Wednesday 25 November 2020

The Dunning-Kruger Effect

সক্রেটিস বলেছিলেন, দ্যা ওনলি ট্রু উইজডোম ইজ নোয়িং হোয়েন ইউ নো নাথিং। কিন্তু আমরা ভাবতে চাই, আমরা সব জানি। উনিশো পচানব্বই সালের উনিশে এপ্রিল, ম্যাকার্থার হুইলার নামের এক ব্যক্তি দুটো ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেন। ডাকাতির সময় তিনি নিজেকে লুকানোর কোন চেষ্টা করেননি, মুখে কোন ধরনের মুখোশ পরেননি, পরচুলা লাগাননি, এমনকি বের হবার সময় সিকিউরিটি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হেসেও ছিলেন। কিন্তু মুখে লেবুর রস মেখেছিলেন। তার ধারনা ছিলো মুখে লেবুর রস মাখা থাকলে কোন ধরনের সিকিউরিটি ক্যামেরায় তার চেহারা ধরা পরবে না। তিনি এই ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, পুলিশ ধরার পর তিনি হতবিহবল হয়ে যান। লেবুর রসের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে তাঁর ভুল ধারনার কারণে এই বিশ্বাসটি তৈরি হয়েছিল। কগনিটিভ বায়াস। চিন্তার নিয়মতান্ত্রিক ত্রুটি থেকে মানুষ তার চারপাশে যা দেখে সেটাকে সে নিজের মত ভাবে এবং সেই ভাবনার ওপর আস্থা রেখে সিদ্ধান্ত নেয়, রায় দেয়, তৈরি হয় কগনিটিভ বায়াস। কগনিটিভ বায়াস আমাদের বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে, আমরা এমন কিছুতে আস্থা রাখি যা সত্য নয়। এই কারণে আমরা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই যা ক্ষতিকর। “বিলিভিং ইউ নো সামথিং দ্যাট ইউ ডোন্ট” কল্ড ডানিং-ক্রুগার এফেক্ট। সবাই , ম্যাকার্থারের ব্যাপারটি নিয়ে হইচই করে ভুলে গেলেও ব্যাপারটি ভাবায় দুই সামাজিক মনোবিদ ডেভিড ডানিং আর জাস্টিন ক্রুগারকে। উনিশো নিরানব্বই সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা দুজন এই নিয়ে তাদের গবেষণা প্রকাশ করেন।
অল্প বিদ্যা আর দক্ষতা নিয়ে মানুষ ভাবে তারা অন্যেরা চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরী কিন্তু সাথে এটা জানা থাকাও দরকার আমরা আসলে কতটুকু জানি। ডানিং-ক্রুগার এফেক্ট পুরুষ-নারী সবারই আছে। ডানিং-ক্রুগারের মজাদার তথ্য হলো, যারা আসলেই অনেক জানে তারা ভাবে তারা কম জানে। আমি কিছুই জানি না এইটুকু জানতে হলেও তোমাকে কিছু জানতে হবে। আর যারা বাস্তবেই কম জানে, তারা সেটা মানতে চায় না, সমালোচনা নিতে পারে না, নিজেকে উন্নত করার প্রতি কোন আগ্রহও থাকে না তাদের।
নিজেকে এর থেকে রক্ষা করতে হলেঃ নিজের মেধা সম্পর্কে জানতে হবে দুর্বলতাগুলোও জানতে হবে সমালোচনা গ্রহণ করতে জানতে হবে গোটা জীবন শিখে যেতে হবে আঠারশো একাত্তর সালে চার্লস ডারউইন লিখেছিলেন, ইগনোরেন্স মোর ফ্রিকোয়েন্টলি বিগেটস কনফিডেন্স দ্যান ডাজ নলেজ। দুই হাজার সালে এই দুই গবেষককে এই থিওরীর জন্যে "Ig Nobel" দেয়া হয়েছিলো যেটা স্যাটায়ারিক নোবেল" আর দুই হাজার সতেরতে এই থিওরীর ওপর ভিত্তি করে বানানো অপেরা নোবেল প্রাইজ সেরিমোনিতে পার্ফম করা হয়। তথ্যঃ অন্তর্জাল ২৫/১১/২০২০

বরুণবাবুর বন্ধু

তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম তুমি রবে নীরবে নিবিড়, নিভৃত, পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম আ হার্টফেল্ট ট্রিবিউট টু এন আনপ্যারালাল এক্টরঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বরুণবাবুরা আজ আছেন শুধু সিনেমায়, বইয়ে আর ইতিহাসের পাতায়। এরকম ত্যাগী নেতাদের কথা বইয়ে পড়েছি, পরীক্ষায় লিখেছি, নম্বর পেয়ে পাশ করে নিজেরা দুনম্বর তৈরী হয়েছি। তবুও এদেশের লোকেরা জানুক, পরবর্তী প্রজন্ম জানুক এরকম নির্লোভ, নীতি-আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষ এই ভারতবর্ষে, এই বাংলায় সত্যিই ছিলো। এথিক্স তারা নিজেদের জীবনেই পালন করেছেন শুধু ফেসবুকে লেখেননি। আর সৌমিত্রের চেয়ে এই চরিত্রে কাকে বেশি মানাতো! ভারতজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও গণপিটুনি বন্ধের দাবি করে এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর প্রতিবাদ করে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে লেখা চিঠির উনপঞ্চাশজনের তিনিও একজন যাকে পরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হতে হয়েছিলো। অনীক দত্ত পরিচালিত 'বরুণবাবুর বন্ধু' দেখানো হয়েছে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল অফ সিনসিনাটিতে। গত বছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল এই ছবি। মুম্বইয়ের থার্ড আই এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। মূল চিত্রনাট্য অনীক দত্ত আর উৎসব মূখোপাধ্যায়। তিন প্রজন্মের গল্পে সব জেনারেশনের প্রকৃতিই তুলে ধরা হয়েছে। যদিও গল্পটি কোলকাতার এক পরিবারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, তবে বাংলাদেশের জন্যেও গল্পটি প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে সত্য। রাষ্ট্রপতি প্রনব মূর্খাজি’র কাল্পনিক উপস্থিতি সিনেমাটিকে জীবন্ত করে রেখেছিলো। এই বয়সেও সৌমিত্রের মত অভিনেতাকে পয়সার জন্যে অভিনয় করতে হয়েছে তার ভাষ্যমতে। ব্যাপারটা আমার গোলমেলে ঠেকে। "বেলাশেষে, প্রাক্তন, বসু পরিবার" এর মত ছবিতে তাকে যুক্ত হতে দেখে যারপর নাই ব্যথা অনুভব করেছি কিন্তু “বরুণবাবুর বন্ধু” সেই দুঃখ মুছিয়ে দিয়েছে। সমালোচকদের মতে তার অভিনীত সেরা পাঁচের মধ্যে আছে এই ছবি, আমি দর্শক হয়ে বলছি, আরও একটি "সৌমিত্র" ছবি। তবে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সৌমিত্রের সাথে পাল্লা দিয়েছেন, অপূর্ব। শান্ত আবারো ভালবাসা রইলো।

Tuesday 17 November 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – সতেরই (নভেম্বর)

