Tuesday 28 February 2012

শুধু তুমি পাশে থেকো

অসংখ্য ঝগড়া, অগনিত মনোমালিন্য, সময় অসময়ের কটূক্তি – বক্রোক্তি। কত সময় কত হতাশা জমে ছিল মনে। রেগে গেলে তোমাকে কি করে কঠিন একটা শাস্তি দেয়া যায়, মজা বোঝানো যায় তাই নিয়ে সম্ভব অসম্ভব অনেক ফন্দি এঁটেছি মনে মনে। কতোবার বলেছি, মেয়ে আর একটু বড় হোক, চলে যাবো, থাকবো না তোমার সাথে, কিছুতেই না। এখন মনে হচ্ছে এগুলো আসলে মুখেই বলেছি, অবচেতেন মন জানতো এ বাঁধন অটুট। মনের গহীনে কিছু ছিল যা ভেঙ্গে যাওয়ার ছিল না। অসচেতনভাবেই, জানতাম হয়তো এভাবেই কাটবে জীবন, ঝগড়া, হাসি, কান্না, আনন্দে

আজকে তুমি যখন হাসপাতালে থাকো, একাকীনি আমি। তোমার আমার দুজনের জীবনের সবচেয়ে ভালবাসার ধন আমাদের রাজকন্যা এসে মুখ কালো করে জিজ্ঞেস করে, “আমরা কি শুধু দুজনেই খাবো মা? আমরা একাই ঘুমাবো? বাবা বাড়ি না থাকলে, বাড়িটা অনেক নিরানন্দময় লাগে। আমার শুধু কান্না পায়।“ একথা শুনলে তখন আমারো বুক মুচড়ে উঠে অজানা আশঙ্কায়, গভীর ব্যথায়। আমারো তখন উথলে পাথালে কান্না পায়

মাথায় হাজারো দুশ্চিন্তা। স্বামী, সুস্থতা, চাকরী, মর্টগেজ, ইন্স্যুরেন্স, রিসিশান, বয়স, সংসার, মেয়ে, সামাজিকতা, আমাদের দুজনের একসাথে দেখা হাজারো এখনো না পূরন হওয়া স্বপ্ন, পরিকল্পনা। কিন্তু সব ছাপিয়ে যায় আমার সীমাহীন নিসংগতা। হারিয়ে ফেলেছি আমি আমার সেই কলকল হাসি, উচ্ছলতা, সব বিপদ জয় করে ফেলবো সেই সাহস আর মানসিকতা। কিন্তু ভাবছি বাকি সব, হ্যাঁ বাকি সব সব সব গোল্লায় যাক, সব দুশ্চিন্তা চুলোয় যাক, শুধু তুমি আমাদের হাত ধরে, আমাদের ছায়া দিয়ে আমাদের পাশে থাকো। এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্যে আমার আর আমাদের রাজকন্যার তোমাকে খুব দরকার, ভীষন দরকার।

তানবীরা
২৯/০২/২০১২

Sunday 12 February 2012

বইমেলা কড়চা – (দুই) ঘোলের স্বাদ মাঠায়

দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর পর বন্ধুরা এতো বেশি উৎসাহ দিয়েছেন যে আর থামতে ইচ্ছে করছে না। এখন ভাবছি ঘোলের স্বাদ মাঠায় উত্তরণ করার চেষ্টা করলে কেমন হয়। ভুল ত্রুটি বা পাঠকের বিরক্তির জন্যে দায়ী অতি উৎসাহপ্রদানকারী বন্ধুরা। আর স্বাদ ভালো হলে বুঝতেই পারছেন সব কৃতিত্ব আমার। আজকে ভাবছি বাংলাদেশের আর একজন লেজেন্ডারী উপন্যাসিক “ইমদাদুল হক মিলনের” ছকটা নিয়ে লিখলে কেমন হয়। একসময় তার উপন্যাসগুলোওতো বেহুঁশের মতো গিলেছি। তবে বহুদিন তার উপন্যাস সেভাবে সিরিয়ালি গিলি নাই। অত্যাধুনিক স্টাইলটা হয়তো জানি না। কিছুদিন আগে একটা অবশ্য অনলাইনে পড়েছি, মনে হলো মূল ছকটা এখনো আগের মতোই রেখেছেন। মনেকরি তার এ উপন্যাসের নাম “সে রাধা আমি হাঁদা”

