Wednesday 30 December 2020

সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমস্টারডাম

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1842666.bdnews?fbclid=IwAR34g75EqjGlHKeBl2HbwxSYwsyXdGaxMvWP_nDnbN7sjBHctlwO5_zZztY সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমর্স্টাডাম – ওলন্দাজ রাজধানীর গৌরবজ্জল ইতিহাস শত শত বছরের বিস্তৃত ইতিহাস সহ সংস্কৃতিতে পূর্ণ একটি ছোট শহরের নাম, আমস্টারডাম। আজও শহর ঘুরলে, প্রতিটি রাস্তার কোণে, প্রতিটি স্কোয়ারে আপনাকে অবাক করে দেয় এমন সমৃদ্ধ ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া আপনি এড়াতে পারবেন না। আমস্টারডামের অত্যন্ত মনকাড়া সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনের সম্মানে, আসুন ইতিহাসের যে ঘটনাগুলি আজকের শহরটিকে তৈরি করেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক। আমস্টারডামের উৎস বারোশো পঁচাত্তর সালে যখন আমস্টেলের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষকে জল পথে অবাধে যাতায়াত করতে দেয়ার তথাকথিত টোল সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেই ইতিহাসে আমস্টারডাম শহরের নামটি প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়। এর প্রায় ত্রিশ বছর পরে, তেরশো কিংবা তেরশো ছয় সালে - সঠিক তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি - আমস্টারডামকে সরকারী শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিকে আমস্টারডামের দ্রুত বিকাশ ঘটে। প্রথম চার্চটি প্রায় তেরশো সালের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়েছিল, যা “আউডে কের্ক” নামে এখন কেন্দ্রীয় আমস্টারডামের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, আমস্টেলোভার নদীতে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল, যেখানে ড্যাম স্কয়ারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এখন দাঁড়িয়ে আছে (তখন এটি প্লেটিস নামে পরিচিত ছিলো)। আমস্টারডামের বাণিজ্য ও অর্থনীতি পনেরশো তেতাল্লিশ সালে নেদারল্যান্ডসের একীকরণের পরে, আমস্টারডাম শহরটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, এটি এমন এক শহরে পরিণত হয়েছিল যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় ইউরোপের পণ্য সংরক্ষণ করা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিক্রি করা হতো। এই উন্নয়নশীল বানিজ্য সংস্থা মানচিত্রাঙ্কন, মুদ্রণ, ব্যাংকিং এবং বীমাসহ বিভিন্ন শিল্প গুনে সমৃদ্ধ ছিলো। এই বাণিজ্যের ফলে এই শহরটির প্রভূত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছিল এবং ষোড়শ শতাব্দীতে আমস্টারডাম হল্যান্ড প্রদেশের বৃহত্তম শহর হয়ে উঠেছিল – পনেরশো আশি সালে এই শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার। ডাচ স্বর্ণযুগ পঞ্চাশ শতাব্দীর শেষের দিকে, নেদারল্যান্ডস পন্য ও ক্রীতদাসের উপনিবেশিক ব্যবসায় জড়িত হয় এবং পনেরশো সালে দেশটি তাদের নিজস্ব বাহন ইন্ডিজে পাঠানো শুরু করে - এই প্রথম আমস্টারডাম থেকে ইন্ডিজে যাত্রা শুরু হয়। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের যাত্রা আর্থিকভাবে প্রচুর সফল হয়েছিল এবং ষোলশ দুই সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ভিওসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভিওসি'র মূলধনের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ছিলো আমস্টারডামের এবং এর ফলে কোম্পানির মধ্যে তারা উল্লেখযোগ্য শক্তি অর্জন করেছিল। ষোলশ একুশ সালে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া সংস্থা (ডব্লিউআইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ডাচ দাস ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছিল। আমস্টারডাম এবং স্বর্ণযুগ এই উদীয়মান বাণিজ্য শিল্প এবং ক্রীতদাস ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আমস্টারডামের জন্য প্রচুর লাভের সঞ্চার করেছিল, সপ্তদশ শতাব্দীর ইতিহাসে এটি ডাচ স্বর্ণযুগ নামে খ্যাত। ঐ সময়টাতে এই নগরীতে সম্পদ, শক্তি, সংস্কৃতি এবং সহনশীলতার স্রোত বয়ে যায়। আমস্টারডামে নর্ডকের্ক এবং ওয়েস্টকের্ক সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা নির্মিত হয়েছিল এবং একটি নতুন সিটি হল তৈরি হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতেও এই শহরটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছিল এবং বর্তমানের কুখ্যাত খাল বেল্ট এবং জর্দান অঞ্চলটি নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই আমাদের আজকের পরিচিত আমস্টারডাম তার এই আদল নিতে শুরু করে। নেদারল্যান্ডসের বিদ্রোহ এবং গণতন্ত্র সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে স্বর্ণযুগের অবসান হওয়ার পরে, দেশপ্রেমিক হিসাবে পরিচিত একটি গোষ্ঠী, শাসক বংশোদ্ভূতদের দুর্নীতির অবসানের দাবি করেছিল এবং সতেরশো পঁচানব্বই সালে ফ্রান্স থেকে নেদারল্যান্ডসে ফিরে এসে নেদারল্যান্ডসকে দখল করে তারপর আমস্টারডাম শহরের সরকারকে বদলে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে এবং পুরো শহর এবং প্রজাতন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের ধারণা প্রবর্তন করে। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, আঠারশো পনের সালে, ডাচ যুবরাজ উইলাম রাজার মুকুট গ্রহণ করেছিলেন এবং আঠারশো আটচল্লিশ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র হওয়ার আগে দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রবর্তিত হয়েছিল। আমস্টারডামের শিল্পায়ন আমস্টারডাম তখনও বিদ্রোহের কারণে দারিদ্র্য পর্যুদস্ত ছিল, কিন্তু শহরটি শিল্পায়নের দিকে চলে গেলো। এই সময়, আমস্টারডাম এবং ডেন হেল্ডারের মধ্যে নর্থ হল্যান্ডের খালটি নির্মিত হয়েছিল, শহরটির প্রধান বন্দরটিকে পলির হুমকির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুয়েজ খাল খোলা এবং জার্মানির একীকরণ সহ ঘটে যাওয়া উন্নয়নের ঘটনাগুলিতে ডাচদের রাজধানীতে আবার সমৃদ্ধি ফিরে আসে। আঠারশো ছিয়াত্তর সালে উত্তর সমুদ্র খাল খোলার ফলে আমস্টারডামকে সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং আঠারশো উননব্বই সালে আমস্টারডাম তার সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠা করে একটি বিস্তৃত রেল যোগাযোগ স্থাপন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত এই শহরের উন্নয়ন ও প্রসার অব্যাহত ছিল, এবং উনিশো ষোল সালে স্কিপলে ছোট একটি বিমানবন্দর খুলে আমস্টারডাম আরও প্রসারিত হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি নয়শ হেক্টরের বন তৈরি হয়েছিল, যা আমস্টারডাম বোস নামে পরিচিত, এবং তবে শেষ কিন্তু সর্বশেষে নয়, আমস্টারডাম শহর জুড়ে চৌদ্দটি ভেন্যুতে উনিশো আটাশ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করেছিল, যার বেশিরভাগ চিহ্ন পরে ধ্বংস করা হয়েছে। আমস্টারডাম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর অত্যাচারের ফলে আমস্টারডাম এর দশ শতাংশ জনসংখ্যা হারায় যদিও এই শহরটি পুরো যুদ্ধ জুড়ে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিল, তারপও এটি জার্মানদের দখলে চলে যাওয়ার পরে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মিত্রবাহিনীর ভুল দিক নির্দেশনার বোমা হামলায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলো। উনিশো চুয়াল্লিশ সালের সেপ্টেম্বরে আর্নহেমের যুদ্ধে পরাজয়ের পরে, উনিশো চুয়াল্লিশ থেকে উনিশো পয়তাল্লিশ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস ক্ষুধার্ত শীত নামে পরিচিত ছিলো। ফলস্বরূপ আমস্টারডামে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। উনিশো পয়তাল্লিশ সালের পাঁচই মে, জার্মান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, এবং আমস্টারডাম সাতই মে তাদের মুক্তি উদযাপন করেছিল। যদিও উৎসব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, বেশ কয়েকটি জার্মান সৈন্য ড্যাম স্কয়ারে হামলা চালিয়ে গ্রোট ক্লাব (দি বায়েনক্রোফের) বিপরীত দিক থেকে গুলি চালিয়েছিল এবং কয়েক ডজন আমস্টারডামারকে হত্যা করেছিলো। যুদ্ধোত্তর: বিংশ শতাব্দীতে আমস্টারডাম যুদ্ধের অবসানের পরে, শহরটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, বন্দর এবং স্কিপল বিমানবন্দরের দিকে মনোনিবেশ করে এবং আধুনিক সময়ের ট্র্যাফিক এবং পরিবহন ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলস্বরূপ, আইজে টানেলটি নির্মিত হয়েছিল এবং একটি মেট্রো নেটওয়ার্ক এবং আমস্টারডাম রিং তৈরি করা হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পূর্বে বেলমেমার সহ নতুন আবাসিক পাড়াগুলিও নির্মিত হয়েছিল। আমস্টারডাম শহর তার পরিচয় নিয়ে লড়াই করছিল, মূলত আবাসিক রাজধানী বা অর্থনৈতিক ও আর্থিক কেন্দ্র কি হবে এটির পরিচয়, তা নির্ধারণ করতে অক্ষম ছিল। যাহোক, উনিশো ষাটের দশকে, এটি একটি উন্নত আবাসিক জায়গা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং বাইরে থেকে এই শহরে আসা যুবসংস্কৃতির বিস্ফোরণ আমস্টারডামকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন করেছিল। উনিশো আটাত্তর সালে পৌরসভা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমস্টারডামকে আবাসিক শহর হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। উনিশো আশি থেকে উনিশো নব্বইয়ের দশকে, স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু হয়। যদিও শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিকভাবে আবাসিক কার্যক্রম ছিলো কিন্তু শহরের উপকণ্ঠে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসকে স্বাগত জানানো হয়েছে। শহরের দক্ষিন প্রান্ত ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং আমস্টারডাম ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল, উনিশো তিরানব্বই সালের মধ্যে স্কিপল ইউরোপের পঞ্চম বৃহত্তম বিমানবন্দরে পরিণত হয়। উনিশো চুরাশি সাল থেকে, পড়াশোনা করতে বা কাজের সন্ধান করতে শহরে আসা তরুণদের হিসাবে আবারও বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসন সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়াসে শহরটির আরও বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে, আমস্টারডাম ইস্টের বন্দরটি একটি আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছিল, যা বর্তমানে জেইবার্গ নামে পরিচিত, এবং অন্যান্য আবাসিক অঞ্চলগুলি (অথ্যার্ৎ বেলমেমেয়ার এবং জেইডাইক) বসবাসের জন্য আরও আকর্ষণীয় ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। আধুনিক আমস্টারডাম এবং ডাচ রাজধানীর ভবিষ্যত গত পঁচিশ বছর ধরে আমস্টারডাম অর্থনীতির বিকাশ অব্যাহত রেখেছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। শহরটি নেদারল্যান্ডসের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে রয়ে গেছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে স্বাগত জানিয়ে এটি একটি মূল পর্যটন কেন্দ্র হিসাবেও পরিণত হয়েছে। আবাসন ঘাটতি এবং বাড়ির দাম বাড়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, এবং শহর ও এর বাসিন্দাদের উপচে পড়া পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এখন শহরটি ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সকলে উদ্বিগ্ন। আমস্টারডামের মেয়র, ফেমেক হালসেমা এবং পৌরসভা, শহরের কেন্দ্রস্থলের বাসিন্দা এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমস্টারডামকে আবারও একটি "সত্যিকারের শহর কেন্দ্র" হিসাবে গড়ে তোমার বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করছে। মূলঃ ভিক্টোরিয়া সিভানো ভাষান্তরঃ তানবীরা তালুকদার ২৪/১২/২০২০ https://www.iamexpat.nl/expat-info/dutch-expat-news/amsterdams-745th-birthday-brief-history-dutch-capital?fbclid=IwAR2cfNNwGay-mTKZw0Eb3LyC18ywzbnl7wgapFxykxoJ_-m5UWSoM_78jkg

Friday 18 December 2020

#এনআনসেন্টলেটারটুমাইডিয়ারেস্টডটার ---- পার্ট থ্রি

প্রত্যেকের জীবনের হিসাব আলাদা, চাওয়া-পাওয়া আলাদা। আমার জন্যে, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় রূপ "মা হওয়া"। আজও আমি এটাকেই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হিসেবে অনুভব করি। আমরা যখন খুব আদর আদর মুডে থাকি তখন তোমাকে আমি বলি, হাজার বছরের পরমায়ু হোক তোমার, তুমি আগে এর মানে বুঝতে না, এখন একটা পাকা হাসি হেসে বলো, আমি টু ওল্ড হয়ে যাবো, ওটা আমি চাই না। তাই বলি, এই পৃথিবীর রূপ,রস,গন্ধ নিয়ে, যেখানে, যেভাবে, যে অবস্থায়ই থাকো, প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দ নিয়ে বাঁচো। সার্থক হোক এই বেঁচে থাকা। নাইদার এম আই আ পার্ফেক্ট মাদার নর ইউ আর আ পার্ফেক্ট ডটার তারপরও "শক্তির অবিনশ্বরতার" সূত্র মেনে যদি আবারও মেয়ে হয়ে পৃথিবীতে আসি, আমি তোমাকেই প্রতিবার আমার সন্তান হিসেবে চাইবো। আমি তোমাকে বকা দিলে তুমি মাঝে মাঝে মন খারাপ করে বলো, আই নো মামা, ইউ ডিজার্ভ বেটার চাইল্ড। লেট মি টেল ইউ ওয়ান থিংগ মাই বেবি, তুম সে আচ্ছা তো কোই হোয়ি নেহি সাকতা। সামটাইমস মামি’স আর মীন টু। মামিদেরকেও অনেক পেশেন্স রাখতে হয়, বাচ্চাদের ওতো বকা দিতে হয় না, ইউ নো। এই যে সন্ধ্যেবেলা আমার মাঝে মাঝে সোফা থেকে উঠতে ইচ্ছে না হলে, তোমাকে এটা ওটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ওপর থেকে জিনিস আনাই, এসব হলো মীননেস। বাট, আরভিন ভাইয়ার মত বলি, “ইট ইজ হোয়াট ইট ইজ” এন্ড ইটস নট দ্যাট ব্যাড। আচ্ছা এর পরের জন্মে আমরা কি হবো? পাখি হবো? ঐ নীল আকাশে ডানা ঝাপটে ওড়াওড়ি করে কেটে যাবে দিন? এখন তোমায় আমি হাতে তুলে খাইয়ে দেই, তখন ঠোঁটে তুলে খাইয়ে দেবো। অবশ্য তুমিও আমার মা হতে চাও, সেটা একটা বিরাট সমস্যা দেখা দেবে, কে মায়ের রোল প্লে করবে। তবুও জন্ম জন্মাতর মা-মেয়েতে, মেয়েতে-মায়েতেই যাক আমাদের, কি বলো? জন্মদিন আনন্দময় হোক মা আমার। কলিজা পাখি - সোনা পাখি, ভালবাসি তোমাকে, তুমি জানো আমি জানি তবুও বলতে ভাল লাগে তাই বলি, বারবার বলি। ***আই গেস, দিজ লেটার ইজ নট আনসেন্ট এনিমোর, ফেবুর ট্রান্সলেশানে ফেলে, আমার ফেবু ঘেটে তুমি পড়েই ফেলবে, কি বলো?” ইউ সি, মামিস রিমেইন মামিস ❤ ***

Thursday 17 December 2020

ইউরোপে কেন বাংলাদেশ অনুপস্থিত

https://www.prothomalo.com/business/world-business/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%A4 ভাষা, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, সংস্কৃতির এত প্রাচুর্য থাকা সত্বেও ইউরোপে কেন বাংলাদেশের চোখে পড়ার মত কোন অস্ত্বিত্ব নেই? কখনও কি এই দুই প্রান্তের চাহিদার সমন্বয় করার চিন্তা বা চেষ্টা হয়েছিলো? ইউরোপ বাংলাদেশে কি চাইতে পারে? কিংবা বাংলাদেশের কি চাহিদা থাকতে পারে তাদের কাছে? বানিজ্য? টাকা? ধরা যাক, তাই, কিন্তু সেটার প্রক্রিয়া কি ধরনের হওয়া উচিত? যেকোন ধরনের উন্নতির জন্যেই দরকার উন্নত কাঠামো আর সেজন্য চাই উন্নত প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ওপর একবিংশ শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে, নিজেদের টিকে থাকার সার্থেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমদানী করা দরকার। নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, তারা তাদের জ্ঞান, চিন্তা, প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক ও প্রস্তূত কিন্তু তারা আস্থাভাজন অংশীদার খুঁজে পান না। তাদের এত আগ্রহের কারণ কি? না, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্যে নেদারল্যান্ডসের কোন প্রেম ভালবাসা কাজ করছে না। ভৌগলিক দিক থেকে বিনিয়োগের জন্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আর সেটাই তাদের লক্ষ্য। প্রতিটা দেশের বিনিয়োগ বিস্তৃত করার একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে, আপাতত সেই মাত্রার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের অবস্থান। তারা লাভজনক বিনিয়োগে আগ্রহী। এতো গেলো নেদারল্যান্ডসের দিক। নেদারল্যান্ডস মানেই বুঝি আমরা পোল্ডার, ডাইক আর আলু। তাহলে বাংলাদেশ কেন নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে? আমরা কি জানি আয়তনে বাংলাদশের প্রায় তিন ভাগের একভাগের সমান হলেও নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বের ষোলতম অর্থনীতি। নেদারল্যান্ডসের মত একটি ছোট্ট দেশে পচাঁশি রকমের টমেট্যো উৎপন্ন হয়, পাঁচশো পঞ্চাশ রকমের উৎপন্ন হয় আলু। দু হাজারের ওপর ভিন্ন রকমের হিয়াসিন্ট ফুলের চাষ হয়। পেয়াজের জন্যে ক’দিন পর পর আমাদের ভারতের মুখাপেক্ষী হতে হয় কিন্তু নেদারল্যান্ডস পেয়াজ রপ্তানী করে। ক’দিন আগে বাংলাদেশও নেদারল্যান্ডস থেকে পেয়াজ আমদানি করেছে। পেয়াজ আমদানী না করে পেয়াজ ফলানোর প্রযুক্তি আর উন্নত প্রজাতির পেয়াজ বীজ আমদানী করলে কেমন হয়? আজকের যুগের চাহিদাতো টাকায় বা পন্যে আটকে থাকতে পারে না, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো প্রযুক্তির। ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে নেদারল্যান্ডসের অসাধারণ সাদৃশ্য রয়েছে, বাংলাদেশের ডেল্টা প্রজেক্ট নেদারল্যান্ডস তদারকি করছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস প্রায় সম পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য জাতীয়তার সাথে কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা প্রযুক্তিবিদরাও। নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করার জন্যে এর চেয়ে বেশি কারণ কি বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে? প্রযুক্তি আমদানী ও বিনিয়োগ সমন্বয়ের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীদের নিয়ে, দি হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যেগে প্রথমবারের মত ডিসেম্বরের আট আর নয় তারিখে ভার্চুয়ালি হয়ে গেলো, “বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ইনভেস্ট সাম্মিট টুয়েন্টি টুয়েন্টি।“ এতে অংশ নেয় ডাচ বিনিয়োগ সংস্থা আরভিও, আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশগ্রহন করে বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, সিসিসিআই, স্কয়ার বাংলাদেশ, আকিজ গ্রুপ, প্রান আরএফএল গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, কাজী গ্রুপ, পিএইচপি, বিডা, বেজা, বেপজা সহ আরও অনেকে। বাংলাদেশের চাহিদা ছিলো কৃষি, হালকা প্রকৌশল আর সমুদ্র সম্পদের ব্যবহারে নেদারল্যান্ডসের সাহায্য। সে অনুযায়ী সম্মেলনটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো, ভার্চুয়াল এই সম্মেলনের কৃষি পর্বে দুশো একত্রিশ জন উপস্থিত ছিলো, লাইটিং এ একশোজনের কিছু ওপরে আর পানি সম্পদে একশো ত্রিশজন। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে মন্তব্য বিভাগ ছিলো বাংলাদেশীদের উচ্ছসিত মন্তব্যে ভরপুর, যা ডাচ ব্যবসায়ীদের উৎফুল্ল করেছে। বাংলাদেশের ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কি করে এসব ডিজেল চালিত নৌকায় খরচ বেশি আর সাথে নদী ও পরিবেশ দূষন হচ্ছে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হলো। ডাচ বিশেষজ্ঞরা নৌকার আকৃতি ও ডিজাইনে পরিবর্তন আনা সহ ডিজেল থেকে এলপিজিতে রুপান্তরের পরামর্শ দিলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী ব্যবস্থায় দ্রুততম বেগে চলা রেল আর রাস্তার সংযোজনের পরিকল্পনা ডাচ ব্যবসায়ীদের জন্যে দক্ষ ও আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার সুযোগ হতে পারে। DAMEN, IHC এর মতে, বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারী পর্যায়ে যত ড্রেজার আছে এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ড্রেজার বাংলাদেশের প্রয়োজন। শহর জুড়ে মানসম্পন্ন পরিশোধিত পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা, শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য পানিকে পরিশোধিত করে পুনরায় ব্যবহার, একশোরও বেশি রকমের দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে মাছের জিন অন্বেষণ এমনকি ওমেগা থ্রিতে ভরপুর ইলিশ কি স্যামনের জায়গা নিতে পারে ইত্যাদি আরো বহু সম্ভাবনার কথা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ফেরওয়াই এক ভিডিও বার্তায় এই উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ গত পঞ্চাশ বছর ধরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের পাশে আছে, বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের সাথে যেমন বানিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে চায় ঠিক তেমনি নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি চায়। ডেনহাগে অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশে দূতাবাস আর ঢাকায় অপেক্ষা করে আছি আমি, যেকোন প্রয়োজন, প্রশ্ন, তথ্যের জন্য সরাসরি আমাদেরকে যোগাযোগ করুন। ব্যবসার জন্যে বাংলাদেশ হলো পরবর্তী এশিয়ান বাঘ, বাংলা বাঘ। বাংলাদেশের এখন শুধু ভাল প্রচার দরকার। এই সম্মলেনের বেশীর ভাগ অংশগ্রহনকারী ডাচ, তাই যখন কোভিড উনিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আবার ভ্রমণের সুযোগ হবে তোমাদের সবাইকে দু হাজার একুশে আমি ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাতে চাই।“ অনেকেই হয়ত বলতে পারেন এই সম্মেলন থেকে নগদ কি পাওয়া গেলো? না, নগদ নগদ কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি। দুই প্রান্তের সেতু বন্ধন করে দেয়া ছিলো সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্যে। এখন থেকে প্রতি বছর এই সম্মেলন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আস্তে আস্তে এই পরিকল্পনা ওয়ান টু ওয়ান বিজনেস, বিজনেস টু বিজনেসে নিয়ে যাওয়াও পরিকল্পনার অংশ। বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে অনেক বড় প্রস্তূতির দরকার হয়। এই সম্মেলন তার সূচনা করেছে। আশাকরা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যাবে। তানবীরা তালুকদার ১৩/১২/২০২০

