Monday 9 November 2009

যতোক্ষন ধরা না পরে ততোক্ষন ভদ্রলোক

এটা আমার কথা নয়। আমাদের প্রতিবেশি অমিতদার কথা। কথাটা আমাকে প্রায় ভাবায়। যাদের অনেক বড় চাকরী, অনেক বড় বাড়ি, অনেক টাকা বেতন সমাজে প্রতিষ্ঠা, তারা সামান্য কোন কোন জিনিসের জন্য এমন নীচতা দেখায়! একজন সাধারণ লোক কখনও ভাবতে পারবে না যে এই উচ্চ শ্রেণীর ব্যাক্তি দিয়ে এমন নিম্ন শ্রেনীর কাজ সম্ভব। কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেরা ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে সে ধরনের কাজগুলো করে ফেলেন। কিন্তু সব সময় সাবধান থাকেন যাতে কেউ জানতে না পারে। মূল কথা হলো "জেনে ফেলা"। করব সবই তবে জানবে না কেউ। মুখোশটা থাকবে "পলিশড"।

আজকাল প্রায় মনে হয় "অন্তর্জাল" কি ক্রমশ অসুস্থ মানসিকতার মানুষদের অধিকারে চলে যাচ্ছে? নাকি এটাই আসলে একজন রক্ত মাংসের মানুষের সত্যিকারের রূপ? একজন মানুষ আসলে কি মানে মুখোশের আড়ালে কি তা জানবার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম বোধ হয় "অন্তর্জাল"। সেদিক দিয়ে "অন্তর্জাল" একটা অনেক বড় ধন্যবাদ পাওনা। সারাদিন পরিবার, কার্যক্ষেত্র, সামাজিকতা, বন্ধুত্ব শেষ করে যখন কেউ পিসি অন করে মনিটরের সামনে বসে তখন হয়তো "সভ্য মুখোশ"টা পাশে খুলে রাখেন। পুরোপুরি "দিগ্বম্বর" যাকে বলে। রাস্তা দিয়ে একটা তন্বী মেয়ে হেটে গেলে তাকে দেখে হয়তো শিস দিতে কিংবা বিশ্রী ইঙ্গিতযুক্ত ইশারা করতে ইচ্ছে করে। সম্ভব না কারণ পাশে অফিসের সহকর্মী কিংবা পাড়ার মুরুব্বী দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো। কিন্তু সে স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত আছে এই "অন্তর্জালে"।

যা নয় তাই বলে যাও, ধরবে কে? পিসির ভিতর থেকে টান দিয়ে বের করে আনার কোন সফটওয়্যারতো এখনো তৈরী হয়নি। তাই অবিশ্রাম গালাগালি, মিথ্যে কথা কিংবা সমস্ত মিথ্যের পশরা দিয়ে সাজানো সুন্দর প্রতারনার প্রোফাইল বানাও একটা। এক একটা "নিক" কতো পুঁতিময় হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আচ্ছা ওরা কোন পৃথিবীতে বাস করে? এই "চ" "ম" "খ" দ্বারা গালাগালি করার পর তারা তাদের বাবা - মা, ভাই - বোন, বউ - শালী এর সাথে কিভাবে চোখ মিলায়? আর একদল আছেন নাঁকে চশমা আটা। জানেন না পৃথিবীতে এমন কোন সাবজেক্ট নেই। সাবজেক্ট শুধু নয় বইয়ের নামের সাথে লেখকের নামও তাদের মুখস্থ থাকে সব সময়। যেকোন বিষয়ের। সুশীল লেকচার দিতে অভ্যস্ত। লোককে শেখাতে শেখাতে, জ্ঞান ঝাড়তে ঝাড়তে তারা ক্লান্ত। খুব যে বড় কিছু করে তারা কর্মজীবনে তা কিন্তু নয়। তাদের মতো এমন কাজ করেন পৃথিবী জোড়া অনেকেই। কিন্তু বাংলাদেশীদের মধ্যে তারা নিজেদেরকে কুলীন ভাবতে ভালোবাসেন। নাই বনের শিয়াল রাজা। এতো জ্ঞানের দ্বারা তারা মানব কল্যানের জন্য কোন মৌলিক কিছু আবিস্কার করেছেন, বা কোন তত্ব দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। শুধু ভার্চুয়াল জগতের ভদ্রলোক তারা, নেট শিক্ষক। বসে থাকেন তক্কে তক্কে, জ্ঞান ঝাড়ার মতো সুযোগের জন্য। মহান হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায়। সুযোগ পাওয়া মাত্র চেলা চামুন্ডা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বেন। তারা নিজেরাও জানেন না তারা কতোটুকু অসুস্থ ..................

করুনা করি এধরনের সব্বাইকে। মুখে সবসময় এইযে আমরা রাজনীতিবিদদের গালি দেই, সমালোচনা করি, ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরন টানি, সহনশীলতার বুলি কপচাই। আমরা নিজেরা কি? অন্যকে বলা অতি সহজ। নিজেকে আদর্শ ধরে এধরনের বুলি দেয়াও সহজ কিন্তু কঠিন হলো নিজেকে আদর্শ হিসেবে তৈরী করা। ক্ষমতা হাতে পেয়ে তার অপব্যবহার না করা। অন্যকে তৈল মর্দন না করা কিংবা তৈল গ্রহন না করা। রাজনীতিবিদরা কিংবা দেশের সুশীল সমাজতো আরশ থেকে অবতরন করেন নাই। তারা আমাদেরই পরিবার পরিজন তাই তারা আমাদের স্বভাব চরিত্রই প্রতিফলিত করেন। দোষ দেয়ার আগে তাই নিজেকে ফিরে দেখে নেয়া ভালো।

তানবীরা
১০.১১.০৯

No comments:

Post a Comment