Thursday 13 February 2020

ভ্যালেন্টাইন ডে ২০২০

আজকে “বিশ্ব ভালবাসা” দিবসে যাদের ভালবাসার নির্দিষ্ট কোন সো কলড “ভালবাসার মানুষ” নেই, তারা আরও উদার হতে পারো। একজনের জন্যে এক জায়গায় ভালবাসার অপচয় না করে, প্রকৃতি,
পশু-পাখি, আর্ত-দুঃস্থদের ভালবাসার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারো। “প্রেম” নেই এজন্যে দুঃখ না করে এর ইতিবাচক দিকগুলো যদি দেখো, তাহলে দেখবে, এই একদিনের আনন্দের জন্যে বাকি তিনশো পয়ষট্টি দিন তুমি নিজেকে এই যন্ত্রণা দেবে কিনা।


*প্রেম নেই মানে, হুদাই ফোন চেক করার কোনো টেনশান নেই।
*টাইমলি ম্যাসেজ রিপ্লাই দেয়ার ঝামেলা নেই।
*ঝগড়া নেই, বকাবকি নেই। ভাব করার কিংবা উপহার দেয়ার ঝামেলা নেই।
*রোজ রোজ সেলফি তোলারও ইস্যু নেই, তোমার ইচ্ছা হলে, তুমি তুলবা নইলে না।
*তোমাকে সিগারেট খাওয়ার কথা বলে কিংবা মীটিং বা ব্যস্ততার কথা বলে, অনলাইনে থেকে অন্যদের সাথে
ফুটুর ফুটুর করছে সেই নিয়ে তোমার মেজাজ খারাপ করার কিছু নেই।
*যখন ইচ্ছে ঘুমালে – উঠলে, ডেটে যাওয়ার বা গুড মর্নিং বা গুড নাইট বেবি করার ইস্যুও নেই।
*ইয়েস, দামড়া কাউরে বেবি বলার যন্ত্রণা থেকেও মুক্ত।
*ক্রিকেটে বাংলাদেশের পার্ফমেন্স নিয়ে তুমি প্রচন্ড হতাশ আর বিরক্ত, সামনে কিছু পেলে কাঁচা খাইয়া ফেলা হবে মুহূর্তে, কৃতার্থ মুখ নিয়ে, পার্টনারের সাথে বসে লেইম গান শুনতে হবে। ইয়ারফোনের একটা তোমার কানে অন্যটা তার কানে! চিন্তা করতে পারো?
*সেরকম কঠিন পার্টনার বা প্রেম হলেে হয়ত তার মন রক্ষার্থে অনন্ত জলিলের সিনেমাও দেখতে হতে পারে।
*সর্দি, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়ায় "বাবু খাইসো টাইপ" যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি।


এসব যন্ত্রণার কারণে মানুষ সাধু-সন্ন্যাসী হয়ে যায়, বানী দেয়, “ "জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর"
সুতরাং লাইনে আসো।

হে মানবজাতি, তারপরও কি “ভ্যালেন্টাইন-ভ্যালেন্টাইন্” খেলার জন্যে প্রেমের মত কিছুতে নিজেকে জড়াতে চাও!!!!

এছাড়াও প্রেম ভালবাসা খুবই শরমের ব্যাফার, মুরুব্বীদের কাছে লুকিয়ে রাখতে হয় কিন্তু প্রেম-ভালবাসা হলো খানিকটা "ইনফেকশনের" মত, ভেতরে থাকলে, জ্বর হয়ে, ব্যথা হয়ে, চুলকানি হয়ে, বাইরে জানান দেবেই

প্রাপক, প্রিয়তমেষু

প্রিয়মান তুমি,

অফিসের করিডোরে, কিংবা লাঞ্চে ক্যান্টিনে আমাদের দেখা হয়ে গেলে আমরা বেশ ইধার-উধারকা বাত করি, তাতে বিশ্ব জলবায়ু সমস্যা থেকে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট কিংবা করবিন আর ব্রেক্সিটও থাকে। পেঁয়াজ আর লবন তো নিত্যই আলোচনার বিষয়। আর যেদিন কেজো ব্যস্ততায় আমাদের দেখা হয় না, তুমি ওদিকে তোমার কাজ আছে এই ছল করে খানিকটা পথ আমার সাথে আসো। সেদিন আমরা খানিকটা শিল্প সাহিত্য নিয়েও আলোচনা করি। তোমার উৎসাহের কোন সীমা থাকে না, কর্ম ক্লান্তু আমিই তাতে, বাসনমাজা জল ঢেলে বলি, আজ এখানেই শেষ করি। একদিন মরিয়া তুমি বলেই ফেললে, তো আজ কোথায় শেষ হলো? 