Monday 14 December 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক - চৌদ্দই ডিসেম্বর

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক - চৌদ্দই ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, নবান্ন উৎসব, বইমেলার আয়োজনে ব্যস্ত বাংলাদেশ আর ইউরোপ ক্রিসমাসে পার্শিয়াল থেকে পুরোপুরি লকডাউনে যাচ্ছে। বেলজিয়াম লকডাউনে আছে আর জার্মানী যেহেতু যাচ্ছে, ক্রিসমাস কেনাকাটার জন্যে নেদারল্যান্ডস-জামার্ন-বেলজিয়াম বর্ডারে থাকা ডাচ আউটলেটগুলোতে প্রচন্ড ভীড় হচ্ছে, জার্মান গাড়ির কিউ শহরে প্রায় যানজটের উপক্রম করছে তাই ডাচ সরকারও লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (বেসরকারী খবর)। আপাতত জার্মানী দশই জানুয়ারী পর্যন্ত লকডাউনে যাচ্ছে তাই নেদারল্যান্ডসও উনিশে জানুয়ারী পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষনা দিয়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম নেদারল্যান্ডস পুরোপুরি লকডাউনে যাচ্ছে। ডাচ’রা যেনো বেলজিয়ামে শপিং করতে না যায় সেজন্য বেলজিয়ান মন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বড়লোকদের এই চক্করে,এই গরীব মায়ের “মেয়ের জন্মদিন” আয়োজনটা ভেসে গেলো। সংক্রমণ সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। আজ রাত থেকেই লকডাউন কার্যকর হবে যাতে কেনাকাটার জন্যে মানুষজন কাল দোকানে যেতে না পারে আর সংক্রমণ বেড়ে না যায়। এই শুনে কয়েকটি শহরে সাথে সাথে দোকান সন্ধ্যা ছয়টার পরিবর্তে নয়টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ড্রেন্টে তারমধ্যে অন্যতম। সকাল থেকে ডাচ মিডিয়াতে শুধু লকডাউনের চর্চা, হেয়ার সেলুনে ভীড় বেড়েছে, উটরেক্টের রাস্তায় বাড়তি পুলিশ দেয়া হয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। প্রিমিয়ে রুতেঃ এ বছরে অনেকে এত কিছু হারিয়েছে যে আমরা এবার সত্যি অনুভব করছি, একজনের কাছাকাছি অন্যজনের থাকা কত জরুরী। এক মিলিয়নের বেশী অন্যান্য অপারেশান এ বছর পেছাতে হয়েছে। করোনাক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ত্রিশ হাজার মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে যার মধ্যে ছয় হাজার আইসিইউ পেশেন্ট ছিলো, এই ছয় হাজার আইসিইউ পেশেন্টের মধ্যে আড়াই গুন মানুষ ছিলো যাদের বয়স পঞ্চাশের নীচে। আর আইসিইউতে সেবা না পেলে এই ছয় হাজার মানুষও মারা যেতো। দিনরাতের এই অক্লান্ত সেবা দানের জন্যে আবারও সব স্বাস্থ্য ও সেবাকর্মীকে ধন্যবাদ জানালেন জাতির পক্ষ থেকে। সব রকম স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি ষোলই ডিসেম্বর থেকে আঠারোই জানুয়ারী পর্যন্ত অনলাইনে চলবে। যেসব বাচ্চারা পড়াশোনায় দুর্বল, যাদের ফাইন্যাল ইয়ার, যাদের আলাদা সাহায্য দরকার তাদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা। পুলিশ, সেবা ও স্বাস্থ্যকর্মী, বাস-ট্রেনের চালক ইত্যাদি পেশা আর বিশেষ শিশু ছাড়া সবার জন্যে ডেকেয়ার বন্ধ থাকবে। বেকারী, সুপার মার্কেট, মাংসের দোকান, ঔষধের দোকান, ওপেন মার্কেট, লন্ড্রী, চশমার দোকান, মেডিক্যাল স্টোর এগুলো খোলা থাকবে। “নন এসেনসিয়াল” সব দোকান কাল থেকে বন্ধ। অনলাইন শপিং। বাকি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া হবে, যত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, প্রণোদনাও ততো বেশিই দেয়া হবে। যারা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না, তাদেরকে এন ও ডব্লু এর আন্ডারে সাবসিডির আবেদন করতে বলা হয়েছে। হোটেল খোলা থাকলেও রুম সার্ভিস, আর রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, চিড়িয়াখানা, হেয়ার সেলুন, নেল সেলুন, স্পা, ক্যাসিনো, সাওনা বন্ধ থাকবে। লাইব্রেরীতে বসে পড়া যাবে না তবে বই আনা-নেয়া করা যাবে। দাঁতের ডাক্তার, গাইনী আর ফিজিও খোলা থাকবে। ব্যাঙ্ক, মিউনিসিপ্যালটি অফিস আর মৃতদেহ সৎকার কেন্দ্র খোলা থাকবে। চব্বিশ, পঁচিশ আর ছাব্বিশে ডিসেম্বর তের বছরের ওপর তিন জন গেস্ট এলাউড। পরিবারের বাইরে দুজনের বেশি বাইরেও হাঁটা যাবে না তবে সেটাও দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। খেলাধূলার স্কুল, জিম, সুইমিংপুল সহ সব ধরনের ইন্ডোর এক্টিভিটি বন্ধ থাকবে, আঠারো বছর পর্যন্ত দল বেঁধে আউটডোর স্পোর্টস চলতে পারে। আঠারোর ওপরে কোন টিম স্পোর্টস হবে না, ম্যক্সিমাম দুজন দেড় মিটার দূরত্বে প্র্যাক্টিস করতে পারে। কোন প্রতিযোগিতা, গ্রুপ লেসন চলবে না। মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত অদরকারী ট্রাভেল বাদ। যারা এই মুহূর্তে নেদারল্যান্ডসে আসতে চাইছে তাদের নিষেধ করা হচ্ছে। ইউরোপের বাইরে থেকে কেউ আসতে চাইলে "করোনা নেগেটিভ" সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। প্রিমিয়ে রুতে তার অফিসে বসে স্পীচ দিচ্ছিলেন,লকডাউনের বিরুদ্ধে বাইরে এত ডেমোনেস্ট্রেশান আর প্রটেষ্ট হচ্ছিলো যে আওয়াজ টিভির পর্দা কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো। বারোই জানুয়ারী দুই হাজার একুশে আবার প্রেস কনফারেন্স হবে, প্রিমিয়ে রুতে আর ভাইস প্রিমিয়ে হুগো তখন নতুন ব্যবস্থা জানিয়ে দেবেন।

Thursday 10 December 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আটই ডিসেম্বর

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আটই ডিসেম্বর প্রিমিয়ে রুতে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে নেদারল্যান্ডসে দশ হাজার মানুষ মারা গেছে যেটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু সংক্রমনের হার নীচের দিকে যায়নি তাই ক্রিসমাসে আলাদা কিছু করা সম্ভব না, পার্শিয়াল লক ডাউন চলবে, বরং সংক্রমনের এই হার অব্যহত থাকলে ক্রিসমাসের আগে আরো স্ট্রিক্ট নিয়মনীতি আসতে পারে। হাঁচি, কাশি বা এধরনের যেকোন অসুস্থতায় বাসায় থাকবে, কুকুরের দেখাশোনা, কিংবা বাজার করা ইত্যাদির জন্যে হেল্প সেন্টারে যোগাযোগ করবে, সেগুলোর ব্যবস্থা করা হবে। আশা করা হয়েছিলো, মধ্য ডিসেম্বরের মধ্যে আইসিইউ রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন দশ জনে পৌঁছতে পারবো, সেটি হয়নি এখন আশা করছি মধ্য জানুয়ারীর মধ্যে হয়ত সেটা সম্ভব হবে, আমরা এক মাস আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে পিছিয়ে গেলাম। যদি মধ্যে জানুয়ারীর মধ্যে আমরা এই টার্গেটে পৌঁছতে পারি তবে ফুটবল স্টেডিয়াম, থিয়েটার, ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে। কত টুকু দূরে দাঁড়ালে কিংবা বসলে সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে থাকবে, সেসব দেখা হবে। আস্তে আস্তে সব আবার নতুন স্বাভাবিক নিয়মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফেকে আলাদা প্রনোদনা দেয়া হবে। সংক্রমনের হার নীচের দিকে নামলে রেস্টুরেন্ট খুললেও ক্যাফে আরো দেরীতে খুলবে, ক্যাফে থেকে সংক্রমন দ্রুত ছড়ায়। যুব সমাজের জন্যে আলাদা কম্পিটিশানের আয়োজন করা হবে, ফুটবল, সিনেমা, থিয়েটার প্রণোদনা পাবে। আঠারো থেকে সাতাশ বছরের জন্যে যদিও খেলাধূলার গ্রুপ প্র্যাক্টিস খুলে দেয়া হয়েছে। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ং ছয়টি ভ্যাক্সিন কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা হয়েছে, আর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সকল সেক্টরের সাথে পরিকল্পনা ও চুক্তি করা হয়েছে, কিভাবে পুরো দেশকে ভ্যাক্সিনের আন্ডারে আনা যায় দেখা হচ্ছে। প্রচুর প্রস্তূতির মধ্যে রয়েছে সবাই। ইউরোপে “ফেয়ার পলিসি”র মাধ্যমে টিকার পরিমান ভাগ করা হবে। প্রথমে বায়োটেক থেক হাফ মিলিয়ন ভ্যাক্সিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেহেতু প্রতিদিন অন্য জায়গায় সব পরিকল্পনা আর সংখ্যা পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমাদের গুলোও সে অনুযায়ী পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রতিজনের জন্যে দুটো ভ্যাক্সিন । প্রথমে টিকা পাবে সকল ক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মীরা, হাসপাতাল, কেয়ার হোম, ওল্ড এজ হোম ইত্যাদি সব জায়গার সবাই। দ্বিতীয় পাবে ষাটোর্ধ্ব আর স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা তারপর অন্যেরা, ধারনা করা হচ্ছে সামনের বছরের গরমের ছুটি পর সবার ভ্যক্সিনেশান সম্পূর্ন হবে।

Wednesday 9 December 2020

রুবিক্স কিউব

আচ্ছা, উনিশো ছিয়াশি সালের তেসরা মে বেলা বারোটায় তুমি কি করছিলে? স্কুলে ছিলাম, ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশ ছিলো। টিফিন ব্রেকের আগে ইংলিশ ক্লাশ হতো। সেদিন কি বার ছিলো? দাঁড়াও, হুম, শনিবার ছিলো, তাহলে স্কুলে যাইনি, বাসায় ছিলাম। তখন কি শনিবারে স্কুল বন্ধ থাকতো? তাইতো! বৃহস্প্রতিবার হাফ আর শুক্রবারে ছুটি। তাহলে স্কুলে ছিলাম, ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশ ছিলো। ওকে, সেবছর রোজা কবে ছিলো? ওয়েট, দেখছি, ওহ, মে মাসে তো রোজা ছিলো। তাহলে স্কুল বন্ধ ছিলো। আর আমরা বাড়িই ছিলাম। ভাল কথা, দেখোতো ঈদ কবে ছিলো? গুগল বলছে, সৌদিতে তেরোই জুন। তবে রোজা ছিলো না, স্কুল খোলাই ছিলো। আমরা স্কুলেই গেছিলাম তাহলে আমি ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশেই ছিলাম। ০৫/১১/২০২০

Tuesday 8 December 2020

মনে করো যদি সব ছেড়ে হায়

ক্লোজ বন্ধু গ্রুপের মধ্যে নিশিই প্রথম মারা গেলো। এমনিতে যে নিশির সাথে খুব যোগাযোগ ছিলো তা নয়, গ্রুপ ম্যাসেজেই টুকটাক যা কথা হতো। কারণটা ওদের মধ্যে ছিলো না, ওরাতো মাঝে মাঝেই জমিয়ে আড্ডা দিতো, সংসার অন্তপ্রাণ নিশিরই সময় ছিলো না বন্ধুদের সাথে দেখা করার কিংবা অনলাইন আড্ডা দেবার। সংসার, সংসার, এই কাজ ঐ কাজ, ফিরিস্তি শুনতে বিরক্ত লাগতো, আর যেনো পৃথিবীতে কারো পরিবার নেই, পারিবারিক জীবন নেই। এরকম আদিখ্যেতা সহ্য করা যায়? ইরিটেশান এড়াতে অনেক সময়তো এড়িয়েই চলেছি আমি ওকে। তারপরও মনের মধ্যে কয়দিন খচখচানি লেগেই রইলো। কারণে অকারণে সাদাসিধে ভালো মানুষী মাখানো মুখটা মনে পরতো। একদিন সকালে ফেসবুক স্ক্রল করছি, দেখি নিশির বর খোকন ভাইয়ের প্রোফাইলে নতুন ছবি, তার পাশে ছিপছিপে সুন্দরী একটি মেয়ের মুখ, পাশাপাশি বসে দুজনেই গভীর আনন্দে হাসছে, নীচে তখনও একশো আটাত্তরটা মন্তব্য জমা হয়েছে, অভিনন্দনের বানে ভেসে যাচ্ছে দুজনে, অবাক হয়ে মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে কেনো জানি আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়াতে লাগলো। আঙুলে গুনে দেখলাম মাত্র পাঁচটি মাসই পার হয়েছিলো, সময় কত দ্রুত যায় আর করোনা যেনো গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভদ্রতার বশেও আমার আঙুলে তাদের জন্যে অভিনন্দন আসলো না, আমি এড়িয়ে গেলাম। অথচ খোকন ভাই নিজে নিয়ে খেতে পারে না বলে, অন্য লোকের রান্না খেতে পারে না বলে, নিশি বাবার বাড়ি যেয়েও দুটো দিন আরাম করে থাকতে পারতো না। এই আমাদের সাথে আড্ডাতেই, কচিৎ কখনোই তো আসতো, তাতেও মোবাইল বেজে উঠতেই, না খেয়ে দ্রুত পড়িমড়ি ছুট লাগিয়েছে বরের জন্যে। সকালটাই শুরু হলো ভাঙা মন নিয়ে, বসে বসে খোকন ভাইয়ের টাইম লাইন দেখছিলাম, নিশির সাথে এরকম কোন ফটো আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করলাম। খুঁজে পেলাম না, ক্যাজুয়ালি পাশাপাশি দাঁড়ানো দু একটা আছে বটে কিন্তু আমি জানি বরের সাথে ছবি তুলতে নিশি কি ভালোটাই না বাসতো। গ্রুপের আড্ডাতেও দেখেছি, নিশি ফটো তুলতে চাইলে, বয়স হয়েছে, এসব কি বলে খোকন ভাই এড়িয়ে যেতো। শুধু কি তাই, নিশি নিজের ছবি আপ্লোড করলেও বিরক্ত হতো। গ্রুপে আমরা ক্ষ্যাপাতাম, কি করে, বরের জন্মদিনে স্পেশাল কি কি করলি, ছবি দিলি না? খেতে না হয় নাই ডাকলি, দেখতে তো পেতাম, সবই গোপন নাকি? কাঁচুমাচু নিশির জবাব, খোকনের পছন্দ নয়রে তাই দেই না। ছবি তুলতেই তো চায় না, দেবো কি? খোকন ভাইয়ের ট্যাগ করা নাম ধরে তার নতুন পার্টনারের ইনফো দেখেতো রীতিমত ধাক্কা খেলাম আমি। বউ প্রকৌশলী, মাল্টি ন্যাশনালের সিনিয়ার কনসালটেন্ট। পেশাগত কারণে নানা জায়গায় ট্রাভেল, রেস্টুরেন্টে ডিনার ইত্যাদির প্রচুর ছবি তার টাইমলাইনে দেয়া আছে। ছেলেমেয়ে একটু বড় হওয়ার পর নিশিও শখ করলো অন্য সবার মত সে ও কিছু একটা করবে। এম-এ পাশ করেছে, তারও কিছু স্বপ্ন আশাতো ছিলো। সেটা শুনেই শ্বশুর-শাশুড়ি ভ্রু কুঁচকে ফেললো, তোমার বাচ্চাদের কে দেখবে? এ বয়সে আমরা কোন দায়িত্ব নিতে পারবো না। মেনিমুখো আপোষকামী নিশি সেবার বাবা-মায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলো, মা, আমার বাচ্চাদের তুমি স্কুলের বাইরের টাইমটা দেখে রেখো, আমি ফেরার সময় নিয়ে যাবো। নিরীহ বাবা-মা, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, শ্বশুর-শাশুড়ি যখন চায় না তখন থাকুক, কিসের অভাবে চাকুরী করবে, কি নেই নিশির? খোকন ভাইতো সরাসরি বলেই দিলো, সবতো চলছে ঠিকঠাক তবে কেন সংসারে অশান্তি ডেকে আনা? একজন মায়ের দায়িত্ব কি কম? একজন কর্মজীবি মা হওয়ার চেয়ে একজন সফল মা হওয়া অনেক সম্মানের। বরবারের মত নিশি আপোষ করে নিলো। ক’দিন পর আবার আমার ফেসবুকের হোমফীডে খোকন ভাই আর তার নতুন পার্টনারের ছবি ভেসে এলো। গার্লিক এন্ড জিঞ্জার রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে পরিবারের সবাইকে নিয়ে, নানা রকম খাবারের ছবি সাথে আবার নিজেদের সেলফিও পোস্ট করেছে। আনমনে ভাবছিলাম, শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরের খাবার পছন্দ করে না বলে, সারা জীবন হাত পুড়িয়ে রেঁধে গেলো মেয়েটা অথচ বাইরে খেতে কি পছন্দই না করতো। নানারকম কুজিনের প্রতি কি আগ্রহ, ইউটিউব দেখে দেখে সেসব ট্রাই করা। রেঁধেই প্রথমে শ্বশুরকে দিতো, খাইয়ে যে কি সুখ পেতো। অথচ আজ সবাই হাসিমুখে একসাথে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে। সমুদ্রের প্রতি কি ফ্যাসিনেশান যে ছিলো মেয়েটার। ফেসবুকে কেউ সী-সাইডে বেড়াতে যাওয়ার ছবি আপ্লোড করলে, কত আবেগী মন্তব্য করতো। শ্বশুর-শাশুড়িকে কার কাছে রেখে যাবে, তাদের কে দেখবে করে সমুদ্রে যেতে পারলো না নিশি। পাগলী পুরোটা সময় সংসারের জন্যেই বাঁচলি নিজের জন্যে খানিকটা সময় বাঁচলি না কেন তুই? কোথাও থেকে দেখে কি আফশোস করছিস? সুযোগ পেলে বদলে বাঁচবি ভাবছিস? খাঁ খাঁ নির্জন দুপুরে জানালার পাশে লো ভলিউমে চিত্রা সিং এর গান বাজছিলো, বুকটা ভাঙা ভাঙা লাগছিলো, মনে করো যদি সব ছেড়ে হায় চলে যেতে হয় কখনো আমায় মনে রবে কি রজনী ভরে নয়ন দুটি ঘুমে জড়াতে নিশি রাতে কে গান শুনাতো। কান্না চাপতে চাপতে তাই খোকন ভাইকে আনফলো করে দিলাম। নিশি নেই, অম্ল মধুর স্মৃতিটুকু থাকুক, তাতে কাঁটা মেশাতে চাই না। তানবীরা ১২/০৯/২০২০