প্রিমিয়ে মার্ক রুতে সংক্রমণের মাত্রা এখনও বিপদজনক তবে কমতে শুরু করেছে, দুটো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আলোচনা করার অনেক কারণ আছে আজ। আংশিক লকডাউন নিয়ে আজ আমি আমার অবস্থান পরিস্কার করবো। মানুষ নিয়ম মানছে, সংক্রমনের মাত্রা একের নীচে এসে গেছে। সবাইকে এই জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক না তাই কঠোরভাবে নিয়মগুলো পালন করা দরকার। হাসপাতালগুলো এখনো চাপে, অনেক অপারেশান দ্বিতীয়-তৃতীয়বারের মত ক্যান্সেল করতে হয়েছে, করোনা ছাড়া অনেক রোগীই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। তাদেরকে বলছি, সময়মত ডাক্তারের কাছে যান যাতে পরে ভয়ানক কিছু এড়ানো যেতে পারে। বাসায় তিনজন মেহমান ডাকা যাবে, বাসার বাইরে আবার চারজনের সাথে আড্ডা মারা যাবে। চিড়িয়াখানা, লাইব্রেরী, যাদুঘর, সুইমিংপুল, থিয়েটার, সিনেমা ইত্যাদি আবার ম্যাক্সিমাম ত্রিশজনের জন্যে খোলা হবে। রেস্টুরেন্ট, ইভেন্টস, খেলাধূলা বন্ধ থাকবে। রাত আটটার পর বাসার বাইরে কোন এলকোহল নিষিদ্ধ। প্রথম ডিসেম্বর থেকে সুপারমার্কেটসহ অন্যান্য পাব্লিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সিন্টারক্লাশ এবার এই নিয়মের মধ্যেই পালন করতে হবে। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ং ছয়টি ভ্যাক্সিন প্রোডাকশান কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা হয়েছে যাতে দ্রুত ভ্যক্সিন পাওয়া নিশ্চিত করা যায়। ইউরোপীয়ান কমিশন যখন ভ্যাক্সিন এপ্রুভ করবে তখনই ভ্যাক্সিন পাবো তার আগে পাওয়া যাবে না। পুরো নেদারল্যান্ডসের মানুষকে একসাথে ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় প্ল্যানিং করছে সামনের বছরের প্রথম দিকে ভ্যাক্সিন পাওয়া গেলে কত দ্রুত সবাইকে ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে। ততদিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখতে পরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হয়েছে, এক্সেল টেস্ট কিটের মাধ্যমে সাথে সাথে ফল জানা যাবে। প্রথম ডিসেম্বর থেকে করোনা এপসের মাধ্যমে যখন জানা যাবে কেউ সংক্রমিত রোগীর পাশে এসেছিলো, তার কোন উপসর্গ না থাকলেও পাঁচ দিনের দিন তাকে পরীক্ষা করতে হবে। আর এই পাঁচ দিন তাকে বাসায় কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে। পরীক্ষা নেতিবাচক হলে কেয়ারন্টিন আর দরকার হবে না। আর ইতিবাচক হলে দশ দিন কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে। প্রতিদিন গড়ে চার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, যদি এই সংখ্যা নীচের দিকে নামে তবে ক্রিসমাসের সময় কিছু নিয়ম সাময়িকভাবে শিথিল করা যায় কিনা দেখা হবে। যারা একা থাকেন, এই অন্ধকার দিনগুলোতে একাকীত্ব অনুভব করেন তাদের জন্যে এ সময়টায় আশেপাশে কিছু মানুষের উপস্থিতি থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কোন তৃতীয় ঢেউ চাচ্ছি না। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ার সেলিব্রেশান নিয়ে আটই ডিসেম্বরে কথা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর: জানুয়ারী পর্যন্ত কি এই কড়াকড়ি থাকবে? আমরা আশাকরছি জানুয়ারীর মধ্যে আমরা আমাদের টার্গেটের মধ্যে পৌঁছতে পারবো, যতদিন সে লক্ষ্যে না পৌঁছতে পারবো, কড়াকড়ি থাকবে। নেদারল্যান্ডস কোন দ্বীপ না, আশেপাশের দেশদের দেখলে দেখা যাবে সেখানে আরও কত বেশি কড়াকড়িতে আছে সবাই, জার্মানীতে আরও কি কি বন্ধ করে দেয়া যায় তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সুইডেনও তাই, অস্ট্রিয়া আর লুক্সেমবার্গে আজ থেকে পুরোপুরি লকডাউন, সেদিক থেকে দেখলে ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডস অনেক ভাল আছে। আটই ডিসেম্বরের মধ্যে তিন হাজার ছয়শোর নীচে সংক্রমণ নামলে, দশ জনের নীচে রোগী আইসিইউতে এলে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ারে শিথিলতার করা ভাববো। *** আমার টিপ্পনী, নেদারল্যান্ডসের করোনা নিয়মনীতির অবস্থা খানিকটা ছোটবেলার এরিথমেটিক বইয়ের বান্দরের তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্কের জায়গায় দাড়িয়েছে। বাঁশ বেয়ে ওপরে উঠে তারপর নামে, সংক্রমণ কমলেই এটা ওটা খোলে দুই সপ্তাহের জন্যে তাতে সংক্রমণ বাড়লেই আবার বন্ধ করে দুই সপ্তাহের জন্যে। প্রতি দুই সপ্তাহে মনে রাখতে হয়, এ সপ্তায় কি কি এলাউড আর কি কি না।“ তবে প্রিমিয়ে আর ভাইস প্রিমিয়ের লাইভের নীচে যা যা কমেন্ট পরে তাতে শিউরে ওঠে আমি ভাবি, বাংলাদেশে হলে অবমাননার দায়ে চৌদ্দ গুষ্টি জেলে ভরে রাখতো। ভাইস প্রিমিয়ে যখন ভ্যাক্সিনের কথা বলছে, নীচে কমেন্ট ভেসে উঠেছে, তোকে কে বলেছে সবাই ভ্যাক্সিন নেবে? আমি তো ভ্যাক্সিন নেবো না, আমার ভ্যাক্সিন তোর পেছনে দেবো শালা!

Thursday 12 November 2020

বিষফোঁড়া

“ইট ডাজ নট ম্যাটার ইফ ইট ইজ আ বয় অর আ গার্ল, হোয়েন আ প্রিস্ট ডাজ টু ইউ, ইট ইজ নট অনলি ফিজিক্যাল এবিউজ, ইট ইজ স্পিরিচুয়্যাল এবিউজ টু" ফ্রম দ্যা মুভি "স্পটলাইট" পড়লাম কওমী মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিয়ে সাইফুল বাতেন টিটো'র লেখা নিষিদ্ধ উপন্যাস "বিষফোঁড়া"। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই একবিংশ শতাব্দীতে, মধ্য আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ, যে জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, তার আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ বাচ্চা কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে!!!!!! পিতৃমাতৃহীন অসহায় শিশুগুলোর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে পশুর মত এদের বেঁচে থাকা! লেখক বলেছেন, উপন্যাসটি একশো ভাগ সত্যির ওপর দাঁড়িয়ে লেখা তবে এই উপন্যাসে পাশবিকতার বিশ ভাগ মাত্র উঠে এসেছে, বাকি আশি ভাগ অজানা, ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই যদি হয়, বাংলাদেশের চাই এখন দ্যা বোস্টন গ্লোবের মত সংবাদপত্র, যারা এই মাদ্রাসাগুলোর ভেতরে কি কি হচ্ছে তার প্রকৃত চিত্র তুলে আনবে। চাই টমাস জোসেপ ম্যাককার্থির মত চলচিত্র নির্মাতা যে বিশ্ববাসীকে জানাবে কি ঘটে চলছে সেখানে। আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, আমরা মাস মাস এত এত টাকা দান করার পরও এই শিশুগুলো কেন এত দরিদ্র জীবন যাপণ করে? কোথায় যায় এই টাকাগুলো? "বিষফোঁড়া"কে ভিত্তি হিসেবে ধরলে কওমী মাদ্রাসার অপকর্মের পটভূমি হিসেবে যে কারণগুলো আমার চিন্তায় উঠে আসে ১। আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা (ছাত্র-শিক্ষক), ২। নিদারুণ হতদরিদ্র সব ছাত্র (কিছু শিক্ষক), ৩। জবাবদিহিতা নেই, ৪। অশিক্ষা (ভবিষ্যতের উন্নত জীবনের কোন স্বপ্নই যেখানে নেই, ৫। সুস্থ চিত্ত বিনোদনের চরম অভাব। আমি এই হত দরিদ্র, অসহায় শিশুগুলোর সর্বাঙ্গীন মংগল কামনা করছি। ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা, সৃষ্টিকর্তা তাদের রক্ষা করতে না পারলেও, আশা করছি তাদের মধ্যে সবাই উপন্যাসের বর্নিত খাদেম তৈরী হবে না, কেউ কেউ অন্তত মানুষের ধর্ম পালন করতে সচেষ্ট থাকবে।

