Tuesday 17 September 2019

আজ রবিবার


আজ রবিবার

রোববার দিনটা নীপা’র খুব পছন্দ। তেমন কোন কাজ রাখে না সে, বেলা করে ঘুমিয়ে, আলসেমী করে, গড়িয়ে কাটায়। চারপাশ  নিস্তব্ধ থাকে,  বাতাসের প্রেম স্পর্শে কাতর হওয়া পাতার কাঁপুনি শুনে, কিংবা বিরহ কাতর নাম না জানা কোন পাখির অভিমানী কন্ঠের গান শুনে দিন কাটিয়ে দেয়া যায়। আকাশ কুসুম সব ভাবতে ভাবতে বিছানায় এপাশ ওপাশ গড়াতে গড়াতে প্রায় প্রতি রোববারের সকাল তার দুপুরে মিলায়। ক’দিন একটানা বৃষ্টির পর আজ সূর্য উঠেছে, পর্দা সরাতেই, ছ’তলার ওপরের এই ফ্ল্যাটটা, একরাশ আলোয় উজ্জল হয়ে উঠলো। সাথে সাথে নীপাও চনমন করে উঠলো, রনি বাথরুমে ঢুকেছে, একটা কিছু ভাল নাস্তা বানিয়ে, দিনটা দুজনের ভাল করে শুরু করা যাক। ছেলেটা এমনিতে খেতে এত ভালবাসে কিন্তু সারা সপ্তাহ দু’জনকেই অফিসে দৌড়াতে হয় বলে, সকালে ঠিক করে একসাথে বসে আয়েশ করে নাস্তা খাওয়া হয় না। সেই পাউরুটি, মাখন, জ্যাম কিংবা দুধ সিরিয়াল, ঝটপট কিছু। ফ্রিজ খুলে নীপা, মাশরুম, ডিম, ধনেপাতা আর কাচামরিচ বের করলো, হাত বাড়িয়ে ঐদিক থেকে পেয়াজ তুলে নিলো, স্প্যানিশ ওমলেটের মত খানিকটা পুরু করে মাশরুম ওমলেট বানাবে, ফ্রোজেন পরোটা আছে তা ভাজবে আর কড়া করে চা। রনি’র কড়া চা, খুব পছন্দ। কাজ করতে করতে জানালা খুলে দিলো, খুলে দিতেই পাগলা হাওয়া সুযোগ পেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে নীপাকে জড়িয়ে ধরলো। ভাল লাগায় বুঁদ হয়ে নীপা মোবাইলটা হাতে নিলো, খুব আস্তে করে গান প্লে করলো, লতা গাইছে, আমার মালতীলতা কি আবেশে দোলেএএএ  


রোববার অনেক সময় নিয়ে রনি গোসল সারে। ডিয়ার মিস্টার হ্যান্ডসামের সমস্ত রূপচর্চা সারার আজকেই সময় কি না। তিনি তাই এখনও বের হন নি। কড়া করার জন্যে, চা’টাকে জ্বালে বসিয়ে রাখলো নীপা, গানের সাথে সে নিজেও গুন গুন করছে, হঠাৎ ফেসবুকের নোটিফিকেশান এলো, রাসেল, রনির ছবিতে কমেন্ট করেছে। কাজ নেই, বসে আছে, ঢুকলো ফেসবুকে, ওহ, কাল রাতের পার্টির ছবি নিশো আপ্লোড করে রনিকে ট্যাগ করেছে, তাতে অন্যেরা মন্তব্য করছে। ছবিগুলো দেখতে দেখতে নীপার মাথায় আগুন জ্বলতে লাগলো, দুটো ছবিতে হাঁদা রনিটা একেবারে আদনানের গা ঘেঁষে বসে ছবি তুলেছে, কোন আক্কেল যদি থাকে গাঁধাটার। এইটা কিছু হলো? বিরক্তি যখন চরমে তখন মাথা মুছতে মুছতে টাওয়াল নিয়ে রনি হাজির।