Saturday 5 December 2020

যখন আমি থাকবো নাকো

কয়েক বছর আগের কথা, নিশি পঞ্চাশে পা দেয়ার কিছুদিন পরই হঠাৎ অসুস্থ হলো, আট দিনের অসুস্থতায়, মারা গেলো। গ্রুপে ম্যাসেজ এলো, “শি ইজ নো মোর”, “রেস্ট ইন পিস” ইত্যাদি। দু মাস পর আমি নিশির বরকে ফোন করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, ওকে যেহেতু কাজের জন্যে অনেক ট্রাভেল করতে হয়, ঘর আর চাকুরী সামলে বোধহয় একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বেচারা। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নিশিইতো সব দেখাশোনা করতো। সংসার, বাচ্চাদের পড়াশোনা, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা, তাদের অসুস্থতা, আত্মীয়-স্বজন, লোক-লৌকিকতা, সবকিছু, সবকিছু, সবকিছু। সবসময় বলতে থাকতো, বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারি নারে, আমাকে ছাড়া দুদন্ড চলে না। আমার বর তো চা-টাও বানিয়ে খেতে পারে না। সবাই সবকিছুর জন্যে আমাকেই ডেকে বেড়ায়। কিন্তু জানিসতো, এই যে সারাদিন বেগার খাটি তার জন্যে কারো কোন প্রশংসা পাই নারে, সবাই ভেবে নেয়, সবকিছু আমার দায়িত্ব। আমি নিশির বরকে ফোন করলাম, খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে, কোন কিছুর দরকার আছে কি না? যদি আমি কোনভাবে কোন সাহায্য করতে পারি। ভাবলাম, হঠাৎ করে একসাথে এত দায়িত্ব, নিশির বর বেচারা বোধহয় একেবারে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। বয়স্ক বাবা মা, বাচ্চা, অফিস ট্যুর, এ বয়সের একাকীত্ব, সব কি করে একা সামলাবে! মোবাইল একটানা বেজে গেলো, কেউ ধরলো না। এক ঘন্টা পর কলব্যাক করে ক্ষমা চাইলো সময়মত ফোন ধরতে পারেনি বলে। বললো, রোজ এক ঘন্টা করে টেনিস খেলা শুরু করেছে, বন্ধুদের সাথে আড্ডাও হয়ে যায়, সময়টা ভাল কাটে। চাকুরীতে ট্রান্সফার নিয়েছে, আগের মত আর এত ট্রাভেল করতে হয় না। জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িতে সবাই ভাল আছে? বললো, রান্নার একজন লোক রেখে দিয়েছি, কিছু বাড়তি টাকা দেই, বাজারটাও সেই করে। বয়স্ক বাবা মায়ের দেখাশোনার জন্যে দিনরাতের আয়া রেখে দিয়েছি। বাচ্চারাও ভাল আছে, সব চলে যাচ্ছে, জীবন আবার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসছে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না, কোনরকমে দু-চারটে কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিলো। বারবার নিশির কথা মনে পড়ছিল, শাশুড়ির সামান্য অসুস্থতায় স্কুল পুর্নমিলনী বাদ দিয়ে দিলো, বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করছিলো তাই নিজের ভাতিজির বিয়েতে যায়নি। বন্ধুদের সাথে কত আড্ডা, সিনেমা, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে দিয়েছে, কারণ বাচ্চাদের পরীক্ষা, রান্না করতে হবে, স্বামীর জন্যে এটা ওটা কত কি দরকারী কাজ। শুধু চাইতো, পরিবারের লোকেরা তার একটু প্রশংসা করুক, তার একটু মূল্য দিক, কিন্তু কখনোই সেটা সে পায়নি আজ মনে হচ্ছে নিশিকে ডেকে বলি, এই পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়রে পাগলী। কারো জন্যে পৃথিবীতে কিছু আটকে থাকে না। আমি না থাকলে কি হবে এটা আমরা ভেবে নেই। হয়ত নিছক নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া। সবসময় অন্যেদের গুরুত্ব দেয়ার জন্যে নিজেকে একটা কিছু দিয়ে বুঝিয়ে নেয়া। তুই নিজেই বুঝিয়েছিস সবাইকে, তোরটা পরে, তাদেরটা আগে। বাস্তব মেনে নেয়া কঠিন। তোর মৃত্যুর পর দুজন গৃহকর্মী এসেছে, বাড়ির সব কাজ ঠিক আগের মতই চলছে। আমাদের সম্মান, আমাদের মূল্য, আমাদেরকেইতো তৈরী করতে হবে, নয় কি? বাকিদের বলছি, জীবনকে উপভোগ করতে শেখো, আমাকে ছাড়া সংসার চলবে না ভাবনাটা বাদ দাও, দিনের শেষে সব চলে যায়। নিজেকে সময় দাও, নিজের জন্যে বাঁচো। বন্ধুদের সাথে বাইরে যাও, কথা বলো, আনন্দ করো। নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দাও, মাঝে মাঝে পছন্দের জিনিস নিয়ে সময় কাটাও। সবসময় অন্যের মাঝে নিজের সুখ খুঁজতে যেও না, তোমার নিজেরও সুখের দরকার আছে, নিজে সুখী না হলে অন্যকে কি করে সুখী করবে? সবার যেমন তোমাকে প্রয়োজন, নিজেকে সময় দেয়াও তোমার প্রয়োজন। যেসব মেয়েরা সমস্যায় আছে তাদের সাহায্য করো। চলো সবাই মিলে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলি। সবার শেষে বলি, জীবন আনন্দময় মূলভাবঃ অন্তর্জাল

Thursday 3 December 2020

মূর্তি বনাম ভার্স্কয

আগে বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে শুনলে বিরক্ত হতাম। ভাবতাম, আমরা তো ভালোই আছি, আসবে এখন নাক উঁচু করে ডার্টি ডার্টি বলতে। তারা খাওয়ার টেবিলে বসে দেশ এবং বিদেশ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতো আর হাসি হাসি মুখ করে আমরা যথারীতি তাদের অপছন্দ করতাম। এখন কপালের ফেরে বাইরে থেকে তাদের দলে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করলাম। পৃথিবীর যত ক’টা শহরেই গেছি, ছোট কিংবা বড় প্রায় সব শহরেই ছোট-বড় তাদের শহরের কিংবা দেশের বিখ্যাত লেখক, শিল্পী, গায়ক, নায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রেসিডেন্টের মূর্তি আছে। হ্যাঁ, আমিতো ফাইন আর্টস কিংবা ধর্মের ছাত্রী না, আমার কাছে মূর্তিও ভাস্কর্য এবং বেশ নয়নাভিরাম ভার্স্কয। রাধাকৃষ্ণ, গনেশ, নটরাজের কি সুন্দর সুন্দর চোখ কেড়ে নেয়া শৈল্পিক ভার্স্কয আছে, তাকিয়ে থাকার মত। গ্রীকদের কথা আর নাই টানলাম। আফ্রোদিতি থেকে লাওকুনের লাইমস্টোন, মার্বেলের তৈরী মূর্তি ছুঁয়ে দেখে না এরকম কম পর্যটকই আছে। শত শত স্যুভেনীওর বিক্রি হয়, মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতি বছর। ছোট ছোট চত্বরে পর্যটকরা জাস্ট মূর্তির সাথে ছবি তোলে আর বড় বড় চত্বরে ক্লান্ত পর্যটকরা দুদন্ড বসে, জিরায়, পানি বা খাবার খায়, অবশেষে ছবি তুলে বিদায় হয়। এর বাইরে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোন উপযোগিতা আছে বলে আমি দেখিনি, শুনিনি। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে, তাদের সুবিধার জন্যেও বিভিন্ন শহরে পৌরসভা নিজ দায়িত্ব ও খরচে এগুলো তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষন করে, রাষ্ট্রের ব্যাপারও না। নরওয়ের ছোট শহর সিয়েন লেখক হেনরিক ইবসেনের স্ট্যাচু বানিয়ে রেখেছে বলেই জানলাম তিনি এই শহরে জন্মেছিলেন, অপূর্ব সুরের জাদুকর নিজে বধির ওলফগ্যাংগ আমাদিউজ মোর্জাট সালর্সবুর্গে জন্মেছেন সেটা শহরে তার মূর্তি দেখে জেনেছি, চার্লি চ্যাপলিন সুইজারল্যান্ডের কোর্সিয়ার সার ভেভেইতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, সেই শহরে তার মূর্তি দেখেই জেনেছিলাম। ইতিহাস জানানোর খুব সহজ উপায় হলো মূর্তি। এরকম একটা আনপ্রোডাক্টিভ খাতে যে দেশে সপ্তাহভর টকশো চলতে পারে, তাও দুই হাজার একুশের দোর গোড়ায় তাদের জন্যে মামুন মারুফের ভ্যাক্সিনের ফর্মূলাই ঠিকাছে। সামনের সপ্তাহ থেকে ইউকে টিকা দেয়া শুরু করবে বলছে, হুজুরের ফর্মূলাটা যেনো কি ছিলো? মিলায়া দেখা দরকার লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, পনের বছর ক্ষমতায় থাকার পর বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নিয়ে যদি এই অবস্থা হয়, সনাতন ধর্মালম্বীরা দেশে কি অবস্থায় আছে খুব সহজেই অনুমেয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, রোহিংগাদের মত আলাদা ভাসানচর তৈরী করা হোক। ******************************* মূর্তি বনাম ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে কচলাকচলি দেখি থামে নাই এখনো। "ভার্স্কয যে মূর্তি না" সুশীল সমাজের এটা প্রমাণের প্রাণপাত চেষ্টায় একটা পুরনো কৌতুক মনে পড়ে, হুজুর তার বউরে হাদিস শুনাইছিলো, রাত বারোটার পর চুরির মুরগী খাওয়া হালাল। সেই সূত্রানুসারে, মূর্তি হইলে ভাঙা জায়েজ? বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে যাহা মূর্তি, তাহাই ভাস্কর্য, উহাই স্ট্যাচু। কথা হইলো, হুজুর সমাজ রাস্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাইতে পারে কি না? বাংলাদেশের সংবিধানে মূর্তি ভাঙা পারমিটেড কিনা। স্মৃতি যদি ধোঁকা না দেয়, আমাদের ছোটবেলায় যা দুই-একটা নির্বাচন, প্রায় ঠিকঠাক টাইপ হয়েছিলো, একটা প্রবাদ বাক্যের মত ছিলো, নন মুসলিম ভোট সব নৌকায় যাবে, একমাত্র নৌকার দলীয় সংবিধানে “ধর্মনিরপেক্ষতা” শব্দটির উল্লেখ আছে। পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখা বঙ্গবন্ধু এ পরিস্থিতি হয়ত স্বপ্নেও ভাবেন নাই। হুজুরদের কেন জানানো হচ্ছে না, আইয়ামে জাহলিয়াতের যুগ পার হয়ে পৃথিবী এখন সামনে এগিয়ে গেছে। ধর্ম নিরপেক্ষ কিংবা ধর্মহীন লোকেরা উপসনালয় ভাঙে না কিংবা এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি হিংস্রতা দেখায় না। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী, “যত মত তত পথ” সভ্য সমাজে, একটা স্বীকৃত পন্থা। পরমতসহিষ্ণুতা সমাজে বাস করার প্রথম শর্ত, পছন্দ না হলেই কোপানো বা ভাঙা যায় না। হুজুররা যদি তাদের ইল্যুশান থেকে বের হতে না চায়, সেটাও ভালো, ভাসানচরের মত তাদের আলাদা একটা হৌটি আরব কিংবা হাক্কা বা হাদিনা তৈরী করে দেয়া হোক। সাথে উষ্ট্র আর তরবারীও দেয়া হোক, তাদের জগতে তারা সুখে শান্তিতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলুক। শুধু বাইরে থেকে লক করে দিতে হবে, বের হতে পারবে না। বারো মাসে তের পার্বণের এই দেশে ইস্যুর অভাব নেই। মূর্তির সুরাহা হওয়ার আগেই শুরু হলো টিএসসি নিয়ে। দেশের বাইরে থেকে মেহমান এলে যারাই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর দেখেন, প্রায় প্রত্যেকেই বলেন, ঢাকার ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট পার্ট। নতুন নতুন হাইরাইজ তোলাতে বিশ্বাসী এমেরিকানরা প্রায় তিনগুন বেশি এক্সপেন্সিভ জানা সত্বেও, ইউরোপের পুরনো চার্চ, ক্যাসেল, কলোসিয়াম দেখার জন্যে প্রতি গরমে ভীড় করে। বিশ্বব্যাপি পুরনো ঐতিহ্য লোকে রক্ষা করে। প্রয়োজনে হাইরাইজ সহ নতুন স্ট্র্যাকচার আসবেই, সেটাকে ঐ জায়গাতেই হতে হবে? নতুন ভবনের জন্যে নতুন জায়গা নেই? ভাস্কর্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা ভবন কোনটাই আমাদের হাতে নিরাপদ নয়, আমরা এমন কেনো?

Wednesday 25 November 2020

The Dunning-Kruger Effect

সক্রেটিস বলেছিলেন, দ্যা ওনলি ট্রু উইজডোম ইজ নোয়িং হোয়েন ইউ নো নাথিং। কিন্তু আমরা ভাবতে চাই, আমরা সব জানি। উনিশো পচানব্বই সালের উনিশে এপ্রিল, ম্যাকার্থার হুইলার নামের এক ব্যক্তি দুটো ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেন। ডাকাতির সময় তিনি নিজেকে লুকানোর কোন চেষ্টা করেননি, মুখে কোন ধরনের মুখোশ পরেননি, পরচুলা লাগাননি, এমনকি বের হবার সময় সিকিউরিটি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হেসেও ছিলেন। কিন্তু মুখে লেবুর রস মেখেছিলেন। তার ধারনা ছিলো মুখে লেবুর রস মাখা থাকলে কোন ধরনের সিকিউরিটি ক্যামেরায় তার চেহারা ধরা পরবে না। তিনি এই ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, পুলিশ ধরার পর তিনি হতবিহবল হয়ে যান। লেবুর রসের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে তাঁর ভুল ধারনার কারণে এই বিশ্বাসটি তৈরি হয়েছিল। কগনিটিভ বায়াস। চিন্তার নিয়মতান্ত্রিক ত্রুটি থেকে মানুষ তার চারপাশে যা দেখে সেটাকে সে নিজের মত ভাবে এবং সেই ভাবনার ওপর আস্থা রেখে সিদ্ধান্ত নেয়, রায় দেয়, তৈরি হয় কগনিটিভ বায়াস। কগনিটিভ বায়াস আমাদের বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে, আমরা এমন কিছুতে আস্থা রাখি যা সত্য নয়। এই কারণে আমরা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই যা ক্ষতিকর। “বিলিভিং ইউ নো সামথিং দ্যাট ইউ ডোন্ট” কল্ড ডানিং-ক্রুগার এফেক্ট। সবাই , ম্যাকার্থারের ব্যাপারটি নিয়ে হইচই করে ভুলে গেলেও ব্যাপারটি ভাবায় দুই সামাজিক মনোবিদ ডেভিড ডানিং আর জাস্টিন ক্রুগারকে। উনিশো নিরানব্বই সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা দুজন এই নিয়ে তাদের গবেষণা প্রকাশ করেন।
অল্প বিদ্যা আর দক্ষতা নিয়ে মানুষ ভাবে তারা অন্যেরা চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরী কিন্তু সাথে এটা জানা থাকাও দরকার আমরা আসলে কতটুকু জানি। ডানিং-ক্রুগার এফেক্ট পুরুষ-নারী সবারই আছে। ডানিং-ক্রুগারের মজাদার তথ্য হলো, যারা আসলেই অনেক জানে তারা ভাবে তারা কম জানে। আমি কিছুই জানি না এইটুকু জানতে হলেও তোমাকে কিছু জানতে হবে। আর যারা বাস্তবেই কম জানে, তারা সেটা মানতে চায় না, সমালোচনা নিতে পারে না, নিজেকে উন্নত করার প্রতি কোন আগ্রহও থাকে না তাদের।
নিজেকে এর থেকে রক্ষা করতে হলেঃ নিজের মেধা সম্পর্কে জানতে হবে দুর্বলতাগুলোও জানতে হবে সমালোচনা গ্রহণ করতে জানতে হবে গোটা জীবন শিখে যেতে হবে আঠারশো একাত্তর সালে চার্লস ডারউইন লিখেছিলেন, ইগনোরেন্স মোর ফ্রিকোয়েন্টলি বিগেটস কনফিডেন্স দ্যান ডাজ নলেজ। দুই হাজার সালে এই দুই গবেষককে এই থিওরীর জন্যে "Ig Nobel" দেয়া হয়েছিলো যেটা স্যাটায়ারিক নোবেল" আর দুই হাজার সতেরতে এই থিওরীর ওপর ভিত্তি করে বানানো অপেরা নোবেল প্রাইজ সেরিমোনিতে পার্ফম করা হয়। তথ্যঃ অন্তর্জাল ২৫/১১/২০২০

বরুণবাবুর বন্ধু

তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম তুমি রবে নীরবে নিবিড়, নিভৃত, পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম আ হার্টফেল্ট ট্রিবিউট টু এন আনপ্যারালাল এক্টরঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বরুণবাবুরা আজ আছেন শুধু সিনেমায়, বইয়ে আর ইতিহাসের পাতায়। এরকম ত্যাগী নেতাদের কথা বইয়ে পড়েছি, পরীক্ষায় লিখেছি, নম্বর পেয়ে পাশ করে নিজেরা দুনম্বর তৈরী হয়েছি। তবুও এদেশের লোকেরা জানুক, পরবর্তী প্রজন্ম জানুক এরকম নির্লোভ, নীতি-আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষ এই ভারতবর্ষে, এই বাংলায় সত্যিই ছিলো। এথিক্স তারা নিজেদের জীবনেই পালন করেছেন শুধু ফেসবুকে লেখেননি। আর সৌমিত্রের চেয়ে এই চরিত্রে কাকে বেশি মানাতো! ভারতজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও গণপিটুনি বন্ধের দাবি করে এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর প্রতিবাদ করে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে লেখা চিঠির উনপঞ্চাশজনের তিনিও একজন যাকে পরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হতে হয়েছিলো। অনীক দত্ত পরিচালিত 'বরুণবাবুর বন্ধু' দেখানো হয়েছে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল অফ সিনসিনাটিতে। গত বছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল এই ছবি। মুম্বইয়ের থার্ড আই এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। মূল চিত্রনাট্য অনীক দত্ত আর উৎসব মূখোপাধ্যায়। তিন প্রজন্মের গল্পে সব জেনারেশনের প্রকৃতিই তুলে ধরা হয়েছে। যদিও গল্পটি কোলকাতার এক পরিবারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, তবে বাংলাদেশের জন্যেও গল্পটি প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে সত্য। রাষ্ট্রপতি প্রনব মূর্খাজি’র কাল্পনিক উপস্থিতি সিনেমাটিকে জীবন্ত করে রেখেছিলো। এই বয়সেও সৌমিত্রের মত অভিনেতাকে পয়সার জন্যে অভিনয় করতে হয়েছে তার ভাষ্যমতে। ব্যাপারটা আমার গোলমেলে ঠেকে। "বেলাশেষে, প্রাক্তন, বসু পরিবার" এর মত ছবিতে তাকে যুক্ত হতে দেখে যারপর নাই ব্যথা অনুভব করেছি কিন্তু “বরুণবাবুর বন্ধু” সেই দুঃখ মুছিয়ে দিয়েছে। সমালোচকদের মতে তার অভিনীত সেরা পাঁচের মধ্যে আছে এই ছবি, আমি দর্শক হয়ে বলছি, আরও একটি "সৌমিত্র" ছবি। তবে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সৌমিত্রের সাথে পাল্লা দিয়েছেন, অপূর্ব। শান্ত আবারো ভালবাসা রইলো।

Tuesday 17 November 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – সতেরই (নভেম্বর)

