রাতে খাবার টেবিলে গল্প
হচ্ছে, গরমের ছুটিতে কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, কি কি করা যায়, ইত্যাদি নিয়ে। আর সব ইউরোপবাসীদের
মত আমরাও সারা বছর গরমের ছুটির পানেই তাকিয়ে থাকি। মেয়ে আহ্লাদে গলে বাবা কে বলছে,
আমি দু সপ্তাহ এমেরিকায়
যেতে চাই আর দু সপ্তাহ বাংলাদেশ। আমি তো তোমার একমাত্র বাচ্চা। হ্যাঁ না বাবা।
বাবা স্বভাব সুলভ গলায়
বললো, একমাত্র বাচ্চা দেখে তুমি এতো সব বেশি পাচ্ছো।
ঝেঁঝেঁ মেয়ে জবাব দিলো, কোথায় সব বেশি পাচ্ছি বলো? কোথায়? কাল ও চিকেন খেয়েছি এখন
ও চিকেন খাচ্ছি। আমি কি রোজ লবস্টার আর গলদা চিংড়ি খাই?
বাবা বললো, তোমাকে কিছু বললে, তুমি কথা শোন না, তুমি ভাবো বাবা
– মা বোকা, তাই না? তোমার বয়সে আমরাও তাই ভেবেছি। এখন জানি, বাবা মায়ের কথা যদি শুনতাম,
তাহলে আরো ভাল থাকতাম।
মেয়ে ফট করে বলে বসলো, তুমি বেশি বোকা না, মা বেশি বোকা।
মা ঘুরে তাকাতেই মুখে তাড়াতাড়ি কূটনীতির হাসি এনে বলে, মজা
করছিলাম।
মা সিরিয়াস গলায় বললো, তুমি মোটেই মজা করছিলে না।
ধরা পরা হাসি দিয়ে বলে, তুমি আসলে মাঝে মাঝে ভীষন বেশি বোকা,
অঙ্ক, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি কিছুতেই তো আমাকে হেল্প করতে পারো না।
মা বললো, তাই! বাসায় তাহলে বেশি জ্ঞানী কে?
গর্বের সাথে বললো, আমি তারপর বাবা, তারপর তুমি।
মা বললো, মাঝে মাঝে এক্সামে তুমি রেড পাও, তাহলে তুমি কি করে হবে!
বিজ্ঞের গলায় বললো, যেগুলো আমি প্রথমে রেড পাই, সেগুলো পরে আমি
পেরে যাই, জানো না। কিন্তু মাঝে মাঝে তো আব্বুও কিছু কিছু জিনিস পারে না, বলে স্কুলে
টিচারের কাছে দেখে নিও। তাই, বুঝেছো?
07-02-2017
07-02-2017
রাজপথে একটা
মিছিল নেই, পথ আটকে সভা নেই, নেই কোন গগন বিদারী, রক্তে তুফান তোলা শ্লোগান। অমুক ভাই নেই – তমুক ভাই নেই, খোলা জীপে গলায় মালা পরে
হাত নেড়ে চলে যাওয়া “মজনু ভাইকে আপেল মার্কায় ভোট দিন”
মার্কা কোন নেতা নেই। কেন্দ্র দখলের মারামারির উত্তেজনা
নেই, হাতের আঙুলে কালির দাগ নেই, নেই কোন সরকারী ছুটি কিংবা টিভিতে নির্বাচনের বিশেষ অনুষ্ঠান মালা।
এর নাম ইলেকশান? টান টান উত্তেজনা কোথায় এখানে!
যাহোক, ইলেকশান নামের কলঙ্ক এরা। কিছুই শিখলো না আমাদের
কাছ থেকে। সেটা মেনে নিয়েই নাগরিক দায়িত্ব পালন করে “ভুটিয়ে এলাম”। আজকে নেদারল্যান্ডসের সাঁইত্রিশতম
সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলো। সরকারীভাবে ২১শে মার্চ ফলাফল ঘোষনার কথা বললেও, মিডিয়া
“মার্ক রুত” আর “উইল্ডেনবার্গকে” নিয়ে টানাটানি করেই যাচ্ছে। অনলাইনে ফলাফল
সম্পর্কে ধারনা দেয়া হচ্ছে। যদিও আটাশটা দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছে কিন্তু সবার
দৃষ্টি আর আগ্রহ এই দুই দলকে কেন্দ্র করেই আর্বতিত হচ্ছে, নরমপন্থী বনাম চরমপন্থী।
১৮৮৮ সাল
থেকে সংসদ নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে, প্রথমে হতো তিন বছর পর পর, তারপর চার বছর পর পর,
আর এখন সব ঠিক থাকলে পাঁচ বছর পর পর নইলে মধ্যবর্তী নির্বাচন আছে।
ক্ষমতায় যেই
আসুক তাতে প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় কোন ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ তারপরও
বলবো,
সবার মঙ্গল
হোক সেদিকেই দু’চোখ
15/03/2017
কনগ্রেচুলেশান্স ডাচ
– ডাচল্যান্ড – ওয়ান্স এগেইন।
ডাচ সংসদ নির্বাচনের
বেসরকারী ফলাফল মোটামুটি এখন সবার জানা। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত (VVD) তৃতীয় বারের মত তার দল নিয়ে জয়ী হলেন, যদিও আগের বারের তুলনায় এবার আটটি
আসন হারিয়েছেন (21.3%)33। ওয়াইল্ডবার্গ (PVV) ডাচ ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় অবস্থানে
আছেন যেটা আদতে ডাচল্যান্ড এর জন্যে বিরাট অশনি সংকেত (13.1%)20 আর স্মরণ কালের মধ্যে
সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থানে আছে, এক সময়ের জনপ্রিয় দেশকে নেতৃত্ব দেয়া দল PVDA (5.7%)9।
তারপরও বলবো, যে দেশের
প্রয়াত রাজা বিদেশী, যে দেশের বর্তমান রানী বিদেশিনী, রাজ পরিবারের বেশীর ভাগ সদস্য
বিভিন্ন দেশের থেকে তাদের জীবন সঙ্গী খুঁজে নিয়েছেন, সে দেশের জনগনের কাছে এই ফলাফল
অপ্রত্যাশিত নয়। ডাচল্যান্ড, সর্বদাই ধর্ম আর বর্ণ এ দুটো জিনিস কে উপেক্ষা করে গেছে
বলেই আজকের এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এ দেশের বর্তমান রাজা অবলীলায় তার ছুটির দিনে
কর্পোরেশানের বাচ্চাদের পার্ক পরিস্কার করতে যান, রাজমাতা জীন্স পরে সিকিউরিটি ফাঁকি
দিয়ে ফসল কাটা মাঠে সাইকেল চালান, প্রতিবেশীর গাড়িতে ধাক্কা লাগার কারণে রাজবধূকে কোর্টে
ডেকে জরিমানা আদায় করা হয়, সেখানে ধর্ম আর বর্ণের বাড়াবাড়ি না থাকলেও চলে, কর্মেই তাদের
পরিচয়।
সব বর্ণ, ধর্ম আর ধর্মহীন
মানুষকে নিয়ে যে সংস্কৃতি দ্যাট মেকস ডাচ – রয়্যাল ডাচ, সো ফার ইউরোপ – ইউরোপ আর ডোনাল্ড
ট্রাম্প মেকস এমেরিকা – এমেরিকা --- প্রাউড টু
বি আ পার্ট অফ ডাচ সোসাইটি
16/03/2017