Wednesday 30 December 2009

টুকরো টাকরা গল্প ১

আমার মেয়ের মাঝে আমি অনেক সময় বিশাল দর্শন, জ্ঞান - বিজ্ঞানের সন্ধান পাই। অসংখ্য আপাতঃ ছোট খাটো ব্যাপারে ওনার মন্তব্য, ক্রিয়া - বিক্রিয়া দেখে বিশাল মজাও পাই। মা - বাবা আর উনি এ জীবন থেকে যখন আমরা বছরে একবার অনেক লোকজনের দেশ, বাংলাদেশে যাই, আত্মীয় স্বজনের ভিড়ে ওনি কনফিউজড থাকেন। অনেককেই প্রথম দেখে, আবার অনেকের কথা হয়তো মনে থাকে না কিংবা মনে রাখতে পারে না। কিন্তু বুদ্ধির চার্তুয্য খেলেন আমার কন্যা। শাড়ি, কাপড় চোপড় কিংবা চুলের রঙ দেখে ওনি তার সাথে সম্পর্ক ঠিক করেন। একবার আমার এক বেশ মর্ডান চাচী এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে। আমার মেয়ে ওনাকে “খালামনি” বলেছে। আমি তাড়াতাড়ি বল্লাম ওনি “দিদা”। আমার মেয়ে খুবই গম্ভীর গলায় বললো, “দিদা” কি করে হবে? ওতো সালোয়ার কামিজ পরেছে আর দেখোনা চুলটা কেমন কাটা? “দিদা”রাতো এভাবে চুল কাটে না আর এই ডিজাইনের সালোয়ার কামিজও পরে না।

!!!! ডিং ডং

আমার নানুর বয়স হয়েছে। তিনি আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। তাই আমরাই গেলাম আমাদের নানুবাড়ি। আমি - কন্যা - কন্যার পিতা এক বাসায় থাকি এটাই তার কাছে স্বাভাবিক। বাংলাদেশে আসলে সে আমার সাথে বেশি নানার বাড়ি থাকে এটাও সে জানে। মায়ের বাবা মা আছে একটা কষ্টে সিষ্টে সে মেনেও নেয়। আব্বুরও আছে কি আর করা, যাক সেটাও সহ্য করলো। কিন্তু আমার মানে মায়েরও নানা বাড়ি আছে মানে “দিদার”ও মা বাবা আছে, আরো অন্য একটা বাড়ি আছে তাতে সে ভীষন কনফিউজড। “দিদা” থাকবে দিদার বাসায়, তার তিনকূলে কেউ থাকবে না এ হিসাবটাই সোজা আপাত দৃষ্টিতে। মা কখনো ছোট ছিল এটাইতো আজব ব্যাপার তার কাছে, মায়ের ছোট বেলার ছবি দেখলেই সে নানা প্রশ্ন করতে থাকে, “তুমি কেনো ছোট ছিলে”? তুমিতো আম্মি। আম্মি কি করে ছোট হবে? এখন যখন শুনে দিদাও কোন দিন ছোট ছিল, ফ্রক পরে, মাথায় রিবন লাগিয়ে এ বাড়ির ঘরে বাইরে উঠোনে দৌড়াদৌড়ি করেছে, সে তার স্বাভাবিক কল্পনায় তা মানতে পারে না।

আমি শয়তান কিসিমের মানুষ। মানুষকে খোঁচাইয়া বিশাল আনন্দ লাভ করি এটা সত্য কথা। মেয়েকেও না খোঁচাইয়া পারি না। মানুষ অভ্যাসের দাস, আমি তার ব্যতিক্রম না। মেয়েকে তার বাংলা ভাষা জ্ঞান আর উচ্চারনের বহর দিয়া বহুত খোঁচাই। সারা ডাচেরা আমাদের যতো বিরক্ত করেছে, মেয়েকে সে সমাজের প্রতিনিধি ভেবে তার ওপর সেগুলো ঢেলে দেই। মেয়ে যথেষ্ঠ বিরক্ত হয় আমার এহেন হি হি হাসিতে। বলতে থাকে রাগিত মুখে, দুষ্ট আম্মি, দুষ্ট আম্মি। কিন্তু চোরে না শুনে মেয়ের বকা। আমি তাকে আরো বিভ্রান্ত করার জন্য বলতে থাকি, আমার নানুরও আলাদা বাড়ি আছে, সেও ছোট ছিল, তারও বাবা মা আছে। আবার নানুর মায়েরও মা আছেন, তিনিও আবার অন্য বাড়িতে থাকতেন ... আমার মেয়ে টাশকি খেয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বলতে পারে না। সৃষ্টির এই অসীমতায় তার বুদ্ধিলোপ পায়। সে সময় অন্যরা এসে মেয়েকে আমার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

অনেকদিন ধরে বাইরে আছি, অন্তর্জালেও বিচরন করি বেশ অনেককাল হয়ে গেলো। বিদেশে আসার পর প্রধান যে ব্যাপারটা নিয়ে সবার সাথে বিতর্ক বা আলোচনা হয় সেটা হলো “ধর্ম”। ব্লগগুলো শুরু হওয়ার আগে যখন ভিন্নমত, মুক্তমনা, সদালাপ, সাতরঙ, বাতিঘর কিংবা বাংলার ইসলাম ছিল ঘুরে ফিরে এই নিয়েই আলোচনা আর বিতর্ক হতো। ব্লগ হওয়াতে ভিন্ন ভিন্ন লেখার পড়ার সুযোগ হয়েছে। ব্লগ হোক কিংবা ওয়েবজিন হোক কিছু কিছু লোকের লেখা পড়লে, তাদেরকে আজকাল আমার মেয়ের মতো সাত বছরের শিশু মস্তিকের অধিকারী মনে হয়। যা তার জ্ঞান, কল্পনা কিংবা হিসাবের বাইরে তাইই অবাস্তব। যা তাদের চিন্তা ভাবনার বাইরে তাই অসম্ভব। চিন্তা ভাবনাকে ঐ এক ঘরে বন্দী করে ফেলেছে। কি ধর্ম, কি বিজ্ঞান, কি স্বাধীনতা কিংবা কবি আল মাহমুদ সবই একই বৃত্তে ঘুরে। বানরের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এসেছে !!! তাই কি হয়? তাহলে হাতি কোইত্থেকে আইলো শুনি? আকাশ মানে শূন্য অসীম, কি করে হবে? মাথা তুলে তাকালেই নীল দেখা যায় না? অসীমতা কল্পনা করা কষ্ট তার চেয়ে সাত আসমানের ধারনাটাই বেশি কাছের। পাঞ্জাবী পায়জামা পরা মানেই খাঁটি মুসলমান, ভালো লোক। তাহলে বন্দুক হাতে নিক না নিক তিনিই মুক্তিযোদ্ধা।

ধন্যবাদ সবাইকে।

তানবীরা
৩০.১২.০৯

Monday 28 December 2009

ব্যাক্তিগত টুকিটাকি

একটা ব্যাক্তিগত ইমেইল আমার চিন্তার আকাশটাকে আজ কদিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন করে রেখেছে। মাঝে মাঝেই মনটা না দেখা সেই মেয়েটার পানে ছুটে যায় আর ভাবে কি করা যায়? মানুষ হিসেবে কি আমার কিছুই করার নেই?