মেয়েটিকে দেখার জন্যে ছেলেটি রোজ হোন্ডায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। শুধু এক পলক দেখতে। বুঝতে পারে না ছেলেটি এটি সে ঠিক করছে কি না কিন্তু সে শুধু এটুকু জানে মেয়েটিকে না দেখে সে একদিন ও থাকতে পারে না। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে, আর রোববারে একটি ক্লাশ থাকে বলে মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে না। এই দুটোদিন যে কি কষ্টে থাকতো আগে সে। সারাক্ষণ মনে হতো আজ দিনটির কোন অর্থ হয় না। বন্ধুদের আড্ডায়, সদ্য জয়েন করা অফিসে কিছুতেই সে মন লাগাতে পারতো না। অনেক কষ্টে রেজিষ্টার বিল্ডিং থেকে মেয়েটির বাসার ঠিকানা যোগাড় করেছে। এখন সে এদুটো দিনে মেয়েটির বাসার থেকে একটু দূরে হোন্ডা পার্ক করে বসে থাকে। মেয়েটিও বোধহয় তাকে পছন্দ করে, তার বসে থাকার সময়টুকুতে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওপর থেকে ঝোলানো ময়নার সাথে খুনঁসুটি করে কিংবা মোবাইলে গান শুনে বা গেম খেলে। যতোক্ষণ সে থাকে, ততোক্ষণ মেয়েটিও থাকে। মাঝে মাঝেই চোখাচোখি হয়, একটু বোধহয় হাসেও কিন্তু এতো দূর থেকে চোখের ভাষা পড়া যায় না।

বন্ধুরা শুনলে হাসবে ওকে নিয়ে। মেয়েটির মোবাইল নাম্বার থাকা সত্বেও সে তাকে ফোন বা এসএমএস না করে এমনি পিছু নিয়ে যাচ্ছে। সেদিন সোহেলের বউভাতে মেয়েটিকে দেখার পর থেকে কিযে হয়ে গেল তার। অসাধারণ সুন্দর মেয়েটি অসাধারণ। সুন্দর ডাগর চোখ, দারুন শার্প ফিগার, লম্বাতো অনেকটাই। গায়ের রঙে যেনো আলতা মেশানো। একদম ক্যটারিনা কাইফ যেনো হাটছে তার সামনে। জিন্স আর ফতুয়া সাথে পেন্সিল হিল পড়ে যখন ইউনিভার্সিটিতে যায়, কতো তৃষিত যুবকের বুক পুড়ে তাতো সে নিজেই দেখেছে। মেয়েটি বোধহয় টিশার্ট জিন্স কিংবা জিন্স আর ফতুয়া পড়তেই বেশি ভালবাসে। প্রথম যেদিন বৌভাতে দেখেছিল, সেদিন ছিল সে শাড়ি পড়া। নীল সিফন শাড়ি আর হাত ভর্তি অক্সিডাইজের চুড়ি। কানে অক্সিডাইজের লম্বা ঝোলা দুল। অপ্সরী সে অপ্সরী। সিফনের আঁচল ভেদ করে মাঝে মাঝেই তার বুকে ছটফটানো কবুতরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছিল। সারা অনুষ্ঠানে তার চোখ মেয়েটিতেই আটকে ছিল। শরীরে যেন অগ্নুৎপাত হচ্ছিল সেই কবুতরীকে ভালবাসার আশায়। সাকুরার আড্ডায় আজকাল বন্ধুরা তার এই আনমনা ভাব বেশ লক্ষ্য করছে, আলোচনাও করছে তাকে নিয়ে। কিন্তু ম্যান, হি ইজ নাও ইন লাভ। হি কান্ট হেল্প ইট এনিমোর।

