Wednesday 30 December 2009

টুকরো টাকরা গল্প ১

আমার মেয়ের মাঝে আমি অনেক সময় বিশাল দর্শন, জ্ঞান - বিজ্ঞানের সন্ধান পাই। অসংখ্য আপাতঃ ছোট খাটো ব্যাপারে ওনার মন্তব্য, ক্রিয়া - বিক্রিয়া দেখে বিশাল মজাও পাই। মা - বাবা আর উনি এ জীবন থেকে যখন আমরা বছরে একবার অনেক লোকজনের দেশ, বাংলাদেশে যাই, আত্মীয় স্বজনের ভিড়ে ওনি কনফিউজড থাকেন। অনেককেই প্রথম দেখে, আবার অনেকের কথা হয়তো মনে থাকে না কিংবা মনে রাখতে পারে না। কিন্তু বুদ্ধির চার্তুয্য খেলেন আমার কন্যা। শাড়ি, কাপড় চোপড় কিংবা চুলের রঙ দেখে ওনি তার সাথে সম্পর্ক ঠিক করেন। একবার আমার এক বেশ মর্ডান চাচী এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে। আমার মেয়ে ওনাকে “খালামনি” বলেছে। আমি তাড়াতাড়ি বল্লাম ওনি “দিদা”। আমার মেয়ে খুবই গম্ভীর গলায় বললো, “দিদা” কি করে হবে? ওতো সালোয়ার কামিজ পরেছে আর দেখোনা চুলটা কেমন কাটা? “দিদা”রাতো এভাবে চুল কাটে না আর এই ডিজাইনের সালোয়ার কামিজও পরে না।

!!!! ডিং ডং

আমার নানুর বয়স হয়েছে। তিনি আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। তাই আমরাই গেলাম আমাদের নানুবাড়ি। আমি - কন্যা - কন্যার পিতা এক বাসায় থাকি এটাই তার কাছে স্বাভাবিক। বাংলাদেশে আসলে সে আমার সাথে বেশি নানার বাড়ি থাকে এটাও সে জানে। মায়ের বাবা মা আছে একটা কষ্টে সিষ্টে সে মেনেও নেয়। আব্বুরও আছে কি আর করা, যাক সেটাও সহ্য করলো। কিন্তু আমার মানে মায়েরও নানা বাড়ি আছে মানে “দিদার”ও মা বাবা আছে, আরো অন্য একটা বাড়ি আছে তাতে সে ভীষন কনফিউজড। “দিদা” থাকবে দিদার বাসায়, তার তিনকূলে কেউ থাকবে না এ হিসাবটাই সোজা আপাত দৃষ্টিতে। মা কখনো ছোট ছিল এটাইতো আজব ব্যাপার তার কাছে, মায়ের ছোট বেলার ছবি দেখলেই সে নানা প্রশ্ন করতে থাকে, “তুমি কেনো ছোট ছিলে”? তুমিতো আম্মি। আম্মি কি করে ছোট হবে? এখন যখন শুনে দিদাও কোন দিন ছোট ছিল, ফ্রক পরে, মাথায় রিবন লাগিয়ে এ বাড়ির ঘরে বাইরে উঠোনে দৌড়াদৌড়ি করেছে, সে তার স্বাভাবিক কল্পনায় তা মানতে পারে না।

আমি শয়তান কিসিমের মানুষ। মানুষকে খোঁচাইয়া বিশাল আনন্দ লাভ করি এটা সত্য কথা। মেয়েকেও না খোঁচাইয়া পারি না। মানুষ অভ্যাসের দাস, আমি তার ব্যতিক্রম না। মেয়েকে তার বাংলা ভাষা জ্ঞান আর উচ্চারনের বহর দিয়া বহুত খোঁচাই। সারা ডাচেরা আমাদের যতো বিরক্ত করেছে, মেয়েকে সে সমাজের প্রতিনিধি ভেবে তার ওপর সেগুলো ঢেলে দেই। মেয়ে যথেষ্ঠ বিরক্ত হয় আমার এহেন হি হি হাসিতে। বলতে থাকে রাগিত মুখে, দুষ্ট আম্মি, দুষ্ট আম্মি। কিন্তু চোরে না শুনে মেয়ের বকা। আমি তাকে আরো বিভ্রান্ত করার জন্য বলতে থাকি, আমার নানুরও আলাদা বাড়ি আছে, সেও ছোট ছিল, তারও বাবা মা আছে। আবার নানুর মায়েরও মা আছেন, তিনিও আবার অন্য বাড়িতে থাকতেন ... আমার মেয়ে টাশকি খেয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বলতে পারে না। সৃষ্টির এই অসীমতায় তার বুদ্ধিলোপ পায়। সে সময় অন্যরা এসে মেয়েকে আমার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

অনেকদিন ধরে বাইরে আছি, অন্তর্জালেও বিচরন করি বেশ অনেককাল হয়ে গেলো। বিদেশে আসার পর প্রধান যে ব্যাপারটা নিয়ে সবার সাথে বিতর্ক বা আলোচনা হয় সেটা হলো “ধর্ম”। ব্লগগুলো শুরু হওয়ার আগে যখন ভিন্নমত, মুক্তমনা, সদালাপ, সাতরঙ, বাতিঘর কিংবা বাংলার ইসলাম ছিল ঘুরে ফিরে এই নিয়েই আলোচনা আর বিতর্ক হতো। ব্লগ হওয়াতে ভিন্ন ভিন্ন লেখার পড়ার সুযোগ হয়েছে। ব্লগ হোক কিংবা ওয়েবজিন হোক কিছু কিছু লোকের লেখা পড়লে, তাদেরকে আজকাল আমার মেয়ের মতো সাত বছরের শিশু মস্তিকের অধিকারী মনে হয়। যা তার জ্ঞান, কল্পনা কিংবা হিসাবের বাইরে তাইই অবাস্তব। যা তাদের চিন্তা ভাবনার বাইরে তাই অসম্ভব। চিন্তা ভাবনাকে ঐ এক ঘরে বন্দী করে ফেলেছে। কি ধর্ম, কি বিজ্ঞান, কি স্বাধীনতা কিংবা কবি আল মাহমুদ সবই একই বৃত্তে ঘুরে। বানরের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এসেছে !!! তাই কি হয়? তাহলে হাতি কোইত্থেকে আইলো শুনি? আকাশ মানে শূন্য অসীম, কি করে হবে? মাথা তুলে তাকালেই নীল দেখা যায় না? অসীমতা কল্পনা করা কষ্ট তার চেয়ে সাত আসমানের ধারনাটাই বেশি কাছের। পাঞ্জাবী পায়জামা পরা মানেই খাঁটি মুসলমান, ভালো লোক। তাহলে বন্দুক হাতে নিক না নিক তিনিই মুক্তিযোদ্ধা।

ধন্যবাদ সবাইকে।

তানবীরা
৩০.১২.০৯

No comments:

Post a Comment