প্রিমিয়ে মার্ক রুতে সংক্রমণের মাত্রা এখনও বিপদজনক তবে কমতে শুরু করেছে, দুটো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আলোচনা করার অনেক কারণ আছে আজ। আংশিক লকডাউন নিয়ে আজ আমি আমার অবস্থান পরিস্কার করবো। মানুষ নিয়ম মানছে, সংক্রমনের মাত্রা একের নীচে এসে গেছে। সবাইকে এই জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক না তাই কঠোরভাবে নিয়মগুলো পালন করা দরকার। হাসপাতালগুলো এখনো চাপে, অনেক অপারেশান দ্বিতীয়-তৃতীয়বারের মত ক্যান্সেল করতে হয়েছে, করোনা ছাড়া অনেক রোগীই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। তাদেরকে বলছি, সময়মত ডাক্তারের কাছে যান যাতে পরে ভয়ানক কিছু এড়ানো যেতে পারে। বাসায় তিনজন মেহমান ডাকা যাবে, বাসার বাইরে আবার চারজনের সাথে আড্ডা মারা যাবে। চিড়িয়াখানা, লাইব্রেরী, যাদুঘর, সুইমিংপুল, থিয়েটার, সিনেমা ইত্যাদি আবার ম্যাক্সিমাম ত্রিশজনের জন্যে খোলা হবে। রেস্টুরেন্ট, ইভেন্টস, খেলাধূলা বন্ধ থাকবে। রাত আটটার পর বাসার বাইরে কোন এলকোহল নিষিদ্ধ। প্রথম ডিসেম্বর থেকে সুপারমার্কেটসহ অন্যান্য পাব্লিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সিন্টারক্লাশ এবার এই নিয়মের মধ্যেই পালন করতে হবে। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ং ছয়টি ভ্যাক্সিন প্রোডাকশান কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা হয়েছে যাতে দ্রুত ভ্যক্সিন পাওয়া নিশ্চিত করা যায়। ইউরোপীয়ান কমিশন যখন ভ্যাক্সিন এপ্রুভ করবে তখনই ভ্যাক্সিন পাবো তার আগে পাওয়া যাবে না। পুরো নেদারল্যান্ডসের মানুষকে একসাথে ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় প্ল্যানিং করছে সামনের বছরের প্রথম দিকে ভ্যাক্সিন পাওয়া গেলে কত দ্রুত সবাইকে ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে। ততদিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখতে পরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হয়েছে, এক্সেল টেস্ট কিটের মাধ্যমে সাথে সাথে ফল জানা যাবে। প্রথম ডিসেম্বর থেকে করোনা এপসের মাধ্যমে যখন জানা যাবে কেউ সংক্রমিত রোগীর পাশে এসেছিলো, তার কোন উপসর্গ না থাকলেও পাঁচ দিনের দিন তাকে পরীক্ষা করতে হবে। আর এই পাঁচ দিন তাকে বাসায় কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে। পরীক্ষা নেতিবাচক হলে কেয়ারন্টিন আর দরকার হবে না। আর ইতিবাচক হলে দশ দিন কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে। প্রতিদিন গড়ে চার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, যদি এই সংখ্যা নীচের দিকে নামে তবে ক্রিসমাসের সময় কিছু নিয়ম সাময়িকভাবে শিথিল করা যায় কিনা দেখা হবে। যারা একা থাকেন, এই অন্ধকার দিনগুলোতে একাকীত্ব অনুভব করেন তাদের জন্যে এ সময়টায় আশেপাশে কিছু মানুষের উপস্থিতি থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কোন তৃতীয় ঢেউ চাচ্ছি না। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ার সেলিব্রেশান নিয়ে আটই ডিসেম্বরে কথা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর: জানুয়ারী পর্যন্ত কি এই কড়াকড়ি থাকবে? আমরা আশাকরছি জানুয়ারীর মধ্যে আমরা আমাদের টার্গেটের মধ্যে পৌঁছতে পারবো, যতদিন সে লক্ষ্যে না পৌঁছতে পারবো, কড়াকড়ি থাকবে। নেদারল্যান্ডস কোন দ্বীপ না, আশেপাশের দেশদের দেখলে দেখা যাবে সেখানে আরও কত বেশি কড়াকড়িতে আছে সবাই, জার্মানীতে আরও কি কি বন্ধ করে দেয়া যায় তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সুইডেনও তাই, অস্ট্রিয়া আর লুক্সেমবার্গে আজ থেকে পুরোপুরি লকডাউন, সেদিক থেকে দেখলে ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডস অনেক ভাল আছে। আটই ডিসেম্বরের মধ্যে তিন হাজার ছয়শোর নীচে সংক্রমণ নামলে, দশ জনের নীচে রোগী আইসিইউতে এলে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ারে শিথিলতার করা ভাববো। *** আমার টিপ্পনী, নেদারল্যান্ডসের করোনা নিয়মনীতির অবস্থা খানিকটা ছোটবেলার এরিথমেটিক বইয়ের বান্দরের তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্কের জায়গায় দাড়িয়েছে। বাঁশ বেয়ে ওপরে উঠে তারপর নামে, সংক্রমণ কমলেই এটা ওটা খোলে দুই সপ্তাহের জন্যে তাতে সংক্রমণ বাড়লেই আবার বন্ধ করে দুই সপ্তাহের জন্যে। প্রতি দুই সপ্তাহে মনে রাখতে হয়, এ সপ্তায় কি কি এলাউড আর কি কি না।“ তবে প্রিমিয়ে আর ভাইস প্রিমিয়ের লাইভের নীচে যা যা কমেন্ট পরে তাতে শিউরে ওঠে আমি ভাবি, বাংলাদেশে হলে অবমাননার দায়ে চৌদ্দ গুষ্টি জেলে ভরে রাখতো। ভাইস প্রিমিয়ে যখন ভ্যাক্সিনের কথা বলছে, নীচে কমেন্ট ভেসে উঠেছে, তোকে কে বলেছে সবাই ভ্যাক্সিন নেবে? আমি তো ভ্যাক্সিন নেবো না, আমার ভ্যাক্সিন তোর পেছনে দেবো শালা!

Thursday 12 November 2020

বিষফোঁড়া

“ইট ডাজ নট ম্যাটার ইফ ইট ইজ আ বয় অর আ গার্ল, হোয়েন আ প্রিস্ট ডাজ টু ইউ, ইট ইজ নট অনলি ফিজিক্যাল এবিউজ, ইট ইজ স্পিরিচুয়্যাল এবিউজ টু" ফ্রম দ্যা মুভি "স্পটলাইট" পড়লাম কওমী মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিয়ে সাইফুল বাতেন টিটো'র লেখা নিষিদ্ধ উপন্যাস "বিষফোঁড়া"। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই একবিংশ শতাব্দীতে, মধ্য আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ, যে জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, তার আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ বাচ্চা কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে!!!!!! পিতৃমাতৃহীন অসহায় শিশুগুলোর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে পশুর মত এদের বেঁচে থাকা! লেখক বলেছেন, উপন্যাসটি একশো ভাগ সত্যির ওপর দাঁড়িয়ে লেখা তবে এই উপন্যাসে পাশবিকতার বিশ ভাগ মাত্র উঠে এসেছে, বাকি আশি ভাগ অজানা, ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই যদি হয়, বাংলাদেশের চাই এখন দ্যা বোস্টন গ্লোবের মত সংবাদপত্র, যারা এই মাদ্রাসাগুলোর ভেতরে কি কি হচ্ছে তার প্রকৃত চিত্র তুলে আনবে। চাই টমাস জোসেপ ম্যাককার্থির মত চলচিত্র নির্মাতা যে বিশ্ববাসীকে জানাবে কি ঘটে চলছে সেখানে। আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, আমরা মাস মাস এত এত টাকা দান করার পরও এই শিশুগুলো কেন এত দরিদ্র জীবন যাপণ করে? কোথায় যায় এই টাকাগুলো? "বিষফোঁড়া"কে ভিত্তি হিসেবে ধরলে কওমী মাদ্রাসার অপকর্মের পটভূমি হিসেবে যে কারণগুলো আমার চিন্তায় উঠে আসে ১। আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা (ছাত্র-শিক্ষক), ২। নিদারুণ হতদরিদ্র সব ছাত্র (কিছু শিক্ষক), ৩। জবাবদিহিতা নেই, ৪। অশিক্ষা (ভবিষ্যতের উন্নত জীবনের কোন স্বপ্নই যেখানে নেই, ৫। সুস্থ চিত্ত বিনোদনের চরম অভাব। আমি এই হত দরিদ্র, অসহায় শিশুগুলোর সর্বাঙ্গীন মংগল কামনা করছি। ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা, সৃষ্টিকর্তা তাদের রক্ষা করতে না পারলেও, আশা করছি তাদের মধ্যে সবাই উপন্যাসের বর্নিত খাদেম তৈরী হবে না, কেউ কেউ অন্তত মানুষের ধর্ম পালন করতে সচেষ্ট থাকবে।

Saturday 7 November 2020

কার্টুন আর নেদারল্যান্ডস

রোটারডামের এমাউসকলেজ ও ডেনবোসের (স্কুলের নাম অপ্রকাশিত) স্কুলে “ফ্রীডম অফ স্পীচ” নিয়ে আলোচনায় শার্লি হেব্দোর কার্টুন দেখানোর প্রতিক্রিয়ায় দুই স্কুলের টিচারকেই হুমকি দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে ক্যাবিনেটে উত্তপ্ত আলোচনার পর প্রেসের মুখোমুখি মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট মার্ক রুতে। ভিয়েনার ইনসিডেন্টের পর সে দেশের সরকারের সাথে কথা হয়েছে, নিহত ও আহত সবার প্রতি নেদারল্যান্ডসের জনগনের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন এই বলে স্পীচ শুরু করেন রুতে তারপর বলেন, দুঃখজনক কিন্তু সত্য হলো, আমরা নিজেদের মত চিন্তা করতে এবং নিজেদের মতামত দিতে ভালবাসি, একদল মানুষ সেটা পছন্দ করে না। কিন্তু আমাদের সমাজ, বিশ্বাস, চিন্তাধারা আর মূল্যবোধ আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার স্বাধীনতা আমাদের শিক্ষকদের থাকতে হবে। শিক্ষকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং তাদের ভয় দেখানো বরদাস্ত করা হবে না। রোটারডামের শিক্ষক ভয়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছে। স্কুলের অন্যান্য বাচ্চারা, তাদের গার্জেনরা, অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীরাও দারুণ ভয়ে আছেন আমি তাদের জানাতে চাই, পুরো ক্যাবিনেট তাদের সাথে আছে। আরও বলতে চাই, “ফ্রীডম ও স্পীচ” নিয়ে কোন ধরনের সমঝোতা হবে না। হতে পারে একজনের মতামত অন্যজনের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করছে কিন্তু সেটা নির্ভয়ে বলার তার অধিকার আছে, তা নিয়ে কাউকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। কারণ, নির্ভয়ে চিন্তা করা কিংবা কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে আমরা সামনের দিকে আগাতে পারবো না, আমাদের সমাজ সামনে আগাবে না। ফ্রীডম অফ স্পীচ, নির্ভয়ে স্কুলে শিক্ষাদান, নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার স্বাধীনতার ওপর আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজ দাঁড়িয়ে আছে। স্কুল ছাড়া কোথাও এগুলো শিক্ষাদানের জায়গা নেই বলে শিক্ষকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। সুনাগরিক তৈরীতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় স্কুল, ক্লাশ, পড়ানোর বিষয় ইত্যাদিতে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বরং আমি বলবো অত্যন্ত পবিত্র তাই এখানে ভয় দেখানো, হুমকি, সহিংসতার কোন স্থান নেই। শেষ করছি, এমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে, আমরা সবাই নেদারল্যান্ডস থেকে খুব গুরুত্বের সাথে নির্বাচন প্রত্যক্ষ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এমেরিকা আমাদেরকে শত্রুদের থেকে উদ্ধারে সাহায্য করেছিলো, ইউরোপের অর্থনীতি অনেকটাই এমেরিকার ওপর নির্ভরশীল তাই বলতে চাই, ট্রাম্প বা বাইডেন যেই আসুক, আমরা এমেরিকার সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো। “ফ্রীডম অফ স্পীচ” নিয়ে কি শিক্ষকরা নিজেরা পাঠের উপাদান বানাতে পারে? এই নিয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না শুধু বলতে চাই এখানে আমি প্রতিবন্ধকতা বা বাঁধা দেয়ার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। এমেরিকার নির্বাচন নিয়ে জিজ্ঞেস করছি, প্রেসিডেন্ট ভোট গননা বন্ধ করে দিতে বলছেন, বলছেন মিথ্যেবাদীদের কোন দায়িত্ব তিনি নেবেন না। গনতন্ত্রের কালো পিঠ নিয়ে আপনার কি মতামত? আমি নেদারল্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট, আমার দায়িত্ব জয়ী প্রার্থীর সাথে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ হয়ে কাজ করা এর বাইরে আমি তাদের দেশের ভেতরের রাজনীতিনিতে নাক গলাবো না। কিন্তু আপনি গনতন্ত্রের কথা বলছেন, নিজের দেশের নির্বাচনকে “প্রতারণা” বলা কতটা গনতান্ত্রিক? আমি শুধু বলবো এটি একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য কিন্তু তার বাইরে কিছুই বলবো না। শিক্ষকদের রক্ষা করতে আপনি কি করবেন? হুমকি থাকলে প্রথমে এজাহার দেখে পুলিশ সেটার দায়িত্ব নেবে। প্রতি ক্লাশে প্রতি শিক্ষকের পাশে একজন নিরাপত্তারক্ষী দেয়া তো সম্ভব না, ক্যাবিনেট থেকে দুইজন শিক্ষকের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাদের অভয় দেয়া হয়েছে কিন্তু আমি সবাইকে বলে দিতে চাই, কোন ধরনের সহিংসতা এবং ভয় দেখানো সহ্য করা হবে না। ক্লাশে ছাত্র-ছাত্রীরা বইয়ের ছবি তুলে ইন্টারনেটে দিচ্ছে হয়ত না বুঝেই দিচ্ছে এই ব্যাপারে? এটি নিয়ে অনুসন্ধান চলছে, এটি শেষ হওয়ার আমি কিছু বলতে চাই না। আমি জানি আপনি এই ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চান না, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পাশাপাশি আপনি এই দেশের শিক্ষকদের সহকর্মীও বটে। আপনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে, কোন একটি ক্লাশে তো কার্টুন দেখাতে পারেন। এ কাজ করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। একজন প্রেসিডেন্টের কোন ক্ষমতা নেই! হ্যাঁ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লাশ যেয়ে কিছু করতে অবশ্যই আমি ক্ষমতাহীন কিন্তু এর বাইরেও আমি আমার সহকর্মীদের বলতে চাই, আমি মার্ক রুতে, সরকার, ক্যাবিনেট, জনগন সবাই তাদের পাশে আছে, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কার্টুন তাদের ক্লাশের অংশ হতে পারে। কারো অপমানিতবোধ করার কিছু নেই এর মানে এই না যে সবাইকে অপমান করতে হবে। ভদ্রতা সভ্যতার অংগ। কেউ যদি কোন পাবলিক ফোরামে, কম্যুউনিজম কিংবা কার্টুন ইত্যাদি নিয়ে কোন আলোচনায় যেতে চায়, অবশ্যই যাবে কিন্তু সহিংসতা, হুমকি দেয়া হলো সীমা লঙ্ঘন আর সেটি সহ্য করা হবে না। নিস, ভিয়েনা আর নেদারল্যান্ডসেও যারা হুমকি দিয়েছে আপনি তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড নিশ্চয় জানেন? হ্যাঁ, তারা সবাই মুসলিম। যে আদর্শ আর ধর্ম তারা সাথে নিয়ে এসেছে তার জন্যে কি নেদারল্যান্ডস পুরোপুরি প্রস্তূত আছে? আঠারশো আটচল্লিশ সাল থেকে আমরা গনতন্ত্র চর্চার মধ্যে আছি, প্রায় দেড়শো বছরের চর্চার মধ্যে দিয়ে আমরা একটি স্থির সমাজে পৌঁছেছি। এখানে কি হচ্ছে, মুসলিমদের একটি ছোট গ্রুপ, কিছু ব্যাপার ভুল ভাবে ব্যাখা করে সহিংসতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী এখনো প্র্যাক্টিসিং মুসলমানদের বেশির ভাগই খুব শান্তিপ্রিয় ভাবেই তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে থাকে যেটা আমাদের গনতন্ত্রের মধ্যে আছে। কিন্তু আমি সমস্ত মুসলমাদের বলতে চাই, যদি কেউ সহিংসতার জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করতে যায় শুধু নেদারল্যান্ডসের সরকার কেন সমাজেও তাদের জায়গা নেই। বাচ্চারা শিক্ষককে হুমকি দেয়, আমরা ধরে নিতে পারি এই বাচ্চারা নেদারল্যান্ডসেই জন্মেছে এবং এখানেই বড় হয়েছে, এখানে এতদিন এই জিনিসগুলো ছিলো না আর এখন একদম মুখোমুখি সংঘর্ষ যে শিক্ষককে আত্মগোপন করতে হলো? প্রথমে আমি ফর্মাল জবাব দিচ্ছি, পুলিশকে অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়া হোক আর দ্বিতীয়ত আমি আমার নিজের মতামত দিচ্ছি, নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী কেউ যদি ভাবে, আমি এখানে অপমানিত হচ্ছি আর সরকারের দায়িত্ব আমাকে অপমান থেকে রক্ষা করা, সেটা সম্ভব না। “জাতীয়তা” বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে, আমাদের গনতন্ত্রের মূল ব্যাপারগুলো আরও ভাল করে তুলে ধরতে হবে, সেগুলো হলো, স্বাধীনভাবে শিক্ষা দান করা, স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা, স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করা, পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার, বিষকামী–সমকামীদের সমান অধিকার, কালো-সাদাদের সমতা। এই দেশে জন্মানো কোন মানুষই যেনো না ভাবে, আমি এসবের কারণে কোন সুবিধা পাবো। মানুষকে তাদের আচরণ দিয়ে বিবেচনা করাতে হবে তারা কোথা থেকে এসেছে, কিংবা তাদের ধর্ম কি তা দিয়ে নয় আর এই মূল্যবোধগুলো একান্ত অপরিহার্য, এখানে কোন আপোষ হবে না। অতীতে আমরা এই নিয়ে প্রচন্ড দায়িত্বহীন আচরণ করেছি, এখানে আসা মানুষজনকে আমরা আমাদের দেশের সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে সচেতেন করিনি। তাদের জানাইনি কোন সমাজে তাদেরকে মিশে যেতে হবে, আর এই সামাজিক মূল্যবোধগুলো আপোষহীন। একজন টার্কিশ যদি ভাবে ডাচ ফুটবল দলে না খেলে টার্কিশ ফুটবল দলে খেলবো, ঠিকাছে তাতে দোষের কিছু নেই কিন্তু যখন তাদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পুরুষও এদেশে থেকে ভাবে যে আমি এদের মূল্যবোধ নিয়ে খেলবো তখন এটা মেনে নেয়া যায় না। বেশীর ভাগ মানুষ এদেশে এসেছে তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যে যা তাদেরকে তাদের নিজ দেশ দিতে পারেনি। এবং তারা এটাও দেখেছে এখানে সমাজ ও সরকারের কাছে তাদের যা অধিকার তাই তারা পাচ্ছে, যেটা তারা যে দেশ ছেড়ে এখানে এসেছে সেই দেশের সরকার তাদের দিতে পারেনি। অত্যন্ত গর্বের সাথে আমরা বলতে পারি, যারা এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে তাদের আমরা প্রচন্ড সম্মান আর জীবনের প্রয়োজনীয় সব জিনিস দিয়েছি। হয়ত এখানের এই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়েই তারা শিক্ষককে হুমকি দিয়েছে? আমরা এখনো জানি না কারা শিক্ষকদেরকে হুমকি দিয়েছে, একজন শিক্ষক আত্মগোপন করেছে অন্যজন বাড়িতে আছে কিন্তু এটা গ্রহনযোগ্য নয়। এই দেশে থাকতে গেলে কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে যেটা আপনাকে, আমাকে প্রত্যেক নাগরিককে মানতে হবে যেগুলো আপোষযোগ্য নয় আর আপনি যদি ভাবেন তা থেকে শিক্ষককে হুমকি দেবেন তবে আমরা আমাদের শুধু সরকারের সব ক্ষমতা আর শক্তি দিয়ে লড়বো না, সাথে এদেশের জনগনও লড়বে। বেশিরভাগ মুসলিমরাই শান্তিপূর্ণ জীবনে বিশ্বাস করে। অল্প যেকয়জন কার্টুনের মাধ্যমে অশান্তি করছে তাদেরকে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস সব জায়গায়ই প্রতিহত করতে হবে। শুধু এখন নয়, বহুদিন ধরেই বিশেষ করে ইতিহাসের শিক্ষকরা কমপ্লেইন করে আসছে, তারা হলোকাস্ট নিয়ে, নাইন-ইলাভেন নিয়ে কিছু পড়াতে পারছেন না। সমস্যা কি আসলে আরো গভীরে নয়? হ্যাঁ আমিও আমার আশেপাশের মানুষের কাছে এই নিয়ে শুনি, সহিংসতা অগ্রহনযোগ্য, বাক স্বাধীনতা ছাড়া কিংবা আংশিক বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই এধরনের গনতন্ত্রের থেকে পশ্চিমের আমাদের গনতন্ত্র আলাদা কিন্তু এগুলো যদি আমাদের সৃজনশীলতা কিংবা কাজ করার ক্ষমতাকে আটকে দেয় সেটিও গ্রহনযোগ্য হবে না। ঘটনাগুলো তো এখানেই থেমে থাকে না, যারা নাইন-ইলাভেন জানে না, হলোকাস্ট জানে না শুধু কার্টুন জানে? আমিও শুনতে পাই অনেক মুসলিম নেদারল্যান্ডসের মূল্যবোধের সাথে একাত্ম অনুভব করে না, আমার ধারনা এসব বলার মাধ্যমেই চরমপন্থীদেরকে আস্কারা দেয়া হয়। যারা ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডস কিংবা অস্ট্রিয়ার মূলধারার সাথে মিশে গেছে তাদেরকেও অপবাদ দেয়া হয়। আমরা একটি সভ্য দেশ হিসেবে সবসময় যতদূর পারি শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি কিন্তু আমাদের দোষ ছিলো, আমরা কখনো গর্বের সাথে তাদেরকে জানাতে পারি নি, আমাদের কোন কোন মূল্যবোধের সাথে তাদের মিশে যেতে হবে। এই ক্যাবিনেটে আমরা আমাদের পূর্ববতী ক্যাবিনেটের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শর্তহীনভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের মূল্যবোধগুলো জানাতে হবে আর এই কাজটি করবেন শিক্ষক। তাই শিক্ষককে কোন সীমারেখা দেয়া যাবে না। স্যমুয়েল পাটির মত ঘটনা যাতে নেদারল্যান্ডসে না ঘটে সেজন্য আপনি কি মনে করেন না এখনই মুসলমান সমাজ এবং হুমকি দেয়া ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা প্রয়োজন? নেদারল্যান্ডসের মুসলিম সমাজের সাথে ক্যাবিনেটের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সামনের সোমবারে পরবর্তী আলোচনার তারিখ। আর আমি কারো একজনের ধর্মীয় পরিচয় ধরে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। একজন মরোক্কান বংশভূত যদি নিজ থেকে তার কমিউনিটির মানুষের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করে সেটাকে অত্যন্ত প্রশংসার চোখে দেখি কিন্তু তার ধর্মীয় পরিচয় ধরে তাকে এজন্যে বাধ্য করাও আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে যায় না। ভিভিডি’র মানুষ হিসেবে আপনি একবার মুক্তচিন্তার জন্যে আলাদা জায়গা করেছিলেন, এখনো কি আমাদের সেরকম কিছু দরকার না? আমি নেদারল্যান্ডসের সব মানুষকে বলবো নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে কোন ভাবেই যেনো নিজেকে বদ্ধ না মনে করে। বারো বছর আগের পরিস্থিতি আলাদা ছিলো, সেটি এখন আর প্রযোজ্য না। কার্টুনের প্রতিক্রিয়া ভয়ানক, হত্যা, চরমপন্থা, হুমকি, এটা কি তাহলে ঠিক হচ্ছে যে আমরা এই সম্মানের সাথে এটাকে ডীল করছি? সেজন্যেই আলোচনা এত জরুরী। আমরা সবাইকে জানাতে চাই এদেশে কোন কিছুর সীমারেখা নেই। একজন সাংবাদিককে আমরা কি সংবাদ পরিবেশন করা হবে তার মাত্রা ঠিক করে দিতে চাই না। আমি কার্টুনিস্ট, কলামিস্ট না কিন্তু কেউ করতে চাইলে তাতেও আমার সমস্যা নেই, বাঁধা দেবো না। তারপরও বলবো, যা বলতে পারা যায়, সব বলার কোন প্রয়োজনও আমি অনুভব করি না। বুদ্ধিস্ট, খ্রীষ্টান কিংবা ইসলাম সবারই তার ধর্মের প্রতি পবিত্র অনুভূতি আছে। আমি তাতে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি সেটা করতে চায়, আমার দায়িত্ব তাকে রক্ষা করা। কেউ তার প্রতি সহিংস আচরণ করুক সেটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় চলবে না। আপনি কি মনে করেন ক্লাশে কার্টুন দেখানো ঠিক হচ্ছে? আমার হ্যাঁ বা না এখানে জরুরী না। শিক্ষক যদি ভাবেন তিনি করবেন সেটি করবেন, কার্টুনিষ্ট ঠিক করবেন তিনি কি ধরনের কার্টুন আঁকবেন। সেজন্যে তাদের প্রতি সহিংস আচরণ করা যাবে না। আপনি এটিকে আরও পরিস্কার করতে পারেন মিনিষ্টার প্রেসিডেন্ট? হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, ক্লাশে হিউমার আনতে, কমেডি আনতে কার্টুন ব্যবহার করা প্রয়োজন মনে করলে শিক্ষক তা করবেন কিন্তু এখন প্রত্যেক শিক্ষক কাল থেকে ক্লাশে এটিই করবেন কিনা সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হলো দেখা, প্রত্যেকে যেনো কোন বাঁধা ছাড়াই তাদের মত তারা শিক্ষা দিতে পারেন। সবাইকে জানাতে চাই, আমরা শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। তানবীরা তালুকদার ০৮/১১/২০২০