সে চাইলেই মেয়েটিকে তার পরিচয় দিতে পারে। শাহানশাহ ইমতিয়াজ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সে। বিলেত থেকে এমবিএ করে এসে এখন বাবার অফিসেই বসছে, মতিঝিলে। কিন্তু সে চায় এ অপ্সরী নিজ থেকে তার কাছে আসুক। তাকে ভালবাসুক। সে অপেক্ষায় আছে। তার অস্তিত্ব যে ঐন্দ্রিলা জানে, এটা সে নিজেও জানে। জিন্স টিশার্টের বদলে আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় মাঝে সাঝেই ঐন্দ্রিলা শাড়ি পড়ে, হাত ভর্তি চুড়ি, কপালে বড় টিপ আর চুলে ফুল। এ সাজ যে তার জন্যেই তা ভালো করে বুঝতে পারে সাফিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে রিকশা থেকে নেমে বান্ধবীদের খোঁজার উছিলায় সে সাফিনের সামনেই কিছুক্ষণ মিছে ঘোরাঘুরি করে সময় ব্যয় করে। আঁড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় তাকে। শরীর দুলিয়ে যেভাবে সারা দেহে হিল্লোল তুলে তারপর রাজরানীর মতো হেটে যায় তাতে সাফিনের শরীরের রক্তকনাদের দ্রুত গতি আরো দ্রুততর হয়।

সানগ্লাসে চোখ ঢেকে বসে থাকা এই ছেলেটা দারুন হ্যান্ডসাম। নায়কের মতো হোন্ডা পার্ক করে যখন সিগ্রেট রাখে সেই কালো পুরুষ্ট দুই ঠোঁটের ফাঁকে, ঐন্দ্রিলার সারা শরীরে তখন দ্রিম দ্রিম কিসের যেন মাদল বাজে। শুধু তার জন্যে শুধু তার জন্যে কেউ ভার্সিটি আর ধানমন্ডি করছে সেই গুলশান থেকে ভাবতেই চোখে পানি আসে। এতো ভালবাসে আমাকে। সোহেল ভাইয়ের বৌভাতে শুধু একটু চোখাচোখি হয়ছিল তারপর থেকেই। এই বুঝি তাহলে প্রেম? ঐন্দ্রিলা’র আজকাল নিজেকে ভীষন সাজাতে ইচ্ছে করে ভীষন। কপালে টিপ পরে আয়নার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা তার কথা বলতে ইচ্ছে করে। ভালোলাগে ভাবতে, কল্পনা করতে সাফিনের সাথে তার প্রথম কি কথা হবে? কে আগে এগিয়ে আসবে? কিভাবে আদর করবে? শুধু অসস্ত্বি লাগে তার মনের রিনিক ঝিনিক না আবার মামি পাপা টের পেয়ে যায়। যদিও মামি পাপার সাথে সে ভীষন ফ্রী, খুব বন্ধুত্ব তার কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে একটু লজ্জা পাবে।

