্যাটাগরী ব্লগার যদিও সাধারনতঃ উনারা ব্লগ লিখে সময় নষ্ট করেন না। নিতান্ত কোন অঘটন ঘটে গেলে প্রচুর জ্ঞানের বানী দিয়ে উপদেশমূলক বিশ্লেষনধর্মী কিছু লিখেন মানব জাতির কল্যানের জন্য। আর কোন কারনে নয়। স্নিগ্ধ ভাব ভঙ্গীতে স্মিত হাস্যে সবদিকে শ্যোন দৃষ্টি রাখেন। সমাজের সমস্ত দ্বায়িত্ব উনাদের স্কন্ধে দেয়া আছে। লগিত কিংবা অলিগত অবস্থায় কে কোথায় কি লিখল, তাতে সমাজের কোন স্তরের লোকের কতোটুকু অপমান হইলো, কিংবা কে লাঞ্ছিত হইলো, পৃথিবীর বায়ু স্তরের ভারসাম্য ঠিক রইল কিনা ইত্যাদি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ন সর্বদিকে তারা টনটনা সজাগ। আর কিছু নাও পেলে, জ্ঞান ঝাড়ায় জন্যে বানান বা বাক্য বিন্যাস কিংবা সন্ধি - সমাস, ব্যকরণতো আছেই। বাস্তব সমাজ রসাতলে যাচ্ছে যাক কিন্তু ব্লগ বা ভার্চুয়াল সমাজ থাকতে হবে “নীট এন্ড ক্লীন”। এখানে সুশীলতা, উজ্জলতা, মানবতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, চিরন্তন বহমান।


তৃতীয় ভাগঃ এরা ব্লগে সাধারনতঃ নিয়মিত থাকেন না। ক্যাচালের সময় হঠাৎ করে উদয় হন। কোন সময় হয়তো সেদিনই লগ ইন করেছে আবার কোন সময় কারো দ্বারা ইনফর্মড হয়ে বা ব্রেন ওয়াশড হয়ে নিছক দলাদলি করতে বা দল বাড়াতে কিংবা মজা নিতে আসে। এদেরকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা ক্যাটাগরীতে ফেলানো যেতে পারে। কি নিয়া হাউকাউ করতেছে, তা তার নিজের কাছেও পরিস্কার না। আগা নাই মাথা নাই প্যাটা নিয়া টানাটানি। সবাই করতেছে তাই সেও করতেছে, আমিতো এমনি এমনিই করতেছি টাইপ হলো উনারা। কিন্তু ভাব এমন থাকে যে এমন মহান কাজে অংশগ্রহন করতে পেরে সে “ধইন্য”। সমাজ উদ্ধার করল। কিছু আবর্জনা সাফ করলো, পরকালে শুধু এইকারনেই তার পুরস্কার নিশ্চিত। আরিফ বা তাসলিমার বিরুদ্ধে লাঠি নিয়ে বের হওয়া মোল্লাদের চেহারার মধ্যে যে তৃপ্তি দেখা যেতো পত্রিকার ছবিতে তাদের চেহারাও সেরকম তৃপ্ত ভাব নেয়া। অবশ্য শিয়ালের মতো ধূর্তও কিছু থাকে। সুযোগে পার্ট নিয়া সাইড হিরোর রোল দখল করার ধান্ধায়।


চতুর্থ ভাগঃ এরা সাধারন ব্লগার নন। এরা ব্লগকে নিয়ন্ত্রন করেন। জাহাবাজ আঁতেল টাইপ। এদের মনের মধ্যে কি আছে আপনি এদের পেটে বোম মেরেও ধারনা করতে পারবেন না। এরা এধরনের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন ও তার সদ্বব্যবহার করেন। নিজেরা কোন ক্যাঁচালে প্রকাশ্যে না জড়িয়ে অদৃশ্য হাত দ্বারা যেকোন ক্যাচাল লাগানো, বাড়ানো, নিয়ন্ত্রন ও বন্ধ করেন। তারপর যার ওপর রাগ থাকে তাকে তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ব্যান বা ব্লক ও সাইজ করেন। এরা হলেন প্রভু ক্যাটাগরী। তাওয়া গরম থাকতে থাকতে তারা রুটি ভাজেন না। তারা অসম্ভব ধৈর্য্যশীল ও বিচক্ষন। তাওয়া অল্প ঠান্ডা করে তারমধ্যেই রুটির এপিঠ ওপিঠ টিপে টিপে ভেজে খাবেন কিন্তু কোথাও খুন্তি নাড়া দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিবেন না। এদের পরবর্তী লক্ষ্য থাকে সাক্ষাত মন্ত্রীত্ব।

তানবীরা
১১.১২.০৯

6 comments:

  1. পুরাই পাঙ্খা পোস্ট। মিয়া কয়েকটা লাইন দুর্দান্ত লেগেছে, সে তো চ্যাটেই বলেছি।

    ReplyDelete
  2. পাঠকের ভালো লাগলেই লেখক সার্থক।

    ReplyDelete
  3. হাহা!! ব্যাপক!!
    আমি কোনটায় পড়ি তা কিন্তু বলব না?!! ;)

    ReplyDelete
  4. বলতেই হবে, ছাড়াছাড়ি নাই ঃ(

    ReplyDelete
  5. আমি কোনটায় পড়ি তা ভাবছি। সবগুলোতেই নাকি?

    ReplyDelete
  6. হাহাহাহা গৌতম, আমি কোন ক্যাটাগরীতে পড়ি, প্রথমটাতেইতো নাকি?

    ReplyDelete