Saturday 2 October 2010

জীবন থেকে নেয়া (টুকটাক)

অনেকদিন আগে এই নামে একটিা সিরিজ লিখতাম। মাঝখানে নানা কারনে লেখা হয়ে ওঠেনি, বহুদিন পর আবার জীবন থেকে নেয়া সিরিজটি লিখছি। শেষ কবে লিখেছিলাম তার সঠিক তারিখটি যদিও মনে নেই তবে একবছরতো হবেই। এ পর্বের নাম দিলাম

টুকটাক

১. এদেশে মাদার্স ডে নিয়ে বেশ একটু মাতামাতি আছে। প্রাইমারী স্কুলে তাদের রেগুলার কারিকুলামে মার্দাস ডে’র জন্য টাইম রাখে। মাদার্স ডে উপলক্ষ্যে বাচ্চাদেরকে জিনিসপত্র দেয়া হয় মায়ের জন্য নিজ হাতে কিছু বানানোর জন্য। টীচাররা হেল্প করে আর বাচ্চারা রোজ তাদের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের উপহারে কাজ করে। আমার মেয়ে রোজই বাবার কানে ফিস ফিস করে আপডেট জানায় আজকে স্কুলে তারা মায়ের গিফটে কি দিয়ে কি করলো। এতো জোরে ফিস ফিস হয়যে আমি ঘরের যেকোন প্রান্ত থেকে তা শুনতে পাই। আবার মেয়ে এসে চেক করে যায় শুনছি নাতো। অবশেষে এলো সেই শুভদিন। মেয়ে স্কুলে থেকে শেখানো গান গেয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞেস করলো আমি কি খেতে চাই নাশতায়? সে নাস্তা বানাবে কিন্তু চা বানাতে পারবে না তার হাতে গরম লাগবে। ডিমও পোঁচ করতে পারবে না তাতে হাত পুড়ে যাবে। আমাকে শুধু বলতে হবে রুটি কি জ্যাম দিয়ে খাবো না পিনাট বাটার দিয়ে ঃ)। তারপর এলো গিফট নিয়ে। নিজ হাতে বানানো একখানা শিল্পকর্মের সাথে আছে একখানা কার্ড। কার্ডে লিখতে হবে মাকে সে কেন ভালোবাসে। তিনি লিখেছেন, তার মা ভালো রান্না করতে পারে তাই তিনি তার মাকে ভালোবাসে।

ডিং ডং !!!! জীবনে এতো কিছু করলাম নাচ, নাটক, আবৃত্তি, লেখাপড়া কোন কিছুরই কিছু হলো না। সব জায়গায় সবার কাছে একটাই পরিচিতি হলো, রান্না ভালো করি। মেয়ের কাছে পর্যন্ত তাই

২. বাংলাদেশে মেয়ে খুবই আনন্দ পায়। নানাবাড়িতে সবার বড় আর দাদাবাড়িতে সবার ছোট হওয়ার সম্পূর্ন সুযোগ নিতে নিতে সে অভ্যস্ত। অবাধ সে দুষ্টামিতে বাধ সাধতে আসে শুধু এ ডাইনী মা। তারস্বরে চেঁচিয়ে কেঁদে কেটে সে মায়ের নামে নালিশ করে সবার কাছে। বাসায় অন্যদের ভাইরাল হওয়ার সুবাদে একদিন রাতে আমার কাছে সে শুতে এলো। অনেক গল্প করার পর আমি বল্লাম, আমাকে যখন তোমার পছন্দ না, তুমি আব্বুকে বলো, তুমি আর আব্বু মিলে একটা লক্ষী মা নিয়ে নাও। মেয়ে প্রথমে অবাক হলো এ সমস্যা সমাধানের এ ধরনের সহজ সম্ভাবনা কেনো তার মাথায় আগে খেলেনি বোধহয় এই ভেবে। আমি কি করবো, কোথায় থাকবো খুবই গম্ভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে জিজ্ঞেস করলো। আমি বল্লাম, আমি থেকে যাবো বাংলাদেশে আমার বাবা মায়ের কাছে, এখানেই অন্যদের মতো আমিও চাকরী করবো। তারপর গভীরভাবে ভেবে সে বললো, একটু দুষ্ট হলেও মা হিসেবে তুমিই থাকো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেনো? গম্ভীর মুখে প্র্যাকটিক্যাল বাবার মেয়ে প্র্যাকটিক্যাল উত্তর দিলো, কারন, তুমি ডাচ আর বাংলা দুটোই জানো। অন্যরাতো জানে না।

