Thursday 26 May 2022

দূরের দোলাচল

https://samakal.com/kaler-kheya/article/2205113391/%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87 প্রায় দু’যুগের ওপরে হতে চললো প্রিয় বাংলাদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার দূরে সংসার পেতেছে নিশি। কিংবা হুমায়ূন আজাদের ভাষায় বলতে গেলে “এই তাৎপর্যহীন জীবন”কে খানিকটা অর্থবহ করতে কিংবা “চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে আরো কিছু দূর যেতে" নিদারুণ ব্যস্ততায় কাটছে তার মূর্হুত, ঘন্টা, দিন। একসময় উত্তর সমুদ্রের পারের এই ভিনদেশি আবহাওয়ায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে কি কষ্টটাই না হয়েছে। আজও কি পুরোপুরি পেরেছে? এখনও আনমনে দ্রুত হাঁটতে গিয়ে কি পা পিছলে বরফের ওপরে পড়ে না? নিজের সম্পূর্নটা ঢেলে যতখানি সম্ভব শুদ্ধ ওলন্দাজ উচ্চারণে ও ব্যাকরণে যখন কথা বলে, প্রায়শই টেবলের ওপারের উনি হেসে বলেন, ভাষাটা তুমি খুব সুন্দর শিখেছো। মূহুর্তেই জেনে যায় সে তাদের কেউ নয়, সে অন্য দেশের অন্য কেউ যে নিজেকে তাদের দেশের আচার আচরণে অভ্যস্ত করতে ব্যস্ত। অথচ এই অব্ধি পৌঁছতে তাকে কত পথ হেঁটে আসতে হয়েছে। কলেজ-ইউনিতে সালোয়ার কামিজ, চটিতে অভ্যস্ত জীবন এখন জীন্স, সোয়েটার আর বুটসে মোড়া। অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে গরম স্যুপের সাথে লুমপিয়া কিংবা ক্রোকেট খেতে খেতে ভাবে আহা সেই আমার টিএসসির তেহারি কিংবা ডাসের কলিজা সিঙ্গারা। তারপরও কর্মময় জীবন একসময় এসব ভাবালুতা পেছনে ফেলে স্যুপ, স্যান্ডউইচে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয় | আয় মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয় হাসি নিয়ে আয় আর বাঁশি নিয়ে আয় আজ যুগের নতুন দিগন্তে সব ছুটে ছুটে আয় || আজ ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয় | প্রয়াত ভূপেন হাজারিকার গাওয়া এই গানটা নিশির খুব বেশি প্রিয়। আগে ভাল লাগতো শুধু কথা আর সুরের জন্য আর এখন ভাল লাগে নিজের যাপিত জীবনে অনুভব করার জন্য। এখানে কেউ পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করে না, অযাচিত স্পর্শ নেই, নারী বলে কর্মক্ষেত্রে অবমাননা নেই, রাতবিরেতে সাইকেল চালাতে কিংবা জিমে যেতে বা হাঁটাহাঁটি করতেও কোন ভয় নেই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পরে নিশ্চিন্তে বীচে হাঁটে, গলা ছেড়ে গান করে, ফুটবলে নেদারল্যান্ডস জিতলে সবার সাথে রাস্তায় নাচে, রাজার জন্মদিনে ওপেন এয়ার কনসার্টে নাচে কোনটাতেই এ বয়সের আদেখেলপনা নিয়ে চোখ বাঁকা করে জাজ করার কেউ নেই। এখানে জীবন হলো যাপন করার জন্যে, কোন বয়সে কি মানায় তার গন্ডীতে ফেলে নিজেকে শাস্তি দেয়ার জন্য নয়। সেই সাথে মনের গহীনে জমে থাকা পুঞ্জীভূত বেদনাও পোড়ায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট জয়ের আনন্দে কখনও চুল খুলে রাস্তায় নামতে পারেনি, লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে নিজ দেশে জীবন খুঁজে নিতে পারেনি, উৎসবে আনন্দে ছুটে ছুটে আসতে পারেনি। খুব সোজা সাপটা কথা বলা, শাদামাটা জীবন যাপনের জন্য ওলন্দাজ সংস্কৃতি বিখ্যাত। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রায় সব মন্ত্রীই রোজ সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসে। অন্য সবার মতই তাদেরও যানজট এড়িয়ে সময়মত অফিসে আসার তাড়া থাকে। অফিসের সামনের ক্যাফেটারিয়াতে বসে কফি খায়। ফর্মাল কোন অনুষ্ঠান না থাকলে মোটামুটি সবাই সাধারণ জীন্স, কেডসে অফিস করে। মানুষের একাকীত্ব আর ডিভাইস আসক্তি কমানোর জন্য গার্ডেন অফিসের প্রচলন হয়েছে পৃথিবী জুড়ে, নেদারল্যান্ডসও এর ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং কারো কোন ফিক্সড ডেস্ক নেই, যে যখন আসবে, যেই ডেস্ক ফ্রী থাকবে সেখানে বসেই কাজ করতে হবে। এতে পদমর্যাদা নিয়ে লড়াই কিংবা বড়াই করার সুযোগ কম। বাংলাদেশের মত এরকম স্যার, বড় স্যার, ম্যাডামের দেশ থেকে এসে এসবে অভ্যস্ত হতে রীতিমত ধাক্কাই খেয়েছো প্রথম দিনগুলোতে সে। এখনও কি অভ্যস্ত হতে পেরেছে? আজও যখন লাঞ্চ ব্রেকে সিএফও অবলীলায় পাশের চেয়ারে বসে পড়ে তার অস্বস্তি কাজ করে। অহেতুক বাজে খরচা না করার জন্যে বিশ্ব জুড়ে “কিপ্টে” খ্যাতিও ওলন্দাজদের দখলে, এই নিয়ে কে কি বললো তা নিয়ে তাদের থোড়াই পরোয়া আছে? নিশির এখন সমস্যা হলো, দেশে বেড়াতে এলে অনেক কিছুই তার বাজে খরচা মনে হয়। কেউ তার সাথে দেখা করতে এলে তিন কেজি মিষ্টি নিয়ে আসে আবার নিশিকে বেড়াতে গেলেও একই কাজ করতে হয় যেখানে মানুষ হয়ত পাঁচ-থেকে দশ জন। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে, বোঝাতে গেলে, মিতব্যায়ী হওয়ার ভাল দিকটা ব্যাখা করতে গেলে উলটো শুনতে হয়, অনেক বেশি ইউরোপীয়ান হয়ে গেছো, একদম দেখি ওদের মত। বুকের ব্যথা কাউকে বলা যায় না, কিন্তু ইচ্ছে করে বলতে জীবনের বেশি সময়টা ওখানে কাটলো, কি করে আশা করো আমি তোমাদের মত থাকবো? এধরনের কথবার্তা কি দেশের মানুষই বলে? না, এখানে বাস করা নিজ দেশী ভাইবোনরাও বলে। একবেলা ভাত খাও? সন্ধ্যা ছটায় খেয়ে নাও? পুরাই দেখি ডাচ। এই কথাগুলো যারা বলে তারা হয়ত একবারই বলে। যে শোনে সে হাজারবার শুনে ক্লান্ত। বাঙালির মেয়ে হয়ে সিগারেট খায়, মদ খায়, ডিস্কো যায় কিংবা ছেলে বন্ধু আছে? ভাবা যায়? বিদেশে এসে বাঙালিদের এই অধঃপতন? বাবামা ঠিক করে শিক্ষা দেয় নাই, পয়সার পেছনে ভাগছে আর কি? যে মেয়েটি শুধুমাত্র চামড়ায় বাদামী, কারণ তার বাবামা বাংলাদেশী বাকি তার জন্ম, পড়ালেখা, সমাজ, বন্ধু, খেলাধূলা সব নেদারল্যান্ডসেই। তার জীবন কেটেছে অন্যান্য বিদেশীদের সাথে, তিন কিংবা পাঁচ বছরে একবার কয়েক সপ্তাহের জন্যে ছুটি কাটানো ছাড়া বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব তার জীবনে নেই কিন্তু তাকেও অহরহ এসব নিন্দার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশি কারো ঘরে জন্মেছে বলে। পূর্ব পশ্চিমের এই ব্যবধান দিন দিন বড় হয়ে দেখা দেয়। পূর্বে যেটাকে স্বাভাবিক লাগতো বহুদিন পশ্চিমে থাকার পর সেগুলোকে অযৌক্তিক লাগতে থাকে। এখানে সাধারণত খাওয়া মানে, ভাত নয় রুটি, মাছ বা মাংস, সব্জি কিংবা সালাদ। দেশে প্রায় প্রতিবেলায় পঞ্চ ব্যাঞ্জন রান্না করতে যে পরিমান শক্তি ব্যয় হয় তা যদি কোন উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় হতো তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা আরো জোরেও হয়ত ঘুরতে পারতো। তাছাড়া পশ্চিমে বেশীরভাগ মানুষই নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত, ছোটবেলা থেকেই সবাইকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়। পূর্বে