Saturday 7 November 2020

কার্টুন আর নেদারল্যান্ডস

রোটারডামের এমাউসকলেজ ও ডেনবোসের (স্কুলের নাম অপ্রকাশিত) স্কুলে “ফ্রীডম অফ স্পীচ” নিয়ে আলোচনায় শার্লি হেব্দোর কার্টুন দেখানোর প্রতিক্রিয়ায় দুই স্কুলের টিচারকেই হুমকি দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে ক্যাবিনেটে উত্তপ্ত আলোচনার পর প্রেসের মুখোমুখি মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট মার্ক রুতে। ভিয়েনার ইনসিডেন্টের পর সে দেশের সরকারের সাথে কথা হয়েছে, নিহত ও আহত সবার প্রতি নেদারল্যান্ডসের জনগনের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন এই বলে স্পীচ শুরু করেন রুতে তারপর বলেন, দুঃখজনক কিন্তু সত্য হলো, আমরা নিজেদের মত চিন্তা করতে এবং নিজেদের মতামত দিতে ভালবাসি, একদল মানুষ সেটা পছন্দ করে না। কিন্তু আমাদের সমাজ, বিশ্বাস, চিন্তাধারা আর মূল্যবোধ আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার স্বাধীনতা আমাদের শিক্ষকদের থাকতে হবে। শিক্ষকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং তাদের ভয় দেখানো বরদাস্ত করা হবে না। রোটারডামের শিক্ষক ভয়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছে। স্কুলের অন্যান্য বাচ্চারা, তাদের গার্জেনরা, অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীরাও দারুণ ভয়ে আছেন আমি তাদের জানাতে চাই, পুরো ক্যাবিনেট তাদের সাথে আছে। আরও বলতে চাই, “ফ্রীডম ও স্পীচ” নিয়ে কোন ধরনের সমঝোতা হবে না। হতে পারে একজনের মতামত অন্যজনের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করছে কিন্তু সেটা নির্ভয়ে বলার তার অধিকার আছে, তা নিয়ে কাউকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। কারণ, নির্ভয়ে চিন্তা করা কিংবা কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে আমরা সামনের দিকে আগাতে পারবো না, আমাদের সমাজ সামনে আগাবে না। ফ্রীডম অফ স্পীচ, নির্ভয়ে স্কুলে শিক্ষাদান, নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার স্বাধীনতার ওপর আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজ দাঁড়িয়ে আছে। স্কুল ছাড়া কোথাও এগুলো শিক্ষাদানের জায়গা নেই বলে শিক্ষকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। সুনাগরিক তৈরীতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় স্কুল, ক্লাশ, পড়ানোর বিষয় ইত্যাদিতে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বরং আমি বলবো অত্যন্ত পবিত্র তাই এখানে ভয় দেখানো, হুমকি, সহিংসতার কোন স্থান নেই। শেষ করছি, এমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে, আমরা সবাই নেদারল্যান্ডস থেকে খুব গুরুত্বের সাথে নির্বাচন প্রত্যক্ষ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এমেরিকা আমাদেরকে শত্রুদের থেকে উদ্ধারে সাহায্য করেছিলো, ইউরোপের অর্থনীতি অনেকটাই এমেরিকার ওপর নির্ভরশীল তাই বলতে চাই, ট্রাম্প বা বাইডেন যেই আসুক, আমরা এমেরিকার সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো। “ফ্রীডম অফ স্পীচ” নিয়ে কি শিক্ষকরা নিজেরা পাঠের উপাদান বানাতে পারে? এই নিয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না শুধু বলতে চাই এখানে আমি প্রতিবন্ধকতা বা বাঁধা দেয়ার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। এমেরিকার নির্বাচন নিয়ে জিজ্ঞেস করছি, প্রেসিডেন্ট ভোট গননা বন্ধ করে দিতে বলছেন, বলছেন মিথ্যেবাদীদের কোন দায়িত্ব তিনি নেবেন না। গনতন্ত্রের কালো পিঠ নিয়ে আপনার কি মতামত? আমি নেদারল্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট, আমার দায়িত্ব জয়ী প্রার্থীর সাথে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ হয়ে কাজ করা এর বাইরে আমি তাদের দেশের ভেতরের রাজনীতিনিতে নাক গলাবো না। কিন্তু আপনি গনতন্ত্রের কথা বলছেন, নিজের দেশের নির্বাচনকে “প্রতারণা” বলা কতটা গনতান্ত্রিক? আমি শুধু বলবো এটি একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য কিন্তু তার বাইরে কিছুই বলবো না। শিক্ষকদের রক্ষা করতে আপনি কি করবেন? হুমকি থাকলে প্রথমে এজাহার দেখে পুলিশ সেটার দায়িত্ব নেবে। প্রতি ক্লাশে প্রতি শিক্ষকের পাশে একজন নিরাপত্তারক্ষী দেয়া তো সম্ভব না, ক্যাবিনেট থেকে দুইজন শিক্ষকের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাদের অভয় দেয়া হয়েছে কিন্তু আমি সবাইকে বলে দিতে চাই, কোন ধরনের সহিংসতা এবং ভয় দেখানো সহ্য করা হবে না। ক্লাশে ছাত্র-ছাত্রীরা বইয়ের ছবি তুলে ইন্টারনেটে দিচ্ছে হয়ত না বুঝেই দিচ্ছে এই ব্যাপারে? এটি নিয়ে অনুসন্ধান চলছে, এটি শেষ হওয়ার আমি কিছু বলতে চাই না। আমি জানি আপনি এই ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চান না, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পাশাপাশি আপনি এই দেশের শিক্ষকদের সহকর্মীও বটে। আপনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে, কোন একটি ক্লাশে তো কার্টুন দেখাতে পারেন। এ কাজ করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। একজন প্রেসিডেন্টের কোন ক্ষমতা নেই! হ্যাঁ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লাশ যেয়ে কিছু করতে অবশ্যই আমি ক্ষমতাহীন কিন্তু এর বাইরেও আমি আমার সহকর্মীদের বলতে চাই, আমি মার্ক রুতে, সরকার, ক্যাবিনেট, জনগন সবাই তাদের পাশে আছে, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কার্টুন তাদের ক্লাশের অংশ হতে পারে। কারো অপমানিতবোধ করার কিছু নেই এর মানে এই না যে সবাইকে অপমান করতে হবে। ভদ্রতা সভ্যতার অংগ। কেউ যদি কোন পাবলিক ফোরামে, কম্যুউনিজম কিংবা কার্টুন ইত্যাদি নিয়ে কোন আলোচনায় যেতে চায়, অবশ্যই যাবে কিন্তু সহিংসতা, হুমকি দেয়া হলো সীমা লঙ্ঘন আর সেটি সহ্য করা হবে না। নিস, ভিয়েনা আর নেদারল্যান্ডসেও যারা হুমকি দিয়েছে আপনি তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড নিশ্চয় জানেন? হ্যাঁ, তারা সবাই মুসলিম। যে আদর্শ আর ধর্ম তারা সাথে নিয়ে এসেছে তার জন্যে কি নেদারল্যান্ডস পুরোপুরি প্রস্তূত আছে? আঠারশো আটচল্লিশ সাল থেকে আমরা গনতন্ত্র চর্চার মধ্যে আছি, প্রায় দেড়শো বছরের চর্চার মধ্যে দিয়ে আমরা একটি স্থির সমাজে পৌঁছেছি। এখানে কি হচ্ছে, মুসলিমদের একটি ছোট গ্রুপ, কিছু ব্যাপার ভুল ভাবে ব্যাখা করে সহিংসতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী এখনো প্র্যাক্টিসিং মুসলমানদের বেশির ভাগই খুব শান্তিপ্রিয় ভাবেই তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে থাকে যেটা আমাদের গনতন্ত্রের মধ্যে আছে। কিন্তু আমি সমস্ত মুসলমাদের বলতে চাই, যদি কেউ সহিংসতার জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করতে যায় শুধু নেদারল্যান্ডসের সরকার কেন সমাজেও তাদের জায়গা নেই। বাচ্চারা শিক্ষককে হুমকি দেয়, আমরা ধরে নিতে পারি এই বাচ্চারা নেদারল্যান্ডসেই জন্মেছে এবং এখানেই বড় হয়েছে, এখানে এতদিন এই জিনিসগুলো ছিলো না আর এখন একদম মুখোমুখি সংঘর্ষ যে শিক্ষককে আত্মগোপন করতে হলো? প্রথমে আমি ফর্মাল জবাব দিচ্ছি, পুলিশকে অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়া হোক আর দ্বিতীয়ত আমি আমার নিজের মতামত দিচ্ছি, নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী কেউ যদি