গরম গরম নাস্তা দেখে আনন্দের গলায় বললো, ওয়াও সুইটহার্ট, সকালে উঠেই এত কিছু?
নীপা সেসবের ধার ধারলো না, পুরোদস্তুর খ্যাঁক করে উঠলো, কি ছবি তুলেছিস তুই? আক্কেল কি বালতিতে রেখে গেছিলি?
নীপার মেজাজের কোন হেতু রনি ধরতে পারলো না। এই সাত সকালে, কিসের ছবি, কেন ছবি, কোথায় ছবি। শান্ত গলায় বললো, ছবি মানে?
ঝাঁঝিয়ে উঠে নীপা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, এই দ্যাখ মানে
টেবলের এই পাশ থেকে রনি উঁকি দিয়ে ছবি দেখে অবাক গলায় বললো, কি হয়েছে এই ছবিতে? এর মধ্যে আবার কি পেলি তুই!  
কি পেলাম মানে? উত্তেজিত গলায় নীতু, তুই সরে বসতে পারিস না, যার তার সাথে ওতো ঘেঁষাঘেষি কি তোর?
নীপার উত্তেজনা দেখে হেসে ফেললো রনি। এই নীপা রেগে কাই, পর মুহূর্তেই ঠান্ডা পানি। পুরো উত্তর থেকে দক্ষিণ হতে সময় নেবে না। কি থেকে যে রাগবে, কি নিয়ে হাসবে, বলা মুশকিল। তবে একটা ট্রিক সে জেনে নিয়েছে, রাগ যতই হোক, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে আলতো চুমু খেয়ে, ভালবাসি বললেই, বউ ঠান্ডা।  
হাসতে হাসতে বললো, ছেলের পাশে বসাতেই তুই এত পজেসিভ আর মেয়ের পাশে বসলে তো তুই আমাকে আস্ত রাখতি না রে।
মুখ ভেংচে নীপা বললো, আহা, সেই আনন্দে তুই আর কূল পাচ্ছিস না, না? ছেলে তো কি হয়েছে, মানুষ না?
আচ্ছা আচ্ছা, ঠিকাছে, চল, এবার নাস্তা খাই, তোকে বাদ দিয়ে আর কারো এত কাছে বসবো না, ঠিকাছে, পাগল একটা তুই। 
নীপা যতই রাগছে, রনি ততই হাসছে, কিছুতেই ওর রাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটা আর নীপার সহ্য হলো না। দাঁড়া, খাওয়াচ্ছি নাস্তা বলে, হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে, ওমলেট ভাজার পর যে চারটা ডিম ছিলো তার দুটো প্রথমে ছুঁড়ে মারলো
এই দাঁড়া, এই দাঁড়া, বলতে না বলতেই ডিম মাথায় লেগে, ভেঙে, কুসুমে চুলে মাখামাখি হয়ে, কান বেয়ে বেয়ে নিচে পরে রনি একদম একশা। এবার নীপা বেশ মজা পেয়ে, খিলখিল হাসতে হাসতে বাকি দুটো ডিমও ছুড়ে মারলো। নীপার পাগলামিতে রনি কাহিল কিন্তু ছেড়ে দিলে চলবে না, এই কুসুম মাখা মাথা, শরীর সে নীপার গালে, মুখে, বুকে সব জায়গায় ডলে দিলো। ডিমে মাখামাখি হয়ে, জড়াজড়ি করে দুজনেই হাসতে লাগলো।
গাঢ় গলায় রনি বললো, মাথা ঠান্ডা হয়েছে এবার সোনাবৌ?
আদর গলায় বললো নীপা, হু।


সূর্য কখন আবার ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে, কেউ টের পায় নি। আকাশ আদরের চাদরে এদের ঢেকে রাখবে বলে, কালো পর্দা দিয়ে চারপাশ ঢেকে ফেলেছে। ঠান্ডা বৃষ্টির ছাঁট জানালার গ্রীল ভেদ করে যখন ওদের স্পর্শ করলো, ওদের মনে হলো, রোববার হলেও আজ আরও কিছু কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিতে ঘর, বিছানা সব ভিজে যাওয়ার আগেই জানালা বন্ধ করতে হবে, বারান্দা থেকে কাপড় তুলতে হবে, আরও কত কি।

তানবীরা
১৬/০৯/২০১৯

Sunday 15 September 2019

অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি
তারসাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি
রঙ ভরা এই শহরে যতই দেখেছি
আরে গোলক ধাঁধার চক্করে ততই পড়েছি


ঢাকা নগরীর প্রধান কিংবা আপাতত একমাত্র সমস্যা কি কাউকে জিজ্ঞেস করলে, এক কথায় যার উত্তর মিলবে, “যানজট”।