একটি সাধারণ মেইল এসেছে পরিচিত একজনের কাছ থেকে। একটি মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে। মেয়েটি সে অর্থে সুশ্রী নয়, পড়াশোনা অনেক বেশি নয়, বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ। সম্প্রতি মেয়েটির বাবা ভাই অতি কষ্টে মেয়েটির জন্য একটি পাত্র যোগাড় করেছেন। পাত্রকে নগদ দুই লক্ষ টাকা, মেয়েটিকে আট ভরি সোনার গহনা আর চারশো বরযাত্রীকে দুই বেলা আপ্যয়ন করতে হবে এই শর্তে। অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এ দুঃসাধ্য। কিন্তু তারা বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করে এখন পয়সার সন্ধানে সব জায়গায় হত্যা দিচ্ছেন। চিঠিটিতে আরো একটি ছোট টীকা দেয়া ছিল, “মেয়েটি মাইনোরিটি গ্রুপের”। যিনি মেইলটি করেছেন তিনি জানেন, আমার টাকা পয়সা না থাকলেও আমি আমার ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে এদিক সেদিক বেড়িয়ে পরবো মেয়েটিকে সাহায্যের জন্যে। আর কিছু না পারলেও মানুষের দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে পরে থাকতে পারি আর নিজে ছটফট করতে পারি।

কিন্তু যৌতুকের জন্য সাহায্য দিতে বিবেকের কাঁটায় বার বার বিঁধছে। তাহলেতো আমি যৌতুককে প্রশ্রয় দিচ্ছি। এ অন্যায়ে নিজেকে সামিল করতে পারি কি করে? সবকথা আমার নিজের ওপর টেনে ফেলা আমার চিরদিনের অভ্যাস। বারবার মনে হয়, আমার নিজের ছোটবোন হলে কি আমি এতে রাজী হতাম না বাঁধা দিতাম? আর এগুলো পেলেই যে পাত্র পক্ষ এখানে থামবে তার নিশ্চয়তা কি? আমার স্বাভাবিক বোকা বুদ্ধিও বলে এ শুধু শুরু এ কখনই শেষ নয়। যতোই গাছ নুইবে ততই তাকে আরো চাপা হইবে। পুলিশে খবর দিলে ধরিয়ে দিয়েও কি কিছু হবে? পাত্রতো কোন কাগজ়ে সই করেনি। এমনিতেই মেয়েটির বিয়ে হয় না পুলিশের নাম এরমধ্যে যুক্ত হলে বিয়ের সমস্যা আরো বাড়বে। একমাত্র উপায় মেয়েটির স্বাবলম্বী হওয়া। কিন্তু আমি কি করে অচেনা কাউকে সেটা বলতে পারি, তুমি এই জানোয়ারের কাছ থেকে পালাও, নিজে বাঁচো, পরিবারকে বাঁচাও। আবার ভাববে টাকা পয়সা দিবে না কিছু শুধু বড় বড় কথা। আমি ইমেইল প্রেরককে আমার মতামত জানাতেই সে তুরন্ত উত্তর দিল, আপা মাইনোরিটি কি করবেন, কন?

এ জায়গায় ধৈর্য্য রাখা মুশকিল। এটি একটি সামাজিক সমস্যা যেটা দক্ষিন এশিয়াতে ক্যান্সার রূপে সমাজকে খাচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে মারাত্বক রকমে এই রোগটি ছড়িয়ে আছে। উইপোকার মতো সমস্ত কাঠ খেয়ে নিচ্ছে। সর্বরকম মুখোশের আড়ালে আছে, সব শ্রেনীতে বিদ্যমান। কোথাও দুই লাখ টাকা রুপে, কোথাও এ্যামেরিকা যাওয়ার গ্রীন কার্ড, কোথাও ব্যবসার অংশিদ্বারিত্ব পাকা করা, কোথাও বা ফ্ল্যাট রূপ ধারন করে। এর সাথে কেনো ধর্মের কথা আসে? এ জায়গায় একজন সংখ্যাগুরুর পরিবারওতো সমান অসহায়। সংখ্যাগরিষ্ঠরা কি কন্যা দায়গ্রস্ত হন না? সৃষ্টির আদিকাল থেকে মেয়েরা শুধু মেয়েই। তাদের ধর্ম নেই, জাত নেই, সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নেই। তারা পন্য। ইভ টিজিং কিংবা অন্যান্য অপমানে একজন রূমি, একজন শিউলি, একজন শাজনীন যখন মারা যান তখন ধর্মের তকমা কোন কাজেই আসে না। মেয়েরা এমন বস্তু যে তারা নিজ গৃহে থেকে বাবা ভাইয়ের সামনেও তাদের অসহায়ত্বের কারনে মারা যেতে পারেন, ধর্মকে পরিহাস করতে করতে।
যৌতুকের সমস্যা উপমহাদেশীয় সমস্যা, সামাজিক ব্যাধি যার সাথে “ধর্ম”কে যোগ করা বাতুলতা মাত্র। একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রীষ্টান পাত্র সমান পাষন্ড এ জায়গায়। অবস্থার সুযোগ নিতে কেউ পিছপা হয় না। আমি এই উত্তর দেয়ার পর আর কোন জবাব আসেনি। আমি জানি পছন্দ হওয়ার মতো কিছু হয়তো আমি বলিনি। কিন্তু আমার মনের সত্য থেকে আমি পিছু হটবো কেমন করে? এই ছেলেটি নিঃস্বার্থভাবে ঐ অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করতে নেমেছে, সেও ঠিক আছে। কিন্তু তার নিজের কাছে আগে নিজেকে পরিস্কার হতে হবে। সে কি একটি অসহায় পরিবারকে মানবিক কারনে সাহায্য করছে না একজন সংখ্যালঘু পরিবারকে করুণা করছে? সাহায্য আর করুণা আমার কাছে দুটো আলাদা ব্যাপার।