ভাবে, আমি এখানে অপমানিত হচ্ছি আর সরকারের দায়িত্ব আমাকে অপমান থেকে রক্ষা করা, সেটা সম্ভব না। “জাতীয়তা” বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে, আমাদের গনতন্ত্রের মূল ব্যাপারগুলো আরও ভাল করে তুলে ধরতে হবে, সেগুলো হলো, স্বাধীনভাবে শিক্ষা দান করা, স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা, স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করা, পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার, বিষকামী–সমকামীদের সমান অধিকার, কালো-সাদাদের সমতা। এই দেশে জন্মানো কোন মানুষই যেনো না ভাবে, আমি এসবের কারণে কোন সুবিধা পাবো। মানুষকে তাদের আচরণ দিয়ে বিবেচনা করাতে হবে তারা কোথা থেকে এসেছে, কিংবা তাদের ধর্ম কি তা দিয়ে নয় আর এই মূল্যবোধগুলো একান্ত অপরিহার্য, এখানে কোন আপোষ হবে না। অতীতে আমরা এই নিয়ে প্রচন্ড দায়িত্বহীন আচরণ করেছি, এখানে আসা মানুষজনকে আমরা আমাদের দেশের সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে সচেতেন করিনি। তাদের জানাইনি কোন সমাজে তাদেরকে মিশে যেতে হবে, আর এই সামাজিক মূল্যবোধগুলো আপোষহীন। একজন টার্কিশ যদি ভাবে ডাচ ফুটবল দলে না খেলে টার্কিশ ফুটবল দলে খেলবো, ঠিকাছে তাতে দোষের কিছু নেই কিন্তু যখন তাদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পুরুষও এদেশে থেকে ভাবে যে আমি এদের মূল্যবোধ নিয়ে খেলবো তখন এটা মেনে নেয়া যায় না। বেশীর ভাগ মানুষ এদেশে এসেছে তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যে যা তাদেরকে তাদের নিজ দেশ দিতে পারেনি। এবং তারা এটাও দেখেছে এখানে সমাজ ও সরকারের কাছে তাদের যা অধিকার তাই তারা পাচ্ছে, যেটা তারা যে দেশ ছেড়ে এখানে এসেছে সেই দেশের সরকার তাদের দিতে পারেনি। অত্যন্ত গর্বের সাথে আমরা বলতে পারি, যারা এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে তাদের আমরা প্রচন্ড সম্মান আর জীবনের প্রয়োজনীয় সব জিনিস দিয়েছি। হয়ত এখানের এই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়েই তারা শিক্ষককে হুমকি দিয়েছে? আমরা এখনো জানি না কারা শিক্ষকদেরকে হুমকি দিয়েছে, একজন শিক্ষক আত্মগোপন করেছে অন্যজন বাড়িতে আছে কিন্তু এটা গ্রহনযোগ্য নয়। এই দেশে থাকতে গেলে কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে যেটা আপনাকে, আমাকে প্রত্যেক নাগরিককে মানতে হবে যেগুলো আপোষযোগ্য নয় আর আপনি যদি ভাবেন তা থেকে শিক্ষককে হুমকি দেবেন তবে আমরা আমাদের শুধু সরকারের সব ক্ষমতা আর শক্তি দিয়ে লড়বো না, সাথে এদেশের জনগনও লড়বে। বেশিরভাগ মুসলিমরাই শান্তিপূর্ণ জীবনে বিশ্বাস করে। অল্প যেকয়জন কার্টুনের মাধ্যমে অশান্তি করছে তাদেরকে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস সব জায়গায়ই প্রতিহত করতে হবে। শুধু এখন নয়, বহুদিন ধরেই বিশেষ করে ইতিহাসের শিক্ষকরা কমপ্লেইন করে আসছে, তারা হলোকাস্ট নিয়ে, নাইন-ইলাভেন নিয়ে কিছু পড়াতে পারছেন না। সমস্যা কি আসলে আরো গভীরে নয়? হ্যাঁ আমিও আমার আশেপাশের মানুষের কাছে এই নিয়ে শুনি, সহিংসতা অগ্রহনযোগ্য, বাক স্বাধীনতা ছাড়া কিংবা আংশিক বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই এধরনের গনতন্ত্রের থেকে পশ্চিমের আমাদের গনতন্ত্র আলাদা কিন্তু এগুলো যদি আমাদের সৃজনশীলতা কিংবা কাজ করার ক্ষমতাকে আটকে দেয় সেটিও গ্রহনযোগ্য হবে না। ঘটনাগুলো তো এখানেই থেমে থাকে না, যারা নাইন-ইলাভেন জানে না, হলোকাস্ট জানে না শুধু কার্টুন জানে? আমিও শুনতে পাই অনেক মুসলিম নেদারল্যান্ডসের মূল্যবোধের সাথে একাত্ম অনুভব করে না, আমার ধারনা এসব বলার মাধ্যমেই চরমপন্থীদেরকে আস্কারা দেয়া হয়। যারা ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডস কিংবা অস্ট্রিয়ার মূলধারার সাথে মিশে গেছে তাদেরকেও অপবাদ দেয়া হয়। আমরা একটি সভ্য দেশ হিসেবে সবসময় যতদূর পারি শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি কিন্তু আমাদের দোষ ছিলো, আমরা কখনো গর্বের সাথে তাদেরকে জানাতে পারি নি, আমাদের কোন কোন মূল্যবোধের সাথে তাদের মিশে যেতে হবে। এই ক্যাবিনেটে আমরা আমাদের পূর্ববতী ক্যাবিনেটের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শর্তহীনভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের মূল্যবোধগুলো জানাতে হবে আর এই কাজটি করবেন শিক্ষক। তাই শিক্ষককে কোন সীমারেখা দেয়া যাবে না। স্যমুয়েল পাটির মত ঘটনা যাতে নেদারল্যান্ডসে না ঘটে সেজন্য আপনি কি মনে করেন না এখনই মুসলমান সমাজ এবং হুমকি দেয়া ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা প্রয়োজন? নেদারল্যান্ডসের মুসলিম সমাজের সাথে ক্যাবিনেটের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সামনের সোমবারে পরবর্তী আলোচনার তারিখ। আর আমি কারো একজনের ধর্মীয় পরিচয় ধরে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। একজন মরোক্কান বংশভূত যদি নিজ থেকে তার কমিউনিটির মানুষের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করে সেটাকে অত্যন্ত প্রশংসার চোখে দেখি কিন্তু তার ধর্মীয় পরিচয় ধরে তাকে এজন্যে বাধ্য করাও আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে যায় না। ভিভিডি’র মানুষ হিসেবে আপনি একবার মুক্তচিন্তার জন্যে আলাদা জায়গা করেছিলেন, এখনো কি আমাদের সেরকম কিছু দরকার না? আমি নেদারল্যান্ডসের সব মানুষকে বলবো নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে কোন ভাবেই যেনো নিজেকে বদ্ধ না মনে করে। বারো বছর আগের পরিস্থিতি আলাদা ছিলো, সেটি এখন আর প্রযোজ্য না। কার্টুনের প্রতিক্রিয়া ভয়ানক, হত্যা, চরমপন্থা, হুমকি, এটা কি তাহলে ঠিক হচ্ছে যে আমরা এই সম্মানের সাথে এটাকে ডীল করছি? সেজন্যেই আলোচনা এত জরুরী। আমরা সবাইকে জানাতে চাই এদেশে কোন কিছুর সীমারেখা নেই। একজন সাংবাদিককে আমরা কি সংবাদ পরিবেশন করা হবে তার মাত্রা ঠিক করে দিতে চাই না। আমি কার্টুনিস্ট, কলামিস্ট না কিন্তু কেউ করতে চাইলে তাতেও আমার সমস্যা নেই, বাঁধা দেবো না। তারপরও বলবো, যা বলতে পারা যায়, সব বলার কোন প্রয়োজনও আমি অনুভব করি না। বুদ্ধিস্ট, খ্রীষ্টান কিংবা ইসলাম সবারই তার ধর্মের প্রতি পবিত্র অনুভূতি আছে। আমি তাতে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি সেটা করতে চায়, আমার দায়িত্ব তাকে রক্ষা করা। কেউ তার প্রতি সহিংস আচরণ করুক সেটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় চলবে না। আপনি কি মনে করেন ক্লাশে কার্টুন দেখানো ঠিক হচ্ছে? আমার হ্যাঁ বা না এখানে জরুরী না। শিক্ষক যদি ভাবেন তিনি করবেন সেটি করবেন, কার্টুনিষ্ট ঠিক করবেন তিনি কি ধরনের কার্টুন আঁকবেন। সেজন্যে তাদের প্রতি সহিংস আচরণ করা যাবে না। আপনি এটিকে আরও পরিস্কার করতে পারেন মিনিষ্টার প্রেসিডেন্ট? হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, ক্লাশে হিউমার আনতে, কমেডি আনতে কার্টুন ব্যবহার করা প্রয়োজন মনে করলে শিক্ষক তা করবেন কিন্তু এখন প্রত্যেক শিক্ষক কাল থেকে ক্লাশে এটিই করবেন কিনা সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হলো দেখা, প্রত্যেকে যেনো কোন বাঁধা ছাড়াই তাদের মত তারা শিক্ষা দিতে পারেন। সবাইকে জানাতে চাই, আমরা শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। তানবীরা তালুকদার ০৮/১১/২০২০

