Friday 29 November 2019

তালাক ও নারীর নায্য অধিকার

প্রকৃতির নিয়মে দুজন মানুষ কাছাকাছি আসে, স্বপ্ন দেখে, ঘর বাঁধে। নানা ঘটনায়, ঘাতে প্রতিঘাতে আবার চলার পথ আলাদা হয়ে যায়, সামাজিক ভাবে আলাদা হবার সুন্দর উপায়ও আছে। সাথে আলাদা হয় স্মৃতি, টান, তিক্ততা, অশ্রু সব। এসব অধরা বস্তুর সাথে থাকে জীবন ধারনের কিছু প্রয়োজনীয় বস্তু যা বেঁচে থাকতে প্রয়োজন পরে। যখন দুজন মানুষ একসাথে থাকে, সংসার সাজায় সেসব ব্যবহারের জিনিস দু’জন একসাথে মিলেই জড়ো করে পাখির মত। ঠিক পাখির মত ঠোঁটে করে না আনলেও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়, মেলায় যায়, জড়ো করে বিভিন্ন পন্থায় সংসার সাজায়। দুজনে মিলে ভবিষ্যতের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সঞ্চয় করে, আর সেজন্যে রোজদিনের কিছু চাওয়া পাওয়া তার জন্যে দুজনেই ত্যাগ করে। হয়ত উবার না ডেকে রিক্সা বা সিএঞ্জি ডাকে, ঈদে-পূজায় পছন্দের শাড়ি না কিনে সস্তায় কিছু কিনে নেয়।

মেনে নিচ্ছি, মেয়েটি অর্থ উপার্জন করেনি, সঙ্গীর উপার্জিত অর্থই যতটা সম্ভব সুচারুভাবে সে পরিচালনা করেছে, সঞ্চয়পত্র কিনেছে, ডিপিএস করেছে, কিন্তু আজ যখন চলার পথ আলাদা, সেসবে আজ তার আর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই? সাজানো সংসারের কোন আসবাবে, একসাথে কষ্ট করে কেনা ফ্ল্যাট বা প্লটে? দিনে দিনে নিজের মত করে তৈরী করা এসমস্ত কিছুতেই সে একজন অনাহুত প্রানী মাত্র? তাকে ফিরে যেতে হবে কিংবা চলে যেতে হবে শুধু বিয়ের সময় কাগজে লেখা দেনমোহরানা (শুধু মুসলিম মেয়েদের ক্ষেত্রে) হাতে করে? তাতেও কত চালাকি থাকে, গয়না-জামা’র উসুল। খুব কম মেয়েই মামলা করা ছাড়া এটুকু টাকা তার একসময়ের চিরচেনা মানুষদের থেকে উদ্ধার করতে পারে। যাদের সে দিনে রাতে রেঁধে বেড়ে খাইয়েছে, জ্বর গায়ে জলপট্টি দিয়েছে। অনেক মেয়েই মামলার রায় পেয়েও আজ অব্ধি হাতে টাকা পায় নি, আইন প্রয়োগের শিথিলতার কারণে। ভারতীয় উপমহাদেশে বোধহয় হিন্দু ও খ্রীষ্টান মেয়েরা এটুকুও পায় না। সন্তান থাকলে সন্তানের মাসিক ভরন-পোষন দেয়ার যে চুক্তি হয় তারও একই হাল।

পশ্চিমে এ সমস্যার মোকাবেলায় “প্রিন্যাপ - prenuptial agreement” এর প্রচলন রয়েছে। দুজন আলাদা হয়ে গেলে, জমানো টাকা-পয়সা, আসবাব, গয়না ইত্যাদি কে কতটুকু পাবে, আগে থেকেই তা নিয়ে একটি লিখিত চুক্তি থাকে। বিয়ে বা লিভটুগেদার এর পরের অর্থনৈতিক অবস্থা পুরোপুরি যেহেতু জানা থাকে না, কিছু দিকনির্দেশনা বা মানদন্ড থাকে যা পরবর্তী মনোমালিন্য কিংবা অহেতুক দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষে যেহেতু এখন “তালাক” এর হার অনেক বেশি, আমার ধারনা, এ সমস্যাটা গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। সময়ের প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে অনেক নিয়ম বদলাতে হয়, শুরু করতে হয় কিংবা শেষ করতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটা মানুষের নায্য অধিকার নিশ্চিত করা সভ্য সমাজের অংশ।

২৯/১১/২০১৯