Friday 6 November 2020

গল্পটা ফিলিপস নগরীর অর্থনীতির

https://www.prothomalo.com/business/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%B8-%E0%A6%A8%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0?fbclid=IwAR1S_GzRwcGO5rkmF15_agsTnCQAlo46_QCqCOFg9o_0dVZgVq4yq3lTAKc কী নেই আইন্ডহোভেনে। বিমানবন্দর, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সবচেয়ে বড় প্রাইমার্ক শপ, দক্ষিণ ভারতীয় নিরামিষ রেস্টুরেন্ট কৃষ্ণাভিলাস, ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট হ্যাপি ইতালি, প্যন্ডোরা কিংবা জোয়ারস্কির দোকান, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, ফুটবল স্টেডিয়াম, নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে ভালো হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা হওয়া ক্যাথারিনা হাসপাতাল, বিশ্বমানের গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য আলাদা করে তৈরি হাইটেক ক্যাম্পাস। অথচ প্রায় গ্রামতুল্য এই শহরের যাত্রা শুরু হয় খেরার্ড ফিলিপসের হাত ধরে ১৮৯১ সালে। ছেলের পাশে খেরার্ডের বাবা ফ্রেডেরিক ফিলিপসও ছিলেন। বাল্ব বানানো দিয়ে শুরু হয় উৎপাদন, তৈরি হয় অসংখ্য কলকারখানা। শহরের মধ্যে আজও চিমনিসহ সে জায়গাটুকু রেখে দেওয়া আছে, তার পাশেই আছে ফিলিপসের জাদুঘর। খেরার্ড ফিলিপসের ঝোঁক ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণায়, এর জন্য তিনি আলাদা করে গবেষণাগারও তৈরি করেছিলেন। দক্ষিণ নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আইন্ডহোভেন, পঞ্চম বৃহত্তর শহর হিসেবে পরিচিত, এর জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। ১২৩২ সালে হেনরি আই ডুকে ব্রাবান্টের হাত দিয়ে তৈরি আইন্ডহোভেন প্রাচীন শহরের তালিকার প্রথম দিকে থাকলেও, পর্যটকদের এখানে আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়, অর্থনৈতিক দিক থেকে এই শহর প্রচণ্ড আকর্ষণীয় হলেও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো এখানে তেমন কিছু নেই। তবে ফিলিপসের পর ব্রেক্সিট এই শহরকে অন্য গুরুত্বে নিয়ে গেছে। অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই ব্রেক্সিটের ঝক্কি এড়িয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্যবসা করতে যুক্তরাজ্য থেকে তাদের কার্যালয় সরিয়ে নিয়েছে। অত্যধিক দামের কারণে আমস্টারডাম বা ডেনহাগের জমিজমা যেহেতু ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাই তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে কাজ করেছে আইন্ডহোভেন। শহরটির ভৌগোলিক অবস্থান ও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বেলজিয়াম বা জার্মানি যেকোনো সীমান্তে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র মিনিট ৪০। এতে আইন্ডহোভেনের বাড়ি, জমির বাজারও এখন আগুন। পাঁচ বছর আগে এখানে দামাদামি করে বাড়ি কেনা যেত, আর এখন এখানে নির্দিষ্ট দামের ওপরে টাকা দিয়ে বাড়ি কিনতে হয়। তাও বেশির ভাগ সময় ক্রেতা মাত্র একবার দাম বলার সুযোগ পান। অসংখ্য মানুষ বেশি দাম বলেও বাড়ি পাচ্ছেন না, দিনের পর দিন কাঙ্ক্ষিত সুযোগের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আইন্ডহোভেনের গল্প বলতে গেলে যে নাম ঘুরেফিরে আসবেই, সেটি হলো ‘ফিলিপস’। কথিত আছে, একসময় পুরো নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রীয় বাজেটের চেয়ে ফিলিপসের বাজেট বেশি ছিল, নেদারল্যান্ডস সরকারের যত কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ ফিলিপসে কাজ করতেন। এখনো আইন্ডহোভেন শহরে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, ফিলিপস জাদুঘর, ফিলিপস বাগান আর রেস্তোরাঁ। ফিলিপসের বাগান যেখানে আপেল আর পিয়ার উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া আছে ফিলিপসের তৈরি স্টেডিয়াম, এভুলিয়ন, ফ্রিটস ফিলিপস মিউজিক সেন্টার, যেখানে ভালো সব গান আর বাজনার অনুষ্ঠানগুলো হয়। আগে ফিলিপসের কর্মীদের বাসস্থানের জন্য নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা ছিল, অন্যান্য ব্যবসার মতো এটিও তারা নব্বইয়ের দশকে বিক্রি করে দেয়। ফিলিপসের বিভিন্ন চত্বরের ভবনগুলোতে এখন অন্য অফিস, স্কুল, রেস্টুরেন্ট, দোকান ইত্যাদি বানানো হয়েছে। কিছু কিছু ভবনকে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একবার এক রান্নার কর্মশালায় গেছি, কর্মশালা যে জায়গাটায় হলো, সেটা ফিলিপসের পুরোনো কারখানা বনাম অফিস, যেখানে আগে পুরোদমে পণ্য উৎপাদিত হতো। অনেক অনেক আগেও নয়, এই ১০-১৫ বছর আগে। আমি নিজেও এই ভবনের নিচে একটা প্রশিক্ষণে এসেছিলাম। সবাই যখন রান্নার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, আমি তখন পুরো ভবনে হেঁটে হেঁটে বেড়াচ্ছি, গায়ে অজানা অনুভূতি। শুরুর দিকে ফিলিপস মেয়েদের বাড়ির বাইরে কাজ করাকে উৎসাহ দিত না। পুরোনো ফিলিপস ভবনগুলোতে তাই কোনো মেয়েদের টয়লেট নেই, মায়েদের ব্রেস্ট পাম্প করার কোনো ঘর নেই। অনেকবার আন্দোলনের মুখে পিছিয়ে, থেমে, ২০১৮-তে অবশেষে বিক্রি করা হয় ফিলিপস লাইটিং, ক্রেতা সিগনিফাই, তবে শর্ত, সিগনিফাই শুধু ফিলিপসের পণ্যই বিক্রি করবে (আপাতত)। কারণ, শেষ কথা বলে অর্থনীতিতে কিছু নেই, কিছুই এক জায়গায় থাকে না। আইন্ডহোভেনের অদূরবর্তী ছোট শহর মারহেইজেতে, টেলিকাস্টারে চলছে সিগনিফাইয়ের তিন মাত্রার বাতি নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিভিন্ন মডেলের সফল উত্তীর্ণের পর এখন প্রচুর তিন মাত্রার বাতি উৎপাদিত হচ্ছে। আলো মানুষের জীবনে কী অপরিসীম ভূমিকা রাখে, তা আধুনিক আলোক ব্যবস্থা না দেখলে জানতেই পারতাম না। কারও যদি জ্যোৎস্না প্রিয় হয়, সে পুরো বাসার জন্য একধরনের আলোক ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারে, যার রক গান করতে ভালো লাগে সে তার মেজাজ কিংবা গানের আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে পুরো বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা রাখতে পারে। একটি মাত্র রিমোটের মাধ্যমে পুরো বাড়ির আলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিংবা সময় নির্ণায়ক স্থাপন করা যায়। এর বাইরেও আছে, আলোর সাহায্যে গ্রিনহাউসে চাষাবাদ, মুরগির ডিম ফোটানোর প্রকল্প, কত কী। ফিলিপসের হাত ধরেই সূচনা হয়েছে আইন্ডহোভেনের অন্যতম আকর্ষণ হাইটেক ক্যাম্পাস, যেটাকে অনেকে প্রযুক্তির কেন্দ্র বলে। ফিলিপস চেয়েছিল বিভিন্ন জায়গায় গবেষণাগার না থেকে সব এক জায়গায় থাকুক, তাতে গবেষকদের পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরের দেখা হওয়া, চিন্তার বিনিময়, আলোচনা—সবকিছুর সুবিধা হবে। সেই লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে এই হাইটেক ক্যাম্পাসের যাত্রা হয় শুরু। যদিও ২০১২ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র‍্যামফাসটোস ইনভেস্টমেন্টের কাছে ফিলিপস হাইটেক ক্যাম্পাসটি বিক্রি করে দেয়। ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রায়ই নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবারের কিংবা সরকারি গাড়ির বহর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজপরিবার ও ডাচ সরকারের অতিথিদের তালিকায় দর্শনীয় স্থান হিসেবে এই স্থান থাকবেই। ফিলিপসের আগে আইন্ডহোভেন বিখ্যাত ছিল সর্ববৃহৎ দেশলাই তৈরির কারখানার জন্য। এরপর ফিলিপসের বাল্বের উৎপাদন শুরু হওয়ায় আইন্ডহোভেনকে অনেকে সিটি অব লাইটও বলে থাকে। প্রতিবছর নভেম্বরে ফিলিপসের সৌজন্যে দেশ-বিদেশের শিল্পী ও ডিজাইনারদের তৈরি নতুন উদ্ভাবন নিয়ে সপ্তাহব্যাপী উৎসবটির নাম ‘গ্লো ফেস্টিভ্যাল আইন্ডহোভেন’, যেখানে কম্পিউটার, সেন্সর, অ্যানিমেশন কৌশলগুলোর মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলো দিয়ে তৈরি শিল্প এবং নকশা উপস্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালে এই উৎসবের শুরু। এ সময় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ধরে আলোর শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়, সিটি সেন্টারের মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে এগুলো উপভোগ করা যায়। ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, বিজ্ঞানী এবং শিল্পীরা একত্র হয়ে নতুন নতুন ধরনের আলোর ধারণা আর প্রযুক্তি উপস্থাপন করেন। আইন্ডহোভেনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘ডাচ ডিজাইন উইক’। ২০০২ সালে ২০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুরু হওয়া উত্তর ইউরোপের এই বৃহত্তম ডিজাইন ইভেন্টে দেশ-বিদেশের ২৬ শ-এর বেশি ডিজাইনারের কাজ এবং তাঁদের চিন্তা ও কল্পনাগুলো উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবছর অক্টোবরে ৯ দিনের এই ডাচ ডিজাইন উইক শহরজুড়ে প্রায় ১২০টি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সারা আইন্ডহোভেন সাজানো হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙিন পোস্টারে। একসময় হাতে গোনা কয়েকটি বাংলাদেশি পরিবারের বাস ছিল আইন্ডহোভেনে। এএসএমএল, এনএক্সপি, আইন্ডহোভেন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, ফন্টিস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইত্যাদির কারণে আইন্ডহোভেন শহরে এখন প্রচুর বাংলাদেশির বাস। রাস্তায়-দোকানে হরদম বাংলা কথা শোনা যায়। খুব দ্রুতই একটি শিক্ষিত বাংলাদেশি সমাজ গড়ে উঠছে আইন্ডহোভেনে।

Wednesday 4 November 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তিন (নভেম্বর)

যদি আমরা নির্মোহভাবে আরআইভিএমের সংক্রমণের পরিসংখ্যানটি দেখি, বলবো না আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি তবে খারাপের দিকেও যাচ্ছি না। সংক্রমণের হার নীচে নামাতেই হবে, নার্সিং হোম আর হাসপাতালে রোগী বেড়েই চলছে আর কোথাও কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। অন্য রোগের রোগীরা সেবা পাচ্ছে না আর তাই আমরা আজ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের আরও সতর্কতা প্রয়োজন। যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করছে তাদের প্রতি আমাদের আরও সহমর্মিতা প্রয়োজন আর তাই আমাদের আরও কম বের হওয়া উচিত, মানুষের সংস্পর্শে কম আসা উচিত, কম সামাজিকতা করা উচিৎ। নভেম্বরের চার তারিখ রাত দশটা থেকে আংশিক লকডাউনের ওপরে দেয়া এই নিয়মগুলো দু সপ্তাহের জন্যে কার্যকারী থাকবে। এরপর আমরা আবার আংশিক লকডাউনের নিয়মে ফিরে আসবো। আমরা সারাক্ষণ নজর রাখছি কি করে আমরা আবার গরমের সময়ের পরিস্থিতিতে ফিরতে পারি। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আংশিক লকডাউন থাকবেই। রেস্টুরেন্ট, খেলাধূলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু উপায় নেই। প্রথম কথাঃ শুধু শুধু শপিং সেন্টারে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বাসায় থাকা। দ্বিতীয় কথাঃ বাইরে চারজন মানুষের আড্ডা বন্ধ, দুজন। যদি এর অন্যথা হয়, জরিমানা করা হবে। বাসায় দুজনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না, বারো বছরের নীচে বাচ্চাদের গোনায় ধরা হচ্ছে না। তৃতীয় কথাঃ সামনের দুই সপ্তাহের জন্যে জনগনের জন্যে উন্মুক্ত সব ধরনের ভবন বন্ধ থাকবে। সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, লাইব্রেরী ইত্যাদি সব। দোকান, হেয়ারড্রেসার, বিউটি সেলুন, জিম এর আওতায় পরবে না। তবে জিমে কোন গ্রুপ এক্টিভিটি চলবে না। কিছু কিছু শহরে সংক্রমণের মাত্রা মারাত্বক, আশাপ্রদ ফলাফল না এলে সেখানে দোকান আর স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন কোন শহর সেটা সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। সারা পৃথিবীতেই করোনা এখন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে তাই সবাইকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশেই ভ্রমণের দরকার নেই। ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে নেদারল্যান্ডসের বাইরে আলাদা দেশ ধরা হচ্ছে না কিন্তু সেখানেও ভ্রমণ না করারই নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ নিয়ম মানছে, অল্প ক’জনের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যারা এখনো ভাবছে, শনিবারে সন্ধ্যায় লুকিয়ে একশো লোকের অনুষ্ঠান করবে তাদের সর্তক করে দেয়া হচ্ছে, যেকোন দায়িত্বহীন অসামাজিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা যারা এসময়টাতে বিষন্নতা কিংবা একাকীত্বে ভুগছে, তাদের জন্যে সামনের দু সপ্তাহ আরও কঠিন যাবে, তাদেরকে বলবো, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, তোমার সামান্য সহৃদয়তা অন্যের কাছে অনেক বেশি হয়ে আসতে পারে। গত সপ্তাহে চৌষট্টি হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। বারোটি বিভাগে সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও, তেরোটি বিভাগে সংক্রমণের হার অনেক। প্রায় ছাব্বিশো কোভিড রোগী এখন হাসপাতালে আছে যাদের মধ্যে প্রায় ছয়শো আছে আইসিইউতে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত, সীমাহীন ওভারটাইম, তাদের পরিবার, তাদের অনুভূতির প্রতি আবারও আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। এবারের ক্রিসমাস উৎসব অবশ্যই অন্য বছরের চেয়ে আলাদা হবে তবে সামনের দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেটি কিরকম হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারনা দিয়ে দেয়া হবে। প্রিমিয়ে রুতে আপনি বলছেন, সংক্রমণের হার স্থির আছে কিংবা বাড়ছে না তারপরও আরো কঠিন নিয়ম দিচ্ছেন, কেন? তার কারণ, হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, এখন যত রোগী আছে হাসপাতালে সামনের দুই সপ্তাহে সেটি আরও দেড় গুন বেড়ে যাবে আরও চাপ পরবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর, সেটিকে সামলাতে আরও কঠিন নিয়ম দেয়া ছাড়া উপায় নেই। নইলে, হার্ট, ক্যান্সার কিংবা হাঁটুর অপারেশানের মত সমস্ত অপারেশান আবার রিশিডিউল করতে হবে যা রোগীদের ভীত করে তাদের মনোবল ভেঙে দেবে। প্রিমিয়ে রুতে, খুব অল্প সময়ের জন্যে হলেও কেন আপনি পুরোপুরি লকডাউনে গেলেন না? সামনের দুই সপ্তাহ তো সম্পূর্ন লকডাউন হতে পারতো? বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছি, দরকার হলে যেতেই হতো কিংবা কোন কোন শহরের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে হয়ত যেতেই হবে। স্কুল খোলা থাকা অত্যাবশকীয়, শুধু একটা কিছু খোলা রাখার সম্ভাবনা থাকলেও স্কুল খোলা রাখতে চাই। মানুষ মানুষের সংস্পর্শে কম আসছে, সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সংক্রমণের সংখ্যা আপাতত স্থির আছে, তাই অর্থনীতিসহ বাকি দিকে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছু অল্প কিছুদিনের জন্যে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েও তো আপনি জনগনকে একটি বার্তা দিতে পারেন? সেটার দরকার থাকলে দিতাম। সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে শুধু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না সাথে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে এই এক্সর্ট্রা প্যাকেট কতদূর কাজ করবে বলে আশা করছেন? সামনের সপ্তাহ থেকে অন্তত হাসপাতালে বারোশো কম রোগী আর আইসিইউতে দুইশ কম রোগী আশা করছি। বাচ্চাদের পার্টি নিয়ে আপনার কি মতামত? বরাবরই বলে এসেছি, বারো বছরের নীচের বাচ্চারা করোনার নিয়মের আওতাও পরে না, কিন্তু বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের আসা যাওয়া চলবে না। বিদেশ ভ্রমনের ব্যাপারে আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতিবাচক উপদেশ আছে। আমাদের ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি একশো হাজারে প্রতিদিন সাত হাজার সংক্রমণ, সর্বোচ্চ তিনজন আইসিইউ পেশেন্ট পার ডে, এই টার্গেটে আমরা এ বছরও পৌঁছতে পারবো না, সামনের বছর হয়ে যাবে। পহেলা ডিসেম্বর থেকে মাস্ক পরা নেদারল্যান্ডসে বাধ্যতামূলক। যদি পুরোপুরি লকডাউন হয়, তাহলে কি দক্ষিন ইউরোপের দেশগুলোর মত রাস্তায় বের হতে চিঠি দরকার হবে? না, সেরকম কোন কিছু নয়, ওষুধের আর খাবারের দোকান ছাড়া বাকি সব বন্ধ থাকবে আর রাত দশটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সবাইকে বাড়ির মধ্যে থাকতে হবে। বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকবে, কলেজ-ইউনিভার্সিটি অনলাইনে যাবে। শবযাত্রার ব্যাপারে কোন নিয়ম চলবে? নভেম্বরের নয় তারিখ থেকে শবযাত্রায় ও ম্যাক্সিমাম ত্রিশ জনের বেশি যেতে পারবে না। শুধু বিদেশ ভ্রমণ কেন নিষেধ করছেন? দেশের মধ্যে ভ্রমণও তো বিপদজনক। সেটা ঠিক কিন্তু মানুষকে বন্দী করতে চাইছি না তবে বারবার বলছি, ছুটিতে গিয়েও অনেক ঘোরাঘুরি না করে হোটেল কিংবা ভ্যাকেশান হাউজের ভেতরে থেকে ছুটি উপভোগ করতে হবে। হুগো দ্যা ইয়ং আপনি বলেছেন, ক্রিসমাস সবাই একসাথে উদযাপন করবে? হ্যাঁ কিন্তু কতটুকু একসাথে সেটা এখনো বিবেচনাধীন আছে। প্রতিবছরের মত এতটা একসাথে হয়ত এবার হবে না কিন্তু জানাবো। তানবীরা ০৪/১১/২০২০

