Sunday 8 March 2020

উইম্যান্স ডে

যারা যারা আমাকে “উইমেন্স ডে” নিয়ে লিখতে বলেছিলেন কিন্তু নানা কারণে লেখা হয়ে ওঠেনি তাদের জন্যে, আমার বন্ধুদের জন্যে আজকের এই লেখাঃ
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, মেয়ের সাথে খিটমিট করা, বিছানাপত্তর ঝাড়া, নাস্তা-লাঞ্চ ঠিক করা, মেয়েকে স্কুলে পাঠানো, নিজে অফিস যাওয়া, অফিস থেকে ফিরে রান্না করা, ডিনার সার্ভ করা, বাড়িঘর গোছানো, আমার রোজ “ মাই ডে কাম উইমেন্স ডে”। এটা সাতই মার্চ যেমন থাকে, আটই মার্চও তেমনই থাকে এমনকি নয়ই মার্চেও এতে কোন পার্থক্য আসে না। মার্চ হয়ে জুলাই থেকে অক্টোবর কিংবা ডিসেম্বর কোনো কোয়ার্টারেও কোন আলাদা কিছু নেই। সর্দি-কাশি, জ্বরেও নেই। প্রতিদিনই আমার দিন।
এমনিতে প্রতিদিনই আমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরি, চুল আঁচড়াই, নিজের পছন্দের ক্রীম-পার্ফিউম মাখি। প্রতিনিয়ত নেল পলিশ করি, কানের দুল, আংটি, চুড়ি চেঞ্জ করে পরি। নিজের যত্ন নেয়ার জন্যেও আলাদা কোন দিবস টিবসের অপেক্ষা করি না।
বাঙালি মেয়েদের পড়াশোনার ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি, সেটাকে নারী জাগরণের শুরু বলে ধরে নেই। সেটা সত্যিও বটে। মেয়েদের পড়াশোনার সাথে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও জড়িত ছিলো। তখন বাঙালি মেয়েদের শোভনীয় ভাবে ঘরের বাইরে বের হবার কোন পোষাক ছিলো না। ব্রাক্ষ্ম সভায় কিংবা স্কুলে যেতে নানা ধরনের পোষাক মেয়েরা নিজেরা ভেবে বের করে নিতো, শাড়ির ওপর বিরাট চাদর জড়ানো কিংবা বিরাট একটি জামার সাথে শাড়ির মিল দেয়ার চেষ্টা যা নিয়ে তখন যারা নারী জাগরণের বিপক্ষে ছিলেন তারা নিজেদের পত্রিকায় বিভিন্ন উপহাসমূলক লেখা বের করতেন, বিবিবাবু ইত্যাদি নাম দিতেন। মর্হষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ছেলের বউ জ্ঞানদানন্দিনী ঠাকুর, শাড়ির সাথে ব্লাউজ, পেটিকোট মিলিয়ে আজকের এই শাড়ি পরার শোভন পদ্ধতি্টি আবিস্কার করেন তাও বিলাত-মুম্বাই ঘুরে। অনেকদিনের অনেকজনের চিন্তা ভাবনার ফসল আজকের এই শাড়ি পরার স্টাইল। শোভনীয় এবং খানিকটা সামাজিকভাবে গ্রাহ্য জামা কাপড় না থাকলে মেয়েরা বাইরে যেয়ে কাজ শুরু করবে কিভাবে!
পশ্চিমের মেয়েরাই কি বরাবর এ ধরনের পোষাক পরতেন? তাদের পোষাক কি বাইরে বের হয়ে কাজ করার মত স্বাধীন ছিলো? আজকে যে বিখ্যাত “শ্যানেল” ব্র্যান্ড আমরা ব্যবহার করি তার উদ্যোক্তা ফ্রেঞ্চ ডিজাইনার কোকো শ্যানেল উনিশো কুড়ি সালে আবার মেয়েদের কাপড়ের ডিজাইনে পকেট সিস্টেম ফিরিয়ে আনাতে বেশ সমালোচিত হয়ে বলেছিলেন, মেয়েদের উচিত এখন বাস্তববাদী হওয়া, স্বপ্নের প্রিন্স চার্মিং খোঁজা বন্ধ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী/প্রিন্সেস চার্মিং করে গড়ে তোলা।
আমার মতো আরও যারা আছেন, যাদের আনলিমিটেড এক্সপেন্ডিচার ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার কোনো প্রিন্স চার্মিয়ের সাথে এখনো দেখা হয় নি, নিজের মত বাঁচেন, যার যার অক্ষি পথে নিজের নিজের প্রিন্সেস চার্মিং হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন তাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।
যারা অবৈতনিক ক্লিশে ঘর-সংসার রোজ টেনে যাচ্ছেন তাদের লাল সালাম।
তবে এই শুভেচ্ছা, অভিনন্দন আর সালাম আটই মার্চের জন্যে নয়, সংগ্রাম যেমন প্রতিটি দিনের, প্রতিটি মুহূর্তের, অভিবাদন ও তাই প্রতিটি ন্যানো, মাইক্রো সেকেন্ডের।
লেটস সেলিব্রেট ইচ ডে এজ মাই ডে অর উইম্যান্স ডে।

No comments:

Post a Comment