Thursday 14 December 2017

হোক্স ইন সোশ্যাল মিডিয়া স্পেসিফিক্যালি ইন এফ বিঃ

কয়দিন ইনবক্সে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা বার্তা আসতে থাকলো। অমুক যদি আপনাকে “ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট” পাঠায়, এক্সেপ্ট করবেন না। সে ফ্রেন্ড হলে আপনার চৌদ্দ গুষ্টি’র খবর নিয়ে আপনাকে ব্যাঙ্ক ক্রাফট করে ছাড়বে, আপনার জমি জমা হাতাবে, ফেসবুকের ফার্মভিলের মালিকানা নিয়ে নেবে ইত্যাদি ইত্যাদি। যতদিন না আরিফ জেবতিক ভাই, তার যুগান্তকারী স্ট্যাটাস দিলেন, অমুকের সংগে আমি বন্ধুত্ব করমু, চা খামু, চ্যাট করমু, আড্ডা দিমু, সেলফি তুলমু, আপনের কি? ততদিন চললো এই সতর্কবার্তা।

তারপর এলো, মায়ানমার’কে রক্ষা করার হুজুগ। ইউনুস নবী মাছের পেটে আটকে ছিলেন, এই দোয়ায় বের হয়েছেন সো এখন মায়ানমার’কে সুকী’র পেট থেকে বের করতে হবে। যত জন নিষ্ঠার সাথে এই দোয়া এগারোজন কে পাঠিয়েছেন তাদের কত জন নিজে এই দোয়াটা মায়ানমারের জন্যে পড়েছেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। দোয়া পাস করেই সওয়াব হাসিল করে ফেলবে কিংবা মায়ানমার’কে রক্ষা করে ফেলবে। বাঙালি জাতি’র মত এত শর্টকাটে বেহেস্ত যাওয়ার রাস্তা এই পৃথিবীতে অন্য কোন জাতি জানে কিনা সন্দেহ আছে।

এবার এলো ব্লু হোয়েল --- ইহা কি বস্তু ঠিক করে জানার আগে, নানা পোস্ট শেয়ার আর বার্তা এসে গেলো। এই অত্যাচারও মোটামুটি নীরবেই হজম করলাম।

তারপর শুরু হলো “অপারেশান” নিয়ে। যারা যারা ম্যসেজ ইনবক্স আর শেয়ার করছেন, তাদের কাছে জানতে চাই, নিউজটি’র অথেনটিসিটি চেক করেছেন? কেই এই শিশু? তার বাবার আসলে কি সমস্যা? কি অসুখ?

কি কারণে একটাকা কম বেশি না, পুরো এক কোটি টাকা লাগবে? কে বলেছে এই টাকার অঙ্ক? টাকা’টা কোথায় পাঠাবো, তার ঠিকানা কি? ওদের সাথে যোগাযোগ করবো, তার নম্বর কি? ঠিকানা কি? ফেবু’তে শেয়ার দিয়েই এক কোটি টাকা তুলে চিকিৎসা হয়ে যায়?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আপনি কয় টাকা দিয়েছেন? নাকি টাকা দেবে অন্যরা আপনি শুধু লোকের ইনবক্সে পাঠাবেন? একটা বাচ্চার ছবি এভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কোন কমন সেন্স ও তো কাজ করা উচিত, নাকি? আর ছবি দেখে ও তো বোঝার উপায় নেই, মেয়েটির হাতের কাগজে আসলে কি লেখা? পেছনের ক্যালেন্ডার দেখে, সন তারিখ বোঝার উপায় নেই, যেমন বোঝার উপায় নেই জায়গাটা কি বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্ডিয়া, মায়ানমার না ভূটান।

শেয়ার দিয়ে যদি কোটি কোটি টাকা উঠানো যেতো, তাহলে বহু “ট্যাটনা” ফেবুতে বসে আছে, নানা রঙের ফটো দিয়ে সয়লাব করে, শেয়ার দিয়ে কোটি’র কোটি পতি হয়ে যেতো। “চিলে কান নিয়ে গেছে” শুনলে কবে আমরা চিলের পেছনে দৌড়ানো’র আগে কানে হাত দিয়ে কবে দেখবো? বিশ্বব্যাপী বাঙালি’রা চিলের পেছনে অবিরাম ছুটে চলছে। 

এখন শুরু হয়েছে, ডাঃ গীতা কৃষ্ণামী’র নাম দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তার বিস্তারিত বর্ননা। ভাই, নিজে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিন্তা ভাবনা করে, কিংবা সব স্টেপ মনে রেখে ডাক্তার পর্যন্ত যাওয়া খুব অসম্ভব ব্যাপার। নিজেরটা পরের কথা, পরিবারের কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে, এত মিনিট গরম পানি খাইয়ে তত মিনিট অবস্থার গুরুত্ব পর্যবেক্ষণ করার মত মানসিক শক্তি খুব কম মানুষেরই থাকে। এসব জিনিস পঁচিশ জন কে পাঠিয়ে তাদেরকে ত্যাক্ত করা থেকে বিরক্ত থাকুন।


সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মত আদৌ ম্যাচুর কি হয়েছি আমরা? 

No comments:

Post a Comment