বাংলাদেশের মানুষের স্বভাব হলো, চিপায় পরলে চিপার মধ্যে নিজেকে এডজাস্ট করে ফেলা, কেন চিপা হলো, কোথা থেকে চিপা এলো, কিভাবে চিপাকে ফিক্স করা যায়, তা না ভেবে, শুধু নিজেকে কিভাবে চিপার মধ্যে ভাল রাখা যায়, এই আমাদের ভাবনা।  

ধানমন্ডি থেকে লেক সাকার্স, শুক্রাবাদ থেকে আগারগাও, মোহাম্মদপুর থেকে হাতিরপুল, উত্তরা থেকে টঙ্গী, গুলশান টু বাড্ডা যেদিকেই যাবেন, দেখা যাবে, ঠ্যালায় করে রাস্তায় রাস্তায় সব্জি, মাছ বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে বাজারে যাওয়ার দরকার নেই, রাস্তায় আপনি এই অতি প্রয়োজনীয় কাজটি সেরে ফেলতে পারছেন। স্কুলের সামনে ভীড়ের কারণে দাঁড়ানোর উপায় না থাকলেও, থ্রী পিস থেকে পর্দা, চুড়ি থেকে ভুনা খিচুড়ীর ঠ্যালা আছে এবং তাতে প্রচুর কাস্টমারও আছে। অনেক রাস্তায়, রাস্তার দুপাশেই ঠ্যালা আছে।

একেতো গাড়ি চলারই রাস্তা নেই, তারমধ্যেই ঠ্যালা আর গ্রাহকের ভীড়, প্রতিদিন, প্রতিবেলা। ঠ্যালা ঘিরে মানুষের ভীড়, দামাদামি, বাছাবাছি সব চলছে হরদম, ওদিকে রিকশা, গাড়ি সব আটকে আছে, কখনও কখনও ধাক্কা লাগছে, মোটর সাইকেলের সাথে রিকশার, কিংবা রিকশা-গাড়ির সাথে মানুষের তবুও সবাই কি আশ্চর্য নির্বিকার। ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম থুক্কু ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গার কি অপটিমাম ব্যবহার, ঢাকা শহরের ড্রাইভাররা ছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে এত দক্ষ কিনা আমার দারুন সন্দেহ আছে। একেতো এত মানুষের ভার বহনের জন্যে রিসোর্স/ইনফ্রাসট্রাকচার নিয়ে এই শহর তৈরী হয় নি তারপরও যা আছে তার কি অপরিনামদর্শী যথেচ্ছ ব্যবহার। জন্মের পর থেকেই ফুটপাত হকারদের দখলে দেখে আসছি তা নিয়ে আর বলার কিছু নেই, সেটা স্বতঃসিদ্ধ ধরেই নিলাম না হয়।    

রাস্তার পাশে যাদের দোকান আছে, তারা দোকানের সামনে রাস্তার মিনিমাম চার হাত জায়গা দখল করে রাখেন, কোকের কেইস সাজান, চিপসের প্যাকেট টানান, কলা ঝোলান, নইলে বেঞ্চ আছে বসে কিছু খান, মোদ্দা কথা, দোকানের বাইরের রাস্তার চার হাতও তারই দখলে থাকতে হবে। আমি দেখেছি, গাড়ি/মোটর সাইকেলের ধাক্কায় কিছু সরে টরে গেলে আবার এনে ঝেড়ে বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু দমবে না, যতই ভয়ের হোক না কেন। একেই সব অপ্রশস্ত রাস্তা ঢাকায়, তার প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহার হয় অন্য কাজে। প্রত্যেকে যানজটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টায় কেউ নেই।


প্রতিদিন এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মর্মান্তিক সব কান্ড ঘটছে, সাধারণ মানুষ লিস্ট বদারড। ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহারে শহর জুড়ে মানুষের কি প্রচন্ড অনীহা। “পথচারী”কে জরিমানা করার নিয়ম কেন আসে না, বুঝতে পারি না। এত ভীড়ের মাঝে মানুষ বাচ্চার হাত ধরে নির্দ্বিধায় রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে, সারাটা সময় চোখ মোবাইল স্ক্রীনে। পেছন থেকে গাড়ি হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে, একবারও মোবাইল থেকে চোখ সরায় না, মধ্য রাস্তা ছেড়ে এক পাশে হাঁটে না। দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ড্রাইভার দায়ী, দেখে চলার দায়িত্ব শুধুমাত্র ড্রাইভারদের ওপর।