Friday 6 November 2020

গল্পটা ফিলিপস নগরীর অর্থনীতির

https://www.prothomalo.com/business/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%B8-%E0%A6%A8%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0?fbclid=IwAR1S_GzRwcGO5rkmF15_agsTnCQAlo46_QCqCOFg9o_0dVZgVq4yq3lTAKc কী নেই আইন্ডহোভেনে। বিমানবন্দর, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সবচেয়ে বড় প্রাইমার্ক শপ, দক্ষিণ ভারতীয় নিরামিষ রেস্টুরেন্ট কৃষ্ণাভিলাস, ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট হ্যাপি ইতালি, প্যন্ডোরা কিংবা জোয়ারস্কির দোকান, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, ফুটবল স্টেডিয়াম, নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে ভালো হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা হওয়া ক্যাথারিনা হাসপাতাল, বিশ্বমানের গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য আলাদা করে তৈরি হাইটেক ক্যাম্পাস। অথচ প্রায় গ্রামতুল্য এই শহরের যাত্রা শুরু হয় খেরার্ড ফিলিপসের হাত ধরে ১৮৯১ সালে। ছেলের পাশে খেরার্ডের বাবা ফ্রেডেরিক ফিলিপসও ছিলেন। বাল্ব বানানো দিয়ে শুরু হয় উৎপাদন, তৈরি হয় অসংখ্য কলকারখানা। শহরের মধ্যে আজও চিমনিসহ সে জায়গাটুকু রেখে দেওয়া আছে, তার পাশেই আছে ফিলিপসের জাদুঘর। খেরার্ড ফিলিপসের ঝোঁক ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণায়, এর জন্য তিনি আলাদা করে গবেষণাগারও তৈরি করেছিলেন। দক্ষিণ নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আইন্ডহোভেন, পঞ্চম বৃহত্তর শহর হিসেবে পরিচিত, এর জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। ১২৩২ সালে হেনরি আই ডুকে ব্রাবান্টের হাত দিয়ে তৈরি আইন্ডহোভেন প্রাচীন শহরের তালিকার প্রথম দিকে থাকলেও, পর্যটকদের এখানে আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়, অর্থনৈতিক দিক থেকে এই শহর প্রচণ্ড আকর্ষণীয় হলেও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো এখানে তেমন কিছু নেই। তবে ফিলিপসের পর ব্রেক্সিট এই শহরকে অন্য গুরুত্বে নিয়ে গেছে। অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই ব্রেক্সিটের ঝক্কি এড়িয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্যবসা করতে যুক্তরাজ্য থেকে তাদের কার্যালয় সরিয়ে নিয়েছে। অত্যধিক দামের কারণে আমস্টারডাম বা ডেনহাগের জমিজমা যেহেতু ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাই তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে কাজ করেছে আইন্ডহোভেন। শহরটির ভৌগোলিক অবস্থান ও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বেলজিয়াম বা জার্মানি যেকোনো সীমান্তে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র মিনিট ৪০। এতে আইন্ডহোভেনের বাড়ি, জমির বাজারও এখন আগুন। পাঁচ বছর আগে এখানে দামাদামি করে বাড়ি কেনা যেত, আর এখন এখানে নির্দিষ্ট দামের ওপরে টাকা দিয়ে বাড়ি কিনতে হয়। তাও বেশির ভাগ সময় ক্রেতা মাত্র একবার দাম বলার সুযোগ পান। অসংখ্য মানুষ বেশি দাম বলেও বাড়ি পাচ্ছেন না, দিনের পর দিন কাঙ্ক্ষিত সুযোগের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আইন্ডহোভেনের গল্প বলতে গেলে যে নাম ঘুরেফিরে আসবেই, সেটি হলো ‘ফিলিপস’। কথিত আছে, একসময় পুরো নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রীয় বাজেটের চেয়ে ফিলিপসের বাজেট বেশি ছিল, নেদারল্যান্ডস সরকারের যত কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ ফিলিপসে কাজ করতেন। এখনো আইন্ডহোভেন শহরে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, ফিলিপস জাদুঘর, ফিলিপস বাগান আর রেস্তোরাঁ। ফিলিপসের বাগান যেখানে আপেল আর পিয়ার উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া আছে ফিলিপসের তৈরি স্টেডিয়াম, এভুলিয়ন, ফ্রিটস ফিলিপস মিউজিক সেন্টার, যেখানে ভালো সব গান আর বাজনার অনুষ্ঠানগুলো হয়। আগে ফিলিপসের কর্মীদের বাসস্থানের জন্য নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা ছিল, অন্যান্য ব্যবসার মতো এটিও তারা নব্বইয়ের দশকে বিক্রি করে দেয়। ফিলিপসের বিভিন্ন চত্বরের ভবনগুলোতে এখন অন্য অফিস, স্কুল, রেস্টুরেন্ট, দোকান ইত্যাদি বানানো হয়েছে। কিছু কিছু ভবনকে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একবার এক রান্নার কর্মশালায় গেছি, কর্মশালা যে জায়গাটায় হলো, সেটা ফিলিপসের পুরোনো কারখানা বনাম অফিস, যেখানে আগে পুরোদমে পণ্য উৎপাদিত হতো। অনেক অনেক আগেও নয়, এই ১০-১৫ বছর আগে। আমি নিজেও এই ভবনের নিচে একটা প্রশিক্ষণে এসেছিলাম। সবাই যখন রান্নার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, আমি তখন পুরো ভবনে হেঁটে হেঁটে বেড়াচ্ছি, গায়ে অজানা অনুভূতি। শুরুর দিকে ফিলিপস মেয়েদের বাড়ির বাইরে কাজ করাকে উৎসাহ দিত না। পুরোনো ফিলিপস ভবনগুলোতে তাই কোনো মেয়েদের টয়লেট নেই, মায়েদের ব্রেস্ট পাম্প করার কোনো ঘর নেই। অনেকবার আন্দোলনের মুখে পিছিয়ে, থেমে, ২০১৮-তে অবশেষে বিক্রি করা হয় ফিলিপস লাইটিং, ক্রেতা সিগনিফাই, তবে শর্ত, সিগনিফাই শুধু ফিলিপসের পণ্যই বিক্রি করবে (আপাতত)। কারণ, শেষ কথা বলে অর্থনীতিতে কিছু নেই, কিছুই এক জায়গায় থাকে না। আইন্ডহোভেনের অদূরবর্তী ছোট শহর মারহেইজেতে, টেলিকাস্টারে চলছে সিগনিফাইয়ের তিন মাত্রার বাতি নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিভিন্ন মডেলের সফল উত্তীর্ণের পর এখন প্রচুর তিন মাত্রার বাতি উৎপাদিত হচ্ছে। আলো মানুষের জীবনে কী অপরিসীম ভূমিকা রাখে, তা আধুনিক আলোক ব্যবস্থা না দেখলে জানতেই পারতাম না। কারও যদি জ্যোৎস্না প্রিয় হয়, সে পুরো বাসার জন্য একধরনের আলোক ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারে, যার রক গান করতে ভালো লাগে সে তার মেজাজ কিংবা গানের আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে পুরো বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা রাখতে পারে। একটি মাত্র রিমোটের মাধ্যমে পুরো বাড়ির আলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিংবা সময় নির্ণায়ক স্থাপন করা যায়। এর বাইরেও আছে, আলোর সাহায্যে গ্রিনহাউসে চাষাবাদ, মুরগির ডিম ফোটানোর প্রকল্প, কত কী। ফিলিপসের হাত ধরেই সূচনা হয়েছে আইন্ডহোভেনের অন্যতম আকর্ষণ হাইটেক ক্যাম্পাস, যেটাকে অনেকে প্রযুক্তির কেন্দ্র বলে। ফিলিপস চেয়েছিল বিভিন্ন জায়গায় গবেষণাগার না থেকে সব এক জায়গায় থাকুক, তাতে গবেষকদের পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরের দেখা হওয়া, চিন্তার বিনিময়, আলোচনা—সবকিছুর সুবিধা হবে। সেই লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে এই হাইটেক ক্যাম্পাসের যাত্রা হয় শুরু। যদিও ২০১২ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র‍্যামফাসটোস ইনভেস্টমেন্টের কাছে ফিলিপস হাইটেক ক্যাম্পাসটি বিক্রি করে দেয়। ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রায়ই নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবারের কিংবা সরকারি গাড়ির বহর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজপরিবার ও ডাচ সরকারের অতিথিদের তালিকায় দর্শনীয় স্থান হিসেবে এই স্থান থাকবেই। ফিলিপসের আগে আইন্ডহোভেন বিখ্যাত ছিল সর্ববৃহৎ দেশলাই তৈরির কারখানার জন্য। এরপর ফিলিপসের বাল্বের উৎপাদন শুরু হওয়ায় আইন্ডহোভেনকে অনেকে সিটি অব লাইটও বলে থাকে। প্রতিবছর নভেম্বরে ফিলিপসের সৌজন্যে দেশ-বিদেশের শিল্পী ও ডিজাইনারদের তৈরি নতুন উদ্ভাবন নিয়ে সপ্তাহব্যাপী উৎসবটির নাম ‘গ্লো ফেস্টিভ্যাল আইন্ডহোভেন’, যেখানে কম্পিউটার, সেন্সর, অ্যানিমেশন কৌশলগুলোর মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলো দিয়ে তৈরি শিল্প এবং নকশা উপস্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালে এই উৎসবের শুরু। এ সময় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ধরে আলোর শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়, সিটি সেন্টারের মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে এগুলো উপভোগ করা যায়। ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, বিজ্ঞানী এবং শিল্পীরা একত্র হয়ে নতুন নতুন ধরনের আলোর ধারণা আর প্রযুক্তি উপস্থাপন করেন। আইন্ডহোভেনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘ডাচ ডিজাইন উইক’। ২০০২ সালে ২০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুরু হওয়া উত্তর ইউরোপের এই বৃহত্তম ডিজাইন ইভেন্টে দেশ-বিদেশের ২৬ শ-এর বেশি ডিজাইনারের কাজ এবং তাঁদের চিন্তা ও কল্পনাগুলো উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবছর অক্টোবরে ৯ দিনের এই ডাচ ডিজাইন উইক শহরজুড়ে প্রায় ১২০টি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সারা আইন্ডহোভেন সাজানো হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙিন পোস্টারে। একসময় হাতে গোনা কয়েকটি বাংলাদেশি পরিবারের বাস ছিল আইন্ডহোভেনে। এএসএমএল, এনএক্সপি, আইন্ডহোভেন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, ফন্টিস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইত্যাদির কারণে আইন্ডহোভেন শহরে এখন প্রচুর বাংলাদেশির বাস। রাস্তায়-দোকানে হরদম বাংলা কথা শোনা যায়। খুব দ্রুতই একটি শিক্ষিত বাংলাদেশি সমাজ গড়ে উঠছে আইন্ডহোভেনে।

