Thursday 19 March 2020

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার মত “রয়্যাল” ব্যাপারগুলো “ডাচ” সংস্কৃতিতে নেই। না দেয় রাজা না প্রিমে। এদের অবশ্য রয়্যাল কোন ব্যাপারই নেই। ম্যানেজার, ডিরেক্টর যে কারো ঘরে যখন ইচ্ছে যাওয়া যায়, কথা বলা যায়, করিডোরে কফি খাওয়া যায়, হায়ারাকি ব্যাপারটা এই সমাজে অনুপস্থিত। ছুটির দিনে রাজা যাবে বাড়ির পাশের পার্ক পরিস্কার করতে আর প্রিমে বের হবে সাইকেল নিয়ে।

কিন্তু “করোনা” বিশাল শক্তি রাখে, অসাধ্য সাধন করেছে নেদারল্যান্ডসে। প্রিমে রুতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়েছেন। এগেইন ফলোয়িং দ্যা “ডাচ রিচুয়াল” যাহা বলিয়াছেন সত্য বলিয়াছেন, কোন মিথ্যা আশ্বাস দেন নাই, কোন সত্য গোপন করেন নাই। এরা মৃত্যুপথ যাত্রীকে বলে, “আর তিন সপ্তাহ বা ছয় সপ্তাহ আছো, মেক দ্যা বেস্ট আউট অফ ইট।“

প্রিমে রুতে বলেছেন, সামনের সময়ে নেদারল্যান্ডসের সত্তর শতাংশ মানুষ “করোনা” ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এবং তাদের বেশীর ভাগই সেরে উঠবে নিজেদের “ইমুইন” সিস্টেম ইউজ করে। একবার আক্রান্ত হওয়ার পর “ইমুইন” স্ট্রং হলে পরের বার ভোগান্তি কম হবে। এর কোন ওয়ে আউট আপাতত তার কাছে নেই।

তিনি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শনুযায়ী কাজ করছেন। “লকডাউন” কোন সমাধান আপাতত নয়। “লকডাউন” নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে হতে পারে, ধরা যাক এক মাস, পুরো বছর জুড়ে তো “লকডাউন” চলবে না। তারপরও যদি পরিস্থিতি ডিমান্ড করে, প্রয়োজন হয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেয় তিনি তাই করবেন।

“অর্থনীতি” তছনছ হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। “মন্দা” এড়ানোর কোন উপায় নেই। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রক্ষায় ডাচ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, সর্বোচ্চ ভর্তুকীর ব্যবস্থা করা হয়ত হবে।

অতএব, হে মানবজাতি, তোমরা এটা মেনে নাও, “করোনা” এখন থেকে আমাদের পার্ট অফ লাইফ। ডাচ প্রিমের এই সত্য ভাষণ, আমার ধারনা পৃথিবীর সবার জন্যে কম বেশি প্রযোজ্য। “করোনা” আচমকা আমাদের জীবনে এসে গেলেও হয়ত থাকবে স্থায়ীভাবে আমাদের সাথে। ভ্যাকসিন হয়ত চলে আসবে উইদিন নো টাইম। আমার ধারনা, ভ্যাকসিন দিয়েও বেশি উনিশ বিশ হয়ত হবে না। হেভি ভাইরালের সময় এন্টিবায়োটিক নিলেও, তিন সপ্তাহ ভোগায়। অনেক সময় তিন মাস ধরে, খুকখুক কাশিও চলে। তাই আজকে ভ্যাকসিন আসলেই কালকে থেকে আমরা সবাই সুখে থাকবো এই চিন্তা হয়ত কিছুটা অমূলক।

তবে এখানে হয়ত ম্যালথাসের তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রকৃতি কিছুটা খেলছে। বয়স্ক মানুষ যেখানে সেখানে মৃত্যুর হার বেশি। ইউরোপে বয়স্ক মানুষ অনেক বেশি, ইটালি এর একটা বড় উদাহরণ। আর অন্য রোগের সাথে “করোনা” যোগ হলে সেটা আরও মারাত্বক আকার ধারণ করে।

আপাততঃ পরিস্কার পরিচ্ছন্নত থাকা, স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া করে নিজের ইমুইন সিস্টেম স্ট্রং রাখা ছাড়া বিরাট কিছু করার হয়ত নেই।

ফুটনোটঃ আমাদের বাসায় থাকা বিচ্ছুটা অস্থির হয়ে আছে, কেন তার “করোনা“ হচ্ছে না। সে যে স্ট্রং সেটা প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
আমি বলেছি, ইচ্ছে করে ঠান্ডা লাগিয়ে আমার মাথার ওপর সারাদিন হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো করলে আমি পুলিশে কল দিয়ে বলবো, এই করোনাকে নিয়ে যাও
গুটুর গুটুর হাসি দিয়ে বলে, আমি জানি, তুমি এটা করবে না।
যতসম্ভব রাগি চোখ-মুখ, গলা করে বললাম, কেন করবো না?
তিনি আদুরে গলায় বললেন, কারণ, তুমি অনেক বেশি আমাকে ভালবাসো।
আমি বললাম, তুমি শিওর?
তিনি বলেন, হু, আমি জানি
তিনি জানেন, কেইস ক্লোজড


অফিস থেকে ইনফরমাল মেইল দিয়েছে, “এভরিথিং উইল বি ফাইন”, সবাইকে সেজেগুজে সুন্দর ফটো তুলে সাইটে “আপ” করতে বলেছে সাথে বলেছে, অন্যদের ছবিতে লাইক ও কমেন্ট করতে। সুন্দর ও স্বাভাবিক দিন কাটাতে। মেইলটা পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেলো, আই জাস্ট লাভ দিজ “ডাচ কালচার” আউট এন্ড আউট।

১৮/০৩/২০২০

No comments:

Post a Comment