এক সময় ঢাকাকে বলা হতো মসজিদের নগরী এখন অনায়াসে বলা যায়, “মার্কেটের নগরী”। জায়গায় জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক, স্কুল অফিস যার যার ইচ্ছে মতো। না সিটি করপোরেশান থেকে অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কা বা রেওয়াজ আছে, না আছে কোন আরবান প্ল্যানিং। না আছে নিয়ম নীতির কোন বালাই। একটা ক্লিনিক করতে হলে মিনিমাম কয়টা গাড়ির পার্কিং থাকা উচিত, এম্বুলেন্স কোন রাস্তা দিয়ে আসবে ইত্যাদির কোন বালাই দূর দূরতক নেই। এন্ডহোভেন শহরটি আটাশি দশমিক সাতাশি স্কোয়ার কিলোমিটার, জনবসতি দুই লক্ষ একত্রিশ হাজার চারশো ছয় জন, পুরো শহরটিতে দুটো বিরাট শপিং মল আর নেইবারহুডে ছোট ছোট কিছু শপিং এরিয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্যে। ঢাকা হলো তিনশো ছয় দশমিক চার স্কোয়ার কিলোমিটার, জনসংখ্যা বাদ দেই, কতগুলো মার্কেট/শপিং সেন্টার/শপিং মল আছে ঢাকাতে কেউ বলতে পারবে? কোন হিসেব আছে কারো? 



শুধু রিকশাই যানজটের কারণ, এসবই কি যানজটের কারণ নয়? কয়দিন আগেই বাচ্চারা “নিরাপদ সড়ক চাই” নিয়ে এত হাঙ্গামা করার পর যদি এই পরিনতি থাকে তাহলে প্রভুই এই জাতির একমাত্র ভরসা।


বিঃদ্রঃ রাস্তা/ যানজট সংক্রান্ত কোন গান/কবিতা কেউ কি জানেন, তাহলে মন্তব্যের ঘরে একটু জানাবেন প্লিজ।  


তানবীরা
১১.০৯.২০১৯



Tuesday 10 September 2019

ডিজিটালাইজেশান ও বাংলাদেশ

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই “বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড” হচ্ছে এই শ্লোগান শুনতে পাচ্ছি এবং নানা ক্ষেত্রে এর প্রচার ও প্রসার লক্ষ্য করার মত। “ডিজিটালাইজড বাংলাদেশ” নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে। আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।

প্রথমে শুরু করি পাসপোর্ট রিনিউ থেকে। মেশিন রিডেবাল পাসপোর্ট (এম-আর-পি) রিনিউ করতে হবে, সেটার আবেদন আপনি (প্রবাসী বাংলাদেশীরা) বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে যেয়ে করতে পারেন, ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যাঙ্কে টাকাও ট্রান্সফার করতে পারেন। সেটা করতে হবে আপনার ব্যক্তিগত উদেগ্যে, সরকারের কাছ থেকে কোন রিমাইন্ডার চিঠি বা ইমেইল আসবে না আপনার “পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ” হয়ে গেছে এই জানিয়ে। আপনার পাসপোর্ট আপনার ভাবনা। বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনাকে পাঁচ পাতার ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, পিতার নাম, স্বামীর নাম ইত্যাদি প্রভৃতি সাথে স্মার্ট কার্ডের কপি নয়তো, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি, নয়তো জন্মনিবন্ধন পত্র ইত্যাদি জমা দিতে হবে। বাকি কাজ এরপর দূতাবাসের অফিসে যেয়ে সারতে হবে, আঙুলের ছাপ, ছবি তোলা ইত্যাদি।

