Sunday 8 March 2020

মেঘের প্রথম ইন্টার্নী

ছোট্ট মেঘমালা অনেক দুষ্টমিষ্টি ছিলো। স্কুল থেকে ফিরে সারা বাড়ি ছুটোছুটি করতো। দুধ খেতে চাইতো না। কিন্তু মেঘমালার মা, মেঘের চেয়ে এক কাঠি আরও বেশি দুষ্ট ছিলো। ভেবে ভেবে এমন জায়গা বাসায় খুঁজে বের করলো, যেখানে বসে মেঘমালা বেশি নড়াচড়া করতে পারবে না। দুধ শেষ করবে তারপর উঠবে।
দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে মেঘমালা জানালা দিয়ে আকাশের েদিকে তাকিয়ে যথারীতি গভীর ভাবনায় ডুবে যেতো। নানা দার্শনিক ভাবনায় ডুবে থেকে মেঘমালা যথারীতি, দুধ ঠান্ডা করে বসে থাকতো। মেঘের মা এসে মেঘকে দুধ শেষ করার তাগাদা দিলে শুরু হতো নানা দার্শনিক গল্প। মামি জানো, এক এক দিন, এক এক গল্প।
একদিন মা তাড়া দিলো, এখনো দুধ শেষ করো নি, তাড়াতাড়ি শেষ করো, দুধ না খেলে বড় হবে কি করে?
দুঃখী মেঘমালা করুণ গলায় বললো, মামি জানো , বড় হওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার।
অনন্ত কৌতুহলী মামি জিজ্ঞেস করলো, কেন!
চার বছরের দুঃখী মেঘু বললো, রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিস যেতে হবে, সারাজীবন। তাহলে জীবনে আনন্দ বলতে আর কি থাকলো, বলো?
মেঘকে ঘুম থেকে জাগানো আর পাহাড় চড়া এক কথা। এই আনপ্লেজেন্ট দায়িত্ব প্রতি সপ্তাহে মা থেকে বাবা, আর বাবা থেকে মায়ে’তে শিফট হতে থাকে। নিরুপায় মা হুমকিও দেয় মাঝে মাঝে, তোকে পুলিশে দিয়ে দেবো, দেখি তখন কি করে বেলা আটটা অব্ধি ঘুমাস। সেই মেঘমালা নিজের মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ভোরে উঠছে, গলায় কোম্পানীর ব্যাজ ঝুলিয়ে, নিজের হাতে লাঞ্চ বানিয়ে নিয়ে, মা’কে বিছানায় রেখেই অন্ধকার সকালে বাসের পেছনে ছুটছে। তাকে “ইন্টার্নি” করতে হচ্ছে, সাড়ে আটটায় ম্যানেজারের সামনে উপস্থিত থাকতে হয়, নোট নিতে হয় সারাদিনের কাজের।
ডিয়ার ডিয়ারেস্ট আমার হরিণ ছানা মেঘমালা, তুমি বড় হয়ে যাওয়াতে তুমি যেমন দুঃখী, মা’ও ঠিক ততটাই দুঃখী। বড় হলে মায়েদের কোল ঘেষে থাকা হরিণ ছানাগুলো হারিয়ে যায়, ছোট ছোট দু'হাত দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে, সেই আধো বাধো শব্দে "মামি জানো" এর জায়গায় সেই ছোট হাতে আসে মোবাইল, তার সেই ছোট বিস্ময়কর পৃথিবীর স্বর্গীয় সব নতুন নতুন জিনিস আবিস্কারের ঘটনা গুলো তখন ট্রান্সফার হতে থাকে হোয়াটসএপ, স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রামের বন্ধুদের কাছে, হরিণ ছানারা ছোট পৃথিবী থেকে পা দেয় বড় পৃথিবীতে। আর যেই মা হরিণ ছানার জন্যে বড়
পৃথিবী ত্যাগ করে নিজেকে বন্দী করে ফেলেছিলো ছোট পৃথিবীতে, সে পরে রয় একা ঘরের কোণে।
কিন্তু দু’সপ্তাহের জন্যে হলেও সকালে ওঠা নিয়ে তুমি ঢিট হয়েছো, এটা মন্দ না

No comments:

Post a Comment