সাফিন ভীষন চঞ্চল। কিছুতেই মন লাগাতে পারছে না কিছুতে। আজ তিনদিন ঐন্দ্রিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে না। বারান্দায়ও আসছে না। মনকে বোঝাতে না পেরে প্রথমে সে এস।এম।এস করেছে তারপর ফোন কিন্তু নো আনসার। হঠাৎ কি হলো? হাওয়ার উড়ে গেলো না বাতাসে ভেসে গেলো তার সুন্দরীতমা? মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, চোখ দিয়ে অকারণেই জল গড়াচ্ছে। এ কদিন সে দাঁড়ি কাটেনি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে ঐন্দ্রিলার খবর না জেনে, তাকে “আমি তোমাকে ভালবাসি” এই চিরসুন্দর আর চিরসত্য কথাটি না বলে সে দাঁড়ি কাটবে না। আজ সন্ধ্যা থেকেই সাকুরায় বসে ভদকা খাচ্ছে সে নীট। বন্ধু রনি এসে পাশে বসলো, এ কথা সে কথা বলছে কিন্তু কথা জমছে না। রনি বলেই ফেললো, হোয়াটস রংগ উইথ ইউ সাফিন? ইউ লুক ডিষ্টার্বড। তখন সাফিন সব খুলে বললো। রনি খুঁটিয়ে খু্টিয়ে সব জেনে নিয়ে অবাক গলায় বললো, তুই আমাকে আগে জানাবিতো। ঐন্দ্রিলাকেতো আমি আগে থেকেই চিনি। আগে আমরা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতাম। এখন ওরা ধানমন্ডি আর আমরা ইস্কাটন চলে এসেছি। দ্বারা এক্ষুণি ফোন করছি ওদের বাসায় জেনে নেই, কি হলো। সাফিন উৎকন্ঠা নিয়ে রনির মোবাইলে দিকে তাকিয়ে রইল।

হ্যালো খালাম্মা আমি রনি বলছি, আপনাদের পাশের বাসায় যে আগে থাকতাম

হ্যা বাবা কেমন আছো তুমি? তোমার মায়ের শরীর ভাল? বাসায় আসো নাতো একেবারেই আমাদের

হ্যা, খালাম্মা আসবো বাসায়, আম্মু আপনাকে সালাম দিয়েছেন, একবার বাসায় যেতে বলেছেন, অনেকদিন দেখা নাই আপনার সাথে।

হ্যা বাবা, যাবো। আর বলো না সংসারের এতো ঝামেলায় থাকি, এইযে ঐন্দ্রিলাটা কদিন ধরে জ্বর বাধিয়ে বসে আছে। উঠছে না, নাওয়া খাওয়া কিছুই না।

বলেন কি খাল্লামা, তাই নাকি? ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন? খারাপ কিছু নয়তো আবার?

হ্যা, আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এসে দেখে গিয়েছেন। খারাপ কিছু নয়, ভাইরাল হয়েছে, কদিন বাদেই ঠিক হয়ে যাবে।

ঠিক আছে খালাম্মা, আমি এসে একদিন ওকে দেখে যাব।

নিশ্চয় বাবা, একদিন চলে এসো।

সাফিন আর সহ্য করতে পারছিল না। ফোন কেটে দিতেই বললো, একদিন কেন চল আজই ঐন্দ্রিলাকে দেখে আসি রনি। না জানি কতো কষ্টে আছে তার প্রিয়তমা।

রনি হাসল, ধীরে বন্ধু ধীরে। এক্ষুণি গেলে খালাম্মা সন্দেহ করে ফেলতে পারেন। মেয়েদের মায়েদের চোখ সিআইডি থেকেও কড়া। আজ বাড়ি যেয়ে ফ্রেশ হ, রেষ্ট নে, ঘুমা, কাল সকালে তোর বাসা থেকে তুলে, তোকে নিয়ে যাবো।