স্বনির্ভতার সংজ্ঞাটাই ভিন্ন আর তাই হয়ত প্রত্যেক বাড়িতেই সাহায্যকারী কর্মীর দরকার হয়। সব কিছু এই সব কিছুর পরেও হেমন্তে যখন এখানে পাতা ঝড়া শুরু হয়, পাতায় পাতায় রঙের খেলা, বিদায় নেয়ার পালা, চারধার শান্ত হয়ে আসতে থাকে, শীতের আমেজ মনে করিয়ে দেয় আরও একটি বছর কালের গর্ভে হারাতে যাচ্ছে তখন হারিয়ে ফেলা সেই ছোটবেলার কাঁচা খেজুরের রসের গন্ধ, ঠান্ডা খেজুরের রস খেতে খেতে সোয়েটার পরা গায়েও কেঁপে কেঁপে ওঠা, স্কুলের ফাইন্যাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুবাদে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া, সেই বেড়ানোকে উপলক্ষ্য করে গ্রামে সদ্য বন্ধুত্ব হওয়া নাম না জানা তুতো ভাইবোনদের সাথে ফসল ভরা জমিতে বেড়াতে যাওয়া। জমি থেকে টেনে তোলা শিশির ধোয়া ধনেপাতা দিয়ে তাজা কূল আর তেঁতুল মাখা ভর্তার গন্ধ, চারদিকে হলুদ সর্ষের চাদর বিছানো, কাঁচা সর্ষে শাকের গন্ধ, মাটি তোলা নতুন আলু আর মটরশুটি। জমি থেকে তুলে আনা টমেটো – ধনেপাতা দিয়ে ছোট মাছের চর্চরি। ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর পাখি শিকারীদের ভীড়। কিংবা তেল ভরা বালিহাঁস আর ভুনা খিচুড়ির জন্যে মনটা কেমন কেমন করে উঠে না? সবই কি হারিয়ে যায়? উচ্চ প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থল বলে খ্যাত এই শহরে থেকেও, নিশি চোখ বন্ধ করলেই পরিস্কার দেখতে পায়, শ্যাওলা পড়া পুকুর ঘাট, গাছে গাছে জড়াজড়ি করে থাকা গ্রাম্য জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া এবড়ো থেবড়ো পায়ে চলা মেঠো পথ, এ বাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনা ডিঙিয়ে কোন মাঠে গিয়ে মিশেছে। সেই মাঠ আবার মিশেছে আকাশের সাথে। প্রত্যেক বাড়ির সামনে বিরাট বিরাট উঠোন, সীমের মাচা, লাউয়ের মাচা, পাশেই গরুর ঘর। কি শান্ত অলস যেনো পটে আঁকা ছবি। প্রায় শুকিয়ে আসা খালের পাড়ে বাঁধা নৌকা, মসজিদের পেছন দিকে জঙ্গল, এসব কিছুর জন্যে আজও অন্তরে গভীর হাহাকার অনুভব করে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা চটপটি খাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের অনুভূতি দেয়, বেলী কিংবা কাঁঠালিচাঁপার গন্ধ দেহ মনে সেই সময়ে যে শিরশিরানি আনতো আজো তেমনই আকুল করে। চওড়া পাড় দেয়া ভাজ ভাঙ্গা বাসন্তী রঙের নতুন তাতের শাড়ি, হাতে রঙ বেরঙের লাল হলুদ সবুজ রেশমী চুড়ি, কপাল জুড়ে বড় চাঁদের মতো কালচে লাল টিপ আর ঘাড় গলা খোঁপা জুড়ে জড়িয়ে থাকবে অজগরসম কাঁঠালিচাঁপার মালা, ফাল্গুনের এই সাজে নিজেকে সাজিয়ে বন্ধুদের সাথে বাংলা একাডেমীর প্রাংগনে বইমেলায় কলরবমুখর পদচারণা। সেই জ্বলে ওঠা নিভে যাওয়া জোনাকী পোকা, আমসত্ত্ব, চালতার আঁচার, সারা গায়ে সুর মেখে হুড খুলে বৃষ্টিতে ভেজা এর কোনটা সে ভুলতে পেরেছে? সবইতো মনে হয় এই সেদিনের কথা যখন সে ওখানকার একজন ছিলো। এখন কথা হতে পারে শ্যাওলা পড়া পুকুর নদী কি নেদারল্যান্ডসে নেই? এখানে কি ঘুঘু ডাকে না? রঙিন প্রজাপতি ওড়ে না? হ্যাঁ কথা সত্যি, এসকল সব এখানেও আছে, হয়তো খানিকটা অন্য ফর্মে অন্য ঢঙে। প্রবাসীরা যেমন সব কিছু ইউরো থেকে টাকায় কনভার্ট করে দেখতে ভালবাসে। তেমনি প্রকৃতির মধ্যেও নিজ দেশের তুলনা খুঁজতে ভালবাসে, স্মৃতিতে হারিয়ে নস্টালজিকতায় ভোগা