ডিং ডং!!! দুটো ভাষা জানায় আমি মা হিসেবে কোয়ালিফাই করলাম

৩. আমি এবার বাংলাদেশে গিয়ে আমার সাধের “বিরিশিরি” বেড়াতে গেলাম। ছিলাম আমরা “ওয়াই।এম।সি।এর হোষ্টেলে। আমি এই পুরো বিল্ডিংয়ের একমাত্র কমোড শুদ্ধ বাথরুমওয়ালা রুমটা ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে গিয়েছি। আমার মেয়ে কমোড ছাড়া বসতে পারে না, বাস্তব সমস্যা। সারা ওয়াই, এম, সি, এতে আমরা ছাড়া কেউ নেই। একদম ফাঁকা যাকে বলে ভি।আই, পি ব্যবস্থা। গরম, বৃষ্টি আর রোজায় এটাই স্বাভাবিক। দিনের বেড়ানো শেষে সন্ধ্যায় আমি তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলাম। আমাকে গোসল দিতে হবে। আমি মোটাসোটা মানুষ, গরমে আমার চর্বি সারাক্ষন গলতে থাকে। আমাকে কম করে হলেও ঢাকায় তিনবার গোসল করতে হয়। বাথরুম ছোট, অন্য সমস্ত ব্যবস্থা খুবই সাধারনের চেয়ে সাধারন হলেও তাতে টয়লেট পেপার দেয়া আছে, এ আনন্দে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। মেয়েকে টয়লেটে বসিয়ে দিয়ে মাত্র টয়লেট পেপারের রোল টেনেছি, তৎক্ষনাত এতো বড় পেটওয়ালা এক মাকড়সা তার থেকে বেড়িয়ে এলো। কতো বছর বাদে মাকড়সা দেখেছি কে জানে তাও আবার গর্ভবতী। আমি এক চিৎকার দিয়ে ছিটকে বাথরুমের বাইরে। আমার অনভ্যস্ত শরীর আর অপ্রস্তূত মন ঘৃনায় রি রি করতে লাগলো। মফস্বলের সেই স্বল্পালোকিত বাথরুমে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশে কি ঘটনা ঘটে গেলো, আপাতঃ দৃষ্টিতে গুন্ডা কিসিমের মা কেনো এতো বড় চিৎকার দিলো, আমার মেয়ে তার কিছুই বুঝতে না পেরে সমানে জিজ্ঞেস করছে আম্মি কি হলো, আম্মি কি হলো?

চিৎকারের শব্দে ভাইয়া তার রুম থেকে বেড়িয়ে ধমাধম আমাদের দরজায় মারছে কি হলো কি হলো, দরজা খোল। আমি মোটামুটি গোসলের জন্য প্রস্তূত তাই দরজাও খুলতে পারছি না। কোন রকমে সব গুছিয়ে দরজা খুলে মেয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হলাম। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম পার্মানেন্টলী, থাক গর্ভবতী মাকড়সা থাক তার স্বস্তি নিয়ে। ভাইয়ার বাথরুমে যেয়ে দেখি কড়াই থেকে উনুন। দুটো তেলাপোকা পেট উলটে সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তারপরও সেখানে গোসল সেরে কাপড় টাপড় জড়িয়ে নিজের ঘরে ফেরত এলাম। আমার চিন্তা চেতনায় আছে যতো দ্রুত মশারি টানিয়ে তার নীচে আশ্রয় নেয়া যায় এই পোকা মাকড়ের ঘরবসতির কাছ থেকে। সেই লক্ষ্যে আমি দ্রুত হাত চালাচ্ছি আর সব গোছাচ্ছি। আর একটি ভয়ও আছে এরমধ্যে বিজলী চলে গেলেতো যাকে বলে “সোনায় সোহাগা”। আমার ছোট বোন যে এখনো এধরনের পরিবেশে একেবারে অনভ্যস্ত হয়ে যায়নি সে রিলাক্স গলায় আমাকে বললো, বাইরের গান শুনতে পাচ্ছো?

আমি অবাক হলাম কিসের গান? বাইরে কোন শব্দ হচ্ছিলো কীনা সেটাতে মনোযোগ দেয়ার মতো মনের অবস্থা তখন আমার ছিলো না। বোন বলাতে প্রথম শুনলাম যদিও বুঝলাম না গান না চিৎকার না অন্যকিছু। আমি বল্লাম বিরক্ত গলায় কে গান গায়? সে সময় আমার মনে যে ভয়ার্ত অবস্থা বিরাজ করছিলো তাতে কোন শিল্পকর্মের রস নেয়ার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। বোন বললো, নীচে যে ছেলেগুলোকে দেখলাম মনে হয় সেগুলো। বাংলাদেশের সব ইনস্টিউটে যেমন কতোগুলো আজাইরা ছেলেপুলে ঘোরাফেরা করে, এটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আমি আরো বিরক্ত গলায় বল্লাম, কার জন্যে গায়? বোন আরোই নিস্পৃহ গলায় বললো, হোষ্টেলেতো আমরা ছাড়া আর কেউ নেই, তাহলেতো মনে হয় আমাদের জন্যই গায়। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে বল্লাম, আমার জন্য না। বোন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি করে বুঝলে? আমি বল্লাম, আমি মেয়ের মা, আমার জন্য গান গাইতে কার ঠেকা পড়েছে? বোন বিরক্ত হয়ে বললো, ওরা কি করে জানবে কে মেয়ের মা আর কে মেয়ের খালা?( এ প্রসংগে একটা কথা বলতে হবে, নইলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে না। আমি কেনাকাটা করতে বেড়োই বাসা থেকে কাউকে নিয়ে। কিন্তু কিছু পছন্দ করতে গেলেই সমস্যা হয়। আমার ধারনা সব জামা কাপড় আমাকে মানাবে না কারন আমি আর এখন কলেজ গোয়িং কেউ না। তারাও আমাকে পালটা বুঝায়, যতো বুড়িভাব আমি ধরার চেষ্টা করি, ততো বুড়িও আমি আবার না।)গল্পে ফিরে আসি। আমি খুবই বিজয়ীর ভঙ্গীতে বল্লাম, মেঘ যখন নীচে দৌড়াদৌড়ি করছিলো আমার সাথে খেলছিলো তখনতো সবাই দেখতেই পেয়েছে। আমার বোন তার চেয়ে ঠান্ডা গলায় জবাব দিল, তো, তাতে যারা গান গাইছে তাদের কি “ফারাক” পড়লো?

