Sunday 19 December 2010

গভীর ভাবের পোষ্ট

প্রবাসে আমার দশা অনেকটা “ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলা”, “নাই বনে শিয়াল রাজা” কিংবা “আলু”র মতো। “আলু” মানে সব তরকারীতেই যায় আর কি। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে কেউ নেই, ঠিকাছে “ওনি, কাচ্চা বাচ্চাদের নাচ দেখিয়ে দেয়ার কেউ নেই, ঠিকাছে “ওনি”, সেমিনারে বিদেশী গেষ্ট আসবে, ইংরেজী - ডাচ বলতে একজন মেয়ে দরকার, তাইলে “ওনি”, প্রধানমন্ত্রী আসবে মানপত্র পাঠ করতে লাগবে, আচ্ছা আর কাওরে না পেলে “ওনি”তো আছেনই। সবার লাষ্ট চয়েস। এহেন আমি কয়দিন ধরে গভীর ভাবে আছি।

প্রথম ভাব অবশ্য আসার আগেই কেটে গেছে। ঢাকা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি ফকিরের মতো অসহায় হয়ে নিজের স্যুটকেসের আশায়। এ্যমেরিকানদের ঢাউশ ঢাউশ লাগেজের ভিতরে আমার রোগা পটকা স্যুটকেসের আর দেখা নেই। ঘন্টা পার হয়ে গেলে দেখা যাচ্ছে আমরা অনেক ইউরোপীয়ানই কনভেয়র বেল্টের চারপাশে লাট্টু খাচ্ছি আর ইয়া নফসী ইয়া নফসী করছি। ঐদিকের কাঁচের জানালা পাশ দিয়ে কয়শো টাকার জানি টিকেট কেটে ছোটবোন আর ভাইঝি ঢুকে হাত নেড়ে যাচ্ছে। মেয়ে ষোল ঘন্টার জার্নির শেষে এই কষ্ট আর নিতে পারছে না, এক ঠ্যাঙ্গে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা এক জায়গায় তাও যখন ঐপারে মধুর হাতছানি। কেঁদে কেটে, ঘ্যান ঘ্যানিয়ে চরমভাবে সে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এমন সময় এক তীক্ষন ভাষিনী কানের পাশে বলে উঠলেন, “আপনাদের স্যুটকেস পাইছেন”? আমি ফিরে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না ওনি কাকে বলছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চাইলাম আমাকে বলছেন? তিনি মাথা নেড়ে নিশ্চিত করলেন, আমাকেই বলছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না হঠাত আমাকে কেনো?

তিনি আমার প্রশ্নবোধক মুখভঙ্গী লক্ষ্য করে বললেন, আমাকে চিনতে পারেন নাই, আমি আমষ্টারডাম থাকি। ঐ যে বৈশাখে আপনার সাথে দেখা হলো, আপনি নাচলেন অনুষ্ঠানে। আমি আমার স্মৃতির মনিকোঠায় বারি মেরেও কিছু বের করতে না পেরে, চুপচাপ মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মহিলা তাতেও দমলেন না, তিনি বললেন, আপনে না চিনলেও সমস্যা নাই, ভাইয়ের সাথে পাশের বেল্টের কাছে দেখা হইছে, কথা হইছে, ওনি চিনছেন আমাকে। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, পরিবারের কেউতো ভদ্রতা রক্ষা করেছে। তখন আমি আমার স্যুটকেস আর ঐ আজাবখানা থেকে বেরোনো ছাড়া কিছু ভাবতে না পারলেও পরে ঘটনাটা মনে পরে বেশ ভাব ভাব ভাব আসলো মনে। “ইষ্টার ইষ্টার” ভাব।

দ্বিতীয় বারের অবস্থা আরো খারাপ। আমরা বড় গ্রোসারী করতে পাশের দেশে বেলজিয়ামে যাই। সেখানে তুলনামূলকভাবে সস্তা প্লাস অনেক বেশি চয়েস থাকে। কিন্তু বাংলা বাজার যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কি এর বিরাট সমস্যা। আমরা বিশ কেজির বাশমতি, রুই, কই, ইলিশ, পাবদা, কাকরোল, পটল, আলাদ্দিনের মিষ্টি, প্রানের ঝাল চানাচুর, খেজুরের গুড় ইত্যাদি কিনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি গেছেন গাড়ি আনতে। শনিবার একেতো অনেক ভীড় সাথে ঠোলাদের আনাগোনা। এচাল থেকে বেচাল মানেই জরিমানা, টিকিট। সাধারনতঃ দোকান থেকে কেউ আমাদের বাজার গাড়িতে তুলতে সাহায্য করেন, সেদিন অনেক ভীড় তাই দোকানের কেউ গা করছেন না। আমিই একবার মেয়ে দেখছি, আর একবার প্যাকেট দেখছি ভীড়ের মধ্যে কেউ যেনো আমার লটকে শুটকি না নিয়ে যায় আর একবার দেখছি গাড়ি এলো কি না। এরমধ্যে একজন বেশ গোলগাল ভুড়িওয়ালা ভাইজান এসে বললেন, “স্লামালিকুম আপা, কেমন আছেন, মেয়েতো দেখি মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছে।“ টাশকিত আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস্ করলাম, আমাকে বলছেন? তিনি বিমলানন্দে বললেন, “হ আপনারেই। কয়দিন আগে না আপনের নাটক দেখলাম, মনে নাই আমারে?”

আমি আমতা আমতা করছি চরম বিরক্ত নিয়ে। ওনি বিরাট হাসি দিয়া বললেন, অসুবিধা নাই, না চিনলে, পরের প্রোগ্রাম যেনো কবে, আবারতো দেখা হইবো। এবার কি করবেন, নাটক না নাচ? সেই মূহুর্তে গাড়ির টেনশান বিরক্তি আর ইলিশ মাছ পটলের মাঝে আমাকে কেউ “ইষ্টার” হিসেবে সনাক্ত করুক তা আমি কিছুতেই চাইছিলাম না। কিন্তু কিছু বলতেও পারছি না। ফোনে আমার ভাইকে এ গল্পটা এটুকু একদিন বলতেই ভাই বিরক্ত হয়ে বললো, চরম বেকুবতো তুই। তুই বলবি না, হ্যা চিনসি আপনারে, এখন আমার চালের বস্তাটা একটু গাড়িতে উঠায় দেন। কিন্তু তখন সেই বুদ্ধি মাথায় যোগায় নাই। পরে মাছ তরকারী সমেত শান্তিতে গাড়িতে বসার পর আবার আমার মনের মধ্যে ভাব খেলা করতে লাগলো। এই ভাব সহ্য করতে না পেরে এই পোষ্টের অবতারনা।

ডিং ডং

একটি অতিরিক্ত ভাবমূলক ছড়াঃ

ডুবে আছি বরফের তলে

কষ্ট যন্ত্রনা প্রতি পলে

বাসার ভিতরে হিটিং জ্বলে

এটাকে কি সুখে থাকা বলে?

মেঘলার স্মৃতিতে ছড়াখানি আজ এরূপে ধরা দিয়েছে

হাট্টিমা টিম টিম

তারা গাছে মারে ডিম

তাদের ঘাড়ে দুটো শিং

তারা হাট্টিমা টিম টিম

তানবীরা

No comments:

Post a Comment