আংশিক লকডাউন ও ঘোর বিপাকে ডাচ অর্থনীতি

https://www.bhorerkagoj.com/2020/11/03/%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%89%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%a6%e0%a6%b0/ করোনায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি লন্ডভন্ড, সতের মিলিয়ন অধিবাসী নিয়ে সেন্ট্রাল ইউরোপের ছোট্ট দেশ নেদারল্যান্ডস ও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। প্রথম ধাক্কা যেনো তেনো করে সামলে নিয়েছিলো কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় অনেকটাই মুর্মুষ। বিশ্বের সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে একটি দাবী করা ডাচেরা করোনার কাছে পর্যুদস্ত। সাথে বাড়ছে জনগনের অসন্তোষ, বছরের পর বছর প্রতি মাসে এত টাকার চিকিৎসা বীমা দিয়ে আসার পর, এখন যখন চিকিৎসা প্রয়োজন, তখন হাসপাতালে জায়গা নেই, আই-সি-ইউতে বেড খালি নেই শুনতে আর রাজী নয় জনগন। প্রতিজন ডাচ নূন্যতম এগারশো ইউরো বছরে নিজের পকেট থেকে স্বাস্থ্যবীমা পরিশোধ করেন, এর বাইরে তার প্রতিষ্ঠান আর সরকারও স্বাস্থ্যবীমার নির্দিষ্ট অংশের ব্যয় ভার বহন করে থাকেন। সেগুলো যোগ করলে ব্যক্তিভেদে বছরে তিন হাজার ছয়শো আশি ইউরো থেকে পাঁচ হাজার তিনশো ইউরো পর্যন্ত দাঁড়ায়। প্রথমবার ছিলো “ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন”, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধূলা, জিম, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, সিনেমা, থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ ছিলো যা পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খুলেছে। অক্টোবরের চৌদ্দ তারিখ থেকে আবার রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদি বন্ধ করে দিয়েছে, রাত আটটার পর সব দোকান ও বন্ধ থাকবে, শুধুমাত্র ওষুধের দোকান আর সুপারমার্কেট খোলা থাকবে তবে সেখানে কোন এলকোহল বিক্রি করা যাবে না। রাত আটটার পর এলকোহল নিয়ে বাড়ির বাইরে থাকা নিষেধ। তবে এবার বলা হচ্ছে “আংশিক লকডাউন”, প্রিমিয়ে মার্ক রুতে বলছেন, জনগনের কল্যান আর সুস্বাস্থ্যের সাথে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যে ক্যাবিনেট আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে পলিসি বের করছে যাতে সকলের কল্যান হয়। সরকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবেন বার বার বলার পরও একটার পর একটা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, থামছে না। এই বছরের বিয়াল্লিশ সপ্তাহ পর্যন্ত দুই হাজার সাতশো উনিশটি ব্যবসা দেওলিয়া ঘোষনা করা হয়েছে। যদিও দুই হাজার উনিশ সালের তুলনায় তিনশো নয়টি কম এরমধ্যে ছেচল্লিশটি ব্যবসা শুধু বিয়াল্লিশতম সপ্তাহে বন্ধ হয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটাস্টিক্সের মতে, প্রথম কোয়ার্টারের তুলনায় দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আট দশমিক পাঁচ ভাগ প্রবৃদ্ধি কমেছে যা মূল প্রবৃদ্ধির অর্ধেকেরও কম আর সেটি মূলত দেশের আভ্যন্তরীন বানিজ্য ঘাটতির কারণে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গৃহস্থালী জিনিসপত্রের বিক্রি অনেক কমেছে আর মানুষ নতুন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে। সার্বিক পরিবেশ নিয়ে মানুষ হতাশ আর তারা খরচ করতে অনেক ভাবছেন। জিনিসপত্র যদিও বা কিছু কিনছেন কিন্তু পয়সার বিনিময়ে কোন ধরনের সেবা নিতে তারা অনিচ্ছুক। তবে সবদিকেই অবস্থা এত খারাপ নয়, মেডিক্যাল সেক্টর, অনলাইন কনসাল্টিং, অনলাইন সুপারমার্কেট, নেটফ্লিক্স, আমাজন নেদারল্যান্ডস, প্যাকেট আর অনলাইন ডেলিভারী সার্ভিস এরা বেশ ভাল ব্যবসা করছে। ফিলিপ্স মেডিক্যাল সিস্টেম দুইগুন বেশি পন্য উৎপাদন ও বিশ্বব্যাপী পরিবহন করছে। করোনার কারণে সরকারের অর্থায়ন ধাক্কা খেয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাজেটের উদ্ববৃত্ততার পর দুই হাজার বিশ সালে ঐতিহাসিকভাবে বড় ঘাটতি হয়েছে। তাতে ঋণের পরিমান বেড়ে গেছে। তবে তার জন্যে জমানো অর্থ ছিলো, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অর্থনীতি যখন ভাল করছিল, সরকার তখন বাফার তৈরি করেছে। করোনা সঙ্কটের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্যে সরকার প্রচুর অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। বড় প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী সবাইকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। একই সময়ে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আপাতত কর পরিশোধ না করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় করের পরিমান কমানো এবং ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের সর্বমোট ব্যয় হবে বাষট্টি বিলিয়ন ইউরোর বেশি। এর মধ্যে দুই হাজার বিশ ও একুশ সালের অর্থ বছরে বড় প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীদের সাহায্য করার জন্যে পয়তাল্লিশ দশমিক নয় বিলিয়ন ইউরো ধরা হয়েছে। করের ছাড়, কর কমানো আর দেরীতে পরিশোধের কারণে খরচ হবে ষোল দশমিক ছয় বিলিয়ন ইউরো। গত পাঁচ বছরের পর এবার ঘাটতি বাজেট এলো। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। গড় প্রবৃদ্ধি কমেছে শতকরা সাত দশমিক দুই যার পরিমান ছাপ্পান্ন বিলিয়ন ইউরো। দুই হাজার একুশেও ঘাটতি বাজেট হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ধারনা করা হচ্ছে পাঁচ দশমিক পাঁচ ভাগ কম হবে যার পরিমান হবে পয়তাল্লিশ বিলিয়ন ইউরো। তবে সেটি এখনও নির্ভর করছে সামনের মাস গুলোতে করোনা ভাইরাস কোন দিকে মোড় নেবে তার ওপর। এত সঙ্কটের মধ্যেও রাজা এবং রানীর ভাতা শতকরা পাঁচ ভাগ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, দুজনেরটা একসাথে ধরলে পরিমান দাঁড়ায় বার্ষিক সাত দশমিক দুই মিলিয়ন ইউরো। রাজকন্যা আমালিয়া এই ডিসেম্বরে আঠারো হবে, ডিসেম্বর থেকে সেও মাসিক এক লক্ষ এগারো হাজার ইউরো ভাতা পাবে যেটি সামনের অর্থ বছর দুই হাজার একুশ-বাইশে হবে এক দশমিক ছয় মিলিয়ন ইউরো। রাজ পরিবারের এই আয় সম্পূর্ন কর মুক্ত। এই প্রবৃদ্ধি বিরোধী দল আর জনগনের প্রবল সমালোচনার মুখে পরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের তির্যক আলোচনা ও মন্তব্য আসতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে আর রাজ পরিবারের মধ্যে দারুণ সখ্যতা। রাজ পরিবারের কর মুক্ত আয়ের সমালোচনার জবাবে তিনি বারবার একই কথা বলে যান, “আ ডিল ইজ আ ডিল”। ইউরোপের মধ্যে ডাচ রাজ পরিবারকে সবচেয়ে ব্যয় বহুল পরিবার হিসেবে ধরা হয়। মোটামুটিভাবে তারা বছরে চল্লিশ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে থাকেন যার মধ্যে তাদের নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত নয়। নেদারল্যান্ডসের জনগন তাদের নিরাপত্তা, প্যালেসের সংস্কার, ঘোড়া গাড়ির ব্যয় বহন করে থাকে। ডাচ প্রিমিয়ে মার্ক রুতে প্রায়ই তার ভাষণে “আ ডিল ইজ আ ডিল” কথাটি ব্যবহার করে থাকেন। যদিও বিদেশি এক্সপাটদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখেননি। বিদেশ থেকে স্পেশালিষ্ট নিয়ে আসার জন্যে ডাচ সরকারের কিছু করের সুবিধা ছিলো। যাদের বাৎসরিক বেতন নূন্যতম সাইত্রিশ হাজার ইউরো তাদের বেতনের শতকরা ত্রিশ ভাগ করের আওতামুক্ত ছিলো, আর এই সুযোগটি প্রতি জন প্রথম দশ বছরের জন্যে নিতে পারতো। সেটিকে কমিয়ে প্রথমে আট বছর আর এখন পাঁচ বছরের জন্যে করা হয়েছে। পহেলা জানুয়ারী দুই হাজার একুশ থেকে যারা নেদারল্যান্ডসে চাকুরী নিয়ে আসবেন তারা আর এ সুযোগটি পাবেন না। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটাস্টিক্সের মতে, প্রায় সাতান্ন হাজার এক্সপাট বছরে এই করমুক্ত সুযোগটি ব্যবহার করে থাকে। এই করমুক্ত সুবিধার সময় কমিয়ে দেয়াতে প্রতি বছর ডাচ সরকার প্রায় তিনশো পঞ্চাশ মিলিয়ন ইউরো লাভবান হচ্ছে। এই সাথে এক্সপাটের বাচ্চাদের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার খরচ দেয়ার করমুক্ত সুবিধাও কোম্পানীগুলোকে পাঁচ বছরের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। একজন এক্সপাটকে যেহেতু বেতনের শতকরা বায়ান্ন ভাগ কর দিতে হয়, ত্রিশ পার্সেন্ট কর মুক্ত বেতনের আওতায় পাওয়া টাকার সুবিধার পরিমান নেহায়েত কম নয়। ডাচ সরকারের এই ব্যবহারে এক্সপাটরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করেন। তাদের শ্লোগানে লেখা ছিলো, “প্রিমিয়ে রুতে, আ ডিল ইজ আ ডিল”। এতে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে, এক্সপাটদের নিজেদের দেশে ফেরত চলে যেতে বলেন। নেদারল্যান্ডসের রিসার্চ আর ডেভেলাপমেন্ট চলে আশি পার্সেন্ট বিদেশিদের দ্বারা। সে জায়গায় কোন সরকার প্রধান থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা নিতান্তই হতাশাজনক। ত্রিশে অক্টোবর থেকে বেলজিয়াম পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেছে, নেদারল্যান্ডসকে অনুসরণ করে ফ্রান্স, ইতালি আর স্পেন আছে আংশিক লকডাউনে। ট্রেন দুই মিনিট দেরী করে প্ল্যাটফর্মে আসলে স্ট্রেস হয় যে জাতি তারা বিশ্বের আট নম্বর আর ইউরোপের ছয় নম্বর করোনা আক্রান্তের শীর্ষে অবস্থান করে কি করে এই মুমূর্ষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে সেটি এখন দেখার বিষয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এখনও দেশের অধিকাংশ জনগন প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতের ওপর আস্থা রেখেছে, তিনি অর্থনীতি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধ নেদারল্যান্ডস ফিরিয়ে আনবেন এই আশা ডাচেদের মনে দৃঢ়। তানবীরা তালুকদার ৩১/১০/২০২০

Saturday 31 October 2020

সমকালীন ডাচ কবিতা

https://www.banglatribune.com/literature/news/650046/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%A8-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%9A-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE?fbclid=IwAR2HaEkFv7jSbZFPuLwwwTyLNsWIt0kcdoeDB2o5P4lqzZOyn5FOXHQfQVI ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ নেদারল্যান্ডসের বার্নেফেল্ডে জন্মগ্রহণ করেন কবি ইয়েটসকে ইয়ানসেন (Tjitske Jansen)। ২০০৩ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘একবার বরফ পড়তেই হবে’ (Het moest maar eens gaan sneeuwen ) প্রকাশিত হয়। একই বছরে বইটির তিনটি মুদ্রণ ছাপা হয়, বিক্রি হয় সাড়ে বারো হাজার কপি—এখনো পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে সবথেকে বেশি বিক্রি হওয়া কবিতার বই এটি। তিনি ২০০৭ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘পরাবাস্তবতা’ (Koerikoeloem)-এর জন্য ‘আনা বাইন্স প্রাইস’ (Anna Bijns Prijs) পুরস্কার লাভ করেন। তারুণ্য এবং প্রেম তার কবিতার মূল উপজীব্য। *ফ্রাউ হোলে || ইয়েটসকে ইয়ানসেন মানুষ দেখার চেয়ে চাঁদ দেখতে বেশি ভাল লাগে আমার। মানুষ, ভীষণ ক্লান্ত করে আমাকে। এই আমন্ত্রণ, মিনতি, হাসি, ইচ্ছা, তাদের অজানা, জানতে চাওয়া বলার জন্যেই, তোমাকে ভালোবাসি বলা, কিংবা ভাবনা, জুতো পরে পায়ে কড়া নিয়ে হেঁটে যাওয়া, একজনের দিক থেকে অন্যজনের দিকে ছুটোছুটি, সুরে আর গয়নায় নিজেকে সাজিয়ে রাখা এই মানুষেরা। তার চেয়ে আমি চাঁদ দেখবো যে সবসময় একই রকম উদাসীন। বিশ্বস্ত। আমি আছি কালকে সন্ধ্যায়ও থাকবো এই কথাগুলো বলতে চাঁদের কোনো শব্দের দরকার নেই। হয়ত এক টুকরো মেঘ এসে ঢেকে দেবে, অথবা তুমি ভেতরে আছো তাই আমাকে দেখতে পাও না, কিংবা তুমি অর্থহীন কোনো গান শোনায় ব্যস্ত নাকি চোখের জলে চারপাশ ঝাপসা, ভাবছো তুমি একা আর তাই কাঁদছো, বোকা তুমি একা নও, আমি তো আছি পাশে, আগেরদিনও ছিলাম তোমার কাছে পরেরদিনও থাকবো পাশে। কাব্যগ্রন্থ : একবার বরফ পড়তেই হবে (Het moest maar eens gaan sneeuwen) ফ্রাউ হোলে : জার্মান রূপকথার একটি গল্প। ‘ফ্রাউ হোলে’, ‘মাদার হল’, ‘মাদার হালদা’ বা ‘ওল্ড মাদার ফ্রস্ট’ নামেও পরিচিত। ১৯৮০ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন সমকালীন নেদারল্যান্ডসের অন্যতম প্রধান কবি এস্টার নাওমি পারকুইন (Ester Naomi Perquin) । তিনি তিরাডে সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া সাপ্তাহিক দ্যা খ্রুনে আমস্টার্ডামার পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘রুমালের অর্ধেকছড়ি’ (Servetten Halfstok)। এরপর ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতার বই ‘অন্যদের পক্ষ থেকে’ (Namens de ander)। এই বইটি ২০১০ সালে প্রথমে ইয়ো পেটার্স পুজিপ্রাইস (Jo Peters Poëzieprijs) পুরস্কার এবং ২০১১ সালে ‘J.C. Bloem-poëzieprijs’ পুরস্কার লাভ করে। এস্টার নাওমি পারকুইন ২০১৭ সালে ‘পোয়েট লরিয়েট অফ দ্য ইউনাইটেড কিংডম’ নির্বাচিত হন। উদ্বেগ এবং ভয় এস্টার নাওমি পারকুইনের কবিতার উপজীব্য। ওভার দ্য মিনার || এস্টার নাওমি পারকুইন তুমি আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারো, ধরো কাল নরম সূর্য উঠবে তোমার থাকার মতো খুব সুন্দর দিন হবে। হয়ত আমরা বৃষ্টিতে খেলতে যাবো। লেপের ওমে কফি খাবো, নরম নরম ডিম সেদ্ধ কিংবা রুটি-স্যামনের সাথে মিষ্টি বাজনা হয়ত কিছুই করবো না খিদে পেটে ইচ্ছে আর প্রশ্নের ভেতর। কিন্তু তুমি যেতেও পারো, যেমন আজই যেতে পারো। কাব্যগ্রন্থ : ‘রুমালের অর্ধেকছড়ি’ (Servetten Halfstok) ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন সমকালীন নেদারল্যান্ডসের আরেক জনপ্রিয় কবি হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেন (Hannah van Binsbergen) ।২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘রাগান্বিত নক্ষত্রপুঞ্জ’ (Kwaad gesternte) বইটির জন্য ২০১৭ সালে তিনি ‘VSB Poetry Prize’ পুরস্কার লাভ করেন—তিনিই এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সবথেকে কনিষ্ঠ। অনুবাদেও হানাহ সিদ্ধহস্ত। তিনি রাশিয়ার ক্ষণজন্মা কবি নিকা তুরবিনার কবিতা ডাচ ভাষায় অনুবাদ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, হানাহ অনূদিত গ্রন্থটির শিরোনাম ‘আমার জীবন একটি নকশার পাতা’ (Mijn leven is een schetsblad) । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রথম উপন্যাস ‘হার্পি’ প্রকাশিত হয়েছে। হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেনের কবিতায় কাজ, গোপনীয়তা, যৌন সহিংসতা, সন্ত্রাসী পেঁচা এবং কালো যাদু’র উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তিনি নিজেও তার গোপনীয়তার প্রতি অনুরাগী, সম্ভবত সে কারণেই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। ডিজনি গার্লস || হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেন সুন্দর মেয়ে হলেই সবসময় সুখে থাকে না। আমাদের মাঝেই কতজন আছে যারা কোনো স্পর্শ চায় না। ভয় আর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্যে সবাই একসাথে হয়েছি আর এক টুকরো মেঘ অনিমেষে এই ঘরে তাকিয়ে। গলায় হার আর আঙুলে আংটি, নিজেকে অবহেলা করে আর চায় অন্যেরাও তাকে অবহেলা করুক। কঠোর তিনি আর তার অসীম সহ্য ক্ষমতা, প্রমাণ করতে তিনি অনেক দূর যেতে পারেন কিন্তু আমরা জেনে গেছি তার শরীরের কোথাও চকচক ঝকঝক করছে যেখানে আমরা বা তিনি ভাবতে পারেন না না সে নয় না দুর্ঘটনাবশত তার ঘাড়ে নয় নাচের উঠোনে নয় চক্কর দেওয়া শকুনের মতো কিংবা কোনো খেলার অংশ হতে নয় গোপনীয়তা প্রতারিত হয় সেই উদাসীন হাতে নয় কখনো তার নিতম্বের ওপর আলো ফেলে সমস্ত আলো নিভিয়ে তাকে রক্ষা করতে নয় আমি সব খুঁজে দেখেছি, যে নরম ভালবাসা আমি চাইছি তা কোথাও নেই। কাব্যগ্রন্থ : ‘রাগান্বিত নক্ষত্রপুঞ্জ’ (Kwaad gesternte)