আমরা কেউ কাউকে না বললেও জানি, এর শুরু নেই, এর শেষও নেই, এর থাকে শুধু অনুভব আর রেশ।  এই রেশ ধরে রাখা, এখানেই থিতু-স্থির হওয়া গুরুত্বপূর্ন। কোনো ধরাবাঁধা কিছু বন্ধনে নয়, মুক্ত আকাশের মুক্ত বিহঙ্গ। আমি আমার মতো, তুমি তোমার মত। 

"প্রেম" অনেক সমস্যার জন্ম দেয়। অধিকার বোধ আনে, হাঁসফাঁস লাগায়। না চাইলেও হয়ত কিছু রিচ্যুয়াল ফলো করতে হয়, এই যেমন ভ্যালেন্টাইন ডে'তে কিছু উপহার কিংবা সারপ্রাইজ। অথচ তোমার হয়ত প্রচন্ড মাথা ধরেছে, ক্রিকেটে বাংলাদেশের পার্ফমেন্স নিয়ে প্রচন্ত হতাশ ও বিরক্ত। কিংবা ধরো মাঝে মাঝে প্রেমিকা কিছু লেইম গান পাঠায় আর তুমি তা শুনতে এবং রুচির প্রশংসা করতে বাধ্য হও।  

নয়ত একসাথে গান শুনতে হয়, একই এয়ারফোনের একপাশ তোমার কানে অন্যপাশ তার কানে গোঁজা, যখন তখন সিগারেট ধরাতে পারো না, প্রেমিকা সিগারেটকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে, তার প্রতি তোমার আকর্ষণ মেনে নিতে পারে না। প্রেমিকারা শিরক নিতে পারে না।  

হয়ত দুরন্ত সব ইচ্ছে ডানা মেলে, সেসব লজ্জা ভেঙ্গে বলতে পারে না, অকারণ ঝগড়া করে, কাঁদে, আনপ্রেডিক্টেবল বলে মনে হয় তোমার, তুমি ভাবো  ঝগড়ুটে অথবা ডমিন্যান্ট  এটিটুড। অনেক অনেকদূর হাঁটতে ইচ্ছে করেসব না পাওয়াগুলো পেতে ইচ্ছে করে। স্বপ্ন দেখতে আর দেখাতে ইচ্ছে করে। হাত ধরতে ইচ্ছে করেচুমু খেতে ইচ্ছে করেবুনো দুরন্ত আদরে ভেসে যেতে, ভাসিয়ে নিতে ইচ্ছে করেগায়ের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে কিংবা আরও ভয়ংকর কিছু করতে ইচ্ছে করে। 


সবাই এই পৃথিবীর সব হয়, প্রেমিক হয় শুধু একজন, যে গহীনের গভীরের গোপনের খবর জানে, যে শুধুই “তুই” হয়। তাই বলছি কি, কি দরকার অতো শততে জড়িয়ে, এই যে খানিক দ্বিধা আর খানিক দ্বন্দ্ব, আলগোছে আপনি আপনি, আসা-যাওয়া, অভিজিতের ধুতি কিংবা এস্থারের শাড়ি, কখনো জার্মানীতে কার্ল মাক্সের বাড়ি, এতে চলছে, চলুক না সময় গড়িয়ে। নইলে অনন্ত জলিলের মুভি দেখতে হবে, সকল সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে।  সময়ের স্রোতে একদিন ঘোর কেটে যাবে,  ঘোর কেটে গেলেই সব গল্প হয়ে যায়।