সুশীল সাজতে ইচ্ছে করে না। দু - পাঁচ হাজার টাকা সাহায্য দিয়ে মানসিক আনন্দ নিতে পারতাম কারো জন্য খুব বড় একটা কিছু করা হয়েছে এই ভেবে। আত্মপ্রসাদের ঢেকুর তুলে ঘুমাতেও যেতে পারতাম হয়তো। কিন্তু বার বার অদেখা অচেনা দুটো জল ভরা চোখ মনের ভিতটাকে দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি দূর থেকে বিনে পয়সার উপদেশ বিতরন করলাম ঠিকাছে কিন্তু মেয়েটার কি গতি হলো শেষ পর্যন্ত? ওর পরিবার কি সিদ্ধান্ত নিল? পারলো এতো টাকার যোগাড় দিতে নাকি বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো? মেয়েটা কিভাবে নিবে তার পরবর্তী জীবনটাকে। জানার কোন উপায় নেই কিন্তু অচেনা মেয়েটার কথা বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।

তানবীরা
২৮.১২.০৯

Wednesday 23 December 2009

কাছের মানুষ দূরের মানুষ

দিনকে দিন যেনো সময় কমে আসছে। কথাটা কি ঠিক? না ঠিক নয়। সময় প্রত্যেকের জন্য সমান চব্বিশ ঘন্টা। আমরা আমাদের পছন্দের কাজ করতে করতে গুরূত্বপূর্ন জিনিসের জন্য সময় বের করতে পারি না। কিন্তু দোষ দেই সময় ব্যাটার ঘাড়ে। বই পড়া একসময় নেশার মতো ছিল। অফিসেও বকা খেয়েছি বই পড়ার জন্য। বাংলা বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে। খুব ভালো বিখ্যাত কিংবা আলোচনাকারী বই না হলে ইংরেজী কিংবা ডাচ বই পড়ি না। মাতৃভাষাটাই কাছের মনে হয়।

আজকাল বইয়ের পাহাড় জমে যাচ্ছে বাসায়। পড়া হচ্ছে না কিন্তু কিনে স্তুপ করে ফেলছি একদিন সময় হবে, তখন পড়া হবে সে আশায়। এখন মনে হচ্ছে আসলেই কি একদিন পড়া হবে? সে একদিনটা কবে আসবে, কোনদিন? নিজের জন্য মূলত সময় পাই রাত নয়টার পরে, মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে। আগে সে সময়টায় বই নিয়ে সোফায় কাত হতাম, কিংবা সিনেমা দেখতাম অথবা কাউকে ফোন দিতাম। আজকাল এর কিছুই করা হয় না। অন্তর্জাল জীবনকে ঝালা ঝালা করে ফেলছে। সিনেমা দেখি না ধরতে গেলে বহুদিন। পারতে কাউকে ফোন দিই না, মনমতো কেউ না হলে অন্যের ফোনেও চরম বিরক্ত হই। এ সময়টা আমার একান্ত নিজস্ব। কারো প্রবেশ নিষেধ এই দু - তিন ঘন্টা। সারাদিন অনেক কম্প্রোমাইজ দেই, তাই একান্ত সময়ে আর কোন সমঝোতা নয়।

ব্লগ নিয়ে পরে থাকি। ব্লগ পড়তে খুব ভালো লাগে। ব্লগ পড়া, ফাকে ফাকে জিটক কিংবা ফেসবুক। এইকরে সাড়ে এগারো বারোটা তারপর আবার হাই তুলতে তুলতে বিছানায় যাওয়া। তাহলে বই পড়বো কখন? বইগুলো মুখ কালো করে অভিমানের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে টেবলের ওপর দিনের পর দিন পরে থাকে আধ পড়া। কখনো অন্যজন ড্রাইভ করলে লং ড্রাইভে বই পড়ি আজকাল। জিপিএস এর কল্যানে আজকাল আর ম্যাপ রীডআউট করতে হয় না। আগে ভালো সিডি জমিয়ে রাখতাম, লং ড্রাইভে শুনবো বলে এখন আমার বইও সে অবস্থায় চলে গেছে। অনেক সময় বেশ কয়েক সপ্তাহ কোথাও বের না হওয়া হলে কি পড়েছিলাম সেটাও ভুলে যাই। আবার আগের থেকে শুরু করি। সোজা বাংলায় বৃত্তের মধ্যে পরিক্রমা করি।

কিন্তু বই দেখলে ঠিক থাকতে পারি না। দেশ থেকে আসার সময় শুধু এই বই জিনিসটা স্যুটকেসকে ওভারওয়েট করিয়ে দেয়। বইয়ের প্রচ্ছদ, গন্ধ সবই মনকে মাতাল করে। তাহলে কি বইয়ের লেখকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন বলে আর ব্লগ লেখকরা কাছের লোক বলে ব্লগটাই বইকে ছাঁপিয়ে উঠছে আজকাল আমার কাছে? এক সময় মঞ্চ নাটক করতাম বেশ। জনগনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাবার একটা নেশাও আছে। সরাসরি লেখকের কাছে থাকতে পারি বলেই কি ব্লগ আকর্ষনীয়? নাকি অনেক অনেক ব্লগ লেখকের লেখার মধ্যে নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখতে পাই বলে এটা হচ্ছে? কাছের মানুষ আর দূরের মানুষের খেলার মধ্যে আছি কি?

তানবীরা
২৩.১২.০৯

Tuesday 15 December 2009

একজন সুবিধাবাদিনীর পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা

অফিসে অসম্ভব ব্যস্ত আর বিভিন্ন কারনে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত। বেশি ব্যস্ত থাকলে যা হয় কাজ হয় না বেশি কিন্তু ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব নিয়ে সারাক্ষন একটা অকারণ টেনশান হতে থাকে। বিভিন্ন কারনে অকারনে বিভিন্ন ওয়েবগুলোতে বেশি ক্লিক করা হয়। মন বসাতে পারি না, কি করলে ভালো লাগতো তাও জানি না। জীবন সব সময় এক রকম থাকে না জানি, কিন্তু যা যা জানি তাও সব সময় মন থেকে মেনে নিতে পারি না। মেনে নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে আমি পৃথিবীতে আসিনি যদিও জানি তার সাথে আজ এটাও জানি একদিন সব দুঃখ কষ্ট সয়ে যাবে। মাঝখানে কটা দিন রক্তক্ষরণ হবে শুধু। কালরাত থেকে বিভিন্ন ব্লগে বিজয় দিবসের ওপর লেখা পড়ে যাচ্ছিলাম। সবাই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। বর্তমান সরকার এ প্রতিশ্রুতি দিয়েই তরুন সমাজের ভোট বাগিয়েছেন। মনটা সেই নিয়েও ভাবছে। আসলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে নাকি এজীবনে বিচার দেখে যেতে পারবো না।