Tuesday 27 October 2020

সর্বতো মঙ্গল রুতে বিনোদহীন গাই

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – সাতাশে (অক্টোবর) সারা টুর্নামেন্টে ভাল খেলে, ফাইন্যালে যেয়ে বাই ডিফল্ট প্রতিবার হারা ওভারকনফিডেন্ট নেদারল্যান্ডসের জিনে আছে। আসেন দেখি কেমনে করে গোল খাইঃ আজকে বিশাল কোন সংবাদ সম্মেলন নয় শুধু সংক্ষেপে মূল জিনিসগুলো বলবো আর সর্বশেষ পরিস্থিতি সবাইকে জানাবো। চৌদ্দই অক্টোবর থেকে আমরা আংশিক লকডাউনে আছি এবং এখনও সময় আসেনি ঠিক করে বলার, আংশিক লকডাউন থেকে পূর্ণ লকডাউনে যাবো নাকি লকডাউন শিথিল করবো। সিদ্ধান্ত নিতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। ভাইরাসকে যেমন তাড়াতে চাচ্ছি তেমনি অর্থনীতিও সচল রাখতে চাইছি। এই দুইটির সমতা করতে চাচ্ছি। আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। আমরা জিজিডি আর হাসপাতাল দুই জায়গারই পরীক্ষা পদ্ধতি আর চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবো। আমাদের কাছে আরও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য থাকবে। যদি সংক্রমণ সংখ্যা আরো বাড়াবাড়ির দিকে না যায় তাহলে সামনের মংগলবারে আবার গতানুগতিক সংবাদ সম্মেলন হবে নইলে আরও আগে হবে। আবারো বলছি, সমস্ত পরিস্থিতির তথ্য আমাদের কাছে আছে এবং এখন সেটির হিসেব নিকেশ চলছে। পুরোপুরি লকডাউনে গেলে শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়, অর্থনীতির কি অবস্থা হবে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনে এর কি প্রভাব পরবে সবকিছু নিয়েই মূল্যায়ন চলছে। স্বাস্থ্যকর্মী আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষ ছাড়া সবাইকে বাড়িতে থাকতে হবে, মাঝে মধ্যে শুধু বাজার করার জন্যে বাইরে যেতে পারবে। তাই সবাইকে বারবার বলা হচ্ছে, নিয়মনীতি মেনে চলো, এতদূর যেতে বাধ্য করো না। ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ আমাদের নিজেদের হাতে। নিয়মনীতির দিকে কঠোর দৃষ্টিপাতের জন্যে আজকে দোকানমালিকদের সাথে কথা বলা হয়েছে। আপাতত সংক্রমণের মাত্রা এক দশমিক ছয়, যেকোন মূল্যে এটিকে একের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এখন লকডাউনে গেলে আপাতত হাসপাতালের ভীড় কমবে না তবে ভবিষ্যতের সংক্রমণের মাত্রা কমতে সাহায্য করবে। ক্যাবিনেট যা দরকার তাই করবে, কিন্তু সে পরিস্থিতি তৈরী করা কি ঠিক হবে? মার্চের ফলাফল থেকে আমরা জানি, আমরা চাইলে এই নিয়মগুলো পালনের মধ্যে দিয়েই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। স্বাস্থ্যকর্মীরা আর কুলাতে পারছে না, সংক্রমণ রোধ করতেই হবে। আমাদেরকে আবার জুন-জুলাইয়ের পরিস্থিতিতে ফেরত যেতে হবে যেখানে কম সংক্রমণের পরিস্থিতিতে সবাই স্বাভাবিক জীবনের দিকে ফিরছিলাম। কিন্তু সেটার জন্যে সময় লাগবে। অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত আংশিক লকডাউনের কোন পরিবর্তন হবে না। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, সাহায্যকারীরা নিজেরা অসুস্থ হচ্ছেন, কেউ কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, কেউ কেউ কেয়ারন্টিনে আছেন। অনেক রোগী, অপ্রতুল স্বাস্থ্যকর্মী সবকিছুকে দ্বিগুন ঝামেলাপূর্ণ করে তুলেছে। কিন্তু তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না, ফ্রন্টলাইনের কর্মীদের সম্মান করতে হবে, পরিস্থিতি বুঝতে হবে। পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের কর্মী থেকে পুলিশ সবাই আমাদের সেবা দিচ্ছে, যার যার দায়িত্ব পালন করছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা বাঞ্চনীয়। গত উইকএন্ডেও অনেক বাসায় পার্টি হয়েছে, বড় বড় পার্টি হয়েছে এই নিয়ে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট? দায়িত্বহীন, চরম দায়িত্বহীন কিন্তু আশার কথা হলো নেদারল্যান্ডসের পঁচিশটি শহরের মেয়র একসাথে বসে এই নিয়ে আলোচনা করেছে, কঠিন থেকে কঠিনতর ভাবে নিয়ম পালনের দিকে তারা দৃষ্টি রাখবে। কিছু কিছু হাসপাতালে তিল ধারনের ঠাই নেই, স্বাস্থ্যকর্মীরা কতদিন এভাবে সামলাতে পারবে মিনিস্টার ইয়ং? পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা আংশিক লকডাউনের ওপরও আরো কিছু নিয়মের কথা ভেবেছি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের আমাদের রক্ষা করতে হবে। মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট তেরোই অক্টোবর বলেছিলেন আজ জানাবেন, আজ আবার বলছেন সামনের মংগলবারে জানাবেন, আবার বলেছেন সব পরিস্থিতি আপনাদের জানা আছে, মূল্যায়ন চলছে, কিসের ভিত্তিতে বলছেন? তেরো তারিখে কি আপনি বা আপনারা সাতাশ তারিখের পরিস্থিতির হিসেব করে উঠতে পারেন নি? শুধু একটি বিষয়কে মাথায় রেখে হিসেব করা হচ্ছে না, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে তাই পরিস্থিতি সারাক্ষণ যাচাই করা হচ্ছে। সামনেই উৎসবের দিন, সে নিয়ে কিছু ভেবেছেন? ডিসেম্বরের শুরুতেই সেন্ট মার্টিন আর সান্টা ক্লজের উৎসব, যদি পুরোপুরি লকডাউনে না যাই তবে তিনজন মেহমান নিয়ে প্রতিটি পরিবার উৎসব পালন করতে পারবে, আর পুরোপুরি লকডাউন হলে সেটিও সম্ভব হবে না। ক্রিসমাস নিয়ে এখনো ভাবি নি। ক্রিসমাস ভ্যাকেশান আর শীতকালীন খেলাধূলা নিয়ে কি ভাবছেন? খুব শীঘ্রই নেদারল্যান্ডসের ভেতরে ছুটি কাটানো কিংবা নেদারল্যান্ডসের বাইরে যাওয়া নিয়ে নিয়মগুলো জানিয়ে দেয়া হবে, আপাতত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে যে ট্রাভেল এডভাইজ দেয়া আছে, সেগুলো অনুসরণের কথা সবাইকে বলা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্যাফে খোলার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই।

Monday 26 October 2020

শাস্তি ছাড়া সন্তান বড় করার ১০ উপায়

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1819424.bdnews?fbclid=IwAR2-60O2CDNV2EcfToOFynvq8P0Dg7Dfpx01qML94qnyzmuXoNWXxECvH8c ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ নামে এ বইটি এখন পর্যন্ত উনিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেস্ট সেলার এ বইয়ের লেখক নাওমি আলডর্ট। তিনি সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে শিশু-সন্তান বড় করা নিয়ে বিভিন্ন রকম সহায়তা ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে নাওমি আলডর্ট নিষ্ঠার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা, বাবা-মায়ের আবেগ এসবই তার কাজের অন্তর্ভুক্ত। সন্তানকে শাসন করা তার কাজের পদ্ধতি নয়, বরং শাসন না করে একসঙ্গে কিভাবে শান্তিতে বসবাস করা যায় সেটাই তার গবেষণা ও কাজের মূল প্রতিপাদ্য। মা-বাবা আর শিশু-সন্তানদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন। নাওমি আলড্রটের মতে, বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় তুচ্ছ সব কারণে বাচ্চারা কিছু ভাঙে কিংবা দুষ্টুমি করে। কখনো নিজের মত হাসিখুশি খেলছে আবার কখনো রেগে গেছে কিংবা বিভ্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চা যতটা কষ্টে থাকে ততটাই কঠিন আচরণ করে আর ততোটাই তার ভালবাসা আর বোঝাপড়ার দরকার হয়। অন্যভাবে বললে, বাচ্চাদের কোন আচরণই খারাপ নয়। আমরা এভাবে দেখতে পারি- যেসব আচরণ বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবে করে থাকে এই বাচ্চাটি সেটি করছে না। দায়িত্বহীন আচরণ থেকে বিরত রাখতে, নিয়মনিষ্ঠভাবে শিশুদের বড় করার জন্য আমরা যেসব শাস্তি দেই, চড় মারা কিংবা কথা না শোনার পরিণতিতে আলাদা রাখা, সেগুলোতে আমি আস্থা রাখি না শুনলে অনেক অভিভাবকই অবাক হন। আমাকে জিজ্ঞেস করে, তাহলে বাচ্চাদের আচার ব্যবহার শেখাবো কী করে? আমি বলি, বাচ্চারা তা-ই শেখে যা তারা দেখে। শিশুদের শেখানোর সবচেয়ে সোজা রাস্তা হলো, যা শেখাতে চাই নিজে সেভাবে আচরণ করা। সহানুভূতি আর উপলব্ধি। আমরা যদি মারি, শাস্তি দেই, চেঁচাই তবে শিশুরাও সেই উগ্রতাই শিখবে। তবে শিশুদের আলাদা করে রাখা অনেকটা ছেড়ে চলে যাওয়ার মতোই ঘটনা। শিশুরা কি করে তাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা শেখানোর পরিবর্তে তাদেরকে এই কথাই জানানো হয়, তাদের ভয়ের সময় যখন আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন আমরা তাদের পাশে নেই। কিন্তু আমি বেশির ভাগ সময়ই চাই, শিশুটির পাশে থেকে তাকে তার অনুভূতি নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দিতে। এর মানে কখনোই এটা না যে, সন্তান বড় করার দায়িত্ব থেকে আমরা নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি কিংবা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি নয়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মারামারি নয়, কাপড়ে প্রস্রাব করা নয়, প্রতিবেশীর বাগানের টিউলিপ ছেঁড়া নয়, কুকুরকে ব্যথা দেওয়া নয়। এগুলো শাস্তি নয়, সীমারেখা। নিজেকে এখন প্রশ্ন করবে তো বাচ্চাকে কি করে শেখাবো ভদ্র আচরণ করতে, পরেরবার এ কাজগুলো না করতে? গবেষণা থেকে দেখে গেছে যে প্রকৃতপক্ষে শিশুকে শাস্তি দিলে তারা আরও বেশি অসদাচরণ করে। শাস্তি পেলে শিশুরা আরও উগ্র আর আত্মরক্ষামূলক আচরণ করে। এড্রেনালিনে হরমোনের প্রবাহ, যুদ্ধ, পালানো কিংবা বলিষ্ঠতা হরমোনের প্রদাহ বেড়ে যায় আর একইসঙ্গে যৌক্তিক ভাবনাকে ব্যাহত করে। কি কারণে তারা শাস্তি পেয়েছিলো শিশুরা সেটা দ্রুতই ভুলে যায়, এমনকি সপ্তাহজুড়ে শাস্তির অনুভূতির পরও এর পরিণাম ভুলে থাকে। যদি তারা কিছু শেখে সেটা হলো মিথ্যে কথা বলা, যাতে পরেরবার ধরা না খায়। ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ বইটির প্রচ্ছদ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ বইটির প্রচ্ছদশাস্তি সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার দূরত্ব বাড়িয়ে তাদের ওপর পিতামাতার প্রভাব কমিয়ে দেয়। যেসব সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নিশ্চিত বোধ করে না তারা ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না, তাদের বুদ্ধিমত্তার মাত্রাও কমে যায়। সোজা কথা, একজন দায়িত্বশীল, বন্ধুপ্রতীম আর সুখি সন্তান তৈরি করতে শাস্তি কোন সাহায্য করে না। এ শুধু ভুল শিক্ষাই দেয়। এর বদলে যদি আমরা সীমারেখা তৈরি করে দিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ থাকি এবং তাদের খুব কাছাকাছি থাকি, তাহলে শিশুরা আরও ভাল বুঝতে পারে। ওরা আমাদের শাসনের কাছে নত হবে না, তারা নিজেদেরকে দায়িত্বশীল ও প্রতিরোধী ভাবে, অন্যের ওপর তাদের প্রভাব দেখতে চায় এবং সবকিছুতে নিজেকে জড়াতে চায়। বাবা-মাকে দেখে শিশুরা যেহেতু শিখেছে কিভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তারা নিজেরাও জানে কিভাবে আবেগকে আর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা যেরকম সেভাবেই যেহেতু তাদেরকে গ্রহণ করা হয়েছে তারাও নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার কারণ খুঁজতে উৎসাহী থাকে। ১. নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এখান থেকেই শিশুরা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। যখন রেগে থাকবেন তখন সেই বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার দরকার নেই। শিশুর ওপর সেই মুহূর্তে অনেক রেগে থাকলে, একজন চমৎকার অভিভাবক হিসেবে আপনার কি করা উচিত? তাহলে তাই করুন। আর যদি না করতে পারেন, সেই পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে খুব গভীর নিঃশ্বাস নিন। সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার প্রবৃত্তি নিবৃত করুন। এটি সবসময় অপ্রয়োজনীয় ভুল থেকে রক্ষা করে। ২. অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন এড্রেনালিন হরমোন কিংবা যুদ্ধ, পালানো কিংবা বলিষ্ঠতা হরমোনের প্রাবল্যের কারণে যখন আপনার সন্তান খুব অস্থির তখন সে কিছু শিখতে পারবে না। তখন তাকে উপদেশ দেয়ার বদলে নিজের কাছে বসিয়ে নিজের উপস্থিতি দিয়ে তাকে তার কাজটি উপলব্ধি করতে দেয়া উচিত। আপনার মানসিক-পীড়িত শিশুর জন্য একটি সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করা হবে আপনার লক্ষ্য। নিরাপদে, নজর দিয়ে, সমাধানের মনোভাব নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করাই একটি শিশুকে শিখতে সাহায্য করে। সবোর্পরি কিভাবে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয় তা জানতে হবে। উত্তাল আবেগপূর্ণ মুহূর্তে ওদের সঙ্গে তর্ক না করার চেষ্টা করুন। পরে সে নিজেই এত ভালবাসবে এত কাছের ভাববে যে নিজে থেকেই আপনার কথা শোনার জন্যে তৈরি হয়ে যাবে। আর দয়া করে ‘চুপ করো’ এই জাতীয় কথাগুলো বলবেন না। কারণ, এ কথাগুলো অনুভূতিকে আহত করে। আর ‘মিথ্যা কথা বলো না’ এমন কথা আমাদের হৃদয়ের অনুভূতি ছিঁড়ে ফেলে। ৩. একটি শিশু কী করে শেখে সেটা ভাবার চেষ্টা করুন উদাহরণ হিসেবে দাঁত মাজার কথাই ধরা যাক। সন্তান শিশু থাকতেই শুরু করুন, তাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের দাঁত মাজুন। ব্যাপারটা তার জন্য একটু একটু করে মজাদার করে তুলুন। তারপর ধীরে ধীরে তার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিন এবং একদিন সে নিজেই করবে। ঠিক এই নিয়মেই সে ধন্যবাদ বলা শিখবে, নুয়ে পরা, নিজের জিনিস মনে রাখা, নিজের পোষা জীবকে খাওয়ানো, স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ করা এরকম আরও অনেক কিছুই যা আপনি ভাবতে পারেন। নিয়মানুবর্তিতা একটি অমূল্য ব্যাপার, কারণ এটি আপনার সন্তানকে প্রাথমিকভাবে দক্ষতা অর্জনে গঠন করবে, ঠিক যেমন বাড়ি তৈরি করতে গেলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হয়। সন্তান জ্যাকেট ভুলে রেখে আসলে আপনি রাগ করতেই পারেন, কিন্তু শিশুর সঙ্গে চিৎকার চেঁচামিচি তাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে না যতটা আপনার পাশে থাকা করবে। ৪. সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সঙ্গে কথা বলুন যে কোন পরিস্থিতিতেই সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন, আর তার আরও ভাল করার ইচ্ছাকে উৎসাহ দিন। সব সময় মনে রাখুন, শিশুদের মন খারাপ থাকলে কিংবা আমাদের থেকে আলাদা থাকলে অন্যায় আচরণ করবেই। বুকে টেনে নিয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি জানি তুমি রেগে আছো, আমাকে বলো, কি চাও’। মারবেন না তাকে। কিংবা ধরে বলুন, ‘আমি জানি তুমি আরও খেলতে চাইছো, কিন্তু এখন তোমার ঘুমের সময়।’ খুব ভালবাসা নিয়ে তাকিয়ে বলুন, আমি জানি এখন তোমার মন খারাপ। কাঁধে হাত দিয়ে বলুন, বিস্কুটের কথাটা আমাকে বলতে তুমি ভয় পাচ্ছো! ৫. নিয়ম-নীতি শেখান, তবে ব্যাখ্যা করে দিন কিছু নিয়ম মানা অবশ্যই দরকার, আর এর থেকে আপনি ওর অবস্থানও জানতে পারেন। যখন শিশুরা অনুভব করে আমরা তাদের বুঝতে পারছি তখন তাদের মধ্যেও আমাদের কথা মেনে নেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়। ‘এত জেদের কিছু নেই, তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো আর রাগ করে আছো, কিন্তু সেটা তুমি তোমার ভাইকে গুছিয়ে বলো।’ ‘এখন ঘুমের সময়। আমি জানি তুমি অনেক লম্বা সময় ধরে খেলতে চাও।’ ‘তুমি চাও না বাবা-মা তোমাকে না বলুক, আমি তোমার কথা শুনেছি, কিন্তু জবাব হলো ‘না’। আমরা তো দুজন দুজনকে চুপ থাকো বলতে পারি না, এমনকি অনেক রাগ আর ক্ষুব্ধ হলেও না। ‘তুমি যত ভয়ই পাও, আমি চাই তুমি সবসময় আমাকে সত্যি কথাটাই বলো।’ ৬. খারাপ ব্যবহার একটি অভিব্যক্তি মাত্র, কারণ জানুন আপনার সন্তানের আচরণ কি ভয়ংকর? তাহলে তার ভেতরে ভয়ংকর কোন অনুভূতি খেলা করছে, তার আরও বেশি ঘুম দরকার। আপনার সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটানোর দরকার, বিশ্রাম দরকার, কান্না করার অনেক বেশি সুযোগ দরকার, আর এসবই ভেতরের আবেগকে সহজে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। মূল কারণটা অনুসন্ধান করুন, তাহলে খারাপ ব্যবহারগুলো এমনিই সমাধান হয়ে যাবে। ৭. হ্যাঁ বলুন যদি একটু আদর করে বলেন, আমরা যা বলবো, শিশুরা সব কথাই শুনবে। না এর পরিবর্তে হ্যাঁ বলার কায়দা খুঁজে বের করতে হবে, এমনকি আপনি যদি সীমারেখা তৈরিও করে রাখেন তবুও। হ্যাঁ এখন সময় হয়ে গেছে সব গোছানোর। হ্যাঁ আমি তোমাকে সাহায্য করবো। হ্যাঁ আমি তোমার খেলনাটাকে রেখে দিচ্ছি এখানে। হ্যাঁ ঠিক আছে, তুমি এখন নালিশ করতে পারো। হ্যাঁ আমরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলে একটা গল্প বেশি পড়তে পারবো। হ্যাঁ আমরা অনেক মজা করতে পারবো। হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালবাসি এবং হ্যাঁ আমি তোমার অভিভাবক হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। হ্যাঁ, আপনার সন্তান ঠিক সেভাবেই আপনাকে উত্তর দেবে ঠিক যেমন আপনি তাকে বলছেন। ৮. প্রতিদিন সন্তানের সঙ্গে আর্দশ সময় কাটান মোবাইল বন্ধ করে, কম্পিউটার বন্ধ করে নিজের সন্তানকে একবার বলুন, পরের বিশ মিনিট শুধু আমরা দুজন গল্প করবো। কী করবো এখন আমরা দুজন? তাকেই ঠিক করতে দিন। পৃথিবীজুড়ে শিশুদের নাকাল হওয়ার তো শেষ নেই, কিন্তু এই বিশ মিনিটের জন্য তাকে প্রাধান্য দিন এবং তাকেই জিততে দিন। চাপা হাসি মনের তিক্ততা, বিদ্বেষ আর অশান্তি দূর করে। তাই তাকে আশ্বস্ত করুন নিরীহ খেলা ও হাসির মাধ্যমে। বালিশ দিয়ে মারামারি খেলুন, কুস্তি করুন, পাশাপাশি শুয়ে থাকুন। তাকে ছোটাছুটি করতে, চেঁচামিচি করতে, তার প্রিয় কাজগুলো করতে দিন। তার সব অনুভূতিগুলোকে আদর দিন। নিজের শতভাগ তাকে দিন। শিশুরা যখন জানবে, প্রতিদিন তাদের বাবা-মায়ের কাছে তারা একটা নির্দিষ্ট বিশেষ সময় পাবে খেলাধুলা করার জন্য, সেটা তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে, তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করবে এবং সেটা তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে। ৯. ক্ষমা করতে জানতে হবে আপনি যদি সারাক্ষণ শুধু নিজের কথাই ভাবেন তবে আপনি কখনোই অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো অভিভাবক হতে পারবেন না। ঠিক আপনার সন্তানের যখন খারাপ লাগে, সে যেমন ভাল ব্যবহার করে সেরকমই কিছু হবে। কিন্তু আপনি সবসময় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে পারেন। আজই শুরু করুন। ১০. আলিঙ্গন করুন যখন সবকিছুতেই ব্যর্থতা আসে, আপনি শক্ত হয়ে সন্তানকে আলিঙ্গন করুন, তাকে আদর দিন। জুড়ে থাকা, ভালবাসা আর সংযোগের নামই তো অভিভাকত্ব।