সকালে সাফিন তৈরী হয়েই বসে ছিল রনির জন্যে। লাল পলো শার্ট আইজড ফ্যাশনের, ফেডেড ডেনিম জীন্স, নাইকির কেডস আর রেবানের সানগ্লাসে ঢাকা চোখ। চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে নিয়েছে আর হাতে যেমন থাকে তার তামার ব্রেসলেটটা শুধু। সারা গায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে এরামিসের গন্ধ। কিন্তু ঘড়ি যেনো আর চলছে না। দশটা বাজতে কতোক্ষণ লাগে। সারাটা রাত কেটেছে তার আধো ঘুম আর আধো জাগরণে। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি যেন। রনিকে ফোন দেয়াটা কি বেশি ছ্যাবলামি হয়ে যাবে? ঠিকাছে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই ফোন দিবে সে। দশটা কুড়িতে রনি পৌছেই বলতে লাগল, জ্যামে আটকে গেছিলাম দোস্ত, চল চল, খুব সর‍্যি। তারা ঠিক এগারোটায় ঐন্দ্রিলাদের ফ্ল্যাটে পৌঁছলো। ঐন্দ্রিলার মা সাফিনকে দেখে খুবই অবাক হলেন। রনি বললো, সাফিন ঐন্দ্রিলার ক্লাশমেট আর তার বন্ধু। ঐন্দ্রিলার অসুখ খুনে জাষ্ট একটু দেখতে এসেছে। সাফিনকে ঐন্দ্রিলার ঘর দেখিয়ে দেয়া হলো। ঘরে ঢুকে আস্তে করে সাফিন দরজাটা ভেজিয়ে দিল। রজনীগন্ধার সুবাস পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, ঐন্দ্রিলা ঘুমাচ্ছে, বিছানার পাশের টেবিলেই রাখা শুভ্র রজনীগন্ধার অনেকগুলো স্টিক। ও রজনীগন্ধা ভালবাসে তাহলে মেয়েটা।

ঐন্দ্রিলার ঘুমন্ত মুখটি দেখে সাফিনের ভীষন কষ্ট হতে লাগল। জ্বরে পুড়ে মুখটি এতোটুকু হয়ে গেছে। আহারে কতো কষ্টই না পাচ্ছে তার জানটুসটা। বিছানার পাশে বসে ঐন্দ্রিলার কপালে হাত রাখতেই ঘুম ভেঙ্গে আচমকা ঐন্দ্রিলা তাকে তার ঘরে দেখতে পেয়ে ভীষন অবাক হয়ে গেল। চোখ কচলে বুঝতে চাইল স্বপ্ন দৃশ্য নয়তো এটা? সাফিন বুঝতে পেরে হেসে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে জান? ঐন্দ্রিলা কি বলবে, বুঝতে না পেরে, বললো, দাড়ি কাটোনি কেন তুমি? সাফিন হাসতে হাসতে গাঢ় গলায় বললো, তোমার জন্যে জান, শুধু তোমার জন্যে। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেদিন তোমায় পাবো সেদিন দাড়ি কাটবো, তার আগে না। ঐন্দ্রিলা ঠিক বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো তার মুখের ওপর নেমে আসছে আর একটি মুখ। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে ঐন্দ্রিলা আর নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। ছটফট করতে লাগল সে বিছানার ওপর।

***** যারা বইমেলাতে ইমদাদুল হক মিলনের কোন উপন্যাস কিনবেন, আমার লেখার সাথে মিলিয়ে দেখবেন******

শুভরাত্রি

তানবীরা
১৩/০২/২০১২

Tuesday 7 February 2012

বইমেলা কড়চা – (এক) দুধের স্বাদ ঘোলে (রম্য)


বইমেলায় যেতে পারি না। কতো প্রিয়জনের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়, আনন্দিত, গর্বিত মুখখানা ছবিতে দেখি, সামনে থেকে দেখতে পারি না। আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারি না, বার্গার, হালিম খেতে পারি না। রোজ পত্রিকা পড়ে, ব্লগ পড়ে, ফেসবুকের স্ট্যাটাস আর নোট পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই। পত্রিকার মারফত জানলাম বিশিষ্ট সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর হত্যার ওপর একটি বই লিখছেন। হঠাৎ তিনি মিসির আলি আর হিমুকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর কেন পড়ে গেলেন ভাবতে যেয়ে মনে হল, নিউইয়র্কে শেখ হাসিনার ফুল পেয়ে তিনি হয়তো বিগলিত হয়েছেন। এর প্রতিদান স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর হত্যার ওপর একটি উপন্যাস লিখবেন। হয়তো তারপর শেখ হাসিনা কিংবা তার পরিবারকে উৎসর্গ করলেও করতে পারেন।