আজকে এক কলিগের জন্মদিন ছিল। সে সকালে অফিসে “কফিব্রেড” নিয়ে এসেছে সবার জন্যে। খেতে বেশ ভালো অনেকটা আমাদের দেশের চালের গুড়ো আর গুড় দিয়ে বানানো পিঠার মতো। আমাদের কুমিল্লার ভাষায় বলে, “তেলের পিঠা”। রস থেকে পিঠা গুলো তুলে রাখলে যেমন পিঠার সারা গায়ে সাদা শুকনো চিনির গুড়ার মাখামাখি থাকে এ পিঠাতেও ঠিক তাই। “কফিব্রেড” হাতে নিয়ে মন উড়ে যায় ............। এখন শীতের সময়। সারা দেশ জুড়ে পিঠা খাওয়ার ধুম। মাইনাস ঠান্ডায় কৃত্রিমভাবে গরম করে রাখা অফিসঘরটিতে বসে ঢাকার ফুটপাতের পাশে বসে কোন এক রিক্সাচালক রঙ চঙে মাফলার সারা মুখে মাথায় জড়িয়ে হয়তো প্লাষ্টিকের ছোট প্লেটে ভাঁপা পিঠা খাচ্ছেন ভেবে দুচোখ ভিজে উঠলো। মন খারাপ থাকলে আমার এমনই হয়। সারাক্ষন যা মনে পড়ে তাতেই চোখ ভিজে যায়। কেউ তাকালে বলি, “সর্দি”। ভাবনা এখন রিক্সাচালক ছাড়িয়ে আমার বাড়ির উঠোনে।

আগে শীতের দিনে পিঠা দেখলে বরং বিরক্তই হতাম। কিন্তু এখন সমানে চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে আমার মেয়ের গালের মতো ফোলা ফোলা দুধ সাদা চিতোই পিঠা, নারকেল আর গুড় জর্জরিত ভাঁপা পিঠা, ছিটা পিঠা, কুৎসিত কদাকার মেরা পিঠা। যেটা দেখা মাত্র পিত্তি জ্বলে যেতো। এগুলো ভাবতে ভাবতেই লক্ষ্য করলাম আগের মতো বুকটা ফেটে চৌচির হচ্ছে না। বরং কলিগ যখন বললো, অনেক “কফিব্রেড” বেঁচে গেছে আরো কেউ নিতে চাইলে নিতে পারো। আমি যেয়ে আবার আর একটা ব্রেড নিলাম আর বেশ আনন্দের সাথেই খেলাম। দেশে কথা হলে যখন শুনি ওরা ভালো মন্দ খাচ্ছে আগের মতো বুকটা চৌচির হয় না, সামান্য একটু ব্যথা হয়েই থেমে যায়। সেদিন একজন ফোন করল বাংলাদেশে যাচ্ছে ছুটিতে তাই বিদায় নিতে। সেদিন সারাদিন আমার বালুশাই খেতে এমন ইচ্ছে করছিল যে, আমি ওকে বল্লাম “রস” নয়তো “সর” থেকে বালুশাই আনবে আমার জন্যে। আর ভাবলাম দেশে যেয়ে এবার এই মিষ্টি বানানোটা হাতে নাতে শিখে আসবো। কিন্তু রাতে শুয়ে মনে হলো, আজকাল এয়ার লাইন্সের যা অবস্থা, ধুত বেচারা লজ্জায় হয়তো কিছু বলতে পারেনি কিন্তু তাকে এ বেকায়দায় না ফেললেও চলতো। এখন দেশীয় জিনিসের আকাঙ্খা সহ্য সীমার মধ্যে এসে পড়েছে, এ কিসের লক্ষন ?

আজকাল কেমন যেনো নিজেকে অপাক্তেয় লাগে। বোধ হয় কোথাও আমার বাড়ি নেই ঘর নেই। এ মিছেই পথ চলা। যার কিছুই হয়তো সত্য নয়। বাংলাদেশে গেলে সব কিছুতেই প্রচুর শব্দ লাগে। মনে হয় সবাই অকারনে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলে। অনেক বেশী কথা বলে, মানুষের ভীড় বেশী। নেদারল্যান্ডসের নিজের বাড়ির একলা কোনটাকে তখন আবার খুব চাই। অথচ এক সময় এখানের এই মৃত্যুশীতল নীরবতা বুকে পাথর হয়ে চেপে থাকতো, কতোদিন মনে হয়েছে, এখুনি আমি দম আটকে মরে যাবো। মরার হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে টিভি চালিয়ে রাখতাম সারাদিন। একটা সময়ের পর ঢাকার যানজট অসহ্য লাগতে থাকে, মনে হয় কখন ফিরে যাবো ঐপারে? অসু্খ হয় নির্ঘাত দেশে যাওয়ার পরপরই। ডাক্তার আর ওষুধের বাহার দেখলে মনে হয় ফিরে যাই নেদারল্যান্ডস। পানি খাওয়ার সমস্যা, যেখানে সেখানে কার্ডে পে করার সমস্যা, ব্যাগে টাকা নিলে ছিনতাইয়ের সমস্যা, আবার জিনিসপত্র আকাশছোয়া দাম, মেয়েদের টয়লেটের সমস্যা ক্লান্ত মনটা তখন বলতে থাকে, ভালো লাগে না এবার ফিরে যাই। আবার বিজয় দিবসের ঢাকাকে কল্পনা করে, পহেলা ফাল্গুনের ঢাকাকে কল্পনা করে, একুশের ঢাকাকে কল্পনা করে কিংবা পহেলা বৈশাখের ঢাকাকে কল্পনা করে চোখের পানি ফেলি। তখন ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে ফেলে ঢাকা চলে যাই, যা হয় হোক। মায়ের হাতের রান্না, যত্ন সবকিছুর জন্যই মন ব্যাকুল থাকে।

তারমানে আমি সব জায়গার ভালোটা চাই, খারাপের সাথে থাকতে চাই না। আগে ঢাকা গেলে যখন বেশ অসুস্থ হতাম তখন আমার প্রাক্তন বস একবার বলেছিল, তুমি নিজেকে অনেক জোর করো তানবীরা। তুমি চাও বা নাও তুমি এখানে থাকতে থাকতে এখানের জল - হাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছো। এখন দেশে যেয়ে তোমার অনভ্যস্ত সিস্টেমকে যখন হঠাৎ অনেক জোর দাও, তারা নিতে পারে না তুমি অসুস্থ হয়ে পরো। তখন আমার দেশপ্রেম তুঙ্গে থাকাতে বসের সাথে জোর গলায় বলেছি, কখনোই না, যেখানেই থাকি বাংলাদেশি আছি তাই থাকবো চিরকাল। আজকাল একটা অশুভ সত্যি চোরাগুপ্তা উঁকি দেয় আমার মনে, সে কি ঠিক বলেছিল নাকি সেদিন? বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে যখন সবকটি ব্লগে তুমুল লেখালেখি চলছে তখন আমি ভাবছি, “তাহলে কি আমার দেশপ্রেম সত্যিই কমে গেছে”? আমি কি তাহলে এতোদিনে সত্যি সত্যি সভ্য সমাজের সুশীল তৈরি হলাম?