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেইশে (অক্টোবর)

পুরো ইউরোপই করোনায় জর্জরিত তার মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও আছে। প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার করে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। কোন আশার আলো নেই। হাসপাতালের করোনা ডিপার্টমেন্টে আর জায়গা নেই, আইসিইউ ও প্রায় ভর্তি। স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে। রোগীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে পাঠানো হচ্ছে। জার্মানীতে কিছু করোনা রোগী পাঠানো হয়েছে, জার্মানীকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রতিবেশীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে। আমি প্রেসিডেন্টকে ফোন করে নেদারল্যান্ডসের জনগনের তরফ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু এই রেখাটিকে বদলাতে হবে। তেরো তারিখের পর মানুষজনের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে কিন্তু তার ফলাফল দেখার জন্যে আমাদেরকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। লকডাউন চালু থাকবে নাকি শিথিল হবে না আরো কিছু যোগ করতে হবে এই নিয়ে আমি আর হুগো দ্যা ইয়ং সামনে কথা বলবো। রাজার পূর্ব পরিকল্পিত হেমন্তকালীন ছুটি নিয়ে সারাদেশে কথা হচ্ছে। রাজার ছুটি বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। আবারও জানাচ্ছি, ভুল অনুমানের ওপর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। রাজা নিজেও সেটা বুধবারে সবাইকে জানিয়েছে যেটাকে আমি সম্মান করি। ফ্রীডম অফ স্পীচ নিয়ে ফ্রান্সে যা ঘটে গেলো তা অমানুষিক। আমি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে এমানুয়েল ম্যাক্রোর বুধবারের ভাষণের পর তার সাথে ফোনে কথা বলেছি। আমরা একবার নীরবতা পালন করেছি, সামনের মংগলবারে ক্যাবিনেটে স্যামুয়েল প্যাটির জন্যে আবার নীরবতা পালন করবো, আমরা ফ্রান্সের জনগনের পাশে আছি। প্রতিদিন দশ হাজার সংক্রমণ, আপনার ধারনায় ছিলো? সেপ্টেম্বরে দেয়া নিয়মগুলো যথেষ্ঠ ছিলো না প্লাস কম্পিউটার সিস্টেম আপডেটেড হয়েছে তাই আসলেই কি প্রতিদিন দশহাজার নাকি আগের হিসেবে এডজাস্টমেন্ট ঠিক ঠিক বলা যাচ্ছে না। নেদারল্যান্ডস কি আরো কঠিন লকডাউনের দিকে এগোচ্ছে? তেরোই অক্টোবরের ফলাফল এখনও ঠিকঠাক বোঝা যাচ্ছে না, এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন দিকে যাবো আমরা। ইউরোপের মধ্যে আমরাই প্রথম এত কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি, আমাদের পর ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড আর বেলজিয়ামও কঠিন পদক্ষেপের দিকে এগিয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবহার অনেক কমেছে, রাস্তায় লোক সমাগমও কম। প্রতিটি পদক্ষেপের প্রচন্ড একটা অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে তবে যা দরকার হবে তাই করতে হবে। প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক মার্ক রুতে কে জিজ্ঞেস করেছেন কিংবা বলেছেন, নেদারল্যান্ডস কি সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করছে না কিংবা দেরী করে ফেলছে না? বুধবারে রাজার ভাষণ দেয়ার পেছনে কি আপনার উপদেশ ছিলো? একদমই নয়, নিয়মের মধ্যে আছে, রাজা যদি চায় এবং সেরকম উল্লেখযোগ্য কারণ থাকে রাজা ভাষণ দিতে পারেন। রাজা তার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে তার অনুভূতি থেকে, নিয়মের মধ্যে থেকেই ভাষণ দিয়েছেন। আপনি রাজ পরিবারের ছুটি এবং রাজ পরিবারের অন্যান্য নিয়মিত জিনিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, আপনি আর রাজা দুজনেই ভুল করলেন? তাহলে কি এটা দুই গুন ভুল হলো? আর রাজা বুধবারের ভাষণে কি আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষমা চাইলেন? সরকারী প্লেন কেন সন্ধ্যা সময় নেদারল্যান্ডস থেকে গ্রীসে খালি উড়ে গেলো আবার ফেরত আসলো? প্রিন্সেস কেন তার দুদিন পর ফিরলেন? এর প্রতিটিই রাজপরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার মধ্যে পরে, আমি এর কোন জবাব দিতে অপারগ।

Tuesday 13 October 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরোই (অক্টোবর)

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরোই (অক্টোবর) আগামী চার সপ্তাহের জন্যে আংশিক লকডাউন, দুই সপ্তাহ পর আবার পর্যালোচনা করা হবে, পুরোপুরি লকডাউনে যাওয়া হবে নাকি খানিক শিথিল করা হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে হবে, কোন উপায় নেই। সামনের বছরের প্রথম দিকে কোন একসময় হয়ত ভ্যাক্সিন আসবে কিন্তু ভ্যাক্সিন এলেই কি? ভ্যাক্সিন প্রথমে পাবে যারা বিপদসীমায় আছে তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ং। যদি এভাবেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে নভেম্বরের শেষের দিকে হাসপাতালের অন্যান্য যত সব নিয়মিত এপয়ন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতে হবে এর মানে হলো প্রত্যেক চার জন রোগীর তিন জনের এপয়ন্টমেন্ট বাতিল হবে। এটা ভেবেই অন্য অনেক রোগের রোগী আতঙ্কে অসুস্থ হচ্ছেন। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের পাশে সাধ্যমত দাঁড়ানোর জন্যে ক্যাবিনেট একমত হয়েছে। আটটি নিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন প্রিমিয়ে রুতে। “দেড় মিটার সামাজিক দূরত্বের” সাথে কোন আপোষ নেই। “শিক্ষা” প্রথম কারণ এটি সবচেয়ে জরুরী। আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে চলবে তাতে কোন কিছুর পরিবর্তন আসবে না। “রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, বার আর কফিশপ” আবার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। টেকওয়ে চলতে পারে, কফিশপ থেকেও টেকওয়ে চলতে পারে। হোটেল তাদের নিজেদের মেহমানদের জন্যে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে পারে। যেসমস্ত জায়গায় এলকোহল বিক্রি হয় সব সন্ধ্যা আটটার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। এবং সন্ধ্যা আটটার পর বাড়ির বাইরে এলকোহল নিয়ে বের হওয়া কিংবা পান করাও নিষেধ। কংগ্রেস সেন্টার, থিয়েটার, সব জায়গায় ত্রিশ জনের বেশি মানুষ যেতে পারবে না, ক্যাবিনেট শুধু মাত্র ব্যতিক্রম। মিছিল, চার্চ এসব ব্যতিক্রম। এক পরিবারের বাইরে বন্ধুদের গ্রুপ চারজনের বেশি জমায়েত করতে পারবে না, ভেতরেও না বাইরেও না। দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব আর তেরো বছরের নীচে বাচ্চাদের ধরা হচ্ছে না। চারজন মানে চারজন এ নিয়ে কোন তর্ক নেই, আমরা কঠোরভাবে নজর রাখবো। বাসায় তিন জনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। আগে জন্মদিন বা অনুষ্ঠানে প্রতি ঘন্টায় তিন জন করে ডাকা হচ্ছিলো সেটিও চলবে না। একদিনে তিন জনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। তেরো বছরের ওপরে তিন জন ম্যাক্সিমাম। খেলাধূলায় কোন দর্শক থাকবে না। আঠারো বছর পর্যন্ত সবাই টীমে অনুশীলন করতে পারবে তবে বাথরুম, ক্যান্টিন, চেঞ্জ রুম বন্ধ থাকবে তাই শাওয়ার বাড়ি এসে নিতে হবে। ট্রাভেল আর মানুষের ভীড় এড়াতে আপাতত কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে না। দেড় মিটার দূরত্বে জিম করা যাবে। গ্রুপ স্পোর্টও চারজন ম্যাক্স। সব ধরনের অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ, বার্বিকিউ, ওপেন এয়ার কনসার্ট, মেলা ইত্যাদি সব বন্ধ। মিউজিয়াম, এমিউজমেন্ট পার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি খোলা থাকবে আগের নিয়মে। সিটি সেন্ট্রামে সন্ধ্যায় আর কোন দোকান খোলা থাকবে না, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান ছাড়া সব আটটায় বন্ধ। সুপারমার্কেট রাত আটটার পর কোন এলকোহল বিক্রি করতে পারবে না। ট্রলি স্যানিটাইজ করা আর দেড় মিটার দূরত্ব মেইনটেইন করে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি লোক দোকানে ঢোকানো হলে সেই মুহুর্তে দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে। হোম ওয়ার্কের ব্যাপারেও কঠোরতা দেখানো হবে। এই নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান আর ইউনিয়নের সাথে কথা বলছি। সামনে শরতের ছুটি আসছে। যারা দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে চায় তাদের বলা হচ্ছে, বেশির ভাগ দেশই যেহেতু রেড জোনে আছে খুব দেখেশুনে ছুটিতে যেতে। আর যারা হল্যান্ডের মধ্যেই কোথাও ছুটি কাটাবে তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, যতদূর সম্ভব ভেতরে থাকতে, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি কম করতে। তারপরও বাইরে গেলে, মাস্ক ব্যবহার আবশ্যক। আমরা মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্যে আদালতের সাথে ব্যস্ত আছি, তারপর যেকোন পাব্লিক প্লেসে সাধারণ মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। এমনকি হাই স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীও স্কুলের ভেতরের পাব্লিক প্লেস, যেমন ক্যান্টিন কিংবা লাইব্রেরিতে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করবে। চার স্তরের ঝুঁকি মাথায় রেখে রোড ম্যাপ বানানো হয়েছে। আপাতত সেই রোড ম্যাপ ফলো করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমি জানি পরিস্থিতি খুব হতাশাজনক কিন্তু আমরা কিছুতেই তা ফ্রন্টলাইনে কাজ করা মানুষের ওপর ঝেড়ে দিতে পারি না। স্বাস্থ্যকর্মী, দোকানে কাজ করা মানুষ, বাসের চালক সবার প্রতি সম্মানজনক আচরণ কাম্য। হাসপাতালের ভিজিটর পুরো বন্ধ করতে চাই না কিন্তু কম করতে চাই। যারা সেখানে তাদের শেষ দিন গুনছেন পরিবারের ভালবাসা তাদের দরকার আছে। চৌদ্দই অক্টোবর বুধবার রাত দশটা থেকে এসব নিয়ম কার্যকর হবে। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন, ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছে, এরমানে কি জার্মান, ডেনিশ কিংবা ইটালিয়ানরা যেভাবে নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছে, ডাচেরা দেখায় নি? মার্ক রুতে বলতে বাধ্য হলেন, আক্রান্তের সংখ্যা তো তাই দেখাচ্ছে তবে এবার আমরা কঠোরতর ভাবে দৃষ্টি রাখবো। পঞ্চাশ হাজার পুলিশ আছে, সাথে আছে নেইবারহুড গার্ডস তারা সবাই টহল দেবে, নিয়মের ব্যতিক্রম দেখলেই জরিমানা করা হবে। নিয়মনীতিতে কি কোন ফাঁক ছিলো মিস্টার প্রেসিডেন্ট? ফাঁক খুঁজলে তো পাওয়া যাবেই। চলুন ফাঁক খোঁজার চেষ্টা বাদ দিয়ে আমরা নিয়মগুলো পালনে সচেষ্ট হই, নিয়ম তো নিজ থেকে কাজ করে না, কাজ আমাদের করতে হবে। আর যেখানে যেখানে ফাঁক আছে ধরিয়ে দিন, আমরা শোধরাই, বারবার বলা হচ্ছে, আমরা যেকোন কার্যকারী পরামর্শ, পদক্ষেপের জন্যে উন্মুক্ত। এই প্রথম মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট এত কঠোরভাবে সর্তকবানী উচ্চারণ করলেন। করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে ক্যাবিনেটের বাইরে এখন জনগনও সোচ্চার। সামনের বছর নির্বাচন। উইশ ইউ অল দ্যা ভেরি বেসট মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট। ১৪/১০/২০২০

করোনাকালে শিক্ষা

বাংলাদেশে এইচ-এস-সি পরীক্ষা বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে, আগের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচ-এস-সি মূল্যায়ন করা হবে, এই ঘোষনায় নানা মহলে নানা বির্তক এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ আর ট্রল চলছে। অন্যান্য কিছুর মত এবারও রাখাল ভাই এসাইনমেন্ট দিলো, করোনাকালে ইউরোপের প্রাথমিক-মাধ্যমিক- উচ্চশিক্ষা কিভাবে চলছে সে সম্পর্কে জানাও। এবারের এসাইনমেন্ট শুধু নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক নয়। তবে আমি শুধু মেইনস্ট্রিম নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি। ইংরেজি-আরবি বা অন্যান্য মিডিয়ামের বিস্তারিত খুঁজিনি। ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রাথমিক স্কুলই প্রথম দফায় খুলে দেয়া হয়েছিলো। বাচ্চাদের সংক্রমনের আশঙ্কা কম এবং বাচ্চাদের থেকে বড়দের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে অর্ধেক বাচ্চা একদিন অপর অর্ধেক বাচ্চা অন্যদিন এই ব্যবস্থা প্রথম দিকে ছিলো। পরে সব বাচ্চাই প্রতিদিন স্কুলে গিয়েছে। এটা অবশ্য নেদারল্যান্ডসের নিজস্ব উদ্ভাবন ছিলো না। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর পদক্ষেপগুলো সুফল দিচ্ছিলো তাই নেদারল্যান্ডস তাদের অনুসরণ করেছে। আইসল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রচুর নিয়ম নেদারল্যান্ডস অনুসরণ করেছে। বাংলাদেশেও আমি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আমি পত্রিকায় পড়েছিলাম, প্রয়োগ করা হয়েছিলো কি না জানা হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা গতানুগতিক চলেছে। তবে সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, "শিক্ষক, স্কুল নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা বর্তমানে বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া এবং বাড়িতে থাকা শিশুদের জন্য শিক্ষার আয়োজনে খুব ব্যস্ত। এজন্য বিদ্যালয়গুলোর শক্তি প্রয়োজন। সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই বছর শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা দিতে হবে না।" এছাড়া নেদারল্যান্ডসে প্রতিটি বাচ্চার দুই বছর থেকেই মানসিক-সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা'র ফলাফল আলাদা করে রেকর্ডে থাকে বলে, প্রাথমিক শিক্ষার শেষ ধাপে, স্কুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকে বিধায়, সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আলাদা তেমন কোন প্রভাব রাখে না। স্কুলের রেজাল্টের সাথে সাধারণতঃ সমাপনী পরীক্ষার রেজাল্টের বিরাট কিছু পার্থক্যও থাকে না। অন্যান্য বছরের মত এ বছরও, স্কুলের গ্রেডিংই চূড়ান্ত ছিলো। https://www.rijksoverheid.nl/actueel/nieuws/2020/03/18/geen-eindtoets-in-groep-8-dit-jaar নেদারল্যান্ডসে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক একই সাথে চলে। মার্চের তেরো তারিখ থেকে স্কুল বন্ধ দেয়ার পর আঠারো তারিখ থেকে অনলাইনে ক্লাশ শুরু হয়। ক্লাশ, ক্লাশটেস্ট অনলাইনেই চলে। জুনের দুই তারিখ থেকে স্কুল আবার শুরু করে, যারা খুব ভাল ছাত্র-ছাত্রী তারা চাইলে স্কুলে আসতে পারে নইলে অনলাইনে ক্লাশ করবে আর যারা মাঝারি তারা ক্লাশে আসবে এই নিয়মে। তারপর যথানিয়মে কিছু স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হয় কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলই পুরো স্কুল ইয়ারের সাবমিশান আর ক্লাশ টেস্টের ভিত্তিতে গ্রেডিং দিয়েছে। খুব কম স্কুলে এবার বার্ষিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকারী পরীক্ষা হয়নি। মে মাসে সাধারণতঃ সরকারী পরীক্ষা হয়, সে সময়ে করোনার বাড়াবাড়িতে আগের ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেডিং দেয়া হয়েছে আর অনলাইন টেস্ট ও গ্রেডিং এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি চলেছে। এক বন্ধু কন্যা, মেডিকেলে ভর্তি হয়ে বলেছে, আমাদের সবাই বলবে, "দ্যা করোনা ব্যাচ"। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। বরাবরের মত, পরীক্ষার সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া ছিলো, আর স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন টেষ্টের মত নির্ধারিত কিছু নিয়ম ছিলো, এক পেইজ শেষ করে অন্য পেইজে যাবে আর তারপর ফেরত আর আগের পেইজে যেতে পারবে না। তারওপর প্রত্যেক স্টুডেন্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মোবাইল অন করে পাশে রাখতে বাধ্য ছিলো, পরীক্ষকরা র্যান্ডম ফোন করে, তাদের চেক করেছে। ইংল্যান্ডে জুন থেকে জুলাই স্কুলগুলো খোলা ছিল। কেয়ার ওয়ার্কারদের কাজের সুবিধার জন্য, তাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পেরেছে। বাকিরা হোমস্কুলিং করেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর স্কুল বন্ধ ছিল তারপর সেপ্টেম্বরে যথারীতি স্কুল খুলেছে। করোনার জন্য এ বছর কোন পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। এ লেভেল, এএস লেভেল, এবং জি সি এসি পরীক্ষার্থীদেরকে একটা হিসাব কষে গ্রেড দিয়ে দেয়া হয়েছে। অফিস অফ কোয়ালিফিকেশনের কষা হিসেব ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করায় স্কুল প্রথমে যে হিসেব করেছিল সেই হিসাবকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রী ফলাফলে খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ দায়িত্বে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। সুইডেনে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল খোলা ছিলো। ষোলোর ওপরে অনলাইন ক্লাশ ছিলো। সুইডেন লকডাউনে না গেলেও সরকারী পরীক্ষা হয়নি। সাবমিশান, আগের বছরগুলোর পরীক্ষার ফলাফল এবং এ বছরের ক্লাশ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি অনলাইন ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। নরওয়েতে করোনার প্রকোপ কমে এলে স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সরকারী পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী গুড়ি মেলবি বলেছেন, সময় এবং শক্তি পরীক্ষার পেছনে ব্যয় করার চেয়ে স্কুলের ভাল শিক্ষা প্রদান আর সঠিক মূল্যায়নে মনোনিবেশ করা বেশি জরুরী। লিখিত, ব্যবহারিক বা মৌখিক পরীক্ষা না হলেও ছাত্র-ছাত্রীরা যথাসময়ে ডিপ্লোমা পাবে।" বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। https://www.regjeringen.no/no/aktuelt/alle-eksamener-for-10.-trinn-og-alle-skriftlige-eksamener-for-videregaende-skole-er-avlyst/id2694883/?fbclid=IwAR1G5ZOBzqCqPJnbvoQ-YbzcLVrVVfWZCTPyVpoPIL51XebwZEATS37m2HI এখানে নতুন শিক্ষা বছর শুরু হয় সাধারণতঃ সেপ্টেম্বর থেকে। দুই হাজার বিশ-একুশ সেশনে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ক্লাশ আর পরীক্ষা স্বাভাবিক গতিতে চলছে আপাতত। এখনও সরকারি পরীক্ষার সময় আসেনি, সেটা দুই হাজার একুশের মে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন লাইন আর অফ লাইন মিলিয়ে ক্লাশ আর পরীক্ষা চলছে। রাখাল ভাইয়ের সৌজন্যে তাতা ফ্র্যাঙ্কের করোনা ডায়রীতে আর একটি সংযোজন। কৃতজ্ঞতাঃ আশেকা শীতু, শ্রীপর্না রায়, রতন সমাদ্দার, তানিশা তালুকদার আর শোহেইল মতাহির চৌধুরী। ১১/১০/২০২০