কিন্তু এতো কঠিন বিষয় নিয়ে তিনি লিখবেন উপন্যাস!!! চাইলেই কি তিনি পারবেন? তারওতো আমার মতো সবকিছু সরলীকরন করে ফেলার বদভ্যাস আছে। একবার শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বৎসরের ছুটি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর পাঁচশ পৃষ্ঠার উপন্যাস লিখছেন। চারদিকে ঢাক ডোল। এটি নাকি মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি “মাষ্টারপীস” হবে। “জোস্ন্যা ও জননীর গল্প” পড়ে আমি যারপর নাই হতাশ হয়েছিলাম। একজন লেখক লেখার আগেই কি করে বুঝে ফেলেন তার বই কতো পৃষ্ঠা হবে তাও আশ্চর্য। মনের আনন্দে লিখার পর গুনা যায় কতো পৃষ্ঠা হলো। তাই ভাবছিলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে লেখা উপন্যাস “দেয়াল” কি রকম হতে পারে? কিছু এরকম হয়তো?

টেলিফোনে বঙ্গবন্ধু তার বিশ্বস্ত সেনা সদস্যের সাথে কথা বললেন। তাঁর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো। গভীর খারাপ ব্যাপার না হলে এধরনের ভাঁজ তাঁর কপালে দেখা যায় না। তিনি খক খক করে তিন বার কাশলেন। দেশের সার্বিক অশান্তি ভাবতে ভাবতে তাঁর ভীষন চায়ের তেষ্টা পেয়ে গেল। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, চা করে আনতে। বেগম ফজিলাতুন্নেসা রান্নাঘরে গেলেন। স্বামীর কাজের জন্য গৃহভৃত্যদের আর ডাকলেন না। কিন্তু চা বানাতে গিয়ে কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না। শেষে তরকারীর চামচটা উলটা করে ধরে তার ডাটা দিয়ে চিনি নাড়তে নাড়তে বঙ্গবন্ধুর হাতে চায়ের কাপটা দিলেন। চা মুখে দিয়েই বঙ্গবন্ধু মুখটা বিকৃত করে ফেললেন। কঠিন গলায় বললেন, এটা কি বানাইছো? চা না শরবত? এতো বছর হয়ে গেলো এখনো চা বানাইতে শিখো নাই? যাও আর এক কাপ নিয়ে আসো চিনি ছাড়া সাথে মুখের মিষ্টি কাটানোর জন্য জর্দা দেয়া একটা পানও নিয়ে এসো।

স্বামীর কথা শুনে মুখ কালো করে ফেললেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা। বঙ্গবন্ধু সেটা খেয়াল করলেন না। তিনি গভীর ভাবনায় নিমগ্ন। বেগম ফজিলাতুন্নেসার খুব ইচ্ছে করছিল স্বামীর কপালে একটু হাত রাখতে। কিন্তু রাখলেন না, তাঁর স্বামী কাজের সময় এগুলো পছন্দ করেন না। মানুষটি বড় ভাল। তিনি অসম্ভব ভালবাসেন তাঁর স্বামীকে। কিন্তু তিনি কখনো স্বামীকে তা জানতে দেন না। বঙ্গবন্ধু তিক্ত গলায় বললেন, সামনে দাঁড়ায় আছ কেন, নিজের কাজে যাও। তিনি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আস্তে আস্তে সামনে থেকে সরে গেলেন।


নীচে বাইরের বারান্দায় মেজর ডালিম পায়চারী করছেন। তিনি থু থু করে কয়েক দলা থু থু ফেললেন লনের ঘাসে। খুব সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখেন মাত্র দুটো ময়লা পাঁচ টাকার নোট যার মধ্যে একটি আবার মাঝখানে ছিড়া। আর দুটো গোল্ডলীফ সিগারেট আছে। সিগারেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে দেখেন, লাইটার আনতে ভুলে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর গৃহভৃত্যকে বললেন, লাইটার দিতে,

ভৃত্য বললো, মাশাল্লাহ, আমি দিবো লাইটার!!!