প্রবাস জীবনের সতত ধর্ম বলা চলে। দেশে গেলে প্রায় প্রত্যেকেরই জিজ্ঞাসা, কবে এসেছিস, ক’দিন থাকবি? বক্তব্য খুব পরিস্কার, তুই আর আমাদের কেউ নোস, ক্ষণিকের অতিথি। তাকে ঘিরে চারপাশ জুড়ে এত আনন্দ কোলাহল থাকা সত্বেও নিশির শুধু মনে হতে থাকে, ছবি হয়ে রয়ে গেছি সবার স্মৃতিতে, বাস্তবে আর আমার কোন অস্তিত্ব নেই। সত্যিই কি নেই? তাহলে অনুষ্ঠানে আপনজনরা যখন ডাকে, তুই না এলে হবে না, তাড়াতাড়ি আয়। কোন সমস্যায় পড়লে বলে, তুই না বোঝালে কারো কথা শুনবে না সেগুলো কি তবে ভুল? তার অন্তর জানে, এগুলোও ভুল না। প্রতিবার বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্টটা যেমন সত্যি তেমনি চলে আসার পর দিন দিন আবার এখানে অভ্যস্ত আরামে ফিরে আসাটাও ঠিক ততটাই সত্যি। তারচেয়ে বড় সত্যি হলো, তিন চার সপ্তাহ পরিবারের সবার সাথে থাকলে, বন্ধুদের সাথে র‍্যান্ডম আড্ডা দিলে, দেশের এই অসহ্য যানজট, খাবারে প্রাণনাশী ভেজাল, চারপাশেরর অকারণ উচ্চ শব্দদূষণ সব কেমন যেনো স্বাভাবিক লাগতে থাকে, সহ্যও হয়ে যায়। তসলিমা নাসরিনের মত বলতে পারে না, "আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায় অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে-“ জীবনের এই প্রান্তে পৌঁছে আজ জানে নিশি নিষ্ঠুর এসময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ছেড়ে আসা যত সহজ ফিরে যাওয়া ততই কঠিন। যে জায়গা একবার ছেড়ে আসা হয় সে জায়গায় আর ফেরা হয় না। বারবার ফিরে গেলেও ফেরা হয় না। মানুষ বদলে যায়, মন বদলে যায়, চিন্তা-ভাবনা পরিবেশ, অভ্যস্ততা, অভ্যাস সব বদলে যায়। এত ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন হয় যে সহসা মন তা অনুভবই করে উঠতে পারে না। প্রবাসের পথে যারা পা বাড়ায় তাদের হয়ত দেশ বলতে আর কিছুই থাকে না। তারা প্রবাসেও খানিকটা বেমানান আবার দেশেও অনাকাঙ্ক্ষিত উৎপাত। লোপামুদ্রা মিত্রর এই গানটা নিশির তাই বড্ড প্রিয় ঠিক যেখানে দিনের শুরু, অন্ধ কালো রাত্রী শেষ মন যতদূর চায়ছে যেতে, ঠিক ততদূর আমার দেশ এই কাটাতার জঙ্গীবিমান, এই পতাকা রাষ্ট্র নয় দেশ মানে বুক আকাশ জোড়া, ইচ্ছে হাজার সূর্যদোয় এই মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক, এই দাবানল পোড়াক চোখ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক তানবীরা হোসেন ২২/০৫/২০২২

Friday 13 May 2022

হৃদস্পন্দন বন্ধ হলেই বুঝি মৃত্যু হয়?

বুক ধুকপুক বন্ধ হলেই বুঝি মৃত্যু হয়? দু'চোখের কাছের জন দূরে চলে যায়, মোম নরম আব্দারের গলাটা কর্কশ হয়ে যায়, গালের তিলের মত যাওয়া-আসার পরিচিত পথটা বদলে যায়, মিহি বোন চায়না বিশ্বাস ভেঙে যায়, পত্রিকা উল্টানোর রোজকার অভ্যাস বদলে যায়, কারণে অকারণে টম এন্ড জেরীর খুনসুটি হতো সেখানে আমাজনের দূরত্ব এসে যায়, মিষ্টি তেঁতুল শখের যেসব তুচ্ছ জিনিস না পেলে জীবন বৃথা মনে হতো তা অর্থহীন হয়ে পরে। বার্বি প্রিয় মানুষকে ছুঁতে না পারা, অমরেশপুরী স্মৃতি তাড়া করবে বলে প্রিয় গান,কবিতা, সিনেমা এড়িয়ে যাওয়া, ডিম্পল-রাজেশ দুজনের নির্জনের স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া, সঘন আবেগের ডায়রীর পাতা ছিঁড়ে ফেলা, তুলতুলে প্রিয় ছবির ফ্রেম হারিয়ে যাওয়া আরো কত বলতে না পারা সমুদ্র নীল বেদনা, এও কি মৃত্যুই নয়? ০৫/১৩/২০২২