Wednesday 4 November 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তিন (নভেম্বর)

যদি আমরা নির্মোহভাবে আরআইভিএমের সংক্রমণের পরিসংখ্যানটি দেখি, বলবো না আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি তবে খারাপের দিকেও যাচ্ছি না। সংক্রমণের হার নীচে নামাতেই হবে, নার্সিং হোম আর হাসপাতালে রোগী বেড়েই চলছে আর কোথাও কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। অন্য রোগের রোগীরা সেবা পাচ্ছে না আর তাই আমরা আজ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের আরও সতর্কতা প্রয়োজন। যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করছে তাদের প্রতি আমাদের আরও সহমর্মিতা প্রয়োজন আর তাই আমাদের আরও কম বের হওয়া উচিত, মানুষের সংস্পর্শে কম আসা উচিত, কম সামাজিকতা করা উচিৎ। নভেম্বরের চার তারিখ রাত দশটা থেকে আংশিক লকডাউনের ওপরে দেয়া এই নিয়মগুলো দু সপ্তাহের জন্যে কার্যকারী থাকবে। এরপর আমরা আবার আংশিক লকডাউনের নিয়মে ফিরে আসবো। আমরা সারাক্ষণ নজর রাখছি কি করে আমরা আবার গরমের সময়ের পরিস্থিতিতে ফিরতে পারি। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আংশিক লকডাউন থাকবেই। রেস্টুরেন্ট, খেলাধূলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু উপায় নেই। প্রথম কথাঃ শুধু শুধু শপিং সেন্টারে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বাসায় থাকা। দ্বিতীয় কথাঃ বাইরে চারজন মানুষের আড্ডা বন্ধ, দুজন। যদি এর অন্যথা হয়, জরিমানা করা হবে। বাসায় দুজনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না, বারো বছরের নীচে বাচ্চাদের গোনায় ধরা হচ্ছে না। তৃতীয় কথাঃ সামনের দুই সপ্তাহের জন্যে জনগনের জন্যে উন্মুক্ত সব ধরনের ভবন বন্ধ থাকবে। সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, লাইব্রেরী ইত্যাদি সব। দোকান, হেয়ারড্রেসার, বিউটি সেলুন, জিম এর আওতায় পরবে না। তবে জিমে কোন গ্রুপ এক্টিভিটি চলবে না। কিছু কিছু শহরে সংক্রমণের মাত্রা মারাত্বক, আশাপ্রদ ফলাফল না এলে সেখানে দোকান আর স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন কোন শহর সেটা সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। সারা পৃথিবীতেই করোনা এখন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে তাই সবাইকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশেই ভ্রমণের দরকার নেই। ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে নেদারল্যান্ডসের বাইরে আলাদা দেশ ধরা হচ্ছে না কিন্তু সেখানেও ভ্রমণ না করারই নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ নিয়ম মানছে, অল্প ক’জনের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যারা এখনো ভাবছে, শনিবারে সন্ধ্যায় লুকিয়ে একশো লোকের অনুষ্ঠান করবে তাদের সর্তক করে দেয়া হচ্ছে, যেকোন দায়িত্বহীন অসামাজিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা যারা এসময়টাতে বিষন্নতা কিংবা একাকীত্বে ভুগছে, তাদের জন্যে সামনের দু সপ্তাহ আরও কঠিন যাবে, তাদেরকে বলবো, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, তোমার সামান্য সহৃদয়তা অন্যের কাছে অনেক বেশি হয়ে আসতে পারে। গত সপ্তাহে চৌষট্টি হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। বারোটি বিভাগে সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও, তেরোটি বিভাগে সংক্রমণের হার অনেক। প্রায় ছাব্বিশো কোভিড রোগী এখন হাসপাতালে আছে যাদের মধ্যে প্রায় ছয়শো আছে আইসিইউতে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত, সীমাহীন ওভারটাইম, তাদের পরিবার, তাদের অনুভূতির প্রতি আবারও আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। এবারের ক্রিসমাস উৎসব অবশ্যই অন্য বছরের চেয়ে আলাদা হবে তবে সামনের দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেটি কিরকম হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারনা দিয়ে দেয়া হবে। প্রিমিয়ে রুতে আপনি বলছেন, সংক্রমণের হার স্থির আছে কিংবা বাড়ছে না তারপরও আরো কঠিন নিয়ম দিচ্ছেন, কেন? তার কারণ, হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, এখন যত রোগী আছে হাসপাতালে সামনের দুই সপ্তাহে সেটি আরও দেড় গুন বেড়ে যাবে আরও চাপ পরবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর, সেটিকে সামলাতে আরও কঠিন নিয়ম দেয়া ছাড়া উপায় নেই। নইলে, হার্ট, ক্যান্সার কিংবা হাঁটুর অপারেশানের মত সমস্ত অপারেশান আবার রিশিডিউল করতে হবে যা রোগীদের ভীত করে তাদের মনোবল ভেঙে দেবে। প্রিমিয়ে রুতে, খুব অল্প সময়ের জন্যে হলেও কেন আপনি পুরোপুরি লকডাউনে গেলেন না? সামনের দুই সপ্তাহ তো সম্পূর্ন লকডাউন হতে পারতো? বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছি, দরকার হলে যেতেই হতো কিংবা কোন কোন শহরের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে হয়ত যেতেই হবে। স্কুল খোলা থাকা অত্যাবশকীয়, শুধু একটা কিছু খোলা রাখার সম্ভাবনা থাকলেও স্কুল খোলা রাখতে চাই। মানুষ মানুষের সংস্পর্শে কম আসছে, সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সংক্রমণের সংখ্যা আপাতত স্থির আছে, তাই অর্থনীতিসহ বাকি দিকে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছু অল্প কিছুদিনের জন্যে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েও তো আপনি জনগনকে একটি বার্তা দিতে পারেন? সেটার দরকার থাকলে দিতাম। সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে শুধু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না সাথে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে এই এক্সর্ট্রা প্যাকেট কতদূর কাজ করবে বলে আশা করছেন? সামনের সপ্তাহ থেকে অন্তত হাসপাতালে বারোশো কম রোগী আর আইসিইউতে দুইশ কম রোগী আশা করছি। বাচ্চাদের পার্টি নিয়ে আপনার কি মতামত? বরাবরই বলে এসেছি, বারো বছরের নীচের বাচ্চারা করোনার নিয়মের আওতাও পরে না, কিন্তু বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের আসা যাওয়া চলবে না। বিদেশ ভ্রমনের ব্যাপারে আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতিবাচক উপদেশ আছে। আমাদের ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি একশো হাজারে প্রতিদিন সাত হাজার সংক্রমণ, সর্বোচ্চ তিনজন আইসিইউ পেশেন্ট পার ডে, এই টার্গেটে আমরা এ বছরও পৌঁছতে পারবো না, সামনের বছর হয়ে যাবে। পহেলা ডিসেম্বর থেকে মাস্ক পরা নেদারল্যান্ডসে বাধ্যতামূলক। যদি পুরোপুরি লকডাউন হয়, তাহলে কি দক্ষিন ইউরোপের দেশগুলোর মত রাস্তায় বের হতে চিঠি দরকার হবে? না, সেরকম কোন কিছু নয়, ওষুধের আর খাবারের দোকান ছাড়া বাকি সব বন্ধ থাকবে আর রাত দশটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সবাইকে বাড়ির মধ্যে থাকতে হবে। বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকবে, কলেজ-ইউনিভার্সিটি অনলাইনে যাবে। শবযাত্রার ব্যাপারে কোন নিয়ম চলবে? নভেম্বরের নয় তারিখ থেকে শবযাত্রায় ও ম্যাক্সিমাম ত্রিশ জনের বেশি যেতে পারবে না। শুধু বিদেশ ভ্রমণ কেন নিষেধ করছেন? দেশের মধ্যে ভ্রমণও তো বিপদজনক। সেটা ঠিক কিন্তু মানুষকে বন্দী করতে চাইছি না তবে বারবার বলছি, ছুটিতে গিয়েও অনেক ঘোরাঘুরি না করে হোটেল কিংবা ভ্যাকেশান হাউজের ভেতরে থেকে ছুটি উপভোগ করতে হবে। হুগো দ্যা ইয়ং আপনি বলেছেন, ক্রিসমাস সবাই একসাথে উদযাপন করবে? হ্যাঁ কিন্তু কতটুকু একসাথে সেটা এখনো বিবেচনাধীন আছে। প্রতিবছরের মত এতটা একসাথে হয়ত এবার হবে না কিন্তু জানাবো। তানবীরা ০৪/১১/২০২০

