প্রকৃতির নিয়মে দুজন মানুষ কাছাকাছি আসে, স্বপ্ন দেখে,
ঘর বাঁধে। নানা ঘটনায়, ঘাতে প্রতিঘাতে আবার চলার পথ আলাদা হয়ে যায়, সামাজিক ভাবে আলাদা
হবার সুন্দর উপায়ও আছে। সাথে আলাদা হয় স্মৃতি, টান, তিক্ততা, অশ্রু সব। এসব অধরা বস্তুর সাথে থাকে জীবন ধারনের
কিছু প্রয়োজনীয় বস্তু যা বেঁচে থাকতে প্রয়োজন পরে। যখন দুজন মানুষ একসাথে থাকে, সংসার
সাজায় সেসব ব্যবহারের জিনিস দু’জন একসাথে মিলেই জড়ো করে পাখির মত। ঠিক পাখির মত ঠোঁটে
করে না আনলেও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়, মেলায় যায়, জড়ো করে বিভিন্ন পন্থায় সংসার
সাজায়। দুজনে মিলে ভবিষ্যতের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সঞ্চয় করে, আর সেজন্যে রোজদিনের
কিছু চাওয়া পাওয়া তার জন্যে দুজনেই ত্যাগ করে। হয়ত উবার না ডেকে রিক্সা বা সিএঞ্জি
ডাকে, ঈদে-পূজায় পছন্দের শাড়ি না কিনে সস্তায় কিছু কিনে নেয়।
মেনে নিচ্ছি, মেয়েটি অর্থ উপার্জন করেনি, সঙ্গীর উপার্জিত অর্থই
যতটা সম্ভব সুচারুভাবে সে পরিচালনা করেছে, সঞ্চয়পত্র কিনেছে, ডিপিএস করেছে, কিন্তু
আজ যখন চলার পথ আলাদা, সেসবে আজ তার আর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই? সাজানো সংসারের
কোন আসবাবে, একসাথে কষ্ট করে কেনা ফ্ল্যাট বা প্লটে? দিনে দিনে নিজের মত করে তৈরী
করা এসমস্ত কিছুতেই সে একজন অনাহুত প্রানী মাত্র? তাকে ফিরে যেতে হবে কিংবা চলে
যেতে হবে শুধু বিয়ের সময় কাগজে লেখা দেনমোহরানা (শুধু মুসলিম মেয়েদের ক্ষেত্রে) হাতে
করে? তাতেও কত চালাকি থাকে, গয়না-জামা’র উসুল। খুব কম মেয়েই মামলা করা ছাড়া এটুকু
টাকা তার একসময়ের চিরচেনা মানুষদের থেকে উদ্ধার করতে পারে। যাদের সে দিনে রাতে রেঁধে
বেড়ে খাইয়েছে, জ্বর গায়ে জলপট্টি দিয়েছে। অনেক মেয়েই মামলার রায় পেয়েও আজ অব্ধি
হাতে টাকা পায় নি, আইন প্রয়োগের শিথিলতার কারণে। ভারতীয় উপমহাদেশে বোধহয় হিন্দু ও খ্রীষ্টান
মেয়েরা এটুকুও পায় না। সন্তান থাকলে সন্তানের মাসিক ভরন-পোষন দেয়ার যে চুক্তি হয় তারও
একই হাল।
২৯/১১/২০১৯