ওলন্দাজ পাসপোর্ট রিনিউ করতে হলে, পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে আপনি মিউনিসিপ্যালটি অফিস থেকে একটা রিমাইন্ডার মেইল পাবেন, তবে এপয়ন্টমেন্ট আপনাকে নিজেকেই করতে হবে মিউনিসিপালটির ওয়েবসাইটে গিয়ে। সেখানে লেখা আছে, ছবি নিয়ে আর এত টাকা নিয়ে যেতে হবে। তবে তারা টাকার পরিমান এখন বাড়িয়েছে কারণ বড়দের এম-আর-পি এখন দশ বছর মেয়াদী। বাচ্চাদের যেহেতু মুখ মন্ডল পরিবর্তনের ব্যাপারটা দ্রুত হয় তাই তাদের এম-আর-পি পাঁচ বছর মেয়াদী। আপনি এপয়ন্টমেন্ট পাবেন পনের মিনিটেরই যদিও কাজ শেষ করতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে দশ মিনিট। আঙ্গুলের ছাপ দেবেন, ছবি দেবেন, সিগনেচার আর টাকা, সাথে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, পুরনো পাসপোর্টে যেসব তথ্য দেয়া আছে তাতে কোথাও কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা, হলে সেটা কি? পরিবর্তনটুকু কাউন্টারে যিনি বসা তিনি দ্রুত তারা ডাটাবেজে মিলিয়ে দেখবেন, আপডেটেড আছে কি না, নইলে তিনি আপডেট করে নেবেন। কোন ফর্ম ফিলাপের বালাই কোথাও নেই, না আমাদের না টেবলের ওপাশে যারা বসে আছে তাদের।

পুরো পরিবারের জন্যে বাংলাদেশের এম-আর-পি রিনিউ এপ্লাই করতে অন্তত মিনিমাম হাফ ওয়ার্কিং ডে, প্রতি সদস্যের জন্যে পাঁচ পাতা ফর্ম আলাদা করে ফিলাপ করতে হবে যদিও তারা পাঁচ বছরের জন্যে দেবে আর ওলন্দাজ এম-আর-পি ছবি জমা দেয়া থেকে শুরু করে আনঙুলের ছাপ কমপ্লিট হবে আধ ঘন্টা থেকে কম সময়ে। অমূল্য সময় আর জনশক্তির কি নিদারুণ অপচয়।

সম্ভবত একমাত্র বাংলাদেশে যেতে গেলেই আপনাকে প্লেনে একটা ট্যাক্স ডিক্লারেশান ফর্ম ফিলাপ করতে হয়। কেন করতে হয় সেটা আজও বোধগম্য নয়। কত টাকা নিয়ে যাচ্ছি সাথে সেটা কজন সত্যি বলে কে জানে। যেহেতু সাধারণত কারো পকেট সেখানে চেক করা হয় না তাই সন্দেহটা থেকেই যায়। আর বাকি কোন কোন দ্রব্যের ওপরে শুল্ক আছে আর সেটা কত, কতজন সঠিক সেটা জানে আর সঠিক পূরণ করে আমার কাছে আজও তা বিরাট প্রশ্ন। ইউরোপের কথা বাদ, নর্থ এমেরিকা, নর্থ আফ্রিকা, এশিয়ার কিছু দেশেও প্লেনে চড়ে ভ্রমণ করেছি, কিন্তু এই প্যারায় একমাত্র বাংলাদেশ ইউনিক। যতদিন প্লেনে চড়ি ততদিন ধরেই এই ফর্ম ফিলাপ করছি। গত পঁচিশ বছরে ফর্মের একটা কমা-সেমিকোলনও এদিক সেদিক হয় নি, ক্যামনে পারে ম্যান!

এরপর দেশে যাবেন। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশান কাউন্টারের সামনে আপনাকে অন্ততকাল দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যারা এমেরিকা থেকে যায়, এত লম্বা যাত্রার পর, তারা কিভাবে ধৈর্য্য ধারণ করেন তারাই জানেন। নিতান্ত অদক্ষ জনগোষ্ঠী দিয়ে এই কাউন্টারটি দিনের পর দিন চালানো হয় আর কোন পদের সফটওয়্যার আর কোন মডেলের কম্পিউটার তারা ব্যবহার করেন সেটাও বিরাট প্রশ্নবোধক। যতবার দেশে যাবেন, বছরে তিন বারও যদি যান, একই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই আপনাকে যেতে হবে, প্রথমে সেখানে রাখা একটি ফর্ম ফিলাপ করবেন তারপর সেই ফর্ম সমেত পাসপোর্ট আপনি ইমিগ্রেশান অফিসারকে জমা দেবেন। পাসপোর্টের বিভিন্ন তথ্য সেখানে বসে থাকা অফিসার তার ডাটাবেজে টাইপ করবেন, আপনার আঙ্গুলের ছাপ নেবে, ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনার ছবি তোলা শেষ হলে জিজ্ঞেস করবে, ঢাকায় পরিচিত কারো ফোন নম্বর দিতে। এরমধ্যে তিনবার তার কম্পিউটার হ্যাং হবে কিংবা সফটওয়্যার কাজ করবে না, পাশের জনকে সাহায্যের জন্যে ডাকবে এবং লঞ্চের ইঞ্জিন গুতানোর মত, ঠুকঠাক করে কম্পিউটার ঠিক করা হবে।