ডিং ডং!!!!

৪. “বিরিশিরি” থেকে আসার পথে ময়মনসিংহ এসে এসি বাসের টিকিট কিনে বসে আছি। বাস কখন ছাড়বে তার ঠিক নেই, কখন পৌঁছবে তারও ঠিক নেই। বিরক্তিতে আমার মাথা ঘুরছে। ক্লান্তি ঘুমে আমি জেরবার। এমন সময় আমার ফিচলা ছোট বোন আমাকে বললো, একটা ছেলে নাকি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করার খুব চেষ্টা করছে। আমি বোনের নির্দেশিত পথে তাকাতেই দেখলাম, শার্ট – প্যান্ট, ঘড়ি - সানগ্লাস পরা এক যুবক খুবই ভাব নিয়ে বাস যেখানে থেমে আছে তার সামনের দোকানটায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক মতো মোঁচ দাড়ি গজিয়েছে কি না কে জানে। আমি বোনকে কড়া গলায় ধমক দিলাম, আবার যদি ঘুম থেকে ডাকবি তোর পিত্ত আমি গেলে দিবো। ফিচলা বোন বললো, আহা কি মজাদার ভাবভঙ্গী করছে, ঘুমাইলে দেখবা কি করে? আমি নিরাসক্ত গলায় বল্লাম, যে ছেলেকে ময়মনসিংহ থেকে পাজেরো বাদে বাসে ঢাকা যেতে হয় তার কোন ভাবভঙ্গীতে আমি আগ্রহী না। বোন অবাক গলায় বললো, তুমি নিজে যে যাইতেসো, তার বেলায়। আমি তখন নিরুপায় গলায় বল্লাম, তারপরও না।

ডিং ডং!!!!

৫. ২০০৮ সালে ভ্যালেন্টাইন ডেতে বইমেলায় গেলাম। সেদিন বইমেলায় বেশ ভীড়। আমরা ঘোরাঘুরি করে, সেখানে এলাম যেখানে লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়।(জায়গাটার নাম এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না)। কারো বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠান হচ্ছিল তখন সেখানে দেখলাম বেশ অনেক ছবি টবি তোলা হচ্ছে। আমরাও তাড়াতাড়ি লাইনে দাড়ালাম। বিখ্যাত কারো সাথে ছবি তোলার চান্স মিস করতে আমরা রাজি ছিলাম না। আমরা চারবোন প্লাস আমাদের ভাবি। কবি বা লেখক সাহেব আহ্লাদে গলিত হয়ে আমাদেরকে সবার আগে ডেকে নিলেন ওনার সাথে ছবি তুলতে। আমরা দন্তবিকশিত হাসি দিয়ে ফটো তুলে ষ্টেজ থেকে নামছি আর একজন আর একজনকে জিজ্ঞেস করছি ওনি কি কবি না লেখক? ওনার নাম কি, পরিচয় কি? কেউ জানে না কেউ জানে না শুধু ………। একবার ভাবলাম যাই, যেয়ে জিজ্ঞেস করি, ভাই আপ্নে কে, কি আপনার পরিচয়? কিন্তু ভীড় ভাট্টা দেখে আর সে সাহস হয়নি। আজো জানি না তিনি কে ছিলেন?

ডিং ডং!!!!

তানবীরা
৩০.০৯.১০

2 comments:

  1. এবিতে পড়ছিলাম। আপু ফন্ট সাইজটা পারলে একটু ছোট করে দিয়েন। ভিজিটররা খুশি হবে না এই সাইজে! অনেক দিন পর ব্যক্তিগত ব্লগে পোস্ট!

    ReplyDelete
  2. বাপ্পী অনেক অনেক থ্যাঙ্কস, সাইজ ছোট করে দিলাম। লেখা আজকাল আসে না তাই হাবিজাবি লিখে চেষ্টা করছি অভ্যাসটা ফিরে পাওয়ার

    ReplyDelete