এ সত্যটাও মানতে পারছি না।

তানবীরা
১৬.১২.০৯

Friday 11 December 2009

ব্লগার বৃত্তান্ত

ইহা একজন অতিশয় ফালতু ব্লগারের আরো অতিশয় ফালতু চিন্তা ভাবনা। স্বার্থান্বেষী মহলকে ইহা হইতে ত্যানা প্যাঁচাইয়া সূতার ফ্যাক্টরী খোলার চিন্তা ভাবনা হইতে দূরে থাকার অনুরোধ করা হইতেছে।


আমার সংক্ষিপ্ততম ব্লগার জীবনের ক্ষুদ্রতর পরিসরে ব্লগ নাটকের যা দেখছি তাতে আমার মতে এই নাটকের চরিত্রগুলোকে প্রায় চার ভাগে ভাগ করা যায়।


প্রথম ভাগঃ ইহারা অতিশয় নিরীহ, গোবেচারা ব্লগার। বোকা - সোকা বললেও সেটা ভুল না। সারাদিন বাইরে কাজ টাজ করিয়া, তারপর সংসারের যাবতীয় নিরান্দময় কাজ সারিয়া নেটে বসেন। সারাদিনে একটু ঝটাঝট খবরের কাগজে চোখ বুলানো ছাড়া এরা বাইরের পৃথিবীর সাথে বিচ্ছিন্নই থাকেন বলা চলে। এদের ব্লগিং এর একমাত্র কারন নিজস্ব বিনোদন ও সামাজিকতা, বন্ধু বান্ধবের সাথে একটু হাসি ঠাট্রা কিংবা একটু রসময় খোঁচাখুচি। এদেরকে চরম ক্ষেতু ক্যাটাগরীর ব্লগার বলা চলে। ছোটবেলায় একটা সাদাকালো সিনেমা দেখেছিলাম, আজ আর নাম মনে নেই। যার নায়ক ছিল ফারুক, গ্রাম থেকে মাত্র শহরে এসেছে, নিয়ম কানুন কিছুই জানে না, রাস্তার মাঝ দিয়ে আস্ত কলার ছরি নিয়ে হাটছিলো, রাস্তায় প্রায় যানজট হয় হয় অবস্থা। এর মধ্যে যতো গাড়ি যাচ্ছিলো ফারুককে একটা করে বকা দিয়ে যাচ্ছিলো। এই ক্ষেতু ব্লগারদের সেরকমই অবস্থা প্রায়। ব্লগের রীতি নীতি, পলিটিক্স কিছুই জানে না নেহাৎই কোন একদিন বইপত্র ঘেটেছিলো সেই অভ্যাসের কারনে অক্ষর দেখলেই লিখতে পড়তে বসে যায়। এদের কোন মিশন - ভিশন নাই। অকাজের বলা চলে। কিন্তু ব্লগায় প্রচুর যদিও আজাইরা। যা দেখে তাই নিয়েই লিখতে বসে যায়।


দ্বিতীয় ভাগঃ উনারা অতিশয় বিদ্বান ও জ্ঞানী। পৃথিবীর কোথায় কি কোন মূহুর্তে ঘটেছিল সব সাল তারিখ মিনিট সেকেন্ড মাইক্রোসেকেন্ড শুদ্ধ যেকোন জায়গায় বসে যেকোন সময় বলতে পারবে। সবজান্তা শমসের টাইপ উনারা। জ্ঞানের মহাসমুদ্র উনাদের কাছে নিছকই কুঁয়া। যেকোন বিষয়েই উনারা এতো প্রচুর জ্ঞান ধারন করেন যে আপনি টাশকি খেয়ে যাবেন আসলে কোন বিষয় উনার “স্পেশাল পেপার” ছিল গ্র্যাজুয়েশনের সময়। উনারা অতিশয় স্মার্ট ক্যাটাগরী ব্লগার যদিও সাধারনতঃ উনারা ব্লগ লিখে সময় নষ্ট করেন না। নিতান্ত কোন অঘটন ঘটে গেলে প্রচুর জ্ঞানের বানী দিয়ে উপদেশমূলক বিশ্লেষনধর্মী কিছু লিখেন মানব জাতির কল্যানের জন্য। আর কোন কারনে নয়। স্নিগ্ধ ভাব ভঙ্গীতে স্মিত হাস্যে সবদিকে শ্যোন দৃষ্টি রাখেন। সমাজের সমস্ত দ্বায়িত্ব উনাদের স্কন্ধে দেয়া আছে। লগিত কিংবা অলিগত অবস্থায় কে কোথায় কি লিখল, তাতে সমাজের কোন স্তরের লোকের কতোটুকু অপমান হইলো, কিংবা কে লাঞ্ছিত হইলো, পৃথিবীর বায়ু স্তরের ভারসাম্য ঠিক রইল কিনা ইত্যাদি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ন সর্বদিকে তারা টনটনা সজাগ। আর কিছু নাও পেলে, জ্ঞান ঝাড়ায় জন্যে বানান বা বাক্য বিন্যাস কিংবা সন্ধি - সমাস, ব্যকরণতো আছেই। বাস্তব সমাজ রসাতলে যাচ্ছে যাক কিন্তু ব্লগ বা ভার্চুয়াল সমাজ থাকতে হবে “নীট এন্ড ক্লীন”। এখানে সুশীলতা, উজ্জলতা, মানবতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, চিরন্তন বহমান।


তৃতীয় ভাগঃ এরা ব্লগে সাধারনতঃ নিয়মিত থাকেন না। ক্যাচালের সময় হঠাৎ করে উদয় হন। কোন সময় হয়তো সেদিনই লগ ইন করেছে আবার কোন সময় কারো দ্বারা ইনফর্মড হয়ে বা ব্রেন ওয়াশড হয়ে নিছক দলাদলি করতে বা দল বাড়াতে কিংবা মজা নিতে আসে। এদেরকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা ক্যাটাগরীতে ফেলানো যেতে পারে। কি নিয়া হাউকাউ করতেছে, তা তার নিজের কাছেও পরিস্কার না। আগা নাই মাথা নাই প্যাটা নিয়া টানাটানি। সবাই করতেছে তাই সেও করতেছে, আমিতো এমনি এমনিই করতেছি টাইপ হলো উনারা। কিন্তু ভাব এমন থাকে যে এমন মহান কাজে অংশগ্রহন করতে পেরে সে “ধইন্য”। সমাজ উদ্ধার করল। কিছু আবর্জনা সাফ করলো, পরকালে শুধু এইকারনেই তার পুরস্কার নিশ্চিত। আরিফ বা তাসলিমার বিরুদ্ধে লাঠি নিয়ে বের হওয়া মোল্লাদের চেহারার মধ্যে যে তৃপ্তি দেখা যেতো পত্রিকার ছবিতে তাদের চেহারাও সেরকম তৃপ্ত ভাব নেয়া। অবশ্য শিয়ালের মতো ধূর্তও কিছু থাকে। সুযোগে পার্ট নিয়া সাইড হিরোর রোল দখল করার ধান্ধায়।