আংশিক লকডাউন ও ঘোর বিপাকে ডাচ অর্থনীতি

https://www.bhorerkagoj.com/2020/11/03/%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%89%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%a6%e0%a6%b0/ করোনায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি লন্ডভন্ড, সতের মিলিয়ন অধিবাসী নিয়ে সেন্ট্রাল ইউরোপের ছোট্ট দেশ নেদারল্যান্ডস ও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। প্রথম ধাক্কা যেনো তেনো করে সামলে নিয়েছিলো কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় অনেকটাই মুর্মুষ। বিশ্বের সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে একটি দাবী করা ডাচেরা করোনার কাছে পর্যুদস্ত। সাথে বাড়ছে জনগনের অসন্তোষ, বছরের পর বছর প্রতি মাসে এত টাকার চিকিৎসা বীমা দিয়ে আসার পর, এখন যখন চিকিৎসা প্রয়োজন, তখন হাসপাতালে জায়গা নেই, আই-সি-ইউতে বেড খালি নেই শুনতে আর রাজী নয় জনগন। প্রতিজন ডাচ নূন্যতম এগারশো ইউরো বছরে নিজের পকেট থেকে স্বাস্থ্যবীমা পরিশোধ করেন, এর বাইরে তার প্রতিষ্ঠান আর সরকারও স্বাস্থ্যবীমার নির্দিষ্ট অংশের ব্যয় ভার বহন করে থাকেন। সেগুলো যোগ করলে ব্যক্তিভেদে বছরে তিন হাজার ছয়শো আশি ইউরো থেকে পাঁচ হাজার তিনশো ইউরো পর্যন্ত দাঁড়ায়। প্রথমবার ছিলো “ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন”, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধূলা, জিম, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, সিনেমা, থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ ছিলো যা পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খুলেছে। অক্টোবরের চৌদ্দ তারিখ থেকে আবার রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদি বন্ধ করে দিয়েছে, রাত আটটার পর সব দোকান ও বন্ধ থাকবে, শুধুমাত্র ওষুধের দোকান আর সুপারমার্কেট খোলা থাকবে তবে সেখানে কোন এলকোহল বিক্রি করা যাবে না। রাত আটটার পর এলকোহল নিয়ে বাড়ির বাইরে থাকা নিষেধ। তবে এবার বলা হচ্ছে “আংশিক লকডাউন”, প্রিমিয়ে মার্ক রুতে বলছেন, জনগনের কল্যান আর সুস্বাস্থ্যের সাথে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যে ক্যাবিনেট আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে পলিসি বের করছে যাতে সকলের কল্যান হয়। সরকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবেন বার বার বলার পরও একটার পর একটা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, থামছে না। এই বছরের বিয়াল্লিশ সপ্তাহ পর্যন্ত দুই হাজার সাতশো উনিশটি ব্যবসা দেওলিয়া ঘোষনা করা হয়েছে। যদিও দুই হাজার উনিশ সালের তুলনায় তিনশো নয়টি কম এরমধ্যে ছেচল্লিশটি ব্যবসা শুধু বিয়াল্লিশতম সপ্তাহে বন্ধ হয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটাস্টিক্সের মতে, প্রথম কোয়ার্টারের তুলনায় দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আট দশমিক পাঁচ ভাগ প্রবৃদ্ধি কমেছে যা মূল প্রবৃদ্ধির অর্ধেকেরও কম আর সেটি মূলত দেশের আভ্যন্তরীন বানিজ্য ঘাটতির কারণে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গৃহস্থালী জিনিসপত্রের বিক্রি অনেক কমেছে আর মানুষ নতুন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে। সার্বিক পরিবেশ নিয়ে মানুষ হতাশ আর তারা খরচ করতে অনেক ভাবছেন। জিনিসপত্র যদিও বা কিছু কিনছেন কিন্তু পয়সার বিনিময়ে কোন ধরনের সেবা নিতে তারা অনিচ্ছুক। তবে সবদিকেই অবস্থা এত খারাপ নয়, মেডিক্যাল সেক্টর, অনলাইন কনসাল্টিং, অনলাইন সুপারমার্কেট, নেটফ্লিক্স, আমাজন নেদারল্যান্ডস, প্যাকেট আর অনলাইন ডেলিভারী সার্ভিস এরা বেশ ভাল ব্যবসা করছে। ফিলিপ্স মেডিক্যাল সিস্টেম দুইগুন বেশি পন্য উৎপাদন ও বিশ্বব্যাপী পরিবহন করছে। করোনার কারণে সরকারের অর্থায়ন ধাক্কা খেয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাজেটের উদ্ববৃত্ততার পর দুই হাজার বিশ সালে ঐতিহাসিকভাবে বড় ঘাটতি হয়েছে। তাতে ঋণের পরিমান বেড়ে গেছে। তবে তার জন্যে জমানো অর্থ ছিলো, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অর্থনীতি যখন ভাল করছিল, সরকার তখন বাফার তৈরি করেছে। করোনা সঙ্কটের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্যে সরকার প্রচুর অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। বড় প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী সবাইকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। একই সময়ে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আপাতত কর পরিশোধ না করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় করের পরিমান কমানো এবং ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের সর্বমোট ব্যয় হবে বাষট্টি বিলিয়ন ইউরোর বেশি। এর মধ্যে দুই হাজার বিশ ও একুশ সালের অর্থ বছরে বড় প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীদের সাহায্য করার জন্যে পয়তাল্লিশ দশমিক নয় বিলিয়ন ইউরো ধরা হয়েছে। করের ছাড়, কর কমানো আর দেরীতে পরিশোধের কারণে খরচ হবে ষোল দশমিক ছয় বিলিয়ন ইউরো। গত পাঁচ বছরের পর এবার ঘাটতি বাজেট এলো। