Monday 30 November 2009

আমায় যদি প্রশ্ন করে

আমায় যদি প্রশ্ন করে
গাঁয়ের পথে কোন শ্যামল মেয়ে
তুমি কি জানো কী জ্বালা
স্বাধীনতাহীন পাড়া গাঁয়ের এ জীবনে?
হেসে তারে বলবো আমি
চক চক করা এই সবই দেখছো
নয়গো সবটুকুই তার দামী
তুমি যাও খালি পায়ে
মেঠো পথে গাগড়ী কাখে
আমি যাই গাড়ি হাঁকিয়ে
পীচ ঢালা পথে বুট পায়ে
ওটুকু বাদ দিলে পরে
থাকছি সবাই লোহার ঘরে
ওপর টুকু রঙ করা পালিশে
ভিতরটা ক্ষয়ে যাচ্ছে
একই রকম নালিশে।

আমায় যদি প্রশ্ন করে
ঘাড় তেড়িয়ে কোন দামাল ছেলে
জানো কি জ্বালা ধর্মে জ্বলে
হাসবো আমি শুধাও কিসে
দু হাজার একের পর থেকে
জ্বলছি সর্বদা এই বিষে
ওসামা উড়ালো ঝান্ডা
সারা পশ্চিমে আরবী
নামধারীদের মাথায় ডান্ডা
সহকর্মী থেকে প্রতিবেশি
নাম শুনলেই সন্দেহের চোখে দেখে
সারাক্ষণ আমাদের চোখে চোখে রাখে
আমরা আপ্রান চেষ্টা করি
ধর্ম থেকে দূরে থাকার ভাব ধরি
বছর দুই গেলে পরে
তাদের চোখে স্বস্তি ঝরে
ওসামা আমার আত্মীয় নয়
কাগজে কলমে যখন প্রমানিত হয়
সহকর্মী আর প্রতিবেশি
বোঝায় ঠারে ঠোরে
ঠিক আছে থাকো ঠিকঠাক
নইলে দেব গলা ধাক্কা ধরে।

আমায় যদি প্রশ্ন করে
অনেক দুঃখে কষ্টে পুড়ে
শ্যাম বর্ণের কোন হতভাগিনী
উজ্জল বর্ণের মেয়ে তুমি
বুঝবে কী খেলা রঙ নাগিনীর?
হাসি আমি কান্না গিলে
“আদর্শ রঙ”কোথায় মিলে?
অফিসে আমি আর সাদা সহকর্মীরা
কাজ করি সব একসাথে
কখনো কখনো তাদের ওপরে
কিন্তু যখনি কেউ প্রশ্ন করে
নাকটি থাকে অবজ্ঞা ভরে
ভেবে নেয় সর্বদা
বাদামী রঙের এই মেয়ে
জানে কি বেশি আমাদের চেয়ে?
রঙের কারনে সব সময়
ভেবে নেয় তুচ্ছ আমায়।

আমায় যদি প্রশ্ন করে
জন্মেছো এ পূন্য দেশে
জাতির এ গর্ব নিয়ে
আছো সুখে বিদেশ গিয়ে
ভাবি তখন বলবো কি বলবো না
আছি বটে তবে গর্বে না
ঝড় ঝঞ্ঝা বন্যা খরা
দুর্নীতির কারণে আরো চড়া
অশিক্ষা আর মৌলবাদ
রাজনীতি তারে করেছে বরবাদ
সে লজ্জা বুকে নিয়ে
ঠেকছি জানি কোথায় গিয়ে।

তাই আজ বলি শোন
কুঁয়োর মধ্যে বসে থেকে
এসব সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু
সবই সুশীল কথা
মানুষ শুধু মানুষই
তার আর কোন ভাগ নেই
লিংগ ধর্ম বর্ণ ভাষা
এসব বিভক্তি শুধু ভানুমতীর খেল
ভালো মন্দ, সাদা কালো, সঠিক বেঠিক
সুশীল অশীল সব আপেক্ষিক, সময়ের বিচারে
সেদিন বেগম রোকেয়াকে কতো জ্বালা সইতে হয়েছে
আজ তিনি পূজনীয়
আজ যে তাসলিমা দেশের জন্য কাঁদছে
কাল হয়তো সে দেশ তাসলিমার জন্য কাঁদবে
আজ যেসব সুশীল নির্বিচারে
উত্তরাধুনিক সাহিত্য রচনা করছেন
আজ থেকে শত বছর পর
তার কোন বংশধর হয়তো তাসলিমার
ওপর আবেগময়ী প্রবন্ধ লিখবেন
কিংবা বসার ঘরে তার কোন
পরিজনের সাথে তোলা তাসলিমার
ছবি বাঁধিয়ে রেখে
সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টায় থাকবেন।

এবার আমি নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে নাও দৌঁড়াইয়া চলি
আমি তবে কি?
অতন্দ্রিলা তোমার কানে কানে
চুঁপি চুঁপি বলে যাই শোন
আমি হলাম সুযোগের অভাবের ভদ্রলোক।
সুযোগ তৈরী আর ব্যবহার করার মতো
সাহস, শক্তি সার্মথ্য আমার নেই
কিন্তু সুযোগ একবার যদি পাই
ওমনিই ধরে গাপুস গুপুস খাই।

তানবীরা
৩০.১১.০৯


No comments:

Post a Comment