চতুর্থ ভাগঃ এরা সাধারন ব্লগার নন। এরা ব্লগকে নিয়ন্ত্রন করেন। জাহাবাজ আঁতেল টাইপ। এদের মনের মধ্যে কি আছে আপনি এদের পেটে বোম মেরেও ধারনা করতে পারবেন না। এরা এধরনের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন ও তার সদ্বব্যবহার করেন। নিজেরা কোন ক্যাঁচালে প্রকাশ্যে না জড়িয়ে অদৃশ্য হাত দ্বারা যেকোন ক্যাচাল লাগানো, বাড়ানো, নিয়ন্ত্রন ও বন্ধ করেন। তারপর যার ওপর রাগ থাকে তাকে তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ব্যান বা ব্লক ও সাইজ করেন। এরা হলেন প্রভু ক্যাটাগরী। তাওয়া গরম থাকতে থাকতে তারা রুটি ভাজেন না। তারা অসম্ভব ধৈর্য্যশীল ও বিচক্ষন। তাওয়া অল্প ঠান্ডা করে তারমধ্যেই রুটির এপিঠ ওপিঠ টিপে টিপে ভেজে খাবেন কিন্তু কোথাও খুন্তি নাড়া দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিবেন না। এদের পরবর্তী লক্ষ্য থাকে সাক্ষাত মন্ত্রীত্ব।

তানবীরা
১১.১২.০৯

Monday 7 December 2009

মানুষ কি জাত সংসারে?

নিশি আজকাল ধরতে গেলে কিছুই খেতে পারছে না। সব খাবারে গন্ধতো লাগেই এই গন্ধ থেকে আবার উদ্ভদ উদ্ভদ জিনিসও মাথায় আসে। গরুর মাংসকে মনে হয় ঘোড়া বা গাধার মাংস আর মনে হলেই তিন গুন বেগে বমি বেরিয়ে আসে। নিজে রান্না করলে খাওয়ার প্রশ্নতো আসেই না কারন রাধতেই রাধতেই সে বমি করতে করতে কাহিল হয়ে যায়। অয়ন যদিও বলে, তুমি রেঁধো না নিশি, অফিস থেকে ফিরে আমিই করে নিবো। তুমি একটু আমাকে এগিয়ে দিও আর দেখিয়ে দিও। নিশি্র মর্ণিং সিকনেসও প্রচন্ড। বেলা বারোটা অব্ধি মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারে না বলতে গেলে। টুথপেষ্ট মুখে তুলতে পারে না, পেষ্টের গন্ধেই নাড়িভূড়ি উলটে আসে। পৃথিবীর সব কিছুতেই গন্ধ পায় সে। খাবার, টুথপেষ্ট, সাবান, ঔষধ। ডাক্তার বলেছেন, কারো কারো তীব্র মর্ণিং সিকনেস থাকে। এখন সবেতো আট সপ্তাহ যাচ্ছে, যতোদিন যাবে আস্তে আস্তে এগুলো কমে যাবে। সে যখন কমবে তখন কমবে। এখনতো আর কমছে না। প্রান যায় যায় অবস্থা এখন। কিন্তু তারপরো সারাদিন নিশি ঘরে শুয়ে বসে থাকবে আর বেচারা অয়ন খেটে খুটে ফিরে এসে রাধবে ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়, তাই কষ্ট হলেও নিশিই রেঁধে ফেলে। তবে আচার মেখে নিশি দু' এক লোকমা ভাত মুখে তুলতে পারে। ডাল আর আঁচার মাখা নয়তো শুধু আঁচার মাখা ভাত এই হলো নিশির খাদ্য। নিশির এই দুরবস্থা দেখে আশে পাশে থাকা বন্ধু বান্ধবেরা মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যায়। অন্যের হাতের রান্না হলে নিশি একটু খেতে পারে। মূল সমস্যাতো রান্নার গন্ধে। অন্যে রেধে আনলে গন্ধটা ততো তীব্র ভাবে পায় না। এ পরবাসে নিশির বেশ বন্ধু অনিতা। দুজনের মধ্যে ধর্ম থেকে শুরু করে ভাষার অনেক কিছুর পার্থক্য যেমন আছে তেমনি আবার অনেক চিন্তা ভাবনার মিলও আছে। সেই মিলগুলোই পার্থক্য ছাড়িয়ে দুজনকে দুজনের কাছে নিয়ে এসেছে। অনিতার শাশুড়ি এসেছেন দেশ থেকে। যখন নিশি বেশ সুস্থ ছিল দু বন্ধুতে বেশ গল্প হতো অনিতার শাশুড়ি এলে কি কি করবে তাই নিয়ে। এদিকে এখন উনি এসে গেছেন কিন্তু নিশি দেখাই করতে যেতে পারলো না। অনিতার শাশুড়ি আসার সময় দেশ থেকে অনেক আঁচার আর খাবার দাবার নিয়ে এসেছেন। ছেলে বৌ নাতনীদের জন্যে। অনিতা আচার দেখে খুব খুশি। শাশুড়িকে বন্ধুর কথা বলে বললো, চলুন মা ওর সাথে দেখা করে আসি আর ওকে আচারও দিয়ে আসি। বেচারী চারটা খেতে পারবে তাহলে। অনিতার শাশুড়ি দেশ থেকে এসে এখানে বোর হচ্ছেন। উইকএন্ড ছাড়া বেড়াতে যাওয়া নেই, উইকডেজে সবাই যার যার মতো কাজ আর স্কুল নিয়ে ব্যস্ত। যাক তাও কারো বাড়ি যাওয়া হচ্ছে।