ফিরে আসার সময় আবার ঠিক সেই একই পেখনা। ফর্ম ফিলাপ করো, আঙুলের ছাপ দাও, ছবি তোল এবং ফোন নম্বর দাও! যতবার এই বিমানবন্দর ব্যবহার করি ততোবার এই সেইম পেখনা একই দ্রুততায় তারা কাজ করেন! এই একই কাজের গতি, বছরের পর বছর ধরে রাখার আশ্চর্য কৌশল সত্যিই অভিনব।

আমার অভিজ্ঞতায়, আগে কাগজে-কলমে যেভাবে কাজ হতো, এখন সেটা কীবোর্ডে আর সফট কপিতে হয় কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া একই আছে, কোথাও কিছু পরিবর্তন হয় নি। হার্ড কপির বদলে সফট কপির নাম বাংলাদেশে, "ডিজিটালাইজেশান" এই যদি আউটকাম হয় তাহলে এম-আর-পি, স্মার্ট কার্ড, টিন-ইটিন, ন্যাশনাল আই-ডি, হ্যানাত্যানা করে কি লাভ? এখনও যদি কোন সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ না থাকে তবে আর কবে? পাসপোর্ট নম্বর কিংবা ভিসা নম্বর কিছু টাইপ করলেই বাকি ইনফর্মেশান সামনে আসার কথা, বিশ বার যদি কারো সারনেম টাইপ করতে হয়, তাহলে কোথায় আর কিসের ডিজিটালাইজেশান!

তবে কোথাও কি কোন পরিবর্তন হয় নি? হ্যাঁ হয়েছে, ইমিগ্রেশান কাউন্টারে যিনি ছিলেন এবার, আমার আর আমার মেয়ের ইনফর্মেশান ইনপুট দিয়ে, দেরীর জন্যে নিতান্ত আন্তরিক মুখে "এপোলজি" দিয়েছেন। মোস্ট আনলাইকলি দো, দেরী করিয়ে দেয়াটা আগে সরকারী কর্মকর্তা - কর্মচারীরা তাদের স্বাভাবিক অধিকার বলে ধরে নিতেন। আরও অবাক হয়েছি, তিনি নিজে অনুধাবন করেছেন, তার আর একটু এফিসিয়েন্ট হওয়া দরকার।

সরকারী এক ব্যাঙ্কে অনেক আগের একটা হিসাব ছিলো, জায়গায় জায়গায় আর ঝামেলা রাখবো না বিধায় সেটা ক্লোজ করতে গেছি, আমাকে অবাক করে দিয়ে আধ ঘন্টার থেকেও কম সময়ে তারা সব কাজ সম্পন্ন করে দিয়েছে এবং আরও অবাক করে দিয়ে অনুনয়ের গলায় বারবার অনুরোধ করেছে, “হিসাবটা চালু রাখেন ম্যাম, আপনার যেকোন দরকারে আমাদের জাস্ট একটু ফোন করবেন ম্যাম, দশ মিনিটের বেশি সময় নেবো না, আপনার যা দরকার থাকে করে দেবো। 

বর্তমান গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রচুর ব্যাঙ্কের পারমিশান দেয়াতে জনগনের লাভ হয়েছে, গ্রাহক সেবার মান প্রচন্ড উন্নত হয়েছে, গ্রাহকের ভোগান্তি কমেছে, সরকারী এবং বেসরকারী দুটো সেক্টরেই। গ্রাহকের প্রতি ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। আগে যেমন ব্যাঙ্কে গেলে বিশেষ করে সরকারী ব্যাঙ্কে, ব্যাঙ্ক অফিসারদের বাংলা পাঁচ মুখ দেখতে হতো সেটা নেই, বরং বেশ হাসিখুশি আর বিনয়ী, যদিও সর্বসাকুল্যে আধ ঘন্টা দেখে এত মূল্যায়ন ঠিক নাও হতে পারে। তবে বেসরকারী ব্যাঙ্কিং বার্গেন পর্যায়ে সেবা দিচ্ছে। আগের মত বিশবার স্বাক্ষর আর ছবি মেলানোর কষ্ট দেয় না, নিজের টাকা ওনাদের কাছে রেখে নিজেকেই চোর চোর লাগতো সেই জিনিস উধাও। 