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। গড় প্রবৃদ্ধি কমেছে শতকরা সাত দশমিক দুই যার পরিমান ছাপ্পান্ন বিলিয়ন ইউরো। দুই হাজার একুশেও ঘাটতি বাজেট হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ধারনা করা হচ্ছে পাঁচ দশমিক পাঁচ ভাগ কম হবে যার পরিমান হবে পয়তাল্লিশ বিলিয়ন ইউরো। তবে সেটি এখনও নির্ভর করছে সামনের মাস গুলোতে করোনা ভাইরাস কোন দিকে মোড় নেবে তার ওপর। এত সঙ্কটের মধ্যেও রাজা এবং রানীর ভাতা শতকরা পাঁচ ভাগ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, দুজনেরটা একসাথে ধরলে পরিমান দাঁড়ায় বার্ষিক সাত দশমিক দুই মিলিয়ন ইউরো। রাজকন্যা আমালিয়া এই ডিসেম্বরে আঠারো হবে, ডিসেম্বর থেকে সেও মাসিক এক লক্ষ এগারো হাজার ইউরো ভাতা পাবে যেটি সামনের অর্থ বছর দুই হাজার একুশ-বাইশে হবে এক দশমিক ছয় মিলিয়ন ইউরো। রাজ পরিবারের এই আয় সম্পূর্ন কর মুক্ত। এই প্রবৃদ্ধি বিরোধী দল আর জনগনের প্রবল সমালোচনার মুখে পরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের তির্যক আলোচনা ও মন্তব্য আসতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে আর রাজ পরিবারের মধ্যে দারুণ সখ্যতা। রাজ পরিবারের কর মুক্ত আয়ের সমালোচনার জবাবে তিনি বারবার একই কথা বলে যান, “আ ডিল ইজ আ ডিল”। ইউরোপের মধ্যে ডাচ রাজ পরিবারকে সবচেয়ে ব্যয় বহুল পরিবার হিসেবে ধরা হয়। মোটামুটিভাবে তারা বছরে চল্লিশ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে থাকেন যার মধ্যে তাদের নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত নয়। নেদারল্যান্ডসের জনগন তাদের নিরাপত্তা, প্যালেসের সংস্কার, ঘোড়া গাড়ির ব্যয় বহন করে থাকে। ডাচ প্রিমিয়ে মার্ক রুতে প্রায়ই তার ভাষণে “আ ডিল ইজ আ ডিল” কথাটি ব্যবহার করে থাকেন। যদিও বিদেশি এক্সপাটদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখেননি। বিদেশ থেকে স্পেশালিষ্ট নিয়ে আসার জন্যে ডাচ সরকারের কিছু করের সুবিধা ছিলো। যাদের বাৎসরিক বেতন নূন্যতম সাইত্রিশ হাজার ইউরো তাদের বেতনের শতকরা ত্রিশ ভাগ করের আওতামুক্ত ছিলো, আর এই সুযোগটি প্রতি জন প্রথম দশ বছরের জন্যে নিতে পারতো। সেটিকে কমিয়ে প্রথমে আট বছর আর এখন পাঁচ বছরের জন্যে করা হয়েছে। পহেলা জানুয়ারী দুই হাজার একুশ থেকে যারা নেদারল্যান্ডসে চাকুরী নিয়ে আসবেন তারা আর এ সুযোগটি পাবেন না। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটাস্টিক্সের মতে, প্রায় সাতান্ন হাজার এক্সপাট বছরে এই করমুক্ত সুযোগটি ব্যবহার করে থাকে। এই করমুক্ত সুবিধার সময় কমিয়ে দেয়াতে প্রতি বছর ডাচ সরকার প্রায় তিনশো পঞ্চাশ মিলিয়ন ইউরো লাভবান হচ্ছে। এই সাথে এক্সপাটের বাচ্চাদের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার খরচ দেয়ার করমুক্ত সুবিধাও কোম্পানীগুলোকে পাঁচ বছরের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। একজন এক্সপাটকে যেহেতু বেতনের শতকরা বায়ান্ন ভাগ কর দিতে হয়, ত্রিশ পার্সেন্ট কর মুক্ত বেতনের আওতায় পাওয়া টাকার সুবিধার পরিমান নেহায়েত কম নয়। ডাচ সরকারের এই ব্যবহারে এক্সপাটরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করেন। তাদের শ্লোগানে লেখা ছিলো, “প্রিমিয়ে রুতে, আ ডিল ইজ আ ডিল”। এতে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে, এক্সপাটদের নিজেদের দেশে ফেরত চলে যেতে বলেন। নেদারল্যান্ডসের রিসার্চ আর ডেভেলাপমেন্ট চলে আশি পার্সেন্ট বিদেশিদের দ্বারা। সে জায়গায় কোন সরকার প্রধান থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা নিতান্তই হতাশাজনক। ত্রিশে অক্টোবর থেকে বেলজিয়াম পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেছে, নেদারল্যান্ডসকে অনুসরণ করে ফ্রান্স, ইতালি আর স্পেন আছে আংশিক লকডাউনে। ট্রেন দুই মিনিট দেরী করে প্ল্যাটফর্মে আসলে স্ট্রেস হয় যে জাতি তারা বিশ্বের আট নম্বর আর ইউরোপের ছয় নম্বর করোনা আক্রান্তের শীর্ষে অবস্থান করে কি করে এই মুমূর্ষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে সেটি এখন দেখার বিষয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এখনও দেশের অধিকাংশ জনগন প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতের ওপর আস্থা রেখেছে, তিনি অর্থনীতি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধ নেদারল্যান্ডস ফিরিয়ে আনবেন এই আশা ডাচেদের মনে দৃঢ়। তানবীরা তালুকদার ৩১/১০/২০২০