কিন্তু যখন শুনলেন মুসলমানের বাড়ি যাওয়া হবে তখন উনি দ্বিধায় পরে গেলেন। কি করবেন, কি করেন? তিনি ময়মনসিংহের কুলীন ব্রাক্ষন ঘরের মেয়ে, সারা জীবন নিষ্ঠার সাথে আচার পালন করে গেছেন। শেষ বয়সে তিন মাস ছেলের বাড়ি বেড়াতে এসে তার ধর্ম নষ্ট করবেন, তা কি করে হয়? অনিতাও ঝামেলায় পরে গেলো। বিদেশেতো সবার প্রধান পরিচয় বাংলাদেশি, মুসলমান - হিন্দু ব্যাপারটাতো ততো সামনে আসে না। এখন কি করে? নিশি তার এতো বন্ধু যে না গেলেও মুখ থাকবে না তার কাছে। পরে শাশুড়ির সাথে রফা হলো, শাশুড়ি আসবেন তার মুসলমান বন্ধুর বাসায় এক শর্তে, তাকে এখানে জল স্পর্শ করতেও বলা হবে না। অনিতা সেভাবেই নিশিকে ফোন করে জানালো। বন্ধুর দুঃখ বন্ধু না বুঝলে আর কে বুঝবে? নিশি বলল, ঠিকাছে আমি জলও সাধবো না। অনিতা আর তার শাশুড়ি বাসায় ঢুকলে নিশি পায়ে হাত দিয়ে তাঁকে প্রনাম করল, তিনি নিশিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনেই দুজনের কুশল জিজ্ঞাসা করল। আস্তে আস্তে গল্প জমে উঠল। গল্প করতেতো ভালোই লাগে কিন্তু বেশি কথা বললেই আবার শরীর খারাপ করতে শুরু করে। এর মধ্যেই আবার নিশির বমি শুরু হয়ে গেলো। নিশির শরীর যেমনি থাক অনিতাকে সময়মতো বাড়ি ফিরতে হবে, বাচ্চাকে আনতে হবে স্কুল থেকে। অনিতা নিশিকে তাই বাই করে পড়িমড়ি ছুটল শাশুড়িকে নিয়ে বাচ্চার স্কুলে। কিন্তু এরকম অসুস্থ একটা মেয়েকে একা বাড়িতে ফেলে যেতে উনার মন টানছিলো না। বাচ্চা মেয়েটা প্রথম বার পোয়াতী হয়েছে, কেউ কাছে নেই। একা বাড়িতে পরে রয়েছে, খেতে পারছে না কিছু। আজ দেশে থাকলে মা থাকতো কিংবা শাশুড়ি থাকতো কাছে, এটা সেটা রেঁধে খাওয়াতো। মাথায় হাত বুলাতো। আহারে, কার না কার মেয়ে এখানে এভাবে পরে আছে। নিশি উনাকে বিদায় দিতে গাড়ির কাছে আসতেই উনি নিশিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে, গালে বেশ কয়েকটা চুমু খেলেন। নিশি সসঙ্কোচে বাক্যহীন। নিশির হাতে ছোঁয়া এক গ্লাস পানি উনি খাবেন না, পবিত্রতা নষ্ট হবে সে জায়গায় উনি দেদারসে নিশিকে চুমু খেয়ে ফেললেন!

এরপর প্রায়ই উনি নিজে এটা সেটা নিরামিষ রান্না করে নিশির জন্য নিয়ে আসতে লাগলেন। ছেলে বৌ এর জন্য আনা নিজের হাতের বানানো আচারও নিয়ে আসতে থাকলেন। ব্যস্ততায় অনিতা অনেক সময় আসতে না চাইলে উনি জোর করে অনিতাকে নিয়ে চলে এসে নিশিকে আদর করে খাইয়ে যেতেন। কিন্তু উনি নিজে নিশির হাতের ছোঁয়া এক গ্লাস পানিও কখনো এ বাসায় স্পর্শ করেন নি। আর নিশিকে তিনি মিষ্টি গলায় শাসন করতেন নিজের যত্ন নেয়ার জন্যে। নিশি কেনো ওর মাকে বলে না, ওর কাছে এসে থাকার জন্যে। এখনিতো মাকে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মাকে যেনো বলে সে কথা বার বার তাগাদা দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যেতেন। যাওয়ার সময় বার বার নিশির কপালে চুমু খেয়ে, নিশির সারা মাথার চুল লন্ড ভন্ড করে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বিদায় নিতেন। উনি যখনি বিদায় নিতেন, নিশির মনে একটা আলাদা অনুভূতি খেলা করতো। যাকে এতোটাই কেউ ভালোবাসে যে বার বার চুমু দিয়ে মাথা মুখ ভিজিয়ে দেয় তার হাতের স্পর্শে এমন কি বিষ থাকতে পারে? কি হবে তার হাতের ছোঁয়া পেলে? মাসির এই ভালোবাসায় যে আন্তরিকতার কোন খাঁদ নেই সে কথা নিশির অন্তর জানে, ভালোবাসা অনুভব করা যায়। তাহলে ধর্ম কি ভালোবাসারও ওপরে থাকে? জানে না নিশি কিন্তু মন মানতে চায় না।

তানবীরা ০৮.১২.০৯

শিরোনামহীণ

শুক্রবারে অফিস অনেক চুপচাপ থাকে। মোটামুটি অনেকেই লং উইকএন্ড প্ল্যান করেন, আবার যারা পার্টটাইম কাজ করেন তাদের অনেকেরই পার্টটাইম ডে থাকে শুক্রবার। আমরা সাধারনতঃ উইকডেজে যে কাজগুলোর জন্য সময় পাই না সেগুলো নিয়ে বসি শুক্রবার। ফোন কল কম, লোকের আসা যাওয়া কম মানে বাইরের ডির্ষ্টাবেন্স কম। জট বেঁধে থাকা কাজগুলোর জটা ছাড়ানো হয় সেদিনটিতে। অনেক সময় আমরা মজা করে বলি প্রব্লেম সলভিং ডে।

সেরকম একটা সাধারন শুক্রবারই ছিলো গত শুক্রবারটি। আমাদের এক ক্লায়েন্ট আমাদের কাছে কিছু টাকা পাবেন, তিনি বলছেন তিনি বেশি টাকা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। এটা আমাদের নিত্যদিনের সমস্যা। ক্লায়েন্টরা ভাবেন বেশি দিয়েছেন। আমরা ভাবি না। তারপর সব হিসেব মিলানো হলে যদি দেখি সত্যিই কিছু ব্যালান্স আছে, ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করি, কি চাও? পয়সা ফেরত না পরের হিসাব থেকে এডজাষ্ট। যেহেতু এদেশে "খরিদ্দারকে রাজা বলা হয়" তার চাওয়াই আমাদের চাওয়া। এই ক্লায়েন্ট বললেন, ফেরত দিয়ে দাও, পরে আবার নতুন করে হিসাব শুরু করা যাবে। আমি বললাম, তথাস্তু। তোমার একাউন্ট ডিটেলস আমাকে তড়িৎবার্তায় জানাও আমি পয়সা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ক্লায়েন্ট ডিটেলস তড়িৎ বার্তা প্রায় সাথে সাথে পাঠালেও, একটি ডিজিট কোথাও ভুল টাইপ করেছেন। হয় একাউন্ট নম্বর নয় বিক কোড নয় সুইফট কোড। বার বার অন লাইন ব্যাঙ্ক আমাকে এরর দিচ্ছে আর বলছে ডিটেলস ম্যাচ করছে না। আমি আবার তাকে তড়িৎ বার্তা পাঠালাম ডিটেলসটা আবার দেখে দেয়ার জন্যে। এবার আর উত্তর আসে না আসে না প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে। আমিও এদিকে অধের্য্য হয়ে যাচ্ছি এটা ক্লোজ করে আমি অন্য কাজে যাবো। এমনিতেও শুক্রবারে সারাক্ষণ কাজ করতে ইচ্ছে করে না। অপেক্ষা করে থেকে ভাবলাম, যাক ফোনই করি। ফোনে ফাইন্যান্স অধিদপ্তরে লোকের কাছে, ডিটেলস চাইতেই তিনি তিক্ত গলায় আমায় জবাব দিলেন, "তুমি বিদেশি, তোমাকে আমি ডিটেলস দিবো না, ইউরোপীয়ান কাউকে ফোন করতে বলো আমি ডিটেলস দিয়ে দিবো।" আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও সাথে মজা পেলাম। বললাম, আমি তাহলে আমার বসকে এই প্রসঙ্গে কি আপডেট দিবো? ভদ্রলোক নির্বিচারে বলে দিলেন বলবে, আমি বিদেশিদের বিশ্বাস করি না।