বেসরকারী ব্যাঙ্ক অনলাইন ব্যাঙ্কিং চালু করেছে বেশ অনেকদিন এবং সেটা ইউরোপ-এমেরিকা থেকেও নিজের একাউন্ট নিজে চেক, ট্রান্সফার ইত্যাদি করতে পারবেন। সরকারী ব্যাঙ্কের সাথে জীবনের লেনাদেনা সমুদ্র সফেন করে ফেলেছি, তাদের হালনাগাদ অবস্থা জানি না। বেসরকারী ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে হলে চেকের সাথে শুধু আইডির কপি দিলেই চলবে আর লাখের ওপরে হলে আইডির সাথে চেক স্বাক্ষরকারীর টেলিফোন নম্বর। ব্যাঙ্ক ফোন করে কনফার্ম করে নেবে, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি ইম্প্রেসড। 

এছাড়া আছে বিকাশ সিষ্টেম, মোবাইল ব্যাঙ্কিং এর মত খানিকটা। অনেক দোকান দেখলাম, ক্যাশ পেমেন্টের থেকে বিকাশ বেশি প্রেফার করে, “এপেক্স” বিকাশ পেমেন্টে পনের পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেয়, বেক্সিমকোর ফ্যাশন হাউজ “ইয়লো”, “আড়ং” অনেকেই বিকাশে পে করলে ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে। 

গতবার ন্যাশনাল আইডি করার জন্যে অনেক প্যারা নিতে হয়েছিলো। এবার যখন ভাইয়া বললো, আইডি বদলে স্মার্ট কার্ড নে, আমি ভয় খেয়েছিলাম রীতিমত, যাবে আমার ছুটির এক চতুর্থাংশ ফাউ। হুদা কামে আজকে আসেন, কালকে আসেন বলে লেফট রাইট করাবে। আমার বিস্ময়ের এফোর ওফোড় ব্যাপার হলো, এন আই ডি দিয়ে বললাম, স্মার্ট কার্ড চাই, সাথে সাথে খাতায় এন্ট্রি রেখে বসতে বললেন। এতে বোঝা যায়, এন আই ডিকে, স্মার্ট কার্ডে ট্রান্সফার করার জন্যে দুটো ডাটাবেইজের কোথাও ইন্টারফেস চালু আছে। করিডোরে সোফা রেখেছে, বসে দেখলাম, তিনি ফেসবুকিং এ ব্যস্ত আর এদিকে আমার হাজার কাজ পরে আছে। 

বিনীত গলায় বললাম, ভাইয়া, আমার তাড়া আছে এবং আমাকে বিস্ময়ের ওপারে ফেলে দিয়ে তিনি সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে আমার আঙ্গুলের ছাপ রেখে রিসিট ধরিয়ে দিলেন, বললেন, কাল বেলা দুটোর পর এসে নিয়ে যাবেন। বললাম, আমি না এসে কাউকে পাঠালে হবে, জানালেন, না, নিজে এসে নিতে হবে, “প্রাপ্তি স্বীকার” স্বাক্ষর দিতে হবে। এবং গেস হোয়াট, পরদিন যেয়ে রিসিট দেয়া মাত্র, স্বাক্ষর রেখে, স্মার্ট কার্ড দিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ থাকেন যারা প্রমাণ করে দেন, চাইলে তারাও পারেন শুধু তাদের চাওয়াটা ব্যাপার। 

মোবাইল টেকনোলজি আর গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে পুরো ঢাকা জুড়ে উবার চলছে, পাঠাও, রাইড আরও কত কি। অসহ্য যানজটের মাঝেও উবার এক পশলা শান্তির বৃষ্টি। অগনিত বার উবার ব্যবহার করেছি, প্রত্যেকবারই একই রকম সেবা পেয়েছি, ওয়ার্ল্ড ক্লাশ। তাছাড়া, কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস এত ভাল করেছে, যেকোন ধরনের অভিযোগ এবং কিউরির জন্যে বারবার কোম্পানী থেকে নিজেরাই যোগাযোগ করে। 

এই টেকনোলজি দিয়েই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট ইত্যাদি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছে, ঢাকাতে। ঢাকার বাইরে তেমন ভাবে যাওয়া হয় নি তাই ঢালাও ভাবে পুরো বাংলাদেশের কথা বলতে পারছি না।

05/09/2019