এখন থেকে সিগারেট খাইলে লাইটার রশি দিয়ে গলার সাথে ঝুলায় রাখবেন মিয়া ভাই

মেজর ডালিম শীতল চোখে গৃহভৃত্যের দিকে তাকালেন। ভাবলেন যখন বাগে পাবো ...।। মনে মনে তিনবার গাল দিলেন, শালা, শালা, শালা। তিনবার গালি দিলে রাগ অনেক কমে যায়। তিন একটা ম্যাজিক সংখ্যা। পৃথিবীর মহান জিনিসের সবই তিন। আকাশ-পাতাল-পৃথিবী তিন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত তিন। ছোটকাল-মধ্যকাল-বুড়াকাল তিন। পতি-পত্নী আর ও তিন।

মেজর ডালিমের বউ রুপবতী খুবই রুপবতী। কিন্তু মেয়েটি সাথে অসম্ভব বুদ্ধিমতী। রুপবতী মেয়েরা সাধারণতঃ বুদ্ধিমতী হয় না কিন্তু এ মেয়েটি তার ব্যাতিক্রম। প্রকৃতি মাঝে মাঝে অদ্ভূদ কিছু কাজ করে, যার ব্যাখা খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। সে নিজেও রহস্যময়। প্রকৃতি নিজেও চায় না মানুষ তার সব রহস্য ভেদ করুক।

শেখ কামাল ছেলেটি এমনিতে দারুন করিতকর্মা আর স্মার্ট। কিন্তু এ মেয়েটির সামনে এলে সব কেমন যেন তার গুলিয়ে যায়। মায়াবতী এ মেয়েটিকে দেখার পর শেখ কামালের বুকটা কেমন যেন করে উঠল। হড়বড় করে অনেক কথা বলে ফেলেন যার আসলে কোন মানে হয় না। মেয়েটি যখন তার ডাগর কাজল চোখ দুটো তুলে তাকায়, তার সারা পৃথিবী তখন দুলতে থাকে। আজকাল তার মনে হতে লাগল, এই অসাধারণ মেয়েটিকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা বৃথা... বারে বারে ঘুরে ফিরে মেয়েটিকে মনে পড়ে। নানা উছিলায় সে ঐ বাড়িতে ফোন করে, কখনো শুধু মেয়েটির কিন্নরী কন্ঠস্বর শুনে ফোন ছেড়ে দেয়, নিজে কোন কথা না বলে। মেয়েটি হ্যালো হ্যালো বলে জানতে চায় কে আছে ওপাশে, তারপর অবাক হয়ে ফোন ছেড়ে দেয়।

এই রাতটি যেন কেমন। দূরে অমঙ্গল আশঙ্কা করে কোথায় যেন দুটো বিড়াল কেঁদে উঠল। ভ্যাপসা গরম, প্রকৃতি নিস্তব্ধ। এমন সময় আততায়ীর রাইফেল গর্জে উঠলো ঠা ঠা ঠা। কেউ বাঁচাতে এলো না বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। প্রকৃতি কি এই নিঠুরতা ক্ষমা করবে? প্রকৃতি কখনো তার হিসাব অপূর্ন রাখে না।

***** পরিশেষে যে “দেয়াল” কিনবেন, পড়া হয়ে গেলে আমাকে দিয়েন, একটু মিলায়ে দেখবো আমার এই লেখাটার সাথে।*****

শুভরাত্রি

তানবীরা
০৭/০২/২০১২

Friday 3 February 2012

Something very special


I got this proseco wine as a gift from one of my colleague. Because I’m always sincere, nice and co-operative with my lovely smile (according to him). So, I must enjoy this wine with my husband in this snow wet weekend. Sometimes, small things can make your day :D

03/02/2012