আমি বিমলানন্দে এই ডায়লগ বসকে তড়িৎ বার্তায় পাঠিয়ে দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে গেলাম। বস তখন তার দুপুরের খাবার দাবার নিয়ে ক্যান্টিনে ব্যস্ত। একটু পর এসে আমাকে বলছেন, "আর ইউ ওকে'? বোধ হয় আমার চিঠি পড়ে খুব আত্মসম্মানে লেগেছে। সব সময়তো ভাব ধরে থাকেন ইউরোপীয়ানরা ভদ্রতার আর সভ্যতার পরাকাষ্ঠা। এইভাব যে এক ডয়েচ গর্দভ এভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিবেন, ভাবেনি হয়তো। আমি সাধারনঃভাবেই বললাম, আমি ঠিক আছি কিন্তু পয়সা দেয়ার কি করবে, তুমি ফোন করো তাহলে। তুমিতো খাটি ইউরোপীয়ান। বস রাগ সামলাতে সামলাতে বললো, পয়সার দরকার থাকলে ওরা ফোন করবে, ডিটেলস দিবে, আমাদের তরফ থেকে আর গরজ দেখানোর দরকার নাই। আর তুমি কেনো ওকে বললা না, সব ইউরোপীয়ানদের বিশ্বাস করা যায়? ইউরোপীয়ানদের মধ্যে চোর ছ্যাচ্চোর নেই?

আমি বললাম, কোম্পানীর শ্লোগান হলো "খরিদ্দার রাজা"। তার সাথে বেয়াদপি করে আমি আবার কোন ফ্যাসাদে পরবো? আস্তে আস্তে অফিসে দু একজন শুনল এ অপমানের কথা। আমার সাথে দরকার ছাড়া ভালো ব্যবহারের প্রলেপ দেয়া শুরু করলো। যেটা আমাকে আস্তে আস্তে মাত্রা ছাড়া ক্রুদ্ধ করে ফেললো। কিন্তু কিছু করার নাই। জীবন এনে এমন জায়গায় দাড় করিয়ে দিয়েছে, নিজের বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে, হাত পা নেড়ে খেলেও মানুষ করুণা করার অবকাশ পেয়ে যায়। আমি না দেখেও জানি আমার চোখ মুখ শক্ত হয়ে লাল হচ্ছে। ভিতরের তাপের আভা এখন বাইরে দেখা যাবে। যাই নিতে পারি নিজেকে দুর্বল বা অসহায় কাতারে দাড় করিয়ে করুনা নিতে পারি না। তার আগেই যেনো মরে যাই। লড়ে যাচ্ছি লড়ে যাবো কিন্তু কোন ট্যাগিং কাতারে দাঁড়িয়ে তার সুবিধা নিবো না। অতি কষ্টে নিজের মনোভাব লুকিয়ে বাসায় ফিরেছি, "চোর" অপবাদ নিয়ে। শনিবারে কাছাকাছি থাকা এক বন্ধু এসেছে এমনিতেই সান্ধ্য আড্ডা দিতে। তার সাথে গল্পে গল্পে এটা বললাম সে আমাকে বললো, তোকে মুখে মুখে যারা সান্ত্বনা দিয়েছে অফিসে ইনক্লুডেড তোর বস, সবাই মনে মনে কি বলেছে জানিস? "ঠিক বলেছে, ঠিকি বলেছে"। বিদেশি মানেইতো চোর আবার কি?

আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে স্রোতের উল্টোদিকে নৌকা বাইতে বাইতে। অকারনেই মেজাজও লাগে খুব। সব কিছু ভেঙ্গে চুরে দিয়ে বিদ্রোহ করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় কোথাও আগুন জ্বেলে কিংবা ভূমিকম্প করে কিছু ধ্বংস করে দিতে পারতাম। হয়ে যাক পৃথিবীর এক প্রান্ত তছনছ কিছু। আমি বাদামি বর্নের, এর মধ্যে আমার হাত কোথায়? আমি গরীব দেশে জন্মেছি, গরীব পিতার ঘরে জন্মেছি এটা কি আমার দোষ? আমিতো এগুলো নিয়ন্ত্রন করি নাই। যা আমার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে ছিল না তার জন্যে কেনো আমাকে শাস্তি পেতে হবে সারা জীবন ধরে? এ শাস্তির শেষ কোথায় আর কবে? আগে সন্ত্রাসী, অপরাধীদের জন্য মন থেকে এক ধরনের ঘৃনা অনুভব করতাম। আজকাল কেমন যেনো একাত্মতা অনুভব করি। আগে অনেক সময় সংবাদপত্রে সন্ত্রাসীদের তাদের সন্ত্রাসী হওয়ার কারন নিয়ে কোন ফিচার থাকলে, এক ধরনের অবজ্ঞা আসতো মনের মাঝে, মনে মনে বলতাম, হু অপরাধের কারন জাষ্টিফায়েড করতে আসছে, কিন্তু অপরাধতো অপরাধই। তার আবার জাষ্টিফিকেশন কিসের? কিন্তু আজকাল মনে হয় কারণও হয়তো আছে। আস্তে আস্তে পিছনে যেতে যেতে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তখন আর যেতে না পারলে শুরু হয় প্রতি আক্রমন।

আমারো আজকাল মনে হয়, দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে আমার। যে অপরাধ আমার নয় তার শাস্তি আমি আর চাই না।

কাজী নজরুল ইসলাম মাথায় ভর করে থাকেন, মনে হয় সারাক্ষণ

লাথি মার ভাংরে তালা
আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা

তানবীরা
০৭.১২.০৯