Thursday 28 December 2017

যায়ে তো কাহা যায়ে

নিউজফীডে বার বার এক কিশোর আর কিশোরীর মুখ ভেসে আসছে। গৃহভৃত্য হিসেবে কৈশোরে প্রাণ দিলো এই বেচারী বালকটি। জীবন কি, পৃথিবী কি জানার আগেই চির বিদায়। মানুষের জীবন এত সস্তা! হবে হয়ত। একশ একটি দোরা’র কারণে মৃত্যু হয়েছে এই বালিকা’র। নিতান্তই বালিকা, আহারে।

আচ্ছা, ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবার গুলো যদি তাদের নিজেদের মেয়েদের পাশে দাঁড়াত তাহলে পারিবারিক নির্যাতন কোন পর্যায়ে থাকত? ছেলেরা যেহেতু জানেই, একবার বিয়ে করে নিয়ে এলে কেউ ধরতে আসবে না, বলতে আসবে না, সামাজিক এবং ধার্মিক পদ মর্যাদায় তারা তাদের স্ত্রীদের প্রভু, তাহলে পছন্দ না হলে কিংবা ইচ্ছে হলে স্ত্রীকে যে কোন ধরনের শাসনে বাধা কোথায়? প্রতি বছর কত মেয়ে মারা যায় নির্যাতনের শিকার হয়ে? কত মেয়ে আত্মহত্যা করে?

শিক্ষিত, অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল, ক্ষমতাশীল, সচেতন কোন পরিবারটি তাদের মেয়ের পাশে দাঁড়ায়? টেলিফোন করে কাঁদতে কাঁদতে যখন মেয়ে বলে, বাবা, আমাকে নিয়ে যাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তাও বাবা কি নিতে আসে? কত হাজার বছর ধরে কত মেয়ে তার বাবাকে, ভাইকে আর্তনাদ জানিয়ে আসছে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা ধরে রাখতে এবং পূন্য লাভের উদ্দেশ্যে সহমরনেপাঠিয়ে দেয়া সংস্কৃতির মানুষ তো আদতে আমরা, মেয়েরা কি শুধু শাশুড়ি, ননদের হাতেই পুড়েছে, বাবা – ভাইদের হাতে কি পোড়েনি?  মেয়েরা কোথায় না বলির শিকার, কার কাছে না উটকো ঝামেলা? কে চায় সেধে কাধে দায় নিতে?

যে মেয়ে গুলো বিভিন্ন কারণে পারিবারিক ভাবে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতাল বা পুলিশ পর্যন্ত যায় তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পরিবার জানতো, জেনেই মরতে ছেড়ে দিয়ে রেখেছিল। অর্তকিতে ঘটে যাওয়া কোন দুর্ঘটনা নয় এগুলো। মরে গেলে তখন পুলিশ, মামলা কিন্তু বেঁচে থাকতে মেয়ে’র পাশে নেই। আত্মজার কান্না, আত্মজার যন্ত্রণা কত সহজেই উপেক্ষা করা যায় নিজের বাবা মায়েরই যেহেতু মন গলে না, অন্যের মা-বাবার কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়ার আশা তো বাতুলতা মাত্র কি অদ্ভূত সেলুকাস এই পৃথিবী, কি বিচিত্র এর মানুষেরা। রাষ্ট্র নির্লিপ্ত, নির্লিপ্ত পরিবারও, যাবে তো কোথায় যাবে। ঠোঁটে হাসির ক্যামোফ্ল্যাজ ধরে রেখে, কষ্টের দাগ লুকাবে। তারপর একদিন নিউজফীডে চেহারা আসবে ........................

১৮/১২